কখনো বৃষ্টি নামলে পর্ব-১৮ এবং শেষ পর্ব | গল্পেরমহল ধারাবাহিক গল্প

0
1365

#কখনো_বৃষ্টি_নামলে
#সুরাইয়া_আয়াত

Last part.

অগ্নি দৃষ্টি নিয়ে তাকিয়ে আছে লাবণ্য। বারবার মানুষ তার সাথে প্রতারনা করে যায় কারনে অকারনে। লাবণ্য রাগটা আর দমিয়ে রাখতে পারলো না, উঠে গিয়ে সপাটে চড় মারলো রাকিবকে।
সেখানে উপস্থিত সকলে চমকালো লাবণ্যের এমন ব্যাবহারে।
আজ তাদের বিয়ের পাকা কথা বলতে রাকিবের পরিবার আর লাবণ্যর পরিবার এক হয়েছিল। সেখানে লাবণ্য জানতে পারে যে রাকিব বিবাহিতা।
লাবণ্যর বাবা লাবণ্য কে শান্ত করার চেষ্টা করে বলল,
‘শান্ত হ মা। এটা কি করছিস? ‘

রাকিবের বাবা রাগী কন্ঠে বলে উঠলেন,
‘এটা কি হচ্ছে। আমাদেরকে এখানে এভাবে ডেকে এনে এমন অপমান করাই কি আপনার উদ্দেশ্যে ছিল? ‘

লাবণ্য রাগ সামলাতে পারলো না।
‘আপনি এখনও এতো তেজি গলায় কিভাবে কথা বলছেন আঙ্কেল? আপনার ছেলের কাজকর্মের জন্য আপনি কি বিন্দু মাত্র লজ্জা বোধ করছেন না? ‘

উনি থতমত খেলেন, নিজের ছেলের ভুলটা তিনি জানেন তবুও তিনি মানতে নারাজ।
‘কি করেছে টা কি আমার ছেলে? তোমাকে বিয়েই তো করতে চেয়েছে। আর তাছাড়া আমার ছেলের জন্য মেয়ের অভাব নাকি।’

রাকিব মাথা নীচু করে বসে আছে। হঠাৎ আচমকাই বলে উঠলো,
‘লাবণ্য আমাদের বিয়েটা হবে। আমার এক্স ওয়াইফ তার সাথে খুব শীঘ্রই আমার ডিভোর্স হবে। ‘

লাবণ্য চুপ করার ইশারা করে বলল,
‘চুপ। একদম চুপ। এক্স ওয়াইফ? ডিভোর্স না দিয়ে সেটা এক্স ওয়াইফ কিভাবে হয়? তাহলে তো ধরা যায় যেদিন ইচ্ছা হবে আমাকেও আপনার এক্স ওয়াইফ বানিয়ে দেবেন। আর আপনি আমার সাথে প্রতারণা করেছেন। আপনি আমাকে কেন জানানি কখনো যে আপনি বিবাহিত আর আপনার এখনও ডিভোর্স হয়নি? এটা প্রতারনা নয়? ‘

লাবণ্যর বাবা পুনরায় লাবণ্য কে থামাতে বলল,
‘লাবণ্য ওকে কিছু বলতে দে। ছেলেটা নিশ্চয়ই ভুল করে করে ফেলেছে। ‘

লাবণ্যর আদর্শর বলা কথা গুলো মনে পড়ে গেল। এমনটা নয় তো যে লাবণ্যর বাবা নিজের ইচ্ছা অনুযায়ী সবসময় এই সম্পর্কের বোঝা গুলো লাবণ্যর ওপর চাপিয়ে দেন। লাবণ্য ওর বাবার চোখের দিকে তাকালো। তার চোখে কোথাও না কোথাও রাকিবের প্রতই সমর্থনের একটা আশ্বাস আছে। কোথাও না কোথাও তিনি এখনও এই সম্পর্ক টা চান। লাবণ্যর বাবার এমন ইচ্ছার জন্য লাবণ্যর পাঁচ বছরের সম্পর্ক পূর্নতা পাইনি। লাবণ্য আর হারাতে পারবে না আদর্শ কে। লাবণ্যর চোখে রাগ আর একরাশ ক্ষোভ ভেসে উঠলো। লাবণ্য তার বাবাকে তোয়াক্কা না করে সকলকে উদ্দেশ্যে করে বলল,
‘আপনারা এবং আপনাদের ছেলে আমার সাথে প্রতারনা করেছেন। তার দায়ে আমি আপনাদের নামে থানায় কেস করবো। দ্বিতীয় বার কোন মেয়ের সাথে এমন প্রতারনা করতে গিয়ে দুই বার ভাববেন। ‘

সবাই রেগে ফুসে উঠলো। রাকিব উঠে দাঁড়িয়ে লাবণ্যর দু বাহু ধরে নরম কন্ঠে ভলল,
‘লাবণ্য বোঝার চেষ্টা করো। আমি তোমাকে সব বলবো ভাবছিলাম কিন্তু সময় পাইনি। ‘

শুভ চিৎকার দিয়ে বলে উঠলো,
‘খবরদার আমার দিদিকে আপনি স্পর্শ করবেন না। ছাড়ুন ওকে। আপনাকে তো প্রথম থেকেই আমার সুবিধের মনে হয়নি। প্রতিটা কথায় আপনার কেবল শর্ত । পাঁচ তলার ওই বৌদি যে আপনার ওয়াইফ সেটা জানলে কখনো আপনার সাথে আমার দিদির বিয়ে দেওয়ার কথা ভাবতাম ও না। বেরিয়ে যান এখান থেকে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বের করে দেওয়ার আগে। ‘

লাবণ্যর বাবা রেগে শুভকে ধমক দিয়ে বলল,
‘কি হচ্ছে কি শুভ। তুমিও কি তোমার দিদি্র মতো পাগল হলে? ‘

শুভও দ্বিগুণ স্বরে ধমক দিয়ে বলল,
‘বাবা তুমি আমাকে ধমকিয়ে আজ চুপ করাতে পারবে না। হয় ওনারা নিজেরা বেরিয়ে যাবে না হলে আমি এক্ষুনি পুলিশ ডাকবো। এভাবে একটা মেয়ের জীবন নিয়ে প্রতারনার দায়ে মামলা করবো। ‘

লাবণ্য শুভর দিকে এক পলক তাকালো। শুভর চোখ মুখ রাগে শক্ত হয়ে আছে। এটা কি ওরা সেই ভাই যাকে লাবণ্য এখনো ছোট বাচ্চা মনে করে। শুভর জন্য লাবণ্যর গর্ব হচ্ছে যে তার ভাই ঠিক সময়ে সঠিক জিনিসটার প্রতি স্ট্যান্ড নিতে জানে। লাবণ্য মনে মনে হাসলো বেশ। সামনের দিকে তাকাতেই দেখলো একে একে সবাই গজগজ করে বেরিয়ে যাচ্ছে শুধু রাকিব বাদে। সে যেন আজ লাবণ্য কে বিয়ে করে তবেই বাড়ি ফিরবে।
লাবণ্য দাঁতে দাঁত চেপে বলল,
‘ বেরিয়ে যান। ‘

রাকিব শানত কন্ঠে বলল,
‘লাবণ্য একবার আমার কথা শোনো। ‘

লাবণ্য এক গগনবিদারী চিৎকার দিয়ে বলল,
‘বেরিয়ে যান বলছি। ‘

রাকিব ভয় পেয়ে গেল। ঝিম ধরা কন্ঠে বলল,
‘যাচ্ছি যাচ্ছি। ‘

কথাটা বলে রাকিব বেরিয়ে গেল।

লাবণ্য সোজা পায়ে তার নিজের ঘরের দিকে যেতে নিলো। লাবণ্যর বাবা মাথায় হাত দিয়ে বসে আছেন।
লাবণ্য রুমে গিয়ে ফুঁপিয়ে উঠলো। পাশে ফোন বাজছে। আদর্শ ফোন করেছে তাকে কিন্তু সে ধরবে না। সবাই কেন তাকে এভাবে ঠকিয়ে চলে যায়?

/

রাত সাড়ে এগারোটা বাজে প্রায়, লাবণ্য আর একটি বারের জন্য ও দরজা খোলেনি। শুভ কর ওর বাবা সোফাতে বসে আছে। লাবণ্যর বাবা আগের মতোই মাথায় হাত দিয়ে বসে আছেন আর শুভ ঝিমাচ্ছে বসে বসে। হঠাৎ কলিং বেল ওর আওয়াজ পেতেই তিড়িক করে যেন শুভর ঘুমটা উধাও হয়ে গেল। মনে মনে মূলক হেসে দৌড়ে দরজার দিকে ছুটে গেল। ততক্ষনে লাবণ্যর বাবা শুভর কান্ড কারখানা দেখে অবাক হয়ে চেয়ে রইলেন শুভর পানে। শুভ দরজার বাইরে থাকা লোকটার সাথে যেন কি একটা ফিসফিস করছে তা দেখে লাবণ্যর বাবা হাক দিলেন,
‘ কে এসছে রে? আর কার সাথে এতো ফিসফিস করছিস? ‘

ওনার কথাতে শুভর টনক নড়লো। শুভ দরজা থেকে সরে আসতেই আদর্শ ঘরে ঢুকলো। আদর্শ কে দেখল লাবণ্যর বাবা উঠে দাঁড়ালেন। এই মুহূর্তে আদর্শ কে তিনি এখানে আশা করেননি। আদর্শ কে দেখে উনি গম্ভীর স্বরএ বলে উঠলেন,
‘এ কি তুমি এখানে? তুমি এখানে কি করছো? ‘

আদর্শ ঘরের ভিতর ঢুকেৎেলো। শুভ দরজা দিয়ে গুটিগুটি পায়ে আদর্শর পিছে পিছে এলো।

আদর্শ হঠাৎ বলে উঠলো,
‘আমি আজ আপনার কাছে কিছু চাইতে এসেছি। আপনার জন্য আমি যা হারিয়ে ছিলাম তা ফিরে পেতে এসেছি আমি। ‘

উনি বিভ্রান্ত হয়ে গেলেন। সত্যিটা হয়তো উনি কখনো প্রকাশ করতে চাননি। উনি ধমকে বলে উঠলেন,
‘আমার মেয়ের জীবনে তোমার কোনো জায়গা নেই। ‘

আদর্শ তাচ্ছিল্যের স্বরে হেসে বলল,
‘আজ আমি আপনার কথাটা রাখতে পারবো না আঙ্কেল আমায় মাফ করবেন। লাবণ্যকে হারিয়ে আমি যতোটা কষ্ট পেয়েছি তা আপনি বুঝবেন না। আচ্ছা আঙ্কেল আন্টি আর আপনাদের ও তো লাভ ম্যারেজ। যদি কোন কারনবশত আপনি আন্টি কে না পেতেন। আন্টি যদি আপনার না হয়ে অন্য কারোর হতো। তাহলে আপনার কেমন লাগতো বলতে পারবেন? ‘

উনি চুপ হয়ে গেলেন। সোফাতে বসে পড়লেন নিঃশব্দে। তখন দরজার প্যাঁচ প্যাঁচ আওয়াজ হলো, লাবণ্য রুম থেকে বেরিয়ে এলো। তার চোখ জোড়া লাল আর ফোলা। আদর্শ লাবণ্যর দিকে তাকালো, লাবণ্যর অশ্রুসিক্ত অক্ষিযুগল দেখে আদর্শর বুকের ভিতর মোচড় দিয়ে উঠলো তবুও নিজেকে সংযত করে ওনাকে পুনরায় প্রশ্ন করলেন,
‘বলুন। আপনি কি করতেন? ‘

লাবণ্য ভলে উঠলো,
‘ বাবা হয়তো নিমেষেই নতুন করে আর একজনের প্রেমে পড়তো আর দ্রুত তার সাথে বিয়ে করে নিতো। কি ঠিক বললাম তো বাবা?’

উনি চোখ মুছছেন।ওনার চোখ জোড়া ভেজা। মাথা নাড়িয়ে কেবল না সম্মতি জানালেন। তোর উত্তর পেয়ে লাবণ্য চেঁচিয়ে বলল,
‘তাহলে তুমি কেন এমনটা করলে আমার সাথে? বলো! শুধুমাত্র আদর্শর নিজের কোন বংশপরিচয় নেই বলে? আজ তোমার আর মায়ের ক্ষেত্রেও যদি তেমন হতো তাহলে তোমার কেমন লাগতো বলো। ভালোবাসা ভালোবাসায় হয় তাকে কোন কিছুর নিরিখে যাজ করা যায় না। তুমি কি করলে? এতো সহজে নিজের মেয়ের জীবন থেকে হ্যাপিনেস টা দূর করে দিয়ে তাকে নতুন করে জীবন শুরু করার কথা বলো।কেমন বাবা তুমি? ‘

কথাটা বলে লাবণ্য নিজেও কেঁদে উঠলো। আদর্শ লাবণ্য কে ধমকে ভলল,
‘লাবণ্য চুপ করো। আমি কথা বলছি তো আঙ্কেল এর আছে। ‘

‘নাহ আমি চুপ করবো না। বাবা যদি তোমাকে না মেনে নেয় তো আমি বেরিয়ে যাবো তোমার হাত ধরে। দু বার ভাববো না। আজও তুমি রাকিবের হয়ে কথা বলছিলে কেন তুমি বলতে পারো? কিসের এতো অভাব আছে তোমার বাবা বলো? ‘

উনি কাঁদতে কাঁদতে বললেন,
‘ আমার কিছু চাইনা আমি শুধু তোদের ভালো চাই। যা করেছিলাম তোর ভালোর কথা ভেবে করেছিলাম। কিন্তু আমি বুঝিনি যে আমার ভুলের কারনে তোর জীবন থেকে সব হ্যাপিনেস দূরে সরে যাবে। আমি সত্যিই ভাবিনি। পারলে আমাকে মাফ করো তোমরা। ‘

কথাটা বলে উনি চলে যেতে নিলেই লাবণ্য ওনাকে আট কালো। ওনাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বলল,
‘আমি ভুল গুলোকে মনে রেখে সারাজীবন কষ্ট পেতে চাইনা বাবা। আমি এটাও মনে রআখতে চাইনা কে ভুল কে সঠিক। আমি তোমাদের সাথে ভালো থাকতে চাই। তোমাদের সাথে হাসিমুখে একসাথে বাঁচতে চাই। বলো এটুকু অধিকার কি আমআর নেই? ‘

উনি মেয়েকে আগলে নিলেন। আদর্শ কে কাছে ডেকে বললেন,
‘পারলে আমাকে ক্ষমআ করো আদর্শ। আর আমার মেয়েটাকে ভালো রেখো।

/ ব্যালকনির মৃদুমন্দ বাতাসে গা এগিয়েছে আদর্শ আর লাবণ্য। আদর্শর বাহুডোরে নিজেকে মিশিয়ে নিয়েছে সে। নিস্তব্ধতা ভৈঙে আদর্শ বলল,
‘আই উইশ তোমার বাবা জানতো যে আমরা অলরেডি ম্যারিড কাপল, তাহলে আজকেই ফুল,,,’

কথাটা বলা মাত্রই লাবণ্য আদর্শর মুখ চেপে ধরলো।
‘চুপ। একটাও আজেবাজে কথা না। আমাদের আবার বিয়ে হবে। সেদিন তো তোমাকে পুনরায় হারানোর ভয়ে বিয়ে করেছিলাম কিন্তু এখন তো আর সে ভয় নেই। ‘

কথাটা বলে আদর্শর বুকে মাথা লাখলো।

আদর্শ লাবণ্যর মাথায় হাত বুলিয়েয়দিতে দিতে বললো,
‘আমি কখনো ভাবিনি যে আমি তোমাকে আর ফিরে পাবো। একবার যখন পেয়েছি আর হারাতে দিতে চাই না। আবার কখনো বৃষ্টি নআমলে দুজনের একসাথে হাতে হাত রেখে ভেজা বাকি যে। ‘

লাবণ্য আদর্শর কানে কানে বলল,
‘হ্যাঁ আর দুজনে একসাথে জ্বর বাধিয়ে বিছানায় শয্যাশায়ী হয়ে থাকবো তাইনা। ‘

‘সমস্যা নেই। দুজন দুজনের দিকএ তাকিয়ে থেকএ সেই খারাপ সময়টাও পার করে দেবো। ‘

লাবণ্য বিড়বিড়ালো,
‘ভালোবাসি। ‘

‘আমিও ভালোবাসি! ‘

#সমাপ্ত,,,

প্রথমেই আমি সবার কাছে ক্ষমা চেয়ে নিতে চাই এমন একটা অগোছালো গল্প লেখার জন্য। সত্যি বলতে চাইলে গল্পটাকে আরও অনেক সুন্দর বানানো যেতো কিন্তু আমার সেই মন মানসিকতা একদমই ছিল না বললেই চলে। এই গল্পটআ হয়তো আমার লেখা প্রথম ভাবনা বিহীন গল্প, যা পেরেছি তাই লিখে গেছি। এতো খাপছাড়া সবকিছু আমি নিজেই লজ্জিত। তবুও আপনারা ভুল ক্রুটি মেনে পাশে ছিলেন তার জন্য আমি সত্যিই আনন্দিত। ভালোবাসা অবিরাম।