কি আশায় বাঁধি খেলাঘর পর্ব-১৩

0
298

কি আশায় বাঁধি খেলাঘর (১৩)

চন্দ্রর ভীষণ ভয় হলো চন্দ্রর অতীত নিয়ে। সকাল সকাল চন্দ্র নিষাদদের বাসায়।দরজা খুলে চন্দ্রকে দেখতেই নিষাদের হার্টবিট বেড়ে গেলো।

চন্দ্র নিষাদের দিকে তাকিয়ে হেসে দিলো।নিষাদ বুকের বাম পাশ দু’হাতে চেপে ধরে বললো,”দরজা খুইলা দেখমু যারে,করমু তারে বিয়া।”

চন্দ্র নিষাদের দিকে তাকিয়ে রইলো। নিষাদ চোখ নামিয়ে নিলো।চন্দ্রর চোখের দিকে বেশীক্ষণ তাকিয়ে থাকার সাহস নেই নিষাদের।নিজেকে কেমন নেশাগ্রস্থ মনে হতে থাকে।

চন্দ্র জিজ্ঞেস করলো,”চোখ নামিয়ে নিলেন কেনো?
ভয় পেলেন না-কি? ”

নিষাদ মুচকি হেসে বললো,”চোখে এরকম মাদক নিয়ে ঘুরবেন না,আমার নেশা লেগে যায়। মাতাল হয়ে যাই যদি?”

হাসনাত সাহেব পিছন থেকে বললেন,”মেয়েটাকে তো ভিতরে আসতে দিবি।”

নিষাদের হুঁশ এলো এতোক্ষণে। সরি বলে সরে দাঁড়িয়ে চন্দ্রকে জায়গা দিলো।চন্দ্র ভিতরে ঢুকে বলল,”কিছু জরুরি কথা বলার ছিলো আপনাদের, তাই বলতে এসেছি।”

হাসনাত সাহেব বললেন,”বলো মা।”

মনোয়ারা বেগম কিচেন এপ্রোনে হাত মুছতে মুছতে বললেন,”কিছু বলতে হবে না মা।তুমি কে,বাবা মা,পরিবার,আত্মীয়,অর্থবিত্ত কিছু জানতে চাই না আমরা ভালোবেসেছে,তোমার মতামত পেলে আমরা বিয়ের ব্যবস্থা করবো। তোমার যদি কিছু বলার থাকে তবে এটা বলো আমার ছেলেকে বিয়ে করতে তোমার আপত্তি আছে কি-না তা বলো মা।সারারাত আমরা ঘুমাতে পারি নি চিন্তায়।”

নিষাদ কিছু বললো না।নিষাদ তো জানেই চন্দ্রর মতামত কি।

চন্দ্র একটু চুপ থেকে বললো,”যদি কখনো আপনাদের মনে হয় আমার চাইতে ভালো পরিবারের মেয়ে ডিজার্ভ করেন তাহলে? ”

নিষাদ চন্দ্রর সামনে এসে বললো,”আমি তোমাকে চাই চন্দ্র,তোমাকে চাই মানে তোমাকেই চাই,চাই চাই চাই-ই।
মৃত্যুর আগ মুহূর্তে ও বলবো আমি তোমাকেই চাই।তুমি শুধু একবার বলো চন্দ্র,তুমি আমার।
আমি সারাজীবন ধরে তোমায় আমার বুকের ভেতর যত্ন করে রেখে দিবো।”

চন্দ্র একটা নিশ্বাস ফেলে বললো,”আমি রাজি চাচি।তবুও আমি আপনাদেরকে সব জানাতে চাই।নয়তো নিজের কাছে নিজে আজীবন চোর হয়ে থাকবো।মনে হবে আমি সব লুকিয়েছি।”

মনোয়ারা বেগম বললেন,”বলো তুমি তাহলে। ”

চন্দ্র সব কিছু বললো খুলে,নিজের জন্মের ঘটনা থেকে শুরু করে।
সবাই সব শুনলো নিঃশব্দে,যদিও তারা কিছুটা জানতেন কিন্তু চন্দ্র সবকিছু বলার পর মনোয়ারা বেগম চন্দ্রকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে দিলেন।
নিষাদ তাৎক্ষণিক একটা সিদ্ধান্ত নিলো।

হাসনাত সাহেবকে বললো,”বাবা,আমি চন্দ্রকে আজকেই বিয়ে করতে চাই।আর এক মুহুর্ত ও দেরি করতে চাই না।”

চন্দ্র নিষাদের বিয়ে হলো সম্পূর্ণ ঘরোয়া ভাবে,দিনে দিনেই।কবুল বলার সাথেসাথে নিষাদ চন্দ্রকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো বাবা মায়ের সামনে।

চন্দ্র হতভম্ব হয়ে গেলো।নিষাদ ফিসফিস করে বললো,”চন্দ্র,আজ থেকে আমার সব সুখ তোমায় দিলাম।তোমার সব কষ্ট আমি নিলাম।আর কখনো কাঁদবে না তুমি চন্দ্র।
আমি তোমার জন্য প্রাণ বাজি রাখবো চন্দ্র দরকার হলে। তোমাকে আমি আর কষ্ট পেতে দিবো না চন্দ্র।ভীষণ ভালোবাসি তোমায়।”

চন্দ্রর চোখের কোণ গড়িয়ে এক ফোটা জল গড়িয়ে পড়লো।

বাসর ঘরে গিয়ে চন্দ্র অবাক হলো।পুরো ঘর চন্দ্রর পছন্দ মতো করে সাজানো।এই ঘরের প্ল্যান তো চন্দ্র সোহানের সাথে করেছিলো।
এই যে পুরো ঘর সাজাবে সাদা রজনীগন্ধা আর কাঠবেলি দিয়ে।তার মাঝে থাকবে অপরাজিতা ফুল।

চন্দ্রর গলা শুকিয়ে গেলো ভয়ে।নিষাদ কে তো সে সোহানের কথা বলে নি এখনো।
দরজায় টোকা দিয়ে নিষাদ এলো ভিতরে। চন্দ্র বসে ছিলো বিছানায়। নিষাদকে আসতে দেখে বিছানা থেকে নেমে সালাম দিলো নিষাদ কে। সালামের জবাব দিয়ে নিষাদ চন্দ্রর কপালে আলতো করে ঠোঁট ছোয়ালো।

চন্দ্র কেঁপে উঠলো নিষাদের স্পর্শ পেয়ে।

পকেট থেকে নিষাদ একটা কৌটো বের করে চন্দ্রর হাতে দিলো।
কাঁপা কাঁপা হাতে চন্দ্র খুললো কৌটোটা।

ভিতরে জ্বলজ্বল করছে একটা নীল রঙের ডায়মন্ড। চন্দ্র নিষাদের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলো,”সোহান কে চেনেন আপনি? ”

নিষাদ মাথা নেড়ে সায় দিয়ে বললো,”হ্যাঁ,আমার বন্ধু।সেদিন তোমাকে সোহানের বাসায় দেখার পর সোহানকে চেপে ধরে সব জানলাম তোমার পছন্দ অপছন্দ সম্পর্কে। ”

চন্দ্র বললো,”আমি সত্যি সোহানের হতে চেয়েছিলাম জানেন।কিন্তু আমার বাবা মায়ের কিছু নেই বলে… ”

চন্দ্র কথা শেষ করতে পারলো না।নিষাদ নিজের ঠোঁট দিয়ে চন্দ্রর ঠোঁট বন্ধ করে দিলো।

চন্দ্রর সারা শরীর থরথর করে কেঁপে উঠলো। নিষাদের শক্ত আলিঙ্গনে চন্দ্রর মনে হলো চন্দ্র যেনো মিশে গেছে নিষাদের শরীরের সাথে।

একটা গভীর চুমু খেয়ে নিষাদ বললো,”আজ থেকে এই ঠোঁটে শুধু একটা নাম উচ্চারিত হবে ভালোবাসার কথা বলার জন্য।সেটা হলো নিষাদ।যদি নিষাদ ব্যতীত অন্য নাম উচ্চারিত হয় তবে সেই নাম যার তাকে আমি খুন করে ফেলবো।মনে রেখো।”

চন্দ্র হাসলো নিষাদের কথা শুনে।চন্দ্রর মনে হলো এরকম একজন মানুষ তো সে চেয়েছে,যে তাকে এরকম পাগলের মতো করে ভালোবাসবে।

চন্দ্র নিষাদকে বললো,”আপনাকে আমার কিছু দেয়ার আছে।”

নিষাদ কিছু জিজ্ঞেস করার আগে চন্দ্র একটা বক্স দিলো।নিষাদ দেখলো একটা ঘড়ি।চন্দ্র একটা ফাইল দিলো নিষাদের হাতে।

নিষাদ খুলে একটা শক খেলো।একটা উইল যেখানে চন্দ্রর সব সম্পদ নিষাদের নামে।
সম্পদের পরিমাণ দেখে চন্দ্র নিষাদ আরো বেশি অবাক হলো।

নিষাদকে হতভম্ব দেখে চন্দ্র বললো,”আমার বাবা মায়ের সব কিছু আমার নামে লিখে দিয়ে গেছেন।আমি ঠিক করে রেখেছিলাম আমার এসব সম্পদের কথা কাউকে জানাবো না।যে আমার এসব শুনে আমাকে বিয়ে করতে রাজি হবে তাকে বিয়ের পর সব জানাবো আমি।সব কিছু তাকে দিয়ে আমি শুধু তাকে চাইবো আমার জন্য।
আমার আর কিছু চাই না আপনাকে ছাড়া। ”

চলবে…..

লিখা: জাহান আরা