আবদ্ধ আমি পর্ব-১৪

0
541

#আবদ্ধ_আমি
#নিয়াজ_মুকিত
#১৪তম_পর্ব

এমন একটা কাজে লিড দিতে চলেছি যা সমাজে সবচেয়ে সবচেয়ে নিম্নমানের ‌একটা কাজ।তবুও কেন জানি আমার গর্ব হচ্ছে?মনকে প্রশ্ন করি,কেন আমার গর্ব হচ্ছে?
আমার মনটাও আহান ভাইয়ের মতো হো হো করে হেসে ওঠে।তারপর খোঁচা মেরে উত্তর দেয়,কাজটা যতই খারাপ‌ হোক তোর‌ লক্ষ টা তো ভালো।আমি মনের কথায় সায় দেই।

খালি গায়ে হোন্ডা চালাচ্ছে চাচা রুপি ভাইয়াটা।আমি তার দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বলি,
–“ভাই তোমার নাম কি?”
লোকটার ভাব দেখে কিছুটা অবাক হই‌ আমি।যেন মনে হচ্ছে আমি তার সাথে বিশাল কোনো দুর্নীতি করছি।সে মুখটা পেঁচার মতো‌ করে বলে,
–“রহিম মিয়া।কিন্তু সবাই‌ পটল ভাই কইয়া ডাকে”

তার কথা শুনে অনেক কষ্টে হাসি থেকে‌ নিজেকে বিরত রাখি আমি।পটল ভাই।হায়রে কি নাম?
আমার ‌মুখের ভাব মোটেও‌ পছন্দ হয় না পটল‌ ভাইয়ের।সে বিরক্তি নিয়ে তার হোন্ডা চালাতে থাকে।

আমি তাকে বলে ‌দিচ্ছি কোথায় যেতে হবে?কথায় কথায় একপর্যায়ে বলি,
–“পটল ভাইয়া,আজকে হাসতেছো‌ না কেন?হাসি ছাড়া তোমাকে মানায় না।”

আমার কথা শুনে বেশ খুশি হয় পটল ভাই।সে আমার দিকে তাকিয়ে তার হলদেটে দাঁত বের করে বলে,
–“সত্ত্যি কইতাছেন আফা।কিন্তু অনেক লোক কয় আমি‌ হাসলে নাকি আমারে বাদরের মতো‌ লাগে।তাই হাসতেছি‌ না।”
পটল ভাইয়ের খুশি দেখে ভালোই লাগে।তার খুশিটাকে আরেকটু বাড়িয়ে দেয়ার জন্য আমি বলি,
–“তাদের কথা শুইনেন না।বোঝে না‌ কিছু ওরা।তুমি মরার আগ পর্যন্ত হাসতে থাকবে।যারা তোমাকে বলছে তারাতো মুর্খ”

আমার দিকে না তাকিয়ে পটল ভাই অজ্ঞাত সেই মানুষগুলোর উদ্দেশ্য অসম্মানসূচক গালি দিতে থাকে।মাঝে মাঝে আমি‌ কয়েকটা গালি যোগ করে দেই তার কথায়।

গালি দিতে দিতে আমরা পৌঁছে যাই নিদ্রদের বাসার সামনে।একটু দূরে হোন্ডা দাঁড় করতে বলি পটল ভাইকে।আমার নির্দেশ অনুযায়ী একটু নয় অনেকটা দুরে হোন্ডা দাঁড় করায় পটল ভাই।তাকে এর কারন জিজ্ঞাসা করলে সে বিচারকের ভাব নিয়ে বলে,
–“চুরির সময় সচেতন থাকা ভালো।এটা আমার বাবার উপদেশ”

আমি অবাক হয়ে তাকে জিজ্ঞাসা করি,
–“আপনার বাবাও‌ কি চুরি করতেন পটল ‌ভাই”
আমার কথা শুনে পটল ভাই হো হো করে হেসে ওঠে।আমি ভ্রু কুঁচকে তার হাসার কারন বোঝার চেষ্টা করি।সে হাসতে হাসতে আমাকে উদ্দেশ্য করে বলে,
–“শুধু চোর নয় পাক্কা‌ চোর ছিলেন।”

চুপি চুপি নিদ্রদের বাসার দিকে এগোতে থাকি‌ আমরা।বাসাটা দেখে গা ঝমঝমিয়ে ওঠে আমার।কেমন ভুতুরে‌ একটা বাসা।পটল ভাই পর্যবেক্ষকের দৃষ্টি ফেলে বাসার চারদিকটা পরিদর্শন করতে থাকে।ভাব দেখে মনে হচ্ছে বিখ্যাত কোনো চোর তিনি।

পরিদর্শন শেষে হাসি মুখে আমার সামনে এসে দাঁড়ান পটল ভাই।তারপর আমরা অপেক্ষা করতে থাকি রাতটা আরেকটু গভীর হোক।

কয়েকঘন্টা পর পটল ভাইআমার কাছ থেকে সরিষার তেলের বোতলটা নিয়ে গায়ে ঢেলে‌ দেন তিনি।আমি অবাক হয়ে তার কান্ড-কারবার দেখছি।পটল ভাই হাত দিয়ে সারা শরীরে মাখতে থাকেন তেল গুলো।

তারপর তিনি আমার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে ভিতরে প্রবেশ করেন।প্রবেশ করার আগে আমি তাকে‌ বুঝিয়ে দেই কোথায়,কিভাবে,কি চুরি করতে হবে।পটল ভাই‌ হাসি মুখে আমার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে চলে যান।

আমি বাহিরে দাঁড়িয়ে কিছুক্ষন তার জন্য দোয়া করি যাতে তিনি ধরা না পড়েন।তারপর একটা ঝোপের আড়ালে গিয়ে দাঁড়িয়ে থাকি।লক্ষ্য রাখি কখন বের হয় পটল ভাই।

বসে বসে ভাবতে থাকি পটল ভাইয়ের সাথে বিশাল একটা দুর্নীতি করে ফেলেছি‌ আমি যেটা এখনো জানেন না তিনি।দুর্নীতিটা এই‌ যে,তাকে জানানো হয় নি যে সে যার বাড়িতে চুরি করতে যাচ্ছে তারা ভ্যাম্পায়ার।জানলে অবশ্য চুরি করতে যেত না সে।মোটকথা তাকে বিপদে ফেলে দিয়েছি আমি।

ঝোপের আড়ালে বসে বসে মশা মাড়তে থাকি।অপেক্ষা করি কখন পটল ভাই ফিরবে।চোখ স্থির রাখি‌ পটল ভাই যেদিক দিয়ে ভিতরে প্রবেশ করেছে সেদিকে।

বেশ কিছুক্ষন বসে থাকার পরেও কিছু ঘটছে না দেখে কিছুটা চিন্তা হয় আমার।আমি উঠে দাঁড়াবো ‌এমন সময় আমার কানের কাছে আস্তে করে কেউ বলে ওঠে,
–“আফা কাজ শেষ।তারাতারি পালাইতে হইবো।”

কণ্ঠ শুনে বুঝতে পারি লোকটা কে?ঝট করে মাথা ঘুড়িয়ে দেখি হাসি মুখে দাঁড়িয়ে আছে পটল ভাই।হাতের মধ্যে নিধির সেই মোবাইলটা।পটল ভাইয়ের শরীরের সরিষার তেল পড়েছে মোবাইলে।সে আমার হাতে মোবাইলটা তুলে দিয়ে ফিসফিস করে বলে,
–“তারাতারি পলান?”
এই বলে সে দৌড়াতে থাকে।

আমি মনে করি নিদ্ররা মনে হয় আমাদের ধাওয়া করছে।তাই আমিও‌ পটল ভাইয়ের সাথে এলোপাতাড়ি দৌড়াতে শুরু করি।এই মুহুর্তে যে কেউ নিজেকে বিখ্যাত দৌড়বিদ চেপতেগেই মনে করবে।কিন্তু আমি নিজেকে উসাইন বোল্ট মনে করলাম।

একপর্যায়ে আমরা পৌঁছে যাই আমাদের কাঙ্খিত লক্ষ্য হোন্ডার কাছে।পটল ভাই হোন্ডায় উঠে বসে আমাকে উঠতে বলে।আমি উঠে বসতেই সে তার হোন্ডা ছোটাতে শুরু করে।আমি‌ বারবার পিছনে তাকিয়ে দেখি কেউ‌ আসছে কিনা।

পটল ভাইয়ের কাছে চুরির বিস্তারিত ঘটনা জানতে চাইলে সে তার হোন্ডা চালাতে চালাতে বলে,
–“আফা জীবনে যতগুলা বাড়িতে চুরি করছি তার সবগুলার চেয়ে এই বাড়িতে চুরি করা‌ সবচেয়ে সহজ।”

আমি অবাক হয়ে তার কাছে বিস্তারিত জানতে চাই।পটল ভাই সামনে চোখ স্থির রেখে আমাকে উদ্দেশ্য করে বলতে‌ শুরু করে,
–“আমি ভিতরে প্রবেশ করে দেখি বাড়িতে কেউ‌ নাই।আমি‌ অতি সাবধানতার সঙ্গে চারদিকটা ঘুরে দেখতে থাকি।একপর্যায়ে‌ লক্ষ্য করি বাড়ির এক কোণে একটা ঘরে একটা মেয়ে‌ শুয়ে আছে।আমি ‌আস্তে করে ভিতরে প্রবেশ করে কথামতো মোবাইলটা নিয়ে নেই।ব্যাস কত সোজা কাজ।”

আমি অবাক হয়ে পটল ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে বলি,
–“তাহলে এত দেরি হলো কেন?”
পটল ভাই তার হলদেটে দাঁত বের করে হাসতে হাসতে বলে,
–“আফা আমার না এইসব টাচ-ফাচ মোবাইল ‌চালানোর খুব শখ।তাই বাড়ির এককোণে বইসা কিছুক্ষন চালাইছি।কিছু করি নাই শুধু একটা নাটক দেখছি”

আমি অবাকের চুড়ান্ত পর্যায় অতিক্রম করে ফেলি।এইটা মানুষ নাকি এলিয়েন।বাপরে,এত সাহস।বুঝতে পারি বেশ সাহসী চোর ছিলেন পটল ভাই।

কথায় কথায় আমরা এসে পৌঁছাই‌ আমাদের বাসার সামনে।পটল ‌ভাইয়ের হাতে এক হাজার টাকার একটা নতুন নোট দিয়ে দেই‌ আমি।সে টাকা নিতে না চাইলেও জোর করে তাকে দেই‌ আমি।

তারপর সে চলে গেলে আমি ব্যালকনি থেকে ফেলা কৃত্রিম মইটা দিয়ে‌ উপরে উঠতে‌ শুরু করি।কৃত্রিম মই বলতে আমার রুমের বেডশীট।নামার সময় সেটা বেধে রেখে নেমেছি।এখন ওটা ধরে উপরে উঠি।

বহু কষ্ট করে উপরে উঠতে সক্ষম হই আমি।বেডশীট খুলে দেখি অনেকাংশ ছিড়ে গেছে।আমি সেটা রেখে ওয়াসরুম থেকে ফ্রেস হয়ে আসি।তারপর মোবাইলটা নিয়ে বসে পড়ি।প্রথমে একটা টিস্যু দিয়ে স্কিনটা ভালোভাবে পরিষ্কার করে ফেলি।তেল গুলো মুছে ফেলি আমি।

মোবাইলটা অন করে দেখতে পাই‌ লক দেয়া ‌নেই।ভাগ্যিস,নাহলে কত যে প্রবলেম হতো।এখন আসল কথা হচ্ছে ভিডিও খুঁজে পাবো কিনা?আহান ভাইকে দেখালে সে কি আমাকে মেনে নেবে নাকি বিয়ে করবে নতুন কাউকে?

চলবে..ইনশাআল্লাহ