#মেঘ_বলেছে_তুমি_আমার❤️
#লেখিকা:#তানজিল_মীম❤️
— পর্বঃ০২
_______________
খানিকটা অবাক চোখের তাকিয়ে আছে নীলয় তার বাবার মুখের দিকে। তাদের নাকি বাংলাদেশ যেতে হবে লাইক সিরিয়াসলি তাও নাকি কোন মেয়ের বিয়ে সেই উপলক্ষে নীলয় মটেও এই মুহূর্তে বাংলাদেশ যেতে চায় না। নীলয় গম্ভীর কণ্ঠে বাবাকে উদ্দেশ্য করে বললো,
‘ ড্যাড আমি কোথাও যাবো না তোমাদের যেতে হলে তোমরা যাও বাট আমি যাবো না।’
নীলয়ের বাবা কিছুক্ষন চুপ থেকে বললো,
‘ কেন যাবে না? যে দেশে জন্মেছো সেই দেশে যাবে না।’
‘ ড্যাড আমার না যাওয়ার পিছনে দেশের কোনো কাহিনী নেই আমার বিয়ে বাড়ি পছন্দ নয় এটা তো তোমরা জানো তাই আমায় বেশি জোর করো না কারন আমি যাবো না।’
এই বলে খাওয়ার টেবিল ছেড়ে উঠে চলে গেল নীলয়। আর তার যাওয়ার পানে হতাশ হয়ে তাকিয়ে রইলো নীলয়ের বাবা।’
শরীফ উদ্দিন নীলয়ের বাবার সেই ছোট বেলার বন্ধু তারা একসাথে তাদের ছোট বেলা কাটিয়েছে। তারই বড় মেয়ে অহনার বিয়ে সেই উপলক্ষে তাদের সবাইকে যেতে বলেছে বাংলাদেশ। বিশেষ করে নীলয়কে নিয়ে যাওয়ার জন্য খুব অনুরোধ করলো। ছেলেটার যখন আট বছর বয়স তখন তারা বিদেশে মানে আমেরিকায় চলে আসে। নীলয়কে খুব দেখতে চাইছে শরীফ উদ্দিন। নীলয়ের বাবা হতাশ হলেন তার ছেলেটা যেন মানুষ হলো না। নীলয়ের বাবা উঠে গেলেন আজ আর খেতে ইচ্ছে করছে না। তবে নীলয়ের বাবা এটা ভেবে অবাক হলেন শরীফের সেই পুঁচকে মেয়েটা আজ এত বড় হয়ে গেছে যে তাকে বিয়েও দিচ্ছে শরীফ। নীলয় যাক বা না যাক তারা যাবে। নীলয়ের মা স্বামীর যাওয়ার পানে চেয়ে রইলেন সে জানেন নীলয়ের বাংলাদেশ না যাওয়ার কথা শুনে খুব কষ্ট পেয়েছেন তার স্বামী। এই নীলয়টাও না সবসময় বাবার অবাধ্য থাকে যা বলে ঠিক তার উল্টোটা করে।’
.
নিজের রুমের তুলতুলে নরম বিছানায় শুয়ে শুয়ে গেম খেলছিল নীলয়। এমন সময় দরজায় নক করলো নীলয়ের মা। মৃদু স্বরে বললেন,
‘ নীলয় আসবো?’
নীলয় এতে খানিকটা বিরক্ত হলো কারন সে জানে তার মা এখন কেন এখানে এসেছে। নীলয় বিরক্ত নিয়েই বললো,
‘ ইয়েস মম ক্যাম।’
নীলয়ের মা ভিতরে ঢুকলেন। হেঁটে গিয়ে বসলেন ছেলের পাশ দিয়ে বললেন,
‘ ঘুমাবি না।’
‘ আপাতত ঘুম আসছে না মম।’
নীলয়ের মা কিছুক্ষণ চুপ থাকলেন কিভাবে কি শুরু করবে বুঝতে পারছে না। যা দেখে নীলয় বলে উঠল,
‘ কিছু বলার থাকলে বলে ফেল মম তবে হ্যা যদি বাংলাদেশ যাওয়ার বিষয় নিয়ে কথা বলো তাহলে বলো না কারন আমি যাবো না।’
‘ এমন কেন করিস নীলয়? তুই সবসময় তোর বাবার অবাধ্য হোস তুই জানিস তোর বাবা এই বাংলাদেশ নিয়ে কত সিরিয়াস। তারওপর তার ছোট বেলার বন্ধুর মেয়ের বিয়ে বুঝতেই পারছিস।’
নীলয় গেম খেলা বন্ধ করলো। মায়ের দিকে তাকিয়ে নরম গলায় বললো,
‘ আমি কি তোমাদের যেতে বারণ করেছি মম তোমরা যাও না আমায় যেতে হবে কেন?’
‘ শরীফ উদ্দিন খুব করে তোকে নিয়ে যাওয়ার কথা বলেছে নীলয়। না গেলে খারাপ দেখায় না। চল না যাই এমনিতেও আমরা তো আর ওখানে থাকতে যাচ্ছি না। বিয়ের কয়েকটা দিন থাকবো, ঘুরবো ফিরবো, আনন্দ করবো ব্যাস তারপর তো আবার চলেই আসবো।’
‘ আমার অফিস ছুটি দিবে না মম।’
‘ দু’সপ্তাহেরই তো ব্যাপার এত ভাবছিস কেন?’
‘ মা আমি বাংলাদেশ যেতে চাই না।’
‘ কেন যাবি না। সেই ছোট বেলায় সব ছেড়ে ছুঁড়ে এসেছিস নিজের ভিটে মাটির বাড়ির কথাও তো মনে নেই মনে হয়। চল গ্রাম বাংলার ঘ্রাণ নিবি একটু।’
‘ তুুমি খামোখা জেদ করছো মম আমি যাবো না।’
নীলয়ের মায়ের চোখে পানি চলে আসলো। তাদের ছেলেটা বড্ড খামখেয়ালি হয়ে গেছে। সহজে কারো কথা শুনতে চায় না। মায়ের অবস্থাটা যেন বুঝলো নীলয়। কিন্তু তার সত্যি বাংলাদেশ যেতে মন চাইছে না। নীলয় বেশ কিছুক্ষণ চুপ থাকলো। তারপর দীর্ঘ শ্বাস ফেলে বললো,
‘ ঠিক আছে যাবো মম কিন্তু শুধুমাত্র দু’সপ্তাহের জন্য এর বেশি কিন্তু আমি একদিনও থাকবো না।’
নীলয়ের মা যেন অনেক খুশি হলেন। চোখের পানি মুছতে মুছতে বললেন,
‘ তুই সত্যি যাবি নীলয়?’
মাথা নাড়িয়ে হা বলে নীলয়। তারপর মায়ের চোখের পানি মুছে দিয়ে বলে,
‘ মম আমি তোমাদের অবাধ্য ছেলে নই। কিন্তু তোমরা সবসময় আমায় সেসব জিনিস করতে বলো যা আমার ভালো লাগে না। কিন্তু এই বার যাও অপছন্দ লাগলেও আমি তোমার কথা মেনে নিলাম। আর আফজাল হোসেনকে বলবে আর রাগ না করে খাবার খেয়ে নিতে তার ছেলে যাবে তার বন্ধুর মেয়ের বিয়ে খেতে।’
নীলয়ের মা আফরোজা বেগম খুশি হয়ে ছেলের কপালে চুমু এঁকে বললো,
‘ আমার সোনা ছেলে।’
নীলয় হাসে। নীলয়ের মা চেয়ে থাকেন তার ছেলের হাসির পানে। ছেলেটা হাসলে দু’গালে টোল পড়ে বেশ লাগে দেখতে। নীলয়ের মা উঠে দাঁড়ালেন।বললেন,
‘ আর রাত না জেগে দ্রুত ঘুমিয়ে পড়িস নীলয়।’
‘ ঠিক মম এখন যাও দ্রুত গিয়ে স্বামীকে খাইয়ে দেও নয়তো ঘুমিয়ে পড়লে আর জেগে তুলতে পারবে না।’
‘ যা বদমাশ ছেলে।’
নীলয় হাসে এতে। আর নীলয়ের মা ছুটে যায় নিচে। স্বামীকে সত্যি খাওয়াতে হবে তাকে। একবার ঘুমিয়ে পড়লে সত্যি জেগে তোলা দায় হয়ে পড়বে আফরোজা বেগমের জন্য।’
_____
বিকেলের পাখিগুলো আকাশ ছুঁয়ে উড়ছিল, আকাশটায় সাদা মেঘেরা ভাসছিল, বারান্দার কর্নারের গাছগুলোর ফুলগুলো চেয়ে চেয়ে দেখছিল যেন অহনাকে। মেয়েটা মনমরা হয়ে বসে আছে। হাতে তার আহিয়ানের বাবার পড়িয়ে দিয়ে যাওয়া আংটিটা। হাতে নিয়ে নাড়িয়ে নাড়িয়ে দেখছিল সেটা। আজ দু’দিন হয়ে গেল অহনাকে আহিয়ানরা দেখে গিয়েছে বিয়ের তারিখও ঠিক করা হয়েছে গেছে। আজ থেকে ঠিক পনের- বিশ দিনের মধ্যেই সে অন্যবাড়ির বউ হয়ে যাবে। অহনা দু’দিন আগেও জানতো না দু’দিন পর তার জীবনটা হুট করে ঘুরে যাবে। অহনার বাবা এখন পর্যন্ত মেয়ের কাছে বিয়ে নিয়ে কিছু জানতে চান নি। মেয়ে রাজি কি রাজি না তাও না। এই বিষয়টা অহনার প্রচন্ড খারাপ লেগেছে একটা বার তাকে জিজ্ঞেস করা যেত না বলা যেত না, ‘অহনা মা তুই কি এই বিয়েতে রাজি, আহিয়ানকে কি তোর পছন্দ হয়েছে?’
কিন্তু না এসব কিছুই কেউ তাকে জিজ্ঞেস করে নি। যেই শুনেছে ছেলেটা ইঞ্জিনিয়ার ব্যাস ওমনি ধরে বেঁধে বিয়ে দেওয়া হচ্ছে। আকাশ সমান অভিমান জন্মালো অহনার তার বাবার ওপর।
অহনা তার হাতের আংটিটা আবার পড়ে নিল। শাশুড়ী মা পই পই করে বলে গেছেন সবসময় আংটিটা পড়ে থাকতে। অহনা দীর্ঘ শ্বাস ফেললো।’
এমন সময় তার দিকে দৌড়ে আসলো তার স্কুল পড়ুয়া বোন নীলা। ও ক্লাস সেভেনে পড়ে। বয়স কম হলেও একটু চঞ্চল প্রকৃতির। নীলা দৌড়ে এসে তার আপুর পাশে বসে বললো,
‘ আপু জানিস কারা আসবে তোর বিয়েতে?’
বিরক্তির চরম পর্যায়ে চলে গেল অহনা। মুখ কালো করেই বললো,
‘ না কারা আসবে?’
‘ ওই যে বাবার ছোট বেলার বন্ধু আছে না আফজাল হোসেন তারা আসবে।’
‘ তো এতে এতো হুল্লোড় করার মতো কি আছে?’
‘ আরে আপু তুই বুঝতে পারছিস না বাবার আমেরিকা থাকায় বন্ধু আসবে সঙ্গে তাদের ছেলে নীলয় ভাইয়াও।’
‘নীলয়’ এই নামটা যেন এর আগেও বহুবার শুনেছে অহনা। অহনা নীলয়কে চেনে অবশ্য চেনে বলতে ছোট বেলায় দেখেছিল কখনো কথা বলে নি। ছোট বেলা থেকেই ছেলেদের খানিকটা ভয় পেত অহনা। এখন অবশ্য ওতোটা পায় না। নীলয়কে ছোট বেলায় দেখলেও তার কিছু মনে নেই। নীলয়ের চেহারা বা তার সাথে জড়ানো কোনো স্মৃতি। অহনার বুকটা হুট করেই কেন যেন কেঁপে উঠলো। অসস্থি লাগলো। তবে নিজেকে সে সামলে নিয় বললো,
‘ আসলে আসবে এতে এত নাচানাচির কি আছে?’
নীলা কিছু বললো না। চুপ করে রইলো। বললো,
‘ তোর কি মন খারাপ আপু?’
হকচকিয়ে উঠলো অহনা। নীলার দিকে তাকিয়ে বললো,
‘ মন খারাপ হবে কেন অদ্ভুত কথা বলিস না তো যা নিচে যা।’
নীলা শুনলো আর না দাঁড়িয়ে চলে গেল নিচে। সে বুঝেছে তার আপুর মনটা আজ খারাপ।’
অহনা চুপচাপ বসে আছে। মুখ দিয়ে খুবই স্বল্প আওয়াজে বললো,
‘ নীলয় আপনায় কি চিনি আমি হয়তো চিনি হয়তো না।’
অহনার ফোন বাজলো। ফোনটা তার পাশেই ছিল উপরে আহিয়ান নামটা দেখলো। কিন্তু অহনা ফোনটা তুললো না। এই মুহূর্তে তার কথা বলতে ভালো লাগছে না। ফোনটা কেটে গেল আবার বেজে উঠলো অহনা এবার আর চুপ রইলো না। তার মন খারাপ এতে তো আর এই ছেলেটার কোনো দোষ নেই। অহনা ফোনটা তুলে সালাম দিয়ে বললো,
‘ জি বলুন।’
#চলবে….
[ভুল-ত্রুটি ক্ষমার সাপেক্ষ। আর গল্প কেমন লাগলো অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবে]
#TanjiL_Mim♥️