ভালোবাসা_কেবল_শুরু পর্ব-০৬

0
1756

ভালোবাসা_কেবল_শুরু
পর্ব-০৬
#লিখা – নীলকন্ঠী
.
পুরো গাড়িতে রাহেলা বেগম আর আসমা বেগম ই কথা বলছেন। রুহির এসি সহ্য হচ্ছে না। মাথা টা ঝিম ঝিম করছে। কাউকে কিছু না বলে ঘুমানোর চেস্টা করলো।

এই মুহুর্তে পাশে আম্মু টাও নেই। একটা কাঁধ খুব প্রয়োজন ঘুমানোর জন্য। রুহি আপ্রাণ চেস্টা করে যাচ্ছে যাতে আদির কাঁধে মাথা রাখতে না হয়। আদি সব টাই খেয়াল করলো কিন্তু আগের মতোই রইল, ওই যে ইগো সমস্যা!

রাফান গ্লাসে অনেক ক্ষন যাবত খেয়াল করে পিছনে ফিরে রুহি কে ডাকলো।

-রুহি, তোর কি বেশি খারাপ লাগছে? গাড়ি থামাবো? বের হবি?
এবার মনে হয় রুহির মা এর হুস হলো।
-রুহি পানি খাবি? একটু ঘুমানোর চেষ্টা কর মা।

সবাই এখন এতো কেয়ার শুরু করলো কিন্তু পাশে বসে থাকা মানুষ টা কি বোঝে না আমার শুধু তার কেয়ার টাই লাগবে।

রুহি কারো কথার উত্তর না দিয়ে চোখ বুঝে রইলো। ঢাকা টু ণারায়নগঞ্জের রাস্তা খুব বেশি ভালো না। গাড়ির ঝাকি টা ভীষণ রকমের হতেই রুহি আদির উপরেই পরে গেলো। যেই উঠতে যাবে আদি শক্ত করে চেপে ধরে কাধে মাথা টা রেখে দিলো। রুহি সরে যেতে চাইলেই আদি আরো শক্ত করে ধরে বলল, সরে যাওয়ার চেষ্টা করলে ভালো হবে না।

অদ্ভুত ভালো লাগা নিয়ে রুহি ঘুমের রাজ্যে প্রবেশ করলো। সোনার গা পৌছানোর পর সব ফরমালিটি পুরন করে তারা ভিতরে ঢুকলো। খাবার দাবার বাসা থেকেই আনা। সকালে কেউ কিছু খায় নিন।একেবারে এখানে পৌছে সবাই খেয়ে নিলো। এখানে রুহি রা বহুবার এসেছে। কিন্তু আদির সাথে তো প্রথম বার।
“এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এখানে ক্লিক করুন
আদির সাথে রাফানের টুক টাক প্রয়োজন ছাড়া কথায় হয় না। রাফান সব টাই বুঝলো যে আদির সাথে রুহির সম্পর্ক টা ইজি নয়। রুহি ভিতরে ভিতরে কস্ট পাচ্ছে তা রাফানের বুঝতে বাকি নেই। আর আদি সারাক্ষন রুহির আগে পিছে রাফানের ঘুরাঘুরি মোটেও ভালো চোখে নিচ্ছে না। শত হলে ও বঊ তো।

দুপুরের খাওয়া দাওয়ার আগেই সবাই অনেক ঘুরাঘুরি করলো। প্রতি টি জায়গা তেই রুহি এর ছবি তোলা রাফানের সাথে হাসাহাসি আদি কে ভীষন রকমের কস্ট দিচ্ছিলো।

নিজের উপর অজানা কারনেই আদির রাগ হচ্ছিলো। সেদিন রুহির গায়ে হাত তোলার পর আর রুহির সাথে কথা হয় নি দেখা ও হয়নি। আজকের রুহি আর আদির হাড় জ্বালানো রুহির মাঝে আকাশ পাতাল তফাৎ।যে যেভাবে বলছে সেভাবেই কাজ করছে রুহি। আর এত টুকু ভালো ভাবেই বুঝতে পেরেছে রাফান রুহিকে পছন্দ করে।

সারাদিনের তোলা ছবি গুলো সবাই মিলে দেখছে। আর আদি দূরে দাড়িয়েই ভাবছে রুহি কে ৫ মিনিটের জন্য হলেও একা পাওয়া গেলে ভালো ছিলো।

উপায় না দেখে সেখানে গিয়েই আদি রুহি কে ডাকলো,

-রুহি একটু শুনে যাও।

রুহি শুনেও যেন শুনে নি। বেশ কয়েকবার ডেকেও রুহির রেস্পন্স না পেয়ে আদি সবার সামনে থেকে হাত ধরে টানতে টানতে নিয়ে এলো পুকুর পারে।

-ছাড়ুন প্লিজ। আর এভাবে কেউ মেয়েদের হাত ধরে? ব্যথা পাচ্ছি আমি।

–হ্যা আমি ধরলে ত ব্যথা পাবা ই ।রাফান ধরলে তো কিছু না। আর আমি তো রাফানের মতো মেয়েদের হাত ধরে অভ্যস্ত না।

-ভাইয়া কে টানছেন কেনো মাঝখানে। কিসের সাথে কি মিলাচ্ছেন? ভাইয়ার মতো ভালো হতে আপনার সাত জনম লাগবে।

এবার আদি ভীষণ চটে গেলো। রুহির হাত চেপে ধরে মোঁচড়াতে লাগলো।

-ও আমি ভালো না তাই না। এতোই যখন ভালো না তো কি জন্য বিয়ে করতে পাগল হলে। আদি চোখ পাকিয়ে হাত মোঁচড়াতে থাকে।

রুহি এবার আশে পাশে তাকিয়ে দেখলো সবাই হা হয়ে দেখছে। ব্যথায় কঁকিয়ে উঠলো রুহি।

-প্লিজ ছাড়ুন। আমি ভীষণ কস্ট পাচ্ছি। আপনি আমাকে এভাবে কস্ট দিতে ডেকেছেন ভাবিনি। আপনি কিছু ই পারেন না। শুধু পারেন রাগ দেখাতে আর আমাকে আঘাত করে কস্ট দিতে।

আদি হাত টা ছেড়ে নিচে তাকিয়ে বলতে লাগলো আমি কাউকে কস্ট দিতে এখানে আনিনি। শুধু দেখতে চেয়েছিলাম যে সারাক্ষণ আদি আদি বলে পাগল ছিলো সে আজ কত টা ভালো আছে এই আদি কে ছাড়া।

রুহি ব্যথার জায়গায় হাত বুলাচ্ছে আর টপ টপ করে চোখের জল পড়ছে।

আপনি যা চেয়েছেন তাই হচ্ছে, আপনি চেয়েছেন আমি দূরে থাকি আপনার লাইফ থেকে। আমি তাই চেষ্টা করছি।

কিছুক্ষন থেমে রুহি আবার বলতে লাগলো আমি ভুল করেছি আপনাকে বিয়ে করে। আপনাকে আমি আর জ্বালাতে চাইনা আদি। ভালো থাকুন বলেই রুহি
আর এক মুহুর্ত ও দাঁড়ালো না ।

মানুষের মন বড়ই বিচিত্র। কখন কাকে মনে ধরে আবার কখন কার কথা মনে গেঁথে যায় তা কঠিন, তেমনি কখন কার কাছ থেকে কস্ট পেয়ে অভিমানের পাহাড় জমিয়ে সেই পাহাড়ের নিচে ভালোবাসা কে কবর দিয়ে দেয় তাও দূরূহ ।

আজ আদির নিজেকে ভীষণ অসহায় লাগছে। কখনোই সে কাউকে বোঝাতে পারে না সে কি চায়। ও তো শুধু দুটো কথা বলতে চেয়েছিলো। সম্পরক টাকে কিছুটা সাভাবিক করতে চেয়েছিলো। কি এমন হতো একটু রাগ টা কে কন্ট্রোল রাখলে? রুহির সাথে তো দূরত্ব আরো কয়েক হাজার মাইল বেড়ে গেলো। আদি কি সত্যি এই দুরত্ব কমাতে পারবে?

চলবে ……