প্রমত্ত অঙ্গনা পর্ব-৫+৬

0
407

প্রমত্ত অঙ্গনা
(০৫)

ম**দ্য পান করে বেশ রাতে ফিরেছে আদ্রিশ,নে**শা এত চড়েছে সোজা হয়ে হাঁটতে পারছে না সে।হেলেডুলে কোনোরুপ হেঁটে নিজের কক্ষ অব্দি পৌঁছাল,অগোছালো হয়ে বিছানায় শুয়ে আছে রিদিকা,উপুড় হয়ে শুয়ে আছে শাড়ি অনেকটা বিচ্যুত হয়ে পিঠের নিচের অংশটা বেশ ভেসে আছে,সাথে পেটের অনেকটা অংশও বেড়িয়ে আছে,হুট করে কক্ষে ঢুকেতেই সেই নে*শা*ক্ত পুরুষের চোখ পরল তার উপর যা তাকে আরও নে**শা**ক্ত করে তুলল,কিছু আর না বলে সোজা গিয়ে রিদিকার পি*ঠ থেকে পে*ট অব্দি হাত বুলিয়ে নিয়ে গেল,ওপর হাতে রিদিকার কাঁধের উপর থেকে চুল সরিয়ে তার ঘা*ড়ে নাক ডুবিয়ে দিল।স্বামীর হঠাৎ এমন ছোঁয়া তাকে যেন মুহুর্তেই প্রায় উ*ন্মা*দ করে তুলল,অঙ্গপ্রত্যঙ্গ যেন খুশিতে নেচে উঠল,দিনশেষে যে তার স্বামী তার কাছেই ফিরে এসেছে।অদ্ভুত শিহরণ খেলা করছে তার সমস্ত শরীর জোরে,এদিকে নে**শা**ক্ত স্বরে বলছে আদ্রিশ।

আমি জানতাম আমার ফুলপরি দিনশেষে আমার কাছে ফিরবেই,সে যে শুধুই আমার,কে ভালোবাসবে বলো তোমাকে আমার মত,জীবনে যেই এসে যাক তোমার অবস্থান সবসময় আলাদাই থাকবে আমার কাছে।আজ তোমাকে এভাবে ভালোবাসবো যে কখনও আমাকে ছেড়ে যাওয়ার কথা মাথায়ও আসবে না,আ*দ*রে ভরিয়ে দিব তোমায় আমি আজ।

কথাগুলো কর্ণপাত হতেই শরীর জ্ব**লে উঠল রিদিকার,অতি ক্ষো**ভে খামছে ধরল বিছানার চাদর,তবুও কিছু বলছে না,স্বামীর এই আদরের ভাগটা ছাড়তে চায় না রিদিকা,ঘাড়ে চুমু খেতে খেতে তাকে নিজের দিকে ফেরালো আদ্রিশ,চেহারায় চোখ যেতেই কেমন ভ্যাবাচ্যাকা খেল সে,চট করে উঠে বসল রিদিকার উপর থেকে,ঝটফট জেরা করল তাকে।

″তুমি এখানে কি করছ!আঁখি কোথায়?″

″আঁখি এ রুমে আর আসেও নি,ছাঁদ থেকে সোজা মায়ের রুমে ঢুকেছিল,ওখানেই আছে।″

মৃদ্যু স্বরে উত্তর দিলো রিদিকা আর কোনো কথা বাড়াল না আদ্রিশ উঠে গেল মায়ের রুমের দিকে,দরজাতে ধা*ক্কা*নো শুরু করল,গ**র্জে গ**র্জে বলছে।

দরজা খুলো আঁখি,দরজা খুলো বলছি।

আঁখি তার শাশুড়ির কোলে মাথা গুঁজে শুয়ে আছে,শুভ্রতা তার পাশে বসে তার মাথায় হাত বুলাচ্ছে,আঁখি মানা করেছে দরজা না খোলে দিতে তাই শুভ্রতা আর দরজা খোলে দেয় নি।

এদিকে আদ্রিশ চিৎ**কা**র করে বলছে,কত লুকাবে আঁখি আমার থেকে?কত দূরে থাকবে?ঘুরে ফিরে তোমায় আমার কাছেই আসতে হবে,দেখে নিও।

তখন সেখানে আগমণ ঘটল আদিলের,আদ্রিশের বড় ভাই,বেশ গম্ভীরতা নিয়েই বলল আদিল।

আদ্রিশ তোর কি হি*তা*হিত জ্ঞান হ্রাস পেয়েছে?পা*গ*ল হয়ে আঁখিকে বিয়ে করলি।খেয়াল আছে তোর– ওকে জীবনে পেতে কত সাধনা করতে হয়েছে তোকে,তোর ওর জন্য ছটফট দেখে আল্লাহর কাছে দোয়া করতাম আল্লাহ যেন তোকে তোর সুখ আঁখিকে পাইয়ে দেন,অবশেষে তুই আঁখিকে পেলি।আমার মনে হল পৃথিবীতে আর একটা সত্য ভালোবাসার জয় হল,কিন্তু কী করলি তুই রিদিকার মোহে পরে আঁখিকে কষ্ট দিলি,আর এখন আবার ওর শান্তিটাও নষ্ট করছিস,নতুন একজনকে যখন জীবনে জরিয়েছিস তখন পুরাতন টানে পরে থেকে কি লাভ,আঁখিকে ওর মত থাকতে দে।

দেখো ভাইয়া,এটা আমার জীবন, আঁখিও আমার স্ত্রী আর রিদিকাও,আমার যা ইচ্ছে তাই করব, আমি আমার জীবনে কারও হস্তক্ষেপ সহ্য করব না।কথাটা মনে রেখ।

কথাগুলো বলে আদ্রিশ আবার রুমের দিকে হাঁটা ধরল।

নির্বাক হয়ে সেখানে দাঁড়িয়ে রইল আদিল,বড় ভাই হলেও আদ্রিশকে কিছু বলার বা কথা শুনানোর কোনো অধিকার নেই তার।বেকারত্বের অ**ভি*শা**প যে এমন-ই ভ*য়া*বহ যা বহণ করা সবার পক্ষে সম্ভবপর হয় না।যার খেয়ে পরে আছে স্ত্রী সন্তান নিয়ে তাকে কেমনেই বা শা*সা*বে আদিল,ভাবলেও যেন লজ্জা লাগে।

শাশুড়ির কোলে মাথা রেখে ঠোঁট কামড়ে কান্না করছে আঁখি,শাশুড়ি আর জা দু’জনেরই চোখ খালি নেই,জল যে তাদেরও চোখ আজ ছাড়বে না হয়ত পণ নিয়েছে।আঁখি নামক মেয়েটা যে কখনোই তাদের জা বা শাশুড়ি মনে করে নি, দিয়েছে মা ও বোনের দরজা,তাই আজ তার এই দূ*র্দি*নে আপন সে সম্পর্কের টানে জল ছাড়ছে না তাদেরও চোখ।শাশুড়ি এবার কাঁদতে কাঁদতে আঁখির মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন।

তোকে চুপ করানোর ক্ষমটাটুকুও আমি রাখি না রে মা,স্বামীর দেওয়া ক্ষ**ত**টা কতটুকু পী**ড়া দেয় তা শুধু একটা স্ত্রীই জানে,জানিস যেদিন একটা মহিলা দ্বারে একটা ৪ মাসের ছেলে সন্তান নিয়ে এসে বলল ওটা আমার স্বামীর অংশ আর সে না কি আমার স্বামীর অ*বৈ*ধ সম্পর্কের সাথি তখন বুকটা কতটুকু পরিমাণ কেঁপে উঠেছিল তা শুধু আমি জানি,তারপর সেদিনই তোর শ্বশুর মেয়েটিকে বিয়ে করেন,আমার তো কান্না ছাড়া কোনো উপায় ছিল না,আমার শ্বাশুড়ি মা সেদিন আমায় বলেছিলেন,ছেলে মানুষ না কি এমনই হয়,১০০ জায়গায় মুখ দেওয়া না কি তাদের স্বভাব, তাতে ঘর ছেড়ে স্বামী ছেড়ে চলে যাওয়ায় না কি মেয়েদেরই অসম্মান, কোথাও জায়গা হয় না,মা বাবারও তেমন সম্পত্তি ছিল না তাই আর বাপের বাড়িও যাই নি,পরে ছিলাম এখানে শত জ্ব**লা মেনে নিয়েও।ওই মেয়েটা প্রায়ই নিজে থেকে ঝ*গ*ড়া করত আমার সাথে,তারপর উনার কাছে আমার নামে উল্টাপাল্টা বলত আর উনি আমায় অনেক মা*রতে*ন,তাও পরে থাকতাম দুইটা বাচ্চার মুখের দিকে তাকিয়ে, কিন্তু হঠাৎ একদিন জানতে পারি আমার স*তী*নের জ**রা**য়ু তে ক্যা*ন্সার ধরা পরছে,শারীরিক সম্পর্ক করতে পারে না আর,এতে ওদের মধ্যে প্রায়ই ঝ*গ*ড়া হত,তারপর থেকে উনি আর ওর পাশেও যেতেন না আমার সাথেই থাকতেন বেশিরভাগ সময়,তাছাড়া বাইরেও উনার অনেক মেয়ের সাথে সম্পর্ক ছিল জানতাম আমি,সবকিছুর পরও চুপ করে থাকতাম,হঠাৎ একদিন আমার স*তী*ন ইশিতা মা*রা যায়,ওর মৃত্যুর ৬ দিন আগে ওর ছেলেটা মা*রা যায় পানিতে ডুবে,মৃ*ত্যু*র আগে আমি ইশিতার অনেক পরিচর্যা করি,কিন্তু উনি ওর মুখ দেখতেও চাইতেন না তখন,ইশিতা ম**রা**র ৬ মাস পর উনার একটা এ*ক্সি*ডে*ন্ট হয় যাতে তিনি প্যারালাইস্ড হয়ে যান,সব কিছুতেই অক্ষম, শুধু কথা বলতে পারতেন,তারপরও আমি উনাকে কখনও অস*ম্মা*ন করি নি আর না তো উনার পরিচর্যায় কোনো কমতি রেখেছি,অবশেষে উনিও একদিন শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন,মৃ*ত্যু*র আগ মুহুর্তে ক্ষমা টা চেয়ে নেন আমার কাছ থেকে।হয়ত তুই ভাবছিস ঘটনাটা আমি তোকে কেন বললাম!হয়ত তোকে বোঝাতে চাইছি যে–যাই হোক স্বামীকে মেনে নেওয়া উত্তম,এটাই মেয়েদের কর্ম, আমিও আমার শাশুড়ির মত তোকে সব মেনে নেওয়া বাণী শোনাবো, তবে সেটা ভুল ভাবছিস মা,আমার শাশুড়ি নিজেই আমার শ্বশুরের তৃতীয় স্ত্রী ছিলেন,যে অন্যের কেঁড়ে নেয় সে কি জানে হারিয়ে যাওয়ার মর্ম,উনি মারা গেছেন তাই উনার কোনো দূর্নাম করতে চাই না আমি আর,শুধু বলব তুই চলে যা মা,নিজের জীবন আবার গুছিয়ে নে সুন্দর করে,কে**স কর ওই প**শু**টার নামে,এমন হাল কর ওর যাতে কখনও কোনো স্বামী স্ত্রী ব্যতীত অন্য কোনো নারীর দিকে চোখ তোলার কথা ভাবতেও ভ**য় পায়।

আঁখি এবার চোখের জল মুছে উঠে বসে বলল।

মা গো,আমি ধন্য যে শ্বাশুড়ি রূপে তোমার মত এক জননী পেয়েছি,আমি আদ্রিশের জন্য মা–বাবা, ভাই, পরিবার সব ছেড়ে এসেছি,তবে আদ্রিশের মনে সেই আসল জায়গাটা করতে না পারলেও পরিবার রূপে তোমাদের পেয়েছি তাতেই আমি সন্তুষ্ট,আমি সফল।আর কথা রইল আদ্রিশের উপর কে**স করার,মা গো সারাজীবন তো ক**ষ্ট*ই করেছ,এই বয়সে তোমার কোনো কষ্ট হোক আমি চাই না,আল্লাহ সব দেখে নিবেন।

তাই বলে তুই ওই প*শু*কে ছাড় দিবি।

কে বলেছে ছাড় দিব মা,সুযোগে পেলে নিশ্চয়ই শো*ধ*টা নিব।তবে কে**স করে তোমাদের জীবন অনিশ্চয়তায় ফেলব না আমি,আদ্রিশ যে এই সংসারের খুঁটি সেটা ভুললে তো চলবে না,আর ও উকিল বিষয়টা মিডিয়াতে গেলে ওর আমার দু’জনেরই নাম খারাপ হবে সাথে আমাদের পরিবারদেরও তাই সবকিছু মাথায় নিয়ে চলতে হবে আমায়।তাছাড়া আল্লাহ ছাড় দেন ছেড়ে দেন না জানোই তো।

তোমার মত মেয়েকে আদ্রিশ হাতে পেয়েও হারালো,ওর জন্য তো কোনো ধরনের প্রাশ্চিত্যও কম হবে না তুমি দেখে নিও।

আঁখিকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে কেঁদে কথাটা বলল শুভ্রতা।

আদ্রিশ বিছানায় চিৎ হয়ে পরে চোখ বন্ধ করে বিড়বিড় করছে।

তোমাকে আমি ছাড়ব না আঁখি,তোমাকে পেতে আমি কি কি করেছি তা শুধু আমি জানি,আমি তোমাকে হারাতে পারি না।তুমি আমারই থাকবে।

হঠাৎ কপালে কারো আলতো স্পর্শে চুপ করে গেল আদ্রিশ,চোখ খুলে দেখতে পেলো রিদিকা।স্বাভাবিক স্বরেই বলল।

″তুমি এখানে কি করছ?বলি নি তোমার কক্ষে যেতে?″

″আঁখি তো আর এখানে আসছে না,তাই আমার এখানে থাকতে ও তো সমস্যা নেই।″

″এটা আঁখির কক্ষ,ও এখানে থাকুক না থাকুক এখানে অধিকার ওরই থাকবে।″

″আর আমার অধিকারের কী?″

″ভুলে যেও না রিদিকা তুমি দ্বিতীয় জন আমার জীবনে,যতই প্রাধান্য তুমি পাও না কেন,তোমার অবস্থান আর অধিকার আঁখির পরই থাকবে।″

রিদিকার অভিমান আর অধিকার নিয়ে বলা কথাটার উত্তরে আদ্রিশ এভাবে ক**ঢ়া জবাব দিবে আশা করে নি সে,তাই এবার বেশ শব্দ করেই কেঁদে দিলো,আদ্রিশ অল্প বিরক্তি নিয়ে বলল।

দেখো রিদিকা এখানে কেঁদে কোনো ফায়দা নেই,আমি তোমাকে বলেছি আমি তোমাকে ছাড়ব না,আমার জীবনে তোমারও যথেষ্ট গুরুত্ব রয়েছে,প্লিজ কান্না করো না,আমি ড্রিং**ক করেছি,নিজেকে আয়ত্তে রাখতে পারছি না,তোমার সাথে দূ*র্ব্য*ব*হা*র করতে চাই না,প্লিজ চলে যাও আমার প্রয়োজন মনে হলে নিজে তোমার কাছে আসব।এখন চলে যাও তুমি।

রিদিকা আর কিছু না বলেই সেখান থেকে ছুটে আসল।আদ্রিশ আবার চোখ বন্ধ করে বালিশে শায়িত হলো।

ফজরের নামাজ পড়ে কুরআন তেলাওয়াত করে নিল আঁখি,শ্বাশুড়ির কক্ষেই রাত্রী যাপন করল আজ সে,আজ আর কান্না করল না,পুরাতন গ্লানি মুছে দেওয়ার দিন আজ,আজ সে দূর্বল পরলে চলবে না।

সকাল ১০ টা হতে না হতেই ডিভোর্স পেপার হাতে চলে আসলো আঁখির,চারিদিকেই আঁখির বেশ নাম ডাক,ক্ষ*ম**তা*র বশে ডিভোর্স পেপারটা এত তাড়াতাড়ি করিয়ে নিতে পারল,তি**ক্ত এই টানটা বেশি সময় আর রাখবে না আঁখি,মুছে দিবে তা এক মুহুর্তেই,সাইনের জন্য ডিভোর্স পেপারটা হাতে নিতেই হাত কাঁপতে লাগল আঁখির,ধীরে ধীরে গড়ে তুলা ভালোবাসার এক অট্টালিকা এক মুহুর্তে কিভাবে ধুলোয় মিশিয়ে দিতে পারবে আঁখি,তাতে যে প্রচুর সাহস আর ক্ষমতার প্রয়োজন,কিন্তু আঁখি তো ভিতু বা দূর্বলদের দলের কারো মধ্যে পরে না,তবে সে কেন পিছপা হবে আজ।না তাকে হার মানলে চলবে না,তাকে আত্নসম্মানের এ লড়াইয়ে জিততেই হবে।অতঃপর আর ভাবতে চাইল না সে,হাতে উঠিয়ে নিল কলম।

চলবে………

আরোহী নুর………।

প্রমত্ত অঙ্গনা
(০৬)

সাক্ষরের স্থানে গিয়ে আঁখির হাত যেন আটকে গেল,সেখানে সাক্ষর করার ক্ষমতা জুটিয়ে উঠতে পারছে না,যার জন্য জীবনের সুন্দর সম্পর্কগুলো ত্যাগ করল আজ তাকেই ত্যাগ করতে হবে ভেবেই বুকের ভিতরে শুন্যতার ছড়াছড়ি হল আঁখির,ভ**য়া**নক এক খাপছাড়া অনুভুতি যা প্রকাশ করার কোনো ভাষা আছে বলে আঁখির জানা নেই,সে অ*লক্ষু**ণে অনুভুতি যার সাথে হয় সেই তার প্রখ**ড়**তার আন্দাজ করতে পারে। আঁখি বেশ মনোযোগ দিয়ে দেখতে থাকল কাগজখানা,এমনই তো ছিল আদ্রিশের সাথে তার বিয়ের কাবিননামা,সেদিন একটা সাক্ষরের বিনিময়ে সব ত্যা*গের মাধ্যমে আঁখি প্রবেশ করেছিল আদ্রিশের জীবনে।সেদিন বুকে জড়িয়ে আদ্রিশ বলেছিল তাকে।

″আজ নিজেকে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ সুখী বলে মনে হচ্ছে আঁখি,অবশেষে আজ আমি তোমাকে পেয়ে গেলাম।কখনও ছেড়ে যাবে না তো আমায়?″

″তোমাকে পাওয়ার জন্য সবাইকে ছেড়েছি,তোমাকে কিভাবে ছাড়ি বলো!তুমি যে নিশ্বাসে নিহিত,জীবনভর তোমার হয়ে থাকতে চাই।কখনও তৃতীয় কেউ এনো না আমাদের ভালোবাসার কাঁটা হিসেবে, সহ্য করতে পারব না আমি।″

″এ জীবনে তোমার পরে কেউ কখনও আসে নি আর আসবেও না আঁখি,তোমাকে ছাড়া এ হৃদয় যে কিছুই বুঝে না,তুমি ছাড়া যে আমি বদ্ধ উ**ন্মা**দ,সারাজীবন পাশে থাকবে কথা দাও।″

″ভালোবাসা আমাদের দু’জনে সীমাবদ্ধ থাকলে কখনও তোমাকে ছেড়ে যাব না কথা দিলাম।″

″আমাদের ভালোবাসা আমাদের মধ্যেই আবদ্ধ থাকবে আমিও কথা দিলাম।″

চোখ টপকে ডিভোর্স পেপারের গায়ে আ*ছ**ড়ে পরল আঁখির চোখের দুফোঁটা জল।আদ্রিশ যে তার কথা রাখে নি,তবে আঁখি তার কথার খেলাফ যাবে না,সে তার কথা রাখবেই,মানিয়ে নিবে সব বি**চ্ছে**দ যন্ত্রণা,হোক না তা পাহাড় পরিমাণ,হোক না তা মৃ**ত্যু যন্ত্রণার সমতুল্য। মুছলো আঁখি আঁখিজল,কলমটা এবার বসিয়ে দিল জায়গা মত করে দিল সাক্ষর।ছাড়ল সস্তির এক নিশ্বাস।

আদ্রিশ কক্ষ থেকে বের হচ্ছিল আঁখির উদ্দেশ্য, আবারও ওকে নিজের কথায় আনার এক প্রচেষ্ঠা করবে বলে ঠিক করল তখন একজন কাজের লোক একটা কাগজ এনে আদ্রিশের হাতে দিয়ে বলল।

স্যার আঁখি ম্যাডাম এটা দিয়েছেন আপনাকে দেওয়ার জন্য।

আদ্রিশ কাগজখানা হাতে নিয়ে যেন আকাশ থেকে পরল,চোখ ছা*না*বা*না হল মুহুর্তে, ডিভোর্স পেপার যেটাতে আঁখির সাইন আদ্রিশের অন্তর অল্পতে পো**ড়ি**য়ে দেওয়ার ক্ষেত্রে যথার্থ হল।চোখে জল এসে বাসা বেঁধে গেল এক পলকেই।

আঁখি শাশুড়ি মায়ের পায়ে ধরে সালাম করে নিল,শাশুড়ি মা কান্নারত অবস্থায় তার মাথায় হাত রেখে দোয়া দিলেন তাকে।

″আল্লাহ তোকে তোর প্রাপ্য সুখ যেন দান করেন মা,দোয়া করি,ভালো থাকিস,এই বুড়িকে ভুলিস না।″

″প্রাণ থাকতে তোমাদের ভুলব না মা,দূরে চলে যাচ্ছি বলে ভেবো না সম্পর্কে দূরত্ব চলে আসবে,আমি দূর থেকেও তোমাদের পাশে সর্বক্ষণ থাকব।″

শুভ্রতা আঁখিকে জড়িয়ে ধরে কান্না করে বলল।

″আমাকে ক্ষমা দাও আঁখি,চেয়েও তোমার জন্য কিছু করতে পারি নি আমি।″

″ধূর, পাগলি বোন আমার,আমি কোনো অবলা না কি যে আমার জন্য কিছু করতে হবে তোমায়,তুমি নিজের,মায়ের আর আমার ভাই, ভাইপো এর খেয়াল রেখো আমার আর কিছু চাই না,কেমন।″

বুকের ব্যা*থা সযতনে বুকে চেঁপে জো*র করে আলতো হাসি মুখে টেনে এনে বলে গেল আঁখি কথাগুলো,বুক ফেঁ*টে কান্না আসছে তার তবে নিজেকে আজ দূর্বল পরতে দিবে না ভেবে নিয়েছে।ছোট্ট রিহানকে কতগুলো চকলেট দিয়ে তার গালে চুমু খেলো,নিজের সন্তানের মতই যে এতদিন ওকে ভালোবেসেছিল আঁখি।রিহানও আঁখিকে অনেক মানে,আঁখির নামে পা**গল বললেই হয়,তার সেই প্রিয় ছোটো মা যে আজ তার থেকে অনেক দূরে চলে যাচ্ছে সে তা এখনও বুঝে উঠতে সক্ষম হয় নি নইলে কেঁদে নেয়ে একাকার করে দিত সব।চকলেটগুলো পেয়ে খুশিতে আত্ন*হা*রা হয়ে লাভ ইউ ছোটো মা বলে ছুটে চলে গেল,আঁখি এগিয়ে গিয়ে আদিলের কাছ থেকেও বিদায় নিয়ে নিল।

″চলি ভাইয়া,ভালো থাকবেন,কোনো প্রয়োজন মনে করলে এ বোনকে জানাতে ভুলবেন না কিন্তু।″

″আমার একটা ছোট বোন নেই,তোমাকে আমি সে বোনের আসনে বসিয়েছিলাম,ভাবিনি আদ্রিশ আমার সে বোনকে এভাবে কেড়ে নিবে,তবে যা হয় ভালোর জন্যই হয়,দেখো তোমার ভালো হবে,তুমি খুব সুখী থাকো দোয়া করি।″

রিদিকা একপাশে মুর্তির ন্যায় দাঁড়িয়ে আছে,আঁখি নির্দিদায় হেঁটে গেল তার পাশে,অতঃপর বলল।

চলে যাচ্ছি, তোকে তোর স্বামী দিয়ে গেলাম,আমি তো ধরে রাখতে পারি নি,তবে দোয়া করব তোর আঁচলের বাঁধন যাতে শক্ত হয়,স্বামী হাতছাড়া না হয়ে যায়।
কথাটা যে তী**রের মত বি*ধল রিদিকার বুকে তাও স্বাভাবিক থাকল,কিছু বলল না,তবে মুঠো টা বরাবরের মত শক্ত করে নিল।আঁখি আবার বলল।

আমার অনেক সোনা,গহনা,কাপড় দামী জিনিস সবকিছু রেখে যাচ্ছি, যেখানের বেশিরভাগই আদ্রিশের দেওয়া,কিছুই নিয়ে যাচ্ছি না আমি,রেখে গেলাম তোর জন্য,যেখানে স্বামী তোর সেখানে মনে নিরাশতা তো আসতেই পারে তোর স্বামীর দেওয়া জিনিস আমি আবার কেন নিলাম।তাই দিয়ে গেলাম,স্বামী নাহলে কেরে নিয়েছিস ওর সংসার সবকিছু না হয় তোকে আমি ভিক্ষে দিয়ে গেলাম।চলি…..।

আঁখি চলে যেতে নিলে রিদিকা মৃদ্যু স্বরেই বলল।

আমি ওকে কেরে নেই নি,ও নিজে থেকেই তোকে ছেড়ে আমার পিছু নিয়েছে।

কথাটা কর্ণপাত হতেই রা**গে শরীর জ্ব**লে উঠল আঁখির,ফিরে গিয়ে সজোরে একটা কঢ়া থা**প্পড় বসালো রিদিকার গালে,থা**প্পড়ে**র তাল সামলাতে না পেরে ফ্লোরে আ**ছ*ড়ে পরল রিদিকা।আঁখি তেঁড়ে গিয়ে ওর চুল মুঠো করে ধরে দাঁতে দাঁত চেঁপে কটমট করে বলতে লাগল।

তোর মতো বা**জে নারীদের জন্যই আজ সমাজটা এত বিকৃতি পেয়েছে।হ্যাঁ ওসব সকল পুরুষ খা**রাপ এবং নি**কৃ**ষ্ট যারা বউ রেখে অন্য নারীর মোহে পরে,তবে সেই নারীগুলো কী দুধের ধুয়া তুলসীপাতা যারা একজন পুরুষের বউ আছে জেনেও তার দিকে ধাবিত হয়,তার প্রস্তাবে রাজি হয়,সেই নারীগুলো যদি সেসব পুরুষদের ফিরিয়ে দিত,চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিত তাদের নিজেদের নিকৃষ্ট অবস্থান, তাদের কাছে নিজেকে বি**লি**য়ে না দিত তবে আজ সমাজে পর**কী**য়া আর ডিভোর্সের হার বাড়ত না,তাই একতরফা আদ্রিশের গলায় দোষ চাপাতে যাস না,নইলে এত মা**র*ব যে পায়ে পরে মাফ চেয়েও প্রা**ণ ভি**ক্ষা পাবি না।

তখনি আদ্রিশ এসে আঁখিকে টান দিয়ে সরালো রিদিকার কাছ থেকে,বেশ তেজি স্বরে বলল।

″এসব কি করছ আঁখি!পা**গল হয়ে গেছ তুমি!তোমার সমস্যা আমাকে নিয়ে তবে আমার সাথে কথা বলো ওকে কেন টানছো?″

″বড্ড দরদ হচ্ছে দেখি উকিল সাহেবের নতুন বউয়ের জন্য..।″

″আঁখি তুমি কিন্তু বড্ড বেশি রিয়াক্ট করছ।রিদিকা এতদিন যখন তোমার বান্ধবী ছিল তখন তো ওর জন্য দরদ তোমার উতলে পরছিল,আর এখন আমি ওকে বিয়ে কী করে নিয়েছি ও তোমার দু**শ**মনে পরিণত হল,ওকে মেনে নিলে কী এমন পরা যাবে তোমার,শুনি?″

″দেখো আদ্রিশ তোমার মত বু**দ্ধিহী**ন, চরি**ত্রহী**ন ল*ম্প*টের সাথে কথা বলার রুচি এই আঁখির নেই।ডিভোর্স পেপারে সাইন করে দিয়েছি,নিজে সাইন করে দিও,আমি লোক পাঠিয়ে নিয়ে নিব।″

″তোমাকে আমি ডিভোর্স দিব না,দেখি তুমি কি করতে পার।কি ভেবেছ তুমি? আমাকে ছেড়ে যাবে আর আমি যেতে দিব তোমায়! নো ওয়ে,আমিও দেখব তুমি ডিভোর্স কি করে পাও।″

কথাটা বলে আদ্রিশ ডিভোর্স পেপারটা একটানে দু’টুকরো করে ফেলল,সাথে সাথে আঁখি আদ্রিশের গাল বরাবরও একটা ছাপ্পড় বসিয়ে দিল সবার সামনেই,আদ্রিশ রেগে গিয়ে আঁখি বলে গর্জে উঠলে।

″আঁখি….″

″ওই উকিল ভলিওম ডাউন,উকিল হবি তুই কোর্টে আমার সামনে ক্ষমতা ঝাড়তে আসিস না,ভুলে যাস নে আমি আঁখি সবকিছু জ্বা**লি**য়ে দেওয়ার ক্ষমতা রাখি।স্বামী হিসেবে সম্মান দিয়েছিলাম বলে আমার আসল রুপ ভুলে গেলি!হি*ট**লার আঁখিকে জাগাতে আসিস না বলে দিলাম,যেভাবে এটা ছিঁড়েছিস নতুন করে বানিয়ে সাইন করে নিয়ে আসিস নইলে উকিল এর উ পর্যন্ত রাখব না আমি এই বলে গেলাম,তোদের স্বামী স্ত্রীর সব রোমান্টিকতা মুহুর্তে ধুলোয় মিশিয়ে দিব,কথাটা মনে রাখিস।″

কথাগুলো বলে আঁখি হনহনিয়ে বাড়ি থেকে বেড়িয়ে গেল,হাতে শুধু তার ব্যবহার্য ফোন,এই বাড়ি থেকে যতই বেড়িয়ে আসছে বুকটা ততই কাঁ*প*ছে আঁখির,কত স্মৃতি জমে আছে আঁখির এই বাড়িতে,কত সপ্ন কত আশা নিয়ে আদ্রিশের স্ত্রী রূপে বাড়িতে প্রবেশ করেছিল আঁখি,সবকিছু আজ ধুলোয় মিশে গেল,কাঙাল হয়ে বেড়িয়ে এলো আজ আঁখি,চোখের জলও যেন আজ পর হল,ভিতরটা ধু*ম*ড়ে মু*চ*ড়ে গেলেও চোখ দিয়ে আজ আর নামছে না জল,আচমকা এক আকর্ষণ এই বাড়ির প্রতি টানছে আঁখিকে,যেন শুনতে পাচ্ছে কিছু পিছুডাক,কতগুলো অশ্রুশিক্ত চোখের না বলা বাণী,নির্জীব সেই ইট পাথর সেই অজীব বস্তুদের অজানা ভালোবাসা টানছে বড্ড আজ আঁখিকে,হয়ত স্বামী সংসারের মায়া এমনই হয়, এক একটা বস্তুকেও ছেড়ে যেতে মন চায় না,তবে মন বানিয়ে নিয়েছে যে আঁখি,আজ সে আর পিছু ডাকে সারা দিবে না,খুঁজে নিবে নিজের এক নতুন গন্তব্য।

দূর আমেরিকার বিশাল এক অট্টালিকার আলিশান কক্ষ ঘেষে এক বারান্দা, বারান্দার প্রাচীর এর প্রান্তে দাঁড়িয়ে আছে বলিষ্ঠ দেহি এক সুদর্শন পুরুষ,বাইরে মুষলধারে বৃষ্টি নেমেছে,মনে সুখে নাচ করছে যেন তারা,হাতে তার একখানা চিঠি।অপলকে তাকিয়ে আছে সেই চিঠিটার পানে,মনের প্রতি প্রান্তে আ**ঘা*ত করছে চিঠিতে ফুটে উঠা সেই অপ্রিয় সত্য বাণীগুলো।

একদিন তোমার আকাশেও বৃষ্টি নামবে,খুব করে চাইবে তখন পাশে আমায়….
দেখে নিও, তুমিও কাদবে,বিষন্নতায় ভুগবে,খুব করে আমাকে পাশে পাওয়ার আকাঙ্খা জাগবে,কিন্তুু আফসোস প্রকৃতি আপনার বিপক্ষে চলে যাবে।প্রতিকূলতা কাটিয়ে উঠার সাধ্য থাকবে না আর।
আপন মানুষ হা*রা*র শোকে পো*ড়*বে আপনার উতলা হৃদয়, কিন্তু আফসোস ফিরে পাবে না আর সেই বোকা ফুলকে,অতলেই হারিয়ে যাবে সে।

চোখ টপকে আজকেও জল গড়ালো তার, প্রতিনিয়ত আঁখির প্রে**ম*দহ**ণে পো*ড়া*র সাজাটা যে হয়ে গেছে তার কপালের লিখন।আজ নিজেই দো**ষী নিজের এই অনাকাঙ্ক্ষিত অবস্থার জন্য।

চলবে……

আরোহী নুর……।

চিঠির এই অংশটুকু আমার লেখা নয় আমার এক ছোটো বোন লিখেছে,ভালো লেগেছে তাই গল্পে এড করেছি,তার নাম নিশাত জাহান,তার নাম বলতে বারণ করেছে তবে আমি তার ক্রেডিট টা নিতে চাই নি।তার লেখাটা কেমন হয়েছে জানাবেন।আসসালামু আলাইকুম সবাইকে।