ডাকপাড়ি পর্ব-৬৫ এবং শেষ পর্ব

0
495

#ডাকপাড়ি
#শেষ_পর্ব(৬৫)
#আফনান_লারা
________
সারথির একটা মারাত্মক রকমের ইচ্ছে ছিল।আর সেটি ছিল খুব উঁচু সেতুর কিণারায় দাঁড়িয়ে দুহাত হাওয়ায় ভাসমান রেখে স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে থাকা যতক্ষণ তার মন চাইবে ঠিক ততক্ষণ। একবার পড়লে সে পানিতে ডুবে যেতে পারে তাই এই স্বাদটা সে মনের ভেতরেই লুকিয়ে রেখেছিল।
একদিন আনাফ তাকে নদী দেখতে নিয়ে যাওয়ায় হঠাৎ মুখ ফুটে সে ইচ্ছেটার কথা জানিয়ে দেয় সে।সেইদিনটা ছিল একটা স্পেশাল দিন।সারথি আনাফকে জানিয়েছিল সে মা হতে চলেছে।
আনাফ খুশিতে তাকে নিয়ে ঘুরতে এসেছিল এই জায়গায়।সারথির মুখে তার এমন ইচ্ছের কথা শুনে সে না করে দেয় শুরুতেই।কিন্তু তখনই সারথির মুখের ফ্যাকাসে ভাব তাকে একটিবার ভাবিয়ে তোলে।সে ভাবে যদি পড়ে যায় তবে কি করে বাঁচাবে,সেইসময় সারথি বললো,”আপনি আমায় শক্ত করে ধরে রাখতে পারবেন না??’

‘সারথি এইরকম ইচ্ছার কি কারণ??আমি চাইনা এইটা পূরণ করতে।তুমি আমায় মাফ করে দাও প্লিজ!”

সারথি গাড়ীতে হাত রেখে নিজে নিজে ভেতরে গিয়ে বসে।আনাফ তখনও বাইরে দাঁড়িয়ে ছিল।বিয়ের পর সারথির কোনো ইচ্ছাই সে অপূর্ণ রাখেনি।তবে আজকের টা কেমন যেন উদ্ভট!! একটা মানুষ ও না।দুইটা মানুষ!!আনাফ কল্পনা করে সারথিকে সে ধরে রাখলো আর তার হাত ছুটে গিয়ে সারথি নিচে পড়ে গেলো।সেও ঝাঁপ দিলো কিন্তু সারথিকে কোথাও পেলোনা।তারপর কি হবে!!!
কপালের ঘাম মুছে আনাফ গাড়ীতে ফিরে এসে দেখে ভেতরে সারথি নেই।বুকের ভেতরটা ধুক করে উঠলো ওমনি।ওর নাম ধরে ডেকে সে একটু এগিয়ে আসতেই দেখে নদীর পাড়ে গাল ফুলিয়ে বসে আছে সারথি।আনাফ ধীরে ধীরে ওর পাশে এসে বসে।সারথি ওমনি আনাফের কাঁধে মাথা রেখে বলে,’বাদ দিন ঐ ইচ্ছার কথা।যদি মরে যাই!আমার তো বাচ্চার কথাও ভাবতে হবে’

আনাফ সারথির কথায় অনেক খুশি হয়।ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে সে নদীর দিকে তাকায়।একটা লঞ্চ যাচ্ছিল তখন।লঞ্চটাতে ছাদের উপর অনেক মানুষ ছিল সেইসময়। রোজার ঈদের পরেরদিন বলে কমবয়সী যুবকেরা গান চালিয়ে ছাদের উপর নাচানাচি করছিল।তার নিচের তলায় অন্যান্য যাত্রীরা ছিল।আনাফ মুচকি হেসে ছেলেগুলোকে নাচতে দেখছিল,হঠাৎই তার চোখের সামনে ঘটে যায় একটি ঘটনা।২য় তলা থেকে একটি বাচ্চা পানিতে পড়ে যাবার দৃশ্য। ঐ বাচ্চাটি পিলার ধরে ঝুলছিল,দুষ্টুমি করছিল হয়ত।কোনোভাবে হাত পিছলে সে পড়ে গেছে।
তার বাবা-মা আশেপাশে ছিল না মনে হয়।আনাফ স্পষ্ট দেখেছে সেটা।লঞ্চের সেই তলায় থাকা অন্য যাত্রীরাও ছেলেটিকে পড়ে যেতে দেখে।আনাফ সারথির হাত ছাড়িয়ে ঐদিকে ছুটলো দ্রুত।কোনোকিছু না ভেবেই সে পানিতে ঝাঁপ দিয়ে দেয়।
সারথি আচমকা কিছুই বুঝে উঠতে পারছিল না।তার পাশ দিয়ে একটা বয়স্ক লোক ছুটে এসে কিণারায় দাঁড়িয়ে জোর দিয়ে বলে উঠলেন,’হায় হায় কাদের জানি বাচ্চা পইড়া গেছে লঞ্চ থেইকা!’

এই কথা শুনে সারথি ভয় পেয়ে যায়।চেঁচিয়ে আনাফের নাম ধরে ডাকে।আনাফ নেই ওখানে।ততক্ষণে সাঁতরে অনেকদূর চলে গেছে সে।এই মূহুর্তে বাচ্চাটিকে বাঁচানো জরুরি।
সারথির হাত পা কাঁপছে।আনাফ কোথায়!!

আনাফ খুব দ্রুত লঞ্চটা যে জায়গায় থেমে আছে সেখানে এসে পৌঁছে গেছে।ডুব দিয়ে ছেলেটিকে খোঁজার চেষ্টা করছিল সে।
দূর্ভাগ্যবশত লঞ্চের একটা মানুষও পানিতে ঝাঁপ দেয়নি ছেলেটিকে বাঁচাতে।অনেকে জানেও না লঞ্চ কেন সেতুর তলায় থেমেছে।
বাচ্চার মা বাবা ততক্ষণে বাচ্চাকে না পেয়ে চিৎকার শুরু করে দিয়েছে।মূহুর্তেই লঞ্চের দিশা বদলে গেলো।সকলে এবার গম্ভীর হয়ে গেছে।আনাফ একাই খুঁজছে ডুব দিয়ে দিয়ে,এটা দেখে এবার কয়েকজন যুবকের হুশ ফিরলো।তারাও ঝাঁপ দিলো পানিতে।পাঁচ ছয় জন মিলে খুঁজছে বাচ্চাটিকে।
সারথি নদীর একদম কিণারায় এসে আনাফের নাম ধরে চিৎকার করছিল,সেই বয়স্ক লোকটি বললো,’এই পানি অনেক গভীর,সরে দাঁড়ান।আপনার জামাইকে দেখলাম ঐদিকেই গেছে।আপনি শান্ত হোন একটু’

সারথির মাথা ঘুরে উঠলো।পানি গভীর!আনাফের যদি কিছু হয়ে যায়!!
কোথায় খুঁজবে সে তাকে!

সন্ধ্যা ছিল বলে ঢেউ বেশি ছিল।যুবকেরা সবাই হাঁপিয়ে গেছে তাও পাচ্ছেনা বাচ্চাটিকে,লঞ্চটি সেতুর একেবারে নিচে বরাবর ছিল।যুবকেরা ছয়জন সকলেই একসাথে পানির উপরে মাথা তুলে খেয়াল করলো এতক্ষণ তাদের সাথে আনাফ ছিল,এখন আর নেই।সে মাথা তুলে তুলে দম ফেলে আবার ডুব দিচ্ছিল।কিন্তু এখন আর উপরেই উঠছেনা,তাকে কোথাও দেখা যাচ্ছেনা।ততক্ষণে উদ্ধারকারী টিম এসে পৌঁছে গেছে ঐ জায়গায়।যুবকেরা সবই লঞ্চে উঠে গেছে ক্লান্ত হয়ে।এবার উদ্ধারকর্মীরা পানিতে নেমেছে।
সারথির পাশ দিয়ে এক লোক যেতে যেতে বললো,’আমাদের এই পাড় থেইকা সবার আগে যে লোক দৌড় দিছিলো বাচ্চা ছেলেটাকে বাঁচাইতে, সেও নাকি ডুইবা মারা গেছে।’

সারথি কথাটা শুনে এক চিৎকার করে পানির দিকে ছুটেছে।সে সাঁতার জানেনা সেটা তার মাথাতেই সে আনেনি।সে আনাফকে নিজে খুঁজবে!এটাই শুধু মাথায় ঘুুরছিল সেই শুরু থেকেই।সেইসময় ছিল সন্ধ্যা সাতটা।অন্ধকার বলে সবাই হাতে টর্চ নিয়ে দাঁড়িয়ে ছিল।সারথি আনাফকে খুঁজতে নিজেই পানিতে ঝাঁপ দিয়েছে এটা কেউ দেখেইনি।

সারথি সাঁতার জানেনা তাও সাঁতরে দূরে যাবার চেষ্টা করলো,এই সময়টায় তার মাথা কাজ করা বন্ধ করে দিয়েছিল।সে কি করছে!এতে করে কোনো কাজ হবে কিনা এতসব সে ভাবেনি।সে শুধু ভেবেছে সে সেইদিকেই যাবে যেদিকে আনাফ গেছে।আনাফ কোনদিকে গেছে সে জানেনা কিন্তু সে আনাফের কাছে যাবেই!

যে লোকগুলোর পাশে গোলাপি রঙের শাড়ী পরা সারথি নামের মেয়েটি এতক্ষণ চোখ ভিজাচ্ছিল আনাফ আনাফ বলে সেই মেয়েটি এখন নেই বলে লোকগুলো তাকে খুঁজতে এদিক সেদিক ছোটাছুটি করলো।সেখানে থাকা কমবয়সী কিছু পথশিশু বলে উঠলো মেয়েটিকে তারা পানিতে ঝাঁপ দিতে দেখেছে।
এবার নদীর ওাড়ে আহাজারি লেগে গেলো।

রাতের বারোটা অবধি অনুসন্ধান করে লাশ পাওয়া গেলো অবশেষে।১ম লাশটি ছিল একটি মেয়ের।সজীব নামের ছেলেটির জন্য বছরের পর বছর যে ডাকপাড়ির অপেক্ষার খাতা খুলে বসেছিল,।সেই খাতার মালিক সারথি নামের মেয়েটির লাশ ছিল সেটি। লঞ্চের কাছাকাছি জায়গা থেকে তার মৃতদেহ উদ্ধার করে উদ্ধারকর্মীরা।পাড়ে আনতেই লোকজনেরা জানায় কি করে মেয়েটির সাথে এমনটা হলো!
এরপর পাওয়া যায় আরেকটি লাশ!!
এটা সেই ছেলেটির লাশ যার পিছু নিয়ে মেয়েটির মৃত্যু হয়।মানুষ কাউকে ভালবেসে অন্ধ হয়,আর যারা জন্ম থেকেই অন্ধ হয় তারা??
তারা মন থেকেও অন্ধ হয়।যেটা আজ সারথি হয়েছিল।যার জন্য সে আজ অন্ধ হয়েছিল সে মানুষটিও আর রইলোনা!!
যে বাচ্চা ছেলেটিকে কেন্দ্র করে দুজনের মৃত্যু হলো সেই বাচ্চা ছেলেটির লাশ এখনও মেলেনি।
খবরে নদীর পাড়ে পানিতে ডুবে মৃত্যুর ঘটনা শুনে আনাফ এবং সারথির পরিবারের সকলে এসে পৌঁছেছে সেখানে।
কেউ কারের চোখকে মানতে পারছেনা।
সকলের মুখে এক কথা””” সব ভালবাসা পূর্ণতা পায়না কেন!!!”””

এই কথায় দুমড়ে মুচড়ে গেলো ভেতরটা।এক লাফ দিয়ে উঠে বসে আনাফ।
খুব খারাপ একটা স্বপ্ন ছিল!!সারথির হাত গায়ের উপর না পড়লে হয়ত স্বপ্নটা আরও সামনে যেতো।বুকে হাত দিয়ে কাঁপতে কাঁপতে সে সারথির হাতটা আরও শক্ত করে ধরে।ওর নাড়ি চেক করে দম ফেললো সে।তাহলে ওটা স্বপ্ন ই ছিল!
বুকের ভেতর এখনও কাঁপছে।ভোরের আলো রুমে ঢুকে যেতেই সেসময় এলার্ম বেজে উঠলো আনাফের ঘড়িতে।সারথি জেগে জাগার আগেই অন্য হাত দিয়ে ঘড়ি বন্ধ করে ফেলে আনাফ।তাও সারথি জেগেই গেলো।জেগে নিজের হাতটা আনাফের কাছে বুঝতে পেরে সে জানতে চায় কি হয়েছে।

‘না কিছুনা।কিসের যেন স্বপ্ন দেখেছি’

‘ওহ!ভাল কথা মনে পড়লো।আপনি না বলছিলেন আমায় আজ নদীতে ঘুরতে নিয়ে যাবেন?মনে আছে তো?নাকি আজও আপনার কাজ।আচ্ছা এলার্ম কিসের জন্য দিছিলেন?’

আনাফ কপাল মুছে বলে এখন কাজে যাবে সে,জরুরি কাজ আছে।কাল রাতে যে রোগী এসেছিল তাকে একটা ইনজেকশান দিতে যেতে হবে এই সময়।’

এই কথা বলে তাড়াহুরো।করে তৈরি হয়ে নেয় আনাফ।সারথিকে কিছু বলার সুযোগই দেয়নি।মিনিট দশেকের ভেতর তৈরি হয়ে সে চলেও গেলো।সারথি বিছানায় বসে আছে এখনও।
বিয়ের কতগুলো মাস কেটে গেলো, তাও মনে হয় এই তো সেদিন আনাফের হাত ধরে এ বাড়ি আসলাম!
সেসব বাদ দিয়ে মুচকি হেসে বালিশের তলা থেকে রিপোর্টের ফাইল বের করে সারথি।আনাফের কলিগ উত্তম দাস সারথির রিপোর্ট দেখে বলেছে সে মা হতে চলেছে।এই খবর সারথি এখনও জানায়নি আনাফকে।উত্তমকেও মানা করেছে।আজ নদী দেখতে গেলে জানাবে।

আনাফ সারাদিনের কাজের চাপে বিকালে ঘুরতে যাবার কথা একেবারেই ভুলে গিয়েছিল।বাসায় ফিরে সারথিকে তৈরি দেখে তার মনে আসলো সেটার কথা।এইদিকে সকালের সেই স্বপ্ন আজ সারাদিন ধরে তাকে তাড়া করে বেরিয়েছিল।একটুও শান্তি সে পায়নি।এখন আবার সেই স্বপ্নের মতন নদী দেখতে যাওয়াতে তার মন সাঁই দিচ্ছেনা।
কিন্তু সারথিও নাছড়বান্দা।সে যাবেই।তার ধারণা একটা সুন্দর পরিবেশে সে সুখবরটা আনাফকে দেবে।সারথির জোরাজুরিতে আনাফ বাধ্য হয়েই ওকে নিয়ে নদীর পাড়ে আসে।কিছুক্ষণ চুপ থাকার পর আনাফ যখন বলতে যাবে তাদের বাসায় ফিরে যাওয়া উচিত সেইসময় সারথি একটা ফাইল ধরে ওর দিকে।আনাফ ফাইলটা হাতে নিয়ে দেখতে গিয়েও দেখলোনা।না দেখেই বলে,’তুমি প্রেগন্যান্ট? ”

সারথি মুখে হাসি ফুটিয়ে আনাফের হাত টেনে ওকে জড়িয়ে ধরলো শুধু।আনাফের হাত থেকে ফাইলটা পড়ে গেছে ততক্ষণে।স্বপ্ন এভাবে সত্যি কেন হয়ে যাচ্ছে!তাহলে কি সে এখন মারা যাবে!!তাহলে কি তার পিছু পিছু সারথিও মারা যাবে!!দূর থেকে একটা লঞ্চ আসছে এইদিকেই।সেতুর তলা দিয়েই যাবে।
আনাফ লঞ্চ টার ছাদের দিকে তাকায়,স্বপ্নের মতন ওখানে যুবকের দল নেই!তখনই তার মনে হলো মাথার উপর থেকে একটা বোঝা নেমে গেলো।স্বস্তির নিশ্বাস ফেলে সারথিকে আরও শক্ত করে ধরে সে।এরপর ধীর স্বরে বলে,’সব ভাল মূহুর্ত বাহিরে কাটানোই কি জরুরি সারথি?বাসায় সেলিব্রেট করা যায়না??’

‘কাল নদীতে যে বাচ্চাটি পড়ে গিয়েছিল তার লাশ আজ পাওয়া গেছে।খবর দেখেছিলেন?”

‘হ্যাঁ’

‘আপনার কি সেই ঘটনা নিয়ে আজ নদীর পাড়ে আসতে ভয় হচ্ছিল?’

‘শুরু থেকেই মাথায় একটা কথাই ঘুরেছে।আমাদের এত সুখ হয়ত সইবেনা!সেই ভয় থেকে আমার এখন এমন হাল হয়েছে যে এত ভাল একটা সংবাদ শুনেও হাসতে পারছিনা।আমার বিশ্বাস হচ্ছেনা আমরা সুখী।ভবিষ্যতে আরও সুখী হবো!!!’

‘মাঝে মাঝে কিছু ভালবাসা দারুণ ভাবে পূর্ণতা পায়, জনাব আনাফ!!’
———–
ডাকপোস্টের সামনে দাঁড়িয়ে সবসময়কার মতন দ্বিধায় ভুগছে ফারাজ।আজও সে প্রতিমাকে চিঠি দেবে।তবে আজকের চিঠিটা একেবারে অন্যরকম।
আজ এই চিঠিতে প্রতিমাকে সে ফিরতে বলেনি।নিজের ভালবাসার গভীরতাও জানায়নি।
গোটা চিঠিরাই ছিল অন্য একজনকে নিয়ে।আর সে হলো পূর্ণতা।
ফারাজ প্রতিমাকে লিখেছিল
‘আমি হয়ত তোমায় ভালবেসেছিলাম,প্রেমে পড়েছিলাম,এরপর হারিয়েছিলাম।ভেবেছিলাম তোমায় ছাড়া আমি হয়ত আর কাউকে মেনে নিতে পারবোনা কখনও।কিন্তু কি জানো!তুমি থাকতেই একজন কি করে যেন মনে জায়গা পেতে নিলো।আমি বুঝতেই পারিনি।নিয়তি শুধু জায়গা পরিষ্কার করে দিলো।তুমি হয়ে গেলে অন্য কারোর আর আমি হয়ে গেলাম এই মেয়েটির।পূর্ণাকে নিজের ইচ্ছেতেই বিয়ে করেছি।তাও বুঝতে পারছিলাম না কেন করেছি!মনে হচ্ছিল আমাকে দিয়ে কেউ সব করাচ্ছে।পূর্ণতা নিজেও বিরক্ত ছিল আমার উপর।তার মতে আমি যখন তাকে নিজের সম্মতিতেই বিয়ে করলাম তবে তাকে আপন কেন করে নিচ্ছিনা।মেয়েটা আমায় বোঝে!
জানিনা কেন!আমার সব কিছুর খেয়াল রেখেও দিনের শুরুতে কোমড়ে আঁচল গুজে আবার ঝগড়া করতে নেমে যায়।বুঝিনা সে কেন এমন করে,যেন আমি তার বেস্টফ্রেন্ড।অথচ আগে আমায় সে চিনতোও না।অল্প দিনের পরিচয়ে কতটা মিশে গেলো!ভাবিনি তোমায় এত সহজে ভুলতে পারবো।ধরে নিয়েছিলাম নিজের বউটা আজীবন কষ্ট পাবে!বলবে আমার বর আরেকজনের প্রেমে মত্ত!
আমি কি জানতাম বউটা আমার পূর্ণতা হবে!কেমন করে আমার খুব কাছের হয়ে গেলো।তোমায় ছাড়া কয়েকটা বছর অনেক কষ্টে কাটিয়েছি,আর এখন পূর্ণতাকে ছাড়া একটা দিন আমার বিষের মতন কাটে!
আমি তোমায় এই চিঠিটা লিখেছি জানাতে যে তুমি সুখী থেকো।আমায় নিয়ে ভেবোনা।আমায় তোমার মতন করে ভালবাসার একটা মানুষ পাশে দাঁড়িয়ে গেছে।হয়তবা তোমার চেয়েও একটু বেশিই ভালবাসে।আর আমিও তাকে!!!সকালে বেরিয়েছিল স্কুলে পড়াতে।বিকাল হয়ে গেলো ফেরেনি বলে আমার দুপুরের খাওয়াটা জমেনি।এক লোকমা খেয়েই উঠে পড়েছি।ভাল লাগেনা কাছে না থাকলে।ঠিক করেছি ওর স্কুলের ফাঁকা একটা রুম দখল করে সেখানেই আঁকিবুকির কাজটা চালিয়ে নিবো,অন্তত ওর কাছাকাছি থাকা হবে।এইটা হয়ত তোমায় দেয়া আমার শেষ চিঠি। ভাবছি আর লিখবোনা তোমায়।পূর্ণতা অনেক জেদি।যদি জানে তোমায় চিঠি লিখি এখনও তবে আগুন ধরিয়ে দিবে আমার গায়ে।তোমার গায়েও ধরাতে পারে।তোমার উপকার করতে চেয়েই তোমায় লেখা এই আমার শেষ চিঠি।আজ থেকে তোমায় নিয়ে আমার ডাকপাড়ি বন্ধ হলো,ভাল থেকো’

চিঠিটা পোস্ট করে দিয়ে ফারাজ পূর্ণতার স্কুলে আসে।বিকাল ৪টা বাজে।এখনই ছুটি হবে।
ফারাজ গেটের বাইরে অপেক্ষায় ছিল পূর্ণতার।পূর্ণতা বের হয়েছে পাঁচ মিনিট পরেই।বেশি দাঁড়াতে হয়নি তাকে।আজ রিকশায় পূর্ণতাকে অন্যরকম লাগছিল।দাঁত কেলিয়ে অকারণেই হাসছিল।বাড়িতে ঢোকার সময় ও তার হাসিটা মজুত ছিল।
শেষে ফারাজ ওর হাতটা ধরে ওকে থামায়।জানতে চায় কি হয়েছে।পূর্ণতা হাত ছাড়িয়ে নেয়।জবাব দেয়নি।
সোজা চলে যায় রান্নাঘরে।ফারাজ ভাবছে কি কারণ হতে পারে এর?সোফায় বসে এসবই ভাবছিল ও।দশ মিনিট পর পূর্ণতাকে সে আবার দেখে।হাতে চায়ের কাপ নিয়ে সে ফারাজের সামনে রেখে আবার চলে যায়।
ফারাজ ওর চলে যাওয়া দেখে চায়ের কাপটা হাতে নিতেই দেখে কাপের সাথে একটা চিরকুট।যেটা কিনা কাপ উপরে তোলায় নিচে পড়ে গেছে।সে এবার চিরকুটটা তোলে,পরে ভাবে আগে চা খেয়ে নিই।মাথা ব্যাথা কমাতে গরম গরম চা জরুরি।
চায়ে কয়েকটা চুমুক দিয়ে জলদি চা শেষ করে সে চিরকুটটা মেলে ধরে।তাতে লেখা—-
“”””ঠিক বলেছেন, আপনার প্রতিমাকে চিঠি দেয়া আমার পছন্দ না।অন্যায় হলেও আমি চিঠিটা লুকিয়ে পড়ে ফেলেছি আগেই।আবারও ঠিক বলেছেন ঐ মেয়েকে চিঠি দেয়া আমার পছন্দ হবারও কথা না।হয় ও নি।আর তাই আজ ইউরিন মিক্সের পানি দিয়েই আপনাকে চা বানিয়ে খাওয়ালাম।আপনার এতদিনের রেকর্ড ভাঙ্গলাম।আজ সকালেই যাবার সময় টাংকির তালা খুলে রেখে গেছিলাম।চা নোনতা লেগেছে ডিয়ার হাসবেন্ড😇?’

ফারাজের হাত থেকে চিরকুট পড়ে গেলো নিচে।থু থু করতে করতে সে ভেসিনের দিকে ছুটে চলে গেলো অমনি।
সমাপ্ত