#গল্প_ছেড়ে_যাওয়া_সেইজন
#ষষ্ঠ_পর্ব
#রেবেকা_সুলতানা
সাগর একটা ব্যাগে কিছু জামা কাপড় গুছিয়ে নিলো।ব্যাগটা কাঁধে ঝুলিয়ে দরজায় তালা দিয়ে বেরিয়ে পড়লো গন্তব্যহীন পথে।চিত্রা কোথায় আছে কি অবস্থায় আছে খোঁজ করার প্রয়োজন বোধ করে নি।
চিত্রার রুমের সাথে একটা বারান্দা। বারান্দার সামনে একটা ফুলের বাগান। বারান্দা গিয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে দেখে বড্ড মেঘ জমেছে।যে কোনো সময় বৃষ্টি নামবে।অজানা কারণে চিত্রার মনটা খুব খারাপ। আজকাল যেন সবকিছুই প্রাণহীন লাগে। শুধু বাচ্চারটার কথা ভেবে নিজেকে ভালো রাখার চেষ্টা করে যায়। হঠাৎ করে তার হারমোনিয়ামটার কথা মনে পড়ে যায়। কতদিন হারমোনিয়ামে সুর তোলা হয় নি!দু চোখ বেয়ে অশ্রু গড়িয়ে পড়ে।”চিত্রা ম্যাডাম!”
“টিনা আপু তুমি?”
“হুম আসলে আপনার কথা খুব মনে পড়ছিল তাই দেখতে চলে এলাম।”
“খুব ভালো করেছ।”
“ম্যাডাম আপনার কাছে আমার একটা আবদার আছে।”
“কি আবদার?”
“আজ বিকেলে আমার সাথে একটু ঘুরতে যাবেন?” বেশিক্ষণ থাকতে হবে না।”
“কিন্তু খালামনি!”
“বড় ম্যাডামের পারমিশন নিয়েছি।”
“ঠিক আছে তবে তো আর কোনো বাধাই রইলো না।”
“আচ্ছা আমি এসে আপনাকে নিয়ে যাবো।”
টিনা উঠে চলে যাচ্ছিলো এমন সময় চিত্রা বলল,”আমি যাবো না।”
টিনা কিছুটা হতাশ হলো।” মাত্রই রাজি হলো এখন আবার না করছে!”টিনা গিয়ে চিত্রার হাত ধরলো।”কেন যাবেন না ম্যাডাম?”
“তুমি আমায় ম্যাডাম বলছো। আপনি আপনি করে কথা বলছো তাই যাবো না। তুমি আমায় তুমি করে বললে যাবো। ছোটদের কেউ আপনি বলে?”
“কিন্তু স্যার আর বড় ম্যাডাম শুনলে রাগ করবে।”
“কেউ কিছু বলবে কেন?আমি তো তোমার ছোট বোনের মতো !তাই না?”
চিত্রার কথা শুনে টিনা খুব খুশি হলো।”চিত্রা ম্যাডাম আপনি খুব ভালো।”
“আবার ম্যাডাম।”
টিনা জিহ্বা কামড় দিয়ে বলল,”সরি সরি আর বলবো না।”
টিনা বাড়ির বাইরে এসে সাজিদকে কল দিয়ে বলল,”স্যার কাজ হয়ে গেছে।”
দুপুরে খাওয়া দাওয়া করে চিত্রা রেস্ট নিলো। খানিক বাদে টিনা এসে চিত্রাকে রেডি হতে বলল।চিত্রা চটপট রেডি হয়ে টিনার সাথে পাশের পার্কে গেল।পার্কটা খুব সুন্দর। চারপাশে গাছের সমারোহ আর মাঝখানে একটা পদ্মপুকুর।একপাশে কয়েকটা পদ্ম ফুটে আছে। বেশকিছুক্ষন হাঁটাহাঁটি করে চিত্রার ক্লান্ত লাগলো।টিনা বলল,”চিত্রা চল আমরা ওই রেস্টুরেন্টে গিয়ে কিছু খেয়ে নেই।তারপর বাসায় চলে যাবো!”
“আমার তো খিদে লাগে নি।”
“অল্প কিছু খেয়ো।”
টিনা আর চিত্রা রেস্টুরেন্টে গিয়ে হালকা খাবার খেয়ে বাসায় চলে গেল। অনেকক্ষণ বাইরে থেকে চিত্রার বেশ ক্লান্ত লাগছে।আসরের নামাজটা পড়ে বিছানায় শুয়ে পড়লো।
“কতগুলো দিনপরে আমি আমার মেয়েটাকে দেখলাম!চোখ মুখের কি অবস্থা হয়েছে!আমার কলিজার টুকরোর এই করুন পরিনতি আমি বাবা হয়ে কিভাবে সহ্য করবো।মারে তোর বাবা তোর জন্য কিচ্ছু করতে পারলো না।রাগের বশে আমি তোর সাথে সব যোগাযোগ বন্ধ করে খুব বড় অন্যায় করে ফেলেছি।আর তোকে কষ্ট পেতে হবে না সাজিদ আমি আমার মেয়েকে আমার কাছে চাই।যে করেই হোক!”
“আঙ্কেল আমি আপনাকে কথা দিয়েছি আপনার মেয়েকে আপনার কাছে ফিরিয়ে দেবো। আপনি এতো কষ্ট পাবেন না।”
“সাজিদ বাবা তুমি আমার নাতনির খেয়াল রেখো।আমরা তোমার ভরসাতেই ওকে রেখে যাচ্ছি।মেয়েটা বড্ড জেদী।ওকে একটু সামলে রেখো বাবা।”
“আপনি কোনো চিন্তা করবেন না। আপনার নাতনির কোনো অসম্মান অযত্ন হবে না।”
“আমরা এখন আসি বাবা।”
ওনারা চলে যাওয়ার পর সাজিদ টিনাকে কল দিলো।”হ্যালো,মিস টিনা আপনি কাল একবার আমার অফিসে এসে দেখা করে যাবেন। আপনার সাথে খুব জরুরী কথা আছে।”
পরের দিন টিনা সাজিদের অফিসে গেলো।”স্যার আসবো?”
“জি আসুন।বসুন।রফিক রফিক।”
“জি স্যার বলুন। শামীম সাহেবকে গিয়ে বলো আমি ডাকছি।”
“আপনাদের দুজনকে একটা বিশেষ দরকারে ডাকা হয়েছে। আপনারা আমার খুব কাছের মানুষ।যে কোনো সমস্যার কথা আমি আপনাদের সবার আগে জানাই।আশা করি প্রত্যেকবারের মতো এবারও সাহায্য করবেন।”
টিনা বলল,”স্যার আপনি নির্দ্বিধায় সব খুলে বলুন আমরা আমাদের সর্বোচ্চ দিয়ে সাহায্য করবো।সাজিদ টিনা আর শামীমকে সমস্যার কথা বলতে লাগলো।
“মম আমার গাড়ির চাবিটা কোথায়?আমায় ভার্সিটিতে যেতে হবে।”
“ড্রাইভার বলল,”গাড়ি খারাপ হয়ে গেছে।সার্ভিসিং করতে নিয়ে গেছে।”
“আমি যাবো কিভাবে?”
“আমি আর চিত্রা ডাক্তারের চেম্বারে যাচ্ছি। তুমি চাইলে আমাদের সাথে যেতে পারো।”
“সরি মম।আমি এমন থার্ড ক্লাস মেয়ের সাথে একই গাড়িতে যেতে পারবো না। আফটার অল আমি আনোয়ার চৌধুরীর মেয়ে।যার তার সাথে গাড়ি শেয়ার করতে পারবো না।”
“সেক্ষেত্রে তুমি নিজেই নিজের ব্যবস্থা করে নাও।আয় চিত্রা আমাদের বের হতে হবে।”
চিত্রা আর শায়লা বেরিয়ে গেল।”তুমি ওই মেয়েটার জন্য আমায় ইগনোর করছো তো আমিও দেখবো তোমাদের এই ভালোবাসা কতদিন টেকে!”
“হাই সুইটি।হোয়াটস আপ!”
রুশার কথার কোনো উত্তর দিলো না জেরিন।”কিরে তোরা এখানে বসে আছিস ক্লাসে যাবি না?”
“আর ক্লাস, দেখ জেরিন কেমন মুখ ভার করে আছে?”
রকি জেরিনের মাথায় টোকা মেরে বললো,”কি রে কি হয়েছে?”
“কিছু হয়নি।”
“কিছু হয় নি মানে? কিছু না হলে মুখটা এমন বাংলার পাঁচ করে রেখেছিস কেন?”
“বললাম তো কিছু হয় নি।”
“রুশা জেরিনের মনে হয় কোনো কারণে মুড অফ।চল আমরা কোথাও গিয়ে ঘুরে আসি।”
“আমি কোথাও যাবো না।”
“প্লীজ জেরিন এমন করিস না তো।তোকে এমন মন খারাপ দেখলে আমাদের তো খারাপ লাগে।চল প্লীজ।”
“রুশা তুই জেরিনকে নিয়ে ভার্সিটির গেটে দাঁড়া আমি আসছি।”
রুশা আর জেরিন কথা বলতে বলতে ভার্সিটির গেটের কাছে এগিয়ে যাচ্ছে। হঠাৎ জেরিন কিছু একটার সাথে ধাক্কা খেয়ে পড়ে যায়।”ওহ মা গো।কোমরটা গেলো রে।”
রুশা জেরিনের হাত ধরে টেনে তোলে।জেরিন সামনে তাকিয়ে দেখে একটা ছেলে দাঁড়িয়ে আছে।ছেলেটা দেখতে খুব হ্যান্ডসাম। চোখদুটো যেন মায়ায় ভরা। একবার তাকালে ঘোর লেগে যায়।সিল্কি ছোট চুলগুলো ঠিক করতে করতে বলে,”হে ইয়ু রাস্তায় হাঁটার সময় চোখ দুটো ব্যাগে ঢুকিয়ে রাখো নাকি?”
জেরিন ছেলেটার এমন কর্কশ কথা শুনে নিজেকে আটকাতে পারলো না।ছেলেটা দেখতে এতো ড্যাশিং আর কথাগুলো পুরো করলার জুস।”আপনি হাঁটার সময় চোখগুলো গাড়িতে রেখে আসেন নাকি?মেয়ে দেখলেই গায়ে পড়ার হওয়ার স্বভাব?যে দেখলেন দুইটা মেয়ে হেঁটে আসছে ওমনি খাম্বার মতো দাঁড়িয়ে পড়লেন।কোনো কমসেন্স নেই?কোথা থেকে আসে এরা !!”
“চাইলেই আমিও অনেক কিছু বলতে পারতাম কিন্তু মেয়ে বলে ছেড়ে দিলাম।মেয়েরা মায়ের জাত। মেয়েদের স্থানটা অনেক সম্মানের। তুমি যদি মেয়ে না হয়ে ছেলে হতে তবে বুঝিয়ে দিতাম এই মিহান চৌধুরীর কে!আর কি কি করতে পারে।”
“এই রুশা তুই কি যাবি নাকি দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে বাংলা সিনেমার ডায়ালগ শুনবি?চল বলছি এখান থেকে।এসব আজাইরা কথায় কান দেওয়ার সময় নেই।”
জেরিন রুশার হাত ধরে টেনে নিয়ে গেল।”জেরিন ছেলেটাকে এভাবে বলা উচিত হয়নি।তুই হুটহাট এমন মাথা গরম করে ফেলিস কেন!”
“ওহ এখন সব আমার দোষ।ছেলেটা যে আমায় ইনসাল্ট করলো তার বেলায় কিছু না?”
“জেরিন যাই বলিস আর তাই বলিস ছেলেটা দেখতে কিন্তু জোস মামা।উফফ এমন হ্যান্ডসাম ছেলে লাইফে থাকলে আর কিছু লাগে না।আমি তো তার ভয়েজে ফিদা।সো কিউট ইয়ার!”
“রুশা চুপ করবি। বেশি বকবক করলে লাথি মেরে ফেলে দেবো বলে দিচ্ছি।”
রুশা জেরিন আর রকি মিলে ঘুরতে গেল। ঘোরাঘুরি শেষ করে রাত দশটায় বাসায় ঢুকলো জেরিন।”দাঁড়াও”
“মম আমি খুব টায়ার্ড।ফ্রেশ হয়ে ঘুমাতে হবে কাল আমার ক্লাস আছে।”
“ক্লাস আছে বলে রোজ তো ভার্সিটিতে যাও। কিন্তু কোনো ভার্সিটির ক্লাস রাত দশটা পর্যন্ত হয় তা আমার জানা নেই।”
“মম”
“কাল থেকে যেন সন্ধ্যার আগে বাসায় ফেরা হয়। নইলে এর ফল ভালো হবে না!”
জেরিন শায়লার কথায় রেগে গেল। রুমে গিয়ে ব্যাগটা ছুড়ে মারলো বিছানায়।”ওহ আল্লাহ ওহ।কোথাও শান্তি নেই।না ভার্সিটিতে, না বাড়িতে।যেন জেলখানায় বন্দী হয়ে আছি।”জেরিন ফ্রেশ হয়ে শুয়ে পড়লো। কিন্তু তার চোখে ঘুমের লেশমাত্র নেই।বার বার শুধু ছেলেটার কথা মনে পড়ছে।”ওই অসভ্য অভদ্র ছেলের কথা কেন বারবার মনে পড়ছে!জেরিন তোর কি মাথা খারাপ হয়ে গেছে।ওমন একটা ছেলের কথা ভেবে রাত জেগে আছিস।ঘুমা।”
পরের দিন সকালে নাস্তা না করেই ভার্সিটিতে চলে গেল।রাতে ঠিকমতো ঘুম হয়নি।তাই সকালে উঠতে অনেক দেরী হয়ে গেছে। ভার্সিটি পৌঁছাতে পৌঁছাতে বিশ মিনিট দেরি।”মে আই কাম ইন?”
“ইয়েস কাম ইন।”
ভয়েসটা শুনে……
****চলবে****