?শুধু তোমায় ঘিরে?
#মেঘা আফরোজ…..?
#পর্ব-১৪…..?
?
শপিং মলে তিশার জন্য অপেক্ষা করছি ওর আসার কোনো খবর নেই। আয়ান ভাইয়াকে বললাম
..ভাইয়া কোথায় তোমার পিচ্চি আসছে না কেনো?
..একটু আগেও ফোন দিয়েছিলাম বললো আর ৫ মিনিট লাগবে।
পেছন থেকে তিশা বলে উঠলো
..আমি চলে এসেছি মেঘা সরি রে একটু লেট হয়ে গেলো।
..একটু না ম্যাম পুরো ১৫ মিনিট লেট করেছেন আপনি। আয়ান ভাইয়া বললো।
..তাতে কি হয়েছে। তাসিন ভাইয়া আপনি বলুন না একটু লেট হলে কি হয়।
..কিছুই হয় না গো শালিকা এবার চলো আপু অলরেডি শাড়ি দেখা শুরু করে দিয়েছে।
আমি তাসিন আগে আগে হাটছি আর তিশা আয়ান ভাইয়ার মাথা নষ্ট করে ফেলছে হাজারটা কথা বলে। আয়ান ভাইয়া তিশাকে বললো
..তিশা এত কথা তুমি কি করে বলো হ্যা এটা শপিং মল কম কথা বলো।
..তারমানে আমার কথা বলা আপনি পছন্দ করেন না তাইনা। যান আপনার সাথে আমি আর কথা বলবো না।
..আরে এভাবে বলছো কেনো। এই তিশা আমি তো জাস্ট কম কথা বলতে বলেছি রাগ কেনো করছো।
তিশা মুখ ভেঙ্গিয়ে আগে আগে হাটতে লাগলো। আয়ান ভাইয়া নিজে নিজেই বলতে লাগলো
..এ মেয়ে আসলেই একটা পিচ্চি।
. ?
বিয়ের সব কিছু কেনাকাটা শেষ করে বের হচ্ছিলাম হঠাৎ করেই আবির এসে আমাদের সামনে দাড়ালো। আমি তাসিনের হাতটা চেপে ধরলাম আবিরকে দেখে। আবির হেসে তাসিনকে বললো
..কেমন আছিস তাসিন? শুনলাম বিয়ে করছিস কই আমাকে তো ইনভাইট করলি না।
তাসিনের দিকে তাকালাম উনার চোখ দুটো লাল হয়ে গিয়েছে আমার হাতটা আরো চেপে ধরেছে,উনি যে এ মুহুর্তে নিজের রাগটা কনট্রোল করতে চাইছে বুঝতে পারছি। তাসিন মুখে জোরপূর্বক হাসি ফুটিয়ে বললো
..আমি খুব ভালো আছি। আর আমি যাকে তাকে তো আমার বিয়েতে ইনভাইট করি না।
..তাসিন আমি তোর কলেজ ফ্রেন্ড ছিলাম।
..ফ্রেন্ড কে ফ্রেন্ড! তোর মতো একটা বিশ্বাসঘাতক আমার ফ্রেন্ড হতে পারে না।
আবির নিজের মাথাটা নিচু করে একটু হেসে আমার দিকে তাকিয়ে বললো
..তো মেঘা বিয়েটা তাহলে তাসিনকেই করছো!
তাসিন এবার রেগে গিয়ে কিছু একটা বলতে নিলে আমি উনাকে থামিয়ে বললাম
..চলুন এখান থেকে আপুরা গাড়িতে ওয়েট করছে।
তিশাও বললো
..হ্যা ভাইয়া চলুন।
আয়ান ভাইয়া কিছু বুঝতে না পেরে তিশাকে বললো
..ব্যাপার কি বলোতো কে এই ছেলে?
..আমি আপনাকে পরে সব বলবো। আপনি তাসিন ভাইয়াকে নিয়ে চলুন এখান থেকে।
আমরা তাসিনকে নিয়ে চলে আসলাম সেখান থেকে।
আবির ওখানে দাড়িয়ে একটা শয়তানি হাসি দিয়ে বললো
..তাসিন আমাকে তুই অপমান করলি তাও আবার মেঘার সামনে এটা তো আমি মেনে নিতে পারি না রে দোস্ত। আমিও দেখবো মেঘাকে তুই নিজের করিস কিভাবে। মেঘাকে যে আমার হতে হবে আর সে ব্যবস্থাটাই করবো।
. ?
আপুরা অন্য গাড়িতে গিয়েছে,আর আমরা ৪ জন একটাতে আয়ান ভাইয়া ড্রাইভ করছে তিশা ভাইয়ার পাশে। আমি আর তাসিন পেছনে বসেছি।
তাসিন চুপচাপ বসে আছে,মনে হচ্ছে কিছু ভাবছে। আমি উনার হাতের ওপর হাত রাখলাম উনি তাকালেন আমার দিকে
..আপনি কি কোনো কিছু নিয়ে চিন্তিত?
..আবির হঠাৎ কোথা থেকে আসলো বলোতো মেঘা,ও আবার নতুন করে কিছু করবে নাতো!
..আপনি ওই পাজি লোকটাকে নিয়ে এখনো ভাবছেন!
..চিন্তা হচ্ছে মেঘা আবির একরোখা একটা ছেলে ও যা চায় তা নিজের করেই ছাড়ে আর ও তোমাকে চায় মেঘা ও যদি……
উনাকে থামিয়ে আমি বললাম
..চাইলেই হবে নাকি হুম আপনার থেকে আমাকে আগেও দুরে সরাতে চেয়েছিলো পেরেছে কি। এখনো পারবে না,,,,,আমি শুধু আপনারি থাকবো। আবির যাই করুক না কেনো আমার বিশ্বাসকে ভাঙতে পারবে না।
তাসিন আমাকে এক হাতে জড়িয়ে নিয়ে বললো
..তোমাকে ছাড়া আমি বাঁচতে পারবো না মেঘাপাখি কখনো ছেড়ে যেয়ো না আমাকে।
..কোথায় যাবো আপনাকে ছেড়ে, আমি বাঁচতে পারবো নাকি আপনাকে ছাড়া।
তিশা সামনে থেকে হেসে বললো
..মেঘা আমরা কিন্তু সবটা শুনেছি।
আমি কিছুটা হেসে বললাম
..কি আর শুনেছিস আর আমি যে দেখেছি। তাইনা ভাইয়া?
আয়ান ভাইয়া মুচকি হেসে বললো
..ওইটা তো কিছুই না আরো দেখবি? তিশার দিকে আড় চোখে তাকিয়ে।
তিশা বিরক্তি নিয়ে বলে উঠলো
..আল্লাহ কেনো যে আমাকে এই ভাইবোনের হাতে ফেললে। মেঘা তুই কি আসলেই আমার বেস্টু নাকি শুধু এই বাদরটার বোন বলতো?
আমি বলতে নিলে তাসিন আমাকে থামিয়ে বললো
..তিশা, মেঘা সবার আগে আমার বউ বুঝলে তারপর অন্য কিছু।
আয়ান ভাইয়া তিশাকে বললো
..আমাকে বাদর বলছো তাইনা মনে রেখো পরে পুষিয়ে নিবো। আর শোনো আমার জন্য তোমার উপকারী হয়েছে মেঘ তোমার বেস্টু ছিলো আছে এবং থাকবে। তোমরা জা হতে চলেছো তাহলে তো তোমাদের দুজনেরি উচিৎ আমাকে আর তাসিনকে এক্সট্রা গিফ্ট দেওয়া। কি বলিস তাসিন।
..তুই ঠিক কথা বলেছিস আয়ান কি মেঘা দেবে তো,তিশা তুমিও দেবে তো?
আমরা দুজনে একসাথে বললাম
..বাদরদের জন্য আমরা এক্সট্রা কোনো গিফ্ট রাখি না।
আমাদের কথা শুনে দুজনেই হেসে উঠলো,তাসিন বললো
..আয়ান দেখেছিস এদের ফ্রেন্ডশিপ! ঝগড়াও করবে আবার একে ওপরের সাপোর্ট ও করবে।
তিশা বললো
..অফকোর্স করবো আমাদের ফ্রেন্ডশিপ সব থেকে আগে তাইনা মেঘা।
..হুমম একদম ঠিক বলেছিস তিশা।
আয়ান ভাইয়া মুখটা গোমড়া করে বললো
..তাসিনরে এ মেয়ে জাতিকে বোঝা বড়ই কষ্টকর।
. ?
বিয়ের আর মাত্র ৪ দিন বাকী সবই ঠিকঠাক চলছিলো। সাড়াদিন ভালো কাটলেও রাতে কেমন যেনো একটা ভয় কাজ করে আর সে ভয়টা আবিরকে নিয়ে। কিন্তু সে কথা তাসিনকে কখনো বুঝতে দেই না উনি আরো বেশি চিন্তা করবে।
রাতের খাবার খেয়ে রুমে এসে দেখলাম ফোন বাজছে,হাতে নিয়ে তাসিনের নাম্বার দেখে ফোনটা ধরলাম। আমি বলার আগেই তাসিন বলে উঠলো
..মেঘাপাখি কোথায় ছিলে তুমি?কখন থেকে ফোন দিচ্ছি।
..রাতের খাবার খেয়ে মাত্র রুমে আসলাম এসেই আপনার ফোন ধরলাম। কি করছেন?
..কি আর করবো অপেক্ষার প্রহর গুনছি।
..কিসের অপেক্ষা?
..তোমাকে পাবার অপেক্ষা। দিনগুলো যাচ্ছে না মনে হচ্ছে।
..কিন্তু আমার তো মনে হচ্ছে দিনগুলো ঝড়ের গতিতে ছুটছে।
তাসিনের সাথে আরো কিছুক্ষণ কথা বললাম। তারপর তিশাকে ফোন দিয়ে ওর সাথে কথা বলে ঘুমিয়ে পড়লাম।
. ?
ঘুমের মধ্যেই অনুভব করলাম কারো ঠান্ডা হাত আমার মুখে স্পর্শ করছে,এ ছোয়াটা আমার পরিচিত নয়। ঘুম ভেঙে গেলো আমার ধপ করে চোখ খুললাম। চোখ খুলেই দেখলাম এক জোড়া চোখ আমার দিকে গভীর ভাবে চেয়ে আছে তবে অন্ধকার থাকায় লোকটাকে চিনতে পারছি না। গলাটা ধরে আসছিলো আমার খুব ভয় করছিলো। কোনো ভাবে ভয়টা কাটিয়ে চিৎকার দিতে যাবো ওমনি লোকটি একটা রুমাল দিয়ে আমার মুখ চেপে ধরলো। আমি আর কিছু বলতে পারলাম না আস্তে আস্তে চোখ জোড়া বন্ধ হয়ে গেলো আমার।
যখন চোখ খুলে তাকালাম নিজেকে ছোট একটা ঘরে চেয়ারে হাত বাধা মুখে কাপর বাধা অবস্থায় আবিষ্কার করলাম নিজেকে। ঘরে তেমন কিছুই নেই একপাশে একটা টেবিল রাখা সামনে চেয়ার,সে চেয়ারে আমাকে বেধে রাখা হয়েছে। চারিপাশটাতে চোখ বুলিয়ে কাউকে দেখতে পাচ্ছি না। খুব ভয় করছিলো আমার গলাটা শুকিয়ে আসছিলো। কে আমাকে এখানে এনেছে এ কোথায় আছি আমি? এখন কয়টা বাজে তাও বুঝতে পারছি না। মা বাবার কথা খুব মনে পড়ছে। তাসিনের কথা ভেবে বুকটা কেপে উঠলো উনি হয়তো পাগল হয়ে যাবে আমাকে না পেয়ে। আমার গাল বেয়ে চোখের পানি গড়িয়ে পড়ছে।
হঠাৎ দরজা খোলার আওয়াজ পেয়ে সেদিকে তাকালাম একটা লোক রুমে ঢুকলো হাতে কিছু খাবার নিয়ে একে আগে কখনো দেখিনি। লোকটি টেবিলে খাবার রেখে আমার হাতের বাধন খুলে দিলো তারপর মুখের কাপরটা খুলে দিয়ে বললো
..ম্যাম খাবার টা খেয়ে নিন।
..কে আপনি আমাকে কোথায় নিয়ে এসেছেন? জোরেই বললাম।
..আমি কে আর আপনি কোথায় আছেন সেটা না জানলেও চলবে আগে খাবারটা খেয়ে নিন না হলে স্যার আমাকে আস্তো রাখবে না।
..স্যার! কে আপনার স্যার?
..এত কিছু বলতে পারবো না ম্যাম খেয়ে নিন আপনি।
..খাবো না আমি, কে আপনার স্যার আমার সামনে আসতে বলুন তাকে।
লোকটি আমার কথার কোনো উত্তর না দিয়ে পকেট থেকে ফোন বের করে কাউকে ফোন দিলো
..স্যার,ম্যাম বলছে খাবে না আপনাকে সামনে আসতে বলছে।
…………
..ওকে স্যার।
লোকটি আমাকে কিছু না বলে বেড়িয়ে গেলো বাইরে থেকে দরজাটা আটকে দিয়ে গেলো।
আমি কি করবো কিছুই মাথায় আসছে না টেবিলে রাখা খাবারটা ফেলে দিলাম নিচে। ঘরটা ছিলো টিনের চালের চারপাশে ইটের দেয়াল তবে শুধু দরজা ছাড়া কোনো জায়গাতে ফাকা নেই। এখন দিন নাকি রাত বুঝারো উপায় নেই। মনে হচ্ছে জায়গাটা খুব নির্জন পাখির ডাক ছাড়া কিছুই শুনতে পাচ্ছি না। হয়তো চিৎকার করলেও কোনো লাভ হবে না। ঘরের এদিক ওদিকে ছুটোছুটি করে বের হওয়ার কোনো পথ পেলাম না,কাঁদতে কাঁদতেই নিচে বসে পড়লাম আমি।
কিছুক্ষণ পর দরজা খোলার আওয়াজ পেয়ে তাকালাম সেদিকে। সামনে দাড়িয়ে থাকা লোকটিকে দেখে চোখ বড় বড় হয়ে গেলো আমার বিষ্ময় কন্ঠে বলে উঠলাম
..আ আপনি এখানে!!!
?
#চলবে. . . ?