#ভালোবাসার_রঙে_রাঙাবো💜
#সাদিয়া_জাহান_উম্মি💜
#পার্টঃ২৫
‘ সুখ ‘ শব্দটি খুবই ছোট্ট। মাত্র দু অক্ষরের শব্দ এটি।কিন্তু এই সুখের জন্যে মানুষ কতো কিইনা করে।কিন্তু এই সুখের দেখা কতোজন পায়?দেখা যায় কারো কোটি কোটি টাকা থাকতেও সে সুখে নেই।অথচ রিকশা চালিয়ে দিন বাদে এক বেলা পান্তা ভাত খেয়েও কিন্তু সুখে থাকে তারা।
কেউ ভালোবাসা পেয়ে সুখী হয়।আবার কেউ ভালোবাসা না পেয়ে এই সুখের অভাবে তিলেতিলে কষ্ট পায়।
এইতো তারা কতো হাসিখুশি ছিলো।নাচেঁ গানে মেতে ছিলো কিন্তু এখন সবাই স্তব্ধ হয়ে আছে।কেউ কোন নড়চড় করছে না।হঠাৎ কি থেকে কি হয়ে গেলো সাদু কিছুই বুজতে পারছে না।ও শুধু সবার দিকে বাকরুদ্ধ হয়ে তাকিয়ে আছে।কি হলো সবাই এমন ফ্রিজ হয়ে আছে কেন? তা ওর মাথায় ডুকছে না।সাদু ধীর পায়ে এগিয়ে যায় মনিরের কাছে।এই তো কিছুক্ষন আগেও লোকটা কতোটা হাসিখুশিভাবে ওর সাথে নাচে গানে মেতে ছিলো।এখনো লোকটার ঠোঁটের কোণে হাসি।কিন্তু উনি নড়ছে না কেন?
সাদু কাঁপা হাতে মনিরকে হালকাভাবে স্পর্শ করলো।বললো,
–” এই আপনি শুনছেন?কি হয়েছে আপনার?আপনি নড়ছেন না কেন?দেখুন আমার ভয় লাগছে।কথা বলুন না আমার সাথে।”
নাহ! মনিরের কোন সারাশব্দ নেই।সে মূর্তির ন্যায় দাঁড়িয়ে আছে।সাদু একে একে সবার কাছে গেলো।ওর বাবা, মা, নূর,আলিফা,আলিশা,আফরান,নিবিড়, আরিফ সবার কাছে গেলো।কিন্তু ওর কথার জবাব কেউ দিচ্ছে না।সাদু এইবার না পেরে জোড়ে চিৎকার করে কেঁদে উঠে,
–” প্লিজ তোমরা কথা বলো।এমন কেন করছো তোমরা?আমার ভয় লাগছে প্লিজ।”
সাদু দুহাতে মুখ ঢেকে মেঝেতে বসে পড়লো আর শব্দ করে কান্না করতে লাগলো।হঠাৎ চারদিকে অন্ধকার হয়ে আসলো।শো শো বাতাস বইতে লাগলো।তীব্র বাতাস।সাদু কান্না থামিয়ে তাকায় ওর নিজেকে পাগল পাগল লাগছে।কি হচ্ছে এগুলো ও কিছুই বুজতে পারছে না।হঠাৎ ওর সামনে একটা কালো ধোয়ায় কুন্ডলি ঘুরপাক খেতে লাগলো।সাদু ভয়ে জমে গিয়েছে।
কালো ধোয়ার কুণ্ডলিটি ঘুরপাক খেতে খেতে একসময় সাদুর মুখোমুখি হয়ে স্থির হয়ে হাওয়ায় ভাসতে লাগলো।তারপর ১ সেকেন্ডের মাজে কুন্ডলিটি নিজের আকার পরিবর্তন করতে লাগলো।সাদু শুধু চোখ বড়বড় করে তাকিয়ে আছে।কুন্ডলিটি একসময় এক সুদর্শন পুরুষে পরিনত হয়ে গেলো।সাদু সাথে সাথে ভয় পেয়ে পিছিয়ে গেলো।পুরুষটি আর কেউ না মেহমাদ।
সাদু ভয় পেয়ে দৌড়ে চলে যেতে নেয়।কিন্তু পারে না ওর সামনে হঠাৎ দেয়াল তৈরি হয়ে যায়।আবারও অন্য দিকে যেতে নিলে একই রকম হয়।
সাদু এইবার ডুকড়ে কেঁদে উঠে।কাঁপন ধরা গলায় বলে,
–” আপনি কে?প্লিজ আমাদের ছেড়ে দিন।এমন করছেন কেন?”
মেহমাদ ব্যাথাতুর দৃষ্টি নিক্ষেপ করে সাদুর দিকে।সেই চোখে কিযে বেদনা, কি যে আকুলতা তা যদি একবার।শুধু একবার সাদু বুজতে পারতো।ইসস যদি সে বুজাতে পারতো।মেহমাদ নিজেকে সামলে নিলো।করুণ গলায় বলে,
–” আমাকে কি একটু চিনতে পারছো না ফেরিহা।”
সাদু অবাক হয়ে বললো,
–” ফেরিহা? এখানে ফেরিহা কে?আর আপনি বা কে?”
মেহমাদ দীর্ঘশ্বাস ফেললো।বুকচিড়ে যদি এই দীর্ঘশ্বাসের সাথে নিজের দুঃখ গুলোকে যদি সে বাহির করে দিতে পারতো কতোই না ভালো হতো।
ও তাকালো সাদূর দিকে।মেয়েটার চোখে স্পষ্ট ভয় দেখতে পাচ্ছে সে।অথচ একসময় নিজের জন্যে ভালোবাসা দেখতে পেতো সে এই চোখে।মেহমাদ সাদুর দিকে এগিয়ে গেলো।সেটা দেখে সাদু ভয় পেয়ে পিছিয়ে যায়।বলে,
–” আ..আপনি আগাবেন না।খবরদার আমার কা..কাছে আসবেন নাহ।”
মেহমাদের বুকে যেন কেউ চুরি দিয়ে আঘাত করছে সাদুর এই প্রতিটা কথায়। তবুও বললো,
–” ভয় পেও না।আমি কিছু করবো না।শুধু তোমাকে কিছু কথা বলবো।”
–” আমি কোন কথা শুনবো না।আপনি চলে যান প্লিজ।আর! আর ওদের সবাইকে ঠিক করে দিন প্লিজ!”
মেহমাদ আশ্বাস দিলো,
–” দেখো ভয় পেও না।আমি কিছু করবো না।ওদের সবাইকেও ঠিক করে দিবো।শুধু আমার কথা তোমাকে শুনতে হবে।”
সাদু তাকালো সবার দিকে।আচ্ছা ও যদি এই লোকটার কথা শুনে তাহলে যদি ওদের সবাইকে ঠিক করে দেয় তাহলে ঠিক আছে সাদু শুনবে।এই অজানা লোকটার কথা শুনবে।
–” আপনি কে?আগে সেটা বলুন!” কাঁপা গলায় প্রশ্ন করে সাদু।
–” আমি মেহমাদ। রাজকুমার মেহমাদ।তোমার ভালোবাসার মেহমাদ।”
সাদু ভ্রু-কুচকে ফেললো।কি বলছে কি লোকটা মাথা খারাপ হয়ে গিয়েছে নিশ্চিত।
–” কি বলছেন এইগুলো।আর আমি আপনাকে কেন ভালোবাসবো।আমি আমার মনিরকে ভালোবাসি।”
মেহমাদ চোখ বুজলো।প্রতিটা কথা ওকে নরক সমান যন্ত্রনা দিচ্ছে।এইযে সাদু বললো ওকে ভালোবাসে না,মনিরকে ভালোবাসে।এই কথাটা যে ওকে কি পরিমান কষ্ট দিয়েছে সেটা ও বলে বুজাতে পারবে না।মেহমাদ শ্বাস ফেললো।না দেরি করে লাভ নেই।যা করার জলদি করতে হবে।
মেহমাদ চোখ বুজলো বিরবির করে কি জানি পড়তে লাগলো।তারপর চোখ খুলে সামনে তাকাতেই বড় সাদা পর্দার মতো ভেসে উঠে।
সাদু জোড়ে বলে উঠে,
–” কি করছেন আপনি?”
–” দেখতে থাকো।”
মেহমাদ আবারো সেই পর্দার দিকে তাকালো।সেখানে কিছু দৃশ্য ভেসে উঠছে।
মেহমাদ বলতে শুরু করলো,
–” স্রেহিস রাজ্যের একমাত্র রাজকুমার মেহমাদ।
আর রংধনু রাজ্যের রাজকন্যা রাজকুমারি ফেরিহা।তাদের দু রাজ্যে অনেক মিল ছিলো।তাদের বাবারা ছিলো প্রাণের বন্ধু।সেই সুবিধায় মেহমাদ আর ফেরিহাও একে অপরের অনেক ভালো বন্ধু ছিলো।ওরা দুজন দুজনকে ছাড়া কিছুই বুজতো না।সময় পেরিয়ে যেতে লাগে।ওরা বড় হতে লাগে। ”
মেহমাদ বলছে আর তার প্রতিটা দৃশ্য সেই পর্দায় ভেসে উঠছে সাদু অবাক নয়নে তাকিয়ে সব দেখছে।একটা ছেলে আর একটা ছোট্ট মেয়ে রাজকীয় পোষাক তাদের গায়ে।ওরা দুজন বাগানে ছুটাছুটি করে খেলছে।সামনে বিশাল বড় প্রাসাদ।
মেহমাদ আবারো বলে,
–” দুজন দুজনকে মনের অজান্তেই ভালোবেসে ফেলে।রাজকুমার মেহমাদ একদিন রাজকুমারী ফেরিহাকে অন্য রাজ্যের এক রাজপুত্রের সাথে কথা বলতে দেখে।ফলে তার রাগ উঠে যায়।সে রাজকুমারী রাগের মাথায় অনেক কথা বলে।রাজকুমারী কষ্ট পেয়ে তার পর থেকে মেহমাদের সাথে আর কথা বলতো না।অনেকদিন কেটে যায় এভাবে।মেহমাদ সয্য করতে পারে না।পরে সে রাজকুমারিকে জোড় করে ঘোড়ার পিঠে চড়িয়ে ঝর্নার পারে নিয়ে যায়।ফেরিহা যখন রাগারাগি করে।তখন মেহমাদ শক্ত জড়িয়ে ধরে ফেরিহাকে।আর নিজের মনের কথা বলে দেয়।ফেরিহাও আর পারেনি মেহমাদকে সরিয়ে দিতে।কেউ কি পারে নিজের ভালোবাসার মানুষের ডাক উপেক্ষা করতে।ফেরিহাও পারেনি সেও নিজের অব্যক্ত অনুভূতিগুলো বলে দেয়।খুব ভালোই চলছিলো দিনকাল।তারা ভালোবাসার রঙিন রাজ্যে বিচরণ করতো প্রতিটি সময়।কতোটা চমৎকার ছিলো সেই দিনগুলো।”
সাদু বাকরুদ্ধ হয়ে তাকিয়ে আছে।এতো পুরো ওর মতো চেহারা।কিন্তু কিভাবে সম্ভব? হুবহু ওর মতো।আর! আর ছেলেটা এইযে পাশে দাঁড়ানো ছেলেটা।আর ওর মতো দেখতে মেয়েটা এই ছেলেটাকে জড়িয়ে ধরে আছে।সাদু কি বলবে ও ভাষা হারিয়ে ফেলেছে।
–” তাদের বাবা, মায়েরাও তাদের সম্পর্ক মেনে নেয়।ওদের বাগদান করার সিদ্ধান্ত নেয়।যেদিন ওদের বাগদান সেদিন ছিলো একদিন দিয়ে সুখের মুহূর্ত অন্য দিক দিয়ে তাদের জীবনের শেষ দিন।কিন্তু তারা তা কেউ জানতো না।যখন সবাই হাসি মজায় মত্ত ছিলো।তখনি সেদিন যেই রাজকুমার ফেরিহার সাথে কথা বলছিলো সেই রাজকুমার ছিলো পাশের রাজ্যের।পাশের রাজ্যের রাজা সেদিন তার দলবল নিয়ে আক্রমন করে ওদের উপর।ঘটনাটা এমন আকস্মিক ঘটেছিলো যে তারা কেউ নিজেদের সামলাতে পারেনি।তবুও মেহমাদ নিজের সৈন্যদের নিয়ে নিজের স্বর্বষ দিয়ে লড়াই করছিলো।এদিকে এই সুযোগে সেই রাজকুমার ফেরিহাকে নিয়ে যায়।ওকে টেনে হিছড়ে একটা কক্ষে নিয়ে যায়।ফেরিহা কান্না করে চিৎকার করে কান্না করে।ওর চিৎকারে মেহমাদ লড়াই থামিয়ে পাগলের মতো খুজতে থাকে ফেরিহাকে।অবশেষে খুজে পায় সেই কক্ষ।সে চিৎকার করে সেই কক্ষের দ্বার ধাক্কাতে থাকে।এই সুযোগে শত্রুরা তীর ছুড়ে মারে মেহমাদের দিকে।সাত আটতা তীর মেহমাদের পিঠে বিধে যায়।তবুও মেহমাদ দমে যায় নি।সবগুলোকে নিজের আক্রোশ থেকে মেরে ফেলে।এদিকে ফেরিহাকে সেই রাজকুমার জোড়জবরদস্তি শুরু করে দেয়।ওর দেহ ভোগ করতে চায়।অনেক চেষ্টা করে ফেরিহা নিজেকে বাঁচাতে কিন্তু সে জানে সে ব্যর্থ হবে।তাই সে নিজেকে বাঁচাতে দেয়ালে তোলোয়ার আটকানো ছিলো তা কৌশলে নিয়ে নিজেকেই নিজে আঘাত করে।পুরো তোলোয়ার নিজের পেটে ডুকিয়ে দেয়।শত্রুর রাজ্যের রাজকুমার এমন করতে দেখে ফেরিহাকে রেখে কক্ষ থেকে বেরিয়ে যায়।সেই রাজকুমার বের হতেই মেহমাদ এক আঘাতে তার মাথা দেহ থেকে আলাদা করে দেয়।
তারপর দ্রুত সেই কক্ষে প্রবেশ করে।কিন্তু গিয়ে যা দেখে তা সে কল্পনাও করেনি কোনদিন।তার ফেরিহা তার ভালোবাসার মানুষটি অর্ধমৃত অবস্থায় পড়ে আছে।মেহমাদ চিৎকার করে ফেরিহাকে জড়িয়ে ধরে।এদিকে বিষাক্ত তীর নিজের পিঠে ডুকে থাকায় মেহমাদ নিজেও আস্তে আস্তে মৃত্যুর কোলে ঢোলে যাচ্ছিলো।ফেরিহা নিজের শেষ নিশ্বাস নেওয়া আগে বলে যায় যে সে ফিরবে আবারো ফিরবে মেহমাদের বুকে ফিরে আসবে।ওয়াদাবদ্ধ হয়ে ফেরিহা নিজ শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করে।এদিকে মেহমাদ কাদে নিজের ভালোবাসাকে হারিয়ে পাগলপ্রায় হয়ে যায়।এই সুযোগে শত্রু পক্ষেরা এসে পিছন থেকে তার পিঠেও তোলোয়ার ডুকিয়ে দেয়।মেহমাদ মারা যায় তবে তার হৃদয়াক্ষীর কাছে ওয়াদা করে যে সে অপেক্ষা করবে তার জন্যে অপেক্ষা করবে।দেখার পলকে পুরো রাজ্য ধ্বংস হয়ে যায়।তারা সবাইকে মেরে ফেলে।অসমাপ্ত রয়ে যায় তাদের প্রেমকাহিনি।কিন্তু মেহমাদ থেমে থাকেনি মৃত্যুর পর সে প্রতিশোধ নিয়েছে নিজের ভালোবাসার প্রতিশোধ নিয়েছে।”
নিজের ভালোবাসার কাহিনিগুলো বলে তাকায় সাদূর দিকে।মেয়েটার চোখে অস্রু।সেই চোখের জলে স্পষ্ট কষ্ট দেখতে পাচ্ছে মেহমাদ।
সাদুর কান্না করতে করতে হেঁচকি উঠে গেছে।প্রতিটা দৃষ্য নিজের চোখের সামনে এইভাবে জলজ্যান্তভাবে দেখে ওর বুকটা কষ্টে ফেটে যাচ্ছে।কি এক নির্মম পরিনতি।ভালোবাসার মানুষ দুটো যদি এক হতো তবে কি বড্ড বেশি খারাপ হয়ে যেতো।
মেহমাদ সাদুর দিকে তাকিয়ে থেকে আবারো বলে,
–” আমিই সেই মেহমাদ।আর তুমি আমার ফেরিহা।আমি তোমার জন্যে অপেক্ষা করেছি ১০০ বছর অপেক্ষা করেছি।অবশেষে তুমি এলে কিন্তু আমার হয়ে না অন্য কারো হয়ে।
কিন্তু আমি আজও তোমায় ভালোবাসি ফেরিহা।প্রচুর ভালোবাসি।এই শেষ বারের মতো তোমার কাছে জিজ্ঞাস করছি।তুমি কি আসবে আমার সাথে আমার ফেরিহা হয়ে।আমি জোড় করবো না তোমায়। তোমার মন যা চায় তাই হবে।তবে আমি তোমায় ভালোবাসবো সবসময়।”
মেহমাদ আজ কাঁদছে।ওর চোখের জল গুলোই বলে দিচ্ছে সে ঠিক কতোটা ফেরিহাকে ভালোবাসতো।
সাদু আবার মুখ ফিরিয়ে তাকায় মনিরের দিকে।ওই জন্মে সে মেহমাদকে ভালোবেসেছিলো ঠিক আছে।কিন্তু বর্তমানে সে মনিরকে ভালোবাসে।এ যে তার স্বামি।নিজের স্বামিকে ছাড়া সাদু আর কিছুই চায় না।মেহমাদ তাকিয়ে আছে সাদুর দিকে।সে জানে সাদু তার কাছে আসবে না।তবুও সে সাদুর মুখ থেকে শুনতে চায় সবটা।
সাদু চোখের জল মুছে তাকায় মেহমাদের দিকে।ভাঙা গলায় বলে উঠে,
–” আমি জানি আপনার সাথে যা হয়েছে অনেক খারাপ হয়েছে।কিন্তু বলে না সবার ভালোবাসা পূর্ণতা পায় না।ঠিক তেমন আপনার আর ফেরিহারটা পায়নি।আর আমিই যদি ফেরিহা হয়ে থাকি তবুও আপনার সাথে যাওয়া সম্ভব নয়।কারন আমি মানুষ আর আপনি একটা রূহ।আমাদের মিলক অসম্ভব।তার থেকেও বড় কথা।আমি এখন অন্য কারো স্ত্রী।আর আমি আমার স্বামি নিজের থেকেও বেশি ভালোবাসি।তাকে ছাড়া অন্য কাউকে ভাবতেও পারি না।আমাকে ক্ষমা করবেন আপনি।আমি জানি আপনি অনেক কষ্ট পেয়েছেন।কিন্তু আমার পক্ষে সম্ভব না।সম্ভব না।”
সাদু কান্না করতে করতে নিচে বসে পড়ে।মেহমাদ হাসে।আজ নিজেকে হালকা লাগছে তার।নিজের হৃরয়াক্ষীকে নিজের মনের কথা বলতে পেরে সে অনেক খুশি।থাক সে পাইনি নিজের ভালোবাসাকে তো কি হয়েছে।তার হৃদয়াক্ষী সুখে থাকবে এটাই অনেক।আর কিছু চায়না মেহমাদ।
মেহমাদ শেষবারের মতো বললো,
–” আমার শেষ একটা আবদার রাখবে ফেরিহা।”
সাদু অস্রুসিক্ত নয়নে তাকায়,
–” জ্বি বলুন।”
–” তোমার কোলে মাথা রেখে আমাকে এই পৃথিবী থেকে বিদায় নিতে দেবে?”
সাদু ভাবলো না।লোকটা অনেক কষ্ট সয্য করেছে।এটুকু তো সে করতেই পারে।সাদু মাথা ঝাকিয়ে সম্মতি জানালো।মেহমাদ এক মুহূর্ত অপেক্ষা না করে সাদুর কোলে সুয়ে পড়ে।
তারপর চোখ বুজে বলে,।
–” মাথায় হাত বুলিয়ে দেও।”
সাদু দ্বিধায় পড়ে যায়।তবুও হাত রাখে মেহমাদের চুলে।আর সাথে সাথে মেহমাদের শরীর থেকে সোনালী রশ্মী বের হতে থাকে।সাদু ঘাবড়ে যায়।
–” ভয় পেও না।যা হচ্ছে হতে দেও।”
মেহমাদের কথায় সাদু চুপ করে সব দেখতে থাকে শুধু।মেহমাদের অস্থিত্ব হাওয়ায় মিলিয়ে যেতে থাকে।যখন অন্তিম পর্যায় এসে যায়।মেহমাদ সাদুর গাল স্পর্শ করে কান্নারত গলায় বলে উঠে,
–” তোমাকে আমি সবসময় ভালোবাসি হৃদয়াক্ষী।”
মেহমাদ হাওয়ায় মিলিয়ে যায়।তবু তার এই শেষ কথাটা চারদিকে প্রতিধ্বনি হতে হতে একসময় থেমে যায়।আর সাদু কান্নাচোখে তাকিয়ে থাকে।হঠাৎ মিউজিকের শব্দে সাদু চমকে তাকায়।দেখে সব স্বাভাবিক হয়ে গেছে।সাদু চোখ মুছে উঠে দাঁড়ায়।কাউকে কিচ্ছু জানানো যাবে না।যেমন চলছে চলুক।তবে ওর মন থেকে কি আদৌ এই বেদনাদ্বায়ক মুহুর্ত মুছে ফেলতে পারবে সে।
সাদু উপরে তাকিয়ে বিরবির করে বলে,
–” আমি দোয়া করি মেহমাদ উপরওয়ালা যেন আপনাকে জান্নাত দান করে।আর ওখানে যেন আপনি আপনার ভালোবাসা ফিরে পান।”
#চলবে_______