নীলচে তারার আলো পর্ব-৩৬+৩৭

0
917

#নীলচে_তারার_আলো
#নবনী_নীলা
#পর্ব_৩৬

শুভ্র হিয়ার মুখের সামনে এসে ফিসফিসিয়ে বললো,” আই থিঙ্ক আজকের দিনটা বড্ড বেশামাল, সব কিছু তো দেখছি আমারই ফেবারে। ইভেন তোমার পড়ে থাকা আমার এই শার্টটাও।”

হিয়ার গায়ে এক হিম শীতল স্রোত বয়ে গেলো। দুজনের মাঝে দূরত্ব খুব অল্প। এমনভাবে শুভ্রের এতটা কাছে আসায় হিয়ার অস্থিরতা বেড়েই চলেছে। লোকটার গায়ে শার্ট পর্যন্ত নেই। তাই শুভ্রের দিকে তাকাতেও লজ্জা লাগছে। কি অদ্ভূত এক নিরবতা…! শুভ্র দূরত্ব কিছুটা কমিয়ে আনতেই দরজার শব্দ হিয়া ছিটকে সরে দাঁড়ালো। তার আত্মাটা এক্ষুনি বেড়িয়ে আসবে। কেউ কি তাদের এইভাবে দেখে নিয়েছে!

শুভ্র আড় চোখে হিয়ার দিকে তাকালো। তারপর তপ্ত নিশ্বাস ফেলে দরজার দিকে এগিয়ে গেলো। এক হাত দেওয়ালে রেখে দরজাটা ধরে দাড়ালো শুভ্র। নিধি এসেছে, হিয়ার খোঁজে। শুভ্র মিথ্যে বলাটা একদমই পছন্দ করে না কিন্তু আজ বাধ্য হয়েই বললো,” হিয়ার মাথা ব্যাথা করছে।” কথাটা বলতেও সে বেশ অসস্তি বোধ করলো।

নিধি ঠোঁট চেপে বললো,” ও আচ্ছা। তুমি তাহলে, কি ভাবির সেবা করছো?” বলেই শুভ্রের এমন খালি গায়ের দিকে তাকালো।

শুভ্র কঠিন চোখে তাকাতেই নিধি হেসে উঠে বললো,” আচ্ছা আমি। গেলাম।” বলেই দৌড় দিলো।

⭐হিয়া বিছানার একপাশে বসে আছে। সে বুঝতে পারছে না শুভ্র তার সাথে এই ঘরে বসে আছে কেনো? হিয়া কিছুতেই নিজেকে শান্ত করতে পারছে না। তার বুকের ধুকপুকানি তো বেড়েই চলেছে। হিয়া একটু কেশে বললো,” আপনি এই ঘরে বসে আছেন কেনো?”

শুভ্র আড় চোখে তাকিয়ে উঠে দাড়ালো। তারপর হিয়ার দিকে এগিয়ে আসতে লাগলো। হিয়া জড়সড় হয়ে বসে রইলো। এখন মনে হচ্ছে,কথাটা বলেই ভুল করেছে। হিয়া আমতা আমতা করে বলল,” আসলে আমি বলতে চাচ্ছিলাম, এইভাবে খালি গায়ে আছেন কেনো? শীত করছে না।”

” এতো চিন্তা আমার জন্যে? তাহলে শার্টটা আমাকে খুলে দিলেই পারো।”, শুভ্রের কথাটা শুনে হিয়ার বুকের ভিতরে ধুক করে উঠলো। হিয়া সঙ্গে সঙ্গে শার্টের কলার চেপে ধরে বিস্ফোরিত চোখে তাকালো তারপর ভয়ার্ত গলায় বলল,” থাক, থাক আপনি এইভাবেই থাকুন। ঠাণ্ডা লাগলেও এইভাবে থাকুন।”

শুভ্র বিরক্তির নিশ্বাস ফেললো। এইভাবে সে বের হতেও পারছে না। বাড়ির যা অবস্থা, বের হলেই অপ্রীতিকর পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হবে। শুভ্র হিয়ার দিকে আড় চোখে তাকিয়ে বললো,” তোমার এই শাড়ী শুকাতে আর কতক্ষন লাগবে?”

হিয়া ভ্রু কুঁচকে বললো,” আমি কি করে জানবো? এক দুই ঘণ্টা তো লাগবেই।”

শুভ্র বিছানার একপাশে রাখা বালিশটা নিয়ে শুয়ে পড়লো। ফোন আর চশমাটা একপাশে রাখতে রাখতে বললো,” তোমার শাড়ী শুকিয়ে গেলে আমাকে ডাকবে, বুঝতে পেরেছো?” বলেই দৃষ্টি সামনে রেখে শুয়ে পড়লো।

হিয়া ভ্রু কুঁচকে বললো,” আপনি এখন ঘুমাবেন?”

” হ্যা,” বলেই হিয়ার দিকে তাকালো তারপর বললো,” কেনো তোমার কি কিছু করতে ইচ্ছে করছে?” হিয়া আড় চোখে তাকিয়ে রইলো।

অসভ্য ডাক্তার মনে মনে বললো হিয়া।বলেই মুখ ঘুরিয়ে নিলো। শুভ্র পুনরায় দৃষ্টি সামনে রেখে চোখ বন্ধ করলো।

হিয়া আস্তে করে বিছানায় থেকে নেমে পড়লো। শাড়িটা যে কখন শুকাবে? লোকটা এতো খারাপ কাউকে ডেকেও দিচ্ছে না আরেকটা আনার শাড়ির জন্যে। অবশ্য ডাকলেও সমস্যা, বাড়িভর্তি লোক। সবাই গুরুজন আর বাকিরা তাদের দুজনকে এইভাবে দেখলে রসিকতা করবে। ভয়াবহ রকমের রসিকতা। সেইসব রসিকতা শোনার চেয়ে এই বদমাশ ডাক্তারের সাথে এক ঘরে থাকাও ভালো। শাড়িটা হালকা হালকা শুকিয়ে গেছে তবুও মনে হচ্ছে ঘণ্টাখানেক লাগবে।

হিয়া বারান্দার একপাশে নিজেকে আড়াল করে দাড়ালো। ইস নিচে সবাই কি মজাই না করছে? বাবা পিয়াজ কাটছে…! বড় চাচা কিছুক্ষণ পর পর টিসু দিয়ে বাবার চোখের পানি মুছে দিচ্ছেন। মা বেশ বিরক্তি নিয়ে বাবার এই কাদুনে চেহারার দিকে তাকিয়ে আছেন। বাকিদের কি নাজেহাল!

আচ্ছা এই ডাক্তার সাহেব কি রান্না করতে পারে? রান্না না করতে পারলেও ডাক্তার সাহেব কাটাকুটি তো ঠিক পারবে। মনে মনে ভেবেই হিয়া মজা পাচ্ছে।

শুভ্রের এই শার্ট গায়ে দিয়ে অদ্ভূত এক অনুভূতি হচ্ছে তার। মনে হচ্ছে শুভ্র যেনো তাকে নিজের সাথে আস্টে পিষ্টে জড়িয়ে রেখেছে। অসভ্য ডাক্তার কিভাবে মুখের উপর তখন বললো তুমি কি কিছু করতে চাও? মুখে কোনো লাগাম নেই।

হিয়া কিছুক্ষণ পর বারান্দা থেকে রুমে এলো। শুভ্রর দিকে তাকাতেই মনে হলে সে ঘুমিয়ে পড়েছে। হিয়া আবার বারান্দায় ফিরে এসেছে। শুভ্রের ঘুম ভাঙ্গানোর কোনো ইচ্ছে নেই তার। হিয়া পুরো সময়টা বারান্দার মিষ্টি রোদে কাটিয়ে দিলো।

শাড়িটা শুকোতেই হিয়া শাড়ী হাতে নিশব্দে পা ফেলে ওয়াশরুমে ঢুকে গেলো। তারপর একদম ঠিক মতন শাড়িটা পড়ে শুভ্রের শার্টটা হাতে নিয়ে বেরিয়ে এলো।

হিয়া খুব আস্তে আস্তে পা ফেলে এগিয়ে এসে শুভ্রের মাথার পাশে বসলো। উদ্দেশ্য ছিলো শুভ্রকে একটু জ্বালাতন করবে কিন্তু তারপর মুগ্ধতা ভরা চোখে তাকিয়ে রইলো ঘুমন্ত শুভ্রনীল আহমেদের দিকে।

কত পার্থক্য এই ঘুমন্ত আর জাগ্রত শুভ্রের মাঝে। বসন্তের এই মিষ্টি রোদের আলোয় কতটা সুন্দর লাগছে তার এই মুখটা। ঘুম থেকে জাগিয়ে তুলতে ইচ্ছে করছে না তার। হিয়ার মনের কোন সুপ্ত এক বাসনা জাগলো। হিয়া কিছু না ভেবেই আস্তে আস্তে মুখটা এগিয়ে আনলো ঘুমন্ত শুভ্রের দিকে। খুব কাছে এসে পড়তেই এক মুহূর্তের জন্যে থমকালো। সে এটা কি করতে যাচ্ছে? এই হনুমানটার এইভাবে কাছে চলে আসাটা কি ঠিক হচ্ছে? লোকটা যদি জেগে যায়? কিন্তু বদমাশ মনটা যে মানছে না। আচ্ছা একবার দেখে নিলেই তো হয় বিপদ কতটা আছে?

হিয়া ফিসফিসিয়ে শুভ্রের কানের কাছে বললো,” এই যে বদমাশ ডাক্তার? আপনি কি ঘুমিয়ে…..আছেন?” বলেই মুখটা উপরে তুলে শুভ্রের দিকে তাকালো। খুব হাসি পাচ্ছে হিয়ার তাও হাসিটা থামিয়ে শুভ্রের দিকে কিছুক্ষন তাকিয়ে রইলো। হিয়ার ইচ্ছে করছে টুপ করে লোকটার গালে একটা কিস বসিয়ে দেয়। থাক পরে হিতে বিপরীত হয়ে যাবে। হিয়া শুভ্রের কপালের সামনের চুলগুলো ফু দিয়ে উড়িয়ে দিয়ে সরে যাবে। সঙ্গে সঙ্গে শুভ্র চোখ মেলে তাকালো। শুভ্রকে তার দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে হিয়ার বুকের ভিতরটা ধুক করে উঠলো।

শুভ্র তাহলে এতক্ষণ ঘুমের ভান ধরে ছিলো। হায় আল্লাহ, শুভ্র সবটা শুনেছে তাহলে? হিয়া একটা ঢোক গিলে কোনো ভাবে উঠে যেতে চাইলো কিন্তু শুভ্র শক্ত করে হিয়ার হাত ধরে টেনে নিজের কাছে নিয়ে এলো। হিয়া বিস্ফোরিত চোখে তাকাতেই শুভ্র বললো,” তুমি ঠিক কি করতে চাইছিলে আমার সাথে? আর কে বদমাশ ডাক্তার?”, বলেই শুভ্র তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকালো। হিয়ার ঘাম ছুটছে রীতিমত। নাউজবিল্লাহ সব শুনে ফেলেছে। হিয়া অনেক সাহস জুগিয়ে বললো,” আসলে আমি চেক করছিলাম আপনি ঘুমিয়ে আছেন কিনা ?”

” এইভাবে আমার মুখের উপর ফু দিয়ে চেক করছিলে?”, পাল্টা প্রশ্ন করলো শুভ্র। শুভ্রের এই প্রশ্নে হিয়া চোখ পিট পিট করে তাকালো। কি বলবে এইবার সে? নিচের ঠোঁট ভিজিয়ে নিয়ে একটা ঢোক গিললো তারপর এলোমেলো দৃষ্টিতে বললো,” আমি ভেবেছিলাম আপনার গরম লাগছে, তাই।”

“কিন্তু,গরম তো আমার এখন লাগছে।”, শুভ্রের গলায় অন্য সুর শুনতেই হিয়া শুভ্রের দিকে একবার তাকিয়ে আবার চোখ সরিয়ে নিলো। শুভ্র এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে হিয়ার দিকে তারপর হালকা হেসে উঠে হিয়ার হাত ছেড়ে দিয়ে বললো,” আমি ভীতু দেখেছি কিন্তু তোমার মত ভীতু দেখিনি।”

হিয়া ছাড়া পেয়ে হুড়মুড়িয়ে উঠে আড় চোখে শুভ্রের দিকে তাকালো। শুভ্র উঠে বসে হাত বাড়িয়ে খাটের পাশ থেকে শার্টটা হাতে নিলো। হিয়া ভ্রু কুঁচকে বললো,” আমি ভীতু মানে?”

” এইযে আমি ঘুমিয়ে ছিলাম দেখে আমার কাছে আসার চেষ্টা করলে। তাও আবার ব্যার্থ চেষ্টা। আর ধরা পরার পর ভুলভাল কিছু মিথ্যে কথা।”, বলেই তাচ্ছিল্যের হাসি হাসলো শুভ্র। ব্যাপারটায় সে বেশ মজা পেয়েছে বোঝাই যাচ্ছে।

হিয়া মুখ বাঁকিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে এলো। তাকে ভীতু বলেছে..! ভয় পাওয়ার কি আছে? নিজের বরের কাছে যেতে আবার কিসের ভয়? সে মোটেও এতটা ভীতু না। শুধু ওই লোকটার কাছে একবার ধরা পড়লে যে সে আর ছাড়া পাবে না সেটা সে জানে। সেই ভয়েই ধারে কাছে ঘেঁষে না সে। কিন্তু লোকটা হাসলো কেনো তার উপর? ভেবেই রাগ লাগছে।

শুভ্র শার্টটা গায়ে দিয়ে সবে উঠে দাঁড়িয়েছে। হিয়াকে দরজার ওপাশ থেকে শুধু মুখ বের করে থাকতে দেখে বললো,” কি ব্যাপার! নিজের সাহসের পরিচয় দিতে ফিরে এসেছ?”

হিয়া এসেছিলো অন্য কারণে কিন্তু এইবার সত্যি ভীষন রাগ লাগছে লোকটা তাকে এতো ভীতু মনে করে? হিয়া আড় চোখে তাকিয়ে বললো,” একটু এইদিকে আসুন তো।”

শুভ্র ভ্রু কুঁচকে এগিয়ে এলো। হিয়ার সামনে আসতেই হিয়া চোখ দিয়ে ঈশারা দিয়ে বললো,” একটু ঝুঁকে আসুন।”

” কেনো?” অবাক হয়ে প্রশ্ন করতেই হিয়া কড়া গলায় বললো,” কথা আছে।”

” ওকে।”,বলে শুভ্র ঝুকে আসতেই শুভ্রকে অবাক করে হিয়া শুভ্রের গলায় কামড় বসিয়ে দিয়ে বললো,” এইবার বুঝলেন? আমার কতো সাহস।” বলেই ঝড়ের গতিতে দরজার ওপাশ থেকে মুখ বের করে দৌড়ে পালিয়ে গেলো। শুভ্র চোখ বন্ধ করে ব্যাথা সহ্য করলো কিন্তু চোখ মেলতেই সাহসী হিয়া উধাও। হুঁ, খুব সাহস। বাঁদর থেকে আবার বিড়ালে প্রমোশন হয়েছে।

[ #চলবে ]

#নীলচে_তারার_আলো
#নবনী_নীলা
#পর্ব_৩৭+( বোনাস )

শুভ্রকে এতোক্ষণ পর নিচে নামতে দেখে মোহনা এগিয়ে এলো। তারপর কোমরে দুই হাত দিয়ে বললো,” এতোক্ষণ কোথায় ছিলি বলতো? তোকে খুঁজতে খুঁজতে শেষ।” কথা বলে শেষ করতেই মোহনার চোখে পড়লো শুভ্রের গলায় লালচে দাগটার দিকে। মোহনা সঙ্গে এগিয়ে এসে বললো,” একি! কি হয়েছে তোর গলায়? অ্যালার্জি বেড়েছে নাকি?”

” নাহ্ বিড়াল কামড়েছে, গ্রাম্য বিড়াল।”, বলেই আড় চোখে দূরে বসে থাকা হিয়ার দিকে তাকালো। মোহনা সন্দেহের চোখে তাকিয়ে বললো,” এই বিড়ালের কাহিনীটা কি বলতো? কখন পাহাড়ি বিড়াল, কখনো গ্রাম্য বিড়াল। বিড়ালের সাথে তোর কিসের এত শত্রুতা?”

” সেটা বিড়ালকে গিয়েই জিজ্ঞেস কর।”,বলেই চোখ দিয়ে হিয়ার দিকে ইশারা করে চলে গেলো। মোহনা হিয়ার দিকে তাকালো। আচ্ছা তাহলে এই সেই বিড়াল? এতদিনে তাহলে এই বিড়াল রহস্য উঘাটন হয়েছে। মোহনা এগিয়ে এসে হিয়ার পাশে বসলো। হিয়া সবে একটা মিষ্টি নিয়ে মুখে দিয়েছে মোহনা বললো,” তুমিই তাহলে সেই বিড়াল।”

হিয়া ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে রইল। মুখে মিষ্টি তাই চোখের ঈশারায় জিজ্ঞেস করলো মানে? মোহনা হেসে ফেললো তারপর বললো,” তুমি শুভ্রকে একটা নাম দিয়েছিলে না? কি যেনো?”

হিয়া মিষ্টিটা শেষ করতে করতে বললো,” হনুমান?”

মোহনা হাসতে হাসতে বললো,” হনুমান আর বিড়াল! উফফ, তোমরা পারো ও বটে।” বলেই হাসতে হাসতে উঠে চলে গেলো। হিয়া হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে রইলো।কি বলে গেলো মোহনা? বিড়াল বললো তাকে? নিশ্চয় ওই শুভ্রনীল আহমেদ বলেছে। সবাইকে বলে বেড়াচ্ছে, অসভ্য লোক একটা।

⭐ হিয়া কড়া চোখে শুভ্রের দিকে তাকিয়ে আছে। মেজাজ তার ভীষন খারাপ। হিয়ার কিছু একটা হয়েছে তা না হলে শুভ্রের সাথে অন্য কাউকে দেখলেই তার মেজাজ খারাপ হয়ে যায়। এই রিমি তো আছেই কোথা থেকে কয়েকটা মেয়ে এসেছে এসেই শুভ্রের আশে পাশে ঘুর ঘুর করছে। ঘুর ঘুর করছে বলতে মারাত্মক রকমের ঘুর ঘুর। শুভ্র দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে গল্প করছে। আবার হাসাহাসি ও করছে। আর হিয়ার মাথা গরম করে দিতে পাশে তো ওই রিমি আছেই।

হিয়া ভ্রু কুঁচকে শুভ্রের দিকে তাকিয়ে আছে সেটা সে জানে। আর কেনো এমন দৃষ্টি সেটাও সে ধারণা করতে পারছে। কিন্তু শুভ্র নিজের মতন বসে আছে। হিয়া রেগে মেগে গাল ফুলিয়ে বাড়ির ভীতরে চলে গেলো। তার আর সহ্য হচ্ছে না।

দুপুরের পর শুভ্র ফিরে যাওয়ার জন্যে তার দাদির সাথে দেখা করে নিলো। বাকিরা আরো কিছুদিন থাকবে কিন্তু শুভ্রের কাজ আছে তাই সে আজই ফিরবে। সাহারা খাতুন কি একটা বুদ্ধি করে মোহনা আর হিয়াকে শুভ্রের সঙ্গে পাঠিয়ে দিলো। হিয়া তো আসবেই না মোহনা বুঝিয়ে সুজিয়ে রাজি করালো। কি যন্ত্রণা, এই লোকটার সাথে তাকে কেনো যেতে হবে?

শুভ্র বিরক্তি নিয়ে গাড়ি চালাচ্ছে। এই দুই কথা বলার মেশিনকে তার সারা রাস্তা সহ্য করতে হবে। আজকে আর হিয়ার ঘুম পাচ্ছে না। মুখে একেবারে কথার খই ফুটছে। শুভ্র বিরক্তির চরম পর্যায়ে পৌঁছে কানে হেডফোন লাগিয়ে নিলো।

বাড়িতে ফিরতে ফিরতে সন্ধ্যা গড়িয়ে গেলো। শুভ্র এসেই ফোনে ব্যাস্ত হয়ে পড়লো। অন্যদিকে কথাবার্তা ছাড়া হুট করে গিয়েই মোহনা লাইব্রেরী রুমটা লক করে দিলো।

হিয়া অনেকদিন পর ইউভিকে পেয়েছে। ইউভিটা একেবারে শুকিয়ে গেছে। হিয়া ইউভিকে কোলে করে নিজের রূমের কাছে এসে মোহনাকে দেখে এগিয়ে এলো। মোহনা হিয়ার হাত ধরে শুভ্রের ঘরে নিয়ে এলো। শুভ্র ফোনে কথা বলছিলো। মোহনাকে আসতে দেখে ফোনটা কান থেকে নামলো।

হিয়া আর শুভ্র দুজনেই খানিকটা অবাক। মোহনা ওদের আরো অবাক করে দিয়ে বললো,” আজ থেকে হিয়া আর লাইব্রেরী রুমটায় থাকবে না। ও তোর সাথে তোর ঘরে থাকবে। আজ থেকে এই ঘরটা তোর একার না, বুঝেছিস?”

শুভ্র এতোক্ষণে মোহনার এতো তড়িঘড়ি করে ওদের সাথে আসার কারণটা বুঝতে পারছে। তার পরিবারের সবাই এতো বেশি বুঝে কেনো?

হিয়া কথাটা শুনে হিমশীতল হয়ে গেলো। আজ থেকে এই ঘরে সে থাকবে?

মোহনা আরো বললো,” এটা আমার কথা না। মায়ের হুকুম। বুঝেছ?” তারপর হালকা কেশে উঠে বললো,” ঘরটা কি সাজিয়ে দিতে হবে নাকি?”

শুভ্র কড়া গলায় বললো,” তুই গিয়ে আগে নিজের বরকে দেখ।” বাকিটা বলার আগেই শুভ্রের ফোন বেজে উঠলো। শুভ্র ফোন হাতে ঘর থেকে বেরিয়ে এলো। হিয়া চুপ হয়ে দাড়িয়ে আছে। কেমন একটা অগোছালো অনুভূতি হচ্ছে। ইউভি লাফ দিয়ে কোল থেকে নেমে যেতেই হিয়ার হুশ ফিরল। মোহনা হিয়ার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বললো,” এবার তাহলে তোমার দায়িত্ব নেওয়ার পালা। ভয় পাওয়ার কিছু নেই। ভয় টয় পাচ্ছো নাকি আবার?”, বলেই হেসে উঠলো তারপর শান্ত গলায় বললো,” যাক তোমাদের সম্পর্কটা স্বাভাবিক হয়েছে এটাই অনেক।”বলেই সস্থির নিশ্বাস ফেলে মোহনা।

হিয়া বিছানায় চুপটি করে বসে আছে। হিয়ার কেনো জানি লজ্জা লাগছে। হটাৎ এমন লজ্জা পাওয়ার কারন সে খুঁজে পাচ্ছে না। এমনকি পুরো রাতটায় তার ভীষণ অস্থিরতা নিয়ে কাটলো। শুভ্রের দিকে একবারের জন্যে তাকালো না সে। নীরব নিশ্চুপে দুজনে পাশাপাশি রাত কাটিয়ে দিলো।

⭐ সকালে কলেজে যাওয়ার সময় হিয়ার মাথায় হাত তার জামা কাপড় জিনিসপত্র সবই তো লাইব্রেরী রুমটায়। রুমটা তো এখন তালা মারা, এবার কি করবে সে?

শুভ্র সকাল সকাল হসপিটালের জন্যে বেড়িয়ে গেছে। সে তো এখন আবার ডাক্তার সাহেব। হিয়া লকটা খোলার অনেক চেষ্টা করলো কি পারলো না। কাল রাতে তো সে এতো কিছু ভাবেই নি। বই খাতা, জামা কাপড় সবই তো এই রুমে? হিয়া উপায় না পেয়ে মোহনাকে ফোন দিলো কিন্তু মোহনার কাছে নাকি লকের চাবি নেই, বাড়ির সব চাবি থাকে তার মায়ের কাছে। চাবি আনার কোনো উপায়ও নেই। তার মানে যতদিন বাবা মা না ফিরে আসছে তার কলেজ যাওয়া বন্ধ।

হিয়া রীতিমত মাথায় পানি ঢালছে। একে তো শুভ্রের সাথে এক ঘরে এই বাড়িতে একা একা থাকতে হবে। তারওপর কলেজ যাওয়া বন্ধ, দম আটকে মরেই যাবে মনে হচ্ছে। সারাদিন সে করবেটা কি?

হিয়া আর কোনো উপায় না পেয়ে রান্না করতে নেমে পড়লো। কোনো না কোনো ভাবে তো সময় কাটতে হবে। হিয়া নিজের সব পছন্দের খাবার রান্না করলো। যদিও অনেকদিন হয়েছে সে রান্না করে না। এ বাড়ির লোকেরা তো জানই না যে সে রান্না করতে পারে। সবাইকে একদিন রান্না করে চমকে দেওয়া যাবে। আচ্ছা সে তো সব নিজের পছন্দের খাবার রান্না করলো। শুভ্রের কি এসব পছন্দ হবে? সে তো সব সিদ্ধ লবণ দিয়ে রান্না করা খাবার খায়। আদিকালে লোকেরা যেমন খেতো। সাধে কি আর বনমানুষ ডাকে?

শুভ্র বাড়িতে এসে সোজা নিজের রুমে গিয়ে ফেশ হয়ে বের হলো। কিন্তু এতোক্ষণে আশে পাশে কোথাও হিয়াকে দেখতে পেলো না। কলেজ এখন থেকে ফেরেনি নাকি? শুভ্র রুম থেকে বেরিয়ে দোতলা পুরোটা খুঁজলো। সিড়ি বেয়ে নিচে নামতেই রান্না ঘরের থেকে আওয়াজ পেলো। হিয়া রান্না ঘরে কি করছে? শুভ্র রান্না ঘরের দিকে এগিয়ে গেলো। রান্না ঘরে এসেই এক মুহূর্তের জন্যে থমকে গেলো সে।

মাথায় খোঁপা করে, কোমরে শাড়ির আঁচলটা গুঁজে কেমন এক গৃহিণী বেশে কাজ করছে হিয়া। এটা আবার কোন রূপ তার? এমন গৃহিণী বেশে এই মেয়েটিকে এর আগে কখনো দেখেনি সে। শুভ্র নিশ্চুপে কিছুক্ষণ হিয়ার মধ্যেকার, এমন দায়িত্বশীল নারী রূপটা দেখছে। কতই না ব্যাস্ত সে!

হিয়ার সব কিছু করা প্রায় শেষ। এইবার রান্নাঘরটা গুছিয়ে ফেলতে হবে। এলোমেলো হয়ে গেছে। হিয়া পাশে তাকাতেই দেখলো শুভ্র তার দিকে তাকিয়ে আছে। হিয়া অবাক হয়ে বললো,” আমি তো আপনাকে খেয়ালই করিনি। আপনি কখন থেকে দাড়িয়ে আছেন?”

” অনেক্ষন।”, শান্ত সুরে বললো শুভ্র। হিয়া সব কিছু ঠিক জায়গায় রাখতে ব্যাস্ত হয়ে পড়লো। শুভ্র এগিয়ে এসে একটা টিস্যু পেপার হাতে নিলো। তারপর হিয়ার হাত ধরে নিজের দিকে ঘুরিয়ে আনতেই হিয়া হকচকিয়ে তাকালো। শুভ্র হিয়ার গালে লেগে থাকা ময়দা মুছে দিতে ব্যাস্ত। হিয়া অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো কিন্তু ঠোঁটের কোণে হাসি চলে এলো মুহূর্তেই।

হিয়া ঠোঁট চেপে সে হাসি আটকে ফেললো। শুভ্র টিস্যুটা নিয়ে ফেলে দিতেই হটাৎ বিকট এক আওয়াজে পিছনের তাকিয়ে দেখে হিয়া ময়দার পুরো বক্সটা মাথায় ঢেলে একাকার করে ফেলেছে। হিয়া অন্যমনস্ক হয়ে বক্সটা রাখতে গিয়েই এই ঘটনাটা ঘটলো। এবার কি হবে! হিয়ার চোখ মুখে বিরক্তি।

⭐ হিয়া শুভ্রের শুধু একটা টি শার্ট পরে বেরিয়ে এলো। শাড়ী জিনিসটা এতো কুফা কেনো তার জন্যে? যতবার শাড়ী পড়েছে ততোবার কিছু না কিছু গন্ডগোল ঠিকই হয়েছে।

শুভ্র অনলাইনে কিছু ড্রেস অর্ডার করছিলো। অবশ্য করে কোনো লাভ নেই। ড্রেস তো আর এখন দিয়ে যাবে না সময় লাগবে। শুভ্র ফোনটা থেকে দৃষ্টি সরিয়ে সামনে তাকাতেই হিয়ার দিকে চোখ আটকে গেলো তার। সাদা টি শার্টটা হাটুর আগ পর্যন্ত পড়েছে, গলা বেয়ে হাতাটি কাধ বেয়ে বার বার শুধু পরে যাওয়ার বাহানা। শার্ট টা বার বার টেনে নিজেকে ঢেকে রাখার ক্ষুদ্র এক প্রচেষ্টা রক্তিম বর্ণের এই মেয়েটির।

শুভ্র ফোনটা পাশে রেখে উঠে দাড়ালো। হিয়ার দিকে এগিয়ে আসতেই হিয়া হকচকিয়ে তাকালো। সরে যেতে নিলো কিন্তু তার আগেই শুভ্র হিয়ার কোমড় জড়িয়ে কোলে তুলে নিলো। হিয়া চোখ বন্ধ করে শুভ্রের শার্টের কলার শক্ত করে চেপে ধরলো। শুভ্র হিয়াকে বিছানায় বসিয়ে চাদরটা দিয়ে ভালোভাবে মুড়িয়ে দিলো। তারপর শুভ্রের ঘরের টিভিটা অন করে, রিমোটটা হিয়ার কাছে এনে রাখলো। টিভি সে খুব একটা দেখে না। চুপচাপ বসে থাকলে হিয়ার অসস্তি আরো বাড়বে তাই শুভ্র টিভি অন করেছে। তারপর ঘর থেকে বেড়িয়ে এলো।

হিয়া রীতিমত নিজেকে মুড়িয়ে একটা পাথরের মতন রিমোটা হাতে নিয়ে বসে আছে। কিছুক্ষণ পর শুভ্র খাবার হাতে রুমে ঢুকলো। তারপর হিয়ার প্লেটটা তার দিকে বাড়িয়ে দিতেই হিয়া চোখ পিট পিট করে তাকালো। তারপর ভ্রু কুঁচকে বললো,” আমার জামা কখন আসবে?”

শুভ্র গ্লাসে পানি ঢালতে ঢালতে বললো,” টুয়েন্টি ফোর আওয়ার্সের মধ্যে।”

হিয়া চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে বললো,” মানে কি? চব্বিশ ঘন্টা আমি এই একটা টি শার্ট পরে থাকবো?”

” পড়তে ইচ্ছে না খুলে ফেলো। হূ ইনসিস্ট ইউ?”, বলে পানির গ্লাসটা হিয়ার সামনে রাখলো। হিয়া রাগী চোখে তাকালো তারপর বললো,” আমি খাবো না। এইগুলো নিয়ে যান।”

শুভ্র দেওয়ালের ঘড়ির দিকে তাকিয়ে বললো,” তুমি যদি বিশ মিনিটের মধ্যে খাবার টা শেষ না করেছো। আমি নিজেই এসে আমার শার্টটা খুলে নিবো। আমাকে তো ভালো করেই চিনো, রাইট?”

হিয়া বিস্ফোরিত চোখে শুভ্রের দিকে তাকালো তারপর হাত বাড়িয়ে প্লেটটা নিলো। শুভ্র জানে কিভাবে এই বাদরকে ঠিক করতে হয়। হিয়া মুখ কালো করে খাবারটা শেষ করলো তারপর প্লেটটা একপাশে রেখে দিলো।

[ বোনাস ]

হিয়া চুপচাপ টিভির দিকে তাকিয়ে আছে। চুপচাপ থাকা ছাড়া তার কাছে আর কোনো উপায় নেই। কিছু বললেই শুভ্র শার্ট ফেরত নিয়ে নেওয়ার মতন লজ্জা জনক হুমকি দিবে। এর থেকে চুপচাপ থাকাও অনেক ভালো। ইউভি কিছুক্ষণ পর পর এসে হিয়ার গায়ে জড়ানো চাদরটা ধরে টানছে। হিয়ার বার বার সরিয়ে দিয়েও কোনো লাভ হচ্ছে না।

শুভ্র রুমে এসে প্রথমেই ইউভিকে তুলে রূমের বাহিরে রেখে দরজা আটকে দিলো। হিয়া ভ্রু কুঁচকে তাকালো কিন্তু তাও চুপ করে রইলো। থাক আজকে এই হনুমানের দিন। সহ্য কর হিয়া, সহ্য কর। শুভ্র হিয়ার পাশে এসে হিয়ার পেঁচিয়ে থাকা চাদরটা টেনে নিজের গায়ে নিলো। হিয়া আড় চোখে তাকিয়ে রইলো। চাইছে কি লোকটা? হিয়া চ্যানেলটা পাল্টাতে যাবে এমন সময় শুভ্র হাত বাড়িয়ে রিমোটটাও নিয়ে চ্যানেল বদলে ফেললো। হিয়া হাত মুষ্টিবন্ধ করে ফেললো। দাতে দাত চেপে সবটা সহ্য করলো।

শুভ্র রিমোট নিলো ঠিকই চ্যানেল চেঞ্জ করে নিজে আবার ফোনে মগ্ন হয়ে গেলো। ইংলিশ মুভি চলছে। হিয়া বেশ মনোযোগ দিয়ে দেখছে। বেশ রহস্যময়। শুভ্র কিছুক্ষণ পর হিয়ার দিকে তাকালো। কি দেখছে এতো মনোযোগ দিয়ে? শুভ্র টিভির দিকে তাকালো। মুভিটা তার দেখা হয়ে গেছে। শুভ্র বুকের কাছে হাত ভাজ করে খাটের সাথে হেলান দিয়ে হিয়ার দিকে তাকিয়ে আছে। পরবর্তী কাহিনী দেখে হিয়ার ঠিক কি রিয়াকশন দেয় সেটাই দেখার অপেক্ষা।

ছেলেটা, গোয়েন্দা সেই মেয়েটির পিছু নিয়ে তাকে হাতে নাতে ধরেছে ঠিকই কিন্তু মেয়েটি নানা কৌশলে ছেলেটিকে হাত করতে চেয়েও পারছে না। হিয়া এই ছেলেটিকে ভালো ভেবেছিলো কিন্তু ছেলেটার মতলবটা এবার তার ভালো লাগছে না। কিছুক্ষণ পর মেয়েটা আস্তে আস্তে নিজের জামা কাপড় খুলতে শুরু করলো। হিয়া সঙ্গে সঙ্গে চোখ বড় বড় করে ফেললো। এরপর কি হতে চলেছে সেটা আন্দাজ করতে পেরে শুভ্রের সামনে এসে দাড়িয়ে পড়লো হিয়া। শুভ্র ভ্রু কুঁচকে বললো,” কি হয়েছে তুমি টিভির সামনে এসে দাঁড়িয়েছ কেনো?”

” আপনার এরপর দেখতে হবে না। ঘুমিয়ে পড়ুন।”, হিয়া একদম শুভ্রের সামনে চলে এসেছে। শুভ্র নিজের হাসি আটকে বললো,” হিয়া, কি শুরু করেছ? মুভিটা আমাকে দেখতে দাও।”

” না না, মুভি দেখতে হবে না। আপনি আমাকে দেখুন।”, রেগে গিয়ে বললো হিয়া।

শুভ্র হিয়াকে আরেকটু রাগিয়ে দিতে বললো,” মেয়েটা এরপর কি করলো। দেখি।”

” বলছিনা আমাকে দেখুন। ওই মেয়েকে দেখতে হবে কেনো আপনার। এতো দেখার শখ কেন? আমাকে কি আপনার ভালো লাগে না। আমাকে তো কখনো এমন আগ্রহ নিয়ে দেখেন নি। একদম তাকাবেন না ঐদিকে।”, কড়া গলায় বললো হিয়া।

শুভ্র হেসে ফেললো তারপর হিয়াকে টেনে নিজের কোলে এনে কোমড় জড়িয়ে ধরে টিভির দিকে তাকাতে ঈশারা করতেই হিয়া দেখলো মেয়েটি ছেলেটিকে মারার শুধু একটা ফাঁদ পেতেছিল। হিয়া বোকা বনে গেলো।

এতকিছুর চক্করে হিয়া নিজের দিকে তাকায় নি। শার্টের গলা কাধ বেয়ে নেমে গেছে অনেকটা। শুভ্র হিয়ার ঘাড়ের চুলগুলো সরিয়ে ঘাড়ে মুখ ডুবিয়ে দিতেই হিয়া শিউরে উঠে চোখ বন্ধ করে ফেললো। শুভ্র হিয়ার ঘাড়ে কিস করতেই হিয়া বিছানার চাদর শক্ত করে খামচে ধরলো। হিয়া জড়ানো গলায় বললো,” কি কর..ছেন?”

” তুমি যা বললে তাই করছি।”, ফিসফিসিয়ে বলেই হিয়ার দুই হাত বিছানার সাথে চেপে ধরতেই হিয়া শুভ্রের থেকে চোখ সরিয়ে নিলো। নিশ্বাস ভারী হয়ে এসেছে হিয়ার। হিয়ার ফর্সা কাধ শার্টের বড় গলার ফাঁক দিয়ে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। শুভ্র হিয়ার দিকে অপলকে তাকিয়ে রইলো। হিয়ার ক্ষীণ স্বরে বললো,” এভাবে তাকিয়ে আছেন কেনো?”

” তোমাকে দেখছি।”, হিয়া লজ্জায় নিচের ঠোঁট কামড়ে বললো,” আপনি সরুন।” বুকের ভেতরে হৃদ কম্পন বেড়েই চলেছে তার। শুভ্র শীতল কণ্ঠে বললো,” তুমি এত হিংসুটে কেনো?”

” ভালো হয়েছে আমি হিংসুটে। আমি আপনার মতন না। আপনি তো ঠিকই অন্য মেয়ের সাথে হেসে হেসে কথা বলেন। আর আমাকে দেখলেই রাগী চোখে তাকান। আমাকেই সব রাগ দেখান। এমনিতেও আমাকে তো আর আপনার পছন্দ না।,” অভিমানী শুরে গর গর করে কথা গুলো বললো হিয়া। তারপর থেমে নিশ্বাস নিলো।

শুভ্র হিয়ার অভিমানের কারণটা বুঝতে পেরেছে। আসলে আমরা তাদের উপরই সবচেয়ে বেশি রাগ করি যাদের সবচেয়ে বেশি ভালোবাসি। কিছু কিছু রাগের পিছনে ভালোবাসাও লুকিয়ে থাকে। সব ভালবাসা তো আর মুখে বলা যায় না। শুভ্র হাত বাড়িয়ে অভিমানি হিয়ার গাল স্পর্শ করে নিজের দিকে ঘুরিয়ে এনে ঠোঁটে ঠোঁট মিলিয়ে দিলো। হিয়া চোখ মুখ খিচে বন্ধ করে ফেললো। হিয়া দম নিতে পারছে না। শুভ্রকে সরিয়ে দিতে চেষ্টা করতেই শুভ্র হাতের ভাজে হাত শক্ত করে ধরলো। এতোক্ষণে হিয়া হাপিয়ে উঠেছে ঘাড় কাত করে মুখ ঘুরিয়ে নিয়ে জোড়ে জোড়ে নিশ্বাস নিতে লাগলো। আরেকটু হলে সে মরেই যেতো। শুভ্রের তপ্ত নিশ্বাস এখন তার গলায় আছড়ে পড়ছে। সাড়া শরীর প্রতি নিশ্বাসে শিউরে উঠছে

শুভ্র হিয়ার কানের কাছে মুখ এনে বললো,” আই প্রমিস, এরপর থেকে শুধু তোমাকেই দেখবো।” হিয়া লজ্জায় মাথা নুইয়ে ফেললো। বুকের ভিতরে হৃদ স্পন্দন অস্বাভাবিক ভাবে বেড়ে গেছে। শুভ্র আস্তে আস্তে হিয়ার শার্টটা একটু সরিয়ে নিতেই হিয়া লজ্জায় শুভ্রকে জড়িয়ে ধরলো। শুভ্র তার প্রিয়দর্শনীকে নিজের দুই বাহুতে আগলে নিলো।

[ #চলবে ]