রঙীন ফানুস পর্ব-০৫

0
1779

#রঙীন ফানুস
#পর্ব-০৫
#আফরিন ইভা

“রাজ পরীর দিকে তাকিয়ে মনে মনে কিছু একটা ভাবলো।”
“সামনে যে আছে সে আর কেউ নয় রাজের কাজিন রাফি।”
“রাফি এমন উদ্ভট পোশাক পরেছে যে, পোশাকের জায়গায় জায়গায় ছেঁড়া।”

“রাফির পোশাক দেখে, পরী মুখ চেপে চেপে হাসছে। ”

“রাজ নিজের হাসি থামিয়ে রাফি কে বললো,কিরে রাফি তোর প্যান্ট,গেঞ্জিগুলো কী তেলাপোকা কেটেছে, না-কি তোর গার্লফ্রেন্ড রাগ করে ছিঁড়ে
দিয়েছে? ”

“রাজের কথায় রাফি যেনো খুশি হয়ে গেলো।যেনো প্রশংসার ছোড়াছুড়ি করেছে কেউ।
রাফি রাজের কাছাকাছি এসে কানে কানে বললো,কেনো কি হয়েছে আমাকে বুঝি খুব স্মার্ট লাগছে? ”

“রাজ রাফির কথায় হালকা হাসি ঝুলিয়ে কাঁধে হাত রেখে বললো,”তোকে এ-তো এতো স্মার্ট লাগছে যে, কী বলবো, মেয়েরা তোকে দেখে লাফিয়ে লাফিয়ে তোর কাঁধে উঠে যাবে বুঝলি তো? ”

“পরী দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দু’জনের দুষ্টুমিগুলো
দেখছে আর হাসছে। ”

“রাফি মুখে হাসি ঝুলিয়ে রাজকে বললো,”রাজ আমি তোদের সাথে ঘুরতে যাবো, প্লিজ না করিস না? ”

“মূহুর্তে রাজের মুখ কালো হয়ে মেঘে ঢেকে গেলো।
রাজ ভেবেছিলো এই স্নিগ্ধ রৌদ্রতপ্ত দুপুরটা দু’জনে হাতে হাত রেখে একটু হাঁটবে,প্রকৃতির প্রেমে মুগ্ধ হয়ে চোখে চোখ রেখে নয়ন ভরে দেখবে, একে অপরের অভিমান গুলো রঙিন আকাশে উড়িয়ে দেবে। রাফির জন্য এগুলো কিছুই করা হবে না জেনে খুব খুব মন খারাপ হলো রাজের।”

“পরী রাজের উদাসীন মুখ দেখে কিছু একটা বুঝতে পারে।
রাজকে শান্তনা দিতে হাতে হাত রাখলো।
পরীর স্পর্শ পেয়ে মূহুর্তেই রাজের মুখে হাসির খেলা খেলে গেলো।”

“পরী রাফি কে উদ্দেশ্য করে বললো,”ওকে নো প্রবলেম চলুন।”

“রাজ গাড়ির সামনে গিয়ে পরী কে উদ্দেশ্য করে সামনের দরজা খুলে দিলো।
রাফি নির্লজ্জের মতো তড়িঘড়ি করে রাজের পাশের সিটে বসে পরলো।
রাজ, রাফি কে কী বলবে বুঝতে পারছেনা।

” পরী অবুঝের মতো দাঁড়িয়েই রইলো।”

“রাজ রাফির দিকে তাকিয়ে কিছু একটা বলতে যাবে,তাঁর আগেই রাফি বলে ফেললো, বুঝলি রাজ আমার না সামনের সিটে বসতে খুব ভালো লাগে, তা তো তুই আগেই জানিস? রাফি মোবাইল টিপতে টিপতে বাহিরের দিকে তাকিয়ে পরী কে বললো,”আরে ভাবি আমি তো ভুলেই গিয়েছি,আপনাকে রেখে আমি যে রাজের পাশে বসে পরলাম। ”

“পরী রাজ কে কিছু একটা ইশারা দিয়ে বললো,” ইট’স ওকে!
নো প্রবলেম।”
“আপনি সামনে বসুন আমি পেছনে বসবো।
তাছাড়া সামনে বসতে আমার কেমন কেমন যেনো লাগে।”

“রাজ বাহিরে বের হয়ে গাড়ির পেছনের দরজা টা খুলে দিলো।
রাজের তো ইচ্ছে করছে, রাফি কে মুখের উপর বলে দিতে পেছনের সিটে যেতে।
কিন্তু তা পারছেনা বলতে।”

“পরী রাজের দিকে তাকিয়ে দেখলো, রাগে রাজের মুখ লাল টমেটো হয়ে আছে।
এখন কিছু বললেই ফুঁ দিয়ে যে কাউকে উড়িয়ে দেবে।
পরী নিশ্চুপ হয়ে গাড়িতে গিয়ে বসলো।”

“রাজ ড্রাইভিং সিটে বসে ড্রাইভ করছে।
আর এদিকে রাফি কানে হেডফোন গুঁজে গান শুনছে।”

“পরী জানালার গ্লাস দিয়ে বাহিরে তাকালো।
বাহিরে কনকনে বাতাস, দুপুরের তপ্ত রোদ চারপাশের প্রকৃতিকে যেনো আলোকময় করে রেখেছে। সবকিছু তে হাসি-হাসি রৌদ্র ছোঁয়া, যেনো একে অপরের সাথে নিবিড় সম্পর্ক। দূর থেকে বাহারি ফুলের সুভাষ এসে পরীর মনকে দোলা দিচ্ছে।
পরী পারলে এখুনি ডানা মেলে উড়ে যেতো।
পরী মাথাটা হেলান দিয়ে জানালার সাথে রাখলো।
রাখার সাথে সাথে রাজ গাড়ি থামিয়ে পরী বলে ডেকে উঠলো।”

“গাড়ি সজোরে থামাতে নির্বিকার দৃষ্টিতে পরী সামনে তাকালো মাথা হেলান দেওয়া অবস্থায়।”

“রাজ দরজা খুলে পরীর পাশে এসে জড়িয়ে ধরলো। ”

“রাজের এভাবে জড়িয়ে ধরা দেখে পরী আর নিজের মধ্যে নেই। ”

“রাজ পরী কে জড়িয়ে ধরে বলতে লাগলো, ” পরী এতোক্ষণ কী হতে পারতো সেটা কী জানো?”

“রাজের কথা শুনে পরী যেনো আকাশ থেকে পরলো।”

“রাজ ভয়ার্ত কন্ঠে বলতে শুরু করলো,ভাবতে পারো তুমি কি হতে পারতো এতোক্ষণ,?
আমি গাড়ি না থামালে অনেক কিছুই হয়ে যেতো।”

“পরী রাজের কোনো কথায় বুঝতে পারছেনা,রাজ কেনো বলছে এগুলো পরী প্রথম থেকে ভেবেই যাচ্ছে। কিন্তু যে ভাবনার নেই কোনো অন্ত । ”

“জানো পরী আমি যখন ড্রাইভ করছিলাম, তখন তোমার মাথাটা জানালায় হেলান দেওয়া ছিলো। দূর থেকে বিশাল একটা ট্রাক দ্রুত এগিয়ে আসতে লাগলো, আমি দেখে দ্রুত গাড়ি টাকে চেপে সরিয়ে আনলাম।”

“পরী বুঝতে পারলো রাজের অনুভূতিটা কি জানান দিচ্ছে, যা অত্যন্ত পবিত্র। ভয়ে রাজের বুকটা এখনো ধুকপুক করছে, যা রাজের বুকের স্পর্শেই বুঝা যাচ্ছে। পরীর ভীষণ কষ্ট হচ্ছে এটা জেনে যে, রাজ পরী কে মন থেকে ভীষণ ভালোবেসে ফেলেছে।
এ ভালোবাসার পরিসমাপ্তি যে, অত্যন্ত ভয়াবহ
তা পরী খুব ভালোভাবেই বুঝতে পারছে।
কিন্তু কষ্ট হচ্ছে এটা জেনে, রাজ কেনো এতটা ভালোবেসে ফেললো?”

“পরী ভাবতে লাগলো, বিয়ে হয়েছে কয়েকদিন হতে চললো।
এই কয়েকদিনে তো রাজ পরী কে এতটা গভীর ভালোবাসতে পারে না।
তাহলে?
এর মধ্যেও কী কোনো কিন্তু আছে?
না পরী আর ভাবতে পারছে না। ”

“এদিকে রাফি, নির্বিকার দর্শক হয়ে সব দেখছে।
রাফি বললো,রাজ তুই এবার ভাবি কে ছাড়,নয়তো যে কোনো সময় নিঃশ্বাস আটকে যাবে।
ভাবি হয়তো ভীষণ ভয় পেয়েছে। একটু রিলাক্স থাকতে দে।”

“রাজ পরী কে ছেড়ে পানি পান করালো।
পরীরও বড্ড তৃষ্ণা ছিলো। খুব তৃপ্তি করে পানি টা পান করলো।
যা গলা ও মনকে প্রশান্তির দোলা দিলো।”

“রাজ, রাফি কে লোকেশান বলে দিয়ে বললো , রাফি তুই ড্রাইভিং কর আমি পরীর পাশে আছি।”

“রাফি আর কোনো উপায় না পেয়ে ড্রাইভিং করতে লাগলো।”

“এদিকে রাজ তো ঘেমে একাকার।
গাড়িতে এসি চলছে, তবুও ভীষণ ঘামছে রাজ।”

“রাজের অস্হিরতা দেখে পরী নিজের শাড়ির আঁচল দিয়ে রাজের মুখ মুছিয়ে দিলো।
যেনো গভীর ভালোবসার পরশের ছোঁয়া পেয়েছে রাজের হৃদয়। ”

“রাজ পরী কে গভীর দৃষ্টিতে দেখতে ব্যাস্ত।
এদিকে রাফি গাড়ির সামনের আয়নাতে সবকিছু দেখছে।”

“রাজ পরীর হাতের আঙুলে নিজের হাতের আঙুল গুলো আলতো করে ছোঁয়ালো।
পরী এক ধ্যানে রাজের দিকে তাকিয়ে রইলো।আকাশী শার্টের উপর ধূসর কটি পরা রাজকে কোনো এক অজানা রাজ্যের রাজপুত্রের মতো লাগছে। বাতাসে চুলগুলো উড়ো উড়ো করছে,মিথ্যে বাহানায় চুলগুলো বারবার কপাল ছুঁয়ে দিচ্ছে। ফুটন্ত গোলাপের মতো রক্তিম ঠোঁটগুলো বারবার জিহ্বা দিয়ে ভিজিয়ে নিচ্ছে। ঠোঁটের উপরের কালো তিল টা যেনো পরী কে বার-বার ইশারায় কিছু বলছে। পরীর ইচ্ছে করছে রাজের কালো তিল টায় একটুখানি স্পর্শ লাগাতে।”

“পরীর নেশা ভরা চাহনি দেখে রাজ ইশারায় জানতে চাইলো কী?

” পরী মিষ্টি হাসি দিয়ে না’বোধক মাথা নাড়লো। ”

“রাফি সব কিছুই পর্যবেক্ষণ করছে কিন্তু কিছুই বলছেনা।”
কারণ রাফি বুঝতে পেরেছে যে, এ দু’জনের মাঝে এখন এন্ট্রি নেয়াটা ঠিক নয়।তাই মন স্থির করেই গাড়ি চালাতে লাগলো।

“কিছুক্ষণের মধ্যে সবাই পরীর বাবার বাসায় পৌঁছে গেলো।
দুপুরে লাঞ্চ সেরে একটু রেস্ট নিয়ে বাসায় ফিরবে বলে ঠিক করলো।
এদিকে পরী তো ভীষণ ব্যাস্ত, রাজকে থাকতে দেবে কোথায়? ”
“রাজের বাসা বিরাট রাজপ্রাসাদ আর এদিকে পরীর বাবার ঘর সামান্য কুঁড়ে ঘরের সামিল।”

“পরী অনেক ভেবে রাজ কে নিজের রুমে নিয়ে গেলো।”

” রাজ পরী কে জিজ্ঞেস করলো, “এটা তোমার রুম?”

“রাজের কথা শুনে পরী ভীষণ ঘামতে লাগলো।”
“ঘেমে একদম একাকার।”

“পরীকে নার্ভাস হতে দেখে রাজ, মিষ্টি হাসি ঝুলিয়ে বললো,” বাহ্ বেশ সাজিয়েছ তো।”
তুমি যেমন রূপবতী তেমনি গুনবতীও।
রাজ পরীর হাত ধরে খাটে বসালো।
খাটে বসার সাথে সাথে খাট টা খটাখট করে শব্দ হলো।”
“পরী ভয় পেয়ে দাঁড়িয়ে গেলো।”

“রাজ আবার টেনে বসালো।”

“রাজ পরীর কানে কানে দুষ্টু মিষ্টি ভাব নিয়ে বললো,”পরী ভয় পেয়েছো বুঝি?
খাট ভাঙার মতো এমন কিছুই করবো না ভয় পেয়ো না পরী। ”

“রাজের দুষ্টু কথায় পরী ঢোক গিললো।”

“পরীর ভয়ার্ত মুখ খানা দেখে রাজ হাহাহাহা করে হেঁসে ফেললো।
রাজের হাসি যেনো আজ থামছেই না।”

“রাজের হাসিগুলো ঝংকার দিয়ে যেনো নৃত্য করছে আজ।
পরীর মনে বাসন্তী ফুলের সমাহার আজ।
বাসন্তী ফুলের সৌরভে মন যেনো নেচে বেড়াচ্ছে।”

“রাজ পরীর কানে কানে মুখ বাড়িয়ে নিলো।”

“রাজ কাছে আসাতে পরী ভীষণ লজ্জা পেলো।”

“রাজ অস্ফুটে স্বরে পরীর কাঁধে হাত রেখে বললো, “ভয় পেলে তোমাকে কেমন লাগে জানো পরী?”
“একদম একদম লাজুক পরী।”

#চলবে—-