#তোমার_মাদকতায়_আচ্ছন্ন
#তানজিলা_খাতুন_তানু
(পর্ব_২৬)
একটা আওয়াজ চিৎকার শুনে মেহতাব চমকে উঠে পেছনের দিকে ঘুরে আওয়াজটার দিকে যেতে লাগলো। আওয়াজটা খুব চেনা কারোর।
মেহতাব সামনে এসে চমকে উঠলো, র / ক্তা/ ক্ত অবস্থায় তুহা সিঁড়িতে পরে আছে। মাথা দিয়ে র//ক্ত বের হচ্ছে , মেহতাব যেন ভাষা হারিয়ে ফেলেছে কী বলবে। ওর এখন কী করা উচিত সেটাই বুঝে উঠতে পারছে না।
হইচই শুনে অয়ন আর ফারাবিও সেখানে উপস্থিত হয়ে তুহাকে ওই অবস্থাতে দেখে পাগলামি শুরু করে দিয়েছে।
– এই তাহু পাখি কী হয়েছে তোমার বলো না কথা বলো। একবার চোখ খোলো।
– এই ফারাবী তুহাকে এখুনি এডমিট করতে হবে ওকে নিয়ে চলো এর্মাজেন্সীতে।
অয়নের কথা শুনে ফারাবি তুহাকে কোলে তুলে নিয়ে এর্মাজেন্সিতে ভর্তি করিয়ে দিলো। আধঘন্টার মধ্যেই সকলেই হসপিটালে উপস্থিত হয়ে যায়। ফারাবি পুরো শক খেয়ে বসে আছে আর নিজের মনের মধ্যে বিরবির করে যাচ্ছে। ডক্টর বাইরে আসতেই ফারাবি জিজ্ঞাসা করলো…
– কী হয়েছে আমার তাহু পাখির।
– রিল্যাক্স মিস্টার চৌধুরী আপনার স্ত্রী আগের তুলনায় সুস্থ আছে। তবে ওনার ভাগ্য ভালো ঠিক সময়ে ট্রিটমেন্ট পরে গেছে নাহলে বড়ো কিছু হতে পারতো। তবে আমাদের কিছু সন্দেহ আছে তাই কয়েকটা রিপোর্ট করতে দিয়েছি, রিপোর্ট আসলেই বোঝা যাবে ঠিক কতটা কি হয়েছে।
ডক্টরের কথায় সকলেই স্বত্বির নিঃশ্বাস ফেললো। কিন্তু ফারাবি এখনো শান্ত হলো না। তুহাকে না দেখা পর্যন্ত কিছুতেই ঠান্ডা হবে না। ডক্টর ফারাবির অবস্থা বুঝতে পেরে তুহার কেবিনে ওকে ঢুকতে দেয়।
ফারাবি ধীর পায়ে তুহার দিকে এগিয়ে এসে কপালে একটা চুমু দিয়ে হাতটাকে নিজের মুঠোয় নিয়ে ঢুকরে কেঁদে উঠলো।
– পাখি তোর কিছু হয়ে গেলে তো আমি আর বাঁচতে পারবো না। প্লিজ তুই কখনো আমাকে একা ফেলে যাস না।
তুহা কোনো রেসপন্স নেয় এখনো সেন্স ফেরেনি।
১৫ দিন পর…
তুহা এখন পুরোপুরি সুস্থ। বাড়িতেই চলে এসেছে।আজকে চৌধুরী বাড়িতে হইচই কান্ড কুহুকে দেখতে আতিফ ওহ ওর পরিবার আসছে। মিহা সুন্দর করে কুহুকে সাজিয়ে দিয়েছে।
– আমার না ভয় লাগছে মিহু।
– আরে ভয় কীসের আমরা আছি তো।
– বকিস না আমার জায়গায় থাকলে বুঝতিস। আর আমারো দিন আসবে।
– দেখা যাবে।
ওদের কথার মাঝেই তুহা প্রবেশ করলো ঘরে…
– এই তোদের হলো,ওইদিকে সবাই চলে এসেছে।
– আমাদের ওহ হয়ে গেছে।
– এইতো আমাদের কুহু রানিকে কি সুন্দর লাগছে।(তুহা)
– ধ্যাত।
– আরে লজ্জা পাচ্ছিস কেন সত্যি রে।(তুহা)
– হুঁ।
– মিহা ওকে নিয়ে নীচে যা।
– আমি।
– হুম তুই যাবি যা তাড়াতাড়ি।
তুহা মিহাকে আর কুহুকে নীচে পাঠিয়ে দিলো। তুহার সেদিনের কথা মনে পড়লেই হাসি পাই যখন সকলেই চিন্তা করছিলো কুহুর বিয়ের তখন কাব্য মেসেজ করে আতিফের কথা জানানোর কথা বললো,তুহা অবাক হয়েছিলো কিন্তু আতিফের প্রতি কাব্যের বিশ্বাস দেখে বিয়ের প্রস্তাব রেখেছিলো। পরে কাব্যের কাছে সবকিছু জানতে চাইলে কাব্য সবটা বলে ওকে…
অতীত…
– কাব্য আমি তোকে কিছু কথা বলতে চাই।
– কী কথা আতিফ।
– আসলে ভাই আমি তোর বোনকে পছন্দ করি ভালোবাসি। আমি চাই তোর বোনকে বিয়ে করতে আর তুই তো আমাকে চিনিস আমার হাতে বোনকে তুলে দিবি না বল।
– আমি দেখছি কী করা যায়।
তুহা সবটা শুনে খুশি হয়েছিলো। সবাই সুখি হোক এটাই চাওয়া এইদিকে তুহা আবারো একবার মিহার বিষয়টা নিয়ে কথা বলেছে কিন্তু ওর বাবা কিভাবে ওদের কাছে প্রস্তাব রাখবে বুঝতে পারছে না। তাই তুহা ঠিক করেছে ওহ নিজেই সবকিছুর দায়িত্ব নেবে। কুহু আর কাব্যের বিয়ের ঝামেলাটা মিটে যাবার পর।
কুহুকে দেখার পর সকলে আতিফ আর কুহুকে আলাদা করে কথা বলতে পাঠায়।মিহা ওদেরকে ছাদে রেখে নীচে চলে যায়।
– তা মিস আমাকে কী আপনার পছন্দ হয়েছে।
কুহু কিছুক্ষন নীরব থেকে বললো…
– যে মানুষটা আড়ালে থেকে এতদিন ভালোবাসতে পারে তাকে অপছন্দ করার কোনো কারন নেই।
কুহুর কথায় আতিফ প্রথমে হতভম্ব হয়ে যায় পরে,কথাটার মানে বুঝতে পেরে মৃদু হাসলো।
আতিফ যেহেতু কুহুকে পছন্দ করে তাই ওদের বাড়ির কেউই আর আপত্তি করেনি। আংটি পরিয়ে বিয়ের ডেট ফাইনাল করে দিয়েছে। এখন কাব্যের পাত্রী খোঁজা চলছে।
– এই শা//লা খুশিকেই বিয়ে করে নে না তাহলে তো আর এত পাত্রী খুঁজতে হবে না।
– ওই বজ্জাত মেয়েটাকে আমি বিয়ে করবো না কিছূতেই না।
– দ্যাখ খুশি হয়তো একটু দুষ্টু কিন্তু খারাপ নয় আমি ভাবছি তুহা ভাবিকে বলবো কথাটা।
– না । তুহাকে বলা মানে সত্যি সত্যি বিয়ে করিয়ে ছাড়বে আর খুশি তুহার ভালো বন্ধু তাই ওকে তো ভালো করেই চেনে।
– ভালোই হলো তো তুই বন্ধু দুই জা হবে।
– না ওই মেয়েকে আমার পছন্দ নয়।
– দেখিস আবার মাদকতায় জড়িয়ে পড়িস না।
রাতে…
– আচ্ছা শোনো না। কাব্যের জন্য একটা ভালো মেয়ে খুঁজে দাও না। (তুহা)
– আমরা তো খুঁজছি কিন্তু কাব্যের তো পছন্দ হচ্ছে না।
– হুম।
তখনি তুহার ফোনে একটা মেসেজ আসলো। তুহা মেসেজটা চেক করে দেখলো,খুশির মেসেজ…
– সবাই মিলে বিয়ের ষ/ড়/য/ন্ত্র করছে।আমি এখুনি বিয়ে করবো না। তুই আটকা বোন আমার।
মেসেজটা দেখে তুহার মাথাতে কিছু একটা কূট বুদ্ধি আসলো। তুহাকে হাসতে দেখে ফারাবি বললো…
– হাসছো কেন?
– কাব্যের বউ পেয়ে গেছি।
– কে?
– খুশি
– এ্যা
– এ্যা নয় হ্যা।
তুহা মেধার সাথে ফোন আলাপে ব্যস্ত হয়ে পড়লো। ফারাবী বিছানায় আধশোয়া হয়ে তুহার কান্ড দেখছে, তুহা মনের সুখে কথা বলে যাচ্ছে।
– এই মেয়েকে আমি কীভাবে বোঝাবো,আমি এইদিকে ওনার অপেক্ষায় আছি আর উনি বান্ধবীর সাথে ফোনে ব্যস্ত। আমার মতো নিস্পাপ মানুষটাকে এতটা কষ্ট দেওয়া কী ঠিক?
কথাগুলো ফারাবী আসতে আসতে বললেও তুহার কানে ঠিক পৌঁছে গেছে। তুহা মেধাকে কলটা কেটে দিতে বলে, ফারাবীর সামনে গিয়ে বসলো।
– কি বলছিলেন আপনি।আপনি নিস্পাপ মানুষ…
– কে বললো।
– এখুনি তো আপনি বললেন।
– কোথায়।
– আমি স্পষ্ট শুনেছি।
– তুমি কানে কালা হয়ে আছো।
– কী আপনি আমাকে কালা বললেন।
– কোথায় বললাম।
– আপনাকে তো আমি।
– কি করবে চুমু খাবে,আদর করবে।
– এবার রাগ উঠছে।
– আমাকে জড়িয়ে ধরো রাগ ছেড়ে যাবে।
কথাটা বলেই তুহাকে বুকে জড়িয়ে নিলো ফারাবি তুহা আর রাগ করতে পারলো না টুপ করে হেসে দিলো।
অন্যদিকে…
একের পর এক ফোন কল আসছে আননোন নম্বর থেকে। বিরক্ত হয়ে মেহতাব ফোন তুললো..
– হ্যালো কে?
– আমি মিহা।
– কেন ফোন করেছিস তাড়াতাড়ি বল তোর আজেবাজে কথা শোনার সময় নেয় আমার।
– কেন এইরকম করছো আমার সাথে।
– তুই আমার অনেক ছোট তোর সাথে আমার যায় না প্লিজ বোঝ একটু।
– আমি কিছু বুঝতে চাই না আমি তোমাকে চাই আমি তোমার মাদকতায় জড়িয়ে পড়েছি প্লিজ তুমি একটু বোঝো।
মেহতাব ফোনটা কেটে দিলো। মিহা কাঁদতে লাগলো। মেহতাবের পাগল পাগল লাগছে। কিছুদিন আগেই মিহা ওকে ওর মনের কথা জানিয়েছে, সেইদিন থেকেই মেহতাব মিহাকে ইগনোর করছে।
কী আছে ওদের ভাগ্যে কী হবে সবটাই যে বিধাতার লিখন।
#চলবে…
#তোমার_মাদকতায়_আচ্ছন্ন
#তানজিলা_খাতুন_তানু
(পর্ব_২৭)
ভালোবাসা বা ভাগ্যের উপরে আমাদের কারোরই নিয়ন্ত্রণ থাকে না। হয়ে যায় কখন কীভাবে আমাদের অজান্তেই মিহা মেহতাবের প্রতি দূর্বল হয়ে পড়েছে। চাইলেও এই মাদকতা থেকে বের হতে পারছে না।
ফারাবীর হাত করে খুশিদের বাড়িতে কাব্যের জন্য বিয়ের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। কথাটা শুনে ওদের বাড়ির সকলে খুশি হলেও খুশি খুশি হতে পারেনি। রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে তুহাকে ফোন করে চিৎকার করে বললো…
– এই তুহার বাচ্চা তোর সাহস কীভাবে হলো নিজের বরকে দিয়ে ওই বজ্জাত ছেলেটার সাথে বিয়ের প্রস্তাব পাঠানোর।
– খুশি জানু তুমি খুশি হয়ে যাও তোমার সাথেই আমার দেবরের বিয়েটা হচ্ছে আর তুই যদি কাব্যকে বিয়ে না করিস তাহলে ওই রিকশাওয়ালার সাথে বিয়ে দিয়ে দেবো।
– এই তুহা এই শহরে রিকশা ওয়ালা কোথায় পাবি তুই।
– রিকশা ওয়ালা না পাই কিন্তু ওই ফুচকা ওয়ালার সাথে দিয়ে দেবো।
– সত্যি বলছিস তুই।
– না মানে হ্যা।
– থ্যাঙ্কু জানু তাই ব্যবস্থা কর আমি রেডি, ওই কাব্যের থেকে আমার ফুচকা ওয়ালা অনেক ভালো।
– এ্যা।
খুশি ফোনটা কেটে দিলো তুহা মাথাতে হাত দিয়ে বসে পড়লো। খুশিকে জব্দ করার জন্য কথাটা বলেছিলো কিন্তু কে জানতে এই মেয়ে রাজি হয়ে যাবে। তুহা মনে মনে কিছু একটা ভেবে বললো..
– হ্যা যখন বলেছো তখন তো তোমাকেই এই বিয়ে করতে হবে খুশি রানি।
তুহা নিজের প্ল্যান মতো সবাইকে সবকিছু জানিয়ে দেয়। সবকিছু ওর কথা মতোই চলতে থাকলো, খুশির সামনে বিয়ে নিয়ে আর কথা উঠেনি। খুশি এখন বিন্দাস আছে আর মনে মনে ইনজয় করছে বিষয়টা। সেদিন ইচ্ছাকৃত ভাবেই তুহাকে বলেছিলো রাজি কারন জানতো তারা কেউই কখনোই একটা ফুচকা ওয়ালার সাথে বাড়ির মেয়ের বিয়ে দেবে না। আর কাব্যকেও বিয়ে করতে হবে না। কিন্তু খুশির কপাল এতটাও ভালো ছিলো না। সকালে ঘুম ভাঙলো চেঁচামেচি শব্দে, বাড়িতে মেম্বার কম হওয়াতে এতটা চিৎকার হয়না তার উপরে আবার বাচ্চাদের। খুশি তাড়াতাড়ি নীচে নেমে আকাশ থেকে পড়লো। বাড়িতে পুরো আত্মীয় স্বজনের ভীড়। কোথাও এক দন্ড পা রাখার জায়গা নেই।খুশির রীতিমত বিরক্ত লাগছে এইসব রাগে চিৎকার রে উঠলো…
– মাআআআআ
– কী হয়েছে গরুর মতো ডাকিস কেন?
– এত মানুষ কেন বাড়িতে।
– আ আস্থে সবাই তোমার গুরুজন সবাইকে সম্মান দেবে আর তার থেকেও বড়ো কথা তারা কেউই নিজে থেকে এখানে আসেনি আমারাই এনেছি তাই তাদের অপমান করবে না তুমি।
– কিন্তু কেন ডেকেছো?
– তোমার বিয়ের উদ্দেশ্যে।
– কীই?
– হুম।
– কিন্তু আমার বিয়ে কার সাথে।
– তোমার পছন্দের মানুষের সাথে।
– আমার আবার পছন্দের মানুষ কে!
– ভালো ভাবে ভেবে দ্যাখো কে।
খুশি অনেকক্ষন ভেবেও কিছুই মনে করতে পারলো না।
– মা আমার জন্য ছেলে কে ঠিক করেছে।
– তুহা।
– কীই,,, নিশ্চয় ওই কাব্যের সাথে তাই তো আমি এই বিয়ে করবো না।
– আজ্ঞে না কাব্য নয় অন্য কাউকে তোর জন্য ঠিক করা হয়েছে। কাব্যের মতো ছেলে পেতে ভাগ্য লাগে কিন্তু তোর তো সেই কপাল নেয় তোর তো ফুচকা ওয়ালা পছন্দ তাই ফুচকা ওয়ালার সাথেই তোর বিয়ে হচ্ছে।
খুশির মা রাগ নিয়ে চলে গেলো। খুশি শক খেয়ে দাঁড়িয়ে আছে। মা কী বলে গেলো ওর বিয়ে একটা ফুচকা ওয়ালার সাথে। খুশির রাগে মাথা ফেটে যাচ্ছে।
রাগে ফোস ফোস করতে করতে খুশি তুহাকে ফোন করে কিছু বলতে যাবে তার আগেই তুহা বললো
– এই তোর কথা শোনার মতো সময় নেয় আমার। আমি খুব ব্যস্ত আজকে তোর বিয়ে নিয়ে আঙ্কেল তো আমাকেই দায়িত্ব দিয়েছে তোর বিয়ের তাই ব্যবস্থা করছি। এখন বিরক্ত করিস না বাই।
তুহা ফোনটা কেটে দিয়ে হা হা হা হাসতে লাগলো। খুশি পড়েছে ফ্যাসাদে। কি করবে বুঝতে পারছে না। কেউই ওকে পাত্তা দিচ্ছে না সবাই ইগনোর করছে।
খুশির গায়ে হলুদ,রাতে বিয়ে। সবটাই ঘরোয়া ভাবে আয়োজন করা হচ্ছে। খুশিকে একটা হলুদ শাড়ি পড়ানো হয়েছে। মিষ্টি লাগছে কিন্তু মুখের হাসিটা নেয়।
হলুদ লাগানোর সময়ে তুহা কোথা থেকে এসে ওর গালে হলুদ ছোঁয়ায়। খুশি কিছু বলার আগেই তুহা চলে যায় খুশির কাছে সবকিছুকে বিরক্ত লাগছে।
রাতে….
ঘরোয়া ভাবে হলেও আয়োজনটা খুব ছোট নয়। খুশিকে সাজিয়ে দেওয়া হয়েছে। বর এসেছে বর এসেছে বলে সবাই চলে যায়। বর দেখেই সকলে মুখ বাঁকিয়ে চলে এসে খুশিকে বললো…
– এই খুশি তোর তো একটা কেমন ছেলের সাথে বিয়ে হচ্ছে ওর সাথে থাকবি কীভাবে। আবার শুনলাম ছেলেটা নাকি একটা ফূচকা ওয়ালা। তোর তো কপালটাই খারাপ।
খুশি আর কিছু সহ্য করতে পারছে না। অসহ্য লাগছে সবকিছু রাগে দুঃখে চোখে পানি চলে এলো।
কিছুক্ষন পর, খুশিকে নিয়ে যাওয়া হয় নীচে, ওই ফুচকা ওয়ালার সাথে খুশির বিয়ে হয়ে যায়। খুশির চোখের পানি বাঁধ মানছে না। কবুল বলার সময়েও খুশি বলতে চাইনি কান্না করছিলো,মায়ের রাগী চোখের কাছে হেরে গিয়ে কবুল বলে দেয়। যাবার সময়ে কারোর সাথেই ভালো করে কথা বলেনি। শশুড়বাড়ির কাউকেই দেখেনি। এমনকি বরকেও দেখেনি।
গাড়িটা একটা বাড়ির সামনে দাঁড়ালো। বাড়িটা খুব একটা বড়ো নয়, একতলা বাড়ি, কেউ একজন গাড়ি থেকে নামিয়ে একটা ঘরে বসিয়ে দিয়ে আসলো। সময় চলে যাচ্ছে কিন্তু আর কারোর দেখা মিললো না। খুশি নিজের মনেই পুরানো কথাগুলো ভাবতে লাগলো। খুশির মনে পড়লো কাব্যের সাথে ঝগড়া গুলো, কোথাও কাব্যকে মিস করছে।
– নিজের বোকামীর জন্য নিজের জীবন শেষ করে দিলাম।
তখনি দরজা ঠক করে খোলার শব্দে খুশি জড়ো হয়ে বসলো। মায়ের শেখানো বুলি বললো…
– আসসালামু আলাইকুম।
একটা খসখসে গলায় ব্যক্তিটি বললো…
– ওয়া আলাইকুমুস সালাম। ফ্রেশ হয়ে এসো।
খুশি ধীর পায়ে ফ্রেশ হয়ে এসে দাঁড়ালো। ততক্ষণে ঘরের আলো জ্বালিয়ে দিয়েছে, সামনের মানুষটিকে দেখে চমকে উঠলো খুশি।
– এই কে আপনি?
– তোমার স্বামী।
লাল দাঁত বের করে খুশির স্বামী বললো।
– কীই। এটা হতে পারে না। আপনি আমার স্বামী নন প্লিজ আমার স্বামীকে আমার কাছে পাঠান।
– আরে জানু কি বলো তোমার সাথেই আমার বিয়ে হলো। আর তোমার মতো এত সুন্দরী একটা মেয়েকে ছেড়ে আমি চলে যাবো তাই কী করে হয় আর আজকে তো আমাদের বাসর রাত চলো কাজ শুরু করি।
খুশি ভয়ে কুঁচকে গেলো। ভয়েতে কেঁপে কেঁপে উঠছে।মানুষটি ওর দিকে আগাতে লাগলো। খুশি তো ভয়েতে কেঁদেই ফেলেছে।
খুশিকে হুট করেই কাঁদতে দেখে মানুষটি কিছুই না বলে চলে গেলো। খুশি কাঁদতে লাগলো আরো জোরে। তুহা ওর সাথে এইরকম করবে কখনোই ভাবেনি। আবারো দরজা খোলার শব্দ খুশি ভাবলো লোকটা এসেছে। তাই জরোসরো হয়ে বসলো।
– খুশি।
চেনা কন্ঠস্বর শুনে খুশি সামনে তাকিয়ে দেখলো মেধা আর তুহা দাঁড়িয়ে আছে। রাগে গজগজ করতে করতে বললো…
– কী দেখতে এসেছিস তোরা। আমি কেমন আছি তাই তো দ্যাখ তুই নিজের হাতে আমার জীবনটা শেষ করে দিয়েছিস ন/র/ক করে দিয়েছিস।
– আমি কিছুই করিনি। আমি তো শুধু তোর কথা রেখেছিলাম। আর শোন বিয়ে হয়ে গেছে যেহেতু তাই মানিয়ে নে এটাই ভালো হবে আর শোন কাব্যের বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে মেধার সাথে।
কথাটা শুনে খুশি আর মেধা দুজনেই শক খেলো।
– আমার সাথে মানে?
– হুম তোর সাথেই দুই পরিবার রাজি তাই তোর সাথেই বিয়েটা হবে। কিছুদিন পরেই বিয়ে চলে আসি তোরা আর খুশি তোর বরকেই আমরা বিয়ের সব ফুচকার দায়িত্ব দেবো চিন্তা করিস না। আজকে তাহলে আসি।
তুহা মেধাকে টেনে নিয়ে চলে গেলো।খুশি কাঁদতে শুরু করলো।
#চলবে…