ভালোবেসে ভুল করিনি পর্ব:৪

0
1108

#ভালোবেসে_ভুল_করিনি
পর্ব:৪
#writer_Tanjina_islam

কফি খাওয়ার পর মুখটা তেতু হয়েছে বলে ফ্রিজ থেকে আইসক্রিম খাচ্ছিলাম আর টিভি তে কার্টুন দেখছিলাম। ভাইয়া যে আমার জন্য পড়ার টেবিলে অপেক্ষা করছে সেটা ভুলেই গিয়েছিলাম।
আপু এসে যখন বললো,
মিশ্মি আজ তোর কপালে খারাপ কিছু আছে, সামির ভাইয়া রুমে তোর জন্য অপেক্ষা করছে।
করি
কথাটা শুনেই আমি সব ফেলে একদৌড়ে রুমের দরজার সামনে দাঁড়ালাম। ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে দেখলাম ভাইয়া একবার ঘড়ির দিকে তাকাচ্ছে আর একবার দরজার দিকে তাকাচ্ছে। আমি ভয়ে ভয়ে রুমে ঢুকলাম।
আমাকে দেখে ভাইয়া ধমক দিয়ে বললো,
একটা মগ রেখে আসতে এত টাইম লাগে?
আমি কিছু বলতে যাবো তার আগেই ভাইয়া বললো,
তোর জন্য অপেক্ষা করতে করতে আমার পা ব্যাথা হয়ে গেছে, এখন আমার পা টিপে দিবি তুই।
এই বলে খাটের সাথে হেলান দিয়ে শুয়ে পড়ল।বজ্জাত টা আমাকে কিছু বলার সুযোগই দিলোনা।
আমাকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে ভাইয়া বললো,
কি হলো তোকে ওখানে দাঁড়িয়ে থাকতে বলেছি, তাড়াতাড়ি পা টিপে দে।
আমি গিয়ে খাটে বসে পা টিপতে লাগলাম।
আর ভাইয়া আরাম করে মোবাইলে গেম খেলছে। প্রায় এক ঘন্টা পর ভাইয়া কে বললাম,
ভাইয়া আমার হাত ব্যাথা হয়ে গেছে।
আমার কথা শুনে ভাইয়া খাট থেকে উঠে চিয়ারে গিয়ে বসলো আর বললো,
এখন পড়তে আসা।
আমি ও গুড গার্লের মতো চুপচাপ পড়তে বসলাম।
অনেক্ষণ একটা ম্যাথ বুঝানোর পর ভাইয়া আমাকে বললো,
এখন এই ম্যাথ টা করে দেখা,
আমি বললাম,
ভাইয়া কাল দেখাবো,আজ হাত টা ব্যাথা করছে।
ভাইয়া বললো,
আমি তোকে এখন করতে বলেছি,কাল করতে বলিনি। কোনো কথা না বলে তাড়াতাড়ি কর।
আমি হাতের ব্যাথা নিয়ে অংকটা করে দেখালাম।
তারপর নিজের রুমে চলে গেলাম। রাতে মা’র ডাকে খাবার টেবিলে গিয়ে বসলাম।
খাবার টেবিলে ভাইয়াকে দেখে বললাম,
ভাইয়া আজ তুমি তোমাদের বাসায় যাবে না?
মা আমাকে ধমক দিয়ে বললো,
বাসায় যাবে মানে? তোর ফুপি দের বিয়ের আগে বাসায় যেতে দিবো না তুই জানিস না।
আর আমার কোনো ছেলে আছে? বিয়ের সময় অনেক ছেলেদের অনেক কাজ আছে সেগুলো তো সামির ই‌ করবে।
আমি মনে মনে বললাম,
তার মানে এখন থেকে দিনরাত ২৪ ঘন্টা ভাইয়ার অত্যাচার সহ্য করতে হবে।
খাওয়া দাওয়া সেরে রুমে এসে ঘুমিয়ে পড়লাম।
সকালে ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হচ্ছিলাম যখন মোবাইলে একটা মেসেজ আসলো।
মেসেজ চেক করে দেখলাম ভাইয়া মেসেজ করেছে,
আমি অফিসে চলে এসেছি। আমার যেন আজ আসতে না হয়। তাড়াতাড়ি কলেজ যা।
ধ্যাত শয়তান টা অফিস গিয়ে ও আমাকে শান্তি যে থাকতে দিবে না।
রেডি হয়ে খেয়ে কলেজে চলে আসলাম।
কলেজ ক্যাম্পাসে অনেক দিন পর আমাকে যে ছেলেটা প্রপোজ করে পরেরদিন থেকে আর কলেজ আসিনি আজ তাকে দেখতে পেলাম। তাকে দেখে ডাক দিলাম কিন্তু আমাকে দেখে ছেলেটা চলে যাচ্ছিলো বলে, আমি দৌড়ে ছেলেটার সামনে দাঁড়ালাম আর বললাম,
কি হলো আমাকে দেখে চলে যাচ্ছেন যে?
আমার কথা শুনে ছেলেটা হাঁটু গেড়ে বসে বললো,
আপু তোমাকে আমার অনেক আপু ডাকতে ইচ্ছে করে। দিবে কি আমায় আপু ডাকার অধিকার?
ছেলেটার কথা শুনে আমি ছেলেটার গালে ঠাস করে থাপ্পড় দিয়ে বললাম,
কেনো তোর বাড়িতে ফোন নেই, রাস্তা ঘাটে মেয়ে মানুষ দেখলেই আপু ডাকতে ইচ্ছে করে?
এই বলে চলে আসলাম। ক্যান্টিনে গিয়ে বান্ধবীদের সাথে আড্ডা দিয়ে ক্লাস রুমে গিয়ে ক্লাস করলাম।
ছুটির পর সুজা বাসায় চলে আসলাম। রুমে ঢুকে ভাইয়া কে আমার রুমে চোখ লাল করে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে অবাক হয়ে গেলাম। আমি ভাইয়াকে বললাম,
ভাইয়া তুমি এতো তাড়াতাড়ি অফিস থেকে চলে আসলে যে?
আমার কথা শুনে ভাইয়া খুব হিংস্র ভাবে আমার দিকে তাকালো, আমি ভাইয়ার এমন রুপ দেখে ভয় পেয়ে গেলাম। মনে মনে ভাবতে লাগলাম আজ আবার কি ভুল করলাম।
ভাইয়া যখন আমার কামিজের হাতা টেনে ছিঁড়ে ফেলল তখন আমার ধ্যান ভাঙল।
ভাইয়া রাগী ভাবে বললো,
তোকে কতদিন বলেছি সাদা কালারের কিছু পড়বি না।
তখন আমি আমার কামিজের দিকে তাকিয়ে দেখলাম, সত্যিই আমি সাদা কালারের কামিজ পড়েছিল, এতক্ষণ তো খেয়ালি করেনি। এত বড় ভুল হলো কেমন করে আমার।
আমি ভয়ে ভয়ে উত্তর দিলাম,
ভাইয়া সকালে তাড়াতাড়ি করতে গিয়ে ভুলে পড়েফেলিছি ,প্রমিজ করছি এমন ভুল আর হবে না।
আমার কথা শুনে ভাইয়া একটু শান্ত হয়ে বললো,
তাড়াতাড়ি চেঞ্জ করে আস।
এই বলে চলে গেল। আমি ওয়াশ রুমে ঢুকতে বললাম,
সাদা কালারে যদি তোর এতই এলার্জি থেকে থাকে তাহলে তুই নিজে কেন সাদা কালারের শার্ট পড়িস? আমার তো সাদা কালার ফেবারিট। সেই যে একবছর আগে আমার বার্থডের দিন একটা সাদা কালারের গাউন পড়ে ছিলাম,তারপর থেকে যেন কি হলো ভাইয়া আমাকে আর সাদা কালারের কিছু পড়তেই দেয়না।
ফ্রেশ হয়ে ঘুমিয়ে পড়লাম।
বিকেলে ড্রয়িং রুমে গিয়ে দেখলাম সবাই সেজেগুজে কোথায় যেন যাচ্ছে।
আমি একটু অভিমানী স্বরে বললাম,
আমাকে রেখে তোমরা সবাই কোথায় যাচ্ছো?
ভাইয়া বললো,
তিয়ার বিয়ের শপিং করতে যাচ্ছি। তুই গিয়ে কি করবি?
আমি বললাম,
কেন আমি ও আপুর জন্য কিছু চয়েস করে দিবো।
ভাইয়া বললো,
তুই আর কি চয়েস করে দিবি, তোর যে পছন্দ সেগুলো যদি তিয়া বিয়ের সময় পড়ে তাহলে সবাই হাসাহাসি করবে।




চলবে………..