#হে_দুঃখি_চোখ
#৩য়_পর্ব
#অনন্য_শফিক
‘
‘
‘
আমার সৎ মা যে বিষধর জাতের সাপ সেটা আগে থেকেই আমি জানতাম। সেই ছোট্ট বেলা থেকেই তো তার হাতের মার খেয়ে খেয়ে বড় হয়েছি। কিন্তু তিনি আমায় এমন ভাবে মারতেন যেন আব্বা কোন ভাবেই টের না পান।তাই আমি তখন খুব লুকিয়ে চুরিয়ে কাঁদতাম।যেন আব্বা কোন ভাবেই বুঝতে না পারেন যে আমি কাঁদছি।
‘
ক্লাস টুয়ে পড়ার সময় একদিন আম্মার সাথে আমি গোসল করছিলাম পুকুর ঘাটে বসে থেকে। আম্মা তখন বললেন,’বিথী,ব্যাঙের মতন লাফ দিয়া দিঘির মাঝখানে পড়তে পারবি?’
আমি তখন খুব ভীতু টাইপের ছিলাম।তাই বললাম,’না গো আমি পারবো না।’
এই কথা বলার পর আম্মা বললো,’শোন,তোরে ব্যাঙ হইয়া যে দিঘিত লাফ দিতে কইছি সাবধান এইটা তোর বাপের কাছে কইছ না।কইলে কিন্তুক তোরে জবাই দিয়া দিবাম।’
আমি তখন ভয়ে ভয়ে বললাম,’বলবো না আম্মা। কারোর কাছে বলবো না। তবুও তুমি আমারে জবাই দিও না’
সেই ছোট্ট বেলায় আম্মার এই কথাটার কারণ বুঝতে না পারলেও এখন স্পষ্ট বুঝতে পারছি কেন সেদিন আম্মা আমায় পুকুরে ব্যাঙের মতন ঝাঁপ দেয়ার জন্য বলেছিলো!
যেই মা কোন কারণ ছাড়াই সেই ছোট্ট বেলায় কৌশলে আমায় মেরে ফেলার চেষ্টা করতে পারে সেই মা এখন তো আরো ভয়ানক কিছু করেই ছাড়বে!
‘
বিকেল বেলা বারান্দায় আব্বার পাশে বসে থেকে আমি বললাম,’আব্বা, আমার কেমন জানি ভয় হচ্ছে।সত্যি সত্যি ভয় হচ্ছে। আব্বা, আম্মা যদি তার ভাইয়ের ছেলেকে নিয়ে আসে আমাদের বাড়িতে। তখন কী হবে আমাদের?’
আব্বা খানিক সময় চুপ হয়ে রইলেন। তারপর আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বললেন,’মারে,সারা জীবনে একটা মিথ্যা কথা বলি নাই,কারোর একটা টাকা মাইরা খাই নাই।কারোর কাঁচা আলপথে পা দেই নাই। আমি জেনে বুঝে কাউকে কথায়ও আঘাত দেই নাই। আমি যেহেতু কারোর কোন ক্ষতি করি নাই তাইলে আমার ক্ষতি কেমনে মাইনা নিবো আল্লাহ?আমি আল্লাহর উপর ভরসা রাখি।নিজে আল্লাহ পাকই তো বলছেন,যে আল্লাহর উপর ভরসা রাখে তারে তিনি ঠকান না। তাইলে আমি ঠকবো কেনো?’
আব্বার মুখের কথাগুলো শুনে আমার মনের ভেতর দিয়ে হিম শীতল বাতাস বয়ে যায়। অদ্ভুত আনন্দে আমি আব্বার মুখের দিকে তাকাই।কী সুন্দর এবং পবিত্র মুখ। এই মুখটার দিকে তাকিয়ে আমার মনে হয়, পৃথিবীতে বাবারা হলো সন্তানের জন্য ছায়াদানকারী বৃক্ষ।যার বাবা এই দুনিয়ায় বেঁচে নাই সেই কেবল জানে রোদ-ঝড়ের কবল থেকে একা বাঁচার কী কষ্ট!
‘
তিনদিন পর রাতের বেলা হঠাৎ আম্মা ফোন দিলেন। আব্বা ফোন ধরলেন না। কিন্তু বারবার যখন ফোন দিচ্ছেন তখন ধরে বললেন,’কী হয়ছে? ফোন দেও কেন? তুমি না আমারে দুঃখের সাগরে ভাসাইতে আসবা!কই ?দিন তো তিনটা চলে গেল এখনও আসলা না তো?’
আম্মা ও পাশ থেকে হঠাৎ করে হাউমাউ করে কেঁদে উঠলো। কান্নার জন্য কোন কথা বলতে পারছে না। আব্বা অস্থির হয়ে উঠে জিজ্ঞেস করলেন,’কী হইলো কাঁদতেছো কেন?
কথা কও!’
আম্মা কথা বললো না। কাঁদতে কাঁদতে ফোন রেখে দিলো।
তারপর আব্বা আবার ফোন দিলেন। কিন্তু সেই ফোন বন্ধ। বারবার চেষ্টা করেও আম্মার ফোনে কল দিতে পারলেন না।
আব্বা তখন চিন্তায় কেমন অস্থির হয়ে উঠলেন।
আমি বললাম,’কী হইছে আব্বা?কী হইছে?’
আব্বা তখন কপালের ঘাম মুছতে মুছতে বললেন,’আমার কেমন ভয় লাগতেছে রে বিথী! বিরাট ভয় লাগতেছে!’
‘
#চলবে