এক টুকরো মেঘ পর্ব-১৬+১৭

0
523

#এক_টুকরো_মেঘ ☁️
#ইফা_আমহৃদ
পর্ব::১৬

হঠাৎ তিনি আমাকে নামিয়ে ,, ঘুড়িয়ে দাড় করিয়ে ।। কাঁধ থেকে চুলগুলো সরিয়ে দিয়ে তার থুতনিটা রাখল ,, পেছন থেকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো।। আগে একটু নড়াচড়া করতে পারতাম আর এখন তাও বন্ধ হয়ে গেছে।। তবুও ছোটার চেষ্টা করছি , কিন্তু পারছি না।। শুধু শুধু শক্তিটুকু নষ্ট হলো ।। আমার কোনো হেলেদুলে না পেরে অরিশ ভাইয়া বলে উঠলো….

— জানতাম পারবি না।। শুধু শুধু বৃথা চেষ্টা করে নিজের শক্তিটুকু নষ্ট করলি।। হা হা হা!!

হাসির মাঝে তার হাতের বাঁধন একটু হালকা হতেই এক ঝটকা দিয়ে ছাড়িয়ে চলে আসছে নিলেই ,, পেছন থেকে তিনি আমার হাত টেনে ধরেলো ,, পরক্ষনেই হাত টান দিয়ে তার বুকে মিশিয়ে নিলেন।।তাল সামলাতে না পেরে আমি অরিশের শার্ট শক্ত করে চেপে ধরলাম।। তিনি আমার কোমর আঁকড়ে ধরলেন।। সাথে সাথে মনে হলো,, আমার শরীরে বিদ্যুৎ খেলে গেল।। হার্ট বিট দূরত্ব গতিতে ছুটতে লাগলো,, যে কেউ বাহিরে থেকে তা স্পষ্ট শুনতে পারবে।।।

— আমি না চাইলে,, এখান থেকে যাওয়া তো দূরে থাক,, আমার থেকে ছোটার ক্ষমতা তোর নেই ।। চাইলে ট্রাই করতে পারিস।।(আরেক হাত আমার গালে দিয়ে অরিশ)

— তুমি( একটু থেমে আবার) সরি আপনি ।। আপনি কিন্তু অনেক বড় মজা করতে পারেন।। আপনি না চাইলে নাকি আমি এখান থেকে যেতে পারবো না।। হাউ ফানি,, তাই না।। তাহলে এতোগুলো বছর ছিলাম কিভাবে!!( একটু ভেবে তাচ্ছিল্য হাসি দিয়ে)

— হ্যা ,, ছিলিস।।কারন ,, আমি তোকে যেতে দিয়েছি ।।সেটাই অনেক বড় ভুল করেছি।। কিন্তু আর ছেড়ে যেতে দিবো না।। এই হৃদমাঝারে ঠিক মাঝখানে তোকে রাখবো ,, কখনো আর সেই পুরোনো ভুল করবো না।।আর দুজনের ঝগড়া আনতে দিবো না #এক_টুকরো_মেঘ ☁️(আমার কপালে কপাল ঠেকিয়ে অরিশ)

— একটা পতিতা মেয়েকে বুকের মাঝখানে রাখবেন ।। ঠিক আবার দুদিন পর টাকা ছুঁয়ে মেরে বের করে দিবেন !! আপনাকে আমার খুব ভালো করে চেনা হয়ে গেছে।। সো আমার থেকে দূরত্ব বজায় রাখবেন!!(বলেই একটা ধাক্কা দিলাম।।তাতে তিনি দু কদম পিছিয়ে গেলেন।।)

তরী বলে হাত তুলতে নিলেই চোখ জোড়া বন্ধ করে নিলাম।। পরক্ষনেই হাত নামিয়ে আমাকে কাছে টেনে দুগালে তার ঠোঁট দুটো অনেকবার ছুঁইয়ে দিলেন ।। তার স্পর্শে বারবার কেঁপে উঠছিলাম আমি।।চোখ মেলে তাকাতেই তিনি আমার গালে হাত দিয়ে বলে উঠলো….

— প্লিজ আর এই কথাগুলো বলিস না।। খুব কষ্ট হয় আমার ।। সেদিন রাগের বশে তোকে ঐধরনের বাজে কথাগুলো বলে ছিলাম।।(একটু থেমে আবার) তুই তো অভিক কে চিনিস ।।ও আমার বোনের সম্পর্কে ঐধরনের বাজে কথাগুলো বলছিলো ।। সেই কথাগুলো শুনে আমার মাথা ঠিক ছিলো না।।

— মানে….!!

— তুই তো সেদিন আমার রুমে এসে আমাকে কারো সাথে কথা বলতে শুনেছিলি ,,তাই না।।

আমি নেড়ে নাড়ালাম,,যার মানে হ্যা।। তারপর তিনি আবার বলতে শুরু করলো…

— আমার বোন পালিয়ে গিয়েছিল,, অভিক আমাকে শান্তনা দেওয়ার বদলে ,,, আরশির নামে বাজে কথা বলছিলো ।। ওর নাকি দুশ্চরিত্রা,, রাস্তার পতিতা মেয়ে।। ও নাকি টাকার লোভে ফারহানের মতো বড়লোকের ছেলের সাথে পালিয়ে গিয়েছিল।। কথাটা শুনে আমার মাথায় আগুন ধরে যায়।। ওকে কিছু বললো ,,তার আগেই তুই চলে এলি ।। তাই অভিকের উপর যতরাগ ছিলো সব তোর উপর ঢেলেছি।।।

— আমি আপনার কোনো কথা শুনতে চাইনা ।।আর না আপনাকে চাই ।।আমার টাকা পয়সার অভাব নেই ।।তাই আপনাকেও দরকার নেই।।( একটু থেমে আবার) হ্যা আমি বুজলাম আপনি রাগের মাথায় আমার সাথে ওমনটা করে ফেলেছেন ,, তাহলে পড়ে আমার কাছে আসতে পারতেন ।। লন্ডনে যখন আপনাকে ফোন করেছিলাম ,,, তখন রিসিভ করতে পারতেন ।।

— হাত তুললাম।।বাজে কথা বললাম,, মা নিজেও যে তোকে অনেক কথা শুনিয়েছে ।। সাথে বাবাও।।
এতোদিন তো তোকে ছাড়া কোনো রকম চলেছে ।।ভালো নেই আমি!!!

— এতদিন তেমন আমাকে ছাড়া চলেছে ।।এবার বিয়ে করে নাও তোমার তৃনাকে ।।তাহলে দেখবেন আপনার দিব্বি চলবে ।।একটা তাই বলছি ,,, আমি মাত্র ২ দিনের জন্য এখানে অতিথির মতো এসেছি,, আর অতিথির মতোই থাকতে দিন !!!

অরিশকে আর কিছু বলতে না দিয়ে তাকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিয়ে হনহন করে ছাদ থেকে নেমে এলাম।। দরজা কাছে এসে একবার পেছনে তাকিয়ে দেখলাম,, তিনি হাঁটু গেড়ে নিচে বসে আছে ।। চোখ দুটো নিচের দিকে ,, বোঝাই যাচ্ছে হয়তো কাঁদছে।। আজকে তার ব্যবহারে কোনো হিংস্রতা খুঁজে পাই নি।। পেয়েছি এক রাশ ভালোবাসা।। যে কথা তার চোখ দুটি বলে দিচ্ছিলো।। আজ আমার চোখের অশ্রু,, সেটা আনন্দের নয় কষ্টের ।। আর পিছু না ফিরে রুমের দিকে পা বাড়ালাম।।এসে দরজা লক করে দরজার সাথে ঠেস দিয়ে কাঁদছি।। আজ নিজের ইচ্ছেটা পূরন হবার পরেও আমি কাঁদছি । কারন ,, এখন আর আমি ভালোবাসায় বিশ্বাস করি না।। মা বাবা ছাড়া পৃথিবীতে ভালোবাসা নেই ।।পৃথিবীতে যা আছে ,, সবকিছু মোহ।।

!!!!!!!

তরিনকে রুমে দৌড়ে যেতে দেখে হবাক হলো আরশি ।।তার চেয়ে বেশি হবাক হলো তার চোখে অশ্রু দেখে।। যে মেয়েটা সবার সাথে সব সময় রাগ দেখিয়ে চলে সে কাঁদছে।।তাই আরশিও ছাদের দিকে পা বাড়ালো।।। সেখানে গিয়ে তার ভাইকে কাঁদতে দেখে।। খুব কষ্ট হলো তাই ।। আস্তে আস্তে অরিশে কাছে গিয়ে কাঁধে হাত রাখতেই অরিশ একবার আরশির দিকে তাকিয়ে নিজের চোখ মুছে সেখান থেকে চলে গেল।। আজ আরশির কাছে নিজেকে বড্ড অপরাধি লাগছে ।। শুধুমাত্র তার জন্য আজ সবাই কষ্ট পাচ্ছে।। কিন্তু এই কষ্ট সে আর বাড়াতে চাই না ।। তাই পা বাড়ালো তরিনের রুমের দিকে।।

______________________________________

🎶🎶 বড় ইচ্ছে করছে ডাকতে
তার গন্ধ মেখে থাকতে ….!!
কেন সন্ধ্যে সন্ধ্যে নামলে সে পালায়
তাকে আটকে রাখার চেষ্টা
আরো বাড়িয়ে দিচ্ছে তেষ্টা…
আমি দাঁড়িয়ে দেখছি শেষটা জানলায়।।।।

🎶বোঝেনা…… সে বোঝেনা
বোঝেনা….. সে বোঝেনা
বোঝেনা…সে বোঝেনা
বোঝেনা..সে বোঝেনা🎶

🎶বোঝেনা ,, বোঝেনা,, বোঝেনা
বোঝেনা,,, বোঝেনা,,, বোঝেনা🎶

এইটুকু গাইতেই নক পড়লো দরজায়।। উঠে গিয়ে দরজা খুলে দেখলাম আরশি এসেছে।। একবার তাকিয়ে দরজার কাছ থেকে সরে এসে বললাম…

— কি চাই এখানে ।।

আরশি কোনো কথা না বলে দরজাটা ভেতর থেকে লক
করে দিয়ে খাবারের প্লেটটা টেবিলে রেখে বেডে বসে পড়লো।।।

— আমি জানি তুই আমার উপর রেগে আছিস ।।আর বাকি সবাই আমার উপর বিরক্ত হচ্ছে‌। আজ তোর সাথে আমাদের পরিবারের একটা দূরত্ব আছে।। সেটা শুধু আমার জন্য।।তার জন্য আমি অনুতপ্ত।।

— তোর জন্য ( একটু থেমে আবার) আপনার জন্য কিছু হয়নি।। ধন্যবাদ জানাই আপনাকে ,,, শুধুমাত্র আপনার জন্য মুখোশের আড়ালে থাকা মানুষগুলোকে চিনতে পেরেছি।। যারা সারাদিন ভালোবাসা,,,বিশ্বাস করে বলে দাবি করে ,,তাদের ভালোবাসা ,,বিশ্বাসনামক বস্তুটা দেখতে পেয়েছি।। নাহলে জানতেই পারতাম না,,আমি একটি কালসাপ,,যে সুযোগ বুঝে আপন মানুষদের ছোবলও দিতে পারে ।।।( একটা তাচ্ছিল্য হাসি দিয়ে আমি)

— এটা তোর মনের কথা নয় ।। মুখের কথা ।। শুধু তুই না সবাই আমাকে মনে মনে অভিশাপ দেয়।। তাই আজ আমার ভালোবাসার মানুষটি আমার সাথে নেই ।।।

আরশির কথায় আমার খুব কষ্ট লাগলো ।। আমি আর কাঁধে হাত রাখতেই আরশি আমাকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে দিলো‌।। আমিও ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে ওকে শান্ত করলাম।।।

— আসলে ভালোবাসা বলে কিছুই নেই সব মোহ।। তোর থেকে হয়তো ভালোবাসা ছিলো ,, কিন্তু ফারহানের পক্ষ থেকে তোর জন্য মোহ ছাড়া অন্য কিছু ছিল না।। মোহ শেষ তোকেও রাস্তায় ফেলে চলে গেল।।।।( আমি)

— কে বলেছে তোকে ফারহান আমাকে লাভ করে না।
ওর আমাকে খুব ভালোবাসে ,,, তাই তো আমাকে ফেলে রেখে চলে গেছে।।।( মুচকি হাসি দিয়ে আরশি)

আরশির কথায় যেন আমি আকাশ থেকে পড়লাম।। মুখ থেকে আপনা আপনি বের হয়ে এলো ,, “মানে”তারপর আরশি আমাকে ওর ফোনটা দেখালো ।। সেটা দেখে তো আমি পুরো শকট।। সব নম্বরগুলো ফারহান দিয়ে সেইভ করা।। আমি যতদূর শুনেছি ফারহান তো আরশিকে কে রেখে চলে গেছে।।

— মানে ফারহান আমাকে ছেড়ে যায়নি । প্রতিদিন আমাকে ফোন করে।। আমি যখন খুব ভেঙ্গে পড়েছিলাম।।তোকে সবাই ভুল বুঝে ,,তুই চলে গিয়েছিল ,, তখন ফারহান আমাকে এই আইডিয়া দিয়ে ছিলো।।

তার কিছু বলার আগেই আরশির ডাক পড়ে ।।তাই খাবারটা আমাকে খেতে বলে চলে যায় ।। আর আমি আরশির বলা কথাগুলো ভাবতে থাকি ।।

___________________________________

মাঝখানে কেটে গেছে আরো ২ দিন ।। এই ২ দিনে আরশির সাথে আমার সমস্ত মান অভিমান শেষ হয়ে গেছে।।ওর উপর রেগে থাকার কোনো কারনও দেখতে পারছি ।। যদি আমি অরিশকের পেছনে না ঘুড়ে আরশির দিকে একটু খেয়াল রাখতাম ,, তাহলে হয়তো এমন হতো না।। কিন্তু আসল রহস্য টা এখনো জানি না।।

বর্তমানে বেলকেনিতে টাওয়াল মেলে দিচ্ছি আমি।। একটু আগে শাওয়ার নিয়ে বেরিয়েছি ।।এই বেলা অবেলায় শাওয়ার নেওয়াটা একটা অভ্যাসে পরিনত হয়েছে আমার।। প্রোগ্ৰাম ,,রেকডিং,, ফাংশন করে ফিরতে ফিরতে রাত হয়ে যেত তখন শাওয়ার নিয়ে নিয়ে শর্ট টি শার্ট আর প্ল্যাজু পড়ে ঘুমাতাম।।আজকেও তার ব্যতিক্রম হয়নি।।
বাহিরে এতো হাওয়া দিচ্ছে যে ধুলো বালি ছাই সব উড়ছে।। আমি চোখ দুটো বন্ধ করে নিলাম। একটু পর চোখ খুলতে টাওয়াল দেখতে পেলাম না।। হয়তো টাওয়াল টা উড়িয়ে নিয়ে গেছে।। কিন্তু শেষে কিনা ভেজা টাওয়ালও ।সামনে অরিশ ভাইয়ার রুম আর আরশির।।গেলে দুজনের একটার রুমেই গেছে।।কি করবো এখন।।।

চলবে…💞💞

#এক_টুকরো_মেঘ ☁️
#ইফা_আমহৃদ
পর্ব::১৭

এতো রাতে হয়তো সবাই শুয়ে পড়েছে।।তাই পড়নে শর্ট টি শার্ট আর প্ল্যাজু চেন্জ না করেই দৌড় লাগালাম অরিশ ভাইয়াদের বাড়ির উদ্দেশ্যে।। মেইন দরজা খোলা থাকায় আর আমাকে কষ্ট করতে হলো না।। প্রথমে আরশির রুমের দিকে পা বাড়ালাম।। কিন্তু রুমে আরশিকে কোথাও দেখতে পেলাম না।। ওয়াশরুমে লাইট জ্বলছে আর ভেতর থেকে দরজা অফ আছে ,, বুঝলাম ওয়াশরুমে আছি ।। আমার প্রচুর ঘুম পেয়েছে ,,তাই আর আরশির জন্য আমি করলাম না ,, সোজা বেলকেনিতে গিয়ে খুঁজতে লাগলাম,,,আনফরচুনেটলি সেখানেও নেই।।এখন আমি সিউর ওটা অরিশ ভাইয়ার বেলকেনিতেই আছে।। হাজার অনিচ্ছা থাকার সত্ত্বেও পা বাড়ালাম সেদিকে।। কিছুদূর গিয়ে আবার ফিরে এলাম,, ভাবলাম আরশি বের হলে ওকেই পাঠাবো ,,ওর ভাইয়ের কাছে।।ঠিক ২ কদম ফেলার পরও কোনো একটা পরিচিত স্মেল পেয়ে থেমে গেলাম।। স্মেলটা অত্ত্বপত্ত্বভাবে আমার সাথে জড়িত।। অনেকক্ষন স্মেলটাকে যাটাই বাছাই করে বুঝতে পারলাম,,এটা আমার ইউস করা আগের পারফিউমের স্মেম।।আর সেটা অরিশের রুম থেকে আসছে কিন্তু সেখানে লেডিস পারফিউম কি করবে।।তাও আবার হালকা না,, বেশ খানিকটা ।। নিজের জানার কৌতুহল মেটাতে ঢুকেই গেলাম অরিশের রুমে।। সেখানে গিয়ে আমার চোখ চড়কগাছ।। পারফিউম টাকে এমন ভাবে ইউস করছে ,, যেটা দেখে যেকেউ বলবে ,, এটা বডি স্প্রে না রুম স্প্রে।। তারচেয়ে বেশি অবাক হয়েছি,,আমার শাড়িটা দেখে যেটা অরিশ আমাকে এনে দিয়েছিল।। সেটা আর পড়ার মতো অবস্থায় নেই ।। বেডশিটের মাঝে মাঝে সেলাই করা ,, বালিশ ,, কোল বালিশের কুশন হিসেবে এখন শাড়িটা ইউস করছে।। যত্ত্বসব পাগলামি বলে বেরুতে নিলেই চোখ গেলো ,, মাথার উপরে থাকা ঝাড় বাতিটার দিকে ।। উপরের দড়িটা কোনোরকম একটু বেজে আছে,,, যখন তখন পড়ে যেতে পারে।।আর তার সোজা নিচে দাঁড়িয়ে অরিশ রুমে স্প্রে করছে।। আমি একবার অরিশের দিকে তাকাচ্ছি তো আরেকবার বাতিটার দিকে ।।এটা যদি একবার তার মাথায় পড়ে ,, তাহলে আর খুঁজেই পাওয়া যাবে না।।বাতিটা পড়ে যেতে দেখেই আমি অরিশের হাত ধরে ধাক্কা দেই ।। হঠাৎ আমার ভাড় সামলাতে না পেরে সোজা নিচে নিচে পড়ে যাই ।। আমি উপরে আর তিনি নিচে ।। আমার দিকে এক ধ্যানে তাকিয়ে আছে,, হয়তো বোঝার চেষ্টা করছে কি হয়েছে।। দুজনের চোখ যেনো ৫ সেকেন্ডের জন্য স্থির হয়ে যায়।। ঠাস করে কিছু পড়ার আওয়াজে অরিশের চোখ আমার থেকে ফিরিয়ে সেদিকে যায় ।। তারপর আবার আমার দিকে দিলো।। একটু সময় অরিশ স্তব্দ হয়ে আস্তে করে আমার হাতের আঙ্গুলের ফাকে নিজের আঙ্গুল ঢুকিয়ে দেয়।। আরেক হাত আমার কোমরে,, আমি তার হাত সরানোর চেষ্টা করছি কিন্তু পারছি না।। তিনি উল্টোদিয়ে আমাকে নিচে ফেলে আমার উপর উঠে পড়লেন ।।হাত থেকে রক্ত ঝরতে ,, কিন্তু তার দৃষ্টি আমার চোখের দিকে ।। একটু আগে বাতিটা নিচে কাঁচের টুকরো গুলো পড়ে আছে ,,আর অরিশের পাগলামিতে সেগুলো আমার হাতে ঢুকছে।। আমি কিছু বলতে নিবো তার আগেই তিনি আমার মুখে ফু দিতে লাগলো।। আমি চোখ দুটি বন্ধ করে তার শার্ট আঁকড়ে ধরলাম।। তিনি আমাকে আরো শক্ত করে চেপে ধরে আমার গলায় মুখ গুজলেন।। তার এমন কাজে আমি ফ্রিজড হয়ে গেছি।। এতোক্ষণ যা শ্বাস নিতে পারছিলাম,,এখন তাও বন্ধ হয়ে গেছে।।আমি অরিশকে ধাক্কা দিয়ে কাঁপা কাঁপা গলায় বললাম….

— কি করছেন টা কি,, দম বন্ধ হয়ে আসছে ছাড়ুন আমাকে ।।

কিন্তু আমার কথায় তিনি কোনো কথা না বলে আমাকে আমার চেপে ধরলো।। আমি আবার ধাক্কা দিতেই ,, আমার হাত ধরে কিছুক্ষণ পর বলে উঠলো…

— এভাবে দূরে সরিয়ে দিচ্ছিস কেন??আগে তো কখনো সরিয়ে দিতিস না!!!( আমার কোমরে স্লাইড করতে করতে অরিশ)

আমি তাকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিয়ে উঠে দাড়িয়ে নিজের পড়নের শর্ট টি শার্ট টা টানতে টানতে বললাম…

— কারন এর আগে আপনি কখনো আমার এতো কাছে আসেননি ।। আর সরিয়ে দেওয়ার দরকারও পড়ে নি ।।

— এখন তো এসেছি !!(আমাকে আবার কাছে টেনে)

— এখন আর আমি চাই না।।

ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিয়ে যখনই ফিরে আসতে নিবো ।। তখনই আমার হাতটা ধরে ফেললো।। তারপর আস্তে করে আমাকে সোফায় বসিয়ে দিয়ে ড্রয়ার থেকে ফাস্ট এইড বক্স বের করে যন্ত সহকারে কাঁচগুলো তুলে ড্রেসিং করে ব্যান্ডজ করিয়ে দিয়েছে।। একটুকূও ব্যাথা পাই নি।। প্রতিটা সময় হাতে ফু দিয়ে ঠান্ডা করেছে।। মনে হচ্ছিলো ,,ব্যাথাটা আমি পাই নি ।। অরিশ নিজেই পেয়েছে।। তখন এই অবুঝ মনটা শুধু একটি কথা বলছিলো ,,, “”আচ্ছা অরিশ তুমি কি সত্যিই আমার ব্যাথায় এতোটা ব্যাতিত ।। তাহলে কেন আমার ভেতরের ব্যাথাটা দেখতে পাওনা।। সেখানে যে,, আমার অবুঝ মনটা ক্ষত বিক্ষত হয়ে আছে ।। নাকি সেটা তোমার চোখে পড়ে না।। সেই ব্যাথাটার কাছে যে এই ব্যাথাটা তুচ্ছ “” ।।মনে মনে কথাগুলো বলে এক দীর্ঘশ্বাস নিয়ে হাতের দিকে তাকালাম।। এখনো অরিশ সেদিকে তাকিয়ে আছে।। তিনি আমার হাতটায় নিজের ঠোঁট দুটি ছুইয়ে দিলো।।তার দেখে মুখে থেকে আপনা আপনি বেরিয়ে এলো….

— শারীরিক আঘাতের চেয়ে মানসিক আঘাত অনেক বড় জন্তনাদয়ক যা কখনো কাউকে দেখানো যায় না ।।

হঠাৎ চোখ গেলো টেবিলের উপর ,,,সেখানে টাওয়ালটা রাখা।। আর কোনো কথা না বাড়িয়ে টাওয়াল টা নিয়ে সেখান থেকে চলে এলাম ।।এখন আর হাওয়া নেই,,,তাই টাওয়ালটা নিয়ে বেলকেনিতে মেলতে গেলে অরিশকে দেখতে পেলাম।। আমার বেলকেনির দিকে তাকিয়ে আছে।। তাই আর সেদিকে গেলাম না।। দরজাটা লক করে ফ্লোরে বসে মাথাটা বেডে দিয়ে চোখজোড়া বন্ধ করে নিলাম।। কখন যে ঘুমের দেশে হারিয়ে গেলাম নিজেরই অজানা।।

🍁🍁🍁

দুপুরের কাঠ ফাটা রোদের মধ্যে হেটে চলেছি আমি।। মাম্মামের মেডিসিন প্রায় শেষ হয়ে গেছে ‌।।আজকে দুপুর পর্যন্ত চলবে।। কিন্তু বিকেলে তো আর বের হবো না ,,, তাই সেগুলো কিনতে যাচ্ছি।। পাপা আসতে চেয়েছিলো,,, কিন্তু পাপা রোদে বেশিক্ষণ থাকতে পারে না।। অসুস্থ হয়ে পড়ে।। তাই আমি এসেছি।আসার সময় স্কুটিটা নিয়ে আসতে চেয়েছিলাম কিন্তু সেটা কখনো বের করা হয়নি ।। বের করলে অনেক ঝামেলা হবে তাই বের করি না ।। ভেবেছিলাম ,,রাস্তায় কোনো অটো রা রিক্সা পেয়ে যাবো কিন্তু পেলাম না।।
প্রায় ৪০ মিনিট হেঁটে এসে একটা ফার্মেসীর দেখা পেলাম।। ডাক্তারের দেওয়া প্রেসক্রিপশনটা ছেলেটার দিকে এগিয়ে দিয়ে চারপাশ দেখতে ব্যস্ত হয়ে গেলাম।। ছেলেটা মেডিসিন খোঁজার ফাঁকে ফাঁকে আমার দিকে আড় চোখে তাকাচ্ছে।। প্রথমে সেটা আমার বোধগম্য না হলেও পড়ে হলো।। হাত দিয়ে নিজের মুখটা আড়াল করে নিলাম।। আসার সময় মাস্কটা কোথায় একটা পড়ে গেছে খেয়াল করি নি।। এখন যদি আমার আসল পরিচয় টা জেনে যায় তাহলে আবার আমাকে প্রেস মিডিয়ার ঝামেলায় পড়তে হবে ।। ছেলেটা মেডিসিনের প্যাকেটা এগিয়ে দিয়ে বলল…

— আপি আপনাকে না দেখতে একদম রকস্টার তরিন ম্যামের মতো ।।

ছেলেটার কথা শুনে আমি মুখটা আরেকটু আড়াল করে বললাম….

— তুমি হয়তো জানো না ,,, পৃথিবীতে ৭ জন মানুষকে দেখতে এক রকমের লাগে।। তাহলে তারা কি এক।।।

— হয়তো ঠিক ।। একটা সত্যি কথা কি জানেন আপি,, তিনি আমার ক্রাশ।। তারজন্য আমার ব্যবসা খুব ভালো চলে!!!( ছেলেটার কথার কোনো আগা মাথা পেলাম না দেখে আবার বললো) আপনি একবার গিয়ে ফার্মেসির নামটা দেখে আসুন।।

আমি আর কথা না বাড়িয়ে ফার্মেসির নাম দেখলাম।। তরিন ফার্মেসি আর তার দুইপাশে আমার ছবি।।আমি বুঝে গেছি ,,এখানে বেশিক্ষন থাকাটা রিক্সস।।তাই তাড়াতাড়ি বিল পে করে বেরিয়ে এলাম।।আমার নামের ফার্মেসি খোলার জন্য নাকি ওর ব্যবসা ভালো চলে ,,,তাই আসার আগে ছেলেটার সাথে একটা পিক তুলে এসেছি আর বলে এসেছি ,, পিকটা বাহিরে লাগাতে ,,তাহলে আরো ভালো চলবে ।।।
তাড়াতাড়ি করে হেঁটে চলেছি বাড়ির উদ্দেশ্যে ।। হঠাৎ কেউ আমার হাত ধরে টান দিয়ে একটা জীপে তুলে নিলো ।। এতোক্ষণে যেন শান্তির নিশ্বাস নিলাম।। পরক্ষনে পাশের লোকটাকে দেখে আমার শান্তি সব উভে গেলো।।

চলবে….💞💞