#সম্পর্কের_মায়াজাল_২
#ফারজানা_আফরোজ
#পর্ব_২
রাত আটটার দিকে হটাৎ করেই সাধনা লাল শাড়ি গায়ে দিয়ে বধূ সেজে ড্রয়িং রুমের সোফায় বসে আছে। শুভ্রতা আড় চোখে সাধনার কার্যকলাপ দেখছে। সাধনা পুরো ধ্যান ধারণা নিয়ে দরজার দিকে তাকিয়ে আছে মনে হচ্ছে তার স্বামীর জন্য সে অপেক্ষা করছে। মুখে বিরক্ত ভাব নিয়ে শুভ্রতা সাধনার সামনে এসে দাঁড়ালো……
—-” তোর প্রবলেমটা কি বলবি আমায়?”
—” আমি আর প্রবলেম একসাথে কোনোদিন যায় আপু?”
—” বাজে বকবক না করে বল এখন সেজেছিস কেন?”
—” আপু আমার না ভীষণ বিয়ে বিয়ে পাচ্ছে। শুনেছি মেয়েরা বিয়ের কথা বাবা মাকে বলতে পারে না সেই জন্য শাড়ি পরে বাবা মায়ের সামনে ঘুরাঘুরি করে যেন তারা বুঝতে পারে তাদের মেয়ের এখন বিয়ের বয়স হয়েছে। আমি তো এখন আব্বু আম্মুর জন্য বসে আছি উনারা আসবে আর আমাকে বিয়ের সাজে দেখে ভীষণ অবাক হবে।”
শুভ্রতা সাধনার শাড়ির আঁচলটা টেনে ধরে বলল…..
—” বোন তুই কি আমাকে বাসা থেকে বিদায় করার জন্য উঠে পড়ে লেগেছিস? জানিসই তো আমার বিয়ের আগে তোর বিয়ে দিবে না তাহলে কেন আমাকে শ্বশুর বাড়ি পাঠাতে তুই এত ব্যাস্ত হয়ে পড়েছিস?”
—” ধ্যাত! আমি তো নিজেকে শ্বশুর বাড়ি পাঠাতে ব্যাস্ত হয়ে পড়েছি। তুই তো সন্ন্যাসী হবি তাহলে তোর বিয়ের ঘটকালি কেন করবো? বাংলাদেশের আজব প্রাণী মেয়ে মানুষ তুই।”
—” তোর কারণে যদি আমার বিয়ে হয়ে যায় তাহলে বিশ্বাস কর আমার সতীন বানিয়ে তোকে নিয়ে যাবো। ফাজিল মেয়ে একটা।”
সাধনা শুভ্রতার কথা শুনে দাঁত বের করে হাসা শুরু করলো। শুভ্রতা খুব মনোযোগ দিয়ে টিভিতে খবর শুনতে লাগলো।
কলিং বেল বাজার শব্দে শুভ্রতা সোফা থেকে উঠে পড়তেই সাধনা দৌড় দিয়ে চলে গেলো। শুভ্রতা সোফার এক কোণে দাঁড়িয়ে রইলো।
শুভ্রতার মা বাবা আগে প্রবেশ করছে। সাধনার হাসি শোনা যাচ্ছে। শুভ্রতা বুঝতে পারলো দরজার বাহিরে স্পন্দন দাঁড়িয়ে আছে। শুভ্রতার মা শুভ্রতার দিকে তাকিয়ে বলল……
—” শুভ্রু মা স্পন্দনের জন্য আদা দিয়ে র-চা বানিয়ে আন তো। ছেলেটার সন্ধ্যা থেকে মাথা ব্যাথা করছে। কত বারণ করলাম এই অবস্থায় আসা লাগবে না কিন্তু কে শুনে কার কথা? ছেলেটা আমাদের একা আসতে দিবে না সেই জন্য মাথা ব্যাথা নিয়েই চলে আসছে।”
—” তোমরা ফ্রেশ হয়ে বিশ্রাম নেও। তোমাদের আদরের স্পন্দনের সেবার কোনো কমতি হবে না।”
শুভ্রতার মা ও বাবা নিজেদের রুমে চলে গেলো। সাধনা-কে দেখা যাচ্ছে কিন্তু স্পন্দনকে দেখা যাচ্ছে না। স্পন্দন এখনও দরজা ওপাশে দাঁড়িয়ে আছে। শুভ্রতা পা চালিয়ে দরজার কাছে গিয়ে গলা ঝেড়ে বলল…….
—-” বাসায় কথা বলার অনেক অনেক জায়গা আছে বাহিরে দাঁড়িয়ে কথা বলতে হবে না।”
সাধনা তখন স্পন্দনের দিকে তাকিয়ে মিষ্টি হাসি দিয়ে বলল……
—-” ভাইয়া ভিতরে আসো। দেখো, তোমাকে অনেকবার বলেছি কিন্তু আসো নাই এখন তো আপুও বলছে চলে এসো।”
সাধনা দরজার মাঝ থেকে সরে দাঁড়ালো। স্পন্দন ভিতরে প্রবেশ করে শুভ্রতার দিকে তাকিয়ে ভ্রু জোড়া কুচকে বলল…..
—” তিন দিন পর ফিনান্স পরীক্ষা তুই ড্রয়িং রুমে বসে নিউজ দেখছিস। পরীক্ষায় ফেল করলে আশি বছরের বুড়োর সাথে বিয়ে দিবো বলে দিলাম।”
স্পন্দন মুখে ভালো ভাব নিয়ে কথা বললেও চোখ দেখে বুঝা যাচ্ছে সে ভিতর থেকে অসুস্থ। শুভ্রতার খুব মায়া হচ্ছে স্পন্দনকে দেখে। স্বাভাবিক ভাবেই বলল…….
—” স্পন্দন ভাইয়া তুমি বসো তোমার জন্য র-চা বানিয়ে আনছি। আর সাধু তুই এখন শাড়ি চেঞ্জ করে পড়তে বস আগামীকাল পড়া না পারলে আবারো কানে ধরাবে স্যার।”
কানে ধরার কথা শুনে সাধনা মুখে হাসি চোখে রাগ নিয়ে শুভ্রতার দিকে তাকিয়ে বলল…..
—” পাবলিক প্লেসে না বললে হতো না।”
স্পন্দন সাধনার দিকে তাকালো আর বলল…..
—” ছিঃ সাধনা তুই কলেজ গিয়ে গান ধরিস। তোকে কাজিন ভাবতেও তো লজ্জা হচ্ছে আমার।”
সাধনা স্পন্দনের কথা শুনে দৌড় দিয়ে চলে গেল। শুভ্রতা সাধনার কার্য কলাপ দেখে হেসে দিল। স্পন্দনকে বসতে বলে সেই রান্না ঘরের দিকে পা বাড়াবে তখনি স্পন্দন বলল……
—” সাধনার সাথে কথা বললে জেলাস ফিল হয় তোর তাই না?”
শুভ্রতা বোকার মত দাঁড়িয়ে স্পন্দনের কথা শুনে বলল……
—” কচু হয় বুঝেছো?”
—” হাহাহা। যা চা নিয়ে আয়।”
শুভ্রতা রান্না ঘরে এসে চা বানিয়ে নিয়ে গেলো। স্পন্দন চা-এর কাপে চুমুক দিয়ে বলল……
—” পরীক্ষার প্রস্তুতি কেমন হচ্ছে?”
শুভ্রতার বিড়বিড় করে বলল…….
—” যেখানে তোমার মত ঝামেলা নামক ব্যাক্তি-টি আছে সেখানে কি আর খারাপ হয়?”
স্পন্দন বুঝতে না পেরে বলল…….
—-” কি হলো বলছিস না কেন?”
—” হুম ভালোই। তোমার মাথা ব্যাথা কেমন এখন?”
—” আর বলিস না মাথাটা ভীষণ ধরেছে। শুন, তোর নরম হাতে চুল গুলো টেনে দে তো তাহলে হয়তো খুব তাড়াতাড়ি কমে যাবে। ”
—” বয়ে গেছে আমার। যাও বিয়ে করো সংসার করো আর বউকে দিয়ে নিজের সেবা যত্ন করো।”
—” বাজে না বকে যা বলেছি তাই কর। মাথা গরম করলে শাস্তি হবে কঠোরতম শাস্তি।”
শুভ্রতা স্পন্দনের চুলে হাত বুলাচ্ছে সাথে টানছে। স্পন্দন চোখ বন্ধ করে চা খাচ্ছে । শুভ্রতার কাছে স্পন্দনের চুল গুলো বড্ড পছন্দ হয়েছে। শুভ্রতা মনে মনে স্পন্দনের মাথার চুলের নাম দিলো ‘ রেশমী চুল ‘ এই প্রথম স্পন্দনের চুলের দিকে আকর্ষিত হলো শুভ্রতা।
শুভ্রতার নামকরণে ব্যাঘাত ঘটিয়ে স্পন্দন বলল…..
—” কি রে আমার কিউট মার্কা চুলে কি নজর দিচ্ছিস তুই? আজকের পর থেকে যদি আমার চুল উঠে তাহলে তোকে এর মূল্য দিতে হবে। ”
—” ছেলেদের চুল উঠলে কোনো সমস্যা হয়?”
—” হুম। আমার এক ফ্রেন্ড কিছুদিন আগে মেয়ে দেখতে গিয়েছে কিন্তু আমার বন্ধুর মাথায় চুল নেই বলে পাত্রী সরাসরি রিজেক্ট করে দিয়েছে। এখন তুই চাস আমি কোথাও বউ দেখতে গিয়ে টাকলু উপাধি পাই?”
শুভ্রতা স্পন্দনের মাথার চুল জোরে জোরে টান দিয়ে বলল…….
—” বাহ তাহলে তো খুব ভালোই হবে। তাহলে আজকেই তোমার মাথার চুলে কু-নজর দিয়ে সব চুল মাথা থেকে ঝেড়ে দিবো।”
স্পন্দন শুভ্রতার হাত বা দিক থেকে ঘুরিয়ে সামনে এনে শুভ্রতার হাত শক্ত করে চেপে ধরে বলল……
—” কু-নজর দিবি আমার মাথার চুলের দিকে তাই না? ওয়েট আমি এক্ষুনি তোর চুলে বদ নজর দিয়ে সব উসুল করে নিবো। দেখবি দুই দিনে চুল সব ঝরে যাবে বাতাসে।”
—” দেখা যাবে এখন যাও তো নিজের বাসায়। লজ্জা করে না সব সময় আমাদের বাসায় আসতে? কয়দিন যাই আমরা তোমাদের বাসায়?”
স্পন্দন শুভ্রতার কথা এক কান দিয়ে শুনে অন্য কান দিয়ে বের করে আরামসে পায়ের উপর পা তুলে বসে চোখ বন্ধ করে সোফায় মাথা হেলিয়ে আঁধ হয়ে শুয়ে আছে। শুভ্রতা রাগে গজগজ করতে করতে তার মায়ের কাছে যাচ্ছে।
—” আমার পরীক্ষা গিয়ে পড়তে বসি। আম্মুকে বলে এই ঝামেলাটাকে বিদায় করি। বাসায় এসেই লেগে থাকবে অসভ্য ছেলে একটা।”
বকবক করতে করতে চলে গেলো শুভ্রতা। স্পন্দনকে থাকতে বলেছে শুভ্রতার মা কিন্তু সে রাজি হয় নাই চলে গিয়েছে বাসায়।
_______________________
রাত তিনটা পর্যন্ত পড়ে সকাল দশটা পনেরো মিনিটে ঘুম থেকে উঠলো শুভ্রতা। ফ্রেশ হয়েই সকালের খাবার খেতে খাবার টেবিলে গিয়ে বসলো। শুভ্রতার বাবা শুভ্রতা-কে দেখে মিষ্টি হাসি দিয়ে বললেন……
—” আজ এত দেরি হলো কেন মা? আমরা তো অনেক আগেই নাস্তা সেরে ফেলেছি।”
—” রাত জেগে পড়েছি আব্বু সেই জন্যই সকালে উঠতে পারি নি। কিন্তু এখন পেটের ক্ষুধায় ঘুম থেকে উঠে পড়েছি। কথায় আছে জোকের কামড় সহ্য করা যায় কিন্তু পেটের ক্ষুধার কামড় সহ্য করা যায় না যাকে বলে একেবারে ইম্পসিবল ।”
বড় মেয়ের কথা শুনে হেসে দিলেন শুভ্রতার আব্বু। শুভ্রতা খাবার খেয়ে নিজের রুমে গিয়ে দেখলো নাদিয়ার অনেক গুলো কল এসেছে তাই নাদিয়াকে ফোন দিলো…….
—” এই যে নাদু বেবি কি খবর? আর এত ফোন কেন দিলি? কিছু কি হয়েছে?”
ফোনের ওপাশ থেকে নাদিয়া যা বলল তা শুনে শুভ্রতার মাথা ভনভন করতে লাগলো। মনে হচ্ছে এক্ষুনি সে মাথা ঘুরে পড়ে যাবে। শুভ্রতার চোখ বেয়ে দু এক ফোঁটা অশ্রু বিন্দু গড়িয়ে গালের কাছে এসে জমতে লাগলো। নাদিয়ার কথাটি হলো…………
চলবে………..
বানান ভুল হলে ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।