অপ্রত্যাশিত সম্পর্ক পর্ব :- ১১

0
1342

গল্প :- অপ্রত্যাশিত সম্পর্ক
পর্ব :- ১১
Writer :- Kabbo Ahammad
.
.
.
-: তুমি কোনো ছোটখাটো ভুল করোনি মিরা..
তুমি আমাকে সন্দেহ করেছো।
আর আমি তোমাকে এতো সহজে ক্ষমা করে দিবো তুমি ভাবলে কি করে?

আমার সিরিয়াস মুখ দেখে মিরা ভয়ে একেবারে চুপছে গেছে। তখন মিরা কাঁদো কাঁদো গলায় বললো।

—প্লিজ নীলয় আর কখনো এমন করবো না। প্লিজ এবারের মতো ক্ষমা করে দাও।

তারপর আমি মিরার দিকে এগিয়ে গিয়ে বললাম।

–ঠিক আছে তোমাকে ক্ষমা করতে পারি। তবে তোমায় আমাকে একটা জিনিস দিতে হবে.!

—আমি তোমাকে কি দিতে পারি নীলয়।

তখন আমি একেবারে মিরার মুখের কছে গিয়ে বললাম।

–অনেক কিছুই দিতে পারো তুমি মিরা.!

তারপর মিরা দুই পা পিছিয়ে গিয়ে বললো।

—মানে কিকিকি দিতে পারি?

আমি তখন মিরাকে আর কিছু বলতে না দিয়ে মিরাকে দেয়ালের সাথে চেপে ধরলাম….!
সাথে সাথেই মিরা দুচোঁখ বন্ধ করে ফেললো।

এখন মিরা আর আমি দুজন দুজনার খুব কাছাকাছি অবস্থান করছি. আর এতটাই কাছাকাছি অবস্থান করছি যে মিরার প্রতিটা নিশ্বাস অমি অনুভব করতে পারছি.! তারপর মিরার কপালের সাথে আমার কপালটা ঠেকালাম আর নাকের সাথে নাক…..
এখন মিরার হার্টবিট ১০০০ কিঃ মিঃ স্পিডে চলছে এটা আমি স্পষ্ট অনুভব করত পারছি…
মিরার গোলাপি ঠোঁট গুলো কাঁপছে প্রচুর পরিমাণে আমি আর নিজেকে ধরে রাখতে পারলাম না………
মিরার ঠোঁটগুলো নিজের আয়ত্তে নিয়ে নিলাম।
সাথে সাথেই মিরা চোখ বড় বড় করে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। সেদিকে আমার কোন খেয়াল নাই!
প্রায় ৭-৮ মিনিট পর মিরাকে ছাড়লাম। এখন দুজনেই হাঁপাচ্ছি। কারন মিরাকে আমি এই প্রথমবার কিস করলাম। অদ্ভুত একটা অনুভূতি কাজ করছে এখন কিন্তু এটুকুতে যেন মন ভরছে না আমার। আমার আরো একটা কিস চাই। তাই আমি আবারও মিরার কাছে যেতেই মিরা আমাকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিলো।

–কি হলো?

—নীলয় তুমিকি ভুলে যাচ্ছো যে এটা তোমার অফিস। কেউ যদি এসে পড়ে।

–আরে এখানে আবার কে আসবে?
আর কেউ আসলেও নক করেই আসবে। বসের রুমে তো আর কেউ সোজাসোজি ডুকে পড়বে না।

—তারপরেও আমার কেমন যেন লাগছে। এখানে এসব চলবে না বুজলে……

তারপর মিরা হঠাৎ করে আবেগী গলায় মিষ্টি করে বললো।

—নীলয় তুমি না আমাকে লঞ্চে নিয়ে যাবে বলেছিলে।কখন যাবে শুনি? কয়টা বাজে দেখেছো! আমার কিন্ত খুবই খিদে পেয়েছে।

কি আর করা বলেন।

–ঠিক আছে চলো। (রোমান্টিক মোমেন্টটা এত তাড়াতাড়ি শেষ হয়ে গেলো দূর কিছুই ভালো লাগছে না।

এরপর আমরা অফিস থেকে বেরিয়ে পড়লাম।
গাড়ি নিয়ে সোজা একটা রেস্টুরেন্টে পৌঁছে গেলাম। আমি আগে থেকেই একটা টেবিল বুক করে রেখেছিলাম। তারপর দুজনে মিলে খাবার অর্ডার করলাম। দুজনেরই খুব খিদে পেয়ে গেছে। তাই খাবার আসতেই খাওয়া শুরু করে দিলাম। আর একে-অপরের খাওয়া দেখে নিজেরাই হেসে দিলাম। খেতে খেতে মিরার দিকে তাকিয়ে দেখলাম সে খাওয়া থামিয়ে আমার পিছনে কিসের দিকে যেন তাকিয়ে আছে।

তখন আমি বললাম..

–কি হলো খাচ্ছো না কেন?

মিরা বললো।

—একটু ঐ দিকে দেখো ওটা মিলি না!

আমি ঘার ঘুরিয়ে দেখে বললাম।

–হ্যাঁ মিলিই তো।

—তাহলে মিলি আপু এখানে কি করছে.?

–আশ্চর্য!
আরে এটা রেস্টুরেন্ট। আমাদের মতো মিলিও মনে হয় খেতেই এসেছে। এখানে এতো ভাববার কি আছে?

—আরে পাগল ভালো করে তাকিয়ে দেখো মিলির সাথে একটা ছেলেও আছে। মনে হয় ওর বয়ফ্রেন্ড হবে।

তখন আমি খাবার চিবুতে চিবুতে বললাম।

–আরে মিলির কোনো বয়ফ্রেন্ড নেই। ওটা হয়তো ওর কোনো ফ্রেন্ড হবে।

—তুমি কি করে জানো যে ওর বয়ফ্রেন্ড নেই?

–কারণ আমরা দুজনে একে-অপরের সাথে সব কিছুই শেয়ার করি। আর ওর বয়ফ্রেন্ড থাকলে আমাকে নিশ্চয়ই বলতো।

—হয়তো এটা বলেনি।
আমি এই ব্যাপারে নিশ্চিত যে ছেলেটা মিলি আপুর বয়ফ্রেন্ডই হবে।

–মোটেও না মিরা।
আজ পর্যন্ত মিলি আমার থেকে কিছু লুকায়নি। আর এমন একটা বড় ব্যাপরতো কোনো মতেই না। কিন্তু তুমি এতোটা নিশ্চিত হয়ে কি করে বলছো?

—কারণ একটু সময় নিয়ে তাকিয়ে দেখো তোমার কাজিকে ছেলেটা কি সুন্দর করে খাইয়ে দিচ্ছে।

তখন আমি তাকিয়ে দেখলাম মিরা তো ঠিকই বলছে। ছেলেটা মনে হয় মিলির লাভারই হবে। একে-অপরকে খাইয়ে দিচ্ছে আবার হেসে হেসে কথাও বলছে। আমার এখন কিছুটা কষ্টও লাগছে মিলির সাথে আমি সবকিছুই শেয়ার করতাম। অথচ মিলি এতো বড় একটা ব্যাপার আমার থেকে লুকিয়ে গেলো!

—কিন্তু ছেলেটা কে বলোতো? (মিরা)

–আরে আমি কি করে বলবো! ছেলেটার মাথা ছাড়াতো এখান থেকে কিছুই দেখা যাচ্ছে না। (আমি)

তারপর মিরা উঠে দাঁড়িয়ে বললো.

—আচ্ছা চলো না গিয়ে দেখে আসি।

আমি বুজিনা মেয়েদের এসব বিষয়ে এতো আগ্রহ কেনো? তারপর আমি বললাম।

–না যাওয়ার দরকার নেই।

—কেন?

–দেখো মিরা মিলি যখন নিজে থেকে আমাকে কিছু জানায় নি। তাহলে এখন ওখানে গিয়ে ওকে বিব্রত করার কোনো মানে হয় না।

কিন্তু কপাল কে শুনে কার কথা। মিরার আগ্রহটা যেন একটু বেশিই। আমাকে প্রায় টানতে টানতে চেয়ার থেকে উঠিয়ে ফেললো। আমিও আর কোনো উপায় না পেয়ে। মিরার সাথে সাথে আমিও এগুলাম মিলিদের টেবিলের দিকে।

আমরা একটু এগিয়ে যেতেই মিলি আমাদের দেখে ফেলে। আর সাথে সাথে দাঁড়িয়ে পরে। মিলির চোখে-মুখে কিছুটা ভয়ের আভাস ফুটে উঠলো। এবার ১০০% শিউর যে ছেলেটা মিলির প্রেমিকিই হবে। আমরা আরেকটু এগিয়ে যেতেই মিলি ব্যস্ত হয়ে বলে উঠলো।

—আরে নীলয় তোরা এখানে.?

আমি ওখানে গিয়ে মিলির দিকে তাকিয়ে বললাম।

–আরে আমরা তো এখানে লাঞ্চ করতে এসেছিলাম। কিন্তু তুই আমার সাথে এটা একদম ঠিক করিস নি। মিরা তোদের না দেখলে তো আমি হয়তো কোনোদিনও জানতেই পারতাম না।

তখন আমি মিরার দিকে তাকাতেই দেখলাম। মিরার চোখে মুখে বিস্ফুরিত!
মিরা অবাক চোখে মিলির বয়ফ্রেন্ডের দিকে তাকিয়ে আছে। আমিও এবার মিলির বয়ফ্রেন্ডর দিকে তাকালাম। কিন্তু একি! এ আমি কাকে দেখছি।

ছেলেটি আর কেউ নয় এটা মুন্না ভাইয়া, মিরা আর আমি একে অপরের মুখ চাওয়-াচাওয়ি করছি।
আমরা ঠিক বুঝে উঠতে পারছি না যে আমাদের এখানে কি বলা উচিত। তারপর নিরবতাটা মুন্না ভাইয়াই ভাঙ্গলো। মুন্না ভাইয়া বলে উঠলো।

—মিরা তোরা এখানে.?(মুন্না ভাইয়া)

—সেটা তো আমারও প্রশ্ন ভাইয়া তুই এখানে মিলি আপুর সাথে কি করছিস?(মিরা)

—তুই মিলিকে চিনিস? (মুন্না)

তখন মাঝখান থেকে মিলি বলে উঠলো।

—তোমরা একে-অপরকে চিনো কি করে? আর নীলয় তোরা মুন্নাকে চিনিস নাকি? (মিলি)

–আরে চিনবো না কেন ও তো মিরার ভাইয়া.! (আমি)

—কি! (মিলি)

–হুম। তো তোদের মাঝে কিভাবে কি হলো বলবি?(আমি)

—আচ্ছা বলছি শুন.!
আসলো মুন্না আর আমার দেখাটা অস্ট্রেলিয়াতেই হয়েছে। আর প্রথম দেখাতেই মুন্না আমাকে প্রপোজ করে ফেলে। ও যেভাবে স্ট্রেইট ওর মনের কথাটা আমাকে বলে দিয়েছিলো যে আমারও ওকে ভালো লেগে যায়। তারপর আমাদের সম্পর্কটা এগুতে থাকে। তারপর সবকিছুই ঠিকঠাক চলছিলো কিন্তু…..(মিলি)

–কিন্তু কি? (আমি)

মিলি কিছুটা দম নিয়ে আবারো বললো।

—আচ্ছা নীলয় তোর মনে আছে আমি তোর কাছে একটা সাহায্য চেয়েছিলাম। (মিলি)

–হ্যাঁ মনে আছে। আর কি একটা বলবি বলেছিলি। সেটাকি এটাই।

তখন মিলি মাথাটা নেড়ে হ্যাঁ সম্মতি দিলো। তারপর বললো।

—আসলে মুন্না দেশে ওর মা-বাবার কাছে ফিরার পর ওর বাবা নাকি ওর বিয়ে ঠিক করে ফেলেছে।

এবার আমি কিছটা অবাক হয়ে জিজ্ঞেসা দৃষ্টিতে মিরার দিকে তাকালাম। দেখলাম মিরার মুখ দেখে মনে হলো মিরাও কিছু জানে না। তখন মুন্না ভাইয়া বললো..

—আসলে তোমরা সবে বাইরে থেকে ফিরেছিলে।
তাই বাবা তোমাদের ঐ দিন কিছু বলেনি। আজ সকালেই বলতো কিন্তু তুমিতো সকালে কাউকে কিছু না বলেই চলে এলে। আর মিরাও দরজা বন্ধ করে আপসেট হয়ে বসেছিলো। তাই তোমাদের কাউকেই বাবা কিছু জানায়নি। (মুন্না)

—কিন্তু ভাইয়া তোর যখন রিলেশন আছে। বাবাকে কিছু বলিসনি কেন.?.(মিরা)

তখন মুন্না বললো।

—আরে বাবা কি আমাকে জিজ্ঞেস করে বিয়ে ঠিক করেছে নাকি। হঠাৎ করেই আমাকে এসে বললো যে আমার বিয়ে নাকি ঠিক করে ফেলেছে।

–তো ভাইয়া তখনও তো তুমি না করতে পারতে।(আমি)

—আসলে নীলয় তুমি তো জানোই। এতোদিন এতোকিছুর পর বাবা আমাকে বাড়িতে ডুকতে দিসে।
এখন আমি বাবার বিরুদ্ধে আবারো কিছু বলার সাহস পাচ্ছি না। (মুন্না)

–আচ্ছা তো এটাই তোমাদের প্রবলেম?(আমি)

—হুম।
আমি তো খুবই টেনশনে ছিলাম যে কি করে কি করবো। এখনতো দেখছি সব সমস্যা শেষ হয়ে যাবে।
তুই আর মিরা মিলে মুন্নার বাবাকে বোঝালেই সব ঠিক হয়ে যাবে। (মিলি)

ওকে এই কথাই রইলো। এবার তাহলে খাওয়া যাক। তারপর সবাই মিলে লাঞ্চটা সেরে নিলাম।

এরপর মিরাকে নিয়ে বাকিটা সময় আমরা ঘুরাঘুরি করে সন্ধ্যায় বাড়িতে ফিরলাম। বাসায় ফিরে ফ্রেস হয়ে নিয়ে সবাই মিলে রাতের খাবারও শেষ করলাম।
ঠিক তখনি আমার একটা খুবই ইম্পরট্যান্ট ফোন আসলো। অফিস থেকে অফিসের কাজের আরকি।
তারপর আমি কথা বলতে বলতে ছাদে চলে গেলাম। কিন্তু কথা বলার পর ফোনটা রেখে ফোনের দিয়ে তাকিয়ে দেখলাম ১০ঃ৩০টা বেজে গেছে। (আল্লাহ)
অনেকটা সময় ধরেই কথা বলেছি। মিরা হয়তো এতক্ষণ অপেক্ষা করতে করতে রেগে গেছে।

যাইহোক তারপর ছাদ থেকে নেমে নিচে এলাম। আর রুমে ডুকতেই দেখলাম। মিরা ঘুমিয়ে পড়েছে। দূর এতোদিন পর আমাদের সব ঝামেলা শেষ হয়েছে। আর মিরা কিনা আজকেই ঘুমিয়ে পড়লো। আমার জন্য একটু অপেক্ষাও করতে পারলো না। কিছুটা কষ্ট হচ্ছে এখন মিরার এরকম আচরণে। আবার মনে হলো হয়তো আমার জন্য অপেক্ষা করতে করতেই ঘুমিয়ে পড়েছে। তারপর আমিও দরজাটা বন্ধ করে খাটের কাছে গিয়ে ডাক দিলাম..!

–মিরা তুমি কি ঘুমিয়ে পড়েছো?

কোনো উত্তর নাই।

তাই আমি খাটের উপর উঠতেই হঠাৎ মিরা ধরফরিয়ে উঠে বসলো। আর রাগান্বিত কন্ঠে বললো।

—এই তুমি একদম বিছানায় উঠবে না? নামো নামো বলছি।

তখন আমি অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলাম।

–আরে তুমি জেগে আছো!

—তোমাকে না বিছানা থেকে নামতে বললাম।

–কিন্তু কেন? আর তুমি এতো রেগে আছো কেন?

—কতক্ষণ ধরে তোমার জন্য অপেক্ষা করছি জানো?

–আসলে স্যরি স্যরি।
খুব গুরুত্বপূর্ণ একটা কল এসেছিলো। কথা বলতে বলতে বুঝতেই পারিনি যে এতোটা সময় লেগে গেছে। বাদ দাও না এসব। এতোদিন পর আমাদের সব ঝামেলা মিটেছে। এখন কি ঝগড়া না করলেই নয়।

এবার মিরা খুব নরম গলায় বললো।

—আচ্ছা ঠিক আছে বাদ দিলাম। কিন্তু ভবিষ্যতে যেন এরকম না হয়। তারপর মিরা একটু পিছিয়ে বিছানার একপাশে গিয়ে বললো। নাও শুয়ে পড়ো।

–মানে?

—মানে আবার কি? ঘুমাবে না।

–সে তো ঘুমাবোই কিন্তু।

—কিন্তু কি?

–না মানে তুমিই তো এতোক্ষণ আমার জন্য অপেক্ষা করছিলে।

এই বলে আমি মিরার কাছাকাছি ঘেঁষতেই ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিয়ে বললো..

—এতোক্ষন যখন আসোনি। এখন আর আসা লাগবে না। বাতিটা বন্ধ করে শুয়ে পড়ো।

দূর কি আর করা বাতিটা বন্ধ করে দিলাম। দুঃখ ভারাক্রান্ত মন নিয়ে মিরার পাশে গিয়ে শুয়ে পরলাম।
আর মিরা উল্টো দিকে ফিরে শুয়ে আছে। মন তো চাইছে ওকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরি। কিন্তু পেরে উঠছি না। আবার ঘুমও আসছে না। সবকিছু ঠিক হয়ে যাওয়ার পরও মিরার কাছে যেতে পারছি না।
এপাশ-ওপাশ করেই সময় পার করছি। তখন মিরা বলে উঠলো।

—কিহলো? এভাবে নড়াচরা করছো কেন? আমিতো ঘুমাতে পারছি না।

কিন্তু আমি কোনো জবাব না দিয়ে শুয়ে রইলাম। তখন মিরা আবারো বললো।

—কি হলো নীলয় কথা বলছো না কেন?
.
.
চলবে……………………♥♥
.
(ভুলত্রুটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টতে দেখার অনুরোধ রইলো)