#মিস্টার ভিলেন
পর্বঃ৪
?সামিরা পপি?
_______________________________
_______________________________
সামিরা দেখল তানি নাবিলের এক হাত ধরে দাঁড়িয়ে আছে।আর হেঁসে হেঁসে কথা বলছে তাদের পাশে নাবিলের অন্য ফ্রেন্ডসরাও রয়েছে।অন্যদের দিকে তাকানোর সামিরার সময় কই?সে’তো তার নাবিলের দিকে তাকানোর ব্যস্ততা নিয়ে আছে।তানির সাথে এত কিসের কথা?হুম?কই তার সাথে তো কখনও হেঁসে কথা বলেনা?উল্টো সামিরাকে দেখলে মুখটাকে কুঁচকে ফেলে।না আজ এই নাবিলের বাচ্ছা নাবিলের একটা কিছু করতেই হবে।এইসব ভাবতে ভাবতে নাবিলের সামনে গিয়ে দাঁড়াল সামিরা।একবার তানির নাবিলের ধরা হাতের দিকে তাকিয়ে আবার নাবিলের দিকে তাকালো।রাগে তার মাথা ফেঁটে যাচ্ছে।বেশ পরিমানের রাগ হচ্ছে নাবিলের উপর।তাই আর সহ্য করতে না পেরে তানির হাত নাবিলের হাতের থেকে ছাড়িয়ে তানিকে দিল এক ধাক্কা।সাথে সাথেই তানি কয়েক কদম পেছনে চলে গেছে।এমন ঘটনায় সবাই হতভম্ব হয়ে সামিরার দিকে তাকিয়ে আছে।আর তানি রেগে মেগে সামিরার দিকে তেড়ে আসে।তানি এক আঙুল উঠিয়ে সামিরাকে উদ্দেশ্য করে বলল,
–“হাও ডেয়ার ইউ?তোমার সাহস কি করে হয় আমাকে এইভাবে ধাক্কা দেওয়ার?”
সামিরা আরো রেগে গিয়ে বলল,
–“আই ক্যান ডেয়ার।নাবিল শুধু আমার।তাই উনার আশে পাশে যেই আসবে তাকে আমি আস্ত রাখব না।মাইন্ড ইট।তোকে যেন আমি নাবিলের আশে পাশে আর না দেখি।আর এখন শুধু ধাক্কা দিয়েছি এর পর যদি আর দেখি ওর কাছে তাহলে তোর কি হাল করব আমি তুই ভাবতেও পারবি না।”
–“মাইন্ড ইউর ল্যাংগুয়েজ। তুই তুকারি বন্ধ করো।আর নয়তো দেখবে আমি কি করি।আর কি বললে নাবিল তোমার?হাহ! নাবিল কার সেটা সময় হলেই বুঝবে।আর তুমি আমার গায়ে হাত দিয়েছ এর পরিনতি কিন্তু মোটেও ভালো হবে না।ইউ হ্যাভ টু পে ফর দিস।”
সামিরা তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বলল,
–“আমার ল্যাংগুয়েজ এর থেকে ভালো তুই ডিজার্ভ করিস না।তাই এই ভাষাও কম হয়।আর কি বললি তুই আমাকে?আমার কাজের জন্য আমি পস্তাবো?হাহাহা সত্যিই অদ্ভুত।পস্তাব নাকি কি করব সেটা পরে দেখব।আপাদত নাবিলের দিকে কন্সেন্ট্রেট করতে হচ্ছে আমায়।”
তানি ও সামিরার জগড়া দেখে সবাই অবাক।দুইজনেই কিনা একটা ছেলের জন্য এইভাবে পাব্লিক প্লেসে জগড়া করছে!ভাবতেই কেমন তাজ্জব হচ্ছে সবাই।নাবিল এখন খুব রেগে যাচ্ছে।এই দুই মেয়ে তাকে হাসির পাত্র বানিয়ে ছাড়বে নিশ্চয়।তাই সেও রেগে বলল,
–“চুপ করো তোমরা।কি শুরু করেছ তখন থেকে?আমাকে কি পেয়েছ তোমরা দু’জনে?এই তানি তোমাকে আমি আগেই বলেছিলাম না?যে তুমি আর আমি যাস্ট ফ্রেন্ড হবো?এর থেকে বেশি কিছু নয়?তাহলে তুমি ওর সাথে এইভাবে জগড়া করছ কেন?দেখ আমি তোমাকে এতদিন সুযোগ দিয়েছিলাম ফ্রেন্ড হয়ে থাকার বাট আজকে থেকে সেই সুযোগ ও তুমি হারিয়েছ।আমি যেন তোমাকে আর আমার সামনে না দেখি।”
নাবিলের কথা শুনে তানি কাঁদো কাঁদো ফেস করে বলিল,
–“প্লিজ নাবিল এমন বল না।আমি তো মেনে নিয়েছি আমাদের ফ্রেন্ডশিপ।আর আমি এখন এইসব প্রেম ভালোবাসার কথা মাথায়ও রাখিনি।বিশ্বাস করো।”
নাবিল ভ্রু কুঁচকে বলল,
–“তাহলে জগড়া করছ কেন ওর সাথে?আর এইটাই বা বললে কেন যে সময় হলেই দেখা যাবে নাবিল কার।হোয়াই?”
তানি আমতাআমতা করে বলল,
–“জগড়া করছি তো এই মেয়ে আমাকে ধাক্কা দিয়েছে তাই।আর ওই কথাটা বলেছি এমনিতেই ও বলেছিল না যে,,”নাবিল শুধু আমার।”তাই।
–“ওহ।”
আবার সামিরার দিকে তাকিয়ে নাবিল বিরক্তির স্বরে বলল,
–“এই মেয়ে তোমাকে না বলেছি আমাকে বিরক্ত করবে না?আমি তোমাকে ভালবাসি না?তার পরেও কেন বার বার বিরক্ত করতে চলে আসো?হুম?আমার যার সাথে খুশি কথা বলব।যাকে ইচ্ছা ভালবাসব।অন্য যে কোন মেয়েই আমার সাথে কথা বলবে।তুই বাঁধা দেওয়ার কে?”
নাবিলের কথায় সামিরার রাগ যেন এইবার মাথায় চেপে বসল।কত্ত বড় সাহস আমার সামনেই অন্য মেয়ের কথা বলছে।ভেবেই সামিরার মেজাজ বিগড়ে গেল।চোখের পলকে গিয়ে নাবিলের শার্টের কলার দু’হাতে চেপে ধর।আর দাঁতে দাঁত চেপে।নাবিলের চোখে চোখ রেখে বলিল,
–“চুপ একদম চুপ।তোর কথাও অনেক শুনেছি।তোর এত সাহস হলো কি করে?তুই আমার সামনে অন্য মেয়ের কথা বলিস?দেখি কোন ডাইনির এত বড় সাহস আমার বর্তমানে তোর ধারে কাছে আসে।তার একটা চুলও আমি রাখব না।আর সেই সাথে তোর কি হাল করি তা তো কল্পনাও করতে পারবি না।”
সামিরার সাহস দেখে সবার চোখ বড় বড় হয়ে গেছে।এই ছেলে যে পরিমানে মারামারি করে তা দেখে সবাই এমনিতেই তার থেকে ডিস্টেন্স বজায় রাখে।তার উপর রাজনীতি করে।তার উপর কলেজের সিনিয়র।তাই কেউ জোর গলায় কথা পর্যন্ত বলেনা।আর সেই ছেলের শার্টের কলার ধরেছে তাও একটা মেয়ে।আবার চোখে চোখ রেখে তুই তুকারি করে কথাও বলছে।এইসব দেখেই সবাই যেন অবাকের উপর অবাক হচ্ছে।আবার অনেকে ভয়ও পাচ্ছে না জানি নাবিল সামিরার কি করে?নাবিলও প্রথমে অবাক হয়েছে।পড়ে কলারের দিকে তাকিয়ে রেগে যাই।যখন সামিরার মুখে তুই তুকারি শুনে তখন ত মনে হয় কান দিয়ে গরম ধোঁয়া বের হচ্ছে।সামিরার হাত দু’টো দু’হাতে শক্ত করে ধরে এক ঝাড়ি দিয়ে ছাড়িয়ে নেই।আর একটা থাপ্পড় দিয়ে চাঁচিয়ে বলে,
–“বেয়াদপ মেয়ে তোমার সাহস হলো কি করে এই নাবিলের শার্টের কলার ধরার?আবার তুই তুকারি করার?এতদিন অনেক সহ্য করেছি আর না।কি ভেবেছ তুমি নিজেকে?হ্যাঁ জবাব দাও?তুমি যাই ইচ্ছা তাই বলবে?”
সামিরা গালে হাত দিয়ে নাবিলের দিকে তাকিয়ে আছে।আর পাশে তানি মিটিমিটি হেঁসে চলেছে সামিরাকে নাবিলের হাতে মার খেতে দেখে।আসতে আসতে নাবিল বুঝতে পারল সে কি করেছে।তাই চোখ দু’টোকে শান্ত করে সামিরার দিকে তাকায়।নাবিল ভেবেছিল সামিরা কান্না করবে বা এইখান থেকে চলে যাবে।কিন্তু না নাবিলকে ভূল প্রমাণ করে দিয়ে সামিরা মুচকি হেসে নাবিলের গালে টোপ করে একটা চুমু দিয়ে বসল।সামিরার এমিন কাজে নাবিল,তানি,তাদের বন্ধুরাসহ আশে পাশের সবাই হতবাক।এই মেয়ে কি পাগল হয়ে গেছে নাকি?থাপ্পড় খেয়ে নির্গাত পাগল হয়ে গেছে নয়তো এমন সিচুয়েশনে কেউ এমন কাজ করে?
নাবিল কিছু বলতে যাবে তার আগেই সামিরা নাবিলের শার্টের কলার ঠিক করতে কিরতে বলে,
–“উহু ভুলেও ভাববেন না আমি অন্য মেয়েদের মত মার খেয়ে অপমানিত হয়ে আপনাকে ছেড়ে দিব।আমি কিন্তু হেরে যাওয়া মানুষের মধ্য নয়।আর আপনি কি ভেবেছেন?আমি কান্না করব?নো ওয়ে।যদি অন্য কেউ মারত তবে কান্না করতাম।আপনি মেরেছেন তাই করছিনা।কেন বুলুন তো?”
নাবিল জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে সামিরার দিকে তাকিয়ে আছে।সামিরা মুচকি হেসে বলল,
–“কারন আমি জানি আপনিও আমায় একদিন ঠিকি ভালবাসবে।আর এইটাও জানি যে এখনও আপনার মনে আমার জন্য বিন্দু বিন্দু ভালবাসা জমছে।তাই এই থাপ্পড়কে আপিনার ভালবাসার ছোঁয়া হিসেবে নিলাম”
নাবিল সামিরার কথা কি বলবে খুঁজে পেল না।শুধু বিরক্তি নিয়ে সেই স্থান ত্যাগ করতে করতে বলল,
–“ডিসগাস্টিং “।
বলেই চলে যাচ্ছে।এইদিকে সামিরা চেঁচিয়ে বলল,
–“হেয় মিস্টার ভিলেন!আপনি যতই পালানোর চেষ্টা করেন।কিন্তু দিন শেষে আমার কাছেই আসতে হবে এবং আমাকেই ভালবাসতে হবে।”
নাবিল আর পেছনে ফিরে তাকাল না।তবে সামিরার “হেয় মিস্টার ভিলেন” কথাটা শুনে মনে এক অদ্ভুত অনুভুতি হলো।এই কথা শুনে তো তার রেগে যাওয়ার কথা।কিন্তু না রাগ হলো না।ব্যস একটা মুচকি হাসল
চলবে…….