কি আশায় বাঁধি খেলাঘর (১৪)
কুয়াশায় ঢাকা একটা দীর্ঘ রাত। দূরে কোথাও কুকুরের ঘেউঘেউ শব্দ শোনা যাচ্ছে।
মাঝেমধ্যে দু একটা রিকশা,প্রাইভেট কারের শব্দ।
সবার প্রিয় মানুষ ফিরছে তার কাছে।
চন্দ্র ঘুমন্ত নিষাদের দিকে তাকালো।কি স্নিগ্ধ কোমল একটা মুখ।
আচ্ছা এই মানুষটি কি চন্দ্রর প্রিয় মানুষ হবে?
এরকম করে কি এই মানুষটি ছুটে আসবে চন্দ্রর কাছে?
চন্দ্রর বাবা যেমন পাগলের মতো ভালোবেসেছে চন্দ্রর মা’কে নিষাদ কি সেভাবে ভালোবাসবে চন্দ্রকে?
জানে না চন্দ্র।হুট করে বিয়েটা হয়ে গেলো আজ।চন্দ্রর ভাবনা তে ছিলো না আজকেই যে হুট করে বিয়ে হয়ে যাবে।এই রাতে তো সোহানের পাশে থাকার কথা ছিলো চন্দ্রর।
হাসলো চন্দ্র আপনমনে। কাকে ভাবছে সে!
রাত দুটো বাজে,চন্দ্র শুয়ে পড়লো।একটু পরেই ঘুমিয়ে গেলো চন্দ্র।চন্দ্রর শ্বাস ভারী হতেই নিষাদ বুঝতে পারলো চন্দ্র ঘুমিয়েছে।
নিষাদ উঠে বসলো। অনেকক্ষণ ধরে ঘুমের ভান করে ছিলো নিষাদ।
পকেট থেকে এক জোড়া পায়েল বের করে নিষাদ চন্দ্রর দু’পায়ে পরিয়ে দিলো।
যেদিন চন্দ্রকে প্রথম দেখেছিলো নিষাদ সেদিনই এই পায়েল জোড়া কিনেছে।
ঘুম ভাঙলো চন্দ্রর আগে।বিছানা থেকে নামতে গিয়ে চন্দ্র অবাক হলো।
নিষাদ কে কিছু না বলে মুচকি হেসে চন্দ্র ওয়াশরুমে গেলো।
নাশতা খেতে বসে নিষাদ বললো,”তোমার আত্মীয় স্বজন কেউ তো জানে না বিয়ের খবর,তাদের দাওয়াত করলে কেমন হয়?”
চন্দ্র নাশতা খাওয়া বন্ধ করে বললো,”কেউ নেই,কাউকে জানানোর নেই আমার।”
নিষাদ বললো,”রাগ করে থেকো না চন্দ্র,কখনো যদি কেউ আমাদের একসাথে বাহিরে দেখে ফেলে তবে তারা ভুল বুঝবে।তোমাকে নিয়ে বাজে ধারণা করবে।তারচেয়ে ভালো সবাইকে জানিয়ে দেওয়া,তাহলে আর কেউ কিছু ভাববে না।”
চন্দ্র রাজি হলো। নাশতা করে রুমে গিয়ে নিষাদ রেডি হলো বের হবার জন্য।
চন্দ্র রুমে ঢুকে বললো,”আমি ও বের হবো।সবাইকে দাওয়াত দিতে যেতে হবে না? ”
নিষাদ বললো,”চলো,আমার বন্ধুদের আগে দাওয়াত দিয়ে তারপর হাতে সময় নিয়ে তোমার রিলেটিভদের বাসায় যাবো।”
চন্দ্র রাজী হলো।দুজনেই রেডি হয়ে বের হলো।নিষাদ মনে মনে ঠিক করলো সবার আগে গিয়ে সোহানকে দাওয়াত দিবে।
গাড়ি সোহানদের এলাকায় ঢুকতেই চন্দ্রর গলা শুকিয়ে গেলো ভয়ে। কি করছে নিষাদ!
চন্দ্র বলার আগে নিষাদ বললো,”ভয় পেও না।তুমি এখন আমার স্ত্রী। অতীতে কাকে ভালোবেসেছো সেটা নিয়ে আমার মাথাব্যথা নেই।তোমার বর্তমান আর ভবিষ্যৎ শুধু আমি থাকলেই হবে চন্দ্র।”
দরজা খুলে সোহান চন্দ্রকে দেখে চমকে গেলো। একটা গাঢ় বেগুনি রঙের শাড়ি পরনে চন্দ্রর।কানে বেগুনি রঙের পাথরের দুল,গলায় সোনার চেইন।
বিনুনি করা চুল কাঁধের ডানপাশে দিয়ে রাখা। সোহানের মনে হলো এই নিশ্চিত গ্রীক মিথলজি থেকে উঠে আসা এক দেবী।
এতো সুন্দর কেনো একটা মেয়ে!
পরমুহূর্তে সোহানের মনে হলো সে বিবাহিত। তার স্ত্রী আছে।শ্বশুর বাড়ি থেকে যেসব জিনিস সে পেয়েছে এই মেয়ে সারাজীবন ও এক সুতা আনতে পারতো না।
এসব সাতপাঁচ ভাবার মধ্যে নিষাদ এসে দাঁড়ালো চন্দ্রর পিছনে।
নিষাদ এসেই সোহানকে জড়িয়ে ধরলো।সোহান এখনো হতভম্ব হয়ে আছে।কিছুই মাথায় ঢুকছে না।
দুজনকে ভিতরে আসতে বললো সোহান।
বসতে বসতে নিষাদ বললো,”দোস্ত,গতকাল ঘরোয়া ভাবে বিয়ে করে নিয়েছি।এই যে দেখছিস তোদের ভাবী।
আজ এলাম তোদের দাওয়াত দিতে।আগামীকাল তোদের সবার দাওয়াত।আংকেল আন্টি ভাবী সবাইকে নিয়ে আসবি কিন্তু।”
চন্দ্র বললো,”ভাবীকে ডাকুন না ভাইয়া,ভাবীকে আমি বলে যাই।”
সোহানের মনে হলো কাঁটা গায়ে লবনের ছিটা দিচ্ছে চন্দ্র ভাইয়া বলে ডেকে।
সোহান নিজেকে সামলে জবাব দিলো,”ও বাসায় নেই,বাবার বাসায় গিয়েছে।”
নিষাদ উঠতে উঠতে বললো,”আসি দোস্ত,সবার বাসায় যেতে হবে আবার।যাবি কিন্তু সবাইকে নিয়ে অবশ্যই। ”
নিষাদ চন্দ্র বের হয়ে যেতেই সোহান পিছু ডাকলো নিষাদকে।সোহানের মনে অনেক প্রশ্ন জমে আছে।নিষাদের মতো একটা ছেলে চন্দ্রর মতো একটা অনাথ মেয়েকে বিয়ে করবে সোহানের মাথায় ঢুকছে না এটা।
চন্দ্র বুঝতে পারলো সোহান কি বলবে,তাই নিজে গিয়ে গাড়িতে বসলো।চন্দ্র চলে যেতে সোহান বললো,”এটা কি করলি তুই নিষাদ,এই কাকে বিয়ে করলি তুই?”
নিষাদ হেসে বললো,”যাকে মন প্রাণ দিয়ে ভালোবেসেছি তাকেই।”
বিরক্ত হয়ে সোহান বললো,”এই মেয়ের বাবা মা নেই জানিস না তুই?”
“জানি তো,এজন্যই তো আরো বেশি পাগল হয়েছি ওর জন্য,ওর সব কষ্ট দূর করে দেয়ার জন্য।ওকে একটা পরিবার দেয়ার জন্য।”
সোহানের ধৈর্যের বাঁধ ভেঙে গেলো।রেগে গিয়ে বললো,”এই মেয়ে আমার প্রাক্তন ছিলো নিষাদ। আমি ওকে ডাম্প করেছি তুই জানিস?
বিপদে পড়লে শ্বশুর বাড়ি থেকে কোনো সাপোর্ট পাবি না।জেনে শুনে এটা কি করলি?”
নিষাদ দাঁত কিড়মিড়িয়ে বললো,”প্রথমত ও আমার স্ত্রী,সম্মান দিয়ে কথা বলবি ওকে।ভাবী করে বলবি।আর শোন,সবাই খাঁটি সোনা চেনে না।তুই ও চিনতে পারিস নি।তাই ওকে ছেড়ে দিয়েছিস।
তুই জানিস না সোহান,চন্দ্রর বাবা মা চন্দ্রর নামে যে পরিমাণ সম্পদ রেখে গেছে,তা দিয়ে চন্দ্র তোর শ্বশুরের পুরো গোষ্ঠীর সবাইকে কিনে নিতে পারবে।কাল আসিস,দেখতে পাবি সব দলিল।”
নিষাদ চলে গেলো।সোহান সোফায় বসে পড়লো ধপ করে। বুকের ভেতর কেমন তোলপাড় করছে।কি বলে গেলো নিষাদ এসব?
তবে কি সোহান ভুল করেছে?
এমনিতেই স্ত্রীর সাথে সোহানের সম্পর্ক ভালো যাচ্ছে না।এখন এসব শুনে সোহানের মনে হচ্ছে সারা শরীর যেনো জ্বলে যাচ্ছে রাগে।
এতো রাগ কেনো হচ্ছে সোহানের?
চলবে………?
লিখা: জাহান আরা