অর্ধাঙ্গিনী(An Ideal Wife) পার্ট১৩+১৪

0
1587

#অর্ধাঙ্গিনী(An Ideal Wife)
#পার্ট১৩+১৪
#আফরিন_ইনায়াত_কায়া
.
.
-আমি জানি মি.মেঘ আপনি এখন কি ভাবছেন।দুই কোটি টাকা দেওয়ার মতো বর্তমানে আপনার সামর্থ্য নেই৷ আর ওয়ার্কারসদের ধর্মঘট কবে শেষ হবে সেটা তো উনারাও জানেন না।এই অবস্থায় আকিজ ইন্ডাস্ট্রিজ টাইমমত ডেলীভারী না পেলে লিগ্যাল নোটিশ পাঠাবেন।যেহেতু ডিল আপনি সাইন করেছেন সুতরাং টাকাটাও আপনাকে দিতে হবে।কম্পানি একটা কানা কড়িও দিবে না।মি মেঘ আপনি যদি আপনার সব সম্পত্তি আর নিজের পৈতৃক ভিটা বিক্রি করলেও আই গেস আপনি এই পরিমান এমাউন্ট এরেঞ্জ করতে পারবেন না৷
আয়াজ চৌধুরীর কথা শুনে আমি প্রচন্ড ডিপ্রেশনে চলে যাই।কি করব কিছুই জানি না।তবে এসব কথার পাড়ে আরেকটা চিন্তা আমার মাথায় বেশি ঘুরছিল। সেটা হলো আয়াজ চৌধুরী এসব কথা ব্যক্তিগতভাবে না বলে আমাকে লিগ্যাল নোটিশ পাঠাতে পারতেন কিংবা উপর মহলকে দিয়ে হলেও জানাতে পারতেন। কিন্তু তিনি সেটা করেন নি। সুতরাং এটাতে তার ব্যক্তিগত স্বার্থ আছে।কিন্তু সেটা কি?
.
.
আমার ভাবনার কুল খুজে না পেয়ে আয়াজ চৌধুরী মুখ খুললেন।
-মি মেঘ আপনি চাইলে আমি আপনাকে হেল্প করতে পারি।
-কি হেল্প?
-মেঘ সাহেব মানুষ যখন বিপদে পড়ে তার সবচেয়ে মুল্যবান অথবা সবচেয়ে প্রিয় জিনিসের বিনিময়ে বিপদ থেকে রক্ষা পাওয়ার চেস্টা করে।আর আপনার সবচেয়ে প্রিয় জিনিস তো
-বৃষ্টি।
-গুড ক্যাচ।
-মি আয়াজ চৌধুরী আপনি ভাবলেন ও কিভাবে যে আমি বৃষ্টিকে ছেড়ে দিব?
-রিলাক্স মি মেঘ। আমি তো ছেড়ে দিতে বলছি না।জাস্ট এক রাতের জন্য চাইছি। এক রাতের জন্য বৃষ্টি আমার বউ হয়ে কাটাবে।আপনি আমাকে এক রাতের জন্য বৃষ্টিকে দেন আমি আপনাকে টাকা দিচ্ছি। দ্যাটস ইট।
-দ্যাট ইজ নট ইট মি আয়াজ চৌধুরী।বৃষ্টি বাজারের কোন খেলার পুতুল না যে আপনি কিনে নিবেন। বৃষ্টি ইজ মাই ওয়াইফ।সে আমার অঅর্ধাঙ্গিনী। আপনার যদি চাহিদা এতই বেশি হয় তাহলে আপনি পতিতা পল্লীতে গিয়ে আপনার চাহিদা মেটাতে পারেন।
-মি মেঘ হাইপার হচ্ছেন কেন এতো? আমি জানি পতিতালয়ে মেয়ের অভাব নাই। বাট বৃষ্টি……। শি ইজ সো….

.
.
-আয়াজ চৌধুরীইইইইইই।বৃষ্টির নামে আর একটা বাজে কথা বললে আপনাকে এখানেই পুতে দিব আমি।
-মি মেঘ কলারটা ছারুন।নাহলে আজকে এই অফিসে আপনার লাস্ট ডে হবে।
আমি উনার কলারটা ছেড়ে দিয়ে কেবিন থেকে বের হয়ে আসলাম।রাগে গা জ্বলে যাচ্ছে অথচ করার কিছুই নাই।
.
.
-হোয়াট দ্যা হেল? একটা মানুশ এতোটা নিচ কেমনে হইতে পারে?মানে শি ইজ ইওর ওয়াইফ এটা তো উনি জানেন তবুও?
-রেওয়াজ উনি জেনে শুনেই কাজটা করেছেন।
-বাট এসবের সাথে বৃষ্টির সম্পর্ক কি?তার বা দোষ কোথায়?আল্লাহ তাকে সুন্দর বানিয়েছেন এটাতে তার করার কি আছে?তুই কেন বৃষ্টিকে ছাড়লি?
-ভাই আমার নিশ্বাস নে।আর আমি বৃষ্টিকে ছাড়িনি সে আমাকে ছেড়ে চলে গেছে।
-হোয়াট?আর ইউ কিডিং মেঘ?বৃষ্টি ভাবী তোকে ছেড়ে গেছেন?সেটা আমাকে বিশ্বাস করতে হবে?আর সেটা কিসের জন্য?
-টাকার জন্য।….
চলবে

#অর্ধাঙ্গিনী(An Ideal Wife)
#পার্ট১৪
#আফরিন_ইনায়াত_কায়া
.
.

-হোয়াট?টাকার জন্যে?মেঘ আর ইউ কিডিং?বৃষ্টি তোকে ছেরর চলে গেছে টাকার জন্য?!!ওহ গড নাইস জোক।
-আমি জানি রেওয়াজ তুই মানবি না।আমার ডায়রীটা পরেই তুই বৃষ্টিকে এতটা বিশ্বাস করে ফেলছিস।অথচ আমি তো ওর সাথে ছিলাম। ওর অস্তিত্বে মিশে ছিলাম। ও তো আমার অর্ধাঙ্গিনী ছিল।তাহলে ভাবতো আমার কতোটা কষ্ট হয়েছিল!আমার ও মনে হচ্ছিল যা দেখছি সব ভুল। বাট বৃষ্টি নিজে মুখে সবটা স্বীকার করেছে দোস্ত।

.
.
মেঘের কথা শুনে রেওয়াজ থ বনে গেল।কি বলবে ভাষা খুজে পাচ্ছে না সে।সবকিছুই ওলোট পালোট হয়ে যাচ্ছে।মাথা তুলে জিজ্ঞেস করল
-কি এমনটা দেখেছিলি মেঘ?
মেঘ একটা তাচ্ছিল্যের হাসি দিল।
-আয়াজ চৌধুরীর কাছ থেকে ফেরার পর থেকে মাথার শুধু একটা চিন্তাই ঘুরঘুর করছিল যে কিভাবে এই ঝামেলা থেকে রেহাই পাব?!! আমি যথাসাধ্য চেস্টা করছিলাম একটা উপায় বের করার। বাট ভাগ্য সহায় না হলে হাটু পানিতেও মানুষ ডুবে মারা যায়। সাইট ওয়ার্কারদের সাথে কথা বলে জানতে পারলাম উনারা নিজেও জানেন না কেন ধর্মঘট ডাকা হয়েছে।উনাদের লিডার সবাইকে কাজে যেতে নিষেধ করেছে।আকিজ ইন্ডাস্ট্রির মালিকের সাথেও যোগাযোগ করলাম।উনারা একদিন ও সময় বাড়াতে রাজী নন। নিজেকে বিধ্বস্ত মনে হচ্ছিল।এতোটাকা কেউ লোন ও দিতে রাজি হচ্ছিল না।ভিটে মাটি টুকু বিক্রি করলে মাকে কি জবাব দিব?সব দিক দিয়ে যেন আমি মাঝ সাগরে হাবুডুবু খাচ্ছিলাম। সিদ্ধান্ত নিলাম বৃষ্টিকে জানাবো।
.
.
-তারপর?
একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে মেঘ বলতে লাগল
-বৃষ্টিকে অনেক কষ্টে আমি সবটা বললাম। ইভেন আয়াজ চৌধুরীর জঘন্য প্রস্তাবের কথাও বললাম।
সবটা শুনে বৃষ্টি খুব নরমাল একটা রিয়েকশন দিল। যেন ওর কাছে সবটাই খুব নরমাল।আমি ভাবলাম হয়তো আয়াজের কথা শুনে বৃষ্টি শক পেয়েছে এরকম বিহেব করছে।আমি বৃষ্টির দু হাত চেপে ধরলাম শক্ত করে।
-বৃষ্টি এখন তুমি বলো আমি কি করব?আমি কিভাবে এই বিপদ থেকে রক্ষা পাব?
-তোমার বসকে হ্যা বলে দেও।(বৃষ্টির ভাবলেশহীন উত্তর)
-বৃষ্টি তোমার কি মাথা খারাপ হয়ে গেছে?তুমি বুঝতেও পারতেছো তুমি কি বলছো?তুমি আমার ওয়াইফ বৃষ্টি। তোমার কি একটুও বিবেকে বাধল না কথাটা বলতে?নাকি আমাকে এখন আর ভালোলাগে না তোমার?
-মেঘ তুমি কি পাগল হয়ে গেলা?কি বলছ এসব?
-পাগল আমি যাইনি বৃষ্টি পাগল তুমি হয়েছো।তুমি কিভাবে এই কথাটা বলতে পারলা?বৃষ্টি..
-মেঘ রিলাক্স। আমি উনাকে হ্যা বলতে বলছি তার মানে এটা না আমি উনার সাথে রাত কাটাতে রাজী হয়ে গেছি।তুমি আমাকে বিশ্বাস করো আমি সব ঠিক করে দিব।
.
.
-বৃষ্টির কথা শুনে মনে হলো যেন বুক থেকে একটা বড় পাথর নেমে গেল।কিন্তু আয়াজ চৌধুরী ও তো ছেড়ে কথা বলার মানুষ না।
কিছুদিন পর আমাকে আয়াজ চৌধুরী আবার তার কেবিনে ডেকে পাঠালেন।
-আসুন মেঘ সাহেব। তা কি ভাবলেন আমার প্রোপোজালের ব্যাপারে?
-আসলে বৃষ্টি……..।
-আমি জানি উনি রাজী হবেন। আসলে আমার মতো হ্যান্ডসাম আর রিচ ছেলের সাথে টাইম স্পেন্ড করা প্রতিটা মেয়ের ইচ্ছে থাকে।আফটার অল বৃষ্টিও তো একজন মেয়ে।
বলেই আয়াজ চৌধুরী বিজয়ের হাসি হাসতে লাগলেন।প্রচন্ড মেজাজ খারাপ হয়ে আসল।মুহুর্তেই মাথা কাজ করা বন্ধ হয়ে গেল।বৃষ্টির সব কথাই সেই মুহুর্তে মিথ্যে মনে হচ্ছিল।
-মি.আয়াজ চৌধুরী বৃষ্টি আপনার প্রোপোজাল রিজেক্ট করে দিয়েছে।ইভেন কোন কারনে আল্লাহ না করে আপনার কথা সত্যি হলে আমি কোনদিন বৃষ্টিকে আপনার কাছে যেতে দিব না।
আমার কথা শুনে আয়াজ চৌধুরীর হাসি মুখটা নিমিষেই বদলে গেল।দাতে দাতে চেপে বললেন
.
.
-মি মেঘ ঘি সোজা আঙুলে না উঠলে আঙুল বাকা করতে হয়। আর আঙুল কিভাবে বাকা করতে হয় সেটা আমি ভালো করেই জানি।
বলেই উনি সানগ্লাস এটে চলে গেলেন।
.
.
অফিস আওয়ার শেষে ক্লান্ত হয়ে বাসায় ফিরছি।হঠাত করে মনে হলো মায়ের ওষুধ শেষ৷ হয়ে গেছে।গাড়ি পার্ক করে পাশের একটা ফার্মেসীতে নামলাম মেডিসিন কেনার জন্য।ফিরে এসে গাড়িতে বসতেই চোখ গেল সাইড মিররের দিকে।নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছিলাম না।বৃষ্টি আর আয়াজ চৌধুরী দাড়িয়ে আছে।আমি কনফার্ম হওয়ার জন্য বৃষ্টিকে কল দিলাম।বৃষ্টি কল রিসিভ করেই বলে উঠল
-মেঘ আমি ব্যস্ত পরে কথা বলব ।
আমাকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই কলটা কেটে দিল সে।কিছুক্ষন কথা বলে বৃষ্টি আয়াজ চৌধুরীর সাথে হাত মিলিয়ে অটোতে উঠে পরল।আমি গাড়ি ঘুরিয়ে বাসায় চলে আসলাম।………
চলবে