#রঙীন ফানুস
#পর্ব-০৬
#আফরিন ইভা
—–“পরী লজ্জা পেয়ে মুখ ঢেকে ফেললো।
রাজ আরো এগিয়ে এলো,একদম পরীর কাছাকাছি।”
“পরীর চুলের মিষ্টি সুভাসে রাজের অনূভুতি গুলো আজ ভীষণ টানছে পরী কে কাছে পেতে , এ-তো এতো টানছে ভ্রমরের ফুলের মতো।
রাজ পরী কে কাছে টেনে চুলের সুভাসে নাক ডুবিয়ে দিলো।”
“পরীও আজ সব তুচ্ছ করে রাজের কাছাকাছি চলে যাচ্ছে।কোনো বাঁধা যেনো পরী কে আজ ছুঁতে পারবে না।”
“আকস্মিক ভাবে রাজের মাথায় একটা কথায় ঘূর্ণনের ন্যায় পাদুর্ভাব ঘটলো।
আর তা হলো রাজ যে ওয়াদা বদ্ধ।
রাজ কথা দিয়েছিলো পরী কে।
রাজ পরী কে ছেড়ে দিয়ে হাত মুষ্টিবদ্ধ করে ওয়ালের সাথে নিজের হাত সজোরে বারি মারলো।”
“মূহুর্তেই রাজের হাত থেকে রক্ত বের হতে লাগলো।”
“রক্ত দেখে পরী ভীষণ ভয় পেয়ে যায়।
ঘটনা আকস্মিক হওয়াতে পরীর মাথায় যেনো কিছুই ঢুকছে না।
পরী দ্রুত দৌড়ে রাজের কাছাকাছি চলে আসলো। নিজের শাড়ির আঁচল ছিঁড়ে রাজের হাত বেঁধে দিচ্ছে আর কাঁদছে।”
“রাজ নেশা ভরা চাহনিতে তাকিয়ে আছে পরীর মুখপানে।
এ মুখপানে আছে শুধু পবিত্রতা।
রাজ মনে মনে মাশাআল্লাহ বলে, নিজেকে নিজে বললো, পরী আমি চাইলেও যে তোমার থেকে দূরে থাকতে পারি না কেনো বলতে পারো?
তুমি যে আমার অকালে ঝড়ে যাওয়া ফুল।
যে ফুল পেয়েও সুবাস নিতে পারছি না আমি।
তুমি হয়তো দেবতার পূজোর পবিত্র ফুল। যাকে ছুঁয়ে দিতে বারণ।
তুমি কাছাকাছি থাকলে নিজেকে যে আর পারি না ধরে রাখতে। ভুলটা কোথায় জানি না, আর জানার বৃথা চেষ্টাও করবো না।”
“হাতে কাপড় বাঁধা প্রায় শেষ, কিন্তু পরীর চোখের পানির শেষ নেই।
দু’ফোটা চোখের জল অনিচ্ছায় রাজের হাতে পড়ে গেলো।”
“চোখের পানির স্পর্শে রাজ কেঁপে উঠলো।”
“পরীর মুখ টা দেখে রাজের ভীষণ কষ্ট হচ্ছে।
রাজ পরীর চোখের পানিগুলো শীতল স্পর্শে মুছে দিয়ে কপালে আলতো করে চুমু খেলো। ”
.
.
.
“এই পাগলি বউ কাঁদছো কেনো?
আমার পরীর চোখে কী কষ্ট মানায়।
এই মায়াবী হরিণী চোখের প্রেমে আমি যে অনেক আগেই নিজেকে হারিয়েছি, যার কেশে আমার পুরো পৃথিবীর সৌরভ। রাজ বুকের বাঁপাশে ইশারা করে বললো,আমার পরী কে যে শুধু এখানেই মানায়।
আমি তো তোমায় কথা দিয়েছিলাম তবুও কেনো ভুল করতে গিয়েছিলাম। বাঁধা দাওনি কেনো তুমি ?
“রাজ আমিও মানতে পারছিনা আপনার কষ্ট। আপনার প্রেমে দগ্ধ আমি। আপনার
প্রেমের সিন্ধু পানে আমায় যে ভীষণ টানে।
ঝাঁপ দিয়ে মরে যেতে চাই।
এ বিরহে পোড়ার চেয়ে বিষ পানে মরে যেতে চাই।
তবুও পূর্ণতা পাবে আমার প্রেম।
তবুও বলতে পারবো কারো প্রেমের বিরহে আমি মৃত্যুর অমৃত স্বাদ গ্রহণ করেছি আজ। কথাগুলো মনে মনে বললেও রাজের কথা এড়িয়ে যেতে বললো,চলুন আপনার বিশ্রামের দরকার।”
“রাজ কথা না বাড়িয়ে বেডে গিয়ে শুয়ে পড়লো।”
“পরী আলতো করে মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে রাজের।পরীর ছোঁয়া পেয়ে রাজের ভীষণ ভালো লাগছে।
হাত কেটেও ভীষণ খুশি রাজ তাঁর কারণ হলো, হাত কাঁটার কারণেই পরীর এটুকু ভালোবাসা পাচ্ছে।
নয়তো পরী দূরে দূরেই থাকতো।”
“রাজ পরীর হাত টা কাছে টেনে চুমুতে ভরিয়ে দিলো।”
“রাজ পরীর হাত টা বুকে নিয়ে ঘুমিয়ে পড়লো।”
” এদিকে পরী বসে বসে রাজকে দেখছে।
রাজ গেঞ্জি গায়ে শুভ্র চাদরে নিজেকে মুড়িয়ে শুয়ে আছে।”
“যেনো কোনো মানব নয় বেহেশত থেকে কোনো নূর এসে পুরো ঘর আলোকীয় করে রেখেছে। যাকে প্রেমিক হৃদয় ছুঁয়ে দিতে শত বাহানা খুঁজে।
কপাল খানা ছুঁয়ে দিতে ইচ্ছে করছে পরীর, তবুও কি যেনো আটকাচ্ছে তাঁকে।
পরী হাত বাড়িয়েও হাত সরিয়ে নিচ্ছে।
শেষ পর্যন্ত শত বাঁধা অতিক্রম করে পরী রাজের কপালে হাত ছুঁইয়ে দিলো।
আহা কপাল খানা ছুঁয়ে দিতে পেরে যেনো এক আকাশ স্বপ্ন ছুঁয়ে দেওয়ার অনুভূতি হচ্ছে পরীর। পরীর নজর হাত টার দিকে গেলো।
হু হু করে উঠলো পরীর বুকখানা।
মরুভূমির তপ্ত বালুকার ন্যায় যেনো উত্যপ্ত বুক খানা আজ। কষ্টে যেনো চৌচির হয়ে ফেটে যাচ্ছে।
রাজের মতো এতো এতো ভালো মানুষ পরী আর দেখেনি। এর আগেও তো পরীর বিয়ে হয়েছিলো,কিন্তু ঐ মানুষ টা ছিলো নরপশুর চেয়েও অধম।
আর রাজ পরীকে পেয়েও না পাওয়ার বেদনা নিয়ে নিজেকে কষ্ট দিচ্ছে কিন্তু আমাকে সামান্যতম কষ্টের আঁচ পরী কে লাগতে দিচ্ছে না।”
“এমন মানুষ এই কোনঠাসা জগতে আর বিদ্যমান আছে কি-না পরীর জানা নেই।
পরীর ইচ্ছে করছে খুব কাঁদতে, কেঁদে কেঁদে বিধাতার কাছে চরম আকুতি জানাতে। বিধাতা যেনো রাজের মতো মানুষকে আর কষ্ট না দেয়।
বিধাতা যেনো কিছু একটা করার শক্তি দেন পরী কে। ”
“পরী দরদরিয়ে ঘেমে একাকার।”
“পরী ওয়াশরুমে ফ্রেশ হতে গেলো।”
“পরী আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে চুলগুলো গুছাতে ব্যাস্ত।”
“থাক না তিলোত্তমা তোমার অগোছালো চুলগুলো।”
“যার খোলা হাওয়ায় আমার এ প্রাণ নাহি পরাণে। ”
‘তোমার কালো কেশের মেঘ ডুবিতে দেখিছি মোর সর্বনাশ। ”
“ওঁদের বেঁধে রেখে বাঁধা দিও না ছেড়ে দাও পরী।”
“কথাগুলো পরীর কানে যাওয়ার সাথে সাথে পরী পেছনে ফিরে তাকিয়ে দেখলো রাজ স্থির চাহনিতে তাকিয়ে তাকিয়ে কথাগুলো বলছে। যার প্রতিটি চরণে আছে অদ্ভুত মাদকতা।
যে কেউ রাজি এ মাদকতায় বার-বার আসক্ত হতে। ”
“পরী গুটি গুটি পায়ে হেঁটে রাজের কাছে এসে বসলো। অধীর অস্থিরতায় রাজ কে জিজ্ঞেস করলো, ” হাতের ব্যাথাটা কমেছে কি-না ? ” নিশ্চয় অনেক ব্যাথা পেয়েছেন?”
“রাজ মুখে মৃদু হাসি ঝুলিয়ে উত্তর দিলো,
—উঁহু
কে বললো আমার হাতে ব্যাথা, আমার তো এ প্রাণে ব্যাথা।
আর শুনো রাজ চৌধুরীর মতো স্ট্রংগার বডিতে ব্যাথা লাগলেও ও কিছু নয়, এমনিতেই সেরে যাবে।”
“পরী অভিমানী স্বরে বললো, ” তা তো খুব ভালোই দেখছি, কতটা সার্থপর আপনি।
নির্দয়ভাবে কিভাবে পারলেন এতো টা আঘাত করতে একটুও কী বিবেকে বাঁধে নি। আমার কথা না-ই বা ভাবলেন, আপনার মা – বাবার মুখ টা অন্তত একটু হলেও ভাবতেন।তাদের অসহায় মুখগুলোর কথা একটু হলেও মনে করতেন। উনারা যদি জানতে পারে ব্যাপারটা তাহলে কতো টা কষ্ট পাবে ভেবেছেন?
“পরী আমি নিজেকে কষ্ট দিতে পারবো,কিন্তু কী জানো চাইলেও পারবো না তোমাকে আঘাত করতে।”
মা-বাবা কষ্ট পাবে, তা তুমি পাচ্ছোনা বুঝি?
“রাজের কথায় পরীর মুখ টা অজান্তেই কালো হয়ে ভিড়ে গেলো।”
“পরী কি বলবে বুঝতে পারছে না। ”
“রাজ পরীর মুখের কালো আভাস দেখে মুখে মিষ্টি হাসি ঝুলিয়ে বলতে লাগলো,” এতো টা চিন্তা করতে হবে না আমি বেশ ভালো আছি।”
“রাজ পরীর বাবা-র কাছ থেকে বিদায় নিয়ে পরীর হাত ধরে গাড়িতে নিয়ে বসালো।এবার আর রাফি কে সেই সুযোগ টা দেওয়া হয় নি, রাজ কোনঠাসা ভাব নিয়েই পরী কে নিজের সাথে বসালো।”
“ড্রাইভিং করার সময় রাফি একবার জিজ্ঞেস করেছিল, রাজের হাতের এই অবস্থা কেনো, রাজ রাফি কে জবাব দিলো,ওয়াশরুমে পরে গিয়ে ব্যাথা পেয়েছে।”
“রাজ এক হাতে গাড়ি চালাচ্ছে আরেক হাতে পরীর হাত ধরে আছে।
যেনো এ বন্ধন কখনো ছাড়ার নয়,যেনো হাজার বছরের পুরনো ছোঁয়া।
রাজ পরীর হাত এমনভাবেই ধরে রেখেছে যেনো রাজ ছেড়ে দিলেই পরী উড়ে যাবে।”
“কিছুক্ষণের মধ্যে সবাই বাসায় পৌঁছে গেলো।”
“রাফি নিজের রুমে চলে গেলো।”
“রাজ মায়ের কাছে জবাব দিতে দিতে শেষ। সামান্য একটু হাত কেটেছে তা নিয়ে রাজের মায়ের চিন্তার শেষ নেই।
রাজের মায়ের অস্থিরতা দেখে পরীরও ভীষণ খারাপ লাগছে।
এক জন্য পরী নিজেই নিজেকে দোষারপ করছে।”
“রাজ মায়ের কষ্ট কমাতে মাকে জড়িয়ে ধরে বললো,” মম তুমি যে কী বুঝি না। ”
সামান্য একটু ব্যাথা পেয়েছি, আর তুমি এমন করছো যেনো বিশাল ব্যাথা পেয়েছি। ”
“ওহ্ —
এখন তো তুই এগুলোই বলবি, যখন ছেলেমেয়ের বাবা হবি তখন বুঝবি,সন্তানের ব্যাথা হলে মায়ের কলিজায় কতটা ব্যাথা লাগে।
রাজের মা পরী কে ডেকে রাজ কে রুমে
নিয়ে যেতে বললো।”
“পরী রাজ কে নিয়ে উপরে গেলো।”
.
.
.
“রাজ পরী কে ইশারায় ডাকলো।
পরী কাছে গিয়ে বসলো।
রাজ পরীর কোমরে জড়িয়ে ধরে আদুরে গলায় বলতে লাগলো,পরী মম কী বলবো তা কি সত্যি?”
“পরী কিছু না বোঝার ভান ধরে বললো,”কী?”
“রাজ চোখ টিপে বললো এতো কিছু বুঝো মমের কথাটা বুঝোনা?
ঠিক আছে বুঝতে হবে না এখন।
তোমার সময় হলেই সব বুঝতে পারবে।
ফ্রেশ হয়ে আসো, আমি একটু মমের কাছে যাই।
বুঝোই তো মম অনেক অভিমান করে আছে।
কী ব্যাপার যাচ্ছো না কেনো?”
“পরী লজ্জা ভরা কন্ঠে বলতে লাগলো,যাবো কিভাবে আগে তো ছাড়েন।”
“ওহ্ সরি
বলে রাজ পরীকে ছেড়ে দিলো।
তুমি এতোটাই মায়াবতী, তোমাকে একবার কাছে ফেলে ছাড়তে মন চায় না আর। এই বলে রাজ উঠে মায়ের রুমে চলে গেলো।”
“আর এদিকে পরী রাজের স্পর্শ করা জায়গাগুলো স্পর্শ করছে আর কেঁপে উঠছে। রাজের স্পর্শে পরীর পুরো শরীর শিহরিত, যেনো হৃদয়ে শীতলতা ছুঁয়ে দিচ্ছে । ”
—“পরী চোখ বন্ধ দাঁড়িয়ে আছে ।”
“পরীর গাঢ়ে কেউ এসে ডুবে যাচ্ছে।
শরীর যেনো পাথরের মতো ভারী হতে লাগলো। চোখ খুলতে গিয়েও যেনো খুলতে পারছে না। কোন এক বাঁধা যেনো পরী কে চেপে ধরে আছে।”
চলবে—-