#তোর_আসক্তি_পাগল_করেছে_আমায়
#সিজন_০২
#সাবিয়া_সাবু_সুলতানা
২১.
বেলার কথার মাঝে হঠাৎ করে পিছন থেকে বিস্ময় ও আনন্দ ভরা মেয়েলি কন্ঠে চিৎকার করে কথা বলে ওঠায় সব পিছনের দিকে তাকায় বেলাও তার কথা থামিয়ে দিয়ে রুমের দরজার দিকে তাকায় দেখে সারিফ অবাক আর বিস্ময় নিয়ে তাকিয়ে আছে আর তার সামনে দাঁড়িয়ে আছে একটা সুন্দরী বিদেশীনি মেয়ে। বেলা ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে চেনার চেষ্টা করছে আসলেই মেয়ে টা কে হতে পারে। এদিকে বাকিরা দরজার দিকে তাকিয়ে আনন্দে লাফিয়ে ওঠে সব কটা। বেলার মুখ থেকে হঠাৎ করে অস্পষ্ট ভাবে বেরিয়ে আসে।
-“জাকিয়া ।
-” আরে জিকু বেবি তুই এখানে হঠাৎ করে? কখন এলি? কই আমাকে জানালি না তো? সারা জাকিয়ার কাছে গিয়ে জড়িয়ে ধরে বলে ওঠে।
-“হেই জাকিয়া বেবি কেমন আছো হ্যাঁ আর সারপ্রাইজ টা কিন্তু দারুণ ছিলো। নিশান এগিয়ে গিয়ে জাকিয়াকে জড়িয়ে বলে ওঠে।
-” ফাইনালি পাঁচ বছর পর আবার দেখা হলো। শান্তা বলে ওঠে।
-“তোমাকে খুব মিস করেছি জিকু বেবি । রুহি বলে ওঠে।
-” আমিও তোমাদের সবাইকে খুব মিস করেছি। তোমরা সেই যে গিয়েছিলে কানাডায় ফেস্টিভেলের সময়ে তারপরে তো আর সেইরকম কথা হয়ে ওঠেনি তাই আমি আমার স্টাডি কম্পিলিট করে আমিও ইন্ডিয়া চলে এলাম। সারিফ ভাই আমাকে আনতে গিয়েছিলো এয়ারপোর্ট থেকে তো ভাইয়ের থেকে শুনলাম তোমরা এখন অফিসে আছো তাই সোজা এখানে চলে এলাম তোমাদের সাথে দেখা করতে জাকিয়া হেসে বলে ওঠে।
-“খুব ভালো করেছ এখানে এসে আমরা সত্যি সারপ্রাইজ হয়েছি। বেদ বলে ওঠে।
বেলা একভাবে দাঁড়িয়ে দেখে যাচ্ছে সবাইকে কিন্তু হঠাৎ করে পাশে তাকাতেই বেলার কপালে ভাঁজ পড়ে। ওম বুকে হাত রেখে একভাবে জাকিয়াকে দেখছে মুগ্ধ চোখে। আমরা যখন হঠাৎ করে আমাদের প্রিয় জিনিষ, প্রিয়জন বা পছন্দের মানুষকে দেখতে পেয়ে আনন্দে আত্মহারা হয়ে যাই বা কিছু কিছু সময়ে বাকরুদ্ধ হয়ে যাই তবে চোখে মুখে তার ছাপ থেকে যায় ওমের অবস্থা এখন ঠিক তেমনই ওম কে দেখে মনে হচ্ছে ওর সামনে কোনও পছন্দের মানুষ বা ফিল্মস্টার দাঁড়িয়ে আছে। বেলার বুঝতে বাকি নেই ওমের মনে প্রেমের ঘন্টি বেজে গিয়ে কুছ কুছ হোতা হে শুরু হয়ে গেছে, তার মানে ওমের মনে যে আগের থেকে এমন কিছু ছিল সেটা বুঝতে পারে বেলা। বেলা এগিয়ে গিয়ে ওমের কাছে দাঁড়িয়ে চোখের সামনে হাত নাড়াচাড়া করে কিন্তু তাতেও ওমের চোখের পলক পড়ে না সে এখনও এক ভাবে তাকিয়ে আছে সামনে দাঁড়ানো জাকিয়ার দিকে বেলা ওমের কাঁধে হাত রেখে আলতো করে ধাক্কা দেওয়ার পরও সেই একই ভাবে দাঁড়িয়ে আছে। বেলা এবারে সামনে সবার দিকে তাকাতে দেখে শান্তা সারা বেদ নিশান একবার সারিফকে আবার রুহিকে দেখছে এরাও একে অপরের দিকে শুভ দৃষ্টি সেরে নিচ্ছে। রুহি প্রথমে সারিফকে খেয়াল করেনি তবে জাকিয়ার সাথে কথা বলার পর পাশে দেখতেই সেখানেই স্ট্যাচু হয়ে গিয়েছে আর সারিফ বাঁকা হেসে তাকিয়ে আছে। বেলা সামনে দেখে নিয়ে এবার ওমের দিকে দেখে।
-“বাহ এখানেই দেখি সবার মনেই কুছ কুছ ফিলিং চলছে এদের সবার মনেই দেখছি প্রেমের বাতি জ্বলে গেছে। বেলা বিড়বিড়িয়ে বলে ওঠে।
বেলা আলতো করে ইশারা করে শান্তা সারা নিশান বেদ কে ডাকতে তারা বেলার দিকে তাকায়, বেলা ইশারা করে ওম জাকিয়াকে দেখায় সাথে সারিফ ও রুহিকে দেখায় বাকিরা এতক্ষণ ওদের খেয়াল করলেও ওমকে খেয়াল করেনি কিন্তু এখন দেখতেই বেদ এগিয়ে এসে ওমের পাশে দাঁড়িয়ে তারপর সবার দিকে তাকিয়ে চোখ টিপে দুষ্টু হেসে ওমের কানের কাছে জোরে চিৎকার করে ওঠে। ওম নিজের ঘোর থেকে বেরিয়ে ধপাস করে নিচে পড়ে যায় সাথে সাথে সবাই প্রায় চিৎকার করে হেসে ওঠে আর এদের হাসির ঠেলায় রুহিও নিজের ঘোর থেকে বেরিয়ে আসে সে হাবলার মত করে দাঁড়িয়ে সবার হাসি দেখছে সে আসলেই বুঝতে পারিনি হয়েছে টা কি আর ওম কেনো নিচে পড়ে আছে। জাকিয়া ওমের অবস্থা দেখে মুখ টিপে হাসছে সে জানে ওমের এতক্ষণ কি করছিলো। জাকিয়া বেলার দিকে এগিয়ে এসে বেলার মুখোমুখি হয়ে দাঁড়ায়।
-” বেলা রাইট আমিতো তোমাকে চিনি আমাদের দু একবার কথাও হয়েছে। কিন্তু তুমি আমাদের ভাবি এটা জানতাম না সত্যি আমি এখানে এলাম বলেই জানতে পারলাম। জাকিয়া বেলাকে টাইট করে জড়িয়ে বলে ওঠে।
-” হ্যাঁ এটা আমরাও জানতাম না আজকেই জেনেছি বেলা আমার ভাবি হয়। সারা অভিমানী হয়ে বলে ওঠে।
-” আরে যাইহোক ইয়ার আমি তো খুব খুশি তোমার মত কিউট একটা মিষ্টি মিষ্টি দেখতে আমাদের ভাবি উফ আমি তো তোমাকে দেখেই প্রথমে ক্রাশ খেয়েছিলাম যদি ছেলে হতাম না উঠিয়ে নিতাম। জাকিয়া বলে ওঠে।
-” আমিও জানতাম না তুমি আমাদের ভাবি। ভাই যে পাঁচ বছর আগেই বিয়ে করে নিয়েছে সেটা জানতেই পারিনি। সারিফ এগিয়ে এসে বলে ওঠে।
-” আচ্ছা তারপর বলো সেই আনিসের কি হলো আমিতো গল্প মাঝপথেই থামিয়ে দিয়েছি। জাকিয়া এক্সাইটেড হয়ে বলে ওঠে।
-“হ্যাঁ সেটাই বেলা ওই ডাইনী মহিলার কি হলো সাথে ওই হারামযাদাটার কি হলো? নিশান বলে ওঠে।
-“আমি জানিনা আনিসের খবর। ওর আর কোনো খবরই পাইনি আমি। সেদিন ওখান থেকে তোমার ভাইয়ের সাথে আসা গার্ড গুলো ওকে রক্তাক্ত অবস্থায় তুলে নিয়ে চলে যায়। আর রিসা খানকে তোমাদের ভাই নিজে থাপ্পড় মেরে অজ্ঞান করে ফেলে সাথে হাত দিয়ে থাপ্পড় মেরেছে রুমাল দিয়ে হাত পরিষ্কার করে নিয়েছে সাথে রুমাল ও ছুড়ে ফেলে দিয়েছে এমন করে যেনো মনে হচ্ছিলো সে কোনো ময়লা জিনিসে হাত দিয়েছিলো এর রুমাল টাও নোংরা হয়ে গেছে। রিসা খানকেও ওখান থেকে গার্ড তুলে নিয়ে চলে গেছিল। বেলা একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে আলতো হেসে বলে ওঠে।
-“আনিস তাহলে আর বেঁচে নেই উপরে পাঠিয়ে দিয়েছে তাকে গার্ড যেহেতু তুলে নিয়ে গেছে তাহলে ওখানেই খবর শেষ। সারিফ হেসে বলে ওঠে।
-” আমি শুনেছিলাম ওই ডাইনি মহিলাকে কেউ বা কারা নাকি বাড়ির দরজার সামনে ফেলে রেখে গেছিলো হাত পা ভেঙে দিয়ে। শান্তা বলে ওঠে।
সারিফের আর শান্তার কথা শুনে সবাই অবাক হয়ে যায়। সাঁঝ যে এতটা হিংস্র তারা বিশ্বাস করতে পারছেনা প্রথমেই বেলার মুখে ফাইটিং এর গল্প শুনে আর এখন সারিফ যা বললো তাতে যে সাঁঝ কোনো ভাবে হিংস্র থেকে কম নয়।
-“আচ্ছা বেলা আমাকে একটা কথা বল তুই যে বললি তুই আনিস আর রিসাকে দেখে ফোন করে কল করেছিলিস কিন্তু কাকে? আর ওই যে বললি জিন্দেগি মানে ঠিক বুঝলাম না?তুই তো বলেছিলি তোর জিন্দেগির সাথে তোর কোনো সম্পর্ক নেই তাহলে? রুহি বলে ওঠে।
-” আমি জিন্দেগিকেই কল করেছিলাম ওদের দেখে
-” তারমানে ভাই তোর জিন্দেগি ছিলো? সারা আনন্দ আর বিস্ময়ে চিৎকার করে বলে ওঠে বেলাকে বলতে না দিয়ে।
-“হ্যাঁ আমি প্রথম ওকে দেখে খুশি হয়েছিলাম কিন্তু পরে যখন ওর মুখ দেখি তখনই আমি নিজেই বিস্ময়ে ঘোর কাটিয়ে উঠতে পারিনি। ওর আসল পরিচয় যে সাঁঝ রওশন হবে সেটাও আমি ভাবিনি ওকে তো দেখে আমি নিজেই শকড হয়ে গেছিলাম। বেলা মৃদু হেসে বলে ওঠে।
-” মানে তুমি আগে থেকে ভাইকে চিনতে না তুমি জানতে না? জাকিয়া জিজ্ঞেস করে ওঠে।
-” না তোমার ভাইকে এজ অ্যা গভর্নমেন্ট লিডার প্রেসিডেন্ট সাঁঝ রওশন হিসাবে চিনতাম ব্যাস এটুকু আর সারাও কখনো তার ভাইকে নিয়ে বলেনি তাই বেশি কিছু জানতাম না। তবে তোমার ভাইকে চিনতাম সেটা সম্পূর্ণ অন্য রূপে আমার জিন্দেগি হিসাবে তাই ওকে প্রথম দেখেই চমকে গেছিলাম নিজের চোখ কেই বিশ্বাস করতে পারছিলাম না। বেলা বলে ওঠে ।
-“তুমি যদি ভাইকে তোমার জিন্দেগি হিসাবেই চিনতে তাহলে ভাইয়ের চেহারা চেনা উচিত কেনো ভাইয়ের সাথে সিক্রেট প্রেম চলছিলো নাকি? সারিফ বলে ওঠে।
-” উম বলতে পারো কিছুটা সেইরকম তোমার ভাইকে আমি দেখিনি তবে ওকে যেদিন প্রথম দেখেছি সেদিন ওর চেহারা ঢাকা ছিলো আর তারপর যেকয়বার দেখা হয়েছে সব সময়ে তোমার ভাইয়ের মুখ ঢাকা থাকতো আর একদম নরমাল ভাবেই আমার সামনে আসতো তাই আমি কিভাবে বুঝবো আর চিনতে পারব যে ও সাঁঝ রওশন।
-“ওর তেরি ভাই তো হেভি ইউনিক আছে কিভাবে সিক্রেট ভাবে তোমার সাথে প্রেম চালিয়ে গেলো ভাবা যায়। যাইহোক তুমি যে আমার ভাবি এতেই আমি খুব খুশি হয়েছি। জাকিয়া বলে ওঠে।
বেলা জাকিয়ার কথা শুনে আলতো হেসে এবার তার বন্ধুদের দিকে তাকায় দেখে তার দিকেই তারা তাকিয়ে আছে এখনও সেই অভিমান নিয়ে।
-“আসলে তোরা তখন দেশে ছিলিস না তাই আর তোদের এত কিছু বলে চিন্তায় ফেলতে চাইনি আর তোরা তো আগের থেকেই জিন্দেগির ব্যাপারে জানিস, আমি তোদের বলতাম তবে তোরা যখন ফিরে এসেছিলিস তখন সব কিছুই বদলে গেছিলো সাঁঝের সাথে আমার ভুল বোঝাবুঝি হয়েছিল মূলত আমিই ভুল বুঝেছিলাম তাই আমি আর সেই সব মনে করতে চাইনি তোদের বলে আমি তখন দ্রুত শহর ছাড়তে চাইছিলাম সাথে সব কিছু ভুলতে চাইছিলাম তাই দ্রুত তোরা ফিরলে গোয়ার ইউনিভার্সিটি এপ্লাই করে চলে গেলাম। বেলা আহত কন্ঠে বলে ওঠে।
-“মানে ভাইয়ের সাথে তোমার ঝামেলা হয়েছিলো? বিস্ময় নিয়ে বলে ওঠে সারিফ।
-” হ্যাঁ, আসলে আমাকে ভুল বোঝানো হয়েছিলো আর আমি বুঝেছিলাম তবে সেদিন ও কোনও কথা বলেনি আর না আমার ভুল ভেঙে ছিল আর আমিও সেটা ধরে সব কিছু মিথ্যে ভেবে শহর ছেড়ে ছিলাম। তোরা এখনও আমাকে ভুল বুজবি আমি তোদের কে আমার জন্যে আর কষ্টে দেখতে চাইছিলাম না তোরা যদি ওইসময়ে আমার কথা শুনতি তাহলে তোরাও খুব কষ্ট পেতিস আর তাছাড়া আমি নিজেও সব কিছু ভুলতে চাইছিলাম তাই আর কোনো কথা তুলিনি। বেলা অসহায় হয়ে বলে ওঠে সবার দিকে তাকিয়ে।
বেলার কথা শুনে সারা ওম বেদ নিশান রুহি শান্তা সবাই একসাথে বেলার উপরে ঝাঁপিয়ে পড়ে জড়িয়ে ধরে তারাও খুব কষ্ট পেয়েছিলো বেলা তাদের কিছু বলেনি বলে আর এখন বেলার মুখ থেকে সবটা শোনার পর সত্যি ওরা সবাই কষ্ট পেয়েছে ওই সময়ে একা বেলাকে ছেড়ে যাওয়ার জন্যে বেলা যে নিজে এত কষ্ট সয়ে গেছে শুধুমাত্র তারা কষ্ট পাবে বলে এখানে কি আর অভিমান করে থাকা যায়। সবাই একসাথে জড়িয়ে ধরে নিজেদের মান অভিমান মিটিয়ে নিচ্ছে। রুমে থাকা সারিফ আর জাকিয়া ওদের দেখে মৃদু হাসে সত্যি এদের বন্ধুত্ব দেখলেই মনে প্রশান্তি আসে।
এদিকে সাঁঝ তার কেবিনে বসে ল্যাপটপে এতক্ষণ থেকে ওদের দেখছিল ওদের কথা শুনছিলো ওদের এখন দেখে তার মুখেও হাসি ফুটে ওঠে সকাল বেলা তার আর বেলার সম্পর্ক ওদের বলার পরেই সব কয়টা খুব কষ্ট পেয়েছিলো কিন্তু সেখানে সাঁঝ কিছু বলতে পারিনি আসলেই তার বলার মত কিছু ছিলোনা আর না ওদের মাঝে তার কথা বলা সাজে কারণ ওটা বেলার সাথে তার বন্ধুদের বোঝাপড়া ছিল বেলা কেনো ওদের জানায়নি সেটা বেলার বলার কথা ছিল তাই এতক্ষণ সাঁঝ চুপ করে সবটা দেখছিলো।
চলবে…. ।
#তোর_আসক্তি_পাগল_করেছে_আমায়
#সিজন_০২
#সাবিয়া_সাবু_সুলতানা
২২.
রাগে হিংস্র চোখে তাকিয়ে আছে সাঁঝ তাকে এই মুহূর্তে দেখতে ভয়ংকর থেকে ভয়ংকর লাগছে মনে হচ্ছে তার ওই লাগে লাল হয়ে যাওয়া রক্তমুখী হিংস্র চোখের দ্বারা সব কিছু জ্বালিয়ে খাঁক করে দেবে। হাত দুটো শক্ত করে মুঠোবদ্ধ করে রেখেছে কপালের রগ গুলো ফুলে উঠেছে চোয়াল শক্ত করে দাঁত পিষতে পিষতে তীক্ষ্ণ হিংস্র দৃষ্টিতে সামনের দিকে তাকিয়ে আছে।
বেলা তার কেবিনের সামনে দাঁড়িয়ে আর.এমের সাথে হেসে হেসে কথা বলে যাচ্ছে। শুধু এতেই সীমাবদ্ধ থাকলে তবুও ঠিক ছিল আর.এম কথার মাঝে মাঝে বেলার হাত ধরার চেষ্টা করছে আর এতে সে সফল ও হচ্ছে সে কথার ছলে বেলার হাত তার হাতে নিয়ে কথা বলছে বেলা ছাড়িয়ে নিলে আবারো হাত ধরছে এমন ভাব যেনো মনে হচ্ছে সে বেলার সাথে এত উৎসাহী কথা যে বারবার হাত ধরে ফেলছে ঠিক বন্ধুরা যেভাবে কথা বলে সেই ভাবে দেখানোর চেষ্টা করছে, আর চোখ ঘুরে বেড়াচ্ছে বেলার শরীরের আনাচে কানাচে আর.এম কথার বলার অছিলায় তার লোভী চোখ দিয়ে বেলাকে মেপে নিচ্ছিলো পুরো গিলে খাচ্ছে যেনো। মাঝে সব কিছুর লিমিট ছাড়িয়ে কাঁধেও হাত রাখছিলো।
আর দূর থেকে দাঁড়িয়ে এই দৃশ্য দেখেই সাঁঝ রাগে ফেটে পড়ছে চোখ মুখ লাল করে ভয়ংকর হিংস্র চোখে তাকিয়ে আছে ওদের দিকে তার মন চাইছে এখুনি সব টা শেষ করে দিতে।
আজ সকালের দিকে একটু মন খারাপ থাকলেও বেলার আর বাকিদের বন্ধুত্বের অটুট বন্ধন আর বেলার বলা কথা গুলো শুনে সাঁঝ খুশি ছিল তার বেলাযে তার ব্যাপার ভুল বুঝেছিল সেটাও আজ সম্মুখ সমরে স্বীকার করে নিয়েছিলো কিন্তু সবটাই পাল্টে গেলো সাঁঝের হাসি খুশি মুখটা এখন হিংস্রতায় ভর করেছে। দুপুরের পরেই নিউ প্রজেক্টের একটা মিটিং ছিল সব শেয়ার হোল্ডার আর বেলার টিম সাথে আর.এম সবাই মিলে তো আর.এম মিটিংয়ে আসার পর থেকে বেলাকে দেখে চোখ দিয়ে গিলে খাচ্ছিলো তারপরই নিজেকে সামলে স্বাভাবিক ভাবে মিটিং শেষ করেছে তবে মিটিং রুম ছেড়ে সে বাইরে বেরিয়ে যেতে আর.এম ইনিয়ে বিনিয়ে বেলার সাথে কথা বলার চেষ্টা করে তবে বেলা প্রথমে এড়িয়ে গেলেও বেলা কিছু একটা ভেবে বাঁকা হেসে ঠিক সাঁঝের কেবিনের পাশে তাদের জন্য বরাদ্দ রুমের সামনে দাঁড়িয়ে হেসে হেসে কথা বলতে থাকে। তবে কথা বলার সময়েও তার নজর ঠিক সাঁঝের কেবিনের দিকে তাক করে রেখেছিলো আর সাঁঝের হিংস্র ভয়ংকর রূপ দেখে মনে মনে একটু ভয় পেলেও সাঁঝকে জব্দ করতে পেরেছে তাকে যে জ্বালিয়ে দিতে পেরেছে কেমন জ্বলে যায় বুকের ভিতর যখন ভালোবাসার অন্য কারোর সাথে এইভাবে থাকে সেটা বোঝাতে এই ব্যবস্থা বেলার আর সাঁঝের রূপ দেখে মনে বেলা সফল হয়েছে। এতদিন এতবছর সে জ্বলেছে যন্ত্রণায় ছটফট করেছে এবার নাহয় সাঁঝও একটু সেই যন্ত্রণায় জ্বলতে থাকুক ক্ষতি কি এতে।
বেলা আর.এমের গায়ে পড়া ভাবটা আর নিতে না পেরে তাড়াতাড়ি কথা শেষ করে রুমের মধ্যে ঢুকে পড়ে। এতটুকু ডোজ আজকের যেয়ে ঠিক আছে না জানি আবার কি তান্ডব শুরু করে দেয় আর তার উপর না কোন সুনামি এসে পড়ে তবে যায় আসুক না কেনো বেলা এত বছর যেই কষ্টে যন্ত্রণায় ছিল সেটাও সে সাঁঝকে অনুভব করাতে চায় তাই এই প্রকল্প জারি থাকবে। বেলা, নিশান ওম বেদ শান্তা সারা রুহি আর এখন তাদের সাথে যোগ হয়েছে জাকিয়া সবাই মিলে নিজেদের কাজ করছে আর জাকিয়া বেলার পাশে বসে তার কাজে সাহায্য করছে কম বকবক করছে বেশি।
একটু পরেই তাদের কানে আসে কিছু ভেঙে পড়ার আওয়াজ, তবে বেলার বুঝতে বাকি থাকেনা এটা ভাঙচুরের আওয়াজ আর এত আসছেও সাঁঝের কেবিনের থেকে একের পর এক তোড় ফোড় করে যাচ্ছে শুধু কিছু ভেঙে পড়ার আওয়াজ আসছে সবাই অবাক হয়ে বেলার দিকে একবার তাকিয়ে নিয়ে পাশের রুমের দিকে তাকায় তবে কিছু দেখতে পাচ্ছেনা আর এইসব ভাঙচুরের আওয়াজ শুনে বেলার মুখে অদ্ভূত এক হাসি ফুটে উঠে যেটা সবাই লক্ষ করেছে বাকিরা ভ্রু কুঁচকে একবার বেলার দিকে তাকায় সাঁঝের রুমের দিকে দৃষ্টি দেয় তাদের কাছেও খুব অদ্ভূত লাগছে বেলার হঠাৎ এই অনাকাঙ্খিত এই হাসি তারমানে কি সাঁঝের এই ভাঙচুরের পিছনে কোনও ভাবে বেলার হাত আছে।
-“কি ব্যাপার বেলা তুই এভাবে হাসছিস কেনো? শান্তা ভ্রু কুঁচকে সন্দেহ দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে ওঠে।
-” হ্যাঁ সেই তুই এমন অদ্ভূত ভাবে কেনো হাসছিস? কোনো ভাবে তুই এইসবের পিছনে নেইতো? সারা ভ্রু কুঁচকে বলে ওঠে।
শান্তা আর সারার প্রশ্ন শুনে বেলার ঠোঁটের হাসি আরো কিছুটা বৃদ্ধি পায়। সে কিছু না বলে ঠোঁটের কোণে হাসি ফুটিয়ে রেখে নিজের কাজ করতে থাকে।
-” ওহ মাই গড তারমানে ভাইয়ের এইসব ভাঙচুরের পিছনে তুমি আছো? জাকিয়া অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করে ওঠে।
-” বেলা তুই কি করেছিস সত্যি কথা বল, যে স্যার এমন ভাবে রেগে গেলো হঠাৎ করে! নিশান বলে ওঠে ।
-“কিছুই করিনি আমি। আমি কি কিছু করতে পারি বলে তোদের মনে হয়? বেলা বাঁকা হেসে বলে ওঠে ।
-“তোর এই হাসিটা বলে দিচ্ছে তুই কিছু করেছিস এমন যার জন্যে এখন এই ভাঙচুর চলছে। বেদ বলে ওঠে।
-“আমি কি করেছি আমি কিছুই করেনি আমিতো শুধু আর.এমের সাথে কথা বলছিলাম এতে রেগে যাওয়ার কি আছে! সে যখন দিশার সাথে কথা বলতো আমি কি সেটা নিয়ে এমন তোড়ফোড় করেছি না তার দিশার সাথে চিপকে থাকা নিয়ে কিছু বলেছি তাই সামান্য আমার আর.এমের সাথে কথা বলা নিয়ে এত ভাঙচুরের কারণও আমি দেখছি না। বেলা ঠোঁটে হাসি রেখে তাচ্ছিল্য করে বলে ওঠে।
বেলার কথা শুনে সব কটা আকাশ থেকে পড়ার মত করে বেলার দিকে বসে পড়ে দাঁড়িয়ে থাকা অবস্থায় সব ধুপ ধাপ করে চেয়ারে বসে পড়ে অবাক হয়ে বেলার দিকে তাকিয়ে আছে তাদের আর বুঝতে বাকি নেই আসলেই ঘটনাটা কি ঘটেছে আর কেনো সাঁঝের এমন ভাঙচুর চলছে আর বেলার কথা গুলোও তাদের বুঝতে বাকি নেই বেলা এইসব ইচ্ছে করে করেছে সাঁঝকে জ্বালানোর জন্যে সেটাও বুঝতে পারে। কেউ কিছু বলবে এর আগেই খুব জোরে বিকট একটা আওয়াজ সবাই বাইরের দিকে তাকিয়ে দেখে সাঁঝ তার কেবিনের দরজা খুব জোরে ধাক্কা দিয়ে খুলে রুম থেকে বেরিয়ে যাচ্ছে না সে অন্য কোথাও যাচ্ছেনা সে অফিসে থেকে বাইরের দিকে চলে যাচ্ছে। বেলা সাঁঝের যাওয়ার দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে সাঁঝ কেমন আউলে ঝাউলে গেছে এই কয়েক মুহূর্তে দেখেই বেলা একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে চোখ সরিয়ে নেয়।
-“বেলা তুই জানিস তুই কি করেছিস এটা ভাইকে তুই ভয়ংকর ভাবে রাগিয়ে দিয়েছিস তুই কিছু করিসনি বললেও এর মধ্যে দিয়ে তুই অনেক কিছুই করে ফেলেছিস। সারা উত্তেজিত হয়ে বলে ওঠে।
-” আমি কিছুই করিনি এটা তার প্রাপ্য এটুকু তাকে ভোগ করতেই হবে যেমনটা আমি করেছি এত গুলো বছর ধরে। বেলা কঠিন কন্ঠে বলে ওঠে।
বেলার কথা শুনে সবাই থমকে যায় বেলার সবার দিকে তাকিয়ে নিজের ছোটো হ্যান্ডব্যাগটা ঠিক করে পিঠে বাধিয়ে নিয়ে কেবিন থেকে বেরিয়ে যায়। বাকিরা বেলার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেলে এছাড়া তাদের কিছুই করার নেই।
বেলা অফিসে থেকে বেরিয়ে সোজা মায়ানীড়ে চলে আসে। বাড়িতে ঢুকেই কোনো দিকেই না তাকিয়ে নিকের রুমের দিকে পা বাড়ায় তবে রুমের ভিতর ঢোকার দুটো হাত শক্ত করে রুমের ভিতরে টেনে নিয়ে যায়।
চলবে….?
ভুল ত্রুটি মার্জনা করবেন..। নিজেদের মতামত জানাবেন ।