#এক_টুকরো_মেঘ ☁️
#ইফা_আমহৃদ
পর্ব::১৪(বোনাস)
হাতে দিয়ে ফিকনি দিয়ে রক্ত বের হচ্ছে অরিশের।। শুধু আয়না ভেঙ্গেও শান্তি হয়নি তার ,, ভেঙ্গে যাওয়ার আয়নার টুকরোগুলো হাতে চেপে ধরে আছে।।আর মুখে শুধু বলছে…..!!
— প্লিজ ফিরে আয় তোর অরিশের কাছে।। আমি জানি অনেক বড় ভুল করেছি ,,তোকে মেরে,,বাজে কথা বলে ।। তাই তো তোর মুখটা মনে পড়লে,,, নিজের হাত থেকে এমন ভাবে রক্ত জরাই।। আমি ওমন ভাবে বলতে চাইনি।। কিন্তু কি করবো বল ,, সেদিন যে আমার মাথা ঠিক ছিলো না।। এই ৫ বছর ধরে তোকে হারানোর মাসুল গুনছি ।।আর পারছি না।। শুধু একবার বল ,, তুই ফিরে আসবি।। আমি কথা দিচ্ছি,,তোর জন্য সারাজীবন অপেক্ষা করবো।।আর কখনো তোর সাথে ওমন করবো না।। শেষ বার কি ক্ষমা করা যেত না আমার ।। অনেক বার তো ক্ষমা করেছিস তোর অরিশ ভাইয়াকে আর একবার ক্ষমা করে প্লিজ ছুটে আয়।।ফিরে আয়।।
চিৎকার করে কথাগুলো বলতে বলতে ফ্লোরে বসে পড়লো অরিশ।।তার চোখের বাধ মানছে না আজ ।। শুধু আজ কেন এই ৫ বছরে কোনোদিন মানেনি।। প্রিয় মানুষটিকে হারানোর কি যে যন্তনা ,,সেই জানে যে প্রিয়জন হারিয়েছে।। নিজের করা ভুলের মাসুল দিতে হচ্ছে অরিশকে প্রতি মুহূর্তে।।আজ পর্যন্ত কেনো রাত সে ঠিক ভাবে ঘুমাতে পারি নি।। তরীকে দেওয়া শাড়িটা সে জরিয়ে ধরে শুয়ে থাকতো।। তরীর ব্যবহার করা পারফিউমটা সে সারা রুমে স্প্রে করে ,,, যাতে অরিশের মনে হয় ,,তার তরী তার কাছেই আছে।। সারাদিন পাগলামি করে কাটিয়ে দেয় ,, তাই ঘুমের মেডিসিন দিয়ে ঘুম পারিয়ে রাখা হয়।। কিন্তু ঘুমিয়ে শান্তি পায় না সে,,মনে হয় তরী আসে তার কাছে।। অনেকবার গিয়েছিলো তরীর সাথে দেখা করতে কিন্তু সে ফিরিয়ে দিয়েছে।। সোশাল মিডিয়ায় আপলোড করা ছবি ,,ভিডিও ,, প্রোগ্ৰাম দেখে নিজেকে শান্ত করে অরিশ।।
কিছুক্ষণের মধ্যেই আয়না আর চিৎকারের শব্দ শুনে অবিদুল,,অরনিমা আর আরশি ছুটে এলো অরিশের রুমে।। এটা নতুন কিছু নয় আগে থেকেই।।অরিশের এই অবস্থা দেখে বুকটা মুচড়ে উঠলো অরনিমা।। নিজের ছেলেকে কোন মা এভাবে দেখতে পারে।। তিনি এগিয়ে গিয়ে ছেলের পাশে বসে ,,,অরিশের গালে হাত রেখে ,, অরিশকে বুকে জরিয়ে ধরলো।। এতোক্ষণ অরিশ স্তব্দ হয়ে থাকলেও ,,, এখন সে তার মাকে জড়িয়ে ধরে আবারো ডুকরে কেঁদে উঠলো সে।।
— মা প্লিজ তোমার সন্তানকে বাঁচাও নাড়লে।।তোমার এই হাত দুটি দিয়ে তাকে মেরে ফেলো।।আমি আর এই দম বন্ধ হয়ে বাঁচতে পারছি না।। আমি মরে গেলে দেখবে ,, তরী আবার দেশে ফিরে আসবে ।। তোমাদেরও এভাবে আতংকে থাকতে হবে না।।(অরনিমার হাত দুটি ধরে গলার কাছে এনে অরিশ)
অরনিমা কি বলবে বুঝতে পারছে না।। তিনি তার হাত দুটি অরিশের গলা থেকে নামিয়ে ছেলেকে শক্ত করে জরিয়ে ধরে বললো…..!!
— বাবা এভাবে বলিস না,, মায়ের হাতে সন্তানের মৃত্যু তো দূরে থাক সন্তানের তিল পরিমাণ ক্ষতি মা কখনো নিতে পারে না।। (বলেই কেঁদে উঠলেন তিনি)
এক কোনায় দাঁড়িয়ে আছে আরশি ।। তার ধারনা আজ এই পরিস্থিতি শুধু মাত্র তার জন্য ,, যদি সেদিন ফারহানের সাথে পালিয়ে না যেত ,,তাহলে তার পিতৃতুল্য ভাইকে এতো কষ্ট পেতে হতো না।।
— আরশি ড্রয়ার থেকে একটা ইনজেকশন পুশ করে দে তো ।। একটু ঘুমালে ভালো লাগবে ।।(অরিশকে বেডে শুইয়ে দিয়ে অরনিমা)
আরশি ড্রয়ার খুলে একটা ইনজেকশন হাতে নিয়ে মায়ের দিকে এগিয়ে দিতে অরিশ বলে উঠলো….!!
— প্লিজ মা ,, তুমি আমাকে এটা দিও না।। আমি একদম ঘুমাতে পারি না তরী এসে ,, আমাকে বলতে থাকে”” ভাইয়া আমাকে এতো কষ্ট দিয়ে তুমি কিভাবে ঘুমাও ,, তখন আমার এইবুকটা কষ্টে ফেটে যায়।।(মায়ের কোলে মাথা দিয়ে হাত দিয়ে শক্ত ভাবে জরিয়ে ধরে অরিশ)
সবাই নিরব দর্শকের ভূমিকা পালন করছে।।কারো মুখে কোনো ভাষা নেই ।। হঠাৎ আরশি ফোনটা হতে নিয়ে বাহিরে গিয়ে ,, কাউকে একটা করলো।। তারপর ফিরে এসে অরিশের পাশে বসে তার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বললো….!!
— খুব তাড়াতাড়ি তোর তরী দেশে ফিরছে।। এখনো কি এভাবে শুয়ে থাকবি ।। নাকি হাত-পা কাটবি!!( কৌতূহল নিয়ে আরশি)
আরশির কথা কানে যেতেই অরিশ লাফ দিয়ে উঠে বসে বোনের হাত ধরে বললো….
— তুই সত্যি বলছিস আরু।। তরী দেশে ফিরবে!!নাকি আমাকে শান্তনা দিচ্ছিস।।(মন খারাপ করে)
— আমার কথা বিশ্বাস না হলে ,, যখন আসবে তখন দেখতেই পাবি ।। আর এখন চাইলে মামনিকে জিজ্ঞাসা করতে পারিস !!
অরিশ দৌড়ে বের হতে গেলে পেছন থেকে তার মা বলে
ওঠে …!!
— আরে আগে ফ্রেশ হয়ে তারপর যা ।। যদি তরী এসে তোকে এই অবস্থা দেখে মেয়েটার কেমন লাগবে ।।
অরিশ আর বাহিরে না গিয়ে ড্রয়ার থেকে জামাকাপড় বের করে সোজা ওয়াশরুমে ঢুকে গেল।। ছেলের মুখে হাসি দেখে বাবা মা একটু দীর্ঘ শ্বাস নিয়ে বললো….
— এখানে শুধু একা অরিশ দোষটা করে নি ,, আমরাও করেছি ।। সেদিন ওকে যা নয় তাই বলেছি,, ও যদি ফিরে আসে ,,ওর দুহাত ধরে নিজের ভুলের জন্য ক্ষমা চাইবো।।
— তোমাদের চেয়ে বড় দোষ আমি করেছি মা ।। যদি সেদিন পালিয়ে না যেতাম তাহলে তোমাদের কাউকে এইদিন দেখতে হতো না।। এর জন্যই হয়তো আজ
আমার এই অবস্থা।।( বলে দীর্ঘ শ্বাস নিলো আরশি)
_________________________________
— May I coming !!(পেছন থেকে গার্ড )
আমি একবার ওদের দিকে আবার আয়নায় তাকিয়ে চুল ব্রাশ করতে করতে বললাম…..
— না আসবে না।। তোমাদের তো আমি কালকেই বলে দিয়েছিলাম ।। মাম্মামের শরীর অনেক খারাপ তাই আমি আজকে দেশে ফিরছি ।। তাহলে কেন এসেছো।।
— you are a celebraty . So ,, danger with you at any time!! Plz try to understand!!
আমি একটা টেডি স্মাইল দিয়ে বললাম….
— সে চিন্তা তোমাদের করতে হবে না ।। ওখানে আমার কোনো শক্র নেই।। তাছাড়া মাত্র ১ সপ্তাহের তো ব্যাপার।।
— কে বললো ১ সপ্তাহের ব্যাপার ,, সামনের সপ্তাহে আমরাও তো যাচ্ছি।। আমার বিয়ে বলে কথা।। তাছাড়া অনেক তো হলো,, বাবা মায়ের মান অভিমান।। এখনো মা রাত জেগে বাবার কথা ভাবে ,, বাবাও তার ভুল বুঝতে পেরেছে ।।তাই বাবা মায়ের ভালোবাসা মিলিয়ে দিতে চাইছি।।হয়তো বাবা একটু ভুল করেছেই,,তারমানে এই না বাবাকে ক্ষমা করা যাবে না ।। ক্ষমা করাই তো ভালোবাসার বিত্ত্বি!!(বেডে বসে রাফি)
— এই নে তোর ব্যাগ ,,প্যাকিং করা শেষ। সব গুছিয়ে গুছিয়ে প্যাকিং করে দিয়েছি।। দেশে গিয়ে আমাদের আবার ভুলে যাস না ।। (রুমে ঢুকতে ঢুকতে ফুপি)
— কি যে বলো না ।। তোমাদের কেন ভুলবো।। তোমাদের সাথেই তো দেশে ফিরতাম ।। কিন্তু হঠাৎ যে মাম্মামের শরীরটা খারাপ করেছে।। আরো আগেই যেতাম ,, কিন্তু আজকে যে একটা কন্ট্রাক্ট সাইন করা ছিলো।।(ব্যাগটা হাতে নিয়ে আমি)
তারপর বেড়িয়ে এলাম প্রোগ্ৰামের উদ্দেশ্যে।।প্রোগ্ৰাম শেষ বের হতেই দেখলাম স্যামি এসে দাঁড়িয়ে আছে।। সকালে ফোন করে আসতে বলেছিলাম।। এমনিতেই লেট হয়ে গেছে,, তাই আর কথা না বাড়িয়ে সোজা গাড়িতে উঠে বসলাম।।
— আচ্ছা তোমাকে দেশে ফিরতেই হবে !! না ফিরলে হবে না!!( ড্রাইভ করতে করতে স্যামি)
— না !! ফিরতেই হবে ।। কিছুদিন পর তো তোমরাও যাবে ,,, সামিরার বিয়ে দিতে।। তখন আবার দেখা ।। মাত্র তো কিছু দিন !! (একটু থেমে আবার) দেশে ফিরলেই আবার পিছুটান ।। না ফিরলেই হয়তো ভালো হতো !! (বলেই সিটে গা হেলিয়ে দিয়ে চোখ জোড়া বন্ধ করে নিলাম)
________________________________
চিরচেনা পরিবেশে আবার ফিরে এলাম।। গাড়ি ছুটেছে নিজের আসল ঠিকানার উদ্দেশ্য।। বাহিরের দিকে তাকিয়ে সবকিছু দেখতে ব্যস্ত আমি ।। সব বদলে গেছে।। কিন্তু তবুও একটা আগের মতো ভাব রয়েই গেছে।। হয়তো আমার জন্য কারো জীবন থেমে নেই ।। গাড়ি থামতেই ভাড়া মিটিয়ে বাড়ির ভেতরে পা রাখলাম আমি।। নিজের কাছে এদেশের একটা টাকাও নেই ,,দাড়োয়ানের কাছে টাকা মেটাতে হয়েছে।। বাড়িতে পা রাখতেই মাম্মামের মুখটা স্পষ্ট দেখতে পেলাম।। সোফায় বসে আছে।। আর তার পাশে আরশি বসে মাম্মামকে মেডিসিন খাইয়ে দিচ্ছে।।আর তারপাশে দাঁড়িয়ে আছে দুই বাড়ির সবাই ।। মাম্মামের আমাকে দেখেই ঋনি বলে ডেকে উঠলো ।। সাথে সাথে সবাই দৃষ্টি আমার দিকে পড়লো।।
চলবে….💞💞
#এক_টুকরো_মেঘ ☁️
#ইফা_আমহৃদ
পর্ব::১৫
সাথে সাথে আরশির হাত থেকে কাচের গ্লাস টা নিচে পড়ে কয়েক টুকরো হয়ে গেলো।। আমার দৃষ্টি দূর থেকে সেখানে যায়।।মাম্মাম আমার কাছে এগিয়ে আসার জন্য পা বাড়াতেই ,আমি দৌড়ে মাম্মামের পায়ের নিচে হাত দেই।। মাম্মামের পায়ের চাপে কিছু কাঁচ আমার হাতে ঢুকে রক্ত বের হতে শুরু করলো।। মাম্মাম পা সরিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছে।।আমি একবার পড়ে থাকা কাঁচের দিকে তাকাচ্ছি তো আরেকবার আরশির দিকে।। তারপর কড়া কড়া গলায় বললাম….
— ননসেন্স একটা,, যে কাজটা করতে পারিস ( একটু থেমে আবার) পারেন না ।সেটা কেন করতে আসেন ।।ইরেসপন্সেবল।।।
আমার কথায় আরশি উঠে দাঁড়িয়ে দু কদম পিছিয়ে যায়।।
— আরে মেয়েটাকে বকছিস কেন?? ভুল টা আমার!!
আর কিছু বলার আগেই আমি চোখ গরম করে মাম্মামের দিকে তাকালাম।। তিনি ভয়ে চুপসে গেলেন।।আমি হাতের দিকে তাকিয়ে ,, কাঁচ তুলতে ব্যস্ত হয়ে গেলাম।। আস্তে আস্তে সবগুলো তুলে নিলাম।। শেষেরটা তুলতে গিয়ে একটু ব্যাথা পেয়ে আহহহ করে উঠলাম।। মামনি আমাকে ধরতে এলে তার দিকে দাঁত কটমট করে তাকিয়ে হাত সরিয়ে নিলাম।।
পরক্ষনে কিচেনে গিয়ে আরেকটা গ্লাসে পানি এনে ,,আরশির থেকে মেডিসিন নিয়ে মাম্মামকে খাইয়ে দিলাম।। তারপর পাপা কে উদ্দেশ্য করে বললাম….
— পাপা কি হয়েছে মাম্মামের ।।গত কয়েকদিন ধরে শুনছি মাম্মাম অসুস্থ ।। কি হয়েছে সেটাই তো বললে না।।
— আসলে তোর মায়ের….!!(অরনিমা)
হাত দিয়ে আমি মামনি থামিয়ে দিয়ে বললাম।।
— আমি আমার পাপার কাছে জানতে চেয়েছি।।তাই শুধু পাপাই বলবে ।।
— তোর মা শুধু তোকে নিয়ে টেনশন করে ।। খাওয়া দাওয়া বাদ দিয়ে টেনশন নিয়ে বসে আছে।। তাই হঠাৎ সেদিন মাথা ঘুরে পড়ে গেলে হসপিটালে এডমিট করি।।ডাক্তার হাই ড্রোজের মেডিসিন প্রেসক্রাইব করেছে ।। তাই কথা বলতে পারে নি।। ডাক্তার বলেছে হাসিখুশি রাখতে।।কিন্তু আজ তো দেখতেই পেলাম,, মেয়েকে দেখে কিভাবে কথা বলে উঠলো।।(সাজিদ)
আমি চুপটি করে মাম্মামের কোলে মাথা রাখলাম।।
— মাম্মাম আমি তো তোমাদের ইচ্ছেতেই এদেশ ছেড়ে অন্য কোথাও চলে গিয়েছিলাম।। তাহলে কেন আমার অন্য চিন্তা করে নিজের শরীরটা খারাপ করছো ।।
— আমি যে আমার মেয়েকে ছেড়ে এক মুহুর্ত থাকতে পারছি না।। আর যাস না,, দেখবি তাহলে আমি আরো অসুস্থ হয়ে পড়বো।।(আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে তামান্না)
আমি আর কোনো কথা না বাড়িয়ে লাকেজটা নিয়ে উপরে পা বাড়ালাম।। শরীরটা অনেক ক্লান্ত লাগছে।। শাওয়ার নিতে পারলে একটু ফ্রেশ লাগবে ।। এই ভেবে রুমে ঢুকলাম।। আসার সময় মামনি জিজ্ঞাসা করেছিলো ,,কেমন আছি ?? শুধু নিম্নস্বরে ভালো বলে চলে এসেছে।। ঢুকতেই বুকের ভেতরে কষ্টটা যেন
আরো চেপে বসেছে।। কতো স্মৃতি ছিলো ,,এই রুমে অরিশ ভাইয়ার সাথে ।। শেষবার যখন এখানে ছিলাম, কতো কেঁদে বুক ভাসিয়ে ছিলাম।। জানি না,,কেন
বেলকেনির দরজাটা খুলে সেদিকে পা বাড়ালাম।। আবার কি মনে করে ফিরে এসে,, লাকেজ থেকে একটা টি শার্ট আর জিন্স বের করে ওয়াশরুমে ঢুকে গেলাম।।।
____________________________
— কেন যে তখন অরিশকে বুঝিয়ে সুঝিয়ে বাহিরে পাঠালাম।। যদি ও এখানে থাকতো কতো ভালো হলো ।। ছেলেটা এতো বছর এক ঋনিকে দেখবে বলে কতোবার লন্ডনে গিয়েছিলো হিসেব নেই ।। আর আজ তার কাছে থাকার পরেও দেখতে পারছে না।।( দীর্ঘ শ্বাস নিয়ে অরনিমা)
— আমার মেয়েটা তোমাদের উপর খুব অভিমান করে আছে ,,দেখবে সব ঠিক হয়ে যাবে।। (অরনিমার কাধে হাত দিয়ে তামান্না)
— সেটাই যেনো হয় ।।
— আচ্ছা তোরা থাক আমি মেয়েটার জন্য কিছু বানিয়ে নিয়ে আসি!! অনেক দূর থেকে এসেছে নিশ্চই অনেক ক্ষুধা লেগেছে।।
বলেই কিচেনের দিকে পা বাড়ালেন তামান্না।।তার সাথে
যোগ দিলেন অরনিমা।
মেয়ের জন্য কাটলেট আর নুডুলস বানিয়ে ,, তরিনের রুমের দিকে পা বাড়ালেন।।
___________________________
মাম্মামের কোলে মাথা রেখে শুয়ে আছি আমি।।আর তিনি আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছি আর মাঝে মাঝে আমাকে খাইয়ে দিচ্ছি।।হাত ব্যান্ডজ থাকার কারনে হাত দিয়ে খেতে পারছি না ।।তাই মাম্মাম খাইয়ে দিচ্ছে।। অবশ্য ব্যান্ডজটাও তিনি যত্ম সহকারে করে দিয়েছে।।এখন আর ওয়েলি ফুড তেমন একটা খাই না।। কিন্তু মাম্মাম নিজের হাতে বানিয়ে এনেছে ।।না করতে পারি নি আর মায়ের হাতের বানানো খাবারের লোভ সামলাতে পারি নি।। যখন দেখেছিলাম ,, খাবার নিয়ে এসেছে ।। তখন অনেক কথা শুনিয়ে দিয়েছি ,, কেন কিচেনে ঢুকলো হেন তেন আরো কতো কি ।।কখন মাম্মামের সাথে গল্প করতে করতে ঘুমিয়ে পড়লাম নিজেই জানিনা।।
_____________________________
একহাতে হাত পাখা দিয়ে হাওয়া করছি ।। আরেক হাতের দিকে তাকিয়ে আছি ।। ইচ্ছে করছে ব্যান্ডজটা খুলে ফেলি ।। একটু রান্না করতে এসে এই অবস্থা।। সেখানে তো কিচেনেও এসি লাগানো ছিলো ,, কিন্তু এখানে এসি তো দূরে থাক একটা ফ্যান পর্যন্ত নেই।। শখের বশে রান্নাটা সেখানেই শিখে নিয়েছি।। তাই কোনো সমস্যা হচ্ছে না।। তাছাড়া ওখানে ফুপি আমাকে কিচেনে ঢুকতে দিতো না,,এখানেও মাম্মাম দিতে চাই নি জোর করে ঢুকেছি ।। কিছু বলার মতো সাহসও কারো নেই,, কারন সবাই আমার রাগ সম্পর্কে অবগত ।।
হাত পাখাটা একপাশে রেখে রান্নায় মনযোগ দিলাম।। কিছুক্ষণের মধ্যেই সব শেষ করতে হবে ।।একে একে
চিকেন নাগেট ,, মিটবল ,, ফ্রাইড রাইস ,,লাজানিয়া তৈরি করে নিলাম।। আরো কিছু বানানোর ইচ্ছে ছিলো কিন্তু গরমে পেরে উঠলাম না ।।।নিজের দিকে তাকিয়ে দেখলাম ঘামে পুরো ভিজে গেছি ।।তাই উপরে গিয়ে শাওয়ার নিয়ে নিচে নেমে দেখি ,, ওবাড়ির সবাই খাবার টেবিলে বসে আছে।।খাবার টেবিলে সাজানো ।। কিন্তু আমি তো যাওয়ার আগে খাবার টেবিলে সাজিয়ে যাই নি ।।আমি নিচে নামতেই মামনি বলে উঠলো,…..
— এতোক্ষনে তোর আসার সময় হলো ।।আমি সেই কখন থেকে বসে আছি তোর বানানো খাবারগুলো টেস্ট করবো বলে।। না বলেই খেতে পারতাম কিন্তু এতোবড় সেলিব্রেটির খাবার না বলে ধরা ঠিক নয়।।
আমি রাগ ফুঁসতে ফুঁসতে মাম্মামের দিকে তাকিয়ে উপরে হাঁটা দিলাম।।
— দেখ মা নিজের ইচ্ছেতে চলে এসেছে ।। আমি তো যেতে বলতে পারি না।। রাগ করিস না আমার সোনা মা !! ( পেছন থেকে তামান্না)
— রাগ করেও লাভ নেই ।।আজকে বাড়িতে কিছু রান্না হয়নি ।। তাই এইসব সুস্বাদু খাবারের স্মেলে ছুটে চলে এসেছি।।(স্মেল নিতে নিতে অবিদুল)
আমি একবার মাম্মামের দিকে তাকিয়ে খাবার সার্ভ করতে লাগলাম।।। তারপর একটা ফাঁকা চেয়ারে বসে গ্লাসটা হাতে নিয়ে মুখে দিতেই কেউ বলে উঠলো…
— বাহ কি চমৎকার হয়েছে রে ।। এতো ভালো রান্না কার কাছ থেকে শিখলি!!( খাবার মুখে দিতে দিতে অরিশ)
নিজের খুব পরিচিত কারো শীতল কন্ঠ শুনে তাকিয়ে দেখলাম ,, আমার ঠিক পাশের চেয়ারটাতে তিনি বসে আছে।। মুখে সেই পুরোনো পাগল করা হাসি ।। চোখের চাওনি আজও কেমন অদ্ভত।। চোখের নিচে কালি পড়ে গেছে।। মুখটাও কেমন ফ্যাকাশে। কতোদিন পর তাকে দেখে কিছুক্ষন স্তব্দ হয়ে গেল আমার চোখের চাওনি ।। পরক্ষনেই চোখ সরিয়ে অন্যদিকে ফিরিয়ে নিলাম।। হাতে থাকা গ্লাসটা টেবিলের উপর রেখে একটা দীর্ঘশ্বাস নিয়ে ছাদে চলে গেলাম।। কতবছর এইছাদে আসি না।। ছাদের এক প্রান্তে দাঁড়িয়ে রেলিং ধরে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছি।।
— প্রভু তুমি মহান ,, খুব তাড়াতাড়ি আমার মাকে সুস্থ্য করে দাও ।।যতো তাড়াতাড়ি সম্ভব আমি এখান থেকে চলে যেতে চাই ।। এখানে থেকে নিজের পিছুটান আর বাড়াতে চাই না।। অনেক কষ্ট করে নিজেকে বদলে নিয়েছি আমি,,আর ভেঙ্গে পড়তে চাই না।।
বলেই চোখদুটো বন্ধ করে নিলাম।। কিছুক্ষণ ওভাবে থাকার মন হচ্ছে ।।আমি হাওয়ায় ভাসছি।। চোখ দুটো খুলে তাকাতেই দেখলাম আমার পা দুটি মাটি থেকে অনেকটা ওপরে ।। এতোক্ষণে বুঝতে পারছি,,আমি
কারো কোলে আছি।। মানুষটিকে দেখার জন্য তাকাতেই ,, অরিশকেই দেখতে পেলাম।। হাত দুটো দিয়ে তার বুকে কিল ঘুষি মারছি ,, কিন্তু আমাকে ছাড়ছেই না ,,বরং আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরল।
চলবে…💞💞