আমার আসক্তি যে তুমি Part-4

0
4662

#আমার_আসক্তি_যে_তুমি
#Part_4
#Writer_Asfiya_Islam_Jannat
.
মেডিক্যালে মন খারাপ করে বসে আছি। এর মুক্ষ কারণ আজ আমার চিঠি পেরকের ফুলদর্শন হয় নি। এই ২ বছরে এই প্রথম এমন হয়েছে যে সে আমায় ফুল পাঠায় নি।
ঝড় হোক তুফান হোক বছরের ৩৬৫ দিনই আমার জন্য যেখানে ফুল আর চিঠি বরাদ্ধ ছিল সেখানে আজ তা নেই। কেন নেই ভেবেই কান্না পাচ্ছে আমার। নিজেকে আজ ফাঁকা ফাঁকা লাগছে। এক মিশ্রিত অনুভূতি কাজ করে চলেছে। এই ২ বছরে এইটা আমার এক বদভ্যাসে পরিণত হয়েছিল তাই হয়তো আজ এই অভ্যাসের অনিয়মের জন্য এমন লাগছে। আমাকে এইভাবে মন খারাপ থাকতে দেখে রিংকি বলে উঠে।
.
রিংকিঃ কিরে, মুখটা এমন জেলখানার অফু ভাইয়ের মত করে রাখছিস কেন???
.
আরিশাঃ রিংকু তুই আবার জেন্ডার মিস্টেক করতাসো। ওইটা অফু খালাম্মা প্রো হইব?
.
এইটা বলতে দেরি কিন্তু দুইজনের পিঠে বারি পড়তে দেরি নেই। আমি রাগে ফুসতে ফুসতে বলি।
.
রিয়ানাঃ আমি অফু খালাম্মা প্রো তাই না! দিব এক কানের নিচে। কার সাথে কারে মিলাস তোরা আমারে!!?
.
রিংকিঃ তুইইইইইই অফু ভাইরে চিনসসসসসস? কেমনে সম্ভব?? যেখানে তুই এত নামি দামি মানুষদের চিনিস সেখানে এই চিচিঙ্গারে অফুরে কেমনে চিনস তুই???
.
আরিশাঃ সত্যি করে বলে বেপার কি?? ক্রাশ খাইসো নি মনু?
.
আবার পড়লো দুইজনের পিঠে বারি।
.
রিয়ানাঃ Shut up!!!! আমি নিউস আর টিভি নাই দেখতে পারি এর মানে এই না যে ফেসবুকও দেখি না বা চালাই না। ওর ট্রোলে ফুল ফেসবুক ভরা।
.
আরিশাঃ অপসসস সরি!! ভুলেই গেসিলাম হি ইজ আ ফেমাজ ভেটকি বয়।?
.
আমি এই কথা শুনার সাথে সাথে হেসে দেই। এই দুই বান্দরনী আমার মন খারাপ দেখতেই পারে না। যতক্ষন না হাসবো ততক্ষন ওদের শান্তি নেই।
এরই মাঝে মাইকে এনাউন্সমেন্ট হলো যে ১৫ মিনিটের মধ্যে লাস্ট ইয়ারের স্টুডেন্টদের হলরুমে উপস্থিত হতে হবে। আর আমরা যেহেতু লাস্ট ইয়ারের স্টুডেন্ট সেহেতু এনাউন্সমেন্ট শুনার সাথে সাথে হলরুমে চলে যাই।


?


হলরুমে বসে আছি। একেক করে সবাইকে গ্রুপে ভাগ করে দেওয়া হচ্ছে। ইন্টারসিপের জন্য সকলকে একেক সেক্টরে ভাগ করে দেওয়া হচ্ছে।
অবশেষে দেখতে দেখতে আমার চান্সও এসে পড়লো। আমি, আরিশা,রিংকি একই টিমে পড়েছি। মোট ২০ জনকে সিলেক্ট করা হয়েছে।
অতঃপর হসপিটালের নাম জানতে চাইলে প্রফেসর বলে উঠে।
.
প্রফেসরঃ তোমরা সকলেই ” খান কার্ডিওলজিস্ট এন্ড নিউরোলজিস্ট হসপিটালে ” ইন্টারসিপের জন্য যাচ্ছ। আর তোমরা ড. “সাদাত খান রিয়ানের” আন্ডারে কাজ করতে চলেছ। পরশু তোমরা সেখানে যাচ্ছ। সো বি রেডি গাইস।
.
এই শুনার সাথে সাথে সকল মেয়েদের মুখ উজ্জ্বল হতে উঠে। তারা যেন আকাশের চাঁদ পেয়ে গেছে এমন অবস্থা। রিংকি আর আরিশা তহ খুশিতে নেই। কিন্তু এর সবই আমার মাথার উপর দিয়ে গেল।


?

রিয়ানাঃ কাহিনী কিরে?? তোরা এত খুশি কেন?? তোদের দেখে মনে হইতাসে যে তোরা যেন কোন গুপ্ত ধন পেয়ে গেছিস।
.
আরিশাঃ আরেহ গুপ্ত ধনই তহ পেয়ে গেছি মাই লাভ?
.
রিংকিঃ আমার বিশ্বাস হইতাসে আমি ড. রিয়ানের এর আন্ডারে কাজ করবো!!
.
রিয়ানাঃ আজিব তহ!! আমি জানি “খান হসপিটালে ” অনেক নাম করা একটা হসপিটাল আর সেখানে ইন্টারসিপ করা ইজ লাইক আ গোল্ডেন চান্স ফোর লাইফ। মোর ওভার ড. রিয়ানও ইজ দ্যা বেস্ট কার্ডিওলজিস্ট ইন বাংলাদেশ। তার সাথে কাজ করে আমরা অনেক কিছুই শিখতে পারবো বাট এতে এত খুশি হওয়ার কি আছে?? এমনেও তাদের সাথে এক না এক সময় দেখা হতোই।
.
রিংকিঃ তুই বুঝতাসো রিয়ানের কথা হচ্ছে এইখানে। সে আমার বিগেস্ট ক্রাশ বইন।
.
রিয়ানাঃ তুই না কালকে বললি ওই আবির না কাবির তোর সবচেয়ে বড় ক্রাশ???
.
রিংকিঃ তাতে কি?? দুইজনেই আমার ক্রাশ?
.
আরিশাঃ আমিও রিয়ান স্যারের উপর ক্রাশিত?
.
রিয়ানাঃ তোদের লজ্জা করে না?? শেষে কিনা বুইড়া বেটার উপর ক্রাশ খাইলি?
.
দুইজনেই একসাথে ” মানে ” বলে চিল্লিয়ে উঠে।
.
রিয়ানাঃ মানে হলো যে..
আমি আর কিছু বলতে যাব তার আগেই আমার টিউশন এলার্ম বেজে উঠে। আমি আর কিছু না বলে তারাহুড়া করে উঠে পড়ি আর ওদের দিকে তাকিয়ে বলি।
.
রিয়ানাঃ পড়ে কথা বলবো নে, এখন তাড়া আছে বাই।
এই বলে দ্রুত পা চালিয়ে চলে আসি।


???


বর্ষার আগমন হয়েছে এই ২ সপ্তাহ আগে। বর্ষার এই বর্ষন যে ঠিক কখন হয় তা বলা মুশকিল। হুট করেই প্রকট হয় সে সাথে তমুল ঝড় নিয়ে। যেমন কালকে রাতেই বর্ষার বর্ষনে ভরিয়ে গিয়ে গেছে রাস্তা ঘাট। চারদিকে এখনো তার ছাঁপ রয়ে গেছে মানে কাঁদা স্বরুপ।
আমি রাস্তা পাশ দিয়ে সাবধানে হেটে চলেছি। রাস্তাটা বেশ পিচ্ছিল হয়ে আছে বলে। যেতে যেতে পাশে ফুলের দোকান চোখে পড়ে আর সাথে সাথে সেই চিঠি পেরকের কথা মনে পড়ে যায়। মনে পড়ার সাথে সাথে মনটা বিষন্নতা নামক কালো মেঘে ভরে যায়। বিভিন্ন উটকো চিন্তা মাথায় মাছির মত ভন ভন করতে থাকে।
.
রিয়ানাঃ আচ্ছা সে কি অসুস্থ? নাকি কোন কাজে ব্যস্ত? নাকি তার আমার উপর থেকে ইন্টারেস্ট উঠে গেছে? নাকি সে হারিয়ে গেল? কোথায় গেল?
.
আমি যখন এইসব আকাশ পাতাল ভাবছিলাম তখন হুট করে কোথ থেকে এক গাড়ি এসে আমার সামনে এসে ব্রেক মারে যার ফল স্বরুপ মাটিতে থাকা কাঁদা আমার উপরে এসে পড়ে। পুরো ড্রেস কাঁদা দিয়ে মাখামাখি অবস্থা। কিছুটা চুলে গিয়েও বেধেছে। কাঁদা লাগার সাথে সাথে আমি বাস্তবে ফিরে আসি আর আমার এই রকম অবস্থা উপলব্ধি করতে পেরে দেই এক চিল্লান। আমার চিৎকারে সবাই আমার দিকে তাকিয়ে থাকে।
কিন্তু আমি সেইদিকে ধ্যাম না দিয়ে রাগে ফুসতে ফুসতে সেই গাড়ির সামনে যাই। সামনে গিয়ে গ্লাসে নোক করি। আর বাইরে আসতে বলি।
বেশ কিছুক্ষন গাড়ি থেকে একজন নেমে আসে। আমি তাকে ভালো মত নিচ থেকে উপর পর্যন্ত স্ক্যান করি নেই।
আমার সামনে একটা ছেলে দাড়িয়ে আছে। গায়ের রং উজ্জ্বল শ্যামলা। পড়নে তার ব্লু শার্ট, ব্লু ডেনিম প্যান্ট, ব্লু কেডস। চুলগুলো বড় হওয়ায় চোখের সামনে এসে পড়েছে। দেখতে বেশ হ্যান্ডস্যাম বাট তাতে আমার কি??
আমি তার সামনে গিয়ে কিছু বলতে যাব তার আগেই সে বলে উঠে।
.
ছেলেটিঃ Hey mis. একটু দূরে দাড়ান প্লিজ। You are stinking. এই বলেই নাক ছিটকায় সে।
.
কথাটা শুনার সাথে সাথে গাঁ জ্বলে যায় আমার।
.
রিয়ানাঃ Ohh hello mr. আপনার জন্যই আমার এই অবস্থা। গাড়ি কি দেখে চালাতে পারেন না??চোখ কোথায় থাকে আপনার?
.
ছেলেটিঃ What the hell!! Mind your language!!
.
রিয়ানাঃ লেংগুয়েজের তহ এসে কি তেসি!! একে তহ আমার পুরা ড্রেস নষ্ট করে দিয়েছেন আর এখন আবার ইংরেজি ঝাড়ছেন। যতসব ইংরেজের পোলাপাইন।
.
ছেলেটিঃ আপনি যে মহা বেয়াদব তা কি আপনি জানেন? পায়ে পা লাগিয়ে ঝগড়া করেই চলেছেন।
.
রিয়ানাঃ কি আমি পায়ে পা লাগিয়ে ঝগড়া করছি!! একে তহ নিজে দোষ করলেন আবার আমায় মিথ্যা অপবাদ দিচ্ছেন!! দেখে আমার কি অবস্থা করেছেন আপনি। ?
.
ছেলেটি একবার আমাকে নিচ থেকে উপর পর্যন্ত চেক আউট করে নিল। তারপর বলে।
.
ছেলেটিঃ অন্য কেউ হলে হয়তো এতক্ষনে সরি বলে তার ভরপাই করে দিতাম বাট আপনার মত বেয়াদব মেয়েকে এত সম্মান দেওয়ার কোন মানেই হয় না। আপনি আমার সরি ডিসার্ভ এই করেন না।
.
রিয়ানাঃ কিইইইইইইই!!! এত বড় অপমান!!!
.
ছেলেটিঃ হু। কথায় আছে না “যেসে কো তেসা” ঠিক তেমনই। আমার সাথে যেমন বিহ্যাভ করেছেন আমিও ঠিক সেই রকম ব্যবহারই আপনাকে ফিরিয়ে দিয়েছি। সো এখন কথা না বারিয়ে যান গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নিন। You are stinking too much .
.
এই বলে ফিরে যেতে নেয়। রাগে আমার গা জ্বলতে থাকি। আমি নিজ থেকে এক মুঠ কাঁদা উঠিয়ে তাকে ডাকি। সে আমার ডাকে পিছে ঘুরতেই তার উপর আমি সেই কাঁদাটা ছুড়ে মারি।
কাঁদাটা গিয়ে তার বুকে আর মুখে লাগে। সে চোখ বন্ধ করে থাকে। হয়তো নিজের রাগ সংযত করার চেষ্টা করছে। কিন্তু তাতে আমি কি?? আমি তার সামনে গিয়ে বলি।
.
রিয়ানাঃ Now you are stinking more than me. আপনার থেকে তহ এখন পঁচা ইদুরের গন্ধ বলছে। ইয়াক!! আরেকটু থাকলে আমি বমি এই করবো।
.
ছেলেটা কিছু বলতে যাবে তার আগেই আমি তাকে থামিয়ে বলি।
.
রিয়ানাঃ আর হ্যাঁ একটা কথা তহ নিশ্চয়ই শুনেছেন ” যো যেসা কারেগা ভো ভেসা ভারেগা “। তহ আজ নিজের চোখের সামনে দেখে নেন।
.
তাকে আর কিছু বলতে না দিয়ে আমি একটা রিকশা নিয়ে চলে আসি। মেজাজটাই খারাপ হয়ে আছে আমার। তার চৌদ্দ গুষ্টি উদ্ধার করতে থাকি। তার জন্য আজ টিউশনিতে লেট হয়ে গেল। উফফ অসহ্য।

এইদিকে,
.
ছেলেটিঃ How dare she! আমাকে Insult করা। সাদাত খানকে!! এত কথা শুনানোর সাহস কিভাবে পায় এই পিচ্চি মেয়েটা।
দোয়া করি এই মেয়ের সাথে যাতে লাইফে দেখা না হয়। বাই এনি চান্স লাইফে যদি আর কোনদিনও দেখা হয় আই সোয়ের এর সাথে আমি কি করবো আমি নিজেও জানি না।
এই বলে কয়েকটা টিস্যু নিয়ে খানিকটা কাঁদা মুছে গাড়িতে বসে চলে যায় সে।


#চলবে