প্রেম প্রয়াস পর্ব-০২

0
913

#প্রেম_প্রয়াস
#মাশফিয়াত_সুইটি(ছদ্মনাম)
পর্ব:০২

‘আহালে বাবু তুই কি আমার উপর রাগ করেছিস? থাক রাগ করে না সব ভুলে যা তো আমার ননদিনীটা এখন কি করে?’

– তোমার ননদিনী খাচ্ছে আর তোমার জামাই এখন তোমার সঙ্গে কথা বলছে।

তাশফা অবাক হয়ে গেল দ্রুত মোবাইলটা কান থেকে সরিয়ে ভালো করে নাম্বার চেক করে নিয়ে বলতে লাগল,
– নাম্বার তো ঠিকই আছে তাহলে আমার জামাই কোত্থেকে এলো?

– এখন জামাইকে চিনতে পারছো না? সমস্যা নেই আমি চিনিয়ে দিচ্ছি রাকা যদি তোমার ননদ হয় তাহলে ওর বড় ভাই হিসেবে আমি তোমার জামাই হই তাই না তাশফা।

– রাদিফ ভাই!!

– ভাই না জামাই।(রাগী স্বরে)

সাথে সাথে কলটা কেটে দিল তাশফা বড় বড় নিঃশ্বাস ফেলে,
– সবসময় আমার সাথেই কেন এসব হয় ইসস কি লজ্জা রাদিফ ভাইয়ের সামনে যাওয়ার মুখ রইল না আমার।

রাদিফের মা খাবার টেবিল থেকে কিছুটা চেঁচিয়ে,
– রাদিফ কার সাথে এখন আবার কথা বলছিস? তোকে কখন ধরে খাওয়ার জন্য ডাকছি।

রাদিফ খাবার টেবিলে বসে রাকার মোবাইল তার দিকে এগিয়ে দিয়ে মায়ের দিকে তাকিয়ে,
– আসলে আম্মু তোমার বউমার সঙ্গে কথা বলছিলাম।

রাকা বিষম খেলো গলায় খাবার আটকে গেছে রাদিফ রাকার সামনে পানির গ্লাস ধরতেই রাকা সবটুকু পানি খেয়ে ফেলল। রাদিফের মা তিক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে,

– আমার বউমা! তুই বিয়ে করলি কবে? বউমা আসল কোত্থেকে?

– ছোট বোনের বান্ধবী থাকতে আবার বিয়ে করে বউ বানাতে হয় নাকি।

রাদিফের মা এবং রাকা দু’জনেই হা করে তার দিকে তাকিয়ে আছে রাদিফ খেতে খেতে,
– রাকা তাড়াতাড়ি খেয়ে তোর ভাবীকে কল দে বাচ্চা মেয়েটা কখন ধরে তোকে খুঁজছে।

রাকার কাছে এবার পুরোটা পরিষ্কার হয়ে গেছে কোনমতে খেয়ে ঘরে চলে গেল। রাদিফ সবটা মায়ের কাছে বলতেই তার মা হেসে দিলেন।
______________
রাতে খাবার খেয়ে ঘুমানোর প্রস্তুতি নিচ্ছিল তাশফা তখনি তার মা ঘরে এসে,
– শোন তাশফা কাল কলেজে যাওয়ার দরকার নেই।

– কেন? কাল কি?

– কাল তোর খালামনি আর তার পরিবারের সবাই আসবে।

– তাতে আমার কি?

– তোর কি মানে তোকেই তো দেখতে আসবে।

– আমাকে কেন দেখতে আসবে আগে কি কখনো দেখেনি নাকি আমার মাথায় শিং গজিয়েছে যে নতুন করে দেখতে হবে।

– সবসময় বেশি কথা, নিহানের সঙ্গে তোর বিয়ে পাকা করার জন্য আসবে আগেই বিয়ে ঠিক করা ছিল এখন তো নিহান ভালো একটা চাকরি পেয়ে গেছে তাই তারা দেরি করতে চাচ্ছে না।

– পৃথিবীতে কি ছেলের অভাব পড়েছে যে তুমি খালাতো ভাইয়ের সঙ্গে আমার বিয়ে দিবে?

– তোর কি নিহানকে পছন্দ নয়?

– পছন্দ হবে না কেন ভাই হিসেবে ভালোই লাগে কিন্তু জীবন সঙ্গী না না এ সম্ভব নয়।

– তুই কি কাউকে পছন্দ করিস?

এমন একটা প্রশ্নের অপেক্ষাই করছিল তাশফা। খুশিতে গদগদ হয়ে,
– হুম।

তাশফার মা অবাক হয়ে,
– কাকে!

– রাকার ভাইকে, রাদিফ ভাই যে কি কিউট আম্মু যদি দেখতে তুমিও দিওয়ানা হয়ে যেতে।

– লজ্জা করে না মায়ের সামনে এসব কথা বলতে?

– লজ্জা কেন করবে? তুমিই তো জিজ্ঞেস করলে।

তাশফার মা গম্ভীর কন্ঠে,
– এসব বাচ্চামি বাদ দে নিহানকেই তোর বিয়ে করতে হবে ছোট থেকেই তোদের বিয়ে পাকা করে রেখেছি।

– আম্মু বিয়ে কি ফল নাকি যে পাকা করে রেখেছ? আচ্ছা পাকানোর জন্য কি ফরমালিন ব্যবহার করেছ?

– চুপ কর তো এখনো বাচ্চাদের মতো কথা বার্তা।

চলে গেলেন তাশফার মা, তাশফা লাইট নিভিয়ে বিছানায় শুয়ে পড়লো ঘুমানোর উদ্দেশ্যে। বিছানায় শুতেই ঘুম গুলো তার চোখে হানা দিল। বাড়ির সবাই শুয়ে পড়েছে কিন্তু রাকা বিছানার এক কোণে গুটিসুটি মেরে ফিশফিশ করে আরিয়ানের সঙ্গে কথা বলছে। রাদিফ হঠাৎ করে দরজা ধাক্কা দিয়ে,

– কিরে রাকা না ঘুমিয়ে কার সঙ্গে কথা বলছিস?

রাকা ভয় পেয়ে দ্রুত ফোন রেখে মিথ্যে বলল,
– ভাইয়া তাশুর সঙ্গে কথা বলছিলাম।

রাদিফ রাকাকে ঘুমাতে বলে নিজের ঘরে চলে গেল। দু’বছর আগে রাদিফের বাবা স্ট্রোক করে মারা গেছেন আর তারপর থেকেই মা আর বোনকে বাবার অনুপস্থিতিতে আগলে রেখেছে রাদিফ। বোনকে সে অনেক ভালোবাসে তাই সবসময় রাকার খেয়াল রাখে।
_____________
রাত শেষ হয়ে সকাল হয়ে গেছে রাদিফ রেডি হয়ে বসে আছে রাকার জন্য।রাকাকে কলেজে পৌঁছে দিয়ে তারপর অফিসে যাবে এটাই প্রতিদিনের রুটিন।

তাশফা কলেজে যাওয়ার জন্য রেডি হয়ে বাইরে বের হতেই তার মা এগিয়ে এসে,
– কোথায় যাওয়া হচ্ছে?

– কলেজে।

– তোকে না আজ যেতে নিষেধ করলাম।

– দেখো আম্মু এইভাবে বাড়িতে একা একা বসে থাকা আমার পক্ষে সম্ভব নয়।

– একা কোথায় তোর খালামনিরা আসলে তো কত মানুষ।

– বড়দের সঙ্গে আমার কোন কথা নেই আমি গেলাম।

কলেজে যাওয়ার জন্য বেরিয়ে গেল তাশফা তার মা তার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে নিজের কাজে চলে গেলেন।

কলেজের সবগুলো ক্লাস শেষ করে তাশফা আর রাকা কলেজ থেকে বের হলো।রাকা নিজের পেট ধরে,
– তাশু আমার না প্রচুর খিদে পেয়েছে কিন্তু টাকা আনতে ভুলে গেছি।

– বাসায় গিয়ে খাবি এখন তাড়াতাড়ি চল।

– বাসায় যেতে যেতে খিদে আরো বেড়ে যাবে।

– তো এখন কি করবি? আমিও টাকা আনিনি আম্মু আজ কলেজ আসতে নিষেধ করেছিল কথা না শুনেই চলে আসছি তাই আনা হয়নি।

– ভাইয়ার অফিস এখান থেকে প্রায় কাছেই চল গিয়ে পেট ভুজন করে আসি।

তাশফা অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে,
– মাফ কর আমি যাবো না আর ওই বজ্জাতের সামনে এমনিতেই আমার নাক কান সব কাঁটা গেছে।

– আবার কি হয়েছে?

– গতকাল একা বোরিং লাগছিল বলে তোকে ফোন দিয়ে জিজ্ঞেস করেছিলাম আমার ননদিনীটা কি করে কিন্তু ওই বদমাইশ লোকটা সব শুনে ফেলেছে।

রাকা জোরে হেসে,
– তারপর তারপর?

– তারপর আর কি উত্তর দিল আমি তোমার জামাই বলছি তোমার ননদিনী খাচ্ছে।

– এই জন্যই কাল মাকে বলল তোমার বউমার সঙ্গে কথা বলছিলাম।

তাশফা চুপ করে আছে তাশফার অসহায় মুখমণ্ডল দেখে রাকা হাসছে।তাশফা এবার বিরক্ত হয়ে,
– থামবি তুই?

রাকা তাশফার হাত ধরে টেনে,
– আচ্ছা থামলাম এবার চল ভাইয়ার অফিসে।

– আমি যাবো না।

– এত ভয় পেলে চলবে চল তো।

তাশফাকে জোরপূর্বক টেনে নিয়ে গেল রাকা। রাদিফ সবেই একটা মিটিং শেষ করে নিজের কেবিনে এসে বসেছে। ল্যাপটপের দিকে মনোযোগ সহকারে তাকিয়ে আছে তখনি রাকা ভেতরে প্রবেশ করল।রাকাকে দেখে একটুও চমকায়নি রাদিফ কারণ প্রায়ই রাকার কোন প্রয়োজন হলেই হুটহাট করে চলে আসে এখানে, তবে তাশফাকে দেখে চমকে গেছে তাশফার দৃষ্টি অন্যদিকে সে এখনো রাদিফের দিকে তাকায়নি ভয়ে।

রাদিফ তাদের দিকে তাকিয়ে,
– এখানে কি?

রাকা মেকি হেসে,
– খিদে পেয়েছে টাকা দে।

রাদিফ প্রশ্ন না করে টাকা দিতেই রাকা টাকাটা নিয়ে,
– ঠিক আছে গেলাম তাহলে বাই।

– হুম।

তাশফা হাফ ছেড়ে বাঁচলো দ্রুত রাকার সাথে বের হয়ে গেল। কিন্তু লিফটের কাছে এসেই রাকা বলতে লাগল,
– তাশু দেখলি ব্যাগটা ভুলে ভাইয়ার ওখানেই রেখে এসেছি, একটু নিয়ে আসবি।

– তোর ব্যাগ তুই গিয়ে নিয়ে আয়।

– আমার পেটটা খিদের জ্বালায় শেষ প্লিজ নিয়ে আয়না সোনা।

– ইচ্ছে করে সিংহের গুহায় পাঠাস।

– যা প্লিজ।

তাশফা মনে মনে হাজারো দুয়া পড়ে এগুতে লাগলো রাকা মুচকি হেসে মনে মনে,
– ভাইয়ার এতো কাছে আসলি কথা না বলেই চলে গেলে হয় ইচ্ছে করেই ব্যাগ রেখে এসেছি এবার একটু প্রেম কাহিনী চলুক আর আমি রিলেক্সে দাঁড়াই।

রাদিফ কাজ করছিল তখনি তার পি.এ এসে,
– স্যার এই ফাইলটায় তো সাইন করা হয়নি।

রাদিফ মেয়েটির দিকে না তাকিয়েই,
– রাখুন ফাইলটা চেক করে তারপর করে দিব।

বলেই চেয়ার থেকে উঠে সামনে যাচ্ছিল রাদিফ কিন্তু হুট করেই মেয়েটি পায়ের সাথে পা লেগে পড়ে যেতে নিচ্ছিল তখনি সে রাদিফকে ধরে ফেলে। রাদিফ ঘটনাটার জন্য অপ্রস্তুত ছিল তখনি তাশফা ভেতরে ঢুকতেই এমন কান্ড দেখে হা করে তাদের দিকে তাকিয়ে আছে। মেয়েটাকে নিজের থেকে সরিয়ে সোজা হয়ে দাঁড়াতেই তাশফাকে দেখে রাদিফ অবাক হয়ে গেছে সাথে কিছুটা ভয়ও ‌এই ভেবে,’ তাশফা কি দেখে ফেলেছে পুরোটা না জেনেই ভুল বুঝেছে।’

রাদিফ ঠোঁটে জোরপূর্বক হাঁসি ফুটিয়ে,
– আসলে এটা..

– রাকা ভুল করে ব্যাগ রেখে গেছে ওইটাই নিতে এসেছিলাম।

দ্রুত ব্যাগটা নিয়ে ঝড়ের গতিতে বেরিয়ে গেল তাশফা।রাদিফ পি.এ কে যেতে বলে চুপ করে বসে আছে। ব্যাগ নিয়ে বাইরে আসতেই রাকা জিজ্ঞেস করল,
– কিরে এতো তাড়াতাড়ি চলে এলি!

চলবে……