মন গহীনে পর্ব-২৪

0
369

#মন_গহীনে

#পর্বঃ২৪

#দোলন_আফরোজ

তিথী যেহেতু পছন্দ করে না তাই কাব্য ও মেধার থেকে দূরে দূরেই থাকার চেষ্টা করে। যা মেধার মোটেও সহ্য হচ্ছে না। নিজের চোখের সামনে কাব্য কে তিথীর সাথে মেনে নিতে পারছে না সে। প্ল্যান করতে থাকে কিভাবে তিথীকে কাব্যর থেকে দূরে রাখা যায়।

ইদানীং কাব্যর কাজের চাপ বেড়ে গেছে। জব এর ইচ্ছে তার কোনো কালেও ছিলো না। নিজের বিজনেস দাড় করানোর চিন্তা তার। চাইলেই বাবার বিজনেসে ঢুকা যায় কিন্তু তা সে মোটেও চাইছে না। তাই পরিশ্রম এর পরিমান বেড়ে গেছে তার ।

সন্ধ্যা বেলায় তিথী নিজের রুমে বসেই পরছিলো। তখন মেধা আসে তার রুমে। মেধাকে দেখে খুব একটা ভালো না লাগলেও যেহেতু নিজের রুমে এসেছে তাই অপছন্দ হওয়া সত্বেও হাসি মুখেই মেধাকে ঘরে আসতে বলে।

বিছানায় বসতে বসতে মেধা বলে, পড়ছিলে তুমি, ডিস্টার্ব করিনিতো?

না আপু, সমস্যা নেই বলুন কি বলবেন।

তেমন কিছু না গল্প করতে এলাম তোমার সাথে। তুমি মনে হয় খুব বিজি।

না আপু বিজি না।

এতোক্ষণে মেধা পুরো ঘরটাতে চোখ বুলিয়ে নেয়। সারা ঘরে মেয়েলি জিনিসে ভর্তি। ড্রেসিং টেবিল টাও তিথীর প্রসাধনী সামগ্রী দিয়ে ভরপুর। আর সব কিছুই এলোমেলো হয়ে আছে। দেখেই বুঝা যাচ্ছে মেয়েটা একদম ই গুছানো না।
পুরো রুম টা দেখে মেধার মন টা বিষাদে ভরে যায়। এই ঘরটায় তার থাকার কথা ছিলো। পরিবারের সবাই এমন টাই ভেবেছিলো, কোথেকে এই মেয়েটা এসে সব এলোমেলো করে দিলো। রাগে ওর সারা শরীর রি রি করছে।

কিছু বলছেন না কেনো আপু?

না দেখছি, কাব্য বরাবর ই অগোছালো মানুষ। সব কিছু এলোমেলো করে রাখতো। আমিই ওর ঘর গুছিয়ে দিতাম আর বকাঝকা করতাম, তখন বলতো এসব গোছগাছ এর কাজ তার না। তার বউ ই সব গুছিয়ে রাখবে, সাথে তাকেও গুছিয়ে রাখবে। বলে হাসে মেধা।
আর এখন দেখো এমন পিচ্চি একটা মেয়ে বিয়ে করলো কাব্য যে এখন বউ কেই গুছিয়ে রাখতে হচ্ছে তার। কই কাব্য বউ এর আদর যত্ন খাবে, তা না উল্টো বউ এর ই যত্ন করতে হচ্ছে তার। যাই হোক পিচ্চি মেয়ে বিয়ে করার সাজা তো একটু ভোগ করতেই হবে।

কথাটা শুনে তিথীর খুব খারাপ লাগে। পুরো ঘরটা চোখ বুলিয়ে দেখে সত্যিই ঘরটা যথেষ্ট অগোছালো। নিজের প্রতি নিজের ই রাগ লাগে, সত্যিই তো ও একটা নাম্বার ওয়ান অকর্মা। ঘরটার কি অবস্থা করে রেখেছে সে।

তিথীর মন খারাপ দেখে মেধা বলে, এই স্যরি গো, আমি তোমায় কিছু বলতে চাইনি। তুমি ই কি করবে বলো? পিচ্চি মানুষ তুমি। কাব্যর উচিৎ ছিল একটা ম্যাচিউর মেয়ে বিয়ে করার। যাই হোক তুমি পড়ো, আমি গিয়ে দেখি অর্না ভাবি কি করে। বলেই চলে যায় মেধা।

তিথী নিজেকে নিজেই গালি দিচ্ছে। আসলেই তো, কাব্য ই তার যত্ন করে, সে কখনো কাব্যর জন্য এমন কিছু করেনি যা কাব্যর ভালো লাগতে পারে।
পড়াশোনা বাদ দিয়ে পুরো ঘর গুছানোর কাজে লেগে পড়ে সে।

কাব্য ঘরে এসে দেখে পুরো ঘরটা পরিপাটি, সুন্দর গুছানো। কোমড়ে হাত দিয়ে পুরো ঘরে চোখ বুলিয়ে নেয় সে। তখন তিথী ওয়াশরুম থেকে এসে কাব্য কে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে বলে, কি হলো এভাবে দাঁড়িয়ে আছেন কেনো?

দেখছি এটাকি আমার ঘর নাকি অন্য কারো ঘরে এসে পরলাম আমি।

কাব্যর এমন হেয়ালি কথায় মন খারাপ হয়ে যায় তিথীর। কেনো আমি কি কিছুই করতে পারি না? মাকাল ফল আমি?

যাহ, সেই কথা কে বল্লো। আমি তো শুধু এটা বললাম যে আমার পিচ্চি বউ….

দুকানে হাত চেপে চিৎকার করে উঠে তিথী, পিচ্চি পিচ্চি পিচ্চি। হুম আমি পিচ্চি, কেনো বিয়ে করলেন তবে আমায়? একটা ম্যাচিউর মেয়ে দেখে বিয়ে করতে পারলেন না? বলেই কেঁদে দেয়।

দু’হাতে আগলে নেয় কাব্য তিথীকে। কি হলো আমার বউ টার? হঠাৎ হঠাৎ এতো রেগে যাচ্ছে কেনো? হুম? আদুরে গলায়। কেউ কিছু বলেছে?

ফুপিয়ে কেঁদে বলে কেনো বিয়ে করলেন আমায়? আমি একদম গুছানো না।

আমার গুছানো বউ চাই না তো। আমার তো এই অগোছালো বউ টাই চাই। যাকে আমি আমার মতো করে গুছিয়ে নিবো।

মেধা আপু যে বল্লো আপনার গুছানো বউ পছন্দ ছিলো।

চুপ করে আছে কাব্য। মেজাজ তার চরম লেভেলের গরম হয়ে আছে। এমন বন্ধু থাকলে শত্রুর প্রয়োজন নেই। দাঁড়া মেধা, তোর ব্যাবস্থা করছি আমি।

**********************

এর মাঝে গল্পে গল্পে অর্না তিথীকে বলে মেধা আর কাব্যর বন্ডিং এর কথা। তিথীর বুকের ভিতর টায় খুব কষ্ট হয় এসব শুনে। কিন্তু কাব্য ওর কাছে এলে ওর আশেপাশে থাকলেই সব ভুলে যায় সে। কাব্য এতোটা কেয়ার করে যে মনেই হয় না কাব্য তাকে নিয়ে হ্যাপি না।

এদিকে কাব্য মেধাকে অনেক কথা শুনিয়েছে তিথীকে এসব উল্টো পাল্টা কথা বলায়। মেধা উত্তরে শুধু এটুকুই বলে, তুই এতো বছরে আমায় এই চিনলি? ফাজলামো করি এক কথা, তবে সিরিয়াসলি কিছু বলবো আমি তিথীকে? তোদের সম্পর্ক খারাপ করবো?

মেধার ইমোশনাল কথায় কাব্যর ও খারাপ লাগে। আমি আসলে সেভাবে কিছু বলতে চাইনি, তুই তো জানিস তিথীর ব্যাপারে আমি কতোটা পজেসিভ। ও কষ্ট পেলে ওর চেয়ে বেশি ব্যাধিত হই আমি। স্যরি ভুল বুঝিস না আমায়।

এতো বছরের বন্ধুত্ব এক মূহুর্তেই নষ্ট করে দিলি, যাই হোক, ভালোই করেছিস। বলে উঠতে নিলেই আহহ বলে পায়ে হাত দিয়ে বসে পড়ে মেধা। কাব্য অস্থির হয়ে এগিয়ে এসে বলে কি হলো।

কিছু না, পায়ে হয়তো মোচড় লেগেছে, বলে আবার উঠতে নিলে মেধা আবারো পড়ে যেতে নেই। তখন কাব্য ই কোলে তুলে নেয় মেধাকে।ওরা ড্রয়িং রুমে ছিলো। আর উপর থেকে সব দেখছিলো তিথী। যদিও ওদের কথা শুনতে পায়নি সে। কিন্তু যখন কাব্য মেধাকে কোলে তুলে নেয় তিথীর মাথায় যেনো আকাশ ভেঙে পরে, নিজের চোখকেও বিশ্বাস করতে পারছে না সে। চোখ বেয়ে নোনা জল গড়িয়ে পড়ে। তখন অর্না পাশ থেকে বলে একটু ও কেয়ার করা কমেনি, আগের মতোই আছে মেধার জন্য কাব্যর ভালোবাসা। মেধা একটু ব্যাথা পাওয়াতে কাব্য এখনো কেমন অস্থির হয়ে যায়।
আর শুনতে পারলো না তিথী। একটা বড় শ্বাস ফেলে রুমে চলে যায় সে।

রুমে গিয়ে অনেক চেষ্টা করেও কান্না আটকাতে পারে না সে। তাই বাচ্চাদের মতো কাঁদতে থাকে। এর মাঝেই কয়েকবার কল আসে তিথীর। বার বার কেটে দেয়ার পর ও যখন আবার কল আসে তখন কান্না আটকে কল রিছিভ করে, কিন্তু অপজিট এ থাকা মানুষ টা ঠিক ই বুঝে যায় যে সে কান্না করছে। অস্থির হয়ে জিজ্ঞেস কি হয়েছে তিথী? বলনা? টেনশন হচ্ছে আমার।

আমি কিছুক্ষণ পর কল করছি তোমায় আপুটি।

উহুম, একদম না, আগে বলবি কি হয়েছে তারপর ফোন রাখবি।

ফুঁপিয়ে নাক টেনে শুরু থেকে সবটা বলে তমাকে। সবটা শুনে তমা শুধু এই টুকুই বলে খুব ভালোবাসিস কাব্য ভাইয়াকে?

তখনই কন্ঠ বদলে ঝাঝালো কন্ঠে বলে মোটেও না। কোনোদিন ও ভালোবাসি না ওকে, আর ভালোবাসবো ও না। পৃথিবীতে যদি লাস্ট পার্সন ও থাকে তবু ভালোবাসবো না ওকে। আমার জীবন টা নষ্ট করে দিয়েছে ও। কোনোদিন ক্ষমা করতে পারবো না ওকে আমি, আর ভালোবাসা তো অনেক দূরের কথা।

এই কথাগুলো শুনে ফেলে কাব্য। তার এতোদিনের সব ধারণাই ভুল প্রমানিত হলো। মিছে মিছেই ভাবতো হয়তো তিথী ভালোবাসে তাকে। আর ঘরে ঢুকতে পারেনি সে। আর সারারাত ঘরেও ফেরেনি।

এদিকে কাব্য না ফেরাতে তিথীর অস্থিরতা বাড়তেই থাকে। তার মানে তার ধারণায় ঠিক। কাব্য ও মেধাকে ভালোবাসে…..




চলবে…..