সেদিন মুষুলধারে বৃষ্টি ছিল পর্ব-২০ এবং শেষ পর্ব

0
1205

#সেদিন_মুষুলধারে_বৃষ্টি_ছিল
last part (শেষ খন্ড)
Arishan_Nur (ছদ্মনাম)

ঝড়ো হাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ফের ঝুমঝুমিয়ে বৃষ্টি নামলো। কালো মেঘে ছেয়ে আছে আকাশ। কুচকুচে কালো হয়ে আছে আকাশটা! আকাশটাকে কি ভয়ংকর লাগছে। অথচ এই কালো মেঘের চেয়েও কালো মনের মানুষ দিব্যি আমাদের চারপাশে ঘুরে বেড়াচ্ছে। তারা কিন্তু দেখতে ভয়ংকর হয়না! সাধারণ মানুষের মতোই দেখতে!

এমন যদি কোন প্রযুক্তি থাকত যার মাধ্যমে পৃথিবীর সকল কুৎসিত মনের মানুষের চেহারায় কালো রেখা ফুটে উঠত, তবে কতোই না ভালো হত?

বাইরের খোলা জানালা দিয়ে সেজুতি দেখতে পেল, গাছ-গাছালি তান্ডবে মেতে উঠেছে। পাগল উম্মাদের মতো গাছ গুলো একবার নিচে হেলে পড়ছে তো উলটো হাওয়া এলে সোজা হচ্ছে৷

সে দরজার কার্ণিশ ঘেঁষে দাঁড়িয়ে আছে। মুখে টু শব্দ নেই। গলা পিপাসায় ফেটে যাচ্ছে। নিশ্বাস আটকে আটকে আসছে তার। কানে বেজে চলছে পাশে দাঁড়িয়ে থাকা ধবধবে ফর্সা মেয়েটার রিনরিনে হাসি৷ মেয়েটার অট্টহাসি সেজুতির সমস্ত ইন্দ্রিয় অচল করে দিচ্ছে।

দাঁড়িয়ে থাকাটা দায় তার জন্য। চোখে এক ফোটা পানি নেই। অথচ তার উচিত কাদা
চিৎকার করে কাদা৷ কিছু মূহুর্ত আগে মুহিবকে যে দশায় দেখেছে এরপর যে কোন স্ত্রীর হৃদয় ভেঙে চুরমার হতে বাধ্য! জীবন দুর্বিষহ হতে বাধ্য!

মুহিব এগিয়ে এসে বলে, তুমি এখানে!

সেজুতির চোখে দিশেহারা ভাব৷ চোখের দৃষ্টিতে উদাসিনতা! চোখের ভাষা ও হারিয়ে গেছে মুখের ভাষার মতো!

একটা মানুষ যখন মনের দিক দিয়ে নিরুপা হয়ে পড়ে ,মনের জোর শেষ হয়ে যায়, তখন ঠিক সেই মূহুর্তে সেই মানুষটার চোখের ভাষা লোপ পায়।

সেজুতি দেয়ালে হাত দিয়ে নিজের ভারসাম্য ঠিক করে বলে, কেন? আমি আসায় তোমার প্রেমলীলায় বাগড়া বেধেছে? এক কাজ করো তোমরা আবার শুরু করো। বিশ্বাস করো এবার আর ডিস্টার্ব করবনা।

সেজুতির কথাটায় চমকে উঠে মুহিব। সে আস্তে করে বলে উঠে, তুমি যা ভাবছো না তা,,,

— থাক! কোন কৈফিয়ত চাই নি। তোমার কাছ থেকে সব আশা-ভরসা বিয়ের দ্বিতীয় দিনই হারিয়ে গেছে। আজকে কিন্তু তোমাকে এই অবস্থায় দেখে আমি মোটেও অবাক না। আমি জানি তুমি লম্পট একজন। যে ব্যক্তি কিনা বউয়ের গায়ে হাত তুলতে দুবার ভাবে না সে আর যাইহোক একজন পুরুষ হতে পারেনা৷ পুরুষ হওয়া এতো সহজ না!

– সেজুতি শোন!

— আমি বললাম তো তোমার কোন কথাই আমি শুনতে চাইনা।

— তুমি যা ভাবছো তা ভুল। আমি,,,,,,

— তিনতলায় মেয়েগুলো কে? কে হয় তোমার?

মুহিব আরেকদফা চমকে যায়। সেজুতি ওদেরকে দেখে ফেলেছে! সে ঢোক গিলে বলে, আত্মীয়! আম্মার পরিচিতি গ্রামের আত্মীয়।

সেজুতি অবজ্ঞার হাসি হেসে বলে, বাহ! পতিতাদেরকে আত্মীয় বানিয়ে ফেলতে দু’দন্ড লাগলো না তোমার!

মুহিব ঘাবড়ে গেল। তাহলে সেজুতি সব জেনে ফেলেছে। এখন কি হবে? আম্মা পই পই করে বলে দিয়েছিলো যেন সেজুতি এইসব সম্পর্কে কিছুই না জানে। সে বলে,

— ওরাও কিন্তু মানুষ। ওদের আত্মীয় আছে৷ওদের বাবা-মা আছে।

— তাহলে নিজ মুখে স্বীকার করেই নিলে ওদের আসল পরিচয়টা!

মুহিব নিশ্চুপ রইল।

সেজুতি আবারো বলতে লাগে, তোমার কাছে তো ওরা সাত রাজার ধন। ওদের জন্য তুমি আজকে এতো টাকা কামাচ্ছো।টাকার পাহাড় গড়ছো৷ ওদের গুনগান তো গাইবেই।

মুহিব তীক্ষ্ম চোখে তার দিকে তাকালো। সেজুতির চোখ, মুখ, গাল লাল হয়ে গেছে৷ মেয়েটার চোখ দিয়ে আগুনের দলে ঝড়ছে।

আচমকা সেজুতি পেছনে ঘুরে হাঁটা ধরলো। মুহিব থম মেরে এক দন্ড দাঁড়িয়ে থেকে যা বুঝলো তাহলো, সেজুতি বাসার বাইরে যেতে চাচ্ছে।অথচ আম্মা কাউকে বাইরে যেতে নিষেধ করেছে৷ এমন এক পরিস্থিতিতে সে পড়েছে, না পারছে কিছু ভেবে উপায় বের করতে আর, না পারছে হাত গুটিয়ে থাকতে৷

সে দারোয়ান কে ফোন দিয়ে কড়া গলায় বলে, বাসার গেট যেন না খোলা হয়৷

এরপর এক প্রকার ছুটে গেল আম্মার ঘরে৷

মনোয়ারা আক্তার ব্রোমাজেপাম ঘুমের ঔষধ কিছুক্ষন আগেই খেয়েছে। নিদ্রা-নিদ্রা ভাব চলে এসেছে শরীরে। সারা শরীরে হালকা আরাম বয়ে বেড়াচ্ছে। শুয়ে থাকতেও ভালো লাগছে৷ মাথায় আইসকুল দেওয়ায় মাথার ভার ভাব কমে মাথা হালকা আর হীম শীতল ভাব এসে গেছে। চোখ অবশ্য একটু জ্বলছে৷ তবুও সেটা আরামের কাছে তুচ্ছ৷

এমন সময় তার রুমের দরজা খুলে মুহিব প্রবেশ করলো। তিনি কিছুটা বিরক্তি নিয়ে বলে উঠে, কে?

মুহিব ব্যতিব্যস্ত হয়ে বলে, আম্মা আমি৷

— কি হয়েছে আব্বা?

— আম্মা অনেক বড় ঝামেলা হয়ে গেছে।

— তুই তো আজীবন ঝামেলাই বাধিয়ে আসলি। কি করলি আবার?

— সেজুতি কিভাবে যেন সব জানতে পেরেছে৷

মনোয়ারা আক্তার চোখ খুললেন। সঙ্গে সঙ্গে আইসকুলের ঝাঁঝ চোখে এসে যন্ত্রণা দিতে লাগে। সে চোখ বুজে ফেলে।

এরপর চোখ বন্ধ অবস্থায় দাঁড়িয়ে বলে, আমাকে বাথরুমে নিয়ে চল।

মুহিব আম্মাক্ব বাথরুমে নিয়ে গেল। মনোয়ারা আক্তার চোখ-মুখ ধুয়ে ফেললেন। এরপর আঁচলে মুখ মুছে বলে, কিভাবে জানলো? ওকে না রুমে আটকে রেখেছিস?

— কিভাবে যেন রুম থেকে বের হয়েছে আর সব জানতে পেরেছে৷ আম্মা ও বাড়ির বাইরে চলে যাচ্ছে। কিছু করো।

মনোয়ারা আক্তার মুখ ভোতা করে বলে, কত হাজার বার মানা করলাম এই মেয়েকে বিয়ে করিস না৷ কিন্তু না! তুই আমার অবাধ্য হয়ে এই মেয়েক ঘরে তুললি৷ এই মেয়ের সঙ্গে বিয়ে না দিলে রাজনীতিতে অংশগ্রহণ করবেনা। অন্য কোন মেয়েকে বউ মানবি না।এই মেয়েকেই চাই তোর! এখন বুঝলি? এই মেয়ে সাক্ষাৎ কাল নাগিনী। এইজন্যই রাজী হচ্ছিলাম না। বুঝ এবার ঠ্যালা।

— আম্মা কিছু করো৷

— ওতো ভয় কেন পাচ্ছিস? সেজুতি সামান্য একটা মেয়ে। কিছু ই করতে পারবেনা। দেখি চল। কি করা যায়। তোকে যা কাজ দিব সব কাজেই গড়মিল করে রাখবি। একটা কাজ ঠিক মতো সামলাতে পারিসনা।

মনোয়ারা আক্তার কে মুহিব তাদের বাড়ির মেইন গেটের দিকে গেল। মেইন গেটের আগে বাসার কেচি গেট। কেচি গেটের পর সামান্য ফাকা জায়গা। সেখানে দুইটা আম গাছ লাগানো।

তারা দেখলো সেজুতি দারোয়ানের সঙ্গে তর্ক করছে। দারোয়ান গেট খুলছেনা মুহিবের এবং মনোয়ারা আক্তারের নিষেধাজ্ঞা আছে জন্য ।

মনোয়ারা আক্তার এগিয়ে এসে বলে, এই মেয়ে! এই! চুপ করো। কি তামাশা লাগিয়েছো রাত-বিরেতে। হ্যা? বাসায় ঢুকো।

সেজুতি মনোয়ারা আক্তারের দিকে তাকালো। তিনি আবারো বললেন, তাকিয়ে আছো কেন? যাও নিজের রুমে যাও৷

— আমি সব সত্য জানতে পেরেছি। (কাঠ গলায়)

সেজুতির কথা শুনে তিনি বিন্দুমাত্র বিচলিত হলোনা। সে সহজ গলায় বলে, জানতে পেরেছো ভালো কথা। এখানে লুকাছাপার কিছু নেই৷ তুমি এই বাড়ির বউ। তোমার সব জানার অধিকার আছে। দেখি ভেতরে আসো। তোমার মেজাজ খুব গরম থাকে সবসময়ই। মাথা গরম রাখতে নেই৷ মানুষ পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ভুল গুলো মাথা গরম অবস্থাতেই করে।

সেজুতি কড়া গলায় বলে, এতো সুন্দর করে কথা বলে লাভ নেই। আমি পুলিশ ডাকব। পুলিশ আসবে। আপনাদের নামে কেইস দিবে।

মনোয়ারা আক্তার আচলের আগা চেপে ধরে বলে, কিসের কেইস হবে? কোন মামলা হবেনা। আমরা কারো সঙ্গে অবিচার করছিনা। সবার র্মজিতে হচ্ছে এইসব আর বড় কথা কোন মেয়ে এ ব্যাপারটা স্বীকার করবেনা। কেউ মুখ খুলবেনা। তুমি কার সাক্ষী নিবে? এখনো সুযোগ আছে, আমাদের সঙ্গে থাকো। এই বাসার বউ তুমি, রাজরানীর মতো থাকবে। তোমার ইচ্ছা হলে আমাদের সঙ্গে ব্যবসা করবে। নিজের পায়ে দাঁড়াবে। সব সুখ হাতে এনে দিব।

— লোভ দেখাচ্ছেন আমাকে?

— না ছোট বৌমা। লোভ দেখাচ্ছিনা। বরং বাস্তবতা দেখাচ্ছি।

সেজুতি চেচিয়ে উঠে বলে, আমি আপনার বৌমা না। মুহিবের সঙ্গে আমার সব সম্পর্ক অনেক আগেই শেষ হয়েছে৷

মনোয়ার আক্তার মাটিতে এক গাদা থুথু ফেলে মুহিবকে উদ্দেশ্য করে বলে।,তোর বউয়ের মাথায় সিট আছে। আবোলতাবোল বকে। ওকে বাসার ভেতরে নিয়ে আয়।

মুহিব সেজুতির কাছে যেতেই সেজুতি দুই পা পিছিয়ে মোটা লোহার গেট ধাক্কাতে ধাক্কাতে চিৎকারে করে সাহায্যর জন্য। আশেপাশে কেউ নেই। একদম নিরিবিলি। অন্য দিন এক-দুইটা রিকশা যায় এই গলি দিয়ে । আজকে আবহাওয়া খারাপ জন্য তাও নেই।

কিছুক্ষন আগে বৃষ্টি থেমেছে জন্য তারা ভিজে যায়নি। শুকনো অবস্থাতেই আছে।

মনোয়ারা আক্তার বলে উঠে, মুহিব দ্রুত ওকে নিয়ে আয় বাসায়। বৃষ্টি শুরু হবে আবার।

তিনি বাসার ভেতরে ঢুকতেই ছোট ছোট ফোটায় ঝিরিঝিরি বৃষ্টি পড়া আরম্ভ করলো। তিনি আরেকদফা মুহিবকে তাড়া দিলে মুহিব জোর করে সেজুতি কে ভেতরে ঢুকায়।

তাদের বেডরুমে সেজুতিকে জোর-জবরদস্তি করে এনে প্রবেশ করিয়ে দিয়েই সঙ্গে সঙ্গে রুমের দরজা লক করে দিলো।

মুহিব বা তার আম্মা কেউ ই রুমের ভেতরে ঢুকেনি। কাজেই তারা দেখেনি যে রুম সেজুতি একা না বরং অভিক ও আছে।

দরজা লাগিয়ে মুহিব হতাশ গলায় বলে, এভাবে কত দিন সেজুতিকে আটকে রাখব?

— বেশি দিন না। তুই চিন্তা করিস না। সব ঠিক করে দিব আমি। শুধু শুধু ছোট মেয়েটাকে ভয় পাচ্ছিস। ও কিছুই করবেনা। মনে রাখবি, যারা গলার জোর বেশি খাটায়, তারা শুধু চিল্লাতেই জানে। এরা ক্ষতি করতে পারেনা।আসলে ক্ষতি করার মুরোদ নেই ওদের। যেমন কুকুর। আর চিতাবাঘ কে দেখ! পা ফেলে হাটবে তাও কানে আওয়াজ যাবেনা। নিশ্চুপ কিন্তু ভয়ংকর!

মুহিব চুপ থেকে বলে, আম্মা চম্পা ফের ঝামেলা করছে।

— কি করলো আবার চম্পা?

— আমার কাছে এক লাখ টাকা চাচ্ছে৷

— দিয়ে দে৷

— কেন দিব?

— একটা মানুষের সেবা করা কম কষ্টের কাজ না। যা চায় দিবি। শুধু কথা বাড়াস তুই। আমি ঘুমুতে গেলাম। তুই ও ইমার রুমে গিয়ে ঘুমা। বৌমাকে আর ঘাটাস না। দুই দিন পর এম্নিতেই বুঝবে টাকাই সব। তারপর আমাদের সঙ্গে হাত মেলাবে৷

মুহিব কিছু বললো না। আম্মার উপর ক্ষ্যেপে যাচ্ছে সে। তার প্রতিটি কথা মুহিব অক্ষরে অক্ষরে পালন করছে। তাও আম্মা তাকে অন্ধকারে রাখে। শুধু মাত্র হাতের পুতুল বানিয়ে রাখার জন্য তাকে সত্য থেকে মাঈল দূরে রাখছে।

মনোয়ারা আক্তার তার রুমে চলে এলেন। মুহিব ও ইমার রুমে ঘুমাতে গেল।

★★★

সেজুতি রুমে ঢুকেই চুপ হয়ে গেল। বিছানায় বসে অভিক খেলছে মনোযোগ দিয়ে। ও কখন এলো? সুমির সঙ্গে? হতে পারে!

সেজুতি কিছুক্ষণ দরজা ধরে দাঁড়িয়ে থেকে
অভিকের কাছে গেল। অভিক তাকে দেখে হাসলো। বিনিময়ে সেজুতি হাসতে পারলোনা। অভিকের পাশে বসে হুট করে কেদে দিলো সে।

অভিক ফ্যালফ্যাল চোখে তার দিকে তাকিয়ে রইল। এরপর বলে,কাদছো কেন তুমি?

— আমার অনেক কষ্ট হচ্ছে৷

— সেটা তো আমার ও হচ্ছে।

— কেন?– অদ্ভুত চোখে তাকিয়ে প্রশ্ন করে সে।

অভিক সেজুতির কাছে গিয়ে অভিযোগ করে বলে, একটা খুব পঁচা মহিলা আমাকে মেরেছে বলে নিজের গাল দেখালো।

সেজুতি বুঝল গালে থাপ্পড় দিয়েছে কেউ। সে হাত বাড়িয়ে তার গালে আদর করে বলে, তোমার আর আমার একই করুন দশা। আমি তো বড় সহ্য করতে পারছি আর তুমি ছোট। কিভাবে পারবে এদের অত্যাচার সহ্য করতে?

বাংলায় বলে অভিক কিছুই বুঝলোনা। সে আবারো বলে, ক্ষুদা লেগেছে।

সেজুতির টনক নড়লো।তার ও ক্ষুধা পেয়েছে। পাশের টেবিলেই সুমি খাবার রেখে গেছে৷ সে প্লেট হাতে নিয়ে অভিককে খাইয়ে দিলো এবং নিজেও খেলো।

অভিক প্রশ্ন করে, তোমার নাম কি?

— আমার নাম সেজুতি। সেজুতি৷ পুনরায় বললো।

— সুজুতি?

সে কিঞ্চিৎ হেসে বলে, হ্যা৷

— তুমি কি কষ্টে আছো?

সেজুতির চোখ অভিকের হ্যারি পটারের ব্যাগের দিকে।

সে উত্তর না দিয়ে বলে, তোমার ব্যাগে কি আছে?

— জানি না। মাম্মা গুছিয়ে দিয়েছে।

— দেখতে পারি?

অভিক তার প্রিয় ব্যাগ এগিয়ে দিলো। সে ব্যাগ খুলে দেখলো, পেন্সিল, রঙ, ডোরেমনের পুতুল। একটা খেলনা গাড়ি, ঘড়ি। সব বাচ্চাদের জিনিস। হুট করে ব্যাগের ভেতর এমন একটা জিনিস সে দেখলো যা দেখে, সে পিলে চমকে উঠে। ফোন সেট! মোবাইল অভিকের ব্যাগে! বিশ্বাস ই হচ্ছে না তার। আসল ফোন তো? সে ফোন বের করে দেখে সত্যি আসল ফোন। নিশ্চয়ই জুই মোবাইল টা ব্যাগে ঢুকিয়ে দিয়েছিল!

সেজুতির চোখে মুখে হাসির রেখা ফুটে উঠে। সে দ্রুত উঠে দরজা এপাশ থেকে লাগিয়ে ফোনে ওয়াইফাই অন করে। লাকিলি ওয়াইফাই কানেকশন হয়ে যায়। এই বাসারই ওয়াইফাই এটা। ইমা তাকে পাসওয়ার্ড বলেছিল সেদিন।

সে ফেসবুকে ঢুকে। কাকে ম্যাসেজ দেয়া যায়? আপাকে করে লাভ নেই। বাবার ফেসবুক নেই। তার মামা আছেন দিনাজপুরে। উনি নেভি অফিসার। তিনমাসের ছুটিতে এসেছেন। সেজুতির বিয়েও এটেন্ড করেছে।তাকে বিয়ে উপলক্ষে এক ভড়ি সোনার হার ও দিয়েছে। সেজুতি ম্যাসেঞ্জারে কল লাগায়। দুবার রিং হতেই মামা ফোন ধরতেই সেজুতি নিজেকে সামলাতে না পেরে কান্না করে দেয়। কান্নারত অবস্থাতেই যা যা সম্ভব জানিয়ে দেয় মামাকে। এটাও বলে খুব দ্রুত যেন তাকে নিতে আসে।এখানে থাকলে সে মারা যাবে। সাবধান করে দেয় যেন একা না আসে। সঙ্গে পুলিশও আনতে৷

সেজুতি ফোন কানে ধরে কেদেই যাচ্ছে। ওপাশ থেকে তার মামা চিন্তিত গলায় বলে, মারে কাদিস না। আমি আসছি। তোর মামা বেঁচে থাকতে কেউ তোর ক্ষতি করতে পারবেনা। শক্ত হ মা। আমি আসছি৷ এক্ষুনি আসছি।

★★★

ইমার রুমে ঘুম আসছেনা মুহিবের। সে বিছানায় ছটফট করতে করতে হাপিয়ে পড়ে বারান্দায় আসে। ইমার বারান্দা থেকে গেটের বাইরে সব দেখা যায়। একটা এনার্জি বালভ সারারাত জ্বলে। ঝড়ো বাতাসের মধ্যে সে সিগারেট ধরায়। হুট করে নজর পড়লো তাদের বাসার সামনে দুটো গাড়ি এসে থামলো। একে একে পাঁচ জন বের হলো। সবাইকে সে চেনে। দোতলা থেকে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। সে আড়াল থেকে তাদের দেখলো। একজন সেজুতির মামা, ডিসি সাহেব, আম্মার রাইভাল পার্টির লিডার আর দিনাজপুরের নামকরা লইয়ার যার সঙ্গে আম্মার সমস্যা চলছে। এই উকিল আম্মার কাছে ত্রিশ লাখ টাকা পায়। আরো দুইজন গাড়ি থেকে বের হলো। যাদের মধ্যে একজন আইজি সাহেব৷ তার মাথা ঘুরাতে লাগে। নিশ্চয়ই সেজুতি কিছু করেছে! ইশ! মুহিব কেন একা তাকে ছাড়লো!

সে দ্রুত সেজুতির রুমে গেল। দরজা ভেতর থেকে লাগানো।

সে বলে উঠে, দরজা খোল। তোমার মামা আসছে৷

সেজুতি মামা এসেছে শুনেই দরজা খুলে দেয়। এবং প্রায় সঙ্গে সঙ্গে বুঝলো অনেক।বড় বোকামি করেছে সে। মুহিব ভেতরে ঢুকে দেখে অভিক বিছানায় বসা। পাশেই মোবাইল। তার যা বোঝার বুঝে গেল । সেজুতি খুব চালাক মেয়ে। মুহিব পরিকল্পনা করে নিলো।

সেজুতি পালানোর চেষ্টা চালালে খপ করে মুহিব তাকে চেপে ধরে এবং তার পরনের ওড়না দিয়ে হাত বেধে কোলে তুলে নিল।হাতে সময় একদম নেই। যা করার দ্রুত করতে হবে। সে ছাদে উঠে গেল।

ছোট্ট অভিকের মন কেমন করে উঠে। সুজুতিই একমাত্র যে তাকে আদর করে। পাপা দুষ্ট লোকদের মতো করে সুজুতিকে কোথায় নিয়ে গেল? সে হাতের খেলনা রেখে তাদের পিছু নিল। অভিক হাইড এন্ড সিক খেলতে দারুণ ভালোবাসে। মাম্মার সঙ্গে প্রায় খেলত। এইজন্য চুপি চুপি পিছু নিলো। মুহিব এতোটাই আতংকে ছিলো যে পিছে কেউ আসছে সেদিকে খেয়াল নেই তার।

সে সেজুতিকে বেধে জোর করে ছাদে আনে। সেজুতি আবারো কাদতে কাদতে বলে, মুহিব প্লিজ আমাকে যেতে দাও৷ আমি আমার বাসায় যাব। দোহাই লাগে তোমার।

এবারে মুহিব গর্জে উঠে বলে, তুমি আমার উপর দয়া করো প্লিজ। দোহাই লাগে তুমি চুপ থাক।

— কেন চুপ থাকব আমি?

— তুমি চুপ না থাকলে আমার মায়ের উপর দিয়ে বিপদ যাবে। সেজুতি আমি বাধ্য। প্লিজ চুপ থাকো।

— কেন? কেন তুমি বাধ্য?

— কারন আমি আমার জন্মদাত্রী মাকে ভালোবাসি।

— তোমার আম্মা একজন নিষ্ঠুরতম মহিলা। তাকে কিভাবে ভালোবাসো?

মুহিব অসহায় চোখে বলে, আমি আমার মায়ের কথা বলেছি। আম্মার কথা না৷

সেজুতির মাথায় বাজ ভেঙে পড়ে। সে বলে উঠে, এসব কি বলছো?

— সত্য বলছি। তোমার কাছ থেকে অনেক কিছু লুকানো হয়েছে।

— কি লুকানো হয়েছে?

— শোভা ভাবী বন্ধা না। তোমাকে মিথ্যা বলা হয়েছিল যেন বিয়েতে রাজী হও। ভাইয়া কিন্তু এটা জানেন। এইজন্য ভাবীকে নিয়ে চিকিৎসা করাতে গেছে।

সেজুতি হতবিহ্বল হলো।

— মিথ্যা কেন বলেছো?

–তোমাকে আমি বিয়ে করতে চাইতাম। তোমার বাবাকে প্রস্তাব পাঠালে সে রাজী হন না। আমিও জেদ ধরি, বিয়ে করলে তোমাকেই করব। অবশেষে আম্মা রাজী হন। পরে শোভা ভাবীকে নিয়ে মিথ্যা কথা বলে তোমাকে বিয়েতে রাজী করিয়েছে আম্মা। আর কেউ যদি বন্ধা হন তাহলে সে হলো আম্মা। আম্মা নিঃসন্তান। আমি আর ভাই তার দত্তক নেয়া সন্তান৷ তাওহীদ ভাইকে একটা গরিব ঘর থেকে দত্তক নেয়া হয়েছে আর আমাকে,,

এতোক্ষনে গিয়ে সেজুতি শান্ত হলো। হুট করে মুষলধারে বৃষ্টি পড়তে লাগে। দুইজনকে সমানে ভিজিয়ে নিয়ে যাচ্ছে।

মুহিব হাঁটু গেড়ে বসে আহত গলায় বলে, আমাকে,,,, আমাকে,,, আম্মা,,,সে কিছুতেই বাকি কথাটা উচ্চারণ করতে পারছে না।

অনেক কষ্টে কথাটা শেষ করলো– আমার গায়ে এক পতিতার রক্ত বইছে। যাকে তোমরা নোংরা বলে দূর ছাই করো, আমি তাকে মা বলে ডাকি।

সেজুতির গা বেয়ে বিদ্যুৎ খেলে গেল। মাথা ঘুরাতে লাগে। আদৌ এটা সত্য নাকি মিথ্যা বলছে মুহিব?

মুহিব মাটিতে বসে আছে। বৃষ্টির বড় বড় ফোটা তার গায়ে কাটার মতো ফুটছে। তার চিৎকার করে কাদছে মন চাচ্ছে বাচ্চাদের মতো।

সে বলে উঠে, আম্মার (মনোয়ারা আক্তার) বাবা প্রভাবশালী ব্যবসায়ী ছিল। রাজনীতি তেও যুক্ত ছিলো। আম্মা প্রেম করে বিয়ে করে। বিয়ের পর কি যেন একটা অসুখে তার ইউটেরাস বা জরায়ু কেটে ফেলতে হয়। এরপর তাদের বিবাহ জীবনে অশান্তি শুরু হয়। কিন্তু আব্বা তার শ্বশুড়ের ক্ষমতার ভয়ে আম্মাকে তালাক দিতে পারেনি। কাজেই তারা ভাইয়াকে দত্তক নেয়। আম্মা যেদিন জেনে গেল সে আর মা হতে পারবে না তখন থেকে এই পতিতাবৃত্তি চালু করেন। এরপর সেখান থেকে আমাকে তুলে আনেন নিজের সন্তান হিসেবে। কিন্তু আমার জন্মদাত্রী মাকে বন্দি করে রেখেছে নিজ আস্তানায়। সেজুতি, চম্পা আমাকে খবর দিয়েছে মা খুব অসুস্থ। মনে হয় না আর বাচবে। আম্মার কোন ক্ষতি করলে, সে আমার মাকে আমার কাছে ফেরত দিবেনা। তাই আমি বাধ্য। প্লিজ তুমি তোমার মামাকে চলে যেতে বলো৷

— অসম্ভব।

— তাহলে আমিও নিরুপায়।

বলে সেজুতি কে টেনে পানির ট্যাংকির ভেতরে ঢুকিয়ে ঢাকনা আটকে দিলো এবং ট্যাংকির সঙ্গে দড়ি দিয়ে তাকে বেধে ফেলে। সামান্য ছিদ্র আছে অক্সিজেন চলাচলের জন্য।

ট্যাংকি বন্ধ করতে করতে মুহিব কাতর গলায় বলে, চম্পার সঙ্গে আমার কখনোই কোন সম্পর্ক গড়ে উঠেনি। শুধু চম্পা না ওই পাড়ার কারো ধারেও আমি ঘেঁষতে পারিনা। ওদের দেখলে আমার নিজ অস্তিত্বের কথা মনে পড়ে যায়৷ দুঃখিত আমি!

বলে হনহন করে নিচে নামতে লাগে।

পেছন থেকে অভিক সব দেখেই এক ছুটে নিচে নেমে আসে। সে প্রচুন্ড ভয় পেয়েছে। ইতিমধ্যেই কান্না করতে করতে হিচকি তুলে ফেলেছে সে। নিচে অনেক গুলো মানুষ দাঁড়ানো। সকালের তাকে ব্যথা দেওয়া দুষ্ট বুড়ি মহিলাটাও আছে। সে আরো ভয় পেয়ে গেল। কাকে বলবে সুজুতির কথা?

মুহিব এক মিনিট পরই নিচে এসে দেখলো বাসায় সেজুতির মামা এসেছেন এবং আম্মার সঙ্গে তর্ক করছে৷

মুহিব মনে মনে ভাবে, আম্মা ঘুমায় নি তাহলে!

মনোয়ারা আক্তার মুহিবের কাছে এসে বলে, তোর বৌ কই?

— ওকে ছাদে ট্যাংকির ভেতরে বেধে রেখেছি। ও কিছুই করতে পারবেনা। আপনি এদেরকে সামলান।

— কপাল পুড়ছে আমাদের। তাও আজকে তুই একটা কাজের কাজ করছিস।

মনোয়ারা আক্তার বাজখাঁই গলায় বলে, ওই মেয়ে আমাদের সর্বনাশ করছে। আমার ছেলেটার জীবন কাহিল করে দিলো। মেয়েটার মাথায় সমস্যা আছে। পাগল মেয়ে আমার ছেলের উপর চাপায় দিয়ে আমাদের ঠকাইছে এই মেয়ের বাপ-মামা৷

ততোক্ষনে দুই জন পুলিশ সারা বাড়ি সেজুতি কে খুজছে। দোতলায় আর একতলায় খোজ করেও পায় নি তাকে।

সেজুতির মামা বলে উঠে, আমার ভাগ্নি কই?

— জানি না। সন্ধ্যা নাগাদ বের হয়ে গেছে আর ফেরেনি।

— সেজুতি কোথায় সত্যি করে বলুন?

সেজুতির নাম শুনে অভিক ভয়কে জয় করে বেশ জোর গলায় ইংরেজিতে বলে উঠে, সুজুতিকে পাপা ছাদে বেধে রেখেছে৷

অভিক ডিসি সাহেবের কাছাকাছি এসে কথাগুলো বলছিল জন্য ডিসি সাহেব সব স্পষ্ট বুঝতে পেরেই আনন্দে আত্মহারা হলেন্ন।সে অভিককে জিজ্ঞেস করে, তুমি দেখেছো?

সে হ্যা বলে।

এরপর? এরপর ডিসি সাহেব অভিককে নিয়ে ছাদে গেলো।

মুহিব বহুবার আটকাতে চাইলো। লাভ হয়নি। নতুন ডিসি সাহেব খুব কঠোর। টাকায় গলেন না।

ছাদে গিয়ে সেজুতি কে উদ্ধার করা হয়। এরপর তিনতলা থেকে মেয়েগুলো কে উদ্ধার করা হয়। মনোয়ারা আক্তারকে অবাক করে দিয়ে প্রতিটা মেয়েই পুলিশের ভয় সত্য স্বীকার করে।

এবং সেই রাতেই মুহিব আর মনোয়ারা আক্তার কে এরেস্ট করা হয় অনৈতিক কাজের জন্য । বাসায় পাঁচ কোটি ক্যাশ পাওয়া যায়৷

মনোয়ারা আক্তারের প্রতিদ্বন্দি সুযোগের সঠিক প্রয়োগ করে।

মুহিব হাতে হ্যান্ডকাফ পড়ে সেজুতির সামনে দাড়িয়ে বলে, জেলে থাকতে আমার বিন্দুমাত্র আফসোস নেই। তুমি আমার মাকে উদ্ধার করো প্লিজ। জানি তোমার সাথে অনেক অন্যায় করেছি তাও হাত জোর করে অনুরোধ, আমার জন্মদাত্রী মাকে খুজে বের কর। শেষ নিশ্বাস ত্যাগের আগে নিজের মাকে একবার অত্যন্ত দেখতে চাই। চম্পা সব জানে। ওর মাধ্যমে খুজে দেখতে পারো।

মনোয়ারা আক্তার আর মুহিব যখন গাড়িতে উঠে তখনো বজ্রপাতের সঙ্গে বড় বড় ফোটায় বৃষ্টি পড়ছিলো।

মামা এগিয়ে এসে বলে, আয় মা। তোকে বাসায় নিয়ে যাই।

সেজুতি বাসার বাইরে পা ফেলে। এরপর কি মনে করে থেমে যায় এবং এক ছুটে ভেতরে ঢুকে অভিকের কাছে গিয়ে বলে, আসো বাসায় যাব।

অভিক বলে উঠে, কোথায় যাব?

— এমন এক জায়গায় যাব যেখানে চমৎকার সান রাইজ হয়। এসো। মাম্মার দেয়া ব্যাগটা নিয়ে আস।

বাইরে বের হতেই এমন বৃষ্টি শুরু হলো যে অভিক বিষ্ময়কর চোখে বলে, সুজুতি এত জোরে কেন বৃষ্টি হচ্ছে?

— আমাকে সুজুতি বলে ডাকবে না।

— তাহলে কি বলে ডাকব?

— মা।

— মা আমেরিকায় তো এভাবে বৃষ্টি হয় না!

— হ্যা। এমন বৃষ্টি শুধু বাংলার মাটিতে হয়। এই বৃষ্টির একটা সুন্দর নাম আছে তাহলো মুষলধারে বৃষ্টি!

অভিক আধ ভাংগা গলায় বলে, মুষুলধারে বৃষ্টি?

— না। মুষলধারে। উ-কার কেন যুক্ত করছো?

সে পুনরায় সঠিক ভাবে বলার চেষ্টা করে কিন্তু লাভ হলোনা। সে আবারো মুষুলধারে বলে ফেলে। কিছু তেই মুষলধারে উচ্চারণ করতে পারলোনা অভিক।

সেজুতি তা শুনে খিলখিল করে হেসে তার হাত ধরে বাড়ির বাইরে বের হলো।

কি স্নিগ্ধ পরিবেশ! বৃষ্টির ফোটা গায়ে লাগতেই, সারা গায়ে শান্তি বয়ে গেল। মনে হচ্ছে এই মুষলধারে বৃষ্টিতে আরো কিছুক্ষন কাকভেজা হয়ে ভিজলে মন্দ হয় না? কি আশ্চর্য আকাশ থেকে কালো মেঘ সরে যাচ্ছে।

★★★

পরবর্তীতে মুহিবের জেল হয়। তাওহীদ বহু দৌড়াদৌড়ি করেও মুহিবের শাস্তি মওকুফ করাতে পারেনি। এদিকে নিজের গড়া ক্যারিয়ার, ব্যবসা, ক্ষমতা, বাড়ি গাড়ি, সম্মান জলে ভেস্তে যেতে দেখে মনোয়ারা আক্তার মানসিক ভারসাম্য হারান।

চম্পাকে পাচ লাখ টাকা দিয়ে মুহিবের মায়ের খোজা লাগায় সেজুতি। সৌভাগ্যক্রমে তাকে পাওয়া যায়। সেজুতি ভেবেছিল মুহিব তাকে বানোয়াট কথা বলেছে কিন্তু নাহ।সে সবই সত্য বলে গেছে। এমনকি মুহিবের কথা অনুযায়ী তার মা আসলেই খুব অসুস্থ ছিলো।মুমূর্ষু রোগী ছিল। জরুরি ভিত্তিতে মুহিবের সঙ্গে তাকে সাক্ষাৎ করার ব্যবস্থা করা হয়। মুহিব নিজের মায়ের কোলে শুয়ে বাচ্চাদের মতো কাদে। এক ঘন্টা মায়ের সঙ্গে কাটিয়ে কারাগারে ফেরত যায়৷

সেইবার প্রথম মুহিবের প্রতি সেজুতি করুণা অনুভব করে। মুহিবের সঙ্গে দেখা করার এক মাস পর চিকিৎসারত অবস্থায় মুহিবের মা মৃত্যুবরণ করে।

পরিশিষ্টঃ প্রায় আট বছর পর আভিজাত্য এক রেস্তোরাঁয় এক সন্ধ্যায় সেজুতি কে ঘিরে বেশ কিছু ক্যামেরা ম্যান এবং নারী দিবস উপলক্ষে অনুষ্ঠিত প্রোগ্রামের হোস্ট দাঁড়িয়ে আছে।
সেজুতি সুন্দর দেখে একটা সাদা শাড়ি পড়ে হাসি হাসি মুখ করে দাঁড়িয়ে আছে৷

একজন রিপোর্টেরার প্রশ্ন করে, ম্যাম আপনার আকাশ ছোয়া সাফল্যের পেছনে কার অবদান বেশি?

সেজুতি হাসি মুখে বলে, আজ আমি একজন সাকসেসফুল বিসনেসওম্যান। আমাদের বুটিক হাউজের নিত্যনতুন পোশাক বাংলাদেশের ঘরে ঘরে পৌছে যাচ্ছে।তার জন্য সকলকে ধন্যবাদ আমাদের এতো সাপোর্ট করার জন্য। এই আকাশ ছোয়া সাফল্যে দুইজনের অবদান বেশি। প্রথম জন আমার বাবা আর সেকেন্ড জন হলো আমার ছেলে।

তিন ফুট দূরে দাঁড়িয়ে থাকা বয়ঃসন্ধিকালে পা দেওয়া অভিক লজ্জায় মিইয়ে গেল। মাও না! সবসময়ই তার নাম নিবেই। ওতো ভালোবাসার দরকার কি? এরপর কি বললো মা সে শুনতে পেল না। কেননা বড়খালা মনি ততোক্ষনে কান্না জুড়ে দিলো৷ বোনের ইন্টারভিউ দেয়া দেখে আবেগে আপ্লূত হয়ে কেদে দিলো। সঙ্গে সঙ্গে তার সাত বছরের বছরের খালাত বোনটাও ভ্যা করে কেদে দিলো। কি একটা অবস্থা! মা-মেয়ের কান্নায় অভিক লজ্জায় পড়ে গেল।

নারী দিবস উপলক্ষে সেজুতি কয়েকটা কথা বলার জন্য মাইক হাতে নেয়। সবার দৃষ্টি তার দিকে।

সে বলতে লাগে, নারী আসলেই পানির মতো!সব কিছুর আকার ধারণা করতে পারে। সে চাইলেই মমহাসমুদ্রের আকার ধারণা করে সব কিছু ভাসিয়ে নিয়ে যেতে পারে আবার মহাসমুদ্র যেমন করে বুকে খনিজ আগলে রাখে তেমনই নারীরাও বুকে আগলে রাখে আপনজনকে।

করতালি তে চারিদিক সবাই শব্দ দূষণ করতে লাগে৷

সমাপ্ত।

___________________________