#বোনু
#Part_08
#Writer_NOVA
ইশাত বাস্কেটবল খেলা শেষ করে ক্লান্ত হয়ে পাশে বসে আছে।সবাই চলে গেছে অনেক আগে।বসা থেকে দাঁড়িয়ে মোবাইল আনার জন্য পা বাড়ালো।হঠাৎ করে পেছন থেকে কেউ জাপটে ধরলো।কে করেছে সেটা বুঝতে ইশাতের কিছু সময় লাগলো।যখন বুঝলো তখন রেগে তাকে ছারিয়ে একটা হেচকা টানে সামনে নিয়ে এলো।
ইশাতঃ তারিন, সহ্যের একটা লিমিট আছে। কি ধরণের অসভ্যতামী এসব?
তারিনঃ লাভ ইউ ইশাত বেবস্।
ইশাতঃ হচ্ছেটা কি? তোর জ্বালায় কি কোথাও গিয়ে শান্তিও পাবো না।দেখ তারিন, তোকে আমি আগেও বলছি এখনো বলছি তুই যেরকম ভাবছিস তা কখনও সম্ভব হবে না।তুই এখনো ছোট।
তারিন হুট করে ইশাতকে জরিয়ে ধরলো। এতে ইশাত আরো রেগে গেল।তারিনকে জোরে ধাক্কা মেরে সরিয়ে দিলো। তারিন টাল সামলাতে না পরে যেতে নিলো।তবে একটুর জন্য পরলো না।তারিন ভেবেছিলো এখনি পরে যাবে।তাই চোখ বন্ধ করে রেখেছিলো।পরলে নির্ঘাত কোমড়টা ভাঙ্গবে।পিটপিট করে তাকিয়ে দেখলো ইশাত, তারিনের একহাত ধরে রেখেছে।
তারিনঃ ইস,এখন যদি একটা রোমান্টিক গান বাজতো।তাহলে আমাদের এই সময়টা স্মৃতির পাতায় লেখা থাকতো।
ইশাতঃ কি বললি?
তারিনঃ কেন শুনোনি?তুমি কি বয়রা নাকি? জানেমন আমার, তুমি কেন আমায় বুঝো না।
ইশাত তারিনের কথা শুনে হাতটা ছেরে দিলো।তারিন ঠাস করে নিচে পরে গেলো।তবে ততটা ব্যাথা পেলো না।তারিন ছলছল চোখে ইশাতের দিকে তাকালো।ইশাত ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে সেখান থেকে চলে এলো।মোবাইলটা ব্যাগ থেকে বের করে হাতে নিয়েই ঈশানকে কল করলো।
ইশাতঃ আসালামু আলাইকুম।
ঈশানঃ অলাইকুম আস সালাম।তুই জলদি বাসায় আয়।এদিকে অনেক কিছু হয়ে গেছে।
ইশাতঃ কেন কি হয়েছে?আমার বোনু ভালো আছে তো।বোনুর কি অবস্থা? খাবার খেয়ছে? কি করছে ও? ঔষুধ গুলো কি ঠিকমতো খাইয়ে দিয়েছিস? বোনু ঘুমিয়ে পরেছে?
ঈশানঃ এতো প্রশ্নের উত্তর আমি একসাথে দিবো কি করে? এক এক করে প্রশ্ন কর।তুই জলদি বাসায় আয়।আজ তো একটা অঘটন ঘটে গেছে।
ইশাতঃ কি হয়েছে? আমার বোনু ঠিক আছে তো।ওর কিছু হয়নি তো।
ঈশানঃ এখন ঠিক আছে। একটু আগে ডক্টর ডাকতে হয়েছে।
ইশাতঃ ডক্টর কেন ডেকেছিস? বোনুর কি হয়েছিলো? কথা বলছিস না কেন? কি হয়েছিল বোনুর? শান আমার কথার উত্তর দে।(রেগে+উৎকন্ঠা হয়ে)
ঈশানঃ তুই বাসায় আয়।এতো কথা ফোনে বলা সম্ভব হবে না।
ইশাতঃ আমি তোকে ভিডিও কল দিচ্ছি। আমাকে এখনি বোনুকে দেখা।বোনুকে না দেখলে আমি শান্ত হবো না। আমি শীঘ্রই বাসায় আসছি।
ইশাতের অবস্থা এখন খারাপ। বোনুর চিন্তায় ও ভয়ে বারবার শরীর ঘামাচ্ছে।ঈশান ভিডিও কল দিয়ে ওদের বোনুকে দেখালো। তারপর ইশাত শান্ত হল।এতখন মনে হচ্ছিল ওর জীবনটা কেউ টেনে বের করে নিয়ে যাচ্ছিলো।এখন ফিরে এসেছে।ইশাত ব্যাগ হাতে নিয়ে দৌড়ে বাইকের কাছে চলে গেলো।এখন বাসায় গিয়ে সবার আগে বোনুকে দেখবে তারপর বাকি কাজ।
এই দিকে তারিন মুখ ঢেকে কান্নায় ভেঙ্গে পরেছে। ইশাত বাইকের সামনে থেকে আবার ফিরে এলো। এতখনে বোনুর চিন্তায় তারিনের কথা মনে ছিলো না।
তারিনঃ ইশাত কেন বুঝো না তুমি আমায়? অনেক ভালবাসি তোমায়।একটু ভালোবাসলে কি হয়? সত্যিকারে ভালো না বাসলেও মিথ্যা করে একটু ভালবাসো না।কি নেই আমার মাঝে?আমি কি দেখতে এতোটাই খারাপ। যার কারণে আমাকে ভালবাসা যায় না।আল্লাহ তুমি কি সবসময় আমার সাথে এমন করবে? আমি আর কিছু চাই শুধু ইশাতকে আমার জীবন সঙ্গী হিসেবে দিও।আমিতো পুরতে পুরতে শেষ হয়ে গেছি।এবার একটু বোঝো আমায়।
তারিন কান্না করে নিজের অবস্থা নাজেহাল করে ফেলেছে। ওর সব কথা আড়াল থেকে ইশাত শুনলো।
ইশাতঃ আমি জানি তুই আমায় অনেক ভালবাসিস।কিন্তু আমার আগে তোর ক্যারিয়ার।তোকে যে নিজের পায়ে দাঁড়াতে হবে।চিন্তা করিস না তোকেই আমি বউ করে ঘরে তুলবো।আরেকটু অপেক্ষা কর তারিন জানপাখি।আমি জাতীয় দলে চান্স পেয়ে নেই। এখন বিয়ে করলে তোকে খাওয়াবো কি? দুজনের তো ভিক্ষা করে খেতে হবে।
তারিন কাঁদতে কাঁদতে হিচকি তুলে ফেলেছে।তারিনের সামনে ইশাত পানির বোতল ধরলো।বেচারী কান্না করে চোখের পানি নাকের পানি এক করে ফেলেছে।
ইশাতঃ নে ধর পানি খা।সামান্য একটু ব্যাথা পেয়েতো নাক,মুখ কেঁদে ফুলিয়ে ফেলেছিস।এতো ছেচকাদুনি কেন তুই। কেউ সামান্য ব্যাথা পেলে এমন করে।
তারিনঃ আমি পানি খাবো না।(কাঁদো কাঁদো কন্ঠে)
ইশাতঃ তুই খাবি না তো তোর ঘাড়ে খাবে।(রেগে)
ইশাত জোর করে মুখে চাপ দিয়ে তারিনকে পানি খাওয়ালো।
ইশাতঃ চল বাসায় যাবি।আমি তোকে পৌঁছে দিয়ে আসছি।এতো রাতে একা বাসায় যেতে হবে না।
তারিনঃ আমি চলে যেতে পারবো।আমার কথা কাউকে ভাবতে হবে না।
ইশাতঃ কে ভাববে তাহলে? নতুন কাউকে পেয়েছিস নাকি।
তারিনঃ তুমি চলে যাও।আমি একা চলে যেতে পারবো।
ইশাতঃ শুনবি না তো আমার কথা।
তারিনঃ না।
ইশাত রেগে তারিনের হাত মুচরে ধরে টানতে টানতে জোর করে ওকে নিয়ে বাসার দিকে রওনা দিলো।
🍁🍁🍁
নিউ ইয়ার্ক………
বারে বসে একের পর এক রেড ওয়াইনের গ্লাস শেষ করছে অচেনা ছেলেটি।ওর সামনে এসে দাঁড়ালো জিকু।মির্জাদের বোনের সব খবর নেয়া শেষ। আগামীকাল রাতে মি. মির্জাদের জন্য অনেক বড় সারপ্রাইজ অপেক্ষা করছে। সেই খুশিতে বড় একটা পার্টি দেওয়ার চিন্তাও করছে।
জিকুঃ বস,সব ব্যবস্থা হয়ে গেছে।
—আমার ভাইকে কিছু জানানোর প্রয়োজন নেই। ঐ হাঁদারামটা কে দিয়ে কোন কাজ হবে না।আগেরবার ওর জন্য পুরো প্লান নষ্ট হয়েছে। আমার ভাই না হলে এর সাজা ওকে অনেক আগেই দিয়ে দিতাম।আমি স্বার্থ ছাড়া কিছু করি না।ওকেও টোপ হিসেবে ব্যবহার করছি।তিড়িং বিরিং করলে আমার ভাইকেও শাস্তি দিয়ে দিবো।
জিকুঃ আপনার ভাইকে তাহলে কিছু জানাচ্ছি না।
—মির্জা গেট রেডি ফর মাই নেক্সট এট্যাক।আমি যেই দহনে পুরছি তোদেরও সেই দহনে পোরাবো।বোন না থাকার জ্বালা তোরাও টের পাবি।তোদের দূর্বলতা তো এক জায়গায়।তোদের বোন তোদের কলিজা।
জিকুঃ বস, আপনার শত্রুতা মির্জাদের সাথে। তাহলে আপনি তার প্রতিশোধ ওদের বোনের ওপর নিতে চাইছেন কেন?
জিকুর কথা শুনে অচেনা ছেলেটি পাগলের মতো হাসতে লাগলো। তবে এই হাসিটা খুশির নয়।বরং চাপা আর্তনাদ ও প্রতিশোধের আগুন জ্বলানোর।তা একমাত্র মির্জাদের বোনকে শেষ করে দিলেই নিভবে।
জিকুঃ বস, আমার কথার উত্তর দিলেন না।
—আমি যদি মির্জাদের ক্ষতি করি তাহলে ওদের কিছু হবে না।ওরা কোন সমস্যাই মনে করবে না।কিন্তু ওদের বোনের গায়ে সামান্য আঁচড় লাগলে সেই ব্যাথাটা ওর বোন একা পায় না।সাথে মির্জাদের কলিজায় ব্যাথা লাগে।আর যদি ওদের বোনকে শেষ করে দেই তাহলে মনে করলে জিকু মির্জারাও শেষ হয়ে যাবে।জিন্দা লাশ হয়ে বেঁচে থাকবে ওরা।যে বাঁচার কোন মানে নেই। আমার শান্তি তো তখনি হবে।ওরা ওদের বোনুর জন্য কাঁদতে কাঁদতে শেষ হয়ে যাবে। আর আমি সেই আনন্দে বিশাল বড় করে পার্টি দিবো।
জিকুঃ বস,চার ভাইয়ের জীবনের অর্ধেক তাদের বোন।ওর কোন ক্ষতি হলে তো আপনাকে মেরে ফেলবে।আপনি সাত সমুদ্র তের নদীর পর পালালেও ঠিক খুঁজে বের করে আপনাকেও শেষ করে দিবে।যে মেয়েকে তাদের ভাই এতো ভালবাসে তার একবার ক্ষতি হতে দেখে চুপ করে রয়েছে।পরের বার যে চুপ করে থাকবে এমনটা কিন্তু নয়।
— জিকু তুমি কি আমার পক্ষে কথা বলছো নাকি মির্জাদের চামচা হয়ে কথা বলছো।
জিকুঃ সরি বস।যা সত্যি তাই বললাম।
—তোমাকে এতো সত্যি কথা বলতে হবে না।আমার সামনে থেকে সরো তুমি। নয়তো যে কোন সময় তোমাকে আমি রেগে সুট করে বসতে পারি।
জিকু সেখান থেকে চলে গেলো। অচেনা ছেলেটি আরেকটি রেড ওয়াইনের বোতল হাতে নিলো।ইতিমধ্যে দুই বোতল শেষ। তবে এখনো নেশা হচ্ছে না।মাথাটা ঝিমঝিম করছে। মির্জাদের বোনেকে শেষ না করা পর্যন্ত ওর মাথা ঠিক হবে না।
🍁🍁🍁
ইশাত বাইক নিয়ে বাসার গেইটের ভেতরে ঢুকে অর্ধেক রাস্তায় বাইক ফেলে দৌড়ে ভেতরে ঢুকলো। এমনিতেই তারিনকে পৌঁছে দিতে গিয়ে দেরী হয়ে গেছে। সোফায় কাঁধে থাকা ব্যাগটা ছুঁড়ে মারলো।তারপর ছুটলো বোনের রুমে দিকে।উষার রুমে তিন ভাই একেক জায়গায় ছরিয়ে ছিটিয়ে ঘুমিয়ে পরেছে।সেখানে গিয়ে ইশাত দেখে অর্ণব বোনুর মাথার পাশে ঘুমিয়ে আছে।অর্ণবের এক হাত বোনুর মাথায়। ঈশান সোফায় মাথায় হাত রেখে ঘুমিয়ে পরেছে।আদিল বোনের এক হাত ধরে, খাটে মাথা রেখে ফ্লোরে বসে ঘুমিয়ে পরেছে।উষাও বাচ্চাদের মতো গুটিসুটি হয়ে ঘুমিয়ে আছে ।দরজাটা হালকা চাপিয়ে বোনের কাছে এলো।আলতো করে বোনের কপালে ঠোঁট ছোঁয়ালো।তারপর ফ্রেশ হতে চলে গেল।অনেক নিঃশব্দে আসা- যাওয়া করলো।যাতে ভাই-বোনের কারোর ঘুম না ভাঙ্গে।
ইশাতঃ আমিও ফ্রেশ হয়ে এই রুমে কোন জায়গা দিয়ে ঘুমিয়ে পরি।সারাদিন অনেক ধকল গেছে।আমার বোনুটা ভালো আছে এটাই বেশি। আর কিছু চাই না।ফ্রেশ হয়ে আমি আগে এশারের নামাজটা আদায় করে নেই। এমনিতে আজ দেরি হয়ে গেছে।আমার বোনুটা সুস্থ আছে তাতেই আলহামদুলিল্লাহ। নামাজ পরে বোনুর জন্য দোয়া করবো।আল্লাহ যেনো আমার বোনুটাকে খুব তারাতাড়ি ভালো করে দেয়।অনেক ভালবাসি তোকে বোনু।তোর কিছু হলে আমরা বাঁচবো না।
কথাগুলো বলতে বলতে নিজের রুমের দিকে পারি দিলো ইশাত।শাওয়ার নিয়ে নামাজ আদায় করলো।মোনাজাতে মৃত বাবা-মায়ের জন্য ও বোনুর জন্য প্রাণ ভরে কান্না করে দোয়া করলো।তারপর রাতের খাবার না খেয়ে বোনের রুমের দিকে হাঁটা দিলো।আজ চার ভাই বোনকে ছেরে একমিনিট ও নরবে না।যদিও উষাকে ঘুমের ঔষধ খাইয়ে ঘুম পারিয়ে রেখেছে।তারপরও বোনের পাশে না থাকলে আজ চার ভাইয়ের ঘুম হারাম হয়ে যাবে।তাই বোনের রুমে কষ্ট করে ঘুমিয়ে পরবে।যদি বোনু আবার অসুস্থ হয়ে পরে।সেই ভয়ে বোনুর পাশে থাকা চার ভাইয়ের।
ইশাত বোনের রুমে একটা সিংগেল সোফায় মাথা হেলিয়ে দিলো।সারাদিন ক্লান্ত থাকায় মাথা হেলানোর কিছু সময় পর ঘুম পরী ইশাতকে ঘুমের রাজ্যে নিয়ে গেলো।ঘুমের দেশে পাঁচ ভাই-বোন। চার ভাই বোনুকে নিজের জীবন দিয়ে আগলে রাখবে। কিছু হতে দিবে না।ওর বোনু যে ওদের বেঁচে থাকার কারণ।
#চলবে