#গল্প_ছেড়ে_যাওয়া_সেইজন
#সপ্তম_পর্ব
#রেবেকা_সুলতানা
পরের দিন সকালে নাস্তা না করেই ভার্সিটিতে চলে গেল।রাতে ঠিকমতো ঘুম হয়নি। সকালে উঠতে অনেক দেরী হয়ে গেছে। ভার্সিটি পৌঁছাতে পৌঁছাতে বিশ মিনিট দেরি।”মে আই কাম ইন?”
“ইয়েস কাম ইন।”
ভয়েসটা শুনে জেরিনের চোখ কপালে উঠে গেল।”এটা তো কালকের ছেলেটা এখানে কি করছে!হায় আল্লাহ ক্লাস নিচ্ছে দেখছি।তবে কি!”
“আপনাকে কি ইনভাইট করে নিয়ে আসতে হবে।নাকি কেউ গলায় ফুলের মালা দেবে তার জন্য অপেক্ষা করছেন!”
মিহানের কথায় রুশা ছাড়া ক্লাসের বাকি সবাই হো হো করে হেসে উঠলো।মিহান চোখ পাকিয়ে বলল,”ডোন্ট লাফ।কিপ সাইলেন্ট।”
জেরিন গুটি গুটি পায়ে রুশার সাথে গিয়ে বসলো।”রুশা এই ছেলে এখানে কি করে?”
“উনি আমাদের নতুন টিচার সুইটি।”
“ক্লাস রুমে কেউ কথা বলবেন না। আপনারা যথেষ্ট ম্যাচিউড। আর সবচেয়ে বেশি ইমপোর্টেন্ট কথা হলো আগামীকাল থেকে কেউ দেরিতে এলে ক্লাসে ঢুকতে দেওয়া হবে না।আশা করি বিষয়টা মাথায় রাখবেন। এবার আমরা পড়া শুরু করি।”
মিহান ক্লাস থেকে চলে যাওয়ার পর রুশা বলল,”তোকে বার বার বলেছি এতোটা বাড়াবাড়ি না করতে।এবার কি হবে জেরিন?স্যার যদি পরীক্ষার খাতায় বড় বড় দুটা জিরো দেয় মান সম্মান তো ভার্সিটিতে গড়াগড়ি খাবে!”
“এই তুই কি টুকলি করে পাস করেছিস নাকি!জিরো পাবো কেন! আজব কথাবার্তা সব!”
মিহানকে দেখার পর জেরিন পড়াশোনায় আরো আগ্ৰহী হয়ে উঠেছে।ঘুরতে যাওয়া,আড্ডা দেওয়া কমিয়ে দিয়েছে।জেরিন যে মিহানের সাথে একটু একট করে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে যাচ্ছে তা স্বয়ং মিহানও জানে না।দিন রাত মিহানের ভাবনায় ডুবে থাকে।যে জেরিনের চোখের দিকে তাকিয়ে কেউ কথা বলার সাহস পেতো না এখন সে জেরিনকে কেউ বাজে কথা বললেও কানে তোলে না।রুশা আর রকি তো অবাক।এই জেরিন তাদের কাছে বড্ড অচেনা।”এই তোর কি হয়েছে বল তো?”
“কি হবে। সবই তো ঠিকঠাক আছে।”
“উম হু কিছু তো একটা হয়েছে?তুই কারোর প্রেমে টেমে পড়িসনি তো ?”
“পাগল নাকি তোরা!আমি আর প্রেম বিপরীত মেরুর।আমি করবো প্রেম তবে তো হয়েই গেল।”
কথাগুলো বলতে বলতে থেমে গেল জেরিন।তার থেকে বেশ খানিকটা দূরে ভিসির সাথে কথা বলছে মিহান। জেরিনের হার্ট খুব দ্রুত বিট করছে।মনে মনে বলল,’আমার ভয়ঙ্কর অসুখ হয়েছে রে রুশা যার ওষুধ শুধু সামনে দাঁড়িয়ে থাকা ওই সুদর্শন পুরুষটির কাছে আছে।যে সামনে আসলে আমার সবকিছু এলোমেলো হয়ে যায়।যার চোখের চাহনিতে আমি বার বার হারিয়ে যাই অথৈ সাগরে ।তাকে একনজর দেখার আসায় সবকিছু উপেক্ষা করে ছুটে আসি।এটাই কি তবে প্রেমানুভূতি!এটাই কি তবে ভালোবাসা বাহিত অসুখ।আমি যে প্রেম রোগের আক্রান্ত রুশা।”
“এই জেরিন ওইদিকে তাকিয়ে কি এতো ভাবছিস বল তো? এতোক্ষণ ধরে ডাকছি কোনো সাড়া দিচ্ছিস না।”
জেরিন মুচকি হেসে বলল,”কিছু হয়নি।তোরা বস আমি আসছি।”
“রুশা জেরিনের হাবভাব কিন্তু অন্যরকম লাগছে। সারাক্ষণ কি ভাবে কে জানে।”
“রকি আমার মনে হয় জেরিন প্রেমে পড়েছে।একটা মেয়ের মধ্যে এসব পরিবর্তন তখনই আসে যখন সে কাউকে ভালোবাসে কিন্তু ভালোবাসার মানুষটিকে মুখ ফুটে কিছু বলতে পারে না।”
রকি হাসতে হাসতে বলল,”রুশা তুই বরং একটা কোচিং সেন্টার খুলে বসো। সাইনবোর্ডে বড় বড় করে লেখা থাকবে এখানে ভালোবাসা সম্পর্কিত পড়াশোনা করানো হয়।এলেন আমার মনোবিজ্ঞানী আনারকলি।”
“হেহেহে বত্রিশ পাটি বের না করে ভেতরে ঢুকিয়ে রাখ। ওগুলো বের হলে তোকে পুরো বান্দরের চাচার মতো লাগে।”
বেশকিছু দিন কেটে গেল।জেরিন পুড়ছে অব্যক্ত ভালোবাসার দহনে।চিত্রার ভুগছে বিচ্ছেদের অনলে।”মিস টিনা যে করেই হোক আমাদের প্ল্যানটা সাকসেসফুল করতে হবে।নইলে আমাদের সব ভেস্তে যাবে।
“স্যার বড় ম্যাডাম আমাদের হেল্প করতে পারে।বাকিটা আমি আপনি আর শামীম স্যার মিলে ম্যানেজ করে নেবো।”
“হুম ঠিক বলেছো।আমি মায়ের সাথে কথা বলে আসছি!”
” তোমরা রেডি তো?”
“জি স্যার।”
“চিত্রা !কি করছিস মা?”
“বসে আছি খালামনি।”
“শোন না তোর আমি আমার বড় আপার বাসায় যাচ্ছি।আপা অনেকবার বলেছে তোকে নিয়ে যাওয়ার জন্য।তোর যদি কোনো অসুবিধা না হয়…!”
“কোনো অসুবিধা নেই খালামনি।কখন যাবে?”
“এইতো এখন!তুই এই শাড়িটা পড়ে নে।”
“আচ্ছা খালামনি।”
চিত্রা শাড়িটা পড়ে রেডি হয়ে নেয়।শায়লা এসে চিত্রাকে নিয়ে যায়।আড়ালে থাকা সাজিদকে ইশারা দেয়।শায়লা আর চিত্রা বেরিয়ে যাওয়ার পর টিনা, সাজিদ, শামীম আরো কয়েকজন মিলে চিত্রার রুমটা সাজিয়ে ফেলে।শায়লা তার বড় বোনের বাড়িতে যায়।ওখানে অনেকক্ষণ আড্ডা দেয়। সবার সাথে হাসি মজা করতে করতে অনেক রাত হয়ে যায়।রাত প্রায় বারোটা ছুঁই ছুঁই। সাজিদের একটু একটু টেনশন হচ্ছে।চিত্রার সব কিছু পছন্দ হবে তো! হঠাৎ গাড়ির হর্ণ শুনতে পায়।সাজিদ জানালা দিয়ে দেখে শায়লা গাড়ি থেকে নামছে।”মিস টিনা ওরা আসছে আপনারা আড়ালে থাকুন।”
চিত্রা রুমের সামনে এসে দেখে দরজা বন্ধ।সে তো যাওয়ার সময় দরজা বন্ধ করে নি।ভ্রু কুঁচকে দরজাটা হালকা করে ধাক্বা দিলো।রুমে ঢুকে লাইট আর ফ্যান অন করে অবাক হয়ে রইল।তার রুমটা ফুল দিয়ে সুন্দর করে সাজানো।উপর থেকে গোলাপবৃষ্টি হচ্ছে।দেয়ালে বড় বড় করে Happy Birthday to you লেখা। আজকের তারিখটা মনে করে তাচ্ছিল্যের হাসি দিলো।আজকে যে তার জন্মদিন বেমালুম ভুলে গেছে। বিয়ে হওয়ার আগের কথা মনে পড়ছে খুব।”বাবা কেক নিয়ে আসতো।সবাই মিলে কত মজা হতো।”দীর্ঘশ্বাস ফেলে চোখের কোণে জমে থাকা অশ্রুটা মুছে নিলো। পেছন থেকে সবাই জন্মদিনের উইশ করলো।শায়লাকে গিয়ে জড়িয়ে ধরল।”খালামনি তুমি এখনও মনে রেখেছ!”
“হুম তোর জন্মদিন কি করে ভুলে যাই বল তো! কিন্তু এসব প্ল্যান আমার ছেলের আর ওদের।আমি কিছুই করি নি।”
চিত্রা সাজিদের সামনে গিয়ে বলল,”অনেক ধন্যবাদ সাজিদ ভাইয়া।”
টিনা চিত্রার হাতে একটা গিফট বক্স দিয়ে উইশ করলো।”নে মা এবার কেকটা কাট।আমি কিন্তু নিজের হাতে বানিয়েছি। খেয়ে বল কেমন হয়েছে?”
চিত্রা কেকটা কাটলো।শায়লা ওকে খাইয়ে দিলো।”খুব মজা হয়েছে কেকটা।”
সবাই রাতের খাবার খেয়ে বাসায় চলে গেল।চিত্রার খুব টায়ার্ড লাগছে।শাড়িটা চেঞ্জ করে এসে বিছানায় বসলো। রুমের কোনায় একটা ব্যাগ দেখতে পেলো।এটা তো তার ব্যাগ নয়।তবে কে রাখলো।ব্যাগটা খুলবে কিনা দোটানায় পড়ে গেল। হঠাৎ ব্যাগের পাশে একটা চিরকুট দেখতে পেলো। চিরকুটে লেখা,”এটা তোমার জন্মদিনের উপহার।খুলে দেখো!”
চিত্রা ব্যাগটা খুলে দেখে একটা হারমোনিয়াম।চিত্রা হারমোনিয়াম বের করলো। হারমোনিয়ামটা হাত বুলিয়ে কান্না করে দিলো। কতদিন পর হারমোনিয়ামটা ছুঁয়ে দেখলো।”এটা সাজিদ ভাইয়ার কাজ।কিন্তু এটা এখানে কিভাবে আসলো!সাজিদ ভাইয়া এর উত্তর দিতে পারবে।”
চিত্রা সাজিদের রুমে যাচ্ছিলো। কিন্তু সাজিদের রুমটা কোথায় তার জানা নেই। সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠলো। কোনদিকে যাবে বুঝতে পারছে না।”এভাবে দাঁড়িয়ে থাকলে চলবে না।সাজিদ ভাইয়ার রুমটা খুঁজতে হবে।”
ধীর পায়ে এগিয়ে গেলো একটা রুমের দিকে। দরজাটা ভেজিয়ে রাখা।চিত্রা রুমের দরজা একটু ফাঁক করে দেখে……..
***চলবে***