#স্পর্শ
#পর্ব_৪
#writer_nahida_islam
শিমু নীলুকে হাজার বলা শর্তে ও দুজন বসে বসে ওয়েট করছে। অতসী বসে আছে।অতসীকে কষ্ট দেয় ঐটা বিষয় না কিন্তু আজকে যদি ইফাজ না যায় তাহলে শিমু নীলু খুব কষ্ট পাবে।
কলিং বেল বাজতে ই রানু গিয়ে দরজা খুলে দেয়। ইফাজ কোনো কথা না বলে সোজা উপরে চলে যায়।
–আপু ভাইয়া কি আমাদের দেখতে পায়নি।
–হয়তো দেখতে পায়নি।
-আচ্ছা তাহলে আমরা উপরে যাই। ভাইয়ার সাথে দেখা করে আসি।
শিমু নীলু দুজন ই আমাকে রেখে ই উপরে চলে গেলো। আমি ও ওদের পিছন পিছন গেলাম।
–ভাইয়া।
ইফাজ একবার তাকিয়ে রাগি মোড নিয়ে বললো,
–কারো রুমে ডুকতে হলে অনুমতি নিতে হয় জানোনা।
নীলু মাথা নিচু করে উওর দিলো,
–সরি ভাইয়া।
-কেনো এসেছো।
–আপু তো আমাদের সাথে যাবে ভাইয়া আপনি ও চলুন না ভাইয়া।
–নিজের বোনকে নিতে এসেছো, বোনকে নিয়ে যাও।
–ভাইয়া এভাবে বলছেন কেনো?
–হয় বোনকে একা নিয়ে যাও নয়তো রেখে চলে যাও। আর একবার কিছু বললে তোমার বোনকে ও যেতে দিবো না।
এতোক্ষণ আমি শুধু দাড়িয়ে দাড়িয়ে দেখছিলাম ইফাজ কী বলে, আর দেখা ছাড়া তো আমার কোনো উপায় ও নেই।
–নীলু চল।
–কিন্তু আপু…
–যদি আর একটা ও কথা বলিস তাহলে আমও যাবো না।
নীলু আর কোনো কথা বললো না। বাসার সবার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে চলে আসলাম।গাড়িতে বসে বোনদের মুখের দিকে তাকাতে ই বুকের ভেতর চাপা কষ্টগুলো আমার উঁকি দিতে শুরু করেছে। আমার বোনেরা হয়তো ভালো করে ই বুঝতে পেড়েছে ইফাজে আর আমার সম্পর্কটা কতোটা খারাপ।
বাসার সামনে আসার পর মা দৌড়ে এ আমাকে জড়িয়ে ধরে।
–কেমন আছিস মা।
আমি উওর দেওয়ার আগে ই শিমু উওর দিলো,
–টাকার জন্য তো আপুকে বিয়ে দিয়েছো সুখের জন্য না, তাহলে কেমন আছে জিজ্ঞেস করাটা তোমার কী মানায়।
মা আমাকে ছেড়ে শিমুকে জিজ্ঞেস করলো,
–কী হয়েছে।
–ইফাজ ভাইয়া আমাদের সাথে আসেনি। নীলুর সাথে ও যেভাবে কথা বললো তাতে মনে হয়না তোমার মেয়ে ভালো আছে।
–ইফাজ আসেনি মানে আর কী ভাবে কথা বলেছে?
ইফাজের এসব কথা শোনলে মা অসুস্থ হয়ে যাবে তাই বললাম,
–মা ইফাজ আমার সাথে কখনো খারাপ ব্যবহার করেনি। অফিসে কালকে একটা মিটিং আছে তাই আসতে পারেনি। আমাকে কী বাহিরে ই দাড় করিয়ে রাখবা নাকি ভেতরে ডুকতে দিবা।
মাকে বিভিন্ন কথা বলে আমি ব্যপারটা ভুলানোর চেষ্টা করি। রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নিলাম। মা গরম গরম ভাত আর আলু ভর্তা, কাচা কলার ভর্তা করে আনলো। সাথে চিকেন। মায়ের হাতের রান্নার স্বাদ মনে হয় পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ স্বাদ। দেরি না করে খেতে বসে পড়লাম।
খাবার শেষ করে ই বিছানায় শুয়ে পড়লাম। বেশ ক্লান্ত লাগছে, কদিনে দকল সামলাতে ঘুমের বড্ড প্রয়োজন। তাই ঘুমের রাজ্যে পারি জমালাম।
বৃষ্টির আর ঝরের তান্ডবে ঘুম ভেঙ্গে যায় অতসীর।ঘুম ভাঙ্গতে ই বেলকনিতে চলে আসলো বৃষ্টি পানিতে মুখ ভেজাচ্ছে। বৃষ্টি ফুটাগুলে ছোয়ার অযথা চেষ্টা করে। আজ অনেকদিন পর হাসলো অতসী। এতোদিন নরকে ছিলো মনে হচ্ছে। এখন মুক্ত বাতাসে প্রান খুলে অক্সিজেন নিচ্ছে। অতসী রুমে ডুকে ফোন হাতে নিতে ই দেখলো এগাটোটার মতো বাজে। অতসী ফ্রেশ হয়ে বাবার রুমের দিকে গেলো।হঠাৎ ফোনেট শব্দ আবার নিজের রুমে এসে ফোন ধরলো। রিসিভ করে ই ওপাশ থেকে যে শব্দ আসলো তা অতসী আশা করেনি।
–প্রিয়ন্তি তুই।
–কেমন আছিস অতসী
–আমার জীবনটাকে জাহান্নাম বানিয়ে দিয়ে আমার জিজ্ঞেস করছিস কেমন আছি।
–স্যরি আমি ইচ্ছে করে করেনি।
–কেনো কল দিয়েছিস। প্রিয়ন্তি নামের আমি কাউকে চিনি না। আমি যে প্রিয়ন্তিকে চিন্তাম সে মরে গেছে।
–অতসী প্লিজ কথাটা শোন।
–কী শোনবো কিভাবে একজনকে ঠকিয়ে অন্যজনকে বিয়ে করেছিস।
–আমি তোকে সব বলবো তুই কালকে ঠিক দশটায় আমাদের কলেজের সামনে চলে আসবি তোর সাথে কথা আছে ইফাজ সম্পর্কে । তুই নাকি ইফাজ কে বিয়ে করেছিস।
ইফাজের সম্বন্ধে কথা শুনে আমি ওর সাথে দেখা করতে রাজি হলাম। কী বলবে ইফাজ সম্পর্কে। আমি তো জানি ওদের সম্পর্ক ছিলো।আর কী বলবে ও। এসব ভাবতে ভাবতে বাবার রুমের দিকে গেলাম, কালকে আসার পর ই গিয়েছিলাম কিন্তু বেশি কথা বলা হয়নি।
–বাবা আসবো।
–হে মা আয়।
আমাকে দেখে ই বাবা উঠে বসতে চেষ্টা করলো,নিজে নিজে উঠতে পারে না তাই আমি উঠিয়ে বসিয়ে দিলাম।
–তোর শ্বশুরাড়ির সবাই কেমন আছে।
–জ্বি বাবা ভালো।
–ইফাজ তোর সাথে ভালো ব্যবহার করে তো।
–হে বাবা।
-তুই সুখে থাকলে ই আমরা সুখি।
–আচ্ছা বাবা কখনো যদি আমি তোমাদের কাছে চলে আসি তাহলে কী আমাকে তোমরা গ্রহণ করবা?
–এই কথা কেনো বললি মা। তোর শ্বশুর বাড়ির লোকজন কি ভালো না?
–না বাবা তেমন কিছু না শুধু জানতে ইচ্ছে হলো।
–বাবা মা কখনো কী নিজের সন্তানকে দূরে ঠেলে দেয়। তোরা আমার সব। কখনো যদি মনে হয় তুই ভালো নেই তাহলে সোজা বাবার কাছে চলে আসবি।
আমি মুখে হাসি টেনে মাথা নাড়ালাম।
রাতে শুয়ে শুয়ে ভাবতেছি বাসায় কী বলে প্রিয়ন্তির সাথে দেখা করতে যাবো। মা জানতে পারলে কখনো প্রিয়ন্তি সাথে দেখা করতে দিবে না। তাই সিদ্ধান্ত নিলাম মাকে না বলে ই যাবো।
সকাল হতে ই ঘুম থেকে উঠে পড়লাম। সাড়ে নয়টার দিকে রেডি হয়ে বের হতে যাবো ঠিক তখন ই মা এসে সামনে দাড়ালো,
–কোথায় যাচ্ছিস।
–কাজ আছে একটু কলেজে যাবো।
কলেজের কথা শুনে মা আর কিছু বললো না।আবার পা বাড়াতে ই মা ডাক দিলো,
–এই দুদিনের ভেতর তো ইফাজ একবার ও কল দেয়নি। তাহলে কী ইফাজ তোকে পছন্দ করে না।
–তেমন কিছু না মা, দেখবে কল দিবে।
এটা বলে ই বাসা থেকে বের হয়ে আসলাম।
কলেজের সামনে আসতে ই দেখলাম দূরে প্রিয়ন্তি দাড়িয়ে আছে। আমি রোড ক্রস করে যাওয়ার সময় হঠাৎ সামনে একটা গাড়ি এসে দাড়ালো। আমি গাড়িটা দেখে থেমে গেলাম। গাড়ির দিকে তাকাতে ই দেখলাম গাড়ি থেকে ইফাজ নেমে আসছে। ভয়ে আমার জ্ঞান হারানোর অবস্থা।
চলবে,
[ভুলক্রটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন ]