#পরিণীতা
#নাহিদা ইসলাম
#পর্ব ৯
১৮.
অর্ণব আর পরিণীতাকে নিয়ে চুপ করে বসে আছে ইলা। অর্ণব পরীকে বার বার ইশারায় বার বার জিজ্ঞেস করতেছে ভয় পাচ্ছে কেনো কিন্তু পরী কোনো কথা বলছে না ভয়ে ইলার দিকে তাকাতে পারতেছে না। নিরবতা ভেঙ্গে ইলা বলে উঠলো,,
–অর্ণব তুই অন্য রুমে যা আমার পরিণীতার সাথে কিছু কথা আছে।
–কোনো কথা যদি আমার বউকে বলতে ই হয় তবে আমার সামনে ই বলতে হবে।
অর্ণব এর এমন মুখে মুখে উওর দেওয়ায় বেশ অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে ইলা। পরী ও করুন দৃষ্টিতে অর্ণব এর দিকে তাকিয়ে আছে। তবে কি বিয়েটা সত্যি ই মনে নিয়েছো অর্ণব প্রশ্নটা ইলা পরী দুজনের মনে তৈরি হয়েছে।।।
–এভাবে তাকিয়ে আছো কেনো।
–দেখতেছি একটা রাস্তার মেয়ের জন্য আমার ভাই আমার সাথে কেমন ব্যবহার করে।
–ভুল বলছো আপু দুদিন আগে পর্যন্ত হয়তো পরিণীতা রাস্তা কেউ না তাও তোমার ভাষ্যমতে রাস্তার কেউ ছিলো কিন্তু এখন থেকে অর্ণব চৌধুরীর কালেমা পড়ে সব নিয়ম মেনে বিয়ে করা বউ।
–অর্ণব তুই ভুল করছিস। পরীকে কিন্তু আমি এ বাড়িতে এনেছি। আমি চাইলে বের করে দিতে পারি।
–আমার বউকে আমার কাছে রাখার ক্ষমা আছে আপু।
পরী দাড়িয়ে কান্না করতেছে। সব প্রবলেমের কারণ পরী ই। পরী না থাকলে তো এমন হতো না।তাই পরে এবার বললো,
–আপু আমি তো কালকে আপানর কাছে বলছি, এবং আপনার সব শর্ত ও মনেছি প্লিজ আপনারা দুই ভাইবোন আমার জন্য মনমালিন্য করবে না। সময় মতো আমার জায়গায় আমি চলে যাবো।
অর্ণব কোনো কথা না বলে হাত ধরে টেনে পরীকে নিজের রুমে নিয়ে যায়। ইলা শুধু দাড়িয়ে দেখছে। জানে অর্ণবকে কিছু বলে লাভ নেই সে যা করতেছে শত নিষেধের পর ও করে ই। বড্ড মন খারাপ হচ্ছে ইলার ভাইকে এতোদিন এতো ভালোবাসা দিয়ে বড় করেছে, কতো স্বপ্ন ছিলো খুব ধুমধামে ভাইকে বিয়ে করাবে। সব স্বপ্ন মাটি হয়ে গেলো পরী নামের মেয়েটার জন্য।
.
অর্ণব পরীকে নিয়ে রুমের দরজা বন্ধ করে দিলো। পরীকে বেডে বসিয়ে, প্লেট টা হাতে নিয়ে পরীর সামনে ধরলো,
–খেয়ে নাও।
–খাবো না।
–ক্ষুধা লেগেছে জানি তো। বললে ই তো হয় আমার হাতে খাবে।
–আমি এটা কখন বললাম।
–তাহলে খেয়ে নেও।
–খাবো না বলছি তো।
এবার অর্ণব খাবার হাতে নিয়ে জোর করে মুখে দিয়ে দিলো।
–খাবার সময় কান্না করতে হয় না বউ।
কথাটা শুনে আরো জোরে কান্না করতে লাগলো। অর্নব পরীকে এক হাতে আলতো করে জরিয়ে নিয়ে কিছুটা শান্ত করার চেষ্টা করলো…
১৮
জানালার গ্রিল ধরে দাড়িয়ে আছে পরী। আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে, এই সুখ কপালে সইবে তো,, রুম থেকে একবার ও বের হতে দেয় নাই অর্ণব । অর্ণব সব প্রয়োজনীয় জিনিস রুমে এনে দিয়েছে। তবে কী অর্ণব পরীকে ভালোবেসে ফেলেছে।
রুমে এসে পরীকে দেখতে না পেয়ে বারান্দায় যায়। অনমনে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে। পিছন থেকে দুহাত দিয়ে জড়িয়ে ধরে।
জড়িয়ে ধরার সাথে সাথে পরী হাত সরিয়ে নেয়।
–হাত সরিয়ে নিলে কেনো।
–আমার থেকে ভালো কাউকে পাবেন।
–ভালো কাউকে না তোমাকে ই প্রয়োজন।
–আমার সাথে এতো দেখা ই কয়েকদিনের তাহলে এতো কাছে কেনো টেনে নিচ্ছেন কেনো।
–বিয়ে করেছি বউকে দূরে রাখবো নাকি।
–এই বিয়েটা কী আপনি মানেন।
–না মানার কী আছে বউ।
–বউ বলেন কেনো কথায় কথায়।
–বউকে বউ বলবো না কী বলবো বউ।
এবার পরী রাগ দেখিয়ে রুমে চলে যায়।
–অ বউ কোথায় যাও,
–মরতে।
–দাড়াও আমি ও যাবো।
পরীর রুমে যেয়ে বসতে ই । অর্ণব গিয়ে ড্রসিং টেবিলে সামনে দাড়িয়ে পরীর মুখের দিকে তাকিয়ে আছে।
–এভাবে তাকিয়ে আছেন কেনো।
–দেখতেছি আমার সুন্দরী বউটাকে।
–দেখে লাভ কী গিলে ফেলেন পানি দিয়ে।
–তাই নাকি। মেয়েরা নাকি শপিং করতে অনেক পছন্দ করে চলো তোমাকে নিয়ে শপিং করতে যাই। যতক্ষণ ফুচকা খেতে পারো খাওয়াবো। তুমি তৃপ্তি নিয়ে ফুচকা খাবে আর আমি তৃপ্তি নিয়ে তোমার মুখের দিকে তাকিয়ে থাকবো।।।
হঠাৎ পরীর ফোন বেজে উঠে। ফোন হাতে নিতে ই দেখে অদির আইডি থেকে আদি আর ইরার কিছু মুহুর্তের ছবি। ছবিগুলো দেখে ই অর্ণব এর দিকে তাকালো, কেউ ভালোবাসা পায় না আর কেউ পেয়ে ও দূরে ঠেলে দিতে দুবার ভাবে না। বড় অদ্ভুত এই দুনিয়া। একটা দীর্ঘ শ্বাস ফেলে উঠে রান্না ঘরের দিকে পা বাড়ালো পরী। অর্ণব বাহির থেকে খাবার কিনে আনতেছে, রান্না করে নাই হয়তো তাই।
কিচেনে যেতে ই ইলা বললো,
–আজ থেকে সকল রান্না তুমি করবে। কাজের লোকদের মানা করে দিয়েছি।
–আপু সমস্যা নেই আমি করতে পারবো সেই অভ্যাস আমার আছে।
–মুখে মুখে কথা বলতে শিখে গেছো বুঝি।
–আমি প্রশ্ন করছেন আমি উওর দিবো না।
–তুমি জানো তোমার যে কোনো যোগ্যতা নেই এই বাসার বউ হওয়ার।
–আপনি যোগ্যতা বিচার করা কে। আমার স্বামী তো আমাকে কিছু বলে না।
কথাটা বলার সাথে সাথে ইলা থাপ্পড় দেওয়ার জন্য হাত বাড়ায় সাথে সাথে পরী হাত ধরে ফেলে। এ অবস্থায় অর্ণব ও হাজির।
অর্ণব পরীর দিকে এমন ভাবে তাকালো যেনো সব দোষ ই পরীর।
চলবে