#ভালোবেসে_ভুল_করিনি
পর্ব:৩
#writer: Tanjina islam
–
ভাইয়া এসেই আমার হাত থেকে রিমোট কেড়ে নিয়ে ছুড়ে ফেলে দিয়ে বললো,
আজকে কলেজ যাসনি কেন?
আমি বললাম,
আজ তো আপুকে দেখতে আসবে।
ভাইয়া বললো,
তোকে তো আর দেখতে আসবে না যে তোর কলেজ না গিয়ে বাড়ি বসে থাকতে হবে।
আমি বললাম,
বাড়িতে আজ অনেক কাজ ভাইয়া।এই কাজ ফেলে রেখে কেও কলেজ যায়?
ভাইয়া বললো,
টিভির সামনে বসে বসে কাজ করছিলি?
আরো কিছু বলতে যাবে তার আগেই মোবাইল এর রিং টোন বেজে উঠল। ফোনের দিকে তাকিয়ে ভাইয়ার রাগী মুখ ফ্যাকাশে হয়ে গেল।
ড্রয়িং রুম থেকে বারান্দায় গেল। আমি ভাবলাম হয়তো ভাইয়ার গার্লফ্রেন্ড এর কল এসেছে। আমি লুকিয়ে ভাইয়ার প্রেমালাপ শুনার জন্য আড়ি পাতলাম। একবার যদি জানতে পারি ভাইয়ার গার্লফ্রেন্ড কে? তাহলে তার সাথে ভাব জমিয়ে আমার উপর ভাইয়ার অত্যাচারের দিন শেষ হতো কারণ ছেলেদের রাজা থেকে দাস বানাতে পারে একমাত্র বউ আর গার্লফ্রেন্ড রা।
অপর প্রান্ত থেকে কি বলছে তা কিছুই শুনতে পারছি না কিন্তু ভাইয়ার কথা গুলো স্পষ্ট শুনা যাচ্ছে।
ভাইয়া মোবাইলে কাকে যেন বলছে,
চিন্তা করিস না।তোর পরীর আসেপাশে আমি কোনো ছেলে কে ঘেঁষতে দেইনা। তবে মাঝেমধ্যে আমি একটু শাসন করি।তুই কবে দেশে ফিরবি?
…………………………….
ভাইয়া বললো,
ও, এসেই বিয়েটা সেরে ফেলবি?
…………………
অপর প্রান্ত থেকে কি বললো শুনতে পেলাম না কিন্তু কি এমন কথা বললো যে ভাইয়ার চোখে পানি চলে আসলো। ভাইয়া কে আমি কোনো দিন কান্না করতে দেখিনি। কথা শুনে তো মনে হলো না খারাপ কিছু হয়েছে। মোবাইল পকেটে রেখে চোখের জল মুছে রকিং চেয়ারে বসে পড়ল। এই মুহূর্তে কেন যেন ভাইয়ার অসহায় মুখটা দেখতে ইচ্ছে করছে না তাই ভাইয়ার কাছে গিয়ে দাঁড়ালাম। আমাকে দেখে ভাইয়া আমাকে
অনুরোধের স্বুরে বললো,
মিশ্মি একটু মাথায় হাত বুলিয়ে দিবি?
ভাইয়ার কথা শুনে আমি ভাইয়ার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে লাগলাম। কিছুক্ষণের মধ্যেই ভাইয়া ঘুমিয়ে পড়লো।
১২টার সময় আকাশ ভাইয়ার ফ্যামিলি চলে আসলো।
আপুকে রিয়া সাজিয়ে দিচ্ছে।আজ অনেক সুন্দর লাগছে আপুকে। মা কিচেন রুম থেকে বেরতে পারছেনা দেখে আমাকে বললো,
মিশ্মি মা এই শরবত গুলো ওদের দিয়ে আয়।
আমি শরবতের গ্লাস নিয়ে তাদের দিতে গেলাম। আকাশ ভাইয়ার চাচাত ভাই জোবের কেমন যেন বাজে দৃষ্টিতে তাকাচ্ছিলো ব্যাপারটা মুটেও পছন্দ হলো না আমার। ড্রয়িং রুম থেকে সুজা নিজের রুমে ঢুকবো ঠিক তখন কে যেন আমাকে টান দিয়ে দেয়ালের সাথে চেপে ধরল। আমার বুঝতে অসুবিধা হলো না লোকটা কে?কারন ভাইয়া ছাড়া এমন কাজ আর কেউ করতে পারে না।
ভাইয়া কে বললাম,
ভাইয়া ছাড়ো আমার ব্যাথা লাগছে।
ভাইয়া বললো,
ব্যাথা লাগার জন্যই তো এভাবে দৃষ্টি
ধরেছি। তোকে ওখানে শরবত নিয়ে যেতে কে বলেছিলো?আর ওড়না ঠিক ভাবে নিতে পারিস না? নাকি জোবেরকে দেখানোর জন্য ইচ্ছে করেই এমন করে নিয়েছিস?
আমি ওড়নার দিকে তাকিয়ে দেখলাম একটু সড়ে গেছে তাই বলে এতবড় কথা শুনাতে হবে? কেন যে তখন এই খাটাশটার মাথা টিপে দিলাম?মাথা ব্যাথায় তখন মরে গেলেই ভালো হতো।
আমি ভাইয়াকে কিছু না বলে ভাইয়ার থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে রুমের দরজা লক করে ঘুমিয়ে পড়লাম।
বিকেলে ঘুম থেকে উঠে দেখলাম সবাই ড্রয়িং রুমে বসে মিটিং করছে।সবাই মানে মা-বাবা, আপু, ফুপা-ফুপি, রিয়া , সামির ভাইয়া আর জরিনা খালা। আমার মা-বাবার লাভ ম্যারেজ ।বাসা থেকে পালিয়ে এসে ছিল মা তাই নানুর বাসা থেকে এখন ও মাকে মেনে নেয়নি।
আমি সোফায় বসতে বসতে বললাম,
আমি মনে হয় মিটিং এ আসতে লেট করলাম।
সঙ্গে সঙ্গে ভাইয়া বললো,
তুই ছোট মানুষ। তুই আসলেই কি আর না আসলেই কি?
আমাকে অপমান না করলে মনে হয় ভাইয়ার পেটের ভাত হজম হয় না।সবসময় মনে হয় আমাকে কিভাবে অপমান করা যায় মনে মনে সেটাই ভাবে।
যাইহোক রিয়ার থেকে জানতে পারলাম, আগামী সপ্তাহে আপুর বিয়ের ডেট ফাইনাল হয়েছে।
মাকে জিজ্ঞেস করলাম,
এতো তাড়াতাড়ি বিয়ে হওয়ার কারণ কি?
মা বললো,
ব্যবসার কাজের জন্য আকাশ কে ১বছরের জন্য বিদেশ যেতে হবে সামনের মাসে তাই এত তাড়াতাড়ি।
ফুপা-ফুপিরা বিয়ের আগে আর তাদের বাসায় যাবে না।কারন মা-বাবা একা সামলাতে পারবে এত ঝামেলা।
জরিনা খালা একটু পর বাবাকে বলছে,
ভাইজান এহন একটু টিভি দেহি আমার প্রিয় নাটক টা দিচ্ছে এহন।
বাবা জরিনা খালা কে ধমক দিয়ে বসিয়ে দিল কারন বাবা টিভি দেখা পছন্দ করে না।বাবার ধমক খেয়ে জরিনা খালা চুপসে গেল। তার চুপসে যাওয়া মুখ দেখে খুশি তেমন সবে ঠিক করলাম একলাইন গান গাইবো তখনি ভাইয়া বললো,
মিশ্মি এখানে বসে না থেকে পড়ার টেবিলে যা আমি আসছি এখনি।
আমি অসহায়ের মত বললাম,
আজকে ও পড়তে হবে?
ভাইয়া বললো,
কেন আজ তোর বিয়ে নাকি যে আজ পড়তে বসা যাবে না?
আমি মনে মনে বললাম,
বিয়ে থাকলেও মনে হয় তুমি আমাকে বাসর রাত থেকে টেনে এনে পড়াতে।
সুফা থেকে উঠে পড়ার রুমে গিয়ে বসলাম।
কিছুক্ষণ পর ভাইয়া এসে বললো,
মিশ্মি আমার জন্য নিজের হাতে এক কাপ কফি বানিয়ে আনতে পারবি।
আমি মাথা নেড়ে হ্যা বললাম।
ভাইয়া বললো,
আজকে ও আবার ইউটিউব থেকে দেখে বানাসনা। তুই তো জানিস আমি নকল করা লাইক করিনা।
ইসসস, তার মানে কি ভাইয়া দেখে ফেলেছে। কিন্তু কিভাবে দেখলো?
ভাইয়া বললো,
কিভাবে দেখিছি সেটা তোর না জানলেও চলবে। এখন তাড়াতাড়ি কফি বানিয়ে আন।
ভাইয়া আমার মনের কথা জানতে পারলো কেমন করে?
এটা নিয়ে তেমন মাথা না ঘামিয়ে কিচেন রুমে চলে গেলাম। অনেক টাইম নিয়ে কফি বানালাম। ইচ্ছে করেই এতো টাইম নিচ্ছি যাতে পড়ার টাইম কিছুটা চলে যায়। রুমে এসে দেখলাম ভাইয়া কাকে যেন বলছে,
আমি যখন তোকে একবার কথা দিয়েছি ও কে তোর মতোই মতই সবসময় পড়ালেখায় ফাস্ট থাকবে তো আমি আপ্রাণ চেষ্টা করবো আমার কথা রাখার।
আমাকে দরজার সামনে দেখে ভাইয়া ফোনটা কেটে দিলো।
আমাকে ধমক দিয়ে বললো,
নক করে ঢুকতে পারিসনা?
এই বলে কফির মগ নিয়ে কফি খাওয়া শুরু করলো।
আর আমি ভাবছি ভাইয়া কি আমার মতো অন্য কাউকে পড়ায় নাকি? এটা ভাবতেই মনটা টা খুশিতে ভরে গেল পৃথিবীতে তাহলে আমার মতো আর একজন যে ভাইয়ার অত্যাচার সহ্য করছে।
ভাইয়ার কফি খাওয়া হয়ে গেলে কফির মগ কিচেনে রাখতে গেলাম।
একটা মগে কফি নিয়ে আরাম করে সুফায় বসে খেতে লাগলাম। একটু মুখে দিয়েই আবার ফেলে দিলাম কারন কফি বানানো অনেক বাজে হয়েছে। এটা ভাইয়া খেলো কিভাবে?
–
–
–
চলবে………..