এই মন তোমারি পর্ব-০৫

0
255

#এই_মন_তোমারি

#পর্ব_৫

#লেখনীতে_নুজাইফা_নূন

-“পরে যখন জানতে পারলাম আমার চুল আমার বাপের অনেক পছন্দ ছিলো, তখন আর আমার বিরক্ত লাগে নি। আমার মনে হয় এই চুলে আমার বাপের হাতের ছোঁয়া আছে, ভালোবাসা মিশে আছে বলতে বলতে সূরার চোখ ভিজে গেলো।যা দেখে শাফায়াত বললো,

-” তোমাদের মেয়ে জাতির ঐ এক সমস্যা। কিছু পারো বা না পারো কথায় কথায় ঠিক চোখের পানি নাকের পানি এক করে দিতে পারো‌।কথায় কথায় এমন চোখের পানি ফেলে কি শান্তি পাও বলো তো।”

-“শাফায়াতের কথা শুনে সূরা তৎক্ষণাৎ শাফায়াতের দিকে ঘুরে তার শার্ট টেনে নিজের নাক পরিষ্কার করে কিছু বলার আগেই শাফায়াত চিৎকার করে বললো, ছিঃ ছিঃ এটা কি করলে তুমি ? নাক পরিষ্কার করার জন্য আর কিছু পেলে না বে’য়া’দ’ব মেয়ে? ”

-” এমন ভাব করছেন যেন আমি আপনার শার্ট দিয়ে নাক নয় হা’গু পরিষ্কার করছি।নাকে তো শুধু পানি থাকে।একটু পানি মুছেছি তো কি এমন হয়ছে?”

-” শাফায়াত প্রতিত্তরে কিছু না বলে রাগে গজগজ করতে করতে ওয়াশরুমে চলে গেল।তার যাওয়ার পানে তাকিয়ে সূরা বললো, যাহ্ বাব্বা আমি তো তার সাথে তুই তুকারি করি নি।তাহলে ব্যাডা এমন রাগ করলো কেনো? আমি কি খারাপ কিছু বলছি বা করছি? ”

___________________________________

-” আমাকে কি তোমার মানুষ মনে হয় না নাজমা? তোমাকে কতো বার বললাম এমন একটা গাইয়া, অশিক্ষিত মেয়ের সাথে শাফির বিয়ে দিয়ে ছেলেটার জীবন নষ্ট করে দিও না। কিন্তু তুমি তো আমাকে মানুষ বলেই মনে করো না। আমার কথার কোনো মূল্য আছে তোমার কাছে?শাফি যেমন তোমার ছেলে তেমনি আমার ও ছেলে।ওর জীবনের সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকার শুধু তোমার একার নয় , আমার ও আছে।একে তো তুমি বিয়েটা দিয়ে মস্ত বড় একটা ভুল করেছো।এখন আবার চায়ছো সেটা ঢাক ঢোল পিটিয়ে পুরো শহরের মানুষ কে জানাতে? তাদেরকে এটা জানতে চায়ছো যে শহরের নামকরা একজন বিজনেস ম্যান শফিকুল দেওয়ান এর একমাত্র ছেলে শাফায়াত দেওয়ান একজন গাইয়া , অশিক্ষিত মেয়েকে বিয়ে করে নিয়ে এসেছে?দেখ নাজমা তুমি খুব ভালো করে জানো এই সমাজে আমার যথেষ্ট নামকাম আছে।সবাই যখন জানবে আমার একমাত্র ছেলের ব‌উ একটা গাইয়া অশিক্ষিত ,তখন সমাজে আমি মুখ দেখাতে পারবো না।লোকে ছিঃ ছিঃ করবে আমাকে।”

-” এতো অহংকার তোমার? সমাজের লোকেদের দিয়ে তুমি কি করবে? সমাজ আমাদের খেতে পড়তে দিবে না।আজ সমাজের দোহাই দিয়ে তুমি মেয়েটাকে হেয় করে দেখছো।তাকে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করছো। তবে আমি ও বলে রাখি আজ তুমি যে মেয়েটার জন্য সমাজে মুখ দেখাতে পারছো না, সমাজের সামনে তার পরিচয় করিয়ে দিতে চায়ছো না, তাকে দূরে ঠেলে দিচ্ছো, একদিন সেই মেয়েটা কে তুমি বুকে টেনে নিবে।তাকে নিয়ে তুমি গর্ববোধ করবে। পুরো শহরের মানুষ কে জানাবে এই গাইয়া অশিক্ষিত মেয়েটা তোমার একমাত্র ছেলের ব‌উ।”

-” চ্যালেঞ্জ করছো আমাকে?”

-” ধরে নাও চ্যালেঞ্জ ই করলাম।আমি মেয়েটাকে এমন ভাবে তৈরি করবো যে তুমি তাকে গাইয়া অশিক্ষিত বলতে গেলেও তোমার দশ বার ভাবতে হবে।আমি সত্যিই ভাবতে পারি নি তুমি এতোটা নিচ মনের। মনুষ্যত্ববোধ একজন মানুষের বড় পরিচয়। তোমার মধ্যে সেই মনুষ্যত্ববোধ টুকু নেই।”

-” তুমি একটা বাইরের মেয়ের জন্য আমাদের মধ্যে দূরত্ব সৃষ্টি করছো নাজমা।”

-” সূরা বাইরের মেয়ে নয়।ও এই বাড়ির একমাত্র ছেলের ব‌উ।আর সূরা কে নিয়ে নিয়ে যদি তোমার এতোই সমস্যা থাকে আমি বাধ্য হবো মেয়েটা কে নিয়ে অন্যত্র চলে যেতে।”

___________________________________
-” সূরা সুন্দর করে সেজেগুজে নিচে আসতে যাচ্ছিলো এমন সময় উপর থেকে নাজমা দেওয়ান আর শফিকুল দেওয়ান এর কথা কা’টা’কা’টি দেখে তার পা থমকে যায়।সূরা নাজমা দেওয়ান কে চিনলেও শফিকুল দেওয়ান কে চিনে না।তবে তার কথার ধরন দেখে বুঝতে পারে এটা তার শ্বশুর।যে তাকে তার পুত্রবধূ হিসেবে মানতে নারাজ।সূরার তার শ্বশুর শ্বাশুড়ির মধ্যে কথা কা’টা’কা’টি দেখে আর সাহস হয় না নিচে যাওয়ার।সূরা চোখের পানি মুছে নিজের রুমের দিকে পা বাড়ানোর আগেই নুজাইফা সূরা কে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে বললো, শুভ সকাল ভাবীমনি। আমাকে চিনতে পারছো তো? আম্মি সাথে আমিও তোমাদের বাড়িতে গিয়েছিলাম।তখন অবশ্য তোমার সাথে আমাদের কোনো সম্পর্ক ছিলো না। কিন্তু এখন তুমি আমার দশটা না পাঁচটা না একটা মাত্র মিষ্টি ভাবী লাগো। অবশ্য আমরা দুইজন সমবয়সী।তাই তোমাকে আমি তুমি করে বলবো কেমন?”

-” সূরা মুখে কিছু বললো না। শুধু মাথা নাড়িয়ে সম্মতি দিলো।

-“নুজাইফা বুঝতে পারলো সূরার মন খারাপ।সে সূরার মন ভালো করার জন্য বললো, আচ্ছা তুমি এতো কিউট কেন বলো তো?আমি যদি ছেলে হতাম আমি তোমাকেই বিয়ে করতাম। ভাইয়া তোমাকে দেখে নিশ্চয় মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে ছিলো? আচ্ছা বলো না তোমাদের বাসর রাতে কি কি হয়েছে? ভাইয়া তোমাকে নিশ্চয় অনেক আদর সোহাগ করেছে?”

-” তৎক্ষণাৎ সূরা নিজের খোলস থেকে বেরিয়ে বললো, জানো রাতে কি হয়েছে?”

-” আমি কিভাবে জানবো তোমাদের বাসর রাতে কি হয়েছে?”

-” আমি গোমড়া মুখো পুলিশের হাত কা’ম’ড়ে দিয়েছি বলে হো হো করে হেসে উঠলো সূরা।”

-” গোমড়া মুখো পুলিশ?”

-” হ তাকে আমি একটা ভালো নাম দিসিলাম সুন্দর ব্যাডা মানুষ। কিন্তু তার এই নাম পছন্দ হয় নি।তাই তো আবার নতুন করে গোমড়া মুখো পুলিশ রাখছি।ভালো হয়ছে না?”

-“নুজাইফা বুঝতে পারলো মেয়েটা অনেক সহজ সরল।সে বললো হ্যাঁ ভাইয়ার সাথে গোমড়া মুখো পুলিশ নামটা একদম পারফেক্ট হয়েছে। আর তোমাকেও ভাইয়ার সাথে দারুন মানিয়েছে।যাকে বলে মেইড ফর ইচ আদার।”

-” এটা আমার মন রাখতে বলছো তাই না? আমি অশিক্ষিত হলেও এতো টুকু বুঝতে পারছি যে আমি তোমার ভাইয়ার যোগ্য না। কোথায় তোমার ভাইয়া আর কোথায় আমি? আমি তো তোমাদের বাড়ির কাজের লোক হ‌ওয়ার ও যোগ্যতা রাখি না।”

-” এইভাবে বলছো কেন ভাবী মনি? কেউ কি তোমাকে কিছু বলেছে? ভাইয়ার হয়তো একটু রাগ হয়েছে। কিন্তু আমার ভাইয়া এমন নয় যে কোনো মেয়েকে অসম্মান করবে। তার গায়ে হাত তুলবে।”

-” আমার জন্য তোমাদের পরিবারে অশান্তি শুরু হয়েছে। শুধু মাত্র আমার জন্য শ্বশুর শ্বাশুড়ির মধ্যে ঝ’গ’ড়া হয়ছে।তবে এটা দেখে আমার ভালো লাগছে যে মনিরুল কাকার পরে কেউ একজন আমার জন্য ভাবে। আমার জন্য নিজের বরের মুখে মুখে তর্ক করছে।”

-” ওহ্ শুধু মাত্র আম্মি তোমার আপন হয়ে গেল। আমি তোমার কেউ ন‌ই?”

-” সূরা কিছু বলতে যাবে তার আগেই মাজেদা এসে বললো,ননদ ভাবী তে মিলে কি গল্প হচ্ছে শুনি? তো শুধু গল্প খেয়েই পেট ভরবে নাকি নাস্তা করা লাগবে?”

-” এই তো যাচ্ছি বলে নুজাইফা সূরা কে নিয়ে নিচে নেমে আসলো।সূরা কে দেখে নাজমা দেওয়ান বুকে টেনে নিয়ে কপালে চুমু দিয়ে বললো, যাও মা টেবিলে গিয়ে বসো।আমি খাবার বেড়ে দিচ্ছি। তুমি কি কি খেতে পছন্দ করো আমাকে বলবে কেমন।আমি নিজে হাতে তোমার পছন্দের রান্না করে দিবো।”

-” ঠিক আছে মা বলে সূরা চেয়ারে বসে সবে এক টুকরো পরোটা মুখে দিয়েছে এমন সময় শফিকুল দেওয়ান ডাইনিং টেবিলে উপস্থিত হয়।যা দেখে সূরা একটু ভীত হয়ে চেয়ার ছেড়ে উঠে তার খাবারের প্লেট নিয়ে ফ্লোরে বসে খাওয়া শুরু করে।”

চলবে ইনশাআল্লাহ।।