গোধূলি বেলায় প্রেম পর্ব-০৬

0
4364

#গোধূলি_বেলায়_প্রেম
#ফাবিহা_নওশীন

|পর্ব_৬|

দুদিন ধরে ঝুম বৃষ্টি।বৃষ্টিতে পুরো শহর ভিজছে।রাস্তার কিছু কিছু অংশ ডুবে গেছে।সকালেও বৃষ্টি হচ্ছে।বৃষ্টির সাথে সাথে ঠান্ডাও পড়ছে।বৃষ্টি যেনো শীতকে আমন্ত্রণ জানাচ্ছে।রীতি কাথা মুড়ি দিয়ে শুয়ে আছে।ঠান্ডাটা ঘুমের আরামের মাত্রা বাড়িয়ে দিয়েছে।হটাৎ ফোনের এলার্ম বেজে উঠলো।এলার্মের শব্দ কানে বাজছে।রীতি কপাল কুচকে চোখ না খোলেই ফোনের দিকে হাত বাড়িয়ে দিলো।হাতড়ে ফোনটা হাতে পেয়ে চোখ খোলে এলার্ম অফ করে আবারো কাথা জড়িয়ে বালিশে মাথা গুজে দিলো।
আজ ও আরো কিছুক্ষণ তন্দ্রা বিলাশ করবে।কিন্তু সে শান্তি আর কপালে সইলো না।ফোনের রিংটোন বেজে উঠলো।
রীতি বিরক্তি নিয়ে ফোন রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে বললো,
—-“গতকাল নাকি টেস্ট পরীক্ষার রুটিন দিয়ে দিয়েছে।বৃষ্টির জন্য তো দুদিন ভার্সিটি যাওয়া হয়না।গ্রুপে রুটিন দেখলাম।”

—–“বেশ করেছিস এখন ফোন রাখ।”

রাইসা রীতির এমন গাছাড়া কথা শুনে অবাক না হয়ে পারলো না।
—–“রীতি,আমাদের পরীক্ষা!আর তোর কোনো রিয়েকশন নেই?হাও দিস পসিবল? ”

রীতি দাতে দাত চেপে বললো,
—–“তুই আমার শান্তির ঘুম নষ্ট করে কি রিয়েকশন চাস?তুই আমার দোস্ত নয় দুশমন।ফোন রাখ।”(ধমকিয়ে)

রাইসা ফোন কানে নিয়ে থ হয়ে রইলো।
“এই মেয়ে নির্ঘাত পাগল হয়ে গেছে।”

রীতি ফোন কেটে আবারো বালিশে মুখ গুজলো কিন্তু সেটা বেশিক্ষণ পারলোনা।মাথায় একটা কথাই ঘুরপাক খাচ্ছে এক্সাম।উফফ ভয়ংকর শব্দ।

রীতি উঠে বসে কাথা সরিয়ে বিছানা ছেড়ে নামলো।ফ্রেশ হয়ে বারান্দায় দাড়ালো।তখনও বাইরে টিপটিপ করে বৃষ্টি পড়ছে।দুদিন যাবত অঝোর ধারায় বৃষ্টি পড়ছে।তাই ভার্সিটি যেতে পারেনি।আর ছাদেও যাওয়া হয়নি।বারান্দার অর্ধেকটা বৃষ্টির ফোটায় ভিজে গেছে।টপের গাছগুলো ভিজে গেছে।বেলীফুলের উপর বৃষ্টির ফোটা জমে আছে।অসম্ভব সুন্দর দৃশ্য।
আজ আর পানি দিতে হবেনা গাছে।
রীতি কিচেনে গিয়ে এক কাপ চা নিয়ে এলো।বারান্দার দরজা ঘেষে দাড়িয়ে চা খাচ্ছে আর পা দিয়ে পানির সাথে খেলছে।পা দিয়ে পানি যতই দূরে সরাচ্ছে আবার এক জায়গায় এসেই জড়ো হচ্ছে।
রীতি চা শেষ করে গ্রিলের কাছে গিয়ে দাড়ালো।বাইরে হাত বাড়িয়ে দিলো।
সাদিব বারান্দায় দাঁড়িয়ে বৃষ্টি দেখছে আর বাগানের দিকে চেয়ে আছে।ওর সদ্য বোনা গাছগুলো নুয়ে পড়েছে।বাইরে হাত বাড়িয়ে দিলো।বৃষ্টি ছুয়ে ছুয়ে দেখছে।অসম্ভব ভালোলাগা কাজ করছে মনের ভেতরে।
দোতলা ও তিনতলায় দুজন মানব-মানবী পরম ভালোবাসায় বৃষ্টি ছুয়ে যাচ্ছে।যা একে অপরের অজানা।

.

আকাশ মেঘাচ্ছন্ন হলেও বৃষ্টি নেই।কালো মেঘে ভেদ করে বিকেলের দিকে হালকা রোদ উঁকিঝুকি দিচ্ছে আবার মিলিয়ে যাচ্ছে।দুপুরের দিকে বৃষ্টি কমে গেছে পুরোপুরি।রীতি ছাদে এসে বসেছে এই আশায় যদি সাদিবের দেখা পায়।
ছাদের কর্নারে রাখা টুল এনে বসলো।ছাদ জনমানবশূন্য,কেউ নেই।
রীতি হতাশ হয়ে বই নিয়ে বসলো।লাইব্রেরী থেকে ৪টা বই এনেছে।এই একটা বাকি আছে।আগামীকাল জমা দেওয়ার ডেট।তাই তাড়াতাড়ি শেষ করে জমা দেওয়াই উত্তম।কয়েকদিন পর টেস্ট পরীক্ষা তাই আর গল্পের বই পড়া যাবেনা পাঠ্যবইয়ে মুখ গুজে থাকতে হবে।
সাদিব দুদিন ঘরবন্দী হয়ে থাকার পর নীরব নিস্তব্ধ বিকেল উপভোগ করতে গিটার হাতে ছাদে এলো।

রীতি বইয়ের মলাটে চোখ বুলালো।
“শুভ্র গেছে বনে” বইটা।রীতি বইয়ের নাম উদ্ধার করায় ব্যস্ত।
শুভ্র কে?শুভ্র কি সত্যিই বনে গিয়েছিলো?কেনো গিয়েছিলো?তার প্রেয়সীকে খোজতে?
নানার প্রশ্ন মাথায় জেকে বসেছে।রীতি এসব ভাবনা বাদ দিয়ে বইয়ের মলাট উল্টে প্রথম পাতা বের করলো।এই সব প্রশ্নের উত্তর একমাত্র এই বইয়েই পাওয়া যাবে।
রীতি প্রথম দুই লাইন পড়তেই কানে গিটারের শব্দ ভেসে এলো অপরপাশ থেকে।নিজের অজান্তেই নিজের ঠোঁটের কোনে হাসি ফুটলো।সাদিব এসেছে।সাদিবকে না দেখুক অনুভব তো করতে পারছে।
সাদিব দূর আকাশের দিকে চেয়ে আনমনে গিটার বাজাচ্ছে।কিছুদিন ধরে অদ্ভুত অনুভূতি হচ্ছে।এই অদ্ভুত অনুভূতিরা হৃদয় মাঝে বারবার আলোড়ন তৈরি করছে।কোনো এক অজানা অনুভূতি শিরায় শিরায় প্রভাবিত হচ্ছে যা ওকে অস্থির করে তুলছে।
সাদিব গান শুরু করলো,

“তুমি রোদ পোহাবার ছুতোয়
ছাদে আসতে নিয়ে গভীর বাসনা
আর ওভাবেই জমলো মেলা,
আমার বয়স ২৪(১৬তে)এ প্রেম
প্রেম খেলা।
মনে আছে সেই প্রথম তোমাকে দেখা
ছটফটানো মন,ব্যকুল সারাক্ষণ।
এভাবে শুরু গল্পটা।
(বাকিটা নিজ দায়িত্বে শুনে নিন।)

গান শুনে রীতির চোখ বেড়িয়ে আশার উপক্রম।সাদিব এই গান কেন গাইলো?
” আমাকে ইন্ডিকেট করে গাইলো না তো?ও কি বুঝাতে চাইছে।আমি রোজ ছাদে কেনো আসি?কেনো আবার পড়তে আসি।এখন উনি যদি অন্য কিছু ভাবে সেটা উনার ব্যাপার।এক মিনিট আমি এসব কেনো ভাবছি উনার ইচ্ছে হয়েছে গেয়েছে।রীতি স্টপ।”
রীতির এখন উঠে চলে যেতে ইচ্ছে করছে।কিন্তু তা তো করা যাবেনা।তাহলে সাদিব অন্য কিছু ভাবতে পারে।হাজারো ভাবনায় রীতির আর পড়া হয়ে উঠলোনা।জানতে পারলো না শুভ্র কেনো বনে গিয়েছিলো।
সাদিব গান শেষ করে কিছুক্ষণ থেকে চলে যায়।ওর সবকিছু আজকাল এলোমেলো লাগছে।

.

পরীক্ষা শুরু রীতি নাকে তেল দিয়ে পড়ছে।প্রতিবারের মতো পরীক্ষায় ফার্স্ট হয়ে বাবার মুখে হাসি ফোটাতে চায়।বাবার মুখের হাসির জন্য রীতি সব করতে পারে।বাবাকে প্রচন্ড ভালোবাসে।বাবার জন্য ছাদে যাওয়া বাদ দিতে পারে,বারান্দায় যাওয়াও বাদ দিতে পারে।তাই তো করছে।বিছানায় শুয়ে পরীক্ষার পড়াগুলো আয়ত্ত করতে ব্যস্ত।এক মিনিট নষ্ট করতে চায়না রীতি।
সাদিবের খোজও নিতে পারেনা।
সাদিব বাগানে রোজ সকালে পানি দিতে আসে,বিকেলে ছাদে যায় কিন্তু রীতির দেখা মিলছেনা।ওর মন কেনো জানি অস্থির অস্থির করছে রীতিকে দেখার জন্য।কেনো করছে জানেনা।বারবার বারান্দার দিকে তাকায়।
কোনোভাবে জানতে পারে ওর পরীক্ষা চলছে।তবুও রোজ সকালে বাগানে আসে।যদি একবার দেখা পায়।

.

অবশেষে রীতির টেস্ট পরীক্ষা শেষ।ছাদে দাড়িয়ে আছে।স্নিগ্ধ বাতাস বইছে।চুলগুলো ছেড়ে দিয়ে দুহাত প্রসারিত করে দাড়িয়ে আছে।ওর কোমড় অবধি চুল উড়ছে।গায়ের জামা,ওড়না উড়ছে।রীতি আশেপাশের ঠান্ডা পরিবেশ উপভোগ করায় ব্যস্ত।নিজেকে দুদিনের জন্য ছুটি দিয়েছে।
সাদিব ছাদের দরজার সামনে এসে দাড়িয়েছে।ওদের দেখে আর ছাদে আসেনি।

“রীতি আপু,জানো রিজভী আমাকে কি দিয়েছে?”
সাবিহার কথায় রীতির নিজেকে উপভোগ করায় ব্যাঘাত ঘটেছে।

রীতি অনিচ্ছা সত্ত্বেও জিজ্ঞেস করলো,
—-“কি দিয়েছে সাবিহা?”

সাবিহা লজ্জা মাখা মুখে বললো,
—-“আমাকে একটা ব্রেসলেট দিয়েছে।জানো তো খুব সুন্দর।”
সাবিহা যতক্ষণ রীতির সাথে থাকবে নিজের বফের প্রশংসায় পঞ্চমুখ হবে।রীতির এসব প্রচন্ড বিরক্ত লাগে কিন্তু কিছু করার নেই সবটা হজম করে নেয়।
সাদিব দূর থেকে ওদের কথা শুনতে পারছেনা কিন্তু বুঝতে পারছে সাবিহা কিছু বলছে আর যা রীতির বিরক্তির কারণ হচ্ছে।
সাদিব আর ওদের মাঝে যেতে চায়না তাই দাড়িয়ে আছে।

দিয়া ছাদে উঠে সাদিবকে এভাবে দাড়িয়ে থাকতে দেখে পেছন থেকে বললো,
—-“আরে সাদিব ভাই এখানে দাড়িয়ে আছেন কেনো?”

সাদিব দিয়ার দিকে ঘুরে বললো,
—-“লেডিস দিয়ে ছাদ ফুল।ছাদ লেডিসের দখলে তাই যাচ্ছিনা।”

—–“কি বলেন?এতোবড় ছাদ আপনাদের দুজন মেয়ে কি করে দখল করতে পারে?চলুন আপনি।”

—-“না ঠিক আছে।তোমরা থাকো।আমি বরং বাইরে থেকে ঘুরে আসি।”

.

এভাবে কেটে গেছে অনেক দিন।রীতির আজ টেস্ট পরীক্ষার রেজাল্ট আউট হয়েছে।বরাবরের মতোই এই বারও ফার্স্ট হয়েছে আর তাতে সেকেন্ড গার্লের প্রচন্ড লেগেছে।
রীতি ফোনে টাইপ করতে করতে ক্যাম্পাস দিয়ে হাটছে।আর তখনই ওকে কেউ ল্যাং মেরে ফেলে দিলো।
রীতি খেয়াল না করায় ক্যাম্পাস ভর্তি মানুষের সামনে পড়ে গেলো।পায়ে প্রচুর ব্যথা পেয়েছে আর হাত থেকে ফোন ছিটকে পড়ে গেছে।
রীতি কোনো রকমে উঠে দাড়িয়েছে।সবার দৃষ্টি ওর দিকে।কেউ মুখ লুকিয়ে আবার কেউ প্রকাশ্যে হাসছে।
রাহি গ্যাং নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।এই কাজ রাহি কিংবা রাহির দলের কারো।রীতি একে একে সবার দিকে তাকিয়ে সবাইকে দেখে নিলো।

রাহি রীতিকে উপহাস করে বললো,
—-“কিরে রীতি আগে তো জানতাম তুই কানা এখন তো দেখছি তুই ল্যাংড়াও।”

বলেই উচ্চস্বরে হাসতে লাগলো সাথে ওর পুরো গ্যাং।রাহির কথা শুনে রাগে রীতির মাথা ফেটে যাচ্ছে। ইচ্ছে করছে ঠাটিয়ে একটা চড় মারতে।রীতি রাহির দিকে ক্ষীপ্ত দৃষ্টি দিয়ে কিছু বলতে গিয়েও চুপ হয়ে গেলো।
রাহি যে ওকে উস্কানি দিচ্ছে সেটা ঠিক বুঝতে পারছে।রীতি নিজেকে মনে মনে বললো,
—-“কুল রীতি,কুল।ওরা তোকে উস্কাচ্ছে।ওদের সাথে মুখ লাগিয়ে লাভ নেই। আমি একটা বললে ওরা হাজারটা বলবে।আমাকে আরো অপমান করবে,সবার সামনে হাসির পাত্র বানাবে।আমি এখন একা।একা আমি ওদের সাথে পারবোনা।তাই চুপ থাকাই ব্যাটার।”
রীতি কোনো জবাব না দিয়ে ফোন তুলে নিলো।

রাগে রীতির সারা গা জ্বলে যাচ্ছে।ও দ্রুত পায়ে হেটে চলেছে।কান দিয়ে ধোয়া বের হচ্ছে।রাগে ক্ষোভে ওর চোখ দিয়ে পানি বের হচ্ছে।রীতির যখন রাগ হয় তখন রাগে ওর চোখে পানি এসে পড়ে।ও এগিয়ে চলেছে ডিপার্ট্মেন্টের হেডের রুমের দিকে।
রাহির স্পর্ধা অনেক বেড়ে গেছে।কমানো দরকার।
রাহি চশমা খোলে চোখের পানি মুছে নিলো কোনো দিকে ওর খেয়াল নেই।দুটো মেয়ে একসাথে আসছে।ওদের একজনের সঙ্গে ধাক্কা লাগলো রীতির।রীতি ওদের দিকে না তাকিয়েই হাত দিয়ে ইশারা করে মুখে বললো,
—-“সরি আপু।”

রীতি ডিপার্ট্মেন্টের কডিটোর দিয়ে হাটছে।সাদিবও বন্ধুদের সাথে সেখান দিয়ে আসছিলো।সাদিব রীতিকে এভাবে দেখে চমকে যায়।রীতির চোখ মুখ লাল হয়ে আছে।সেই লাল আভা মুখে ছড়িয়ে পড়েছে।আহত বাঘিনী লাগছে ওকে।রীতি রুমের বাইরে দাঁড়িয়ে পারমিশন নিয়ে ভেতরে গেলো।
সাদিব বন্ধুদের বাই দিয়ে দরজার সামনে গিয়ে দাড়ালো।
রীতি স্যারের সামনে গিয়ে দাড়ালো।বরাবরই ভালো রেজাল্ট করায় স্যারদের সাথে পরিচিত সখ্যতা দুটোই রীতির আছে।

স্যার রীতির এমন চেহেরা দেখে বিচলিত হয়ে জিজ্ঞেস করলো,
—–“রীতি তোমাকে এমন দেখাচ্ছে কেনো?কি হয়েছে? কোনো সমস্যা?”

রীতি প্রতিউত্তরে বললো,
—–“স্যার আমি পরীক্ষায় প্রথম হয়ে কি বড় অপরাধ করে ফেলেছি?”

—-“না তা কেনো হবে?ভালো রেজাল্ট করেছো এটা তো ভালো খবর।”

—–“কিন্তু স্যার আমার ভালো রেজাল্ট কাউকে অতি মাত্রায় জ্বালাচ্ছে আর তার প্রভাব আমার উপর এসে পড়ছে।আমাকে সুযোগ পেলেই ইনসাল্ট করা হচ্ছে।কেনো এমন করা হচ্ছে? আমি ছোট থেকেই পড়াশোনাকে আমার ফার্স্ট প্রায়োরিটি দিয়ে এসেছি।বাকি সবকিছু পেছনে রেখেছি।আমি অন্যদের মতো বন্ধুদের সাথে হৈ-হুল্লোড় করে,আড্ডা দিয়ে,ঘুরে বেড়িয়ে,শপিং করে সময় কাটাই না।যতটুকু প্রয়োজন ততটুকুই করি।বাকি সময় বইয়ের ভেতরে মুখ ডুবিয়ে রাখি।দিনরাত এক করে পড়াশোনা করি।নিজের স্বপ্ন, নিজের বাবার স্বপ্ন,পরিবারের স্বপ্ন পূরনের জন্য জীবন থেকে সব কিছু বাদ দিয়ে দিয়েছি।এতো পরিশ্রম করে পড়াশোনা করে অন্যের অপমান কি আমার প্রাপ্য?”

স্যার বুঝতে পারলেন গুরুতর কিছু একটা হয়েছে।
—-“বিষয়টি খোলে বলো।”
রীতি সবকিছু খোলে বললো।সবটা শুনে স্যার বললো,
—–“তুমি কমপ্লেইন লিখে তাতে সবার নাম লিখে জমা দেও।আমি ব্যবস্থা নিচ্ছি।ডোন্ট ওরি।”

রীতি আন্তরিকতার সুরে বললো,
—-“ধন্যবাদ স্যার।”

রীতি স্যারকে সালাম দিয়ে বের হয়ে গেলো।সাদিব তাড়াতাড়ি সরে গেলো।

রীতি সোজা গেট দিয়ে বের হয়ে গেলো।রিক্সার জন্য দাড়িয়ে আছে কিন্তু একটা রিক্সাও নেই।রীতির মেজাজ প্রচন্ড খারাপ হচ্ছে।প্রথমত ভার্সিটিতে এমন একটা ঘটনা ঘটলো আর এখন রিক্সাও পাচ্ছে না।
সাদিব পেছনে পেছনে এসেছে রীতির।রীতিকে এতোটা রাগতে কখনো দেখে নি।।
রীতি রিক্সা না পেয়ে রেগে পায়ে হাটা ধরলো।রাগে গজগজ করছে আর হাটছে।
সাদিব ওর অবস্থা দেখে হাসতে লাগলো।
চশমা রাণী প্রচন্ড রেগে গেছে।
সাদিব কিছুটা এগিয়ে গিয়ে একটা রিক্সা পেলো।তাকে রীতির কাছে পাঠিয়ে দিলো।রিক্সা ভাড়া দিতে গিয়েও দিলোনা নয়তো রীতি সন্দেহ করবে।

পেছনে থেকে রিক্সা ওয়ালা বললো,
—-“আপা যাবেন?”

রীতি পেছনে ঘুরে বললো,
—-“আরে মামা আপনারা থাকেন কই?রিক্সা ওয়ালারা কি সব বড়লোক হয়ে গেছে?একটা রিক্সাও পাইনা।চলুন সামনে যাবো।”
রীতি রিক্সায় উঠে বসলো।

.

রীতি বিছানার মাঝে কোলের উপর দুহাত রেখে মুখ ভার করে বসে আছে।
কিছুক্ষণ আগে রাগ কমানোর জন্য রাহি আর রাহির পুরো গ্যাং এর নাম লিখে তাতে কাটি ঝুটি করেছে।তবুও মেজাজ শান্ত হচ্ছে না।
রিমন রীতির সামনে কয়েকটা চকলেট এনে ধরলো।রীতির সেদিকে চোখ পড়তেই রিকনকে জিজ্ঞেস করলো,
—-“কিহ?”

—-“আপু তোমার জন্য।তোমাকে দেখে মনে হচ্ছে তোমার মুড অফ।চকলেট খাও মুড ভালো করো।”

রীতি রিমনের থেকে দুটো চকলেটের প্যাকেট নিয়ে খাওয়া শুরু করলো।হটাৎ রীতির মনে হলো রিমন এতো চকলেট কই পেলো?রিমনকে এর আগেও ক্যান,চকলেট,আইসক্রিম খেতে দেখেছে।ও এসব খেয়ে ফুটবলের মতো গোল হয়ে যাচ্ছিলো যার কারণে ডাক্তার ওর এসব খাবার বন্ধ করতে বলেছে।ডায়েট চার্ট বানিয়ে দিয়েছে।সেই চার্ট অনুযায়ী খাবার খায়।বাবা ওকে টিফিনের জন্য কোনো পয়সা দেয়না।তাহলে এসব কেনার টাকা কই পায়?
মা দেয়?মা কেনো দেবে?তবে কে?

চলবে…..