কি আশায় বাঁধি খেলাঘর (১৫)
গাড়িতে বসে থাকতে থাকতে চন্দ্রর তন্দ্রা এসে গেলো।মেসেজের শব্দে চন্দ্রর তন্দ্রা কেটে গেলো।
মেসেজ অপশনে ঢুকতেই দেখলো সেই ছেলেটার নাম্বার থেকে মেসেজ এসেছে একটা।
চন্দ্র আড়চোখে নিষাদের দিকে তাকালো।নিষাদ মনোযোগ দিয়ে ড্রাইভ করছে।
মেসেজটি পড়লো চন্দ্র।একটা গানের অংশ পাঠিয়েছে ছেলেটা।
“তুমি আশেপাশে থাকলে কতো খুশি খুশি থাকছি,আর যাচ্ছি ভুলে আমি কে কোথায়।”
চন্দ্র চমকে নিষাদের দিকে তাকালো। নিষাদ আগের মতোই নির্বিকার ভঙ্গিতে ড্রাইভ করছে।দুচোখ সামনের দিকে নিবদ্ধ।
চন্দ্র আশেপাশে তাকালো।গাড়ির পিছনে তাকাতে দেখতে পেলো একটা বাইক আসছে,এক মুহুর্তের জন্য চন্দ্রর মনে হলো বাইকের লোকটা নয়তো মেসেজ দেওয়া লোক?
একবার মনে হলো নিষাদ কে বলবে,পরক্ষণেই ভাবলো নিষাদ হয়তো ভুল বুঝবে ওকে।
তাই আর কিছু বললো না নিষাদকে।গাড়ি থামলো একটা রেস্টুরেন্টের সামনে গিয়ে। দুপুরের খাবার সময় হয়ে গেছে।
খাওয়ার পর শুরু হলো আবারও জার্নি। ২ ঘন্টার পথ যেতে হবে ভাবতেই চন্দ্রর বিরক্তি এসে গেলো।
খাওয়ার পর একটু বিছানায় গড়াগড়ি দিতে ইচ্ছে করে। মেজাজটাই খারাপ হয়ে গেলো চন্দ্রর।
চন্দ্রর মেজাজ খারাপ আরো বেশি করে দিতে নিষাদ লুকিয়ে ফোন বের করে কল দিলো চন্দ্রকে।
সেই নাম্বার থেকে কল দেখে চন্দ্রর রাগ আরো বেড়ে গেলো। কল কেটে দিয়ে ফোনটা অফ করে ছুঁড়ে মারলো পিছনের সীটে।
নিষাদ জিজ্ঞেস করলো,”কোনো সমস্যা চন্দ্র?”
“হ্যাঁ সমস্যা। ”
“কি হয়েছে? ”
“খাওয়ার পর একটু শুতে না পারলে আমার ভালো লাগে না।”
নিষাদ গাড়ি ব্রেক করে চন্দ্রর দিকে তাকালো অবাক দৃষ্টিতে।
চন্দ্র জিজ্ঞেস করলো,”কি হয়েছে?”
নিষাদ সিরিয়াস ভঙ্গিতে বললো,”বাই এনি চান্স তুমি আসলে আমার পাশাপাশি ঘুমাতে চাচ্ছো না তো চন্দ্র?
তা চাইলে সরাসরি বলো,আমরা কোনো হোটেলে রুম বুক করে নিবো।”
নিষাদের কথা শুনে চন্দ্রর ইচ্ছে করলো নিজের গালে নিজে চড় মারে।এই লোক একটা সহজ কথার কি বিশ্রী একটা অর্থ বের করলো ভাবতেই চন্দ্রর লজ্জায় মরে যেতে ইচ্ছে করছে।
রাগ সামলে চন্দ্র বললো,”এসব হ্যাংলাপনা আপনাকে মানায়,আমাকে না।দেখেছি তো,এজন্যেই একদিনের ভিতরেই বিয়ে করে নিলেন।বউয়ের কাছাকাছি থাকার লোভ কার বেশি সেটা তো কালকেই বুঝেছি।”
নিষাদ হেসে বললো,”বিয়ে করেছি ম্যাডাম,পরকীয়া করি নি।”
চন্দ্র আর কথা বাড়ালো না।হেলান দিয়ে বসলো ঘুমানোর জন্য।
নিষাদ ড্রাইভ করতে করতে বললো,”খাওয়ার পরে ঘুমানো শরীরের জন্য ভালো না কিন্তু।”
বিরক্তিতে ভ্রু কুঁচকে চন্দ্র বললো,”প্লিজ ডাক্তার,এখন আমার সাথে ডাক্তারি করবেন না অন্তুত।”
করুণ মুখ করে নিষাদ বললো,”আমার যে এখন আমার বউয়ের সাথে কথা বলতে ইচ্ছে করছে। ”
ঘুমে চন্দ্রর দুচোখ বন্ধ হয়ে আসছে।কোনোমতে টেনে টেনে জবাব দিলো,”আমি একটু ঘুমাই প্লিজ,একটু ঘুমাবো,এই এক ফোটা। ”
নিষাদ আর কথা বাড়ালো না। চন্দ্র ঘুমিয়ে পড়লো।নিষাদ গাড়ি একপাশে রেখে মুগ্ধ হয়ে চন্দ্রকে দেখতে লাগলো।
মনে মনে বললো,”তোমায় দেখার শেষ হবে না দুচোখ বোজার আগে।”
.
সকাল থেকে তোড়জোড় শুরু হয়ে গেছে রান্নাবান্নার। চারদিকে উৎসবের আমেজ।হিম হিম শীতে কাঁপতে কাঁপতে চন্দ্র বাহিরে এসে দাঁড়ালো।
নিষাদ ঘুম থেকে উঠেছে সেই সকাল বেলা।সকাল থেকে কাজে লেগে গেছে নিষাদ।ইভেন্ট ম্যানেজমেন্টের লোকদের সাথে সব সাজাচ্ছে,তাদের ডিরেকশন দিচ্ছে মাঝেমধ্যে।
বাগানের মাঝখানে স্টেজ করা হয়েছে।
চন্দ্র দাঁড়িয়ে দেখতে লাগলো সব।নিষাদ চন্দ্রকে কাঁপতে দেখে একটা চাদর এনে চন্দ্রর গায়ে দিয়ে দিলো।এক সেকেন্ড না দাঁড়িয়ে আবারও কাজে লেগে গেলো।
চন্দ্র মুগ্ধ হলো এই ছোট্ট কাজে।হঠাৎ করেই চন্দ্রর মনে হলো সবুজ পাঞ্জাবী পরা এলোমেলো চুলের এই ছেলেটা খুব একটা খারাপ না।কেয়ারিং আছে।
গতরাতের কথা মনে পড়ে গেলো চন্দ্রর। রাতে হঠাৎ করেই নিষাদ চন্দ্রকে নিজের গায়ের উপর টেনে নিয়ে বললো,”একবার ভালোবাসি বলো না বউ?”
চন্দ্র ছিটকে দূরে সরে এলো নিষাদের থেকে। লজ্জায় লাল হয়ে যাওয়া চন্দ্রর দিকে তাকিয়ে নিষাদের মন বিষাদে ছেয়ে গেলো।
এক মুহুর্তের জন্য নিষাদের মনে হলো,”এই মেয়েটার মন কি আমি পাবো না?”
তারপর চুপচাপ শুয়ে পড়লো নিজের বালিশে গিয়ে নিষাদ।
নিষাদের প্রায় সব বন্ধুরাই তাদের বউ অথবা গার্লফ্রেন্ড নিয়ে এসেছে।
চন্দ্র অবাক হলো তাদের ড্রেস দেখে।মানুষের রুচি কতো নিচে নেমে যাচ্ছে দিনদিন চন্দ্র তারই প্রমাণ পেলো যেনো।
চন্দ্র আজকে ধবধবে সাদা রঙের জামদানী শাড়ি পরেছে।সাথে ফুল হাতা সাদা ব্লাউজ একেবারে কোমর পর্যন্ত লম্বা।
হাত ভর্তি নীল কাঁচের চুড়ির সাথে তাজা কাঁচাগোলাপের গাজরা।
পায়ে ফ্লাট স্যান্ডেল।
সোহানের স্ত্রী রেবা এসেছে ওয়েস্টার্ন ড্রেস পরে। অথচ সোহান পরেছে পাঞ্জাবি।
চন্দ্র সোহানের দিকে তাকিয়ে তীর্যক হাসি দিলো।
চন্দ্রর এই বাঁকা হাসি সোহানের বুকে আগুন জ্বালিয়ে দিলো যেনো।
সোহানের জ্বালা আরো বেড়ে গেলো যখন দেখলো চন্দ্রর পাশে রেবাকে ম্লান দেখাচ্ছে।সোহানের হঠাৎ করেই মনে হলো সে হেরে গেছে ভীষণভাবে।
জীবন তাকে হারিয়ে দিয়েছে।বুকের বাম পাশটা কেমন ভারী ভারী লাগছে সোহানের।
নিষাদ একটা নীল পাঞ্জাবি পরে এসে চন্দ্রর হাত ধরে অতিথিদের সাথে পরিচয় করিয়ে দিচ্ছে।
সেই মুহূর্তে সোহানের যেনো কি হলো।
মুহুর্তেই সোহানের মনে হলো চন্দ্রর পাশে নিষাদ না,সে থাকবে।
এই চাঁদটা শুধু তার আকাশে আলো ছড়াবে।নিষাদের আকাশে নয়।
সোহান নিষাদের দিকে এগিয়ে গেলো।নিষাদের ফোন বেজে উঠতেই নিষাদ ফোন বের করে দেখলো ওর ফ্রেন্ড রবিন কল দিয়েছে।সোহানকে দেখে নিজের ফোনটা সোহানের দিকে ছুড়ে দিয়ে বললো,”রবিনের সাথে একটু কথা বল,আমার কথা জিজ্ঞেস করলে বলিস আমি একটু বিজি আছি এখন।”
চলবে…?
লিখা:জাহান আরা