#ডাকপাড়ি
#পর্ব_৩৭
#আফনান_লারা
________
পূর্ণতা অনেক চিন্তিত ছিল।সারথির এভাবে হুটহাট বেরিয়ে যাওয়া ভাল কিছুর লক্ষণ না।তার উপর সে অসুস্থ। ফারাজ দোতলায় এসে পূর্ণতাকে করিডোরে পায়চারি করতে দেখে জানতে চাইলো কি হয়েছে।
পূর্ণতা সারথির কথা বলে দেয় তখনই।ফারাজের তো মাথায় হাত।সে ওকে খুঁজতে ছুটতে গেলো ওমনি সামনে এসে দাঁড়ালেন দাদুরা।দুজনেই রাগান্বিত হয়ে চেয়ে চেয়ে দেখছেন ফারাজ পূর্ণতাকে।
‘দাদাজান আমার কথা শুনেন!’
‘তোমার কথা আপাতত শুনবোনা,এমন কি পূর্ণতার কথাও শুনবোনা’
পূর্ণতা এগিয়ে এসে বললো,’সারথি আপু বাসা থেকে গায়েব।আমাদের আগে সেটা দেখা উচিত’
‘চুপ করো মাইয়া!বহুত বাহানা দিছো।আজ এর শেষ দেখে ছাড়বো। এত করে বললাম তোমাদের একসাথে দেখলে বিয়ে পরিয়ে দিবো তাও ভয় না পেয়ে একের পর এক দেখা করেই যাচ্ছো।সমস্যা কি!!তার মানে তোমরা বিয়ে ভয় পাওনা।তোমাদের বিয়ে করিয়ে দিলে কিছু যায় আসবেনা সেটা ভেবেই তোমরা দেখা করতে লজ্জা পাও না।কারণ তোমরা তো জানোই, ধরা পড়লে পরিণতি হবে বিয়ে!’
ফারাজ দাদাজানের সামনে এসে বোঝানোর চেষ্টা করে বলে,’এখন এসব বাদ দিয়ে আমাদের সবাইকে মিলে সারথিকে খোঁজা উচিত দাদু।আমি সিরিয়াসলি বলতেছি’
‘চুপ করো তুমি।সারথির জামাই আসছে বিদেশ থেকে।ও গায়েব হবে কোন দুঃখে??সজীবকেও তো দেখলাম ওখানে।বাহানা দেয়ার বিষয় খুঁজে পাওনা তোমরা?এক্ষুনি বিয়ে পরাবো তোমাদের।আমার সাথে চলো সামনের মসজিদে’
‘আরে দাদাজান বোঝার চেষ্টা করেন প্লিজ’
দুই দাদা তাদের একজনের ও কথা শুনছেন না।ওদের হাত ধরে টেনে নিয়ে গেলেন নিচ তলায়। সেখানে সবাই সোফায় বসে আড্ডা দিচ্ছিল।দাদাজান ওদের দুজনকে টেনে সবার সামনে দাঁড় করিয়ে জোর গলায় বললেন,’আজ ওদের বিয়ে হবে,সকলে প্রস্তুতি নাও’
সকলে দাদার কথা শুনে হা করে চেয়ে আছে আর ফারাজ কপাল চাপড়াচ্ছে।পূর্ণতা ভাবছে পালাবে।নাহলে আজ বিয়েটা হয়েই ছাড়বে।
দাদাজান সকলকে স্তম্ভিত হতে দেখে আবার বললেন সত্যি সত্যি প্রস্তুতি নিতে।সত্যিই আজ বিয়ে হবে ওদের দুজনের।
সেখানে মানিক সাহেব ও ছিলেন।ফারাজ পূর্ণতার বিয়ের কথা নিয়ে তিনি জানতেন না।তাই এ কথা শুনে অবজেকশান পেশ করলেন।বললেন,’আমার ছেলের বিয়ের কথা আমি জানিনা??’
দাদাজান তখন শান্ত স্বরে বলে দিলেন,’এখন তো জানলে!!’
‘জানলে মানে!!আমি তো কিছুু বলি নাই এখনও।এই বিয়ে কেন হবে?কি কারণে হবে?পূর্ণতার বাবা মা উপস্থিত আছে এখানে?তাদের অবগত না করে কিসের বিয়ে?বাবা কি ঠাট্টা করছেন?’
‘তুমি আমার অবাধ্য হতে পারো কিন্তু অরিন্দম কখনওই আমার অবাধ্য হবেনা।বরং সে খুশি হবে আমার নাতির সাথে ওর একমাত্র মেয়ের বিয়ে হয়েছে শুনে।তাছাড়া আমি ওকে এসব বৃত্তান্ত লিখে চিঠিও পাঠিয়েছি’
‘ওদের কথা বাদ দিলাম,আমার মত নিয়েছেন??আমার ছেলে আর আমারই মত নেই??বড় ছেলে তো আমার অবাধ্য হয়ে একটা মেয়েকে বিয়ে করে এনেছিল কিন্তু তাই বলে কি ছোট ছেলের বেলাতেও আমি তা হতে দিবো?ফারাজ তো প্রেম ও করছেনা তার মানে এটা এরেঞ্জড্।আর যেহেতু এরেঞ্জড্ সেটাতে ওর বাবা হিসেবে আমি মত দিতেই পারি,এবং আমার মত হলো এই বিয়ে হবেনা’
বেলায়েত হোসেন রেগে বললেন,’পূর্ণতাকে কি তোমার পছন্দ হয় নাই?এই যে সকাল সকাল না বলতেই মুখের সামনে চা পাও সেই চা কে বানায়??পূর্ণতা বানায়।একবারও জানতে চেয়েছো??এই যে দুপুরে তোমার গোসলের গরম পানির ব্যবস্থা হয়।কে করে?পূর্ণতা করে।জীবনে তোমার বউ এইসব করছে?সে তো অন্য সবার খেয়াল রাখতে গিয়ে তোমার খেয়ালই রাখেনা’
‘পূর্ণতা অবশ্যই ভাল একটা মেয়ে।সব দিক দিয়ে ঠিক আছে কিন্তু আমার ওর বংশ পছন্দ নয়।অরিন্দমকে আমি শুরু থেকেই পছন্দ করতাম না আর সেখানে ওর মেয়ের সাথে আমার আদরের ছেলের বিয়ে?’
‘ফারাজ তোমার আদরের ছেলে কবে হলো?ওরে দেখলেই তো তোমার ঝাঁটা পেটা দিতে ইচ্ছা করে, সেখানে আদরের ছেলে হয়ে গেলো আজ??’
মানিক সাহেব গাল ফুলিয়ে ফারাজের মুখের দিকে চেয়ে বললেন,’তুই রাজি বিয়েতে?’
‘আমি পূর্ণতা কেউই রাজিনা’
‘তাহলে বিয়েটা কেন হচ্ছে?’
‘বিয়ে তো বাচ্চারা মিলে দেয়না।বিয়ে গুরুজনরা মিলে দেয়।আর এই বাড়িতে এখন গুরুজন বলতে আমি এবং আজিজ আছি।বুঝেছো সকলে?আমাদের যেটা ভাল মনে হলো সেটাই করবো’
————
নদীর পাড়ে যেখানে সবুজ মাঝারি আকারের ঘাস সেখানে সারথি দাঁড়িয়ে আছে।বাতাসে তার আঁচল একবারও নিচে নামছেনা।বাতাসে উড়ছে কেবল।আনাফ নিজের পরনে থাকা জিন্সটা হাঁটু অবধি উঠিয়ে সারথির পাশে দাঁড়িয়ে আছে।সারথির শাড়ীর অর্ধেক ভিজে গেছে পানিতে।আনাফ সেটা দেখে বললো,’আপনার ভয় করেনা?এই পানিতে নির্ঘাত জোঁক,সাপ থাকতে পারে’
‘ওরা থাকলে কামড় দেবে,মরে তো যাব না।আর যদি হয় বিষাক্ত সাপ তবে কামড়াক।আমি চাই আমাকে দংশন করে মেরে ফেলুক’
‘শুনেন!আপনাকে সাপে কামড়ালে ঘুরেফিরে সেই আমাকেই ক্ষত জায়গা চুষে বিষ বের করতে হবে।নিজের ক্ষতি করছেন নাকি একচুয়ালি আমাকে খাটাচ্ছেন, আল্লাহ মালুম’
‘আপনাকে তো বলিনি আমাকে বাঁচান’
‘তো চোখের সামনে একজনকে মরে যেতে দেবো?’
সারথি আর কিছু বললোনা।
আরও এগিয়ে গেলো।আনাফ ওকে আটকে বললো,’পানি সামনে।আর কেন যাচ্ছেন?আমরা কিন্তু শহর ছেড়ে অনেক দূরে।ভিজে গেলে পরার মতন কিছু নেই হাতের কাছে।পরে আমার শার্ট পরে থাকতে হবে আপনাকে’
‘সজীবকে মনে করে বৃষ্টিতে ভিজেছি বহুবার।উনি আমাকে ভেজা অবস্থায় দেখে তোয়ালে এগিয়ে চলে যেতেন।’
‘আমি কিন্তু মোটেও আনরোমান্টিক না সজীবের মতন।আমি বউকে বৃষ্টিভেজা হালে দেখলে ঝাঁপটে ধরে রুমের দরজা বন্ধ করে দেবো’
‘দিয়েন’
সারথি এখন এতটা পানিতে নেমেছে যে ওর কোমড় অবধি পানিতে থইথই করছে।পায়ে নরম কাদা মাটি লাগছে এখন।যেন পা তলিয়ে যাচ্ছে কাদামাটির গভীরতায়।সারথি সাপ জোঁক অনেক ভয় পায়।হঠাৎ করে মনে হলো কাদা মাটির ভেতর থেকে যদি কোনো পোকামাকড় বের হয়?তার ভয় লেগে গেলো।এতক্ষণ একটা ঘোরের মাঝে ছিল।ঘোর কেটে যাওয়ায় ভয় এসে চেপে ধরেছে তাকে।
পা পিছোতেই পানির দোলের সাথে লেগে পড়ে যাচ্ছিল সারথি।আনাফ ওর পিঠের পেছনে হাত দিয়ে ওকে ধরে ফেলে বললো,’এখন ভয় পাচ্ছেন?’
‘কিছুটা’
‘আমি তো দেখছি পুরোটাই’
‘চলুন যাই’
আনাফ সারথির কথামতন ওকে ধরে পানি থেকে নিয়ে আসলো
দুজনে এবার কারের সাথে হেলান দিয়ে নদীর জোয়ারের বাতাস খাচ্ছে।
আনাফ নিজের জিন্স ঠিক করে পরে বললো,’আমি ভাবলাম জিন্স ঠিক করতে গিয়ে দু একটা জোঁক পাবো। পাইনি তার মানে হয়ত ঋতুর কারণে।
বর্ষাকাল হলে দেখতেন এখানে সবজায়গায় জোঁক দেখতে পেতেন।গায়ে তো লেগে থাকতো দুইশটার মতন। আমি সেবার বন্ধুদের নিয়ে বর্ষাকালে এই জায়গায় এসেছিলাম।আমার হাতে পায়ে এমনকি গালেও জোঁক উঠে গেছিলো।তার অবশ্য কারণ আছে।সেটা হলো আমরা পানিতে সাঁতরেছিলাম প্রায় এক ঘন্টার মতন।এরপর ঘাসে এসে একজন আরেকজনের সাথে আড্ডা দিচ্ছিলাম।জোঁক তো পেয়ে গেলো মামার বাড়ির আবদার।একেবারে সবার গায়ে উঠে তারা রাজ্য বিস্তার করে ফেললো।
সারথি হাসলো এই কথা শুনে।আনাফ ওকে হাসাতে পেরে বললো,’জানেন?আমি আগে ভাবতাম আপনাকে হাসানো অনেক কঠিন। এরপর দেখলাম আসলেই তা নয়।অনেক ছোট কারণেও আপনি হাসেন।তবে সেই ছোট কারণ গুলা ইউনিক হতে হয়।’
সারথিকে সেই আগের মতন চুপ হয়ে থাকতে দেখে আনাফ আবার বলে,’আচ্ছা ডিভোর্স যখন হয়ে গেছে তখন সজীব এত দরদ কেন দেখাচ্ছে?মানে সে আসলে কি চায়?’
‘তিনি এখনও সই করেননি।জানিনা কি চান।আমি ওনার মনের ভেতরের খবর তো জানিনা’
‘গাছের ও খাবে,তলার ও কুড়াবে।বুঝলাম।আচ্ছা সে যদি সই করে তবে কি করবেন সেসময়? ‘
‘এখব যেটা করছি।উনি সই করবেন এটা নিশ্চিত বলেই তো আমি তার সাথে ফিরিনি’
———–
অরিন্দম কর্মকার হাবিজাবি বাড়ির গেটে এসে দাঁড়িয়ে আছেন।বেলায়েত হোসেনের চিঠিটা পাওয়া মাত্রই তিনি রওনা হয়েছিলেন।
গেইটটা সেই আগের মতনই আছে।মরিচা পড়ায় রঙটা কেমন যেন দেখতে।
মতিন বাগানে ছড়িয়ে ছিঁটিয়ে থাকা প্লাস্টিকের চেয়ারগুলো গুছিয়ে বাড়ির ভেতর নিয়ে যাবার পথে দেখতে পেলো অরিন্দমকে।
চোখে মোটা ফ্রেমের চশমা,পরনে ছাই রঙের শার্ট।হাতে একটা ব্যাগ ঝুলছে।তাকে অনেকক্ষণ ধরে দেখে মতিন এগিয়ে এসে জানতে চাইলো উনি কাকে চান।
‘এই বাড়িতে কি বেলায়েত হোসেন থাকেন?’
‘হুম থাকেন।আপনি কে?’
‘পূর্ণতা আছে?’
‘হুম আছে।আহা বলবেন তো আপনি কে!’
‘আমি পূর্ণতার বাবা’
মতিন চোখ বড় করে এক দৌড় দিলো বাড়ির ভেতরের দিকে।অরিন্দম এখনও গেটের বাইরে দাঁড়িয়ে আছে।ঐদিকে বাড়ির ভেতর চলছিল ফারাজ পূর্ণতার বিয়ে হবে নাকি হবেনা সেটা নিয়ে তর্কাতর্কি।
মতিন সবার মাঝে গিয়ে বলে দিলো পূর্ণতার বাবা এসেছেন।এই কথা শুনে পূর্ণতা সব রেখে দিলো ছুট।
বেলায়েত হোসেন খুশি হয়ে বললেন,’তাহলে আর কি!কনের বাবাও এসে গেছে।এবার আর কোনো সমস্যা হবার কথা না’
———-
পূর্ণতা ছুটে এসে বাবাকে দেখে চোখের পানি আর ধরে রাখতে পারেনি।দ্রুত তার কাছে গিয়ে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো।
অরিন্দম নিরবে কাঁদছিলেন।কিছু বলতে পারছিলেন না।পূর্ণতা তখন তার মায়ের কথা জানতে চাইলো।সেই কথা শুনেও অরিন্দম চুপ হয়ে আছেন দেখে পূর্ণতা এবার মাথা তুলে বললো,’মাকে ওখানে রেখে এসেছো?আনোনি কেন?মায়ের কি শরীর বেশি খারাপ?’
অরিন্দম পূর্ণতার চোখে চোখ রাখতে পারছেন না।মনে হয় কিছু একটা লুকানোর চেষ্টা করছেন।
পূর্ণতা এবার সোজা হয়ে দাঁড়ায়।চোখ মুছে আবার বলে,’কি হলো বাবা?কিছু বলছো না যে?’
‘তোর মা আর নেই পূর্ণা।এক সপ্তাহ আগেই!!!
আমি তোকে অনেক চিঠি দিছিলাম তোর মায়ের শরীর বেশি খারাপ হবার পর থেকে।জানিনা পাসনি কেন!সেসময় তোর মায়ের মৃতদেহ রেখে আমার এখানে আসাও সহজ ছিলনা তাই আমাকে একাই তোর মাকে কবর দিতে হয়েছে।’
বাবার কথা শুনে পূর্ণতা আশ্চর্য হয়ে তাকিয়ে আছে।তার নিজের কানকে বিশ্বাস হচ্ছেনা।বাবা এসব কি বলছে!সে কি স্বপ্ন দেখছে না এর সবই সত্যি!
এটা হতে পারেনা!এটা মিথ্যে!!’
পেছন থেকে কথাগুলো বাড়ির সবাই শুনেছে।পূর্ণতার মাথা ঘুরে উঠলো। কোনো রকমে নিজেকে সামলে সে গেইটের দেয়াল ঘেঁষে নিচে বসে পড়ে।অরিন্দম ওর পিঠে হাত রেখে বললেন,’মা রে নিজেকে সামলে নে।আমার পক্ষে অসম্ভব এখন তোকে কোনো প্রকার সান্ত্বনা দেয়া।কারণ যাই বলবো কম হবে।’
পূর্ণতাকে কাঁদতে দেখে বাড়ির সবার মাঝ থেকে বিয়ের প্রসঙ্গ গায়েব হয়ে গেলো।
সবার মাঝে নিস্তব্ধতা বিরাজ করছে।বেলায়েত হোসেন এগিয়ে এসে অরিন্দমের ঘাঁড়ে হাত রেখে চুপ করে রইলেন।ফারাজ এক দৃষ্টিতে পূর্ণতাকে দেখছিল।মা হারানোর কি বেদনা!!!
পূর্ণতা মাটিতে লুটিয়ে দেয়াল ঘেঁষে হাউমাউ করে কাঁদছে।শেষে মিসেস সোনালী এসে ওকে কাঁদতে মানা করলেন,কিন্তু পূর্ণতার যে মা মারা গেছে, সে কি করে কান্না থামাবে??
চলবে♥
#ডাকপাড়ি
#পর্ব_৩৮
#আফনান_লারা
________
সারথি আনাফকে বলেছিল তার বাসায় চলতে।যেটাতে অধরা থাকে।
আনাফ তাই করছে।পথে সারথি ঘুমিয়ে পড়ে সিটেই।আনাফ ওকে দেখতে দেখতে ড্রাইভ করছিল।ভাবছিল সে পারবে সারথিকে একটা সুন্দর জীবন দিতে।চোখ অপারেশনের মাধ্যমে ঠিক করা যেতে পারে।এই কথা আজ কয়েকদিন ধরে ঘুরছিল আনাফের মাথায়।সারথির সাথে ওর বিয়ে হবার পর সে এটা নিয়ে লেগে পড়বে কাজে।
আনাফ যে পথ দিয়ে ওর বাসার দিকে যাচ্ছে ঐ পথটা একেবারে নির্জন।শর্টকাট বলে এটাতেই মোড় ঘুরিয়ে ঢুুকেছে আনাফ।চারপাশে বড় বড় গাছ আর মাঝে ফাঁকা রোড।
রাত হয়ে যাওয়ায় আলাদা একটা শব্দ ভাসছিল বাতাসে।যেন এই বুঝি বৃষ্টি হবে,অথচ এখন বৃষ্টির সময়ই না।সারথি হঠাৎ চোখ মেলেই শুনতে পেলো আনাফের হাসি।
আনাফ সেসময় হালকা আওয়াজে হাসতে হাসতে ড্রাইভ করছিল।সারথির করা একটা কাজ মনে পড়ায় হাসিটা এসেছিল মূলত।
তার মনের ভেতর চলছিল সারথিকে নিয়ে জল্পনাকল্পনা। সারথি ওকে এমন হাসতে শুনে জানতে চাইলো কি ব্যাপার।
আনাফ আচমকা সারথির গলা শুনে গাড়ী থামিয়ে ফেলেছে।এরপর ওর দিকে ফিরে বললো,’কই না তো। ‘
‘আমি মাত্র শুনলাম আপনি হাসছেন’
‘আমি তো সবসময় হাসিমুখে থাকি।এই আর নতুন কি’
‘না সেটা নয়।আপনি হাসছিলেন।সবসময়কার হাসি আর কোনো কারণে হাসা তফাৎ আছে”!
আনাফ বলতে চাইছেনা সে সারথিকে নিয়ে ভাবছিল।সারথি এদিকে জোর দিয়েই চলেছে।শেষে বাধ্য হয়ে সে বলে সারথির কথা ভাবছিল।
এই কথা শুনে সারথি লজ্জা পেয়ে গেছে।
আনাফ দুষ্টু হাসি দিয়ে গাড়ী আবার স্টার্ট করলো।মাঝে মাঝে সারথিকে নিয়ে গোপনে যে হাসি সে হাসে সেটা নিয়ে সারথি কিছুই জানেনা।হয়ত কখনও জানবেওনা।চোখের চিকিৎসা হয়ে গেলে বুঝি জানবে।
সেই দিনটিরই অপেক্ষা।আনাফ চায় সারথি ওর হাসি দেখুক।এরপর নিজেও হাসুক।মেয়েটিকে সে সারাজীবন হাসিয়ে রাখতে চায়।অনেক দুঃখ পেয়েছে। আর না’
————
পূর্ণতার হুশ নেই।যে জায়গায় ছিল ঐ জায়গাতেই বসে শুধু কেঁদে যাচ্ছে।এক এক করে সবাই ওকে সান্ত্বনা দিয়ে যে যার কাজে চলে গেছে।পূর্ণতার বাবাকেও নিয়ে বাড়ির ভেতরে চলে গেছেন দাদাজান।
পূর্ণতা একাই বাগানে বসে দেয়ালে পিঠ ঠেকিয়ে কাঁদছিল।ফারাজ যেতে চেয়েও পারেনি।মন বললো একবার ওর পাশে বসা উচিত।মা হারা কি কষ্টের যার হারায় সেই বোঝে।ফারাজের মায়া হলো পূর্ণার প্রতি,তাই সে এগিয়ে এসে ওর পাশে বসে।অনেকক্ষণ চুপ করে থাকার পর সে হঠাৎ পূর্ণতার হাতটা চেপে ধরলো।পূর্ণতা তখনও কাঁদছিল।সে আসলে বুঝতে পারেনি কে তার হাত ধরেছে।
ফারাজ আরেকটা হাত পূর্ণতার মাথায় রেখে বললো,’আপনি না স্ট্রং একটা মেয়ে?তাহলে এভাবে কাঁদছেন কেন?’
পূর্ণতার হুশ আসলো ফারাজের কথায়।চট করে হাত ছাড়িয়ে রেগে বললো,’আপনি কি বুঝবেন!
‘বুঝতে হলে মা মরা হতে হবে?’
পূর্ণতা মুখ ঘুরিয়ে বসে থাকলো।ফারাহ আবার বললো,’আপনি আপনার বাবার সাথে চলে যান।মায়ের কবর দেখবেন আর বাবার কাছে থাকবেন।এখানে ভাল থাকবেন না আপনি’
‘আপনি যাবেন এখন?আমার ভাল লাগছেনা কিছু।প্লিজ যান’
ফারাজ পূর্ণতার পাশেই বসে থাকলো।গেলোনা।
বাড়ির ভেতরে বেলায়েত হোসেন অরিন্দমকে পাঠানো চিঠি নিয়ে কথা বলছিলেন।তিনি আসলে অরিন্দমের মতামত জানতে চান।
অরিন্দম এই বিষয়ে পরে কথা বলবে বলে ঠিক করে।তাই বেলায়েত হোসেন ও আর জোরাজুরি করলেন না।কিন্তু মনে মনে আক্ষেপ রয়ে গেলো।
তিনি খুব করে চান পূর্ণতাই এই বাড়ির বউ হোক।
————-
সজীব বাইরে বের হওয়ার কথা বলে সারথিকে তন্নতন্ন করে খুঁজছে।কোথাও পাচ্ছেনা।চিন্তায় কপালে ভাঁজ পড়ে আছে সেই তখন থেকে।মেয়েটা কোথায় গেলো!কেমন আছে!!
ওকে খুঁজতেই হবে।নাহলে মা ঠিক বুঝে যাবে ওর সাথে ঝামেলা হয়েছে কিছু।
কোথা থেকে খুঁজবে সেটাও তো সমস্যা!!
———-
বাড়িতে যে সারথি নেই এই কথা ফারাজ পূর্ণতাকে বাইরে রেখে এসেই জানিয়ে দিয়েছে সবাইকে।প্রথমবার দাদাজান ওদের দুজনের এই কথা তেমন সিরিয়াসলি না নিলেও এখন সিরিয়াসলি নিলেন।সকলে মিলে পুরো বাসায় একবার করে খুঁজেছে ওকে।পরে দেখা গেলো আসলেই সে বাড়িতে নাই।এদিকে সজীব ও বেরিয়ে গেছে।বোঝা গেলো তাদের মাঝে কিছু হয়েছে।কিন্তু যেহেতু সজীব বের হয়েছে তার মানে ও সাথে নিয়েই আসবে তাই সবাই কিছুটা নিশ্চিন্ত হলো।তবে ফারাজের মনে চিন্তা থেকেই গেছে।কারণ সজীব সারথির প্রতি কেয়ারলেস এটা সে খুব ভাল করে জানে।ওর উপর একটুও ভরসা নেই তার
———-
আনাফ সারথিকে নিয়ে তার বাসায় এসেছে।অধরা ঘুমায়।আনাফের কাছে বাসার যে বারতি চাবি ছিল সেটা দিয়ে দরজা খুলে ভেতরে ঢুকেছে তারা।সারথিকে ওর রুম অবধি এগিয়ে দিয়ে সে বললো রাতে আর ডিস্টার্ব করবেনা।এই বলে চলে গেছে আনাফ।সারথি একা মনে বিছানায় বসে পা দোলাচ্ছিল নিরবে।
ওদিকে আনাফ ফ্রেশ হয়ে বের হতেই মায়ের কল আসে তার ফোনে।মা ভীষণ ক্ষেপে আছেন ওর উপর।শুরুতেই জানতে চাইলেন আনাফ আজ দুপুরে হাসপাতাল যায়নি কেন।
‘তুমি কি করে জানলে?’
‘আমি তোর নাম্বারে কল যাচ্ছেনা বলে হাসপাতালে কল করেছিলাম।সুরাইয়া জানালো তুই আসিসনি’
‘হ্যাঁ,বাইরে একটা কাজ ছিল।’
‘তো এখন রাত কটা বাজে?আসবিনা?’
‘না আমি অধরার কাছে এসেছি।আজ এখানেই থাকবো, তুমি খেয়ে নাও’
‘আগে বললেই হতো।অধরা কেমন আছে?’
‘ঘুমায়’
‘আচ্ছা যা রাখছি’
ফোন রাখার পর আনাফের মাথায় আসলো সারথি তো কিছু খায়নি।
তাই সে পা টিপে টিপে ওর রুমের কাছে এসে দেখলো সারথি বসে আছে চুপচাপ।এখনও ঘুমায়নি।ঘুমাবে কি করে সে তো না খেয়ে আছে।
কোমরে হাত দিয়ে আনাফ তাই রান্নাঘরে এসে হাজির।রান্না বলতে সে শুধু সেমাই বানাতে পারে এর বাইরে কিছুই পারেনা।কিন্তু এখন সারথির জন্য তো কিছু বানাতে হবে।
ফ্রিজে পানি দেওয়া ভাত পেলো।তরকারি নেই।এগুলো তো সারথিকে দেয়া যাবেনা।মাথা চুলকে পাউরুটির প্যাকেট আর দুটো ডিম বের করলো সে।ডিম দিয়ে পাউরুটি ভেজে সারথিকে দিবে খাওয়ার জন্য।এটা মা অনেকবার বানিয়ে খাওয়াতো ওকে।কিন্তু সমস্যা হলো সে রেসিপি জানেনা।সারথির কাছে জানতে চাইবে কিনা।চাইলে হয়ত সে মানা করবে না বানানোর জন্য।
অনেক ভেবেচিন্তে ফোন বের করে ইউটিউব দেখেই বানাতে নামলো আনাফ।
অনেক কষ্টে দীর্ঘ এক ঘন্টা যুদ্ধ করে সে বানাতে পেরেছে।এরপর প্লেটে সাজিয়ে নিয়ে গেলো সারথির সামনে।দরজায় নক করে সারথির সামনে এনে রাখে আনাফ।
সারথি গন্ধ পেয়ে বললো,’আপনি বুঝি ডিম দিয়ে পাউরুটি ভেজে এনেছেন?’
‘হুম’
‘কেনো?’
‘রাতে কিছু খাওয়া হয়নি তো আপনার। খেয়ে নিন।আমি ঘুমাই’
‘আপনি খাবেননা?’
‘তেল জাতীয় খাবার কম খাই আমি।বডি ধরে রাখতে হবে তো।নাহলে বিয়ের আগেই মানুষ আঙ্কেল ডাকা শুরু করবে’
‘বয়স কত আপনার?’
‘জানার দরকার নাই।নতুন ডাক্তারদের বয়স কত আন্দাজ করেন।তবে এটা বলতে পারি আপনার থেকে অনেক বড় আমি’
সারথি কিছু না বলে প্লেটে হাত বাড়িয়ে একটা পাউরুটি নিয়ে মুখে দিয়ে বললো,’চিনি বেশি’
‘ভিডিওর আন্টিটা তো তিন চামচ দিছিলো।আমি দিছি হাফ চামচ।তাও মিষ্টি হইছে?’
——
সারথির ঠোঁটের কাছে ডিম লেগে ছিল।আনাফ অনেকক্ষণ ধরে দেখছিল সেটা সরে কিনা।কিন্তু কিছুতেই সেটা নড়ছিল না।এরপর সে নিজেই সারথিকে বললো ঠোঁটের কাছে খাবার আটকে আছে।
সারথি হাত দিয়ে মুছলো, তাও গেলোনা সেটা।আনাফ তাই নিজেই হাত দিয়ে মুছিয়ে দেয়।ওমনি সারথি একটু নড়েচড়ে বসেছে।
আনাফ তখন আবারও হাসলো।সেই গোপন হাসি।তার হাসির কারণ হলো সারথি ভেবেছে এখন আনাফ তার সাথে উল্টাপাল্টা কিছু করে ফেলতে পারে।সেই ভয়ে সারথি পিছিয়েছে।
আনাফ চুপ করে আছে দেখে সারথি বললো,’ফারাজকে একবার কল করে বলে দিন আমি এখানে আছি।’
‘আচ্ছা।আর কিছু?’
‘নাহ’
আনাফ পানির বোতল এনে রেখে নিজের রুমে চলে এসেছে এবার।কাল থেকে একটা মেয়ে মেসেজ করে অনেক জ্বালাচ্ছে।মেয়েটার আইডি দেখে ফেক মনে হয় আনাফের,তাই ব্লক করে দিয়েছিল কিন্তু সে আবার একই নাম দিয়ে আইডি খুলে আনাফকে মেসেজ করেই যাচ্ছে।তার চাহিদা হলো সে আনাফের সাথে কথা বলতে চায়।আনাফ ফেসবুকে ঢুকতেই সেই মেয়ের হাজারটা মেসেজ,কমেন্টের ভীড় জমে গেলো।বিরক্ত হয়ে আনাফ এবার এই আইডিটাও ব্লক করে ফোনে গান চালু দিয়ে শুয়ে পড়েছে বিছানায়।
—–
সারথি বিছানায় শুয়ে ভাবছে সজীব ওকে খুঁজছে নাকি আনন্দে আছে ও নেই বলে।
কিছু কিছু মানুষ এত নিষ্ঠুর হয়!!তারা কি করে মোহত্যাগ করতে পারে এত জলদি?অন্য নারীর কি এতই ক্ষমতা যে স্ত্রীর জায়গা দখলে নিতে পারে তারা!!
যতবার সজীবের কথা সারথি ভাবে ততবার তার মুখ ভিজে যায় অশ্রুতে।এর কি শেষ নেই?কবে সে এই ব্যাথা থেকে মুক্তি পাবে।আর কতদিন সজীবের জন্য তার বুক পুড়বে!!
———
‘তোমার বোন আমার কাছে আছে ফারাজ।চিন্তা করোনা’
আনাফকে সারথির খেয়াল রাখতে বলে ফারাজ ফোন রেখে সামনে তাকালো।সবাই ওর মুখের দিকে চেয়ে আছে সারথির কোনো খবর আছে কিনা জানার জন্য। ফারাজ তখন কথা ঘুরিয়ে বলে দিলো সারথি তার একটা বান্ধুবীর বাসায় আছে।কেউ যেন চিন্তা না করে।
সবাই এবার বাকি নিশ্চিত হয়ে যে যার কাজে চলে গেছে। ফারাজ তখন বাইরে এসে দেখে পূর্ণতা এখনও আগের জায়গায় বসে চোখ মুছছে।
‘আপনি কি সারারাত এখানেই থাকবেন?’
‘আপনার কি?’
‘আমার প্রতি কথায় এত তেলেবেগুনে জ্বলে ওঠার কারণ কি?’
‘আমি কান্না করার সময় চোখের সামনে কিছু সহ্য করতে পারিনা।আপনি সরবেন নাকি মার খাবেন?’
‘উরি বাবা!আপনি মারতেও পারেন?
কথাটা শেষ হতে না হতেই পূর্ণতা বাগানের ঝুলন্ত টব একটা খুলে ফারাজের কপাল বরাবর মেরে তারপর ক্ষান্ত হলো।
ফারাজ কপালে হাত দিয়ে বললো,’আপনি তো মহা সাংগাতিক একটা মেয়ে! কপাল ফাটিয়েই দিলেন আমার।ভালই ভালই আপনাকে নিয়ে যেতে এলাম’
‘এত দরদ কেন দেখাচ্ছেন?বাকিরা মিলে বিয়ে পরিয়ে দিবে সেটা জানেন?’
‘এখন পরিস্থিতি অন্যরকম। আমি আপনি একসাথে ঘুরতে গেলেও কেউ বিষয়টা সিরিয়াসলি নিবেনা।বিয়ে আগামী এক মাসেও হবেনা মিলিয়ে নিয়েন’
ওমনি ভেতর থেকে আজিজ খানের ডাক শোনা গেলো। তিনি ফারাজ পূর্ণতাকে একসাথে ডাকছেন।
চলবে♥
#ডাকপাড়ি
#পর্ব_৩৯
#আফনান_লারা
________
পূর্ণতা ফারাজের এক পাশে দাঁড়িয়ে বারবার নাক টানছিল।ভেতরের চাপা কষ্টটা একটু হলেও কমেছে।সেই বিকেল থেকেই তো কেঁদে আসছে সে,এবার কমার কথা।এরপর মায়ের কথা মাথায় আসলেই আবার কাঁদবে।
ফারাজ ও চুপ করে ছিল।
তারা দাদাজানদের সামনে এসে দাঁড়িয়েছে পাক্কা দশ মিনিট হলো তাও ওনারা কিছুই বলছেননা।ধৈর্য্যের পরীক্ষা নেয়া দাদাজানের পুরনো অভ্যাস সেটা ফারাজ জানে কিন্তু পূর্ণতা জানেনা।তাই সে নড়চড় করছিল,বিরক্তি দেখাচ্ছিল।সেসময় দাদাজান মুখ খুললেন।হাসিমাখা মুখে বললেন অরিন্দমের এই বিয়েতে কোনো আপত্তি নাই,
এবার পূর্ণতার কিছু বলার থাকলে বলতে পারে।
পূর্ণতা আশ্চর্য হয়ে গেছে দাদাজানের কথা শুনে। আসলেই কি বাবা রাজি?নিশ্চিত হবার জন্য সে একবার বাবার মুখের দিকে তাকায়।বাবাও মুচকি হেসে চেয়ে আছেন।
পূর্ণতা বুঝে গেছে বাবাকে বাহানা বানিয়ে আর কোনো কাজ হবেনা।তাই সে নিজেকে শক্ত করে গলার স্বর উঁচু করে বলে,’বাবার মতের কথা বাদ দিলাম।পাত্রী হিসেবে আমারও তো মত লাগবে।আমার মত হলো আমি ওনাকে বিয়ে করতে চাইনা।আর আপনারা কেমন মানুষ বলতে পারেন??আজকে আমি জানতে পেরেছি আমার মা মারা গেছেন আর আজকেই আপনারা বিয়ে নিয়ে লেগে আছেন।আমি এর আগেও একা ছিলাম, নিজের খরচ নিজে চালাতে পারার ক্ষমতা আমার আছে।ফের কেউ আমাকে জোরাজুরি করলে আমি বাড়ি ছেড়ে চলে যাবো’
সবাই হা করে পূর্ণার কথা শুনেছে।ফারাজ নিজেও অবাক।দাদাজান রাগে কটমট করছিলেন,ঠিক সেসময় আজিজ খান বললেন,’মাইয়া তুমি জানো কি ঠুকড়াচ্ছো??ফারাজের মতন পোলা পাইবা তুমি জীবনে?’
আজিজ খানের কথা শুনে মানিক সাহেব বললেন,’পূর্ণতার সাথে আমি একমত।মেয়ে নিজেই যখন বিয়েতে রাজিনা তখন আমরা বড়রা কেন জোর করছি?এখন কি সেই জামানা আছে যে বাসর ঘরে গিয়ে বর বউয়ের মুখ দেখবে??এই যুগে এসে যদি আপনারা এই ধারণা পোষণ করেন আপনাদের থেকে আর কি আশা করবো’
সবাই বিয়ের বিপক্ষ দেখে বেলায়েত হোসেন উঠে চলে গেছেন।তার দেখাদেখি আজিজ খান ও চলে গেলেন।রয়ে গেলো অরিন্দম আর মানিক সাহেবের আসন।তারা দুজন দুজনের দিকে একবার আড় চোখে তাকিয়ে তারাও চলে গেছেন।সবার শেষে রইলো পূর্ণতা আর ফারাজ।পূর্ণতা তখনও তার মায়ের কথা ভাবছিল।ফারাজ ওকে কিছু না বলে চলে গেছে।
পূর্ণতা কিছু না বললে আজ ফারাজই বলতো।বিয়েটা সারাজীবনের ব্যাপার।এভাবে বড়দের জোরাজুরিতে কেন পড়বে তারা।পূর্ণতা ভালই বলেছে।সে না বললে আজ এগুলো ফারাজ নিজেই বলে দিতো।মেয়েটার মা মারা গেছে সেটা না ভেবে সবাই বিয়ে নিয়ে পড়ে আছে, বয়স কি চলে যাচ্ছে?’
পূর্ণতা তার রুমে ফিরে দরজা বন্ধ করে বসে পড়ে মেঝেতে।মাকে শেষবার সে দেখেছিল খানিকটা সুস্থ।যাবার পথে ওর মাথায় হাত রেখে তিনি বলেছিলেন জলদি তুইও চলে আসিস মা!!
এরপর আর কিছু বলে নাই।এটাই যে তার বলা শেষ কথা হবে কে জানতো!!
নিয়তি এতটা নিষ্ঠুর কেন!কেন আমরা আমাদের সব চাইতে প্রিয় মানুষটাকে সবার আগে হারাই!কেন তাকে নিয়ে আরও কটা বছর সুখে শান্তিতে থাকা যায়না!!তাহলে তারা প্রিয় কেন হয়!!এরপর থেকে মানুষকে প্রিয় বানাতেও ভয় হবে।কারণ আমরা তো জানি প্রিয় মানেই সে হারিয়ে যাবে!
রাতের এগারোটা অবধি পূর্ণতা ওভাবেই বসে ছিল।সবার খাওয়া শেষে অরিন্দম নিজে খেয়ে পূর্ণতার জন্য খাবার এবে অনেকবার নক করেছেন দরজায় কিন্তু সে দরজা খোলেনি বলে তিনি চলে গেছিলেন।ওকে একা থাকতে দেয়া উচিত বলে মনে করলেন।
পূর্ণতা বারোটার সময় দরজা খুললো।দুপুরে যে ভাত খেয়েছিল এরপর আর কিছু খাওয়া হয়নি।খুব জোর খিধে পেয়েছে তার।পুরো বাড়ির আলো নেভানো।সবাই সবার রুমে।পূর্ণতা অন্ধকারে হেঁটে যাচ্ছিল সিঁড়ির দিকে।যাবার পথে দেখলো ফারাজের রুমে হালকা করে আলো জ্বলে।সেই আলোটা সিঁড়ির কোণ ঘেঁষে নিচ তলা অবধি গেছে।পূর্ণতার তাই নামতে অসুবিধা হয়নি।নিচে নেমে ফ্রিজ খুলে সে একটা জুসের বোতল আর কেক এক পিস নিয়ে আবার চলে আসলো উপরে।তখনও ফারাজের রুমে আলো জ্বলছিল।পূর্ণতার ইচ্ছা হলো একবার দেখার।
পা টিপে টিপে কাছে এসে তাকাতেই সে দেখে ফারাজ খুব মনযোগ দিয়ে একটা ছবি আঁকছে।শুরুতে পূর্ণতা ভেবেছিল প্রতিমার ছবি হতে পারে কিন্তু ফারাজ তাতে রঙের এক টান দিতেই পূর্ণতার কাছে ছবিটা পরিষ্কার হয়ে গেলো।ছবিটা ফারাজদের বাগানের একটা ফুল গাছের।ঔ ফুল গাছটা দেখতে খুব সুন্দর হলেও তার সুবাস অতি জঘন্য!!সেই গাছটাই ফারাজ আঁকছে।
পূর্ণতা আর আওয়াজ করেনি।চুপচাপ চলে এসেছে নিজের রুমে।
সে চেয়েছিল কোনো আওয়াজ যাতে না হয় তাও অন্ধকারে দেয়ালের সাথে কপালে খুব জোরে একটা ধাক্কা খেলো।দেয়ালটা ছিল ফারাজের রুমের।আওয়াজটা সে পেয়েই উঠে উঁকি দিলো বাইরে,হাতে টর্চ অন করা।সে ভেবেছিল চোর ডাকাত কিছু কিনা।কিন্তু উঁকি দিতেই দেখলো লম্বা বেনি হেলানো সুতির কাপড়ের তরুণী দ্রুত তার রুমে চলে যাচ্ছে এক হাত দিয়ে কপাল ঘঁষতে ঘঁষতে।
পূর্ণতাকে দেখে ফারাজ টর্চ অফ করে আবার নিজের রুমে ফেরে।
ও যে রাতে খিধায় খাবার খুঁজতে বের হবে এটা ফারাজ জানতো।
————
আনাফ শুয়ে শুয়ে গান শুনছে। খুব ইচ্ছে করছিল একবার গিয়ে সারথির সাথে বসে গল্প করতে কিন্তু তার পরেও ওর মনে হয় সারথিকে সময় দেয়া উচিত।এভাবে ওর সামনে বসে থাকলে সে হয়ত সহজ বোধ করবেনা।
গান শুনতে শুনতে ঘুমিয়ে পড়ে আনাফ।সারথি জেগে ছিল।তার কিছুতেই ঘুম আসছেনা।রুম থেকে বেরিয়ে আন্দাজ করে আনাফের রুমের বাইরে এসে দাঁড়ায় সে।দরজা খোলা বোঝা যাচ্ছে কারণ ভেতর থেকে ফ্যানের বাতাস এসে গায়ে লাগছে।
সারথি এক পা এক পা করে এগোলো।একটা গান চলছে আনাফের ফোনে।সারথি কাছে গিয়ে দাঁড়িয়েছে তাও আনাফের কোনো সাড়া নেই দেখে সারথি বুঝলো আনাফ বুঝি ঘুমিয়ে গেলো।তাই হাত বাড়িয়ে ফোন হাতে নেয় সে।অনেকক্ষণ হাত চালিয়ে অবশেষে গানটা সে বন্ধ করতে পেরেছে।মুচকি হেসে ফোনটা আগের জায়গায় রেখে সে আবার চলে যাচ্ছিলো।হঠাৎ দরজায় হাত রাখতেই মনে হলো নাকে ফুলের ঘ্রাণ লাগলো তীব্র ভাবে।সারথি দরজায় হাতালো কিছুক্ষণ। একটা শার্ট ঝুলছিল তাতে, শার্টটা হাতে নিতেই ফুলের ঘ্রাণটা আরও তীব্র হয়ে গেলো।সারথি পকেট থেকে ফুলটা বের করে অবাক হয়ে আছে।এই ঘ্রাণ সে চেনে।আজই তো পূর্ণতা ওকে মাথায় পরিয়ে দিয়েছিল এটা।পানিতে নামার পর থেকে ফুলটা কই গেলো তার হিসেব পায়নি সারথি।তার মানে ফুলটা আনাফ নিয়েছিল। সারথি আরও একবার হাসলো।শার্টটা আগের জায়গায় রেখে সে বের হয়ে গেলো।
চুপচাপ নিজের রুমে এসে দীর্ঘশ্বাস নেয়।
প্রত্যেকটা মানুষের জীবনে একদিন একটা সঠিক মানুষ আসে। কারোর শুরুতেই আসে আর কারোর অনেক দেরিতে।
কেউ নিজের অজান্তেই সঠিক মানুষটা পেয়ে যায় আর কেউ জীবনের আশা ছেড়ে দেয়ার সময় পায়।
“আনাফ নামের ছেলেটা শুরুতেই আসতে পারতোনা আমার জীবনে?যখন আমার বিয়ে হয়নি।বিয়ের কথা চলছিল পরিবারে।
তখনও তো তিনি চাকরি করতেন।ডাক্তারি করেন ৪ বছর হলো তার।তাহলে তখন কি তার সাথে আমার দেখা হলে হতোনা??আমার জীবনটা এই সিঁড়িতে এসে আজ অন্যরকম হতো।আমি তার বেডরুমে বসে হাসি হাসি কত কি ভাবতাম।
ফিউচার প্ল্যান করতাম,মাঝে মাঝে তার হাতটা ধরে কত কি কল্পনা করতাম তাকে ঘুমন্ত রেখে।অথচ আমার জীবনটা সেরকম হয়নি।আমার শুরুতেই একটা ভুল মানুষের সাথে দেখা হয়েছে।সে মনমত আমায় কষ্ট দিয়ে শেষে হাতটাই ছেড়ে দিয়েছে।ঠিক সেইসময় আমি আনাফকে পেলাম।কেন পেলাম!আগে কেন পায়নি?আমার জীবনে যে আর কিছুই নেই!!!
একটা পুরুষের সাথে আমি রাত কাটিয়েছি।সে আমায় হয়ত ছুঁয়ে দেখেনি কিন্তু কয়েকটা মাস একসাথে থাকা তো থাকলাম!!!
আনাফ তো অবিবাহিত! সে জেনেশুনে কেন!
এটা ঠিক যে সজীব আমায় ছোঁয়নি তারপরেও আমি তো বিবাহিত। আনাফ তো আরও ভাল কিছুর প্রাপ্য।আমার মতন দূর্বল একটা মেয়ে কেন তার ভাগ্যে জুটবে!!
——-
সজীব ফুটপাতে বসে আছেৃ সারথিকে কোথাও সে পায়নি।কি করে বাসায় ফিরবে এসবই ভাবছিল কিন্তু কিছুক্ষণ আগে সায়না কাকি কল করে জানালেন সারথি নাকি তার বান্ধবীর বাসায়।
“ওর আমার প্রতি অনীহার কারণ আমি জানি আর তাই কিছুই করতে পারছিনা।সে অধিকারটা আমার নেই।আমি নিজেই হারিয়ে ফেলেছি।সারথিকে অনেক অনেক বেশি কষ্ট দিয়েছি আমি। একবার তার কাছে মাফ চাইবো চলে যাবার আগে।
লেভেনের কথা মনে পড়ছে।ও হয়ত পাগল হয়ে যাচ্ছে আমাকে কোথাও না পেয়ে!না জানি আবার বাংলাদেশ চলে আসে!!
উঠে দাঁড়িয়ে সজীব একটা সিএনজি নিলো।সোজা বাসায় যাবে।তার নিজের বাসায়।যেটা সারথির নামে করে দিয়েছে সেটাতে গিয়ে একটু রেস্ট নেবে।কাল সকালে সারথির কাছে গিয়ে ওর সাথে কথা বলে সোজা মালয়েশিয়া চলে যাবে।এসব ভেবে সে যাচ্ছে।মাকে জানায়নি সে কোথায়।ফোনটাও অকেজো!! সিম ছাড়া ফোন আর মাঝি ছাড়া নৌকা একই!!
বাসায় ফিরে কোন ফ্লোরে সজীব থাকতো সেটাই ভুলে গেছে।ডান পাশে ফ্ল্যাটটা ওদের নাকি বামের টা সেটা নিয়ে কনফিউজড হয়ে একটাতে কলিংবেল চেপে দিলো সে।সেটা ছিল আনাফদের ফ্ল্যাট।ওর মা এসে দরজা খুললেন হাই তুলতে তুলতে।সজীবকে দেখে ব্রু কুঁচকে জানতে চাইলেন কি চাই।সজীব কিছু বলার আগেই ওর চোখ গেলো ওনার পেছনে দেয়ালে টাঙানো আনাফের একটা বিরাট ছবি।এই ছেলেটাকেই তো সে আজ সারথির সাথে দেখেছিল।তার মানে কি সারথি আর ছেলেটা একে অপরকে চেনে?
আনাফের ছবি অবাক হয়ে দেখছে দেখে ওর মা সজীবকে বললেন,’ও আমার ছেলে।আনাফ।তোমার কি কিছু লাগবে বাবা?’
‘না আসলে আমি ভুল ফ্ল্যাটে চলে এসেছি।আমি ঐটাতে থাকি’
‘ওহ তুমি সারথিদের বাসার?সারথির কি হও তুমি?’
‘হাসবেন্ড।’
‘তাই নাকি! আসো আসো ভোতরে আসো, বলো কি খাবে?’
‘আন্টি আরেকদিন আসবো।আজ আমার কাজ আছে’
এই কথা বলে সজীব চলে এসেছে।মাথার ভেতর সব গুলিয়ে আসছে। আনাফ আর সারথি কি আগ থেকেই একে অপরকে চেনে?নয়ত আনাফ কি করে হাবিজাবি বাসার ঠিকানা জানলো??
————-
পূর্ণতা খুব ভোরে জামাকাপড় সব গুছিয়ে বাবা যে রুমে ঘুমিয়েছেন সে রুমে এসে বাবাকে জাগিয়ে তুলে বললো পালাতে। সে আর এই বাড়িতে থাকবেনা, ফারাজকে বিয়ে করবেনা।সে চায় সে এবং তার বাবা অনেকদূর চলে যাবে।
অরিন্দম পূর্ণতার এই অদ্ভুত পরিকল্পনার কথা শুনে ঘুম ঘুম চোখে শুরুতে গুলিয়ে গেছিলেন সব কিছুতে।পরে নিজেকে সামলে চোখ মুখ মুছে সোজা হয়ে বসে বললেন,’এসব কি কথা পূর্ণা??বড়দের কথা মানতে হয়।ছেলেমানুষি বন্ধ কর’
‘ছেলেমানুষি?? বিয়েটা তো আমার মতেই হওয়া উচিত।তুমিও এই কথা বলছো?’
অরিন্দম পূর্ণতার হাত ধরে বসালেন পাশে তারপর বললেন,’দেখ মা।তোর মা নেই।কদিন পর হয়ত আমিও চলে যাব।তোকে দেখার জন্য শুধু যে তোর স্বামী থাকবে তা ভেবে তো মরতে পারি না।একটা বড় বাড়িতে তোকে বিয়ে দিব সেটা আমার অনেক আগের ইচ্ছা ছিল।
ছোট থেকেই তুই একা একা বড় হয়েছিস।এখন যখন আমি শুনলাম বেলায়েত মশাই তোর সাথে তার নাতির বিয়ে করাতে চায় তখন আমি আর সাত পাঁচ ভাবিনি কারণ এই বাড়ির মানুষগুলো অদ্ভুত হলেও মনের দিক দিয়ে অনেক ভাল।তোকে খুব ভাল রাখবে।আর ফারাজকে তো আমি চিনি।ও অনেক ভাল একটা ছেলে।রাজি হয়ে যা মা’
‘বাবা এসব কি বলছো!তাছাড়া ফারাজ ভাইয়া নিজেও রাজি না।দুজনের অমতে আমরা কেন বিয়ে করবো!’
অরিন্দম বিরক্ত হলেন।পূর্ণতা ওনার কথার অবাধ্যতা কখনই করেনি।সবসময় উনি যা বলতেন তাই শুনতো।কিন্তু এখন এমন গোঁজামি কেন করছে সেটাই তার মাথায় ধরছে না।
পূর্ণতা রাগে ফুলছিল।অরিন্দম সেসময় জানালা দিয়ে চেয়ে দেখে ফারাজ বাগানে হাঁটছে আর বই পড়ছে।তখন তিনি পূর্ণাকে ডেকে দেখিয়ে বললেন,’কোন ছেলে ভোরবেলা বাগানে হেঁটে হেঁটে বই পড়ে?বরাবরই আমি চেয়েছিলাম তোর যেমন মেধা,তোর বিয়েও যেন হয় এক মেধাবীর সাথে। শুনেছি ফারাজ অনেক মেধাবী একটা ছেলে’
‘মেধাবী হয়েও সে চাকরি করেনা,মন চাইলে ছবি আঁকে,বেচে।সারাদিন দিশেহারা হয়ে ঘুরেফিরে যেটা আমার পছন্দ না’
‘আমার তো পছন্দ।আগেকার সময় বাবা মা পছন্দ করিয়ে বিয়ে করাতো তাতে করে সন্তানদের তাদের প্রতি আনুগত্য বজায় থাকতো। তুই কি চাস না আমি তোর উপর খুশি হই?’
——-
ফারাজের বেশ মনে হচ্ছিল কেউ ওকে উপর থেকে দেখছে।তাই সে মাথা তুলে দেখে দূর থেকে অরিন্দমকে দেখা যায়।আচমকা ওনাকে দেখে ফারাজ হাতের বই বন্ধ করে দ্রুত হেঁটে চলে গেলো।
কাজ করার সময় কেউ তাকিয়ে থাকলে সে কাজ আর ফারাজকে দিয়ে হয়না
———-
সজীবের ঘুম ভাঙলো ডোরবেলের আওয়াজে।এই বেলটা সজীব সারথিকে বিয়ের ৬তম দিনে উপহার হিসেবে দিয়েছিল।সারথি মনে হয় সেটাকে দরজার কিণারায় ঝুলিয়েছে।মাথা তুলে ডোরবেলটার দিকে চেয়ে আছে সজীব।
এখন সারথি থাকলে ঘুরে ঘুরে কত শত কাজ করত।যতদিন সে লেভেনের কথা জানেনি ততদিন তার কাছে সজীবই সব ছিল।সজীব দম ফেললেও ওর ভাল লাগতো।মুচকি হেসে বসে থাকতো শুধু।
আর এখন মেয়েটি নিজেই নেই।এক রাশ অভিমান নিয়ে সে নিরুদ্দেশ।
সজীবের মাঝে মাঝে ওর উপর রাগ হয়।সিরিয়ালের নায়িকাদের মতন জামাইর পরকিয়া জেনেও কেন সে জামাইর জন্য পাগল থাকলোনা?
সারথিকে সজীব এমনটাই ভেবেছিল কিন্তু নাহ!সারথি এমন না।সে জেদ দেখিয়ে সজীবকে ফেলে চলে গেছে।একেবারে অন্যরকম চরিত্র!
‘ কি নাস্তা খাবি ভাইয়া??’
উর্মির কথা শুনে সজীব ঘাঁড় ঘুরিয়ে তাকায়।উর্মি দরজার কিণারায় দাঁড়িয়ে ওর উত্তরের অপেক্ষা করছে। সজীব বললো বাইরে খাবে।সে তখন ওর পাশে বসে ওর মাথার চুলে হাত বুলিয়ে বললো,’বোনের হাতের নাস্তা খেতে ইচ্ছা করেনা?’
সজীব উঠে বসে হঠাৎ উর্মির কাছে জানতে চাইলো আনাফকে চেনে কিনা।
উর্মি বললো চেনে।
‘সারথি আনাফ কি ভাল বন্ধু নাকি?’
‘সেটা তো জানিনা।তবে সারথি ভাবী বাপের বাড়ি চলে যাবার পর আনাফ ভাইয়া অনেকবার করে খবর নিয়েছে।তুমি কি ভাবছো ওদের ক্লোজ কিছু?আরে না ওসব হবেইনা।আনাফ ভাইয়া একজন ডাক্তার।উনি কেন সারথি ভাবীকে লাইক করতে যাবে!শুনেছি ওনার জন্য তো ওনার মা হন্ন হয়ে মেয়ে খুঁজছে।’
‘ওহ।ভাল!
না আসলে কাল সারথির কাছে আনাফকে দেখলাম তো তাই ভাবলাম হয়ত চেনাপরিচয় আগে থেকে থাকতে পারে।সারথি অবশ্য আমাকে এ ব্যাপারে কিছু বলেনি’
চলবে♥