এক টুকরো মেঘ পর্ব-১২+১৩

0
513

#এক_টুকরো_মেঘ ☁️
#ইফা_আমহৃদ
পর্ব::১২

দাঁতে দাঁত চেপে নিজের কান্না আটকাচ্ছি আমি।।ভেবেই নিয়েছি আর কখনো দূর্বল হয়ে পড়বো না।।‌কার জন্য কষ্ট পাবো না ,, যে আমার কোনোদিনই নিজের ছিলো না তার জন্য তো নয়ই।।। এবার শুরু নিজের আবেগকে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে,, এই ভেবে জানালা বেঁধ করে নিজের দৃষ্টি বাহিরে থমথমে পরিবেশের দিকে দিলাম।।
মাত্র কিছুদিনের মধ্যেই জীবনটার ধরন বদলে গেছে।।২ দিন আগে নিজের দেশ ছেড়ে লন্ডনে চলে এসেছি।। আসার সময় মাম্মামের চোখের অশ্রু আমাকে বাঁধা দিয়েছিলো,, তবুও তাকে ছেড়ে চলে আসতে হয়েছিল।। সেদিন পাপার চোখের কোনে কোথাও আমার জন্য ক্ষত ,, আঘাত দেখতে পাইনি।।বরং আমার জন্য ভালোবাসা ,, হারানোর ভয় আমি দেখতে পেয়েছি।। সেদিন পাপা আমাকে জরিয়ে ধরে বলেছিলো,, তিনি প্রথমে আমার উপর রাগ করলেও পরে আমার মেন্টাল ভাবে ভালো রাখতে এখানে পাঠিয়ে দিয়েছে।।
এতো অপমানের পরেও এই অবুঝ মন অরিশকে শেষবার দেখার জন্য বেলকেনির দরজার দিকে তাকিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলাম।। কিন্তু কোনো দেখা মেলেনি তার।। হাজার পিছুটান ভুলে পাড়ি জমাতে হলো এক অজানা পথে।।
এখন আমি ফুপির কোলে মাথা রেখে শুয়ে আছি ।।আর তিনি আমাকে নিজের হাতে নুডুলস খাইয়ে দিচ্ছে।।এই ২ দিনে ফুপি আর রাফি আমার অনেক যন্ত নিয়েছে।। ফুপি আর মাম্মামের মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই ,, দু’জনেই আমাকে প্রচন্ড রকমের ভালোবাসে।। এখানে আসার পর মাম্মামের অভাব একদমই বুজতে দেই নি। আমার ভাবনার ছেদ ঘটালো রাফি ….!!

— তুই মাত্র দুই এসেছিস।। আসতে না আসতেই আমার ভালোবাসায় ভাগ বসিয়ে দিলি !!! এমন কেন তুই বল তো ,, একা একা নুডুলস খাচ্ছিস ।। আমাকেও তো একটু ডাকতে পারতিস !! (দরজার সাথে হেলান দিয়ে রাফি)

আমি একবার রাফির দিকে তাকিয়ে অপ্রস্তুত হয়ে বলে ফেললাম…

— আমি যেখানে থাকি প্রথমে সবাই আমাকে আপন করে ভালোবাসা দেয় ।। পরে উস্টা দিয়ে বের করে দেয় ।।

— তরী এটা কেমন কথা বল তো ।। তোকে আমরা চেষ্টা করছি স্বাভাবিক করতে আর তুই উদ্ভর বিহেব করছিস !!( আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে রুসা)

( রুসা আমার ফুপি)

— এখানে উদ্ভরের কি দেখেছো তুমি।।যেটা সত্যি সেটাই বলছি !! সবাই আমাকে নামে ভালোবাসতো ,, নাহলে পারতো না আমাকে এমন ভাবে কষ্ট দিতে ,, বুকে ভেতরে প্রচুর কষ্ট হয় জানো,,পুরোনো দিন গুলো মনে পড়লে !!( কুপিয়ে কুপিয়ে কেঁদে আমি)

— আজ তাহলে তোকে আমার জীবনের গল্প বলি ,, তাহলে দেখবি তোর মনটা একটু হলেও ভালো হয়ে যাবে !!

অনেকবার আমি ফুপির কাছ থেকে ফুফার কথা জানতে চেয়েছিলাম।। কেন তারা একসাথে থাকে না হেন তেন।। আরো কতো কিছু।। কিন্তু বলে নি।। আজকে বলবে তাই উঠে ফুপিকে একহাত দিয়ে জরিয়ে ধরে ,, কাঁধে মাথা রাখলাম।। এর মধ্যে রাফি এসেও ফুপিকে জরিয়ে ধরলো।। তারপর ফুপি বলতে শুরু করলো।।

— যখন আমার বয়স সবে মাত্র ১৭ ।। ইন্টার ফার্স্ট ইয়ারের ফাইনাল এক্সাম দিয়েছিলাম।। তখন ক্লাসে রুসান নামের একটা ছেলের সাথে আমার পরিচয় হয় ।।তার সাথে বন্ধুত্ব হয় ।। আমার মনের সব কথা তার সাথে শেয়ার করতাম ।। সেও করতো ।। এভাবে চলতে চলতে কখন যে তার প্রেমে পড়ে যাই নিজেও জানিনা।। তখন আস্তে আস্তে আমাদের বন্ধুত্ব টা ভালোবাসায় পরিনত হয় ।।এভাবেই চলছিলো দিনকাল ।। হঠাৎ একদিন এইচএসসি এক্সামের আগে জানতে পারি বাবা আমার বিয়ে ঠিক করে ফেলেছে।। তখন আমি সবটা রুসানকে জানাই।‌। আমাদের তো আর মা নেই ,, বাবাকে জানানোর সাহস আমার ছিলো না।। তোর পাপা সাজিদ ভাইয়ার সাথে আমি ফ্রি ছিলাম ।। কিন্তু তখন ভাই ব্যবসার কাজে দেশের বাহিরে ছিলো ।। তাই তাকে জানানো হয়ে উঠে নি।। তাই বাধ্য হয়ে বিয়ের দিন আমি রুসানের সাথে পালিয়ে যাই।। সবটা জানতে পেরে বাবা ট্রোক করে আমাদের ছেড়ে চলে যায় ।‌। ভাইয়া সবটা জানতে পেরে আমার সাথে সব সম্পর্ক শেষ করে দেয় ।।‌ মনের মধ্যে একটা অনুসূচনা কাজ করতো সময় ,, আমি আমার বাবাকে মেরে ফেলেছি।। এভাবে কাটতে থাকে প্রায় ১০ বছর।। এর মধ্যে ভাই বিয়ে করে নেয় আর তুইও এই পৃথিবীতে আসিস।। আর এদিকে রাফিও বড় হতে থাকে।‌।
নিজেকে করা কাজের অনুসূচনা নিয়ে এতোদিন এতোটাই ব্যস্ত ছিলাম যে ,, ওর পরিবর্তন আমার চোখে পড়েনি।। আস্তে ওর বদলে যাওয়া যখন আমি বুঝতে পারি তখন অনেকটা দেরি হয়ে যায় ।। তখন তিনি অন্য মেয়েদের পিছু ছুটতেন ‌।। আমার মারা কটুকথা তখনকার দিনের একটা অভ্যস ছিলো তার ।‌। হঠাৎ একদিন আমি প্রচুর অসুস্থ হয়ে পড়ি,, সেদিন ….!!

বলে থেমে গেল ফুপি ।। তাকিয়ে দেখতে পেলাম চোখ থেকে অশ্রু ঝড়ছে।। গলাটা ও কাঁপছে।। আমি আর রাফি দুজনের দিকে একবার চাওয়া চাওয়ি করে ফুপির চোখ মুছিয়ে দিয়ে জরিয়ে ধরলাম।।

— ফুপি প্লিজ বলো ,, তারপর কি হয়েছিলো।।( কৌতূহল নিয়ে আমি)

— তারপর আর কি আমাকে প্রচুর মেরেছিলো ,, রাফি আর আমাকে বাড়ি থেকে বের করে দেয়।। ওর বাবার গ্ৰামে অনেক ক্ষমতা ছিলো তাই কেউ আমাকে থাকতে আশ্রয় দেয় নি।। একদিকে শরীরে প্রচুর ব্যাথা অন্যদিকে অন্ধকার রাত কোথাও যাওয়ার জায়গা ছিলো না ।। ছেলেটার মুখের দিকে তাকিয়ে ভাইকে ফোন করলাম।।সবটা খুলে বললাম।।। তিনি আমাকে অনেক কথা শোনালো‌।।বাবার মৃত্যুর জন্য আমাকে দায়ি করছিলো।। আমার মতো মেয়ে নাকি মরে যাওয়া উচিত।জীবনটা সেখানেই থমকে গিয়েছিল,, বেঁচে থাকার ইচ্ছেটা পুরোপুরি চলে গিয়েছিলো।।নদীতে ঝাঁপ দিতে গিয়েছিলাম।।সেখানে তোর বাবা মানে ভাইয়া আমাকে বাঁচিয়ে ছিলো।। সত্যি কথা কি জানিস ,, ভাইয়া আমার উপর অভিমান করে ছিলো ঠিকই কিন্তু সবচেয়ে বেশি ভালো ভাইয়াই ভেসে ছিলো।। আমাদের আবার আপন করে নিয়েছিলো।। আমাকে ডাক্তার দেখায় ।। তারপরে এই দেশে সেটেল করে দেয়।। বাবার অর্ধেক সম্পত্তি আমাকে দিয়ে দেয়।। এমন একটা ভাই থাকলে কি আর কি চাই।। ( এক নিঃশ্বাসে কথাগুলো বলে রুসা থাকে)

আমি এখনো তাকিয়ে আছি ফুপির দিকে।। সত্যি নিজের কষ্টটা ফুপির কাছে বড্ড হালকা লাগছে‌।।। নিজের মানুষটার এমন বদলে যাওয়া কে মেনে নিতে পারে ‌। অরিশ ভাইয়া তো আমাকে কথা দেয় নি ।‌ নিয়ে ঘর বাঁধে নি।। শুধু কথা শুনিয়েছে আর মেরেছে।। তাতেই আমার এতোকষ্ট হচ্ছে,, তাহলে ফুপির কতো কষ্ট হচ্ছে।।

— আচ্ছা ফুপি ,, তাহলে ফুফার কী হলো।।( কৌতূহল নিয়ে আমি)

— এই দেশে এসেছি তাও ধর !! ৭-৮ বছর হবে ।। এর মধ্যে তোর ফুফা আমাকে অনেক ফোন করেছে ।। নিজের কাছে যাওয়ার জন্য অনুরোধ করেছে।। ইভেন্ট মাঝে মাঝে আসে এখানে ,,, আমাদের সাথে দেখা করে চলে যায়।। নিজের কাজের জন্য সে লজ্জিত।। এই আর কি????তবে ভাইয়া যে আমার উপর অভিমান করে নে এতেই আমি খুশি।। তোকে স্বাভাবিক জীবন দিয়ে ।। মানুষের মত মানুষ করতে পারলেই ,, একটু হলেও নিজের পাপের থেকে হালকা হবো।।।

প্রতিটা কথা বলার সময় ফুপি কেঁপে কেঁপে উঠছিলেন।। তাই আমি কিছু জিজ্ঞাসা করলাম না ফুপিকে শুইয়ে দিয়ে চুপটি করে তার পাশে শুয়ে পড়লাম।।।

________________________

অনেকবার না করার পরেও ফুপি জোর করে আমাকে রাফি ভাইয়ার সাথে বাহিরে পাঠাচ্ছে।। প্রথমে যেতে না চাইলেও ,,, শপিং করার জন্য যেতে রাজি হয়েছি।।আমি আসবো যেনে মামনি কিছু জামা কাপড় কিনে রেখেছিলো ,,, এইকয়দিন এগুলোই পড়েছি।। একটু আগে মাম্মামের সাথে কথা হয়েছিলো,, মাম্মাম কাঁদছিল।। তাই বেশি কথা বলিনি।। চাইনা ,, মাম্মাম কষ্ট পাক।।
আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজেকে দেখছি আমি ।। কতোদিন নিজেকে দেখছি ,, জানা নেই আমার।। আয়নাতে পেটের পোড়া দাগটা স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে।।যেটাই আমাকে আবার অতিতের সামনে নিয়ে যায়।।হঠাৎ রাফির ডাকে ধ্যান ভাঙে আমার।।।

— এতো দেখিস না নিজেকে ,, নজর লেগে যাবে!!!( পেছন থেকে রাফি!!)

— কি যে বলিস না তুই ।। এই ড্রেসটা দেখ ,, পেট বের হয়ে রয়েছে,, এভাবে আমি বাহিরে কি করে যাবো।। তার উপরে এই পোড়া দাগ টা ফুটে আছে।‌(মন খারাপ করে আমি)

— এখানে মন খারাপের কি আছে।। এটাই এখানকার ফ্যাশন ।। তাছাড়া টেটু করিয়ে নিবি ,, দাগটা দেখা যাবে না।।

— গুড আইডিয়া!!

— আজ তোর জন্য একটা সারপ্রাইজ আছে।।

— কিসের সারপ্রাইজ!! (একটু ভেবে আমি)

— সেটা গেলেই দেখতে পারবি !! এবার চল!!

আমিও আর কথা বাড়ালাম না রেডি হয়ে বেরিয়ে এলাম।। প্রথমে শপিং মলে গিয়ে পছন্দমতো শপিং আর টেটু করে নিলাম।। তারপর রাফি হাত ধরে ওর দেওয়া সারপ্রাইজের জন্য অপেক্ষা করতে লাগলাম।।

চলবে….💞💞

#এক_টুকরো_মেঘ ☁️
#ইফা_আমহৃদ
পর্ব::১৩

অচেনা কেউ আমার গালে চড় মারতে গেলেই চোখ দুটো খিচে বন্ধ করে নিলাম।।রাফির সারপ্রাইজ টা যে এমন হবে সেটা আমার আশা করার বাহিরে ছিলো।। সামনে থাকা মানুষটার কোনো রিসপশন না পেয়ে তাকিয়ে দেখি রাফি মেয়েটার হাত ধরে আছে।। আমি গুটিশুটি মেরে রাফির আরেকটা হাত জরিয়ে ধরলাম।এখানে এসেও যে এমন একটা পরিস্থিতিতে পড়তে হবে জানা ছিলো না।।রাফি মেয়েটার হাত এক ঝটকা দিয়ে ফেলে দিয়ে বললো….!!

— স্টোপ সামিরা ।। ইউ নো ওয়াট আর ইউ ডুয়িং???

— ইয়েস আই নো ।। ওয়াট আই আম ডুয়িং।। এই মেয়েটার সাহস কি করে হলো তোমার হাত ধরার ।। যে আমি তোমার হাত কাউকে ধরতে দেই না সেই হাত নাকি এই মেয়েটা ধরেছে।।(চেঁচিয়ে সামিরা)

এতোক্ষণে বুঝতে পারলাম ,,এই মেয়েটির নাম সামিরা।। আর কথা বার্তা দেখে মনে হচ্ছে,, রাফির জিএফ।। বয়সে আমার থেকে অনেকটা ছোট।। ছোট তো হবাই কথা ,,, রাফি আর আমি তো প্রায় এক বয়সের।। হয়তো এটাই আমার সারপ্রাইজ।। এর সাথে
মিট করতেই হয়তো রাফি আমাকে এখানে এনেছিল।। কিন্তু সে কি আর জানতো এমন একটা সিচুয়েশন ক্রেট হবে।।

— জাস্ট শাট আপ সামিরা।। আমার সাথে একদম গলা তুলে কথা বলবে না।।আমি ভেবেছিলাম,, তুমি বাঙালি মেয়ে হয়ে ,,একটা বাঙালি মেয়েকে চিনতে পারলে না,, লাইক সিরিয়াসলি।। তুমি নাকি আমাকে ভালোবাসো
,,সেটা এই বিশ্বাস নিয়ে।। (একটু থেমে আবার)তোমার সাহস কি করে হলো ,, আমার সামনে ওর গায়ে হাত তোলার।।ওর আমার মামাতো বোন হয়।। পরিবার ছেড়ে এখানে এসেছে,, তাই মনটা খারাপ।। আমি ওর মন ভালো করতে তোমার কাছে নিয়ে এসেছি ,, আর তুমি তার এই প্রতিদান দিলে ।।

বলেই রাফি সামিরার গালে ঠাস করে একটা চড় বসিয়ে দিল।। পার্টিতে থাকা সবাই আমাদের দিকে তাকিয়ে আছে আর আমি রাফির দিকে ,, হঠাৎ আমার মাথায় দেড় মাস আগের দিনটা চাড়া দিয়ে উঠো।। সেদিন আমাকে অরিশের জিএফ মেরেছিলো ,, কিন্তু তিনি কিছু বলে নি বরং তার অভিমান ভাঙিয়ে ছিলো,, জরিয়ে ধরেছিলো ,, লাভ ইউ বলেছিলো।।সেদিন কতোকষ্ট হয়েছিল।। কিন্তু আজকে রাফি আমার জন্য নিজের ভালোবাসার মানুষটির গায়ে হাত তুললো ,,
কতো কথা শুনালো কিন্তু আজ তাতে আমার কোনো যায় আসে না।।

— রাফি আই এম এক্সটেমলি সরি।।আসলে আমি বুঝতে পারি নি।।ওর তোমার বোন ।।আমি রাগের মাথায় এমনটা করে ফেলেছি ।।প্লিজ এভাবের মতো ক্ষমা করে দাও।।

— কিসের ক্ষমা হে!! আজ সত্যিটা না জেনেই তোমার বার্থডে পার্টিতে সিনক্রেট করলে ,, আরো তো দিন পড়ে আছে ।। সো ব্রেক আপ!!

ব্রেক আপ কথাটা মাথায় আসতে আমি রাফি বললাম…

— দেখো রাফি আমি খড়কুটো ।। এমন খড়কুটো ভালোবাসায় অনেক আসে ।। তাই বলে নিজেদের মধ্যে অশান্তি করো না ।।একতরফা ভালোবাসা ভেঙ্গে গেলে কতোটা কষ্ট হয় আমি জানি আর সেখানে যদি দুজন দুজনকে ভালোবাসে তাহলে তো কোনো কথাই নেই।।(রাফি আর সামিরার হাত মিলিয়ে দিয়ে)

— একদম বাজে কথা বলবি না তুমি।। তুই খড়কুটো নস,, আমার বোন !! (এক টেডি স্মাইল দিয়ে আমি)

তারপর একসাথে সবাই হেসে দিলাম।।সামিরা নিজের ভুল বুঝতে পেরেছিলো ।। তাই আমার কাছে ক্ষমা চেয়েছিলো।। তারপর রাফি আর সামিরা ,, একসাথে বার্থডে কেক কেটেছিলো।।
চারদিকে কতো গান বাজনা ।। আনন্দ ফুর্তি আর আমার মনের ঘরে যেন #এক_টুকরো_মেঘ ☁️ জমে আছে।। যার ছোঁয়া শুধু আমার হৃদয় 💓 জুড়ে।।

এক কোনে দাঁড়িয়ে আছি আমি ।। আমার পাশে একজন দাঁড়িয়ে আছে।।ফোন টিপছে আর আড় চোখে আমার দিকে তাকাচ্ছে।। কিন্তু সেদিকে কোনো দৃষ্টিপাত নেই আমার।। হঠাৎ নিরবতা ভেঙ্গে সে বলে উঠলো….!!

— হাই আই এম স্যামি ।। ব্রাদার অফ সামিরা।। এন্ড হু আর ইউ??

আমি একবার লোকটার দিকে তাকিয়ে সামনের দিকে হাঁটা দিলাম।। তবুও তিনি পিছু পিছু আসছেন।। তাই আমি চুপচাপ রাফির পেছনে গিয়ে দাঁড়ালাম।। আমার পিছু সেও গিয়ে দাড়ালেন।। তখনই কেউ একজন বলে উঠলেন!!!

— দেখ রাফির বোনরে দেখে স্যামির লুচ্ছামি শুধু হয়ে গেছে।।

— একদম চুপ কর ।। রাফি যখন আমার বোনের সাথে সেটিং শুরু করে দিয়েছিলো তখন।। এখন আমি করলেই দোষ।।(দাঁত কেলিয়ে স্যামি)

বলেই সবাই একসাথে হেসে পড়লো।। আমি সবার দিকে তাকিয়ে ব্যাপারটা বোঝার চেষ্টা করছি।।

— দাড়াও আমি তোমাকে বুঝিয়ে দিচ্ছি।। রাফি আর আমরা খুব ভালো বন্ধু আর সামিরা আমার বোন ।।আগে দেখতাম রাফি আমাদের বাড়িতে যেতো,, সামিরাকে কলেজে পৌছে দিতো,, তখন আমি মনে করতাম আমার জন্য করছে ।। পড়ে বুঝলাম না ।। আসলে ওর যে শেয়াল সেজে আমার বোন নামের মুরগিটা কে নিয়ে গেছে।। এবার তুমিইফলো ও যদি আমার বোনের সাথে প্রেম করতে পারে তাহলে ওর বোনের ওপরও তো আমার একটা হক আছে।।( ইনোসেন্স ফেইস করে স্যামি)

— একদম ঠিক !!

— তাহলে শুরু করে দেই কি বলো!!( বাঁকা হেসে স্যামি)

এতোক্ষণে বুঝতে পারলাম আমি ভুল বলে ফেললাম।।আসলে রাফির তো কোনো বোন নেই ,,আমি ছাড়া।।তারপর একটা ঢোক গিললাম…..!!আমার এই অবস্থা দেখে সবাই হেসে দিলো ,,সাথে আমিও হাসলাম।।অনেকদিন পর এভাবে প্রান খুলে হাসলাম।।

তারপর রাফির আমাকে ওদের সবার সাথে পরিচয় করিয়ে দিলো।তার ফ্রেন্ড কম করে হলেও ৩০+ ।। আমরা সবাই প্রায় এক বয়সের শুধু সামিরা ছাড়া ।। তবে আশ্চর্যের বিষয় সবাই বাঙালি।। এতো বাঙালি কোথা থেকে নিয়ে এলো আল্লাহ মালুক।।

______________________________

৫ বছর পর——-

Paas aaye…
Dooriyaan phir bhi cam naa hui
Ak aduri si hamari kahani rahi
Aasman ke jameen ,, a zaruri nehi
Jaa mile…..,, jaa mile ……
Isha saccha wahi
Zisko milti nehi manjilein …..,, manjilein…

Rang dhe,,noor tha
Jab kareeb thu tha
Ek jannat sa tha,, a jahaan
Waqt ki ret pe kuch mere nam sa
Likh ke chhod Gaya tu. Kahaan

Hamari aduri kahani…..
Hamari aduri kahani…..2

Khusbuon se teri yunhi takra gaya
Calte calte deko na hum kahaan a gaya

এইটুকু গাইতেই জানালা বেধ করে বেলকেনি দিয়ে চোখ গেলো আকাশে থাকা পূর্ণিমার চাঁদের দিকে।। যেখানে চাঁদটা মেঘে ঢেকে আছে।।যার কারনে চাঁদের আলো চারদিকে পড়ছে না ।। নিজের জীবনটা আজ বড্ড চাঁদের মতো লাগছে।। তাই হাতে থাকা গিটার টা রেখে বেলকেনিতে গিয়ে চাদের দিকে তাকালাম।।

কতো অদ্ভুদ এই আকাশটা আজকে আমার জীবনটা ঠিক চাঁদের মত লাগছে ।। মানুষের থেকে কতো দূরে থেকেও তাদের সুখ দুঃখ গুলো আপন করে নিতে পারে ।। কতো সহজে মানুষ ঐ আকাশটাকে ভরসা করতে পারে।।যেই কষ্টটা কারো সাথে ভাগ করা যায় না সেটা আকাশের সাথে করা যায়।। আর ঐ আকাশও নিঃস্বার্থ ভাবে ভাগ করে নেয়।। ৫ বছর ধরে নিজের সব অভিযোগ এই আকাশকে শুনিয়ে আসছি।।চাঁদের আলো আজ শুধু #এক_টুকরো_মেঘ ☁️ এর জন্য যেমন চারদিকে ছড়াতে পারছে না ঠিক তেমনি এক টুকরো অভিমানের জন্য আমি তোমার কাছে পৌঁছাতে পারছি না।। আর আমি জীবনেও পৌঁছাতে পারবো না।। আর আমি চাইনা পৌঁছাতে।। জীবনে যাকে আমি সবচেয়ে বেশি ঘৃনা করি সেই মানুষটা একমাএ তুমি অরিশ।।আজ তোমার জন্য জীবনটা একদম বদলে গেছে।।আজ ৫ বছর ধরে কতোটা বদলে গেছি আমি।।যতোটা আমি কখনো কল্পনাও করতে পারিনা।।তোমাকে ভাবার মতো সময় এখন আর আমার নেই ।।

একটা তাচ্ছিল্য হাসি দিয়ে পেছনে ফিরে আসা দিনগুলো কল্পনা করতে লাগলাম।।
প্রথম প্রথম একবারে ভেঙ্গে পড়েছিলাম আমি ।। এই অবুঝ মনটা অরিশের খোঁজে কতো রাত জেগে কাটিয়েছে।। ফোনও করেছিলাম।। কিন্তু রিসিভ হয়নি।।একসময় নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছিলাম।। হঠাৎ একদিন মাম্মাম ফোন করে জানায় আরশি নিজেই বাড়ি ফিরে এসেছিলো।। ফারহান আরশিকে রাস্তায় ফেলে,,, স্বার্থপরের মত চলে গিয়েছিলো।। খুব ভেঙে পড়েছিল সে।। এটাও বলেছিলো,, আমি আরশির পালিয়ে যাওয়া ,, ফারহানের ব্যাপারে কিছুই জানতাম না।। তারপর অরিশ ভাইয়া,,মামনি অনেক ফোন করেছিলো ,, নিজের কাজের জন্য অনুতপ্ত হয়েছিল,,, কিন্তু আমি তাদের ফোন রিসিভ করিনি ,,কথাও বলিনি।। একদিন মাম্মাম ফোন করেছিলো ,,, রিসিভ করে অরিশের গলা শুনতে পেয়েছিলাম।। সাথে সাথে লাইন কেটে দিয়েছিলাম।।তারপর থেকে মাম্মাম ফোন করলে রিসিভ করি না।। যখন ইচ্ছে হয় আমি ফোন করে কথা বলি।। অনেকবার অরিশ ভাইয়া পাপার কাছ এড্রেস নিয়ে এখানে এসেছিলো,,আমি দেখা করি নি।। চাই নি আর দূর্বল হয়ে পড়তে।।

আজ আমি একজন রকস্টার।। আমার নাম চারদিকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে।।যখন পড়াশোনা করতে একদম ভালো লাগছিলো না অরিশের ভাবনায় বিভোর ছিলাম,,,,তখন গান নিয়ে পড়াশোনা শুরু করে দেই।। এখন সারাক্ষণ শুধু নিজেকে নিজে ব্যস্ত থাকা ।। কারো কথা ভাবার মতো সময় আমার নেই।।এখনো অরিশের জন্য মনের কোনে একটু হলেও জায়গা আছে ,,তবে তা এখন অভিমানের পাহাড় হয়ে ডেকে গেছে।। আমার এই গানের জগতে আসার একমাএ কারন স্যামি।। সেই আমাকে ইনেসপ্রেশন দিয়েছে।।ছেলেটা সাথে আমার একটু অন্যরকমের সম্পর্ক।। কেন জানি কিছু বলার আগেই তা অদ্ভুদ ভাবে বুঝে যায়।। আমি বলার আগেই সে আমার পছন্দ,, অপছন্দ বলে দিতে পারে ।।

কালকে দেশে ফিরে যেতে হবে।।১ সপ্তাহ ধরে মাম্মামের শরীরটা খারাপ করেছে।। আবার একটা প্রাগ্ৰাম আছে ।।এইসব ভেবে রুমে আসতেই দেখলাম।। ফোনটা বেজে যাচ্ছে।। হাতে নিয়ে দেখলাম ,,অরিশ ফোন করেছে।। একটা দীর্ঘশ্বাস নিয়ে ফোনটা কেটে দিয়ে আর কিছু না ভেবে ঘুমিয়ে পড়লাম।।।।

_______________________

এদিকে অরিশ রাগে গজগজ করতে করতে হাতে থাকা ফোনটা ছুড়ে মারলো ড্রসিং টেবিলের আয়নায় অপর তারপর….

চলবে…💞💞