সৎ মা পর্ব-২০

0
413

#সৎ_মা (২০)
#সামসুজ্জামান_সিফাত

অনেকক্ষণ ঠাঁই দাঁড়িয়ে থাকার পর আকিব আমার কাছে আসলো। এতক্ষণ চোখের কোণে পানি জমে ছিল। আকিব কে দেখে তা মুছে নিলাম। সে আমার কাছে এসে ই বলল,”সিফাত, তোকে সাদ্দাম ভাই ডাকছে।”
– আচ্ছা চল।‌

আকিবের সাথে সাদ্দাম ভাইয়ের কাছে এলাম। তিনি আমাকে দেখে ই বলে উঠলো,”কি ব্যাপার সিফাত, কি শুনছি এসব ?”
আমি অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলাম,”কি শুনছো ?”
– শুনলাম তুই নাকি কোন মেয়ের সাথে রঙ্গ লিলা করতে গিয়েছিলি ?
সাদ্দাম ভাইয়ের কথায় আমার মাথায় যেন আকাশ ভেঙ্গে পড়লো। আমি জিজ্ঞেস করলাম,”কে বলেছে এসব তোমায় ?”
– একজন মহিলা এসে বলল। শুধু আমাকে না সবাইকে ই বলে বেড়াচ্ছে এই কথা।
– কি বলো ? কে সেই মহিলা ?
– আমি তো আর চিনি না তবে দেখলে চিনতে পারবো। আচ্ছা দাঁড়া আমি দেখছি।
– ঠিক আছে।

সাদ্দাম ভাইয়া চারদিকে দেখতে লাগল। হঠাৎ আমার মোবাইলে ফোন এলো। মোবাইল হাতে নিয়ে দেখি আরিফের ফোন। রিসিভ করে কানে ধরতে ই সে জিজ্ঞেস করে উঠলো,”কিরে কই তুই ?”
– আমি তো উঠোনে আছি। তুই কই ?
– আমি তো এখনো গেইটে ই দাঁড়িয়ে আছি।
আমি অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলাম,”কি বলিস ? এখনো গেইটে দাঁড়িয়ে আছিস ? সাথে কে আছে ?”
– সাথে ত গেইট আটকে রাখা ছেলেমেয়ে গুলো ছাড়া আর কেউ ই নাই।
– আচ্ছা দাঁড়া আমি আসছি।

ফোন কেটে দিয়ে ই গেইটে চলে এলাম‌। দেখি সত্যিই আরিফের পরিচিত কেউ নেই এখানে এমনকি আমি ও তাদের চিনি না। আরিফ আমাকে দেখে ই বলে উঠলো,”কিরে সিফাত এসব কি শুনছি ?”
আমি অবাক হয়ে বললাম,”কি শুনেছিস ?”
– কার সাথে নাকি রঙ্গ লিলা করতে গিয়েছিলি ?
এবার আরও অবাক হয়ে বললাম,”কি বলছিস তুই এসব ?”
– শুধু আমি না, বাড়িতে অবস্থানরত প্রত্যেকটি মানুষের মুখে ই এই কথা।
– ঠিক আছে ভেতরে চল আগে পরে দেখছি।

আরিফকে নিয়ে বাড়ির ভেতরে প্রবেশ করত করতে জিজ্ঞেস করলাম,”কিরে তোকে একা ফেলে রেখে সবাই কোথায় চলে গেল ?”
– তোর খবর শুনে সবাই ভেতরে চলে গেছে।
– ওহ্ আচ্ছা।

বাড়ির ভেতরে প্রবেশ করতেই সবাই আমার দিকে কেমন করে তাকিয়ে কানাকানি করতে লাগলো। হঠাৎ করে একজন বলে উঠল,”বড় ভাইয়ের চরিত্র ই ভালো না, বোনের চরিত্র কেমন হবে আল্লাহ ই জানেন।”
আরেকজন বলে উঠলো,”আগের গরু যেই লাইনে যায় পরের গুলো ও সেই লাইনে ই যায়। ভাইয়ের যেহেতু চরিত্র ভালো না বোনের চরিত্র ও ভালো হবে না।”
আরও একজন বলে উঠল,”এক গাছের ফলের স্বাদ সবসময় এক রকম ই হয়। কখনো এক গাছে দুই রকম স্বাদের ফল ধরে না। যেহেতু ভাই বোন এক মায়ের পেটের ই সেহেতু বুঝা ই যাচ্ছে বোনের ও চরিত্র এমন ই। কীভাবে যে আরিফ এমন একটা মেয়ের পাল্লায় পড়লো।”
প্রথম জন আবার ও বলে উঠলো,”একটা আম বাহির থেকে খুব সুন্দর দেখালে ও কাটলে দেখা যায়, ভেতরে পোকা। ঠিক তেমনি একটা মানুষের বাহ্যিক সৌন্দর্য দেখে ভালো মনে হলে ও মানুষটা ভেতর থেকে সুন্দর হয় না।”

একেক জন একেক রকম কথা বলে যাচ্ছে। কিন্তু কিছু বলতে ই পারছি না। কারণ, আমি জানি না কে এই কথা ছড়িয়েছে। যে এসব কথা ছড়িয়েছে তাকে না ধরে অযথা অন্য মানুষ কে কিছু বলে কোনো লাভ হবে না। বরং সবাই ভাববে কথা সত্যি তাই আমার লেগেছে।

আরিফকে উদ্দেশ্য করে আমি প্রশ্ন করলাম,”আচ্ছা আরিফ, নিজের মামাতো বোনের সাথে একান্তে কথা বলা কি অন্যায় ? নাকি মামাতো বোনের সাথে একান্তে কথা বললে ই রঙ্গ লিলা হয়ে যায় ?”
– দেখ দোস্ত, কিছু বলার নেই আমার। তবে তোর প্রতি আমার খুব বিশ্বাস আছে। আমার মনে হয়, তোর কোনো শত্রু বা তোর বাবার কোনো শত্রু প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য এসব করছে।
– আমার ও তা ই মনে হচ্ছে। আচ্ছা তুই ভেতরে গিয়ে বস আমি দেখছি।

হঠাৎ সাদ্দাম ভাই আমাকে ডাক দিল। দৌড়ে ওনার কাছে এসে জিজ্ঞেস করলাম,”জ্বি ভাইয়া বলো।”
ওনি একটা মহিলা কে দেখিয়ে বলল,”এই যে মহিলাটিকে দেখছিস, এই মহিলা ইং বলেছিল।”
মহিলাটি আমাদের দিকে পিছ দিয়ে কার সাথে যেন কি বলছে তাই কে এই মহিলা তা দেখা যাচ্ছে না। আমি সাদ্দাম ভাইয়াকে বললাম,”চলো ত আমার সাথে দেখি এ কে।”

সাদ্দাম ভাইকে সাথে নিয়ে মহিলাটির সামনে এসে মুখ দেখতেই আমি অবাক। কারণ, এ আমার সৎ মা। তাহলে এই মহিলা ই এসব করেছে ? কিছু না বলে ওনার হাত ধরে টেনে ঘরে নিয়ে এসে বাবাকে ডাক দিলাম। বাবা এসে বলে উঠলো,”আমার সর্বনাশ করে এখন আবার আমাকে ডাকছিস ?”
আমি অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলাম,”আমি আবার কি করলাম ?”
– তুই তানিয়ার সাথে কি করেছিস ?
– তানিয়া কিছু বলেছে নাকি ?
– তানিয়া বলতে যাবে কেন ?
– তাহলে কে বলেছে ?
– কেন শিপন বলেছে।
– কই সে তাকে আসতে বলো আর তানিয়া কে ও আসতে বলো এখানে।
– এখন এখানে আসলে আর কি হবে ই ?
আমি অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলাম,”কেন ?”
– ছেলের বাবা এসে বলতাছে, শিফার সাথে তাদের ছেলের বিয়ে দিবে না।
– ওই টা আমি পরে দেখতাছি, আগে তুমি তোমার এই বৌয়ের বিচার করো।
বাবা অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করল,” কেন ? কি করেছে সে ?”
– আমি আর তানিয়া একটু বাড়ির পেছনে দাঁড়িয়ে কথা বলছিলাম। আর তোমার এই বৌ গিয়ে আমাদের নামে গুজব ছড়িয়ে বেড়িয়েছে।
বাবা আমার কথা শুনে ওনার দিকে তাকালে ওনি চোখ নামিয়ে নিলেন। বাবার বুঝতে বাকি নেই যে আমি সত্যি বলছি।‌ তবুও বাবা ওনাকে জিজ্ঞেস করল,”কি ব্যাপার স্বর্ণা, সিফাত কি সত্যি কথা বলছে ?”
ওনি কিছু ই বলছে না। বাবা আবার ও জিজ্ঞেস করল। এবার ও বলেনি। বাবা এবার ধমক দিয়ে জিজ্ঞেস করলো,”কি হলো ?কিছু জিজ্ঞেস করেছিলাম আমি, বলছো না কেন ? সিফাত যা বলেছে তা কি সত্যি ?”
এবার তিনি আস্তে আস্তে বলল,”হ্যাঁ।”
বলতে দেরি হলো। বাবা ওনাকে ঠাস করে এক চড় মেরে দিল। এক চড় খেয়ে শিক্ষা হয়নি বরং আরও হিংস্র হয়ে বাবাকে চড় দেওয়ার জন্য হাত উঁচিয়েছে। আমি হাত ধরে ফেললাম। বাবা সৎ মায়ের বাড়িতে ফোন দিল।‌

সবাই এতক্ষণ আমাকে আর তানিয়াকে নিয়ে বলাবলি করছিল।‌ এখন সবাই চুপ হয়ে গেছে।‌

কিছুক্ষণ পর আমার সৎ মায়ের পরিবারের লোক চলে এলো। বাবা ওনাকে তালাক দেওয়ার কথা বলেছিল। কিন্তু সবার অনুরোধ আর শিপনের মুখের দিকে তাকিয়ে আর তালাক দেয়নি।

অবশেষে আরিফের সাথে শিফার বিয়ে হয়ে গেল। মা এসে আমার কাছে ও তানিয়ার কাছে ক্ষমা চেয়ে একটা সুযোগ চেয়েছে। যেহেতু ওনার রান্না করা ভাত খেয়েছি সেহেতু সেই খাবারের বিনিময়ে ক্ষমা করে দিলাম। তানিয়া ও ক্ষমা করে দিল।

সাদ্দাম ভাইয়ের পরিবারের সাথে বাড়ির সবাইকে পরিচয় করিয়ে দিলাম। বাবা ওদের বলল, আমাদের বাড়ি থেকে যেতে। ওরা প্রথমে থাকতে রাজি হয়নি অবশেষে আমার অনুরোধে রাজি হয়েছে। তারপর শিফাকে বিদায় দিলাম।

কেটে গেল চার মাস। শিফার বিয়ের এক সপ্তাহ পর ই বাবা-মা, মামা-মামী, তানিয়া আর শিপনকে নিয়ে চলে এলাম ঢাকা। এতদিন তো থেকেছি সাদ্দাম ভাইয়ের বাড়ি। অবশ্য আমাকে ব্যাংক থেকে অনেক আগেই বাড়ি দিয়েছিল, সেই বাড়িতে মাঝে মধ্যে যেতাম। বাড়িটা সাদ্দাম ভাইদের বাড়ি থেকে অনেক বড়। তাই সবাইকে নিয়ে ওই বাড়িতে ই উঠেছি। এতদিন ভালো ই চলছিল সব।

চলবে