#তুমি_আমারই
#পর্ব_৯
#Sumaia_Jahan
—- আচ্ছা ভাবিমনি নতুন ভার্সিটিতে কোনো নতুন বন্ধু হয়েছে তোমার?
রুহি খুব আগ্রহের সাথে প্রশ্নটা করলো।প্রশ্নটা করেই আমার উত্তরের অপেক্ষায় আমার দিকেও খুব আগ্রহের দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। ওকে দেখে মনে হচ্ছে আমার না ওর নিজেরই বন্ধুর কথা জিজ্ঞেস করছে।আমার ওর এতোটা আগ্রহে ভিষন হাসি পাচ্ছে।ওর এতোটা আগ্রহ টাকে একটু মজা নেওয়ার জন্য মুখটা একটু গম্ভীর করে বললাম,
—- সবে তো একদিন মাত্র গেলাম ভার্সিটিতে এর মধ্যেই কি কারো সাথে বন্ধুত্ব করা যায়?দেখি কয়েক দিব যাক কোনো বন্ধু জোটে কি না।
আমার উত্তরে রুহির মনটা খারাপ হয়ে গেল।যতো টা আগ্রহ নিয়ে প্রশ্ন করেছিলো ততোটাই মনমরা নিয়ে বললো,
—- ওহ আমি ভেবেছিলাম তোমার হয়তো নতুন বন্ধু হয়ছে।তো নতুন বন্ধুর গল্প শুনবো তোমার থেকে।
ওর এমন অবস্থা দেখে আমার হাসি এবার আটকে রাখতে পারলাম না।তাই জোরে হাসে দিলাম।আমার হাসি দেখে অবাক হয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছে রুহি। ও বুঝতে পরাছে না আমি হাসছি কেন? তাই ও মাথা চুলকোতে চুলকোতে বললো,
—- ভাবিমনি তুমি এমন হাসছো কেন আমি তো কোনো হাসার মতো কথা বলিনি।
রুহি কিছুক্ষণ চুপ থেকে আবার বললো,
—- আমার মুখে কি কোনো কিছু লেগে আছে যার জন্য তুমি এতো হাসছো? প্লিজ বলো না আমার মুখে কি লেগে আছে। মনে হয় তো আমাকে জোকারের মতো লাগছে সেজন্য তুমি এতো হাসছো। দাঁড়াও আমি মুখ ধুয়ে আসি।
কথাটা বলেই রুহি মুখ ধুতে উঠতে যাচ্ছিলো। ওকে উঠতে দেখে আমি নিজের হাসি সামলে ওর হাত ধরলাম আর বললাম,
—- আরে রুহি তোমার মুখে কিছুই নেই।আমিতো তোমার সাথে মজা করছিলাম।তুমি জানতে চেয়েছিলে না আমার নতুন বন্ধু হয়ছে কি না?
রুহি আমার কথা শুনে খুশিতে লাফিয়ে ওঠে বললো,
—- তারমানে তোমার নতুন বন্ধু হয়েছে।প্লিজ বলো না তোমার নতুন বন্ধুর গল্প।
আমি মুখে হাসি নিয়ে বললাম,
—- হ্যা ইশা নামের একটা মেয়ের সাথে আমার আজকে বন্ধুত্ব হয়েছে।ও খুব ভালো আমাকে অনেক সাহায্য করেছে।একদিনেই ওর সাথে আমার অনেক ভালো বন্ধুত্ব হয়ে গেছে।
আমার কথার মাঝেই রাহাত এসে একটু মন খারাপ করে বললো,
—- তোমরা দুজনতো আমাকে ছাড়াই আড্ডা দিচ্ছো!
আমি বললাম,
—- তোমাকে ছাড়া কি আমাদের আড্ডা জমে!রাহাত তুমিও এসো আমাদের সাথে।
রাহাত এসোও আমাদের পাশে বসলো।হঠাৎ আমার মনে পড়লো ওই দিন রাতে গোপন খবরের ব্যপারটা তাই আমি চট করে জিজ্ঞেস করলাম,
—- আচ্ছা তোমাদের ভাইয়া ওই দিন রাতে তোমাদের কি গোপন খবরের কথা বলেছিলো?যার জন্য তোমাদের এইভাবে থ্রেট দিয়েছিলো?
আমার প্রশ্নে রাহাত চুপসে গেলো।আর রুহি একটু মন খারাপ করে বললো,
—- আরে ভাবিমনি আমার কোনো গোপন খবর টবর নাই। আমি বাদে ওখানে থাকা সবারই গোপন খবর মানে বিএফ জিএফ ছিলো আর কি।তাই তো ওরা সবাই ওভাবে পালিয়েছিলো।সঙ্গে আমাকেও নিয়ে গেছিলো।
আমি একটু রাহাতের দিকে তাকিয়ে বললাম,
—- তারমানে রাহাত তোমারও গার্লফ্রেন্ড আছে?
রাহাত একটা দীর্ঘ শ্বাস নিয়ে বললো,
—- হুম ভাবিমনি তোমার কাছে লুকাবো না।আমাদের ভার্সিটিতেই ফাস্ট ইয়ারে পড়ে ও।ওর নাম নিহা।ভাইয়া মনে হয় সবই জেনে গেছে তাই ওই দিন ওভাবে থ্রেট দিয়েছিলো। সেজন্যই তো এই দিন এভাবে পালিয়েছিলাম।
ওর কথা গুলো শুনে আমি আর রুহি হেসে ওঠলাম।হঠাৎ করে রোদ্দুর এসে ঝাঁঝালো গলায় বললো,
—- এই তোরা সবাই সবসময় আমার রুমে এসে মাছ বাজার বসাছ কেন?
আমার মেজাটা একদম গরম হয়ে গেলো। আমরা নাকি ওনার রুমে মাছ বাজার বসাই।হিংসুটে লোক কোথাকার। আমিও ঝাঁঝালো গলায় বললাম,
—- আপনি এতো হিংসুটে কেন?নিজে সবসময় একা একা থাকেন বলে আমাদের কে একসাথে দেখলেই হিংসায় গাঁ জ্বলে তাই না!
রোদ্দুর রেগে বললো,
—- কি আমি হিংসুটে?
আমি বললাম,
—- নাহ হিংসুটে তো আমি! অন্যের সুখ সহ্য করতে না পারিনা তো আমি। আপনি তো দোয়া তুলসি পাতা।
রোদ্দুর বললো,
—- আশপিয়া তুমি কিন্তু এবার আমাকে ইনসাল্ট করছো।
আমি বললাম,
—- যে নিজে থেকে অপমানিত হতে আসে তাকে আবার নতুন করে অপমান করবো কি করে।
রোদ্দুর নিজের রাগ কন্ট্রোল করে বললো,
—- আমাকে রাগিয়ে দিও না তাহলে কিন্তু ভালো হবে।
আমি ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বললাম,
—- আদি সাহেব আপনার রাগকে মনে হয় আমি ভয় পাই।আপনার এই রাগ অন্য কাউ কে দেখাবেন আমাকে না।রুহি রাহাতও আপনার এই রাগকে ভয় পায় না দেখবেন।
কথাটা বলেই পিছনে ঘুরে দেখি কেউ নেই ওরা দুজনই পালিয়েছে। এতোক্ষণ খেয়াল করিনি।এখন তো বড়ো মুখ করে বলেছিলাম রুহি রাহাত উনার রাগকে ভয় পায় না।কিন্তু এই দুইজন তো আগেই পালিয়েছে। এখন কি বলি?রোদ্দুর এর দিকে ঘুরে দেখি উনি ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে আছেন আমার দিকে। আমি একটু হাসি হাসি মুখ করে বললাম,
—- ওদের বোধহয় কোনো জরুরি কাজ আছে তাই তাড়াতাড়ি চলে গেছে।তাই বলে ভাববেন না ওরা আপনাকে ভয় পায়। ওরা কিন্তু আপনাকে একটুও ভয় পায় না।আদি আপনি একটু থাকেন আমার না একটা জরুরি কাজ আছে।আমি আসছি।
কথাটা বলেই একপ্রকার দৌড়ে চলে এলাম রুম থেকে। উনি নিশ্চয় এখন আমার কান্ড দেখে আসছেন।হাসলে হাসুক আমার কি!রুহি আর রাহাত কে ধরতে হবে এরা আমাকে বিপদে মুখে একা ফেলে চলে গেলো।
চলবে,,,,,
[ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। ভুল গুলোও ধরিয়ে দিবেন।]