ভালোবাসি হয়নি বলা পর্ব-১০

0
492

#ভালোবাসি_হয়নি_বলা
#পর্ব_১০
লেখিকা #Sabihatul_Sabha

নূর ফ্রেশ হতে গেলে রুদ্র রুম থেকে বেরিয়ে নিজের রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নিলো৷

খাবার টেবিলে পাশাপাশি বসে আছে রুদ্র নূর।

আয়েশা বেগম রুদ্রের প্লেটে খাবার বেরে দিয়ে নূরকে নিজ হাতে খাইয়ে দিলেন৷

রুদ্র ওর আম্মুর দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো,’ আম্মু তোমার দেখছি আমাকে চোখেই পড়ছে না। নিজের ছেলেকে সামনে রেখে তুমি এই ঝগড়ুটে মেয়েকে খাইয়ে দিচ্ছো!
নূর মুখ ভেংচি কেটে বলে উঠলো,’ আপনার এতো জ্বলে কেনো..? আমার মামনী আমাকে খাইয়ে দিয়েছে এটাও আপনার সহ্য হচ্ছে না! কিপ্টে লোক একটা।

রুদ্রঃ আমি যদি কিপ্টে হতাম তাহলে এক লোকমাও আমার মায়ের হাতে তোমাকে খেতে দিতাম না।
নূরঃ আপনি নিজে তো খাইয়ে দেননি অন্য কেউ দিয়েছে তাতেও আপনার এতো সমস্যা কেনো..?
রুদ্র বাঁকা হাসি দিয়ে নূরের দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো, ‘ ওহ হো নূর তুমি কি আমার হাতে খেতে চেয়ে ছিলে! কিন্তু সরি আমি তোমার মতো ঝগড়ুটে মেয়েকে খাওয়াতে পারবো না আমার ফিউচার ওয়াইফ রাগ করবে।
নূর রাগী দৃষ্টিতে রুদ্রের দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো, ‘ আপনার হাতে খাওয়ার চেয়ে না খেয়ে থাকা অনেক ভালো। আপনি ভাবলেন কিভাবে আপনার হাতে আমি খাবো! বলেই উঠে নিজের রুমে চলে গেলো।

আয়েশা বেগমঃ দিলি তো মেয়েটাকে রাগিয়ে । কি দরকার ছিলো এমন করার।
রুদ্রঃ আমি এমন কি বললাম….!

বিকেল থেকেই বাড়িতে মেহমান আসা শুরু।

হানিফ চৌধুরীর তিন মেয়ে, স্বামী, বাচ্চা নিয়ে এসেছে। নীলার বড় বোন তার ছেলে আর দেবর নিয়ে এসেছে।

রুদ্রের খালাতো, মামাতো ভাই বোন সহ আয়েশা বেগম এর বাপের বাড়ির সবাই আসছে।
প্রথম বিষয়টা অতোটা খেয়াল না করলেও এখন বেশ খটকা লাগছে সবার।

ইভা নূরের পাশে গিয়ে বসে বলে উঠলো, ‘ আচ্ছা নূর বাড়িতে কি কোনো অনুষ্ঠান হচ্ছে..? ‘
নূর শুয়া থেকে বসে বলে উঠলো, ‘ আমি কিভাবে জানবো।তবে রুম থেকে বের হওয়ার পর একটা অঘটন ঘটে গেছে। ‘
ইভাঃ কি হয়েছে..?
নূরঃ ব্যালকনি দিয়ে নিচে পানি ফেলে ছিলাম একটা ছেলে দাঁড়িয়ে ছিলো।
ইভাঃ তারপর…
নূরঃ একদম ভিজে গেছে।
ইভাঃ হি হি হি হি…
নূরঃ একদম হাসবি না ডাইনী।
ইভাঃ একদম ঠিক কাজ করেছিস। এটা মাহি আপুর দেবর ছিলো। নিচে দেখে আসলাম চুল জারতে জারতে আসলো।
নূরঃ মাহি কে..?
ইভাঃ নীলার বোন।
নূরঃ ওহ কিন্তু বাড়িতে এতো মেহমান হঠাৎ কেনো..?
ইভাঃ এই বাড়িতে কিছু হলে কেনো আগে জানায় না বুঝি না। বাড়িতে এতো এতো মেহমান আসার কারন তো অবশ্যই আছে। আর তুই এভাবে দরজা বন্ধ করে বসে কেনো আছিস..?
নূরঃ তোদের বাড়িতে এখন এতো মানুষ মনে হলো রুম থেকে বের হলে নিজেকেই হারিয়ে ফেলবো তাই দরজা বন্ধ করে বসে আছি।
ইভাঃ একদিক দিয়ে ভালোই করেছিস। দরজা বন্ধ তাই এখনো কেউ এই রুমে আসেনি খোলা থাকলে বসার জায়গা ও পাওয়া যেতো না।

নীলা নূরের রুমে এসেই বলে উঠলো, ‘ নূর আপু তোমাকে দাদাভাই ডাকছে.’
নূরঃ কেনো..?
নীলাঃ তোমাকে তো কেউ চিনেনা হয়তো পরিচয় করিয়ে দিবে।
নূরঃ ওহ আচ্ছা।

নূর আর ইভা এক সাথে নিচে আসলো। পেছনে নীলা।

এতো গুলো মানুষের মাঝে ওদের কেউ এতোটা গুরুত্ব দেয়নি যে যার মতো কথা বলছে।

এই ইভা….

ইভা পেছন ফিরে দেখে ওর বড় মামার ছেলে ফারহান ওকে ডাকছে।

ইভাঃ আরে ভাইয়া কখন আসলে..? কেমন আছো..?
ফারহানঃ হুম আলহামদুলিল্লাহ ভালো। এই মাত্র আসলাম।
ইভাঃ আম্মুর সাথে দেখা হয়েছে..?
ফারহানঃ সবার সাথে দেখা করা শেষ।
ইভাঃ আমার সাথেই লাস্টে করলে। জানি আমার কথা কারোই মনে থাকে না।

কে বলেছে মনে থাকে না এই দেখ আমি এসেই তোকে প্রথম খোঁজে নিলাম।

ইভাঃ ফারিয়া আপু…

আনোয়ার চৌধুরী নূরকে সবার সাথে পরিচয় করিয়ে দিলো।

হানিফ চৌধুরীর তিন মেয়ে খুবি ভালো আর মিশুক। নূরের সাথে খুব তারাতারি মিশে গেছে।

সবার আসার কারন হলো রুদ্রের বিয়ে। আনোয়ার চৌধুরী রুদ্রের বিয়ে ঠিক করেছেন দুইদিন পর রুদ্রের বিয়ে ।

এখন শুধু একটাই কথা সবাই জিজ্ঞেস করছে মেয়ে কে..? মেয়ের ছবি দেখান..? মেয়ের পরিবার কেমন..? কিন্তু আনোয়ার চৌধুরী এখনো মেয়ে সম্পর্কে কিছুই বলেন নি।

সালমা বেগমঃ আব্বা রুদ্র আমাদের বংশের এক মাত্র ছেলে অন্তত আমরা কি জানতে পারি না মেয়ে সম্পর্কে..?
আনোয়ার চৌধুরীঃ সময় হলে সবাই জানবে বৌ মা।
সালমা বেগমঃ রুদ্র কি…
আনোয়ার চৌধুরীঃ আমি রুদ্র কে জিজ্ঞেস করেই সব করছি কাল বাদে পৌরসু সবাই সন্ধ্যায় বউ দেখবে এটা সবার জন্য সারপ্রাইজ। আর কাল সবাই মিলে শহরে যাবে বউ এর সব কিছু কিনে আনার জন্য।

আনোয়ার চৌধুরীর কথার উপর কেউ আর একটা কথাও বলেনি।

_____

সকালে বাচ্চার কান্নায় ঘুম ভেঙে যায় নূরের। চোখ কচলে উঠে দেখে ওর রুমে বাচ্চা দাঁড়িয়ে কান্না করছে।
নূর ভালো করে তাকিয়ে দেখে এটা ওর বড় মামার মেয়ের ছেলে।
বাবু কে কোলে নিয়ে রুম থেকে বের হতেই দেখা হলো রুদ্রের সাথে।

রুদ্রঃ এতো সকালে ওকে নিয়ে তুমি কোথায় যাচ্ছো..?
নূর রুদ্রের কাছে গিয়ে বলে উঠলো,’ আহ্!! একটু দরুন তো উফফ।
রুদ্রঃ কি হয়েছে নূর..?!
নূরঃ হাতে ব্যাথা…
রুদ্রঃ বাবু কে আমার কাছে দাও…
নূর রুদ্রের কোলে বাবু দিয়ে হাত দিয়ে চুল হাত খোঁপা করে নিলো।
রুদ্র মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে বলে উঠলো, ‘ হাতে কি বেশি ব্যথা…!?
নূরঃ কিসের ব্যথা..?
রুদ্রঃ তুমি তো বললে..?
নূরঃ ওহ হে এটা তো বাবু কে দেওয়ার একটা বাহানা ছিলো..
রুদ্রঃএখন আমি ওকে নিয়ে কি করবো..?
নূরঃ কান্না থামান আমি ঘুমাবো…

নূর চলে যেতেই রুদ্র বাবুকে নিয়ে হাঁটা ধরলো ওর আম্মুর রুমের দিকে।

সকাল থেকে বাড়িতে পাড়াপ্রতিবেশি আশা শুরু।

সবার সাথে নূর ইভাও হাতে হাতে কাজ করছে।

চৌধুরী বাড়ির বিয়ে বলে কথা। আনোয়ার চৌধুরী পুরো গ্রামের সবাই কে দাওয়াত করেছেন।

আয়েশা বেগম মুখে কিছু না বললেও মনে মনে খুব চিন্তায় আছেন ছেলের বউ নিয়ে।

দশটার দিকে সবাই গাড়ি নিয়ে বের হলো বউ এর জন্য কেনাকাটা করতে।

নূর নিজের রুমে শুয়ে শুয়ে মোবাইল চালাচ্ছে।

রুদ্র নূরের রুমের সামনে এসে নক করলো।
নূর গিয়ে দরজা খোলেই রুদ্র কে দেখে ভ্রু কুঁচকে ফেললো।
রুদ্রঃ কেমন মেয়ে তুমি বাড়িতে বিয়ের আয়োজন চলছে আর তুমি রুমে পরে পরে ঘুমাচ্ছো।
নূরঃ বিয়েটা কার..?
রুদ্রঃ কিইই! তুমি এখনো জানোনা..?
নূরঃ জানি…তাও আবার শুনতে চাচ্ছি..
রুদ্রঃ আমার..
নূরঃ হুম বিয়ে আপনার। তাহলে কাজ কার..?
রুদ্রঃ কাজ গুলো তোমাদের কারন বিয়ে আমি করছি। এখন বেশি কিছু না বলে চুপচাপ রেডি হও পাঁচ মিনিট টাইম।
নূরঃ আমি কেনো রেডি হবো..?
রুদ্রঃ বেশি কথা একদম পছন্দ না নূর।
নূরঃ আপনি নিজেই তো বেশি কথা বলেন..আমি এখন কোথাও যাবো না। এখন আমার কাজ আছে।
রুদ্রঃ তুমি রেডি হবে নাকি আমি রেডি করাবো!
নূরঃ আমি মামি কে ডাকবো কিন্তু রুদ্র ভাই।
রুদ্র বুকে দুই হাত বাজ করে দাঁড়িয়ে বললো,’ ডাকো’
নূরঃ কোথায় যেতে হবে..?
রুদ্রঃ বউ এরজন্য মার্কেট করতে।
নূরঃ নিজের বউকে নিয়ে জাননা আমাকে কেনো বিরক্ত করতে চলে এসেছেন..!
রুদ্রঃ তাঁকেই তো নিতে আসলাম..!
নূরঃ কিইই..
রুদ্রঃ আমি কাকে নিবো নাকি না নিবো এটা আমার ইচ্ছে। তুমি রেডি হয়ে আসো।
নূর বিরক্ত হয়ে বিরবির করতে করতে রেডি হতে গেলো।

নূর রেডি হয়ে আসতেই রুদ্র বাড়ি থেকে বের হলো।

নূরঃ গাড়ি কোথায়? আর বাকি সবাই..?
রুদ্রঃ সবাই চলে গেছে…
নূরঃ সবাই চলে গেলে আর আমাকে আনার মানে কি..?
রুদ্র কিছু না বলে বাইকে উঠে বসলো।
নূরঃ আমি বাইকে যাবো না।
রুদ্রঃ জানি উঠতে ভয় পাও।
নূরঃ একদম না। এই নূর কোনো কিছু ভয় পায় না। কিন্তু আমি আপনার সাথে বাইকে উঠবো না।
রুদ্রঃ সিনক্রিয়েট করো না নূর উঠে বসো এমনিতেই অনেকটা দেরি হয়ে গেছে।
নূরঃ আপনার বউ যদি জানতে পারে…
নূরকে থামিয়ে রুদ্র বলে উঠলো, ‘ কিছুই হবে না। আমাকে নিয়ে এতো ভাবতে হবে না তোমার। উঠে বসো…
নূরঃ আমার বয়ে গেছে আপনাকে নিয়ে ভাবতে আমি তো শুধু আপনার উপকার করছিলাম মনে করিয়ে দিয়ে।
রুদ্রঃ অনেক তো উপকার করলে এবার আরেকটু উপকার করো। তারাতারি উঠে বসো।

নূর বাধ্য হয়ে উঠে বসলো।
রুদ্রঃ আমাকে ধরে বসো।
নূরঃ আমি ঠিক আছি।
রুদ্র ইচ্ছে করে বাইকটা টান মেরে আবার থামালো নূর গিয়ে পড়লো রুদ্রের উপর। রুদ্র বাঁকা হাসি দিয়ে বাইক স্টার্ট দিলো।
নূর ভয়ে রুদ্রকে এক হাতে জড়িয়ে ধরে আছে।

চলবে….
ভুলত্রুটি মার্জনীয়।