#তোর_উঠানে_বিকাল_ছায়া🥀
১৯তম খন্ড
#লেখিকা-লামিয়া রহমান মেঘলা
রুহি খাবার নিয়ে ছায়ার রুমে প্রবেশ করতে হটাৎ একটা ঠান্ডা হাওয়া ফিল করে।
রুহি কিছুটা সিউরে ওঠে।
তার পর দেখতে পায় জানাটা খোলা বাইরে বৃষ্টি শুরু হবে।
বাইরে মেঘ করেছে ভিশন।
রুহি গিয়ে জানালা লাগিয়ে দেয়।
–ছায়া ওঠ।
ছায়া চোখ মৃদু করে খোলে।
–উঠে পর বাবুর আম্মু,
রুহির মুখে বাবুর আম্মু শুনে ছায়া রুহির দিকে করুন দৃষ্টিতে তাকায়,
রুহি তা দেখে চোখের পানি আড়াল করে বলে,
–আরে দেখিস তুই আমার বাবার মধ্যে ভাইয়াকে পেয়ে যাবি।
–তুই কি করে জানলি বাবা হবে?
–হবে দেখিস ওঠ খেয়ে নে তোকে খাইয়ে আন্টিকে খাওয়াতে যাবো।
–তোর কষ্ট হচ্ছে না।
–আমার তুই ছাড়া কে আছে বল।
–তুই বেস্ট রুহি।
–আমার কাছেও তুই বেস্ট নে খেয়ে নে।
রুহি ছায়াকে খাইয়ে দিলো।
ছায়ার খাবার শেষে রুহি নয়লা বেগমের কাছে গেল।
ছায়া পেটে হাত দিয়ে চোখ বন্ধ করলো,
ফিল হচ্ছে ছায়ার।
–জানিস তোর বাবা চাইত না তুই এতো জলদি দুনিয়াতে আয়।
সব সময় আমায় বলত আমি মেডিকেল এ চান্স পাবার পর আমাকে তোর মতো একটা বাবু দিবে।
আমি কখনো ভাবি নি তুই আসবি আমার কাছে কিন্তু তখন তোর বাবা থাকবে না।
কখনো ভাবি নি।
কেন এমন হলো রে বলনা।
তোর বাবাকে এনে দে না বাবু।
আমি যে ওকে ছাড়া এজ মুহুর্ত কাটাতে পারছি না তোর বাবকি বুঝতে পারছে না বাবু।
ছায়া চোখ বন্ধ করে চোখের পানি ফেলছে আর বাইরে থেকে কেউ বুকে পাথর দিয়ে ছায়ার কষ্ট ফিল করছে।
কষ্ট হচ্ছে ভিশন কষ্ট।
যা কল্পনার বাইরে।
,,
,
,
নয়লা বেগম কে খাবার দিয়ে রুহি বাইরে এলো।
দেখতে পেল আবির ঢুলছে।
সে কন্ট্রোলে নাই পড়ে যাবে যাবে।
রুহি দৌড়ে গিয়ে আবিরকে ধরে বসে,
রুহি আবির কে ধরে বুঝতে পারে আবির ড্রিক করেছে।
এই ভরদুপুরে আবির ড্রিক করেছে।
রুহি ভেবেই আবির কে ঘরে নিয়ে আসে।
এতো দিন রুহি এ বাড়িতে আছে রুহি এক দিন ও আবির কে ড্রিক করতে দেখে নি।
রুি আবির কে শুইয়ে দিয়ে পায়ের জুতা খুলে দিলো।
আবির কি সব বিরবির করছে।
রুহি আবিরের হাত থেকে ঘড়িটা খুলে রাখলো।
আবিরের টাই টা খুলতে আবির রুহির হাত ধরে তাকে নিজের বুকের উপর ফেলল,
রুহি হটাৎ এমন কাজে হতভাগ হয়ে গেল।
–কি করছেন ভাইয়া।
–ভালোবাসা দিবি আমায়।
একটু ভালোবাসা দে না রে।
আমার না ভিশন কষ্ট হয় এভাবে জীবন কাটাতে।
কারোর থেকে ভালোবাসা পাই না আমি।
পেতাম এক জনের থেকে সে নেই আর যাকে সব দিয়ে ভালোবেসেছি সে ধোঁকা দিলো।
দিবি আমায় একটু ভালোবাসা।
(মাতাল কন্ঠে কথা গুলো বলছে আবির)
আবির রুহির ভিশন কাছে রুহি আবিরের হৃৎস্পন্দনের গতি বুঝতে পারছে।
আবিরের নিশ্বাস আর রুহির নিশ্বাস মিলিত হয়ে যাচ্ছে।
রুহি উঠতে গেলে আবির রুহিকে আরো করে জড়িয়ে ধরে।
রুহি বুঝতে পারছে না কি করবে।
আবির রুহির হাত ধরে আছে।
কিছু সময় এভাবে থাকার পর আবির নিদ্রায় চলে গেল।
আস্তে রুহির হাতটা ছেড়ে দিলো।
রুহি আবিরের গায়ে চাদর টেনে দিয়ে বাইরে চলে এলো।
কিন্তু বাইরে থেকে কেউ এই দৃশ্য দেখেছিল।
সে আর কেউ নয় নয়লা বেগম।
ঘরে গিয়ে নয়লা বেগম ভাবতে থাকে রুহিকে আবিরের বউ হিসাবে এই বাড়িতে রেখে দিলে আবিরের কষ্ট টা মোচন হবে।
কিন্তু এই বিষয়ে রুহির মতামত প্রয়োজন।
নয়লা বেগম কিছু সময় ভেবে কাউকে ফোন করে,
–হ্যালো।
–জি ম্যাম বলুন।
–আমার একটা লাল শাড়ি লাগবে।
আর একটা লাল ওড়না।।
–ম্যাম বিয়ের জন্য।
–কিছুটা সেরকম কিন্তু এ কথা যেন বাইরে না যায়৷
তোমার লোককে বলব এসে আমার হাতে জিনিস টা দিতে।
–জি ম্যাম।
নয়লা বেগম ফোনটা রেখে দেয়।
,
,
রুহি ছায়ার মাথা টিপে দিচ্ছে।
–জানিস রুহি তোর ভাইয়ার মাথা এভাবে চেপে দিতাম আমি।
–হুম জানি তোদের ভালোবাসার গভীরতা কল্পনার বাইরে।
ছায়া মৃদু হাসলো।
কিন্তু মুহুর্তে নির্ঝর এর কথা মনে হতে মৃদু হাসি টুকু গায়েব হয়ে গেল।
–ঘুমা ছায়া।
–কতো ঘুমিয়ে রাখবি আমায়।
–এই কষ্টের শেষ এক মাত্র ঘুমে।
তাই ত ঘুমিয়ে রাখতে চাই৷।
–রুহি আমায় একটু বাইরে নিয়ে যাবি।
–তুই পারবি না যেতে কাল একটা উইল চেয়ারের ব্যাবস্থা করব তার পর যাস।
–আচ্ছা।
ছায়া চোখ বন্ধ করে তখন হটাৎ ঘরে নয়লা বেগম আসে,
–আন্টি আপনি।
–হ্যাঁ কিছু কথা ছিল।
ছায়া একটু উঠে বস মা।
নয়লা বেগম ছায়াকে ধরে বিছনার সাথে হেলান দিয়ে শুইয়ে দেয়।
–আমি একটা সিদ্ধান্ত নিয়েছি।
–কি সিদ্ধান্ত মা।
–রুহির সাথে আবিরের বিয়ে দিবো।
কথাটা শুনতে রুহির চেহারা পরিবর্তন হয়ে গেল।
হৃদয়ের স্পন্দন দ্বিগুণ গতিতে বেড়ে যেতে লাগলো।
–কিন্তু মা রুহি কি,
–সেটাই শুনবার জন্য এখানে আসা।
তুই কি আমার ছেলের বউ হবি রুহি৷।
হাতে একটা থালায় একটা লাল শাড়ি আর ওড়না নিয়ে কথাটা বলল নয়লা বেগম।
–কিন্তু আন্টি উনি কি রাজি?
–হুম রাজি।
আজকেই তোদের কলমা করে রাখবো আমি।
আর দেরি করতে চাই না।
বাইরে থেকে মানুষ তোকে অনেক কথা শুনায় তোদের বিয়েটা হয়ে গেলে কেউ আর কথা শুনানোর সাহস পাবে না।
নয়লা বেগমের কথায় রুহির চোখের কনে পানি চিকচিক করতে লাগলো।
এই পরিবার থেকে যে রুহি এতো কিছু পাবে তা কখনো কল্পনা করে নি রুহি।
বিকাল বেলা,
কাজি ডেকে বিয়েটা পড়ানো হয়ে যায়।
সব সুন্দর ভাবে পরিপূর্ণ হয়৷
আবিরের মত ছিল বিয়েতে ।
না থেকেও উপায় নেই রুহির কথা ভাবতে গেলে তাকে বিয়েটা করতে হয়।
,
রাতে,
ছায়াকে খাইয়ে দিয়ে বিছনা ঠিক করতে গেলে রুহির হাত ধরে বসে ছায়া।
–কি হয়েছে?
–কিছু না তুই ভাইয়ার রুমে যা।
–আরে না। তুই যে কি বলিস তোকে এভাবে রেখে।
–না সমস্যা নেই আমি ঠিক আছি মা ওকে নিয়ে ভাইয়ার রুমে দিয়ে আসুন।
–আন্টি,
–এই আন্টি কি মা বল এখন থেকে।
রুহি কিছুটা লজ্জা মখা কন্ঠে মা ডাকে নয়লা বেগম কে।
নয়লা বেগম রুহির পাশে এসে বলে,
–চল আমি ছায়ার পাশের রুমেই থাকব সমস্যা হবে না আয়।
নয়লা বেগম রুহিকে আবিরের রুমে বসিয়ে দিয়ে আসে।
ছায়াকে শুইয়ে নিজের রুমে চলে যায়।
রাত ১২ টা,
আবির রুমে এসে বিছনার মাঝে নববধূ সাজে রুহিকে দেখতে পায়৷
আবির রুহি দুজনের হৃৎস্পন্দনের গতি প্রবাহ বেড়েছে।
আবির ধিরে রুহির দিকপ এগিয়ে গিয়ে রুহির পাশে বসে।
হালজা ডিম লাইটের আলোতে রুহির চেহারাটা দেখে।
মেয়েটা বেশ ফর্সা কিন্তু অত্যাধিক নয়।
গোলগাল মুখটা তার৷
মায়াবী চোখ।
রুহির হাতটা ধরে হাতে আংটি পরিয়ে দেয়।
রুহিও কিছু বলতে পারে না।
আবির ও না,
,
এদিকে,
ঘুমের মাঝে হটাৎ ভিশন শীত অনুভব হচ্ছিল ছায়ার।
কাথাটা আরো টেনে নেয়৷
পাশ ফিরে হাতের কাছে যা পায় তাকে জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে যায় ছায়া।
ছায়াকে এভাবে নিজের সাথে জড়ানো দেখে লোকটা হেসে বসে,
–আজ নয় কাল যে মা হবে সে এখানো বাচ্চাটি রয়ে গেল।
ছায়ার কপালে আলতো চুমু দিয়ে ছায়াকে জড়িয়ে নেয়।
,
এদিকে,
আবির চুপচাপ রুহির হাতটা ধরে বসে আছে।
কিছু বলবে বলবে করে অনেকটা সময় কেটে যায়,
চলবে,