দুই হৃদয়ের সন্ধি পর্ব-৮+৯

0
386

#দুই_হৃদয়ের_সন্ধি
#পর্বঃ৮+৯(মহাপর্ব)
#লেখিকাঃদিশা_মনি

মুসকান এক পলকে তাকিয়ে রয় চির চেনা সেই মুখটির পানে। এই অববয়, এই চোখ, নাক সবই যে তার বড্ড চেনা।

বিপরীত দিকে থাকা কূজনও কিছুক্ষণ বিমূঢ় ভাবে তাকিয়ে থাকে মুসকানের পানে। সেও যেন বড্ড অবাক হয়ে গেছে মুসকানকে এভাবে দেখে। মুসকান যখন বিস্ময়ের সাথে কূজনকে দেখতে ব্যস্ত তখন আরিফ ভ্রু কুচকে তাকিয়ে আছে মুসকানের দিকে। সে তো এটাই বুঝতে পারছে না যে কূজনকে দেখার পর থেকে মুসকান এমন করছে কেন। মুসকান কি কূজনকে আগে থেকে চেনে? এই প্রশ্নটাই ঘুরপাক খেতে থাকে তার মনে।

কূজন বিস্ময়ের মাত্রা চাপিয়ে ধীর পায়ে ভেতরে প্রবেশ করল। মুসকানের একদম পাশে এসে দাঁড়ালো। মুসকান হতবাক নয়নে তাকিয়ে রইল। চকিত হয়ে কিছু বলতে যাবে তার পূর্বেই আরিফ এগিয়ে এসে মুসকানের হাতটা শক্ত করে ধরে বলল,
“মিট মাই ওয়াইফ, মুসকান চৌধুরী।”

কূজনের চোখ দুটো বিস্ময়ে পরিপূর্ণ হয়ে গেল। নিজের বন্ধুর স্ত্রী হিসেবে এভাবে নিজের প্রিয়তমাকে দেখতে হবে তা বোধহয় কল্পনাও করতে পারে নি কূজন। মুসকানের দিকে কিছু সময় থ মে’রে তাকিয়ে রইল। মুসকান ততক্ষণে চোখ নামিয়ে নিয়েছে। মনে মনে বলছে,
“তার মানে আমি কি সেদিন ঠিকই দেখেছিলাম? কূজন ভাইয়া তার মানে চট্টগ্রামেই আছেন এখন। কতদিন পর ওনার সাথে দেখা হলো তাও এভাবে!”

আবির, চয়ন দুজনে কুজনের উদ্দ্যেশ্যে বলল,
“কি রে তোর তো আমাদের সাথেই আসার কথা ছিল। তাহলে এত লেট করলি কেন?”

কূজন জোরপূর্বক হেসে বলে,
“একটু কাজে আটকে গেছিলাম। তাই আসতে দেরি হয়ে গেল। কিন্তু এখানে এসে যে এভাবে সারপ্রাইজ পাবো সেটা ভাবতেও পারিনি।”

আবির ও চয়ন অবাক হয়ে একে অপরের দিকে তাকায়। চয়ন কূজনকে শুধায়,
“কোন সারপ্রাইজের কথা বলছিস তুই?”

কূজন মুসকানের দিকে তাকায়। মুসকান কূজনের দিকেই তাকিয়ে ছিল। তাই কূজন তাকাতেই দুজনের চোখাচোখি হয়ে যায়। মুসকান চোখটা সরিয়ে নেয়। এখন যে মানুষটা তার জন্য নিষিদ্ধ। এখন ওদিকে না তাকানোই শ্রেয়। মুসকান পারছিল না নিজের বেহায়া মনটাকে নিয়ন্ত্রণ করতে। আমাদের মন যে সব সময় নিষিদ্ধ জিনিসের প্রতিই বেশি আসক্ত হয়ে পড়ে।

কূজনের মুসকানের দিকে তাকিয়ে বলে,
“আরিফের বউকে দেখে ভীষণ অবাক হয়েছি রে।”

আবির চোখমুখে বিস্ময় ঝুলিয়ে বলে ওঠে,
“কেন? তুই আমাদের ভাবিকে দেখে অবাক হলি কেন?”

“তোদের সবার ভাবি, মানে আরিফের বউকে আমি আগে থেকেই চিনি।”

কূজনের কথা শুনে ভীষণ অবাক হয়ে গেল আরিফ। একবার মুসকানের দিকে তো আরেকবার আরিফের দিকে তাকালো সে। বুঝে ওঠার চেষ্টা করল কি চলছে এই দুজনার মধ্যে। মুসকান কিছুটা বিব্রতবোধ করে বলল,
“আপনারা বসুন, আমি সবার জন্য খাবার নিয়ে আসছি।”

আরিফ আচমকা মুসকানের হাত ধরে তাকে আটকে দিল। কন্ঠে কপট রাগী ভাব এনে বলল,
“একটু অপেক্ষা করুন। কূজনের পুরো কথা আগে শুনি।”

কূজন মুসকানের দিকে তাকিয়ে বলে,
“মুসকান তুই কিছু বলবি না আমি বলব?”

মুসকান থতমত খেয়ে যায়। আমতাআমতা করে বলে,
“তুমিই বলো ভাইয়া।”

মুসকানের অনুমতি পেয়েই কূজন বলে ওঠে,
“মুসকান আমার মামাতো বোন। আমার নিজের মামার মেয়ে।”

আরিফ বিস্মিত হয়ে বলে,
“তার মানে তুই মুসকানের নিজের ফুফুর ছেলে।”

কূজন আয়েশি ভঙ্গিতে নাকে হাত দিয়ে বলে,
“হ্যাঁ। মুসকান যখন ক্লাস ফাইভে পড়ে তখন মামা মারা যান। তারপর মামি ওকে নিয়ে নিজের বাপের বাড়িতে চলে যান। তবু আমাদের মাঝে টুকটাক কথাবার্তা ছিল। কিন্তু এরপর যখন মামি দ্বিতীয় বিয়ে করল তখন যোগাযোগটা একেবারে বন্ধ হয়ে গেল। কিন্তু তাই বলে এভাবে যে মুসকানের বিয়ে হয়ে যাবে তাও আবার আমার অজান্তেই সেটা ভাবতে পারিনি।”

শেষ কথাটুকু বলতে গিয়ে কূজনের কন্ঠটা কেপে উঠল। মুসকানের হঠাৎ করে খুব কষ্ট হলো। সে দ্রুত প্রস্থান করলো। কূজন এবং আরিফ দুজনেই মুসকানের যাওয়ার পানে উদাস দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল।

এদিকে মুসকান রান্নাঘরে এসেই মুখে আঁচল চেপে কাঁদতে লাগল। কান্নারত গলায় বলতে লাগল,
“কেন এমন হচ্ছে আমার সাথে? আমি তো বাস্তবতাটাকে মেনেই নিয়েছিলাম। তাহলে কেন পুরানো অতীত ফিরে এসে আমায় কষ্ট দিচ্ছে? কূজন ভাইয়া..উনি কবে ঢাকা থেকে চট্টগ্রামে এলেন? আর আরিফের সাথে ওনার বন্ধুত্বও বা কিভাবে হলো।”

এসব প্রশ্নের চেয়েও মুসকানের মাথায় যেই প্রশ্নটা বেশি ঘুরছে সেটা হলো কূজনের চোখে দেখা কষ্ট। ঐ দৃষ্টিই বলে দিয়েছিল লোকটা ভীষণ ভেঙে পড়েছে। মুসকান অতীতের পাতায় ডুব দিল। অতীতের তিক্ত অভিজ্ঞতা মনে পড়তেই মুসকান বলল,
“সব ভুল সব। উনি কেন আমার জন্য কষ্ট পাবেন? আমার বিয়ে হয়ে গেছে তাতে ওনার কি? উনি তো আমায় ভালোবাসেন না। ওনার তো আমার প্রতি কোন অনুভূতিও নেই। তাহলে কেন ইনি কষ্ট পাবেন? আমারই বুঝতে কোথাও ভুল হয়েছে।”

মুসকান অতীতের কথাগুলো মনে করে। তখন সবেমাত্র ক্লাস এইটে পড়তো মেয়েটা। তখনো তার মা দ্বিতীয় বিয়ে করে নি। মুসকান ঈদের ছুটিতে দাদার বাড়িতে বেরাতে এসেছিল।

তখন সদ্য কৈশোরে পা দেওয়া চতুর্দশী মেয়েটি নিজের মনের অনুভূতি নিয়ে ভীষণ সজাগ ছিল। ছোটবেলা থেকেই নিজের ফুফাতো ভাই কূজনের প্রতি তার ছিল অন্যরকম টান। কূজনের চোখ মুখের ভাষাও মুসকান বুঝিয়ে দিত সেও কিছু ফিল করে মুসকানের জন্য। নিজের প্রিয় কাছের কিছু বন্ধুর সাথে নিজের মনের কথাও ভাগ করে নিয়েছিল মুসকান। তাঁরাও মুসকানকে বলেছিল,
“তুই এবার তোর কূজন ভাইকে নিজের মনের কথা বলেই দে।”

এসব কথায় প্রলুব্ধ হয়ে মুসকানও সিদ্ধান্ত নেয় সে তার কূজন ভাইয়াকে নিজের মনের কথা বলবে। এবার ঈদের ছুটিতে মূলত সেইজন্য বাড়িতে এসেছে সে। সৌভাগ্যবশত কূজনও সেইসময় এসেছিল। তখন দশম শ্রেণির ছাত্র ছিল কূজন। তাই মামাবাড়িতে বেড়াতে এসেও রক্ষে নেই। সারাক্ষণ বইয়ে মুখ ডুবিয়ে রাখতে হতো।

মুসকান কূজনকে নিজের মনের কথা বলা নিয়ে ভীষণ দ্বিধাদ্বন্দে ছিল। সেই সময় যখন সে সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছিল তখন মুসকানের বড় চাচার মেয়ে চুমকি তার মনের ছটফটানি বুঝতে পারে। চুমকি মুসকানের থেকে ৮ মাসের বড় ছিল। সমবয়সী হওয়ায় দুজনের মধ্যে বেশ ভাবও ছিল।

চুমকি মুসকানকে ছটফট করতে দেখে তাকে শুধায়,
“তোকে এমন লাগছে কেন মুসকান?”

মুসকানের কারো ভরসার ভীষণ প্রয়োজন ছিল। তাই সে চুমকিকে বলে,
“আপু আসলে আমি না..আমি কূজন ভাইয়াকে ভীষণ পছন্দ করি। কিন্তু আমি ভীষণ সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছি। ভাইয়াকে কি বলব নিজের মনের কথা?”

হঠাৎ করেই চুমকির মুখে রাগ, ক্ষোভ ফুঁসে ওঠে। মুসকান কিছু বুঝতে পারে না যে চুমকি হঠাৎ এভাবে রেগে গেল কেন। তাই প্রশ্ন করে,
“কি হলো আপু? তোমাকে এমন লাগছে কেন?”

“তুই আমার ভালোবাসার দিকে হাত বাড়াবি আর আমি চুপ থাকব ভাবলি?”

চুমকির কথা শুনে মুসকান হতবাক নয়নে তাকায়। চুমকি রাগী স্বরে বলল,
“কূজন ভাইয়ার থেকে দূরে থাক। আমরা দুজনে একে অপরকে ভালোবাসি। ভীষণ ভীষণ ভালোবাসি। তুই আমাদের মধ্যে একদম আসার চেষ্টা করবি না।”

চুমকির বলা কথাগুলো মুসকানের কিছুতেই বিশ্বাস হচ্ছিল না। তার কূজন ভাইয়া যে চুমকিকে ভালোবাসতে পারে এটা যেন তার কাছে দুঃস্বপ্ন। মুসকান হতবাক নয়নে চুমকির দিকে তাকিয়ে বলে,
“তুমি কি বলছ এসব আপু? কূজন ভাইয়া তোমাকে ভালোবাসে!”

“হ্যাঁ, ভীষণ ভালোবাসে।”

” আমি বিশ্বাস করি না।”

“বিশ্বাস না হলে যা কূজন ভাইয়াকে প্রপোজ করে দেখ। দেখে নিস ও তোকে মুখের উপর না বলে দেবে।”

চুমকির এত বেশি আত্মবিশ্বাস মুসকানকে ভেতরে ভেতরে ভীষণ ভেঙে দেয়। সে যেন বদ্ধপরিকর হয় চুমকিকে ভুল প্রমাণ করার জন্য। ঠিক সেই কারণে মুসকান সুযোগ খুঁজতে থাকে কূজনের সাথে কথা বলার।

ভাগ্যক্রমে সুযোগটা পেয়েও যায়। সেদিন ছিল শুক্রবার দুপুরের খাওয়া শেষে কূজন সেদিন মসজিদে নামাজে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত হচ্ছিল।

বাড়ির অন্যান্য পুরুষেরাও যাচ্ছিল। মুসকান সুযোগ বুঝে কূজনকে একা পেয়ে তার সামনে যায়। মুসকানকে আচমকা নিজের সামনে দেখে কূজন বেশ খানিকটা অবাক হয়। কোমড়ে হাত দিয়ে বলে,
“কি রে মুসকান? তুই হঠাৎ এই সময় আমার সামনে কি করছিস?”

“তোমাকে কিছু বলার ছিল কূজন ভাইয়া।”

“হ্যাঁ বল কি বলবি। তাড়াতাড়ি বল আমাকে মামা-নানাদের সাথে আবার মসজিদে যেতে হবে।”

“আমি না মানে আমি..”

“হ্যাঁ তুই..”

“আমি আসলে…”

“কি তুই?”

“আমি তোমাকে ভালোবাসি কূজন ভাইয়া।”

কূজন হতবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে মুসকানের দিকে। মুসকান নিজের মনের কথা কূজনকে বলেই চোখদুটো বন্ধ করে নেয়। ফোসফাস করে শ্বাস নিতে থাকে। কূজন রাগী গলায় বলে ওঠে,
“মুসকান!!”

মুসকান চোখ খুলে ঢোক গিলে। আর কিছু বলতে যাবে তার আগেই কূজন রাসভারী কন্ঠে বলতে থাকে,
“তোর বয়স কত হ্যাঁ? এই বয়সটা পড়াশোনা করার। কোথায় মন দিয়ে পড়াশোনা করবি তা না এসব আজেবাজে ভাবনায় ব্যস্ত তুই! প্রপোজ করছিস আমায়। তোর কি এখন প্রেম করার বয়স।”

“ভাইয়া..”

“চুপ আর একটা কথাও না। যা গিয়ে পড়তে বস। আর ভালো হবে যদি এসব আজেবাজে চিন্তা নিজের মাথা থেকে বের করে দিস।”

মুসকান আর এক মুহুর্ত দাঁড়ায় না। কূজনের সামনে থেকে চলে আসে। নিজের রুমে এসে নিজের মনের অনুভূতি ঢেলে দিয়ে কাঁদতে থাকে। আজ তার চোখের জল যেন কোন বাধা মানতে রাজি নয়।

মুসকানের মনে জলন্ত আগুনে ঘি ঢালার জন্য যেন চুমকির আগমন ঘটলো। মুসকানের কষ্ট আরো বাড়িয়ে দেওয়ার জন্য চুমকি বলল,
“কি রে! কূজন ভাইয়া তোকে রিজেক্ট করে দিল না! আমি তো আগেই বলেছিলাম। তোর মতো একটা মেয়েকে কূজন কেন ভালোবাসবে বল?”

মুসকান কান্নারত অবস্থায় বলে,
“আমার মধ্যে কিসের কমতি আছে চুমকি আপু? আমায় কি ভালোবাসা যায়না?”

চুমকি ঠাট্টা, উপহাস এবং বিদ্রুপাত্মক হাসি দিয়ে বলে,
“নিজেকে একবার আয়নায় দেখে নে মুসকান। তাহলেই তুই সবটা দেখতে পারবি। এত মোটা কেন রে তুই? তোকে দেখে তো মনে হয় যেন একটা ছোট হাতির বাচ্চা। এখনকার ছেলেরা তোর মতো মোটা মেয়েকে পছন্দ করবে না। বুঝলি?”

মুসকান সেদিন অনেক বেশি কষ্ট পায়। এরপর থেকে সে কূজন, চুমকি এই দুজনকেই এড়িয়ে চলে। চুমকির এসবে কিছু যায় আসেনা। সে তো মুসকানকে পাত্তাই দিতে চায় না। তবে কূজন বারকয়েক নিজে থেকে মুসকানের সাথে কথা বলার চেষ্টা করে। কিন্তু মুসকান কূজনকে সবসময় এড়িয়ে চলে।

ঈদ মিটে যেতেই মুসকান আর দেরি করে না। আবার নিজের মামার বাড়ি ফিরে আসে। এরপর থেকে তার জীবন অনেকটাই বদলে যায়। সে খাওয়া দাওয়া প্রায় বন্ধই করে দেয়। অনেক শুকিয়ে যায় মেয়েটা।

এরপর নিজের মায়ের দ্বিতীয় বিয়েও তাকে ভেঙে দেয়। তখন থেকেই তো মেয়েটার জীবনে সুখ যেন হারিয়ে যায়। দুঃখ এসে ভড়িয়ে দেয় মেয়েটার জীবন। তবে মুসকান নিজেকে বদলেই নেয়।

নিজেকে প্রতিবাদী গড়ে তোলে। যার ফলে শুরুর দিকে যেই মেয়েটা কারো কোন কথার প্রতিবাদ কর‍ত না সে আর কারো কোন উচ্চবাচ্যই সহ্য করতে পারত না। যার ফলে মুসকান সবার কাছে রাগী, বদমেজাজি বলে পরিচিত হতে লাগল। কিন্তু কেউ এর পেছনে মুসকানের মনের লুকানো দুঃখ গুলো দেখল না।

আসলে কোন মানুষ এমনি এমনি বদলে যায়না। তার সাথে হওয়া কিছু ঘটনাই তাকে সম্পূর্ণ বদলে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট।

★★★★
অতীতের স্মৃতি থেকে বেরিয়ে এসে চোখের জলটুকু মুছে নিলো মুসকান। অতঃপর নিজেকে শক্ত করে নিয়ে বলল,
“যা হবার হয়ে গেছে। এখন আমাকে স্বাভাবিক থাকতে হবে। যাই সবার জন্য খাবার নিয়ে যাই আমি।”

বিরিয়ানি আর গোস্ত নিয়ে আসে মুসকান। সবাই খাবার টেবিলে খেতে বসে পড়েছে। আতিকা চৌধুরীও চলে এসেছেন ততক্ষণে। কূজন মুসকানের৷ মামাতো ভাই এটা শুনে তিনি ভীষণ বেশি অবাক হয়ে গেছেন।

কূজনের সাথে বেশ কথাও বলেন। মুসকান এসে দাঁড়িয়ে বলেন,
“আসুন। সবাই খেতে বসুন।”

সবাই ধীরে ধীরে খেতে বসে। কূজনও সবার সাথে বসে পড়ে খেতে। মুসকান সবাইকে বিরিয়ানি আর গোস্ত দেবার পর কূজনের পাতে ইলিশ মাছের ডিমের বড়া দিয়ে বলে,
“এই নাও কূজন ভাইয়া। তোমার প্রিয় খাবার। খেয়ে দেখ তো কেমন হয়েছে।”

কূজন মলিন হেসে বলে,
“তুই রাধতেও শিখে গেছিস। তাহলে তো আমায় খেয়ে দেখতে হয় কেমন রান্না করিস তুই।”

কূজন একটু খেয়ে বলে,
“বাহ, তুই তো ভালোই রাধুনি হয়েছিস রে মুসকান।”

মুসকান মনে মনে বলে,
“যদি তুমি আমায় ভালোবাসতে তাহলে আমি তোমার জন্য আরো কত স্বাদের রান্না করতাম। আমার তো অনেক শখ ছিল কূজন ভাইয়া তোমার বউ হওয়ার। কিন্তু আমার ভাগ্যে যে তা ছিল না!”

খাওয়া দাওয়া শেষ করার পর সবাই উঠে দাঁড়ায়। আরিফ মুসকানের কাছে এসে বলে,
“আপনি একটু এদিকে আসুন তো। আপনার সাথে আমার কিছু জরুরি কথা আছে।”

মুসকান বলে,
“আচ্ছা, চলুন।”

মুসকান আরিফের সাথে যেতে যাবে তখন এরকম সময়ই হঠাৎ কূজন এসে বলে,
“তুই তো তোর বউয়ের সাথে পরেও কথা বলতে পারবি। আমি কি মুসকানের সাথে আগে একটু কথা বলতে পারি। ওকে অনেক কথা বলার আছে আমার। সেই কবে শেষ দেখা হয়েছিল আমাদের।”

মুসকান কূজনের দিকে প্রশ্নাত্মক দৃষ্টিতে তাকায়। আরিফ মুসকানের দিকে তাকিয়ে বলে,
“আপনি কি কূজনের সাথে কথা বলতে চান?”

মুসকান মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ বলে। আরিফ মর্মাহত হয়। মুসকানের হাত যেটা সে শক্ত করে ধরে ছিল সেই হাতটা ছেড়ে দিয়ে বলে,
“আচ্ছা যান। আপনার ভাইয়ের সাথে কথা বলুন।”

কূজন কপট রাগ দেখিয়ে বলে,
“ভাই নই মামাতো ভাই। মুসকান আয় তুই।”

মুসকান কূজনের দিকে তাকিয়ে বলে,
“যা বলার এখানেই বলো ভাইয়া। সবার সামনে বলো।”

“সবার সামনে বলা যাবে না। তোর সাথে আমার গোপন কথা আছে।”

মুসকান আরিফের দিকে তাকায়। তার চোখ দেখেই বোঝা যাচ্ছে সে ভীষণ রেগে যাচ্ছে। আবির, চয়ন ওরাও বিস্ময়ের সাথে তাকিয়ে আছে। কূজন মুসকানের হাত ধরে একপ্রকার জোর করেই তাকে নিয়ে আসে একটু দূরে। মুসকানকে হঠাৎ করেই জড়িয়ে ধরে সে।

চলবে ইনশাআল্লাহ ✨