তুমি আমারই পর্ব-০৮

0
3550

#তুমি_আমারই
#পর্ব_৮
#Sumaia_Jahan

সকাল থেকে মনটা খুব খারাপ। আজ দু’দিন হলো এ বাড়িতে আছি আমি। কিন্তু এখনো পর্যন্ত দিয়ার কোনো খোঁজ পেলাম না।ওর ফোনে কল করলে একটাই আওয়াজ ভেসে আচ্ছে ” আপনার ডায়াল কৃত নম্বারে সংযোগ দেওয়া যাচ্ছে না।অনুগ্রহ করে আবার চেষ্টা করুন।” রোদ্দুরের থেকেও অনেক চেষ্টা করেছিলাম দিয়ার খবর পেতে কিন্তু প্রতিবার ফলাফল হয় শুন্য।

কিছুতেই বুঝতে পারছি না দিয়ার কেন খোঁজ পাচ্ছি না।রোদ্দুর কি দিয়ার কোনো ক্ষতি করে ফেললো?দিয়ার জন্যই তো আমি আমার জীবনের এতো বড়ো বলিদান করলাম।এখন যদি ওরই কোনো ক্ষতি হয় তাহলে তো আমার জীবনের এতো বড়ো বলিদান বৃথা যাবে।না রোদ্দুর তো আমাকে কথা দিয়েছিলো বিয়েটা করলে দিয়ার আর কোনো ক্ষতি করবে না।আমি উনার কথা মতো বিয়েটা করেছি এখন উনাকে উনার কথা রাখতেই হবে।

একটু আগে আবার রোদ্দুর বলে গেছেন নতুন ভার্সিটিতে ভর্তি করতে নিয়ে যাবেন।আমার আগের ভার্সিটি নাকি এ বাড়ি থেকে অনেক দূর সেইজন্য। এই ভার্সিটিতে রাহাতও পড়ে। তাই দু’জনে একসাথে যাওয়া আসা করতে পারবো এরকম আরো অনেক কিছু বুঝিয়ে গেছেন উনি। শুধু বোঝাননি সঙ্গে হুমকিও দিয়ে গেছেন তাই বাধ্য হয়ে আমাকে এখন নতুন ভার্সিটিতে ভর্তি হতে হবে।আজই আমাকে এই নতুন ভার্সিটিতে ভর্তি করাবেন।আজ উনিই নিয়ে যাবেন কাল থেকে রাহাতের সাথে যেতে হবে।তাই এখন কড়াকড়ি নির্দেশ দিয়ে গেছেন এখনি রেডি হয়ে উনার সাথে ভার্সিটি যাওয়ার জন্য।কি আর করার উনার নির্দেশ অনুযায়ী এখন আমি ভার্সিটি যাওয়ার উদ্দেশ্যে রেডি হচ্ছি।

রোদ্দুর কোথেকে এসে আমার পাশে এসে আমার দিকে কিছুক্ষণ ভালো ভাবে তাকিয়ে গম্ভীর গলায় বললো,

—- আচ্ছা তোমাদের মেয়ে জাতির কি একটাই সমস্যা একটু রেডি হতে বললেই ঘন্টার পর ঘন্টা সাজতে বসে যাও?

আমার মাথা পুরো গরম হয়ে গেলো।যেখানে আমাকে পাঁচ মিনিটে রেডি হতে বললে দু’মিনিটেই রেডি হয়ে যাই।সেখানে এই লোক আমাকে ঘন্টার পর ঘন্টা সাজার খেতাব দিচ্ছে। আজ একটু দিয়ার কথা ভাবতে ভাবতে দু’মিনিট একটু না হয় বেশিই লেগেছে তাই বলে ঘন্টার পর ঘন্টা সাজার উপাধি দিবেন!আমি কোমর হাত রেখে উনার দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে ঝাঁঝালো কণ্ঠে বললাম,

—- আপনি ভালো করে ঘড়ি দেখুন সাত মিনিট হয়েছে মাত্র। আপনি পাঁচ মিনিট সময় দিয়েছেন।আমার মাত্র দুই মিনিট বেশি হয়েছে।আর আপনি আমাকে পুরো মেয়ে জাতির সাথে তুলনা করে ঘন্টার পর ঘন্টা সাজার খেতাব দিয়ে দিলেন!

রোদ্দুর আমার কথায় অনেক টা থতমত খেয়ে গেলেন।উনি ভাবতেই পারেন নি আমি এভাবে জবাব টা দেব।রোদ্দুর আমতা আমতা করে বললো,

—- আব তোমাকে পরীক্ষা করছিলাম আর কি দেখছিলাম তুমি টাইম ঠিক ভাবে বলতে পারো কি না!আজ নতুন ভার্সিটিতে ভর্তি হবে তো তাই!

আমি আবারও ঝাঁঝালো কণ্ঠে বললাম,

—- হয়ে গেছে আপনার পরীক্ষা! নেক্সট টাইম যদি এরকম উল্টো পাল্টা কিছু বলেন তাহলে আমার থেকে খারাপ কিন্তু আর কেউ হবে না। সো নেক্সট টাইম আমার সাথে একটু সাবধানে কথা বলবেন।না হলে আপনার জন্যে খুব একটা ভালো হবে না বলে দিলাম।

রোদ্দুর একটু কাচুমাচু গলায় বললো,

—- বুঝতে পেরেছি খুব ভালো ভাবেই বুঝতে পেরেছি। আর কোনোদিন মেয়ে জাতি তুলে তোমাকে কথা বলবো না।এবার প্লিজ চলো না হলে এবার সত্যি সত্যি দেরি হয়ে যাবে।

নিজেকে একটু শান্ত করে বললাম,

—- ওকে চলেন।

রোদ্দুর আমার উত্তরে যেন হাফ ছেড়ে বাঁচলেন।তারপর আমরা দুজনে ভার্সিটির উদ্দেশ্যে রওনা হলাম। প্রায় বিশ মিনিট পর আমরা নির্দিষ্ট গন্তব্যে পৌছালাম। ভার্সিটিটা সত্যি খুব সুন্দর।আমি গাড়ি থেকে নেমে চারিদিক মুগ্ধ নয়নে তাকালাম।রোদ্দুরও গাড়ি থেকে নেমে আমার পাশে এসে দাড়িয়ে বললো,

—- পছন্দ হয়েছে ভার্সিটি?

আমি বললাম,

—- হুম ভার্সিটি টা খুব সুন্দর। আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ এখানে আনার জন্য।

রোদ্দুর বললো,

—- তখন তো আসতেই চাচ্ছিলে না।কতো কি বলছিলে না তোমার ওই ভার্সিটির সাথে নাকি আর কোনো কিছু তুলনাই হয় না!আরো কি কি যেন বলছিলে না?

আমি কিছু বলতে যাবো তার আগেই রাহাত এসে বললো,

—- ভাইয়া ভাবিমনি তোমরা এসে গেছো?

রোদ্দুর গম্ভীর গলায় বললো,

—- তা তো এসেছি অনেক্ষন আগেই। এতোক্ষণ ছিলি কোথায়?কোন মেয়ের সাথে টাংকি মারতে গেছিলি হে?মেয়েদের সাথে ঘোরাঘুরি করা ছাড়া তো আর কিছু পারোই না তুমি!

রাহাত কাঁদো কাঁদো মুখ করে বললো,

—- দেখো না ভাবিমনি ভাইয়া আমাকে কিভাবে ইনসাল্ট করছে?

রাহাতের আমাকে এভাবে বিচার দেওয়াতে নিজেকে একটু বড়ো বড়ো মনে হচ্ছে। তাই এখন ছোট ভাই এর মতো দেবরের ভাবিমনি হয়ে তো আমার একটা দায়িত্ব আছে। সেজন্য রোদ্দুর কে কড়া গলায় বললাম,

—- অনি আপনি ছোটো ভাই কে এভাবে ইনসাল্ট করছেন কেন? ওর তো একটা সম্মান আছে। এভাবে ওকে যখন তখন ইনসাল্ট করবেন না!

আমার কথার উত্তরে রোদ্দুর কিছু বলতে যাবে তার আগেই রাহাত বলে ওঠলো,

—- ওয়েট ওয়েট ভাবিমনি তুমি অনি কাকে বললে?

এবার আমি মুখটা অসহায় করে বললাম,

—- আসলে আমি উনাকে আগে থেকে রোদ্দুর ভাইয়া বলে ডাকতাম তো। তাই এখনও উনার নাম বলতে গেলে ভাইয়া এসে যায়।সেজন্য উনাকে অনি বলে ডাকি।

আমার কথাগুলো শুনে রাহাত হাসতে হাসতে মাটিতে গড়াগড়ি খাওয়ার মতো অবস্থা হয়ে গেলো।রোদ্দুর ওকে একটা ধমক দিয়ে বললো,

—- একদম চুপ! আর একবার যদি তোর মুখ থেকে হাসি বের হয় তাহলে তোর মুখ আমি পিনআপ করে দিবো।এখন বলো অফিস রোমটা কোন দিকে?

রোদ্দুরের ধমকে রাহাত হাসি বন্ধ করে আমাদের কে সেখানে নিয়ে গেলো। তারপর আমার ভর্তি করানো হলো।প্রথম দিন তো তাই কয়েকটা ক্লাস করে নিয়েছি সবার সাথে পরিচিত হওয়ার জন্য।এর মধ্যেই ইশা নামের একটা মেয়ের সাথে আমার খুব ভালো বন্ধুত্ব হয়ে গেলো।

ক্লাস শেষ করে রাহাতের জন্য অপেক্ষা করছি। ও বলছিলো আমার ক্লাস শেষে ও নিয়ে যাবে।রাহাত কোথ থেকে যেন দৌড়ে এসে হাঁপাতে হাঁপাতে বললো,

—- সরি ভাবিমনি প্রথম দিনই লেট হয়ে গেলো। তোমাকে অনেকক্ষণ অপেক্ষা করিয়েছি না!আসলে ক্লাস শেষে বন্ধুদের সাথে কথা বলতে বলতে তোমার কথা বলেই গিয়েছিলাম।প্লিজ ক্ষমা করে দেও।আর কখনো এমন হবে না কথা দিচ্ছি।

আমি বললাম,

—- না না আমাকে বেশিক্ষণ অপেক্ষা করতে হয়নি। আমার ক্লাস একটু আগেই শেষ হয়েছে।

রাহাত স্বস্তির নিশ্বাস ফেলে বললো,

—- ওহ বাঁচলাম। বেশি দেরি হলে ভাইয়া আবার আমাকে বকাবকি করতো।যাগগে এখন চলো ভাবিমনি বাড়ি যাই।

কথাটা বলেই ও ওর বাইকে উঠে গেলো।আর আমাকেও উঠতে বললো।আমিও সম্মতি জানিয়ে ওর বাইকে উঠে পরলাম।তারপর বাড়ি চলে এলাম।

বাড়ি এসে ফ্রেশ হয়ে এসে সোফায় বসতে না বসতেই শ্বাশুড়ি মা ডাকলেন খাবার খেতে ডাকতে।তারপর নিচে গিয়ে খাবার টেবিলে গিয়ে দেখি শ্বাশুড়ি মা খাবার সার্ভ করছেন।তাই আমিও উনাকে সাহায্য করতে গেলাম।সাথে সাথেই শ্বাশুড়ি মা বললেন,

—- খবরদার আশপিয়া কিছু তে হাত দেবে না।তুমি কি এখানে কাজ করতে এসেছো।এখানে কাজের জন্য অনেক লোক আছে।তুমি নিজের বাড়িতে যে ভাবে ছিলে এখানেও সেই ভাবেই থাকবে।

আমি বললাম,

—- মা আমি একটু করি না!একটু করলে তো কোনো সমস্যা নেই?

শ্বাশুড়ি মা বললেন,

—- সমস্যা নেই মানে অনেক সমস্যা! তুমি কিছুতেই কাজ করতে পারবে না কাজের জন্যই তো কাজের লোক আছে তারপর তোমার এই মা আছে। তারপর তুমি আবার কি কাজ করবা হুম?

রুহি সিরি বেয়ে নামতে নামতে বললো,

—- ভাবিমনি লাভ নেই তোমাকে মা কোনো কাজ করতে দেবে না।তাই তারাতাড়ি খেতে বসো।আমার পেটেও ইদুর দৌড়াচ্ছে।

কতা গুলো বলে রুহি আমাকে একটা চেয়ার টেনে দিয়ে পাশের চেয়ারে ও বসলো।আমিও ওর টেনে দেওয়া চেয়ারে বস পড়লাম।

চলব,,,,,

[ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। ]