প্রিয় ভালোবাসা পর্ব-০১

0
3605

#প্রিয়_ভালোবাসা

#Nishat_Tasnim

#পর্ব:১

“ছি!টাকার জন্য তুই একজন নেশাখোরকে বিয়ে করছিস!”

আয়নার সামনে দাড়িয়ে বিয়ের জন্য তৈরী হচ্ছিলাম হঠাৎ এমন কথা শুনে আমি অবাক হলাম,কিছু না বলে পিছনে ফিরে তাকালাম!পিছনে ফিরতেই দেখলাম আমার বেষ্ট ফ্রেন্ড মুমু দরজায় দাড়িয়ে আছে!ওকে দেখেই মৃদু হাসলাম।

—একদম হাসবি না,তুই এতো নিচ কীভাবে হইলি,তুই জানিস যার সাথে তোর বিয়ে হচ্ছে সে একজন নেশাখোর,ড্রাগস এডিক্টেড!

মুমুর কথায় কোনো রিয়েক্ট করলাম না। আমি জানি ও আমার কাছ থেকে শুনতে চাইতেছে কেনো আমি এ বিয়ে করতেছি।বেষ্ট ফ্রেন্ড তো তাই হয়তো মানতে পারতেছে না।তাই মুচকি হেসে বললাম,,,

— আমি তোর কাছে খোলা বইয়ের মতো।আমাকে তুই আমার থেকেও বেশি চিনিস তাই আমি কখন কি করবো , কেনো করবো?আমার থেকে ভালো তুই জানিস।এখন বল তুই এখানে কীভাবে?আমি তো তোকে দাওয়াত দেই নি।

—-তোকে না আমার ইচ্ছে করতেছে মেরে ফেলি,,কেটে ফেলি। সব করি একদম সব!সবসময় এমন করিস যখনই আমি কিছু বলি, তখনই এই বিখ্যাত কথা বলে ফেলিস।যার কারনে আমি আর কিছু বলতে পারি না।আচ্ছা আমি না হয় তোকে চিনি,জানি কিন্তুু এলাকাবাসী???পুরো এলাকায় এই কথা শুনতে শুনতে আসতেছি।

আর আমাকে দাওয়াত দিস নি এই কথা বলিস কীভাবে?তোর কী শরম বলতে কিছু নেই?বেষ্ট ফ্রেন্ডকে দাওয়াত না দিয়ে কথা,,

—আচ্ছা আচ্ছা, এতো ইতিহাস না টেনে বল তুই এখানে কীভাবে???

—তোর মামি কল দিয়ে আসতে বলেছেন তোকে সাজাইতে আসতে।

—ওহ্।আচ্ছা এটা লাগিয়ে দে তো।

মুমু আমার সামনে এসে আমার বাহু ধরে বিছানায় বসিয়ে দিলো।আমি ওকে কিছু বলবো তার আগেই ও বললো,,

—কেনো করছিস এ বিয়ে?টাকার জন্য?টাকাই কি সব?আমি জানি তোদের এখন টাকা দরকার, কিন্তু তাই বলে তোর লাইফ শেষ করে দিবি।তুই একজন এডুকেটেড মেয়ে,ইন্টারে ভালো রেজাল্ট করেছিস, ইনশাল্লাহ ভালো ভার্সিটিতেও চান্স পাবি।আমার মনে হয় না এতো পড়ালেখার পরেও কাউকে আনএডুকেটেড বলে।

—এতো না পেঁচিয়ে, সরাসরি বল কি বলতে চাস?

— একজন নেশাখোরকে বিয়ে করে কেনো নিজের লাইফ টাকে শেষ করে দিচ্ছিস?তোর পুরো ভবিষ্যৎ পড়ে আছে, তাছাড়া ওই ছেলে মোটেও ভালো না।কেউ কীভাবে ছয় বছরে এত বড় বিজনেসম্যান হতে পারে?নিশ্চয় ইলিগেল ব্যবসা, না হলে এত কম সময়ে এত বড় ব্যবসায়ী কীভাবে হয়?পুরো এলাকা জানে ওই অনুভব খান চৌধুরী কতটা খারাপ লোক, মানুষকে কত গালি-গালাজ করে।জানিস ওই লোকের মুখের ভাষা কত খারাপ?

—আমিও তো একজন ধর্ষিতা,তাহলে আমি ভালো কী করে?

—তুই তখন ছোট ছিলি।আর বিষয়টা আমি, তুই আর ওই নরপশু ছাড়া কেউই জানে না।এ বিষয়ের জন্য তুই নিজেকে কেনো দায়ী করছিস?

—কেউ জানে না বলে আমি ভালো।

—একদম উল্টাপাল্টা কথা বলবি না,তুই কি ইচ্ছে করে ধর্ষিতা হয়েছিলি? আর ওই বয়সে এসব সম্পর্কে তুই কিছু বুঝতি?খারাপ তো সেই হয় যে নিজের সজ্ঞানে খারাপ কাজ করে।তুই খারাপ কী করে?

—জানিস, আমরা মানুষেরা না এসব কথা শুধু মুখেই বলি।আজ যদি মানুষ জানতো যে আমার “শিশু ধর্ষন” হয়েছিলো তখন সবাই আমাকে বাঁকা চোখে দেখতো,আমার সাথে মিশতো না,কথা বলতো না।সমাজে অবহেলিত বস্তুু হিসেবে বসবাস করতে হতো।চারদিকে মানুষ নানান কথা বলতে লাগতো।ঘুরে ফিরে আমারই দোষ হতো। সবাই আমাকে দেখলে উপহাস করতো,এখানে -সেখানে সমালোচনা করতো। তাহলে আমি ভালো কীভাবে?

—হায়রে, “লোকলজ্জা “। আমাদের দেশে এই কারনেই এসব নরপশুর অস্তিত্ব রয়েছে।আমরা প্রতি সেকেন্ডে সেকেন্ডে ভাবি আমি এটা করলে লোকে কি বলবে?ওটা বললে লোকে কী বলবে? তুই বল আজ যদি তুই মানুষ কী বলবে এসব না ভেবে ওই নরপশুর বিপক্ষে প্রতিবাদ করতি তাহলে আজ ওই ছেলে এত সুখে -শান্তি তে ঘুরে বেড়াতে পারতো না,জেলে পঁচে মরতো।

—বলা টা যত সহজ, করাটা তত কঠিন।তুই বল একটা ৫ বছরের বাচ্চা ধর্ষন সম্পর্কে কী বুঝে?সে কীভাবে জানবে ওই মানুষরুপী নরপশু তার কত বড় ক্ষতি করবে?আর তার কথাটাকেই কতটা গুরুত্ব দেওয়া হবে?সে কীভাবে বুঝবে তার সাথে খেলার নাম করে তাকে ধর্ষন করবে।আর যখন এ বিষয়টা সম্পর্কে সে বুঝবে তখন সে তার কথা কীভাবে প্রমান করবে?কে তার কথা বিশ্বাস করবে?উল্টো তাকে আজে-বাজে কথা শুনিয়ে দিবে।

—কী আর বলবো?এসবের পিছনে আমাদের সমাজের মানুষগুলো দায়ী।সমাজ ব্যবস্থা দায়ী।সবার বাবা-মা দায়ী।

—সব বুঝলাম কিন্তুু মা-বাবা কীভাবে দায়ী?

—এই সমস্যাতে সবচেয়ে বেশি দোষ বাবা-মা দের।

—উল্টাপাল্টা বলছিস কেনো?মা-বাবা কী বলে যা বাবা ধর্ষন করে আয় বা যা মা ধর্ষনের স্বীকার হয়ে আয়।

—পুরো কথাটা শোন তারপর বল।মা-বাবার অসচেতনাই সবচেয়ে বড় ব্যাপার।বাবা-মাদের উচিত বাচ্চাদের এসব বিষয়ে সতর্ক করা,এসব বিষয়ে বুঝানো।বাবা-মায়ের উচিত তাদের সন্তানকে আদর্শ শিক্ষা দেওয়া,যদি তারা নিজেদের ছেলেদের সঠিক শিক্ষা দিয়ে বড় করতো, তাদেরকে ভালো -মন্দ বুঝাতো তাহলে তারা এমন হতো না।প্রত্যেক বাবা-মা যদি তাদের ছেলেকে সঠিকভাবে মানুষ করতো তাহলে তারা কখনই কোনো নারীকে ধর্ষন করতো না।

—কোনো মা-বাবা তাদের সন্তানকে খারাপ শিক্ষা দেয় না।

—জানি,কিন্তুু তারা সচেতন নয়।

—আচ্ছা,আচ্ছা তোর কথাই ঠিক।তুই এখন আর ওই বিষয়ে কথা বাড়াস না,আজ আমার বিয়ে আমাকে তাড়াতাড়ী রেডী কর।

— বিয়ের জন্য এত তোর এত উতলা হওয়া টা মেনে নিতে পারতেছি না।

–ভালো।

—এখনও সময় আছে একবার ভেবে দেখ।পালিয়ে যা, আমি তোকে সাহায্য করবো।ওইরকম ড্রাগ এডিক্টেড লোক কে বিয়ে না করে পালিয়ে যা।

—কার সাথে পালাবো?

—আহান কিন্তুু তোকে অনেক ভালোবাসে ওর সাথে পালিয়ে যা।

—আমার জীবনটা এতো সহজ নারে।আহানের সাথে কেনো পালাবো? ওকে কি আমি ভালোবাসি নাকি?

—তোকে আমি তোর থেকে ভালো চিনি।আহানের জন্য যে তোর মনে ফিলিংস আছে তা আমার অজানা নয়।

—বিষয়টা সেটা নয়,বিষয়টা হলো আমার মামা-মামী আর উনার সন্তানদের।তারা আমাকে সে ছোট্ট বয়স থেকে লালন -পালন করেছেন।আজ উনাদের অসহায় অবস্থাতে আমি উনাদের কথা না ভেবে নিজের কথা ভাববো?তোর কি সেটা মনে হয়?

মুমু একটা দীর্ঘশ্বাস নিয়ে বললো,,,

—তোর মা জানে?

—বলার প্রয়োজনবোধ করি নি।

—আর তোর বাবা?

—বলেছিলাম কিছু বলে নি।

—ওহ্।আমার না মাঝে মাঝে মনে হয় তোর বাবা কিন্তুু তোর মাকে সত্যিই ভালোবাসতো।

—এখনো ভালোবাসে। আচ্ছা জীবনে কী নিজের সুখ টাই বেশি?আমার মা কী আমার কথা ভেবে একটু সেক্রিফাইস করে সংসার করতে পারতো না?কি এমন ক্ষতি হয়ে যেতো?

মুমু কিছু বলার আগেই মামী ঘরে চলে আসলেন আর এসেই ভাষণ দিতে লাগলেন,,,

—আমার আক্কেল হোক,কেনো তোদের দুটোকে এক ঘরে একলা রেখেছি?বাহ্ , রেডী হওয়া বাদ দিয়ে দুজনে গল্প গুজবে ব্যস্ত।আচ্ছা সারাদিনই তো কথা বলোছ তাও এতো কথা কই থেকে আসে?কীসের এত কথা যে সারাদিন বললেও শেষ হয় না।ওদিকে কাজী সাহেব বসে আছে আর তোমরা গল্প করতেছো বাহ!

—ইয়ে মানে মামী, আমার কোনো দোষ নেই সব দোষ সেঁজুতির।ও আমার সাথে কথা বল

—হয়েছে আর আমাকে বুঝাতে হবে না।যে লাউ হে কদু।তাড়াতাড়ী রেডি করে নিয়ে আয়।

মামীর কথায় হেসে দিলাম,মামী সারাদিনই আমাদের কথার পিছনে পড়ে থাকে আর আমাদের জ্ঞান দিতে থাকে আর মামা এ বিষয়টা নিয়ে প্রচুর হাসে।হঠাৎ মামার কথা মনে পড়ে গেলো,তাই মামীকে জিজ্ঞাস করলাম,,”মামী,মামা কি মেনেছে?”

মামী আমার কথাটা শুনার পর মুখটা ছোট করে ফেললো,বুঝলাম মামাকে মানাতে পারে নি।আমি হলেও মানতাম না,কোনো মামাই তার আদরের ভাগ্নীকে একজন নেশাখোরের কাছে বিয়ে দিতে চাইবে না আর বিষয়টা যদি হয় উনাকে নিয়ে তাহলে তো কোনো কথাই না।

—মামী তুমি চিন্তা করো না,মামাকে আমি ম্যানেজ করে নিবো।তুমি মামার খেয়াল রেখো আর ঔষদ-পএ ঠিকঠাক করে দিও আর অপারেশনটা ভালো করে করিও।সাকিল আশিক কে বলিও উনাকে বেশি না জ্বালাতে।ওদের কিছু লাগলে আমাকে বলতে বলো।

—কবে যে এতো বড় হয়ে গেলি বুঝতেই পারলাম না।আজ আমাদের জন্য তু

—একদম বাজে কথা বলবে না।আমি তোমাদের কেউ না??

মামী দৌড়ে এসে আমাকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে দিলেন।আমারও কান্না আসছিলো কিন্তুু আমি ঠোঁট কামড়িয়ে আটকে রাখলাম।আমি জানি এই পরিবারের মানুষগুলো আমাকে খুব ভালোবাসে।আমার মামার কলিজা আমি।সবসময় আমি যা বলি তাই করে আমাকে নিজের মেয়ের মতে ভালোবাসেন।মামীর কোনো মেয়ে না থাকায় উনিও আমাকে মেয়ের মতো ভালোবাসেন।আর সাকিল-আশিক তো সেঁজু আপি ছাড়া কিছু বুঝেই না, সারাদিন সেঁজু আপি, সেঁজু আপি করে।ওরা দুজন আমার হরলিক্স ফ্রেন্ড।প্রতিদিন সকালে আমরা তিনজন হরলিক্স খাই,আসলে সকালে ওদের হরলিক্স বানিয়ে দেই তো তাই আমিও কষ্ট করে চা না বানিয়ে ওদের সাথে হরলিক্স খাই।

—কিগো মামী?এখন সময় নষ্ট হয় না?শুধু আমি কথা বললেই সময় নষ্ট হয়ে যায়?

মুমুর কথায় মামী আমাকে ছেড়ে দিয়ে চোখের পানি মুছে দিলেন।উনি আমার মাথায় কাপড় দিয়ে হল রুমে নিয়ে গেলেন।আমাকে নিয়েই উনার পাশে বসিয়ে দিলেন।আমি আশেপাশে তাকিয়ে দেখলাম অনুপমা আন্টি, সাকিল-আশিক,কাজী, মামী, মুমু আর আমার জামাই ছাড়া কেউ নেই।একটা বিষয় খুব অদ্ভুদ লাগলো উনার মতো এত বড় লোকের বিয়েতে উনার মা ছাড়া এক্সট্রা কোনো মানুষ নেই, কিন্তুু কেনো???

অবশেষে কাজীর রীতিমতো আমাদের বিয়ে সম্পূর্ণ হলো।মেয়েদের জীবনটা খুবই অদ্ভুদ তাই না?কবুল নামক ছোট্ট শব্দ টা বলে ফেলার পর পরই তাদের জীবনের সব কিছু বদলে যায়।তাদের জীবনে তাদের বাড়ী বলে কিছুই থাকে না,বিয়ের আগে বাপের বাড়ী আর বিয়ের পর স্বামীর বাড়ী। বিয়ের পর সবাইকে বাবার বাড়ী ছেড়ে চলে যেতে হয়,আমাকেও যেতে হবে।বিদায়বেলাটা সবচেয়ে কষ্টকর,শুধুমাএ সেই বুঝবে যে এমন পরিস্থিতিতে ছিলো, সবাইকে বিদায় দেওয়ার সময় মনে হচ্ছিলো কলিজা টা ফেঁটে যাচ্ছে। সবচেয়ে বেশি কষ্ট হয়েছিলো মামাকে বুঝাতে,মামা আমার উপর খুব রেগে ছিলেন, কোনোভাবেই বুঝাতে পারছিলাম না।অবশেষে মামার সামনে হাটু ভেঙ্গে বসে মামার হাতটা শক্ত করে ধরে বললাম,,,””মামা কার ভাগ্য কী থাকে কেউ বলতে পারে না।আজ আপনি মনে করতেছেন একটা বাজে ছেলের সাথে বিয়ে হয়েছে বলে আমার জীবন নষ্ট হয়ে গিয়েছে।আচ্ছা আপনিই বলুন আপনি আপনার বোনকে বিয়ে দেননি আমার বাবার কাছে,কই সম্পর্ক টা কী টিকেছে?উনারা কী সুখে থাকতে পেরেছে?এমনও তো হতে পারে আমি উনার সাথে সুখে থাকবো।হয়তো কোনো একদিন বলবেন উনাকে বিয়ে করাটা আমার সবচেয়ে ভালো সিদ্ধান্ত ছিলো কিন্তুু এর জন্য চাই আপনার দোয়া।আপনি যদি মন খারাপ করে আমাকে বদ দোয়া দেন তাহলে কী আমি ভালো থাকবো?”” মামাকে বুঝানো আমার জন্য যুদ্ধের মতো ছিলো।

সবাইকে জড়িয়ে ধরে কান্না-কাটি করে উনাদের সাথে যাওয়ার জন্য গাড়ীতে উঠলাম।গাড়ীটা বেশ দামী মনে হলো,এসব গাড়ী কলেজে যাওয়ার সময় মাঝে মাঝে দেখতাম।দীর্ঘ সময়ের জার্নি করার পর আমার শশুড়বাড়ী পৌঁছালাম।গাড়ীতে কেউ কারো সাথে কোনো কথা বলে নি,সবাই চুপচাপ ছিলো।আমার শাশুড়ীমা কে দেখে মনে হলো উনি প্রচুর ভয়ে আছেন,আমি কিছুটা আন্দাজ করতে পেরেছি তাও কিছু বললাম না।গাড়ীটা বিশাল এক বাড়ীর সামনে থামলো,বাড়ীটা দেখতে রাজপ্রসাদের মতো।আফসোস এমন রাজপ্রসাদেও আমি সুখী থাকবো না।বাড়ীর ভিতরে ঢুকে তো আমি অবাক এত সুন্দর সুন্দর জিনিস আমি জীবনেও দেখি নি,দেখে তো মনে হয় অনেক দামী। আমি অবাক হয়ে চারপাশ দেখতে লাগলাম তখনই আমার শাশুড়ি বলে উঠলেন,,,

—এসব পরে দেখো মা,সারাপথ জার্নি করে এসে নিশ্চয় টায়ার্ড, যাও গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নেও।

আমি ছোট করে বললাম,, আচ্ছা।

—তোমাকে কী করে যে ধন্যবাদ দিবো মা,আমার কথাটা রাখার জন্য।আমার ছেলেটা এমন ছিলো না ওর অতীত ওকে বদলে দিয়েছে,তুমি আমার ছেলেটাকে আগের মতো করে দিও এটা তোমার কাছে আমার অনুরোধ।তুমি হয়তো বলবে আমি তোমাকেই কেনো বউ করেছি যেখানে হাজার হাজার মেয়ে আমার ছেলেকে বিয়ে করতে চায়?আমি সে কথা মুখে বলবো না একদিন তুমিই ঠিকই বুঝবে কেনো আমি এ সিদ্ধান্ত নিয়েছি।আমি জানি আমি তোমার জীবন টা শেষ করে দিয়েছি, আমার ছেলের সুখের জন্য।তোমার দূর্বলতার সুযোগ নিয়েছি,কিন্তুু আমি নিরুপায়।মা রে একটু ধৈর্য ধরে আমার ছেলেটার সাথে মানিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করিও।

এরপর উনি উনার ছেলে সম্পর্কে আরো অনেক কথা বললেন।আমি কিছু বললাম না,মাথা নিচু করে সব চুপচাপ শুনলাম।

অনেক খুঁজে উনার রুমটায় আসলাম,এসেই চমকে গেলাম।এটা কী রুম নাকী অন্য কিছু?সব কিছুই এক্সপেন্সিভ। সব কিছু ঘুরে ঘুরে দেখতে লাগলাম,সব ভালো লাগলো কিন্তুু ওই পাশটা মোটেও ভালো লাগে নি।ওখানে সব মদ,গাঞ্জা,আরো কী যেনো।আমি এসব দেখে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললাম।আমার ব্যাগ থেকে একটা সাদা স্যালোয়ার স্যুট বের করলাম।এই সাদা রং টা আমার খুব প্রিয় আর এই সাদা জামাটাও অনেক প্রিয়।ওয়াসরুম থেকে ফ্রেশ হয়ে বের হয়ে দেখলাম আমার স্বামী একটা কালো টিশার্ট আর শর্ট প্যান্ট পরে মদ বানাচ্ছে পাশেই ইনজেকশনের সিরিজ আরো কী যেনো আছে।আমি উনার সামনে গিয়ে বললাম,,,

—আপনার সাথে আমার কিছু কথা আছে।

—জানি আমি।

আমি ভ্রু কুচকে তাকাতেই উনি বললেন,,,

—আমি যেনো এসব না খাই,আমার এই সেই হবে আমি মারা যাবো আমার জীবনটা শেষ হয়ে যাবো আরো ব্লা,ব্লা,ব্লা।এসবই বলতেন কি তাইতো?

—যতসব আজাইরা কথা।আমি এসব বলতে যাবো কেনো?আপনি মরেন নয় বাঁচেন তাতে আমার কী?আপনি এসব খাইলেও আপনার ইচ্ছা না খাইলেও আপনার ইচ্ছা, আমি কেনো আপনাকে বারন করবো?

উনি আমার দিকে কেমন করে তাকালেন,হয়তো উনার বিশ্বাস হচ্ছে না আমি এমন কিছু বলবো।আমি জানি উনি হয়তো ধারনা করেছেন আমি উনাকে এসব ন্যাকা কথা বলে উনার কাছে ভালো হতে চাইবো।কিন্তুু আমি বলি নি কারন যে বুঝে না তাকে বুঝানো যায় আর যে বুঝেও বুঝে না তাকে বুঝানো যায় না।তাই শুধু শুধু আমার এনার্জি নষ্ট করে উনাকে এসব বলে কী লাভ?

—তো কী বলবে?

—আপনার এসব ছাই-পাশের সামনে বসে আমি বলতে পারবো না।তাছাড়া আপনাদের বারান্দায় চলুন, আপনার বারান্দা অসম্ভব সুন্দর।আপনার এসব ছাই-পাশ কোথাও চলে যাচ্ছে না,আমার কথা শেষ হলে এসে গিলিয়েন।

উনি মদের বোতল টা নিতে নিয়েও থেমে গেলেন, তারপর উঠে আমার সাথে বারান্দায় চলে আসলেন।উনি নাকী অনেক রাগী,উগ্র,গালিগালাজ করে।কই আমাকে তো কিছু বললো না,চুপচাপ চলে আসলেন।

—বলো কী বলবে???

উনার কথায় হাজারগুন বিরক্তি দেখতে পেলাম।

—আপনার কাছ থেকে আমি আপনার অতীত টা শুনতে চাই,মানে আপনার প্রেমের ব্যর্থতার কাহিনী শুনতে চাই।আই হোপ আপনার ওয়াইফ হিসেবে আমার এতোটুকু অধিকার আছে।দেখুন এখন আমাকে কোনো কথা শুনানোর আগে আমার অবস্থাটা একবার ভেবে দেখুন।আমি জানি আমি আপনাকে টাকার জন্য বিয়ে করেছি,তাই বলে কী আমার জানার অধিকার নেই?

উনি কিছু বলতে গিয়েও বলেননি,কিছুসময় চুপ করে রইলেন।উনি আস্তে করে বারান্দার রকিং চেয়ারটায় বসলেন তারপর চোখ বন্ধ করলেন।আমি তো শুধু উনাকেই দেখতেছি,কী করতেছে? আর কী করবে?

—আমি জানি না কেনো কোনো মেয়ে বিয়ের রাতে তার স্বামীর প্রাক্তন সম্পর্কে কেনো জানতে চাইতেছে?যেহেতু সে আমার কাছে আবদার করেছে তাই আমি বলতেছি।

উনি এবার বলতে লাগলেন, কিন্তুু কিছু সময় পর আমি দেখলাম উনার পুরো শরীর গামতেছে আর কাঁপতেছে,কেমন অস্থির অস্থির করতেছেন।উনার মনে হয় এখন নেশার টান উঠেছে? কেমন কেমন করতেছেন?

চলবে,,,,

(সবার পছন্দ এক না,ভালো না লাগলে এড়িয়ে চলুন।)