ডাকপাড়ি পর্ব-৫৮+৫৯+৬০

0
321

#ডাকপাড়ি
#পর্ব_৫৮
#আফনান_লারা
________
সারথির পায়ের কথা ভেবে সকলে একমত হয়েছে আজ ওরা এখানেই থাকবে।কাল সকালে চলে যাওয়া যাবে।
আনাফ চেয়েছিল আজই নিয়ে যেতে কিন্তু বড়দের সাথে আর কথায় পেরে ওঠেনি।তবে আনাফের বাবা মা চলে গেছেন,থেকে গেছে আনাফ আর সারথি।

সারথি বিছানায় বসে থাকতে থাকতে বিরক্ত হয়ে গেছে এদিকে নামতেও পারছেনা,আর বাহিরে কি কান্ড ঘটছে তাও বুঝতে পারছেনা।
অনেককাল বসে থাকার পর দরজা খোলার কিঞ্চিত একটা আওয়াজ তার কান অবধি ছুঁয়ে গেলো।সারথি ভেবেছে আনাফ এসেছে।কিন্তু নাহ!সায়না কাকি এসেছে ধোঁয়া ওঠা গরম ভাত আর কষা মাংসের প্লেট নিয়ে।তার ঘাড়ে দায়িত্ব চেপেছে সারথিকে খাইয়ে দেয়ার।সকলের নাকি খাওয়া হয়ে গেছে।সারথি মুখে লোকমা নিয়ে চুপচাপ চিবোচ্ছে।সায়না কাকি আরেকটা লোকমা সাজানোর সময় বললেন,’জানিস সারথি!সজীব আর আনাফের রুপের কোনো বৈসাদৃশ্য নেই।সজীব যেমন সুদর্শন ছিল,আনাফ ও তেমনই।যেটা আলাদা সেটা হলো তোর প্রতি প্রেম।সজীবের ছিল না,আর আনাফের ঘরভর্তি।কে জানতো সঠিক মানুষটা এত দেরিতে আসবে!’

‘উনি কোথায় এখন?’

‘ফারাজের সাথে বাগানের দিকে যেতে দেখলাম।ফারাজের সাথে ওর যা খাতির কি বলবো, একেবারে! ‘

‘পূর্ণতা কোথায়? ওরা হলো নতুন বর বউ,তাদের পাত্তা না দিয়ে তোমরা আমাদের নিয়ে পড়ে আছো!’

‘আরেহ ওদের জোড়া লাগতে আরও অনেক দেরি।দুজন দুজনকে পছন্দ করে কিন্তু স্বীকার করতে কিপটামো করে।ভাবতে পারো!একই স্বভাবের দুটো মানুষ একই গড়ায় বাঁধা পড়লো।অথচ তারা সেটা জানেইনা।হাহা!’

‘ভালবাসি কথাটা বলতে দেরি করা উচিত না।যখন যেটার সময় চলতে থাকে তখন সেটা বলে ফেলা উচিত’

‘তুই বলেছিস আনাফকে?’

সারথি থতমত খেয়ে গেলো।তা দেখে সায়না কাকি হাসছেন মিটমিট করে।
———-
ফারাজ আনাফের সাথে বাগানে আসলেও তেমন একটা গল্পের আসর জমায়নি।সে ভাবছে পূর্ণতার কথা আর আনাফ ভাবছে সারথির কথা।অথচ তারা দুজনেই এখানে গল্পের আসর জমাতে এসেছিল।
পূর্ণতা দুই গ্লাস দুধ নিয়ে এসে ওদের দুজনের সামনে রেখে দাঁতটা ভাল ভাবে কেলিয়ে বলে,’নতুন জামাইরা খেয়ে নিন’

ফারাজ ভ্রু কুঁচকে বললো,’আমি পুরোনো হয়ে গেছি’

‘বিয়ের দুইদিন ও হয়নি।পুরোনো হবেন কি করে?’

‘সে যাই হোক।একদিন আগে কিংবা পরে হলেও আমি পুরোনো হয়ে গেছি।
আপাতত আনাফ ভাইকে সমাদর করো’

পূর্ণতা চট করে ফারাজের জন্য আনা দুধের গ্লাসটা তুলে খাওয়া ধরতেই ফারাজ সেটা আটকে বলে,’এটা তো আমার জন্য এনেছিলে না?’

‘আপনি বললেন আপনি পুরোনো হয়ে গেছেন।তবে এটা খাবেন কেন?’

‘আমি এই কারণে বলিনি।দাও আমার গ্লাস’

‘দিব না।পুরোনো জামাই,পুরোনো জামাইর মতন থাকেন’

এই বলে পূর্ণতা গ্লাসে এক চুমুক দিয়ে গ্লাসটা আবার রেখে চলে যায়।
আনাফ অনেক কষ্টে হাসি দমিয়ে রেখেছিল কিন্তু পূর্ণতা যেতেই হাসির ঢল নামিয়ে দিলো ওখানে।খিলখিল করে হেসে উঠলো সে।ফারাজ মুখ গোমড়া করে গ্লাস টা নিয়ে বাকিটুকু দুধ খেয়ে বললো,’নিজের বউয়ের এঁটো খাওয়া যায়’

‘আমি কৈফিয়ত চাইনি ‘

‘না আসলে বললাম আর কি।এ বাড়িতে পূর্ণতা সম্বন্ধিত কিছু করলেই সবাই মিলে পেছনে লেগে যায়।তাই অভ্যাসে পরিণত হয়ে গেছে’

‘মানে সবাই তোমার মুখ দিয়ে বের করাতে চাইছে যে তুমি পূর্ণতাকে পেয়ে খুশি ?’

‘খুশি না!আসলে ঠিক সেটা নয়’

‘থাক।আর বোঝাতে হবেনা।শুনেছি বিয়েটা নিজের মতের ভিত্তিতেই করেছো।তবে আর কি জানতে চায় সবাই?’

ফারাজ মাথা চুলকে এদিক সেদিকে চোখ বুলিয়ে বলে,’বিয়েটা নিজের ইচ্ছেতেই করেছি কিন্তু হয়েছে কি আসলে!!!আমি এখনও পূর্ণতাকে বলে উঠতে পারিনি ফিলিংসের কথা’

‘তো বলে ফেলো।দেরি করলেও সমস্যা নেই।বিয়ে তো হয়েই গেছে’
————
সায়না কাকি চলে যাবার পর সারথি একটু বিছানা ছেড়ে নামার চেষ্টা চালাচ্ছিল।মুখ হাত ধুলে একটু শান্তি লাগবে।সেই কখন থেকে বিছানায় বসে আছে।আর কত বসে থাকা যায়?
পা ফ্লোরে নামিয়ে মনে মনে সাহস জোগাচ্ছিল সে।অনেক ভেবে দেয়ালে হাত রেখে উঠে দাঁড়ায় সে।দেয়ালে হাত রেখে উঠার সময় একবারও ব্যাথা অনুভব হয়নি বলে সারথি ধরে নিলো সে হাঁটার জন্য প্রস্তুত।
সাত পাঁচ না ভেবে হাঁটার জন্য পা বাড়াতেই দুনিয়া দারি কেমন যেন হয়ে গেলো তার কাছে।পড়েই যাচ্ছিল কিন্তু সেই চিরচেনা আপন বাহক তাকে ঠিকসময়ে ধরে ফেলেছে।
হাতটা সে চেনে,তার খুব পরিচিত এই হাত,এই গন্ধ।
আবেগে হাতটাকে নিজ থেকেই আকড়ে ধরে সারথি।প্রাণভরে ঘ্রাণ নিলো চোখদুটি বন্ধ করে।কি নেশা এই গন্ধে।
আনাফ বুঝে গেছে সারথি তাকে পেয়ে খুশি হয়েছে।সে সারথিকে বিছানায় আবার বসিয়ে দিতে দিতে বললো,’কোথায় যাচ্ছিলে?তোমায় না মানা করেছি বিছানা থেকে একা একা না নামতে?’

‘ওয়াশরুমে যাবো’

‘চলো আমি দিয়ে আসি’

সারথি আশ্চর্য হয়ে গেলো এই কথা শুনে।আমতা আমতা করতে করতে বললো যাবেনা সে।আনাফ জোর করলো যাবার জন্য কিন্ত এবার সারথি পা দুটো উঠিয়ে ফেলেছে বিছানায়।সে যাবেই না কোথাও।এতক্ষণ পর আনাফ বুঝতে পারলো সারথি যেতে মানা কেন করছে।

‘আমি তোমার সাথে ভেতরে যাব না তো।ওখান অবধি শুধু এগিয়ে দিয়ে আসবো’

সারথি লজ্জায় লাল হয়ে গেছে।বিয়ের পরে হয়ত এটাই সব চাইতে লজ্জাকর অবস্থা তার কাছে!!
এতকিছুর পরেও সে আনাফকে বললো সে যাবেনা এখন।তাই আনাফ আর জোর করেনি।
রুমের আলো নিভিয়ে দুপাশে দুজন বসে আছে এখন।মাথার উপরে ফ্যান চলছে আর বাহিরের চোরা বাতাস থেমে থেমে জানালা ভেদ করে গায়ে এসে লাগছে।সারথির রুমের বিছানা একেবারে জানালা ঘেঁষে।ঠাণ্ডা টা যেন আরও বাড়িয়ে তুলছে সেই বাতাসে।সারথি শীতে নড়েচড়ে বসলো।
আনাফ তখনও আগের মতন পা তুলে গোল হয়ে বসা ছিল।কোনো কথা নেই কারোর মুখে।
সারথির চোখে ঘুম নেই,সন্ধ্যা থেকে অনেক ঘুমিয়েছে,এখন ঘুম আসার কথানা,এদিকে আনাফ তো ঘুমানোর কথা ভাবতেও পারেনা।প্রতিদিন ঘুমাতে গিয়ে তার রাত ১টা ২টা বেজে যায়।আর এখন বাজে সবে এগারোটা।
সে ভাবছে কোন কথা শুরু করবে।অনেক আগ থেকে চেনা দুজন দুজনকে।দুনিয়ার সব কথা বলা হয়ে গেছে।তবে কি কথা দিয়ে শুরু করা যায়?

শেষে সারথি বললো,’ঘুমাবেন?’

‘নাহ,তুমি?’

‘আমিও না’

‘কি করবে?’

‘কি আর করবো!শুয়েই পড়ি।শুয়ে পড়লে আপনাআপনি চোখ লেগে যাবে’

সারথির এমন সোজাসুজি কথায় আনাফ অবাক হলো।এটা হয়ত সে আশা করেনি,তাও ভাল।সে যেমন চায় তেমনটাই হোক।সারথির কথার খেলাপ না করে আনাফ চট করে বালিশ পেতে শুয়ে পড়েছে।সারথি সেটা টেরও পেয়েছে।
কপালে হাত রেখে আনাফ চুপ করে রইলো।সারথি আনাফের মতন নিজেও শুয়ে আছে।আনাফ হঠাৎ ভাবলো সারথির আর সজীবের বাসর ঘরেও তো নাকি সজীব এমনটাই করেছিল,কোনো কথা না বলেই ঘুম দিয়েছিল।তবে তার আর সজীবের কি তফাৎ?

ওমনি আনাফ মোড় দিয়ে সারথির দিকে ফিরলো।সারথি এমনিতেই সোজা হয়ে শুয়েছিল।আনাফ ওর দিকে যে ফিরেছে সেটাও ও টের পেয়েছে,তাও কিছু বলেনি।

‘আচ্ছা তোমার আর সজীবের বাসর ঘরে সজীব ঘুমিয়ে পড়েছিল তাই না?’

‘হুম’

‘ওহ!’

সারথি ভাবছে হঠাৎ এগুলা জিজ্ঞেস করার কি কারণ তখনই তার ভাবনার ছেদ ঘটিয়ে আনাফ তাকে বুকে এনে জড়িয়ে ধরে ফেললো।এটা সারথি কল্পনাই করেনি।আশ্চর্যান্বিত হয়ে চুপ করেই থাকলো।আনাফ বললো,’সজীব যেটা করেনি সেটা আমি করবোনা এটা তোমায় কে বলেছে?’

‘কেউ বলেনি,তবে অবাক হলাম’

‘আমি চাইনি এটা,কিন্তু কিছু না করলে সজীব আর আমার তো তফাৎ থাকবেনা তাই না?’
————
ফারাজ তার সিঙ্গেল খাটের রুমে এসে পা দোলাচ্ছিল আপন মনে ঠিক সেসময়ে হঠাৎ ঝড়ের গতিতে তার ছোট্ট রুমটাতে ঢুকে পড়লো সায়না কাকি আর মা।তাদের এখানে দেখে ফারাজ শুরুতে বুঝতে পারেনি আসলেই কি ঘটেছে।
পরে তাদের মুখের ভাবগতি দেখে আস্তে আস্তে টের পেলো যে বিষয়টা মনে হয় পূর্ণতাকে নিয়ে।তাই সে বুঝেও না বুঝার ভান ধরে বালিশ গুছিয়ে শুয়ে পড়লো ওনাদের দেখিয়ে।

‘কিরে ফারাজ??পূর্ণতা কোথায়?’

‘কোথায় আবার!তার রুমে’

‘তার রুমে মানে!তুই এখানে কি করিস?তোর তো ওর সাথে সেই রুমে থাকার কথা’

‘কেন থাকবো?আমার রুম তো এটা’

‘কিন্তু এই খাটে জায়গা হয়তনা বলেই তো তোদের সেই রুমটা ঠিক করে দেয়া হয়েছিল।তুই এমন নাছোড়বান্ধা গিরি ছাড়াবি নাকি আব্বাকে ডাক দিব?’

‘দাদাজানকে সামান্য কারণে ডিস্টার্ব করবে?’

‘হ্যাঁ করবো,কারণ তুই তার কথাই খেলাপ করছিস।’

‘মা বিশ্বাস করো!পূর্ণতার সাথে এক খাটে শুলে আমার ঘুম আসেনা।আমাকে একটু শান্তিতে ঘুমাতে দাও’

‘তা হবেনা।বিয়ে যখন করেছিস তখন সব খানে বউকে রাখতে হবে।তুই এখন পূর্ণতার কাছে যাবি নয়ত পূর্ণতাকে এই রুমে নিয়ে আসতেছি’

ফারাজ চট করে উঠে দাঁড়িয়ে পড়ে বলে,’না থাক।যাচ্ছি আমি।এই রুমে গাদাগাদি করে শোয়ার চেয়ে আমি বরং সেই রুমেই যাই।তোমরা শান্ত হও’
———
পূর্ণতা গোটা একটা বিছানায় শুয়ে শুয়ে বাদাম খাচ্ছে।আজ আর তাকে কষ্ট করে ঐ চিকন বিছানায় শুতে হয়নি বলে মনে তার অনেক আনন্দ।বড় করে শ্বাস নিয়ে আবার ফেলার আগেই দরজার কড়া নাড়ার আওয়াজ পেয়ে হুমড়ি খেলো সে।শান্তিতে দমটাও ফেলা যাবেনা না কি!!
পা টিপে টিপে নিচে নেমে দরজার কাছে এসে সে জানতে চাইলো কে ওখানে।
ওপাশ থেকে ধমকের সুরে শোনা গেলো”‘আমি ফারাজ””

পূর্ণতা বিরক্ত হয়ে দরজা খুলতেই ফারাজ কোনো কথা না বলে ভেতরে চলে আসে।

‘একি!নিজের রুম রেখে আমার রুমে কি করেন?’

‘বিবাহিত ট্যাগ লাইন লেগে গেছে কিনা!!আলাদা শোয়া পাপ’

‘মানে কি এখন আমার সাথে ঘুমাবেন নাকি?’

‘আমি চাইনি,সকলে জোর করে পাঠিয়ে দিলো’

‘না হতে পারেনা!আমি একা ঘুমাবো’

‘তো গিয়ে আমার রুমেই ঘুমান,আমাকে অন্তত এখানে ঘুমোতে দিন।আমি গেলে আবার ফেরত পাঠাবে।ট্রাই করে বিফল হয়েছি’

‘বিয়ে জোর করে করিয়েছে ঠিক আছে,তাই বলে একসাথে থাকাও কি জোর করে করাবে!আপনার পরিবার আর আপনি সামলে নিতে পারছেন না।আমি তো হলাম বাইরের মানুষ।আচ্ছা এক মিনিট, ওয়েট’

পূর্ণতা পা টিপে টিপে রুম থেকে বেরিয়ে গেলো।ফারাজ দেখলো ও সোজা সারথির রুমের দিকে যাচ্ছে ধীরে ধীরে।যেতে যেতে আঁচল কোমড়ে গুছছে।মানে তার ভাবনায় দুষ্টুমি লেপটে আছে। নির্ঘাত ওদের বাসর ঘরের কথা শুনার জন্য চলেছে।ফারাজ তড়িঘড়ি করে ওকে আটকাতে গেলো তার আগেই পূর্ণতা দরজার সাথে কান লাগিয়ে শোনার চেষ্টা চালাচ্ছে ভেতরে ওরা কি কথা বলে।

‘পূর্ণতা!আপনার কি লজ্জা নাই?’

‘একটুও নাই’

‘সরুন,কেউ দেখলে কি বলবে?’

ফারাজ পূর্ণতার হাত ধরে টানার চেষ্টা করছিল তখনই সারথির রুমের দরজা খুলে গেলো,আনাফ খুলেছে।তার গায়ের পাঞ্জাবিটা খুলে হাতে ঝুলিয়ে রেখছিল সে।পূর্ণতা ওকে উদম দেখে বলে উঠলো,’এত জলদি……….’

ওমনি ফারাজ ওর মুখ চেপে ধরে দাঁত কেলিয়ে বলে,’হেহে!!এত জলদি দরজা খুললেন ভাই।আমরা তো দরজা নকই করলাম না এখনও’

আনাফ পাঞ্জাবি দিয়ে গলা মুছে বললো,’অনেক গরম।তোমার বোনের নাকি শীত লাগে।ফ্যানটাও চালাতে দিচ্ছেনা’

চলবে♥

#ডাকপাড়ি
#পর্ব_৫৯
#আফনান_লারা
________
পূর্ণতা রুমের ভেতর গিয়ে সারথিকে একটু জ্বালাতে চেয়েছিল,কিন্তু তার এই পরিকল্পনায় পানি ঢেলে দেয় ফারাজ।সে খুব ভাল করে জানে পূর্ণতা ভেতরে যাওয়া মানে সারথিকে পচানো,এদিকে আনাফ আর সারথিকে ডিস্টার্ব করাও দৃষ্টিকটু বলে সে এক প্রকার জোরজবরদস্তিতেই পূর্ণতাকে নিয়ে চলে এসেছে ওখান থেকে।
আনাফ খুলে রাখা পাঞ্জাবিটা কাঁধে ঝুলিয়ে বাগানের দিকে চলে গেছে।খোলা বাতাসের নিচে একটু বসলে গায়ের আর মনের গরম চলে যাবে তখন ফ্যান ছাড়া শোয়া যাবে অনায়াসেই।
সারথি চুপচাপ শুয়ে ছিল,ফ্যানটা ওর কথাতেই আনাফ বন্ধ করেছে।যত যাই হোক,সিমপ্যাথি দেখিয়েও সে ফ্যানের নিচে বেশি বসতে পারবেনা।যে শীত!!
গরম সহ্য করা গেলেও শীত সহ্য করা যায়না।
এসবই ভাবছিল ও। সেসময় তার ফোন বাজার আওয়াজ কানে আসলো।বিছানা হাতিয়ে বালিশের তলা থেকে সে ফোনটা খুঁজে পায়।তাকে এ সময় কে কল করতে পারে ভাবতে ভাবতে রিসিভ করে সে।
ওপাশ থেকে শোনা গেলো সজীবের গলা।

‘ভাল আছো?’

‘হুম’

‘আমি ভাল নাই।বাবা অনেক প্রেসার দিচ্ছে সব ঠিক করে নেয়ার।কিন্তু সারথি বিশ্বাস করো,লেভেনকে ধোকা দিতে পারবোনা আমি।তুমি বাবাকে বোঝাবে?একবার হ্যাঁ বলো।লেভেনকে ধোকা দেয়ার কথা জাস্ট ভাবতে পারছিনা।সে ভাল মেয়ে,আমি চাই তার সাথে বাকি জীবনটা কাটিয়ে দিতে।তোমার আর আমার তো রিলেশন নাই এখন,তাহলে বাবা কেন আবার জীবনটাকে নষ্ট করার পেছনে লেগে আছে বলতে পারো?
তোমায় আর আনাফকে আজ একসাথে দেখেও তিনি বাসায় এসে আমার উপর চড়াও হচ্ছেন।সব নাকি আমার দোষ।তিনি চাইছেন তার রেপুটেশন যেন কিছুতে ক্ষয় না হয়। সব আবার আগেরমতন করতে চাইছেন।তুমি বলো এটা কি সম্ভব? ‘

‘আচ্ছা আমি আঙ্কেলের সাথে কথা বলে নিব’

‘এখন কি করছো?’

‘ঘুমাবো’

‘আনাফ চলে গেছে?ওর সাথে তোমার বিয়ে কবে?আমার আগে করোনা।আমার পরে করো।লেভেনকে নিয়ে তোমার বিয়েতে আসবো’

সারথি মুচকি হাসলো তারপর বললো,’ভুল হয়ে গেলো।বিয়েটা আজই হয়ে গেছে।আমি আর আনাফ নাহয় আপনার বিয়েতে যাব।হিসাব একই হলো তাই না?’

সজীবের বুকের ভেতরটা যেন ধুক করে উঠেছে।আসলেই কি সত্যি!নাকি সারথি মজা করছে!
সত্যি কি বিয়েটা হয়ে গেলো!হওয়ারই কথা ছিল।কিন্তু কেন হলো!

সজীবকে চুপ করে থাকতে দেখে সারথি কলটা কেটে দেয়।সে জানে সজীব একটু হলেও কষ্ট পেয়েছে।হাজারটা পজিটিভিটির মাঝে একটা বুক ধড়ফড় করা কথা নেগেটিভিটির শেষ লেভেলে নিয়ে যেতে পারে।এখন হয়েছে তাই।সজীব যেমন বুক ফুলিয়ে এত এত কথা বললো,সারথির বিয়ের সংবাদ তাকে ঠিক ততটাই দূর্বল করে দিয়েছে।সে এতটাই অবাক আর দূর্বল হয়ে গেছে যে মুখ ফুটে কিছু বলতে পারছেনা।
সারথির মন খারাপ হলোনা,শান্তি অনুভূত হলো কিছু।
কয়েকটা বছর ধরে যে মানুষটা হাজারটা অবহেলা করে গিয়েছিল সে মানুষটাকে এমন অবস্থায় দেখে ভাল লাগারই কথা।সারথি তো আর সিনেমার নায়িকা না যে সজীবের এই দশা দেখে তার ও বুক পুড়বে।
—–
আনাফ বাগানে অনেকক্ষণ ঘুরঘুর করে রুমে ফেরত চলে এসে দেখে সারথি এখনও আগেরমতন বসে আছে।তার নড়চড় চোখে পড়ার মতন।মনে হয় মশা মারছে।ফ্যানের সুইচে হাত রেখে আনাফ বলে,’ফ্যান দিলে মশা যাবে’

‘দেন তবে।কি আর করার মশার কামড়ের চেয়ে শীতই ভাল’

আনাফ হেসে ফ্যান চালু করে ওর পাশে এসে বসতেই সারথি ফোনটা আনাফের দিকে ঠেলে ধরে বলে,’আমার ফোনটা আপনার কাছে রাখবেন?’

‘কেনো?’

‘আমার আর ফোনের প্রয়োজন নেই’

‘কেন নেই?আমি হাসপাতাল গেলে তোমার খোঁজ তো ফোন দিয়েই নিবো’

‘ল্যান্ড লাইনে দিবেন, আমি চাইনা আর ফোন ব্যবহার করতে’

আনাফ ফোনটা সরিয়ে রেখে বলো,’কিছু হয়েছে?’

‘নাহ।যাতে নাহয় সেটার জন্যই বলছি’

‘অনেক রাত তো হলো এবার ঘুমানোর চেষ্টা করো।কাল সকালেই আমরা চলে যাব’

‘আপনার বাবা রাজি নন তাই না?’

‘রাজি নাহলে এ বিয়ে হতোনা।বাবার সামনেই কিন্তু বিয়েটা হয়েছে।তবে এই কথা কেন?’

‘আমার সাথে কোনো কথা বলেননি তো তাই মনে হলো’

‘বাবা আসলে ভাবতেও পারেনি আমি আজই সব সেরে ফেলবো তাই একটু শকের মধ্যে আছে, তুমি ভেবোনা।কাল থেকে দেখবা কত আদর যত্ন করে তোমার।একমাত্র ছেলের বউ কিনা ‘
———-
ফারাজ রুমে ঢুকেই দরজা ভেতর থেকে লাগিয়ে দিয়েছিল।পূর্ণতা সেটার বিরোধিতা করে বলে,’ননদের সাথে কথা বলাও যাবেনা?ওভাবে টেনে নিয়ে আসলেন কেন?আমি কি ছোট মানুষ?’

‘ছোট মানুষেরাও এমন ব্যবহার করেনা।বাসর ঘর নিয়ে এত কিসের জানতে হবে আপনার?নিজের বাসর ঘরের কথা ভাবতে পারেননা??বসে বসে নিজের চেয়ে বড় মানুষদের বাসর ঘর নিয়ে তার জানার যত আগ্রহ ‘

‘আমার কিসের বাসর ঘর!আমার তো হলোনা তাই তো মানুষের বাসর ঘর নিয়ে একটু অভিজ্ঞতা অর্জন করতে গিয়েছিলাম।যাকে বলে জ্ঞান অর্জন করা।ঠিক করে শিক্ষালাভ ও করতে দেবেন না?’

‘ শিক্ষালাভের জন্য আর বিষয় খুঁজে পান না?ওরা দুজনেই আপনার চেয়ে বয়সে বড়।ছোট হলে এক কথা ছিল।এভাবে সেধে সেধে যাওয়ার কোনো মানে আছে?লজ্জায় আমি শেষ হচ্ছি,আর সেখানে আপনার মুখে সেই লজ্জার শিশির টুকু ফোটা টাও দেখিনা’

‘এগুলাতে লজ্জার কি আছে?আসলে আপনার মাইন্ড খারাপ।আমি তো সারথি আপুকে জিজ্ঞেস করতে গিয়েছিলাম ভাইয়া কিছু দিয়েছে কিনা।কারণ আমার বর আমায় কিছু দেয়নি’

‘কি দেবো আমি?আমার কি কাড়ি কাড়ি টাকা দেখেন?? আমি গরীব জানেন না?’

‘ওতোটাও গরীব না।ফুল কেনার টাকা সব ছেলের পকেটে থাকে।দোহায় দেয়ার প্রয়োজন নেই’

‘ফুল কোনো গিফট না।ফুল হলো আবেগের নামমাত্র। ফুল দেয় মানুষ ভালবেসে,এটা গিফট নয়।গিফটের সাথে ফুলের তুলনা করা বোকামি’

‘আমার কাছে ফুল মানেই গিফট।আপনি ফুল দিবেন আমাকে’

‘দিব।এখন ঘুমান।রাত হয়েছে অনেক’

এই বলে ফারাজ বিছানায় উঠে এক কোণায় লম্বা হয়ে শুয়ে পড়েছে।পূর্ণতা দরজার ছিটকিনি খুলতে যেতেই ফারাজ শুয়ে শুয়ে বললো,’রুম থেকে বের হয়েছেন তো দাদাজানকে গিয়ে বলে আসবো আপনি আমাকে সময় না দিয়ে আরেক কাপলের বাসর ঘর নিয়ে সময় দেন’

পূর্ণতা ভেংচি কেটে ছিটকিনি থেকে হাত সরিয়ে বিছানায় এসে খালি জায়গায় বসে পড়েছে। ফারাজের চোখ বন্ধ। পূর্ণতা তার পাশে শুয়ে ছাদের দিকে চেয়ে থেকে বলে,’আমরা হানিমুনে যাব না?’

‘আপনার দেখি ঘরভর্তি ইন্টারেস্ট । অথচ সেই আপনি কদিন আগে মাইকিং করে বলছিলেন বিয়ের প্রতি আপনার এখন কোনো ইন্টারেস্ট নাই।সেই আপনি বিয়ে হবার পর থেকে আমার আংটি লাগবে,আমার ফুল লাগবে।আমার হানিমুন লাগবে।আর কি লাগবে?’

‘বিয়ে হয়ে গেছে এখন ফুটানি করে লাভ আছে?তাই এখন একটা মেয়ে যেটা যেটা চায় সেটাই চাইছি।আপনি দিতে বাধ্য’

‘টিএসসি থেকে ঘুরিয়ে আনবো ‘

‘উহু!আনাফ ভাই আর সারথি আপু যেখানে যাবে আমরাও সেখানে যাবো।’

‘আনাফ ভাইয়ের অনেক টাকা।হতে পারে সারথিকে নিয়ে বিদেশ ঘুরে আসবে কিন্তু,আমার এত টাকা নাই।আমি ঢাকার বাইরে কোথাও নিতে গেলেই টাকা জমাতে বসতে হবে। বিদেশ তো দূরে থাক’

‘বিদেশ,দেশ আমার সমস্যা নাই।তবে দূরে কোথাও ঘুরিয়ে আনতে হবে আমায়’

‘ আচ্ছা নেবো।ঘুমান এখন’

পূর্ণতা এক মিনিট চুপ করে থেকে আবার বললো,’আচ্ছা আপনি ঐ বালা জোড়া বিক্রি করে ঘুরতে নিয়ে যান আমায়।এমনিতেও ঐ বালার তৈরি অন্য গহনা পরার ইচ্ছা আমার তেমন একটা নাই’

‘যা হবার দেখা যাবে।বিয়ের দুইদিনও হয়নি এত পরিকল্পবার ঝুড়ি খুলে বসে আছেন।আপনি পারেন ও!’

‘আপনি জানেন কদিন পর দাদাজান আপনার বাবুর প্রত্যাশা করবে?’

‘করবেনা’

‘যদি করে কি দিবেন?বাজি ধরেন।আমি জানি উনি এই প্রত্যাশা করবেন’

‘যদি প্রত্যাশা করে তবে প্রত্যাশা পূরণ করে দিব’

এই বলে ফারাজ মুখ ঘুরিয়ে অন্যপাশ হয়ে শুয়ে পড়েছে।পূর্ণতা ইয়া বড় হা করে ওর পিঠের দিকে চেয়ে আছে।মানে কি বললো এটা!!!!!
———-
লেভেন ফোন করছে বারবার।অনেক কষ্টে উর্মির নাম্বার সে জোগাড় করতে পেরে এখন সেই নাম্বারে উড়াধুরা কল করে চলেছে।উর্মি কয়েকবার এসে সজীবকে বলে গেছে লেভেনের কলের কথা কিন্তু সজীব এখন লেভেনের সাথে কথা বলার জন্য প্রস্তুত না।তার মানতে কষ্ট হচ্ছে যে সারথি এখন অন্য কারোর হয়ে গেছে।এতক্ষণ সব স্বাভাবিক থাকলেও এই একটা খবর তার সব স্বাভাবিক কে অস্বাভাবিক করে তুলেছে।সারথির জন্য তার কোনো ফিলিংস না থাকলেও ঐ যে স্বামী হিসেবে যে অধিকার বোধটা তার এতদিন ধরে ছিল সেটা যে আর নাই সেটাই মানতে সজীবের বুকটা ফাঁকা ফাঁকা লাগছে।
উর্মি আবারও উঁকি দিয়ে বললো লেভেন এখনও কল করছে।
বাধ্য হয়ে সজীব ফোনটা ওর হাত থেকে নিয়ে কানে ধরলো।

‘সজীব?এটা বলবেনা যে তুমি সারথির সাথে সব ঠিক করে নিয়েছো আর কোনোদিন মালয়েশিয়া আসবেনা?’

‘না সেটা নয়’

‘তবে কি?হুট করে দেশে চলে গেলে,আমার সাথে সব যোগাযোগ বন্ধ রেখে।এইসবের মানে কি বুঝতাম বলো?’

‘বাবা জোর করে নিয়ে এসেছে।তুমি ভেবোনা,আমি তোমারই আছি’

‘তবে গলা এমন শুনায় কেন?কি হচ্ছে ওখানে?সারথি কোথায়?’

‘তোমার আর ভাববার কিছু নেই।সারথির বিয়ে হয়ে গেছে’

সারথির বিয়ের কথা শুনে লেভেনের কলিজা যেন একেবারে ঠাণ্ডা হয়ে গেলো।খুশিতে সে আবার জানতে চাইলো এটা সত্যি নাকি সজীব মজা করছে।সজীব বললো এটাই সত্যি।সে এবার নিশ্চিন্ত হয়ে বললো সজীব যেন সব কাজ শেষ করে তারপর মালয়েশিয়া ফেরত চলে আসে। আজ তার শান্তির ঘুম হবে।ডিভোর্স হবার পরেও তার মনে হচ্ছিল সারথি কোনো না কোনো ভাবে সজীবের লাইফে আবার ফেরত আসতে পারে,কিন্তু এখন সেই চিন্তা গেছে।আর ভয় নেই।
———-
আনাফের গায়ের আতরের গন্ধ টা এতদিন থেমে থেমে সারথি পেতো।বুঝে যেতো আশেপাশে আনাফ আছে।কিন্তু আজ সেই আতরের গন্ধ টা যেন নড়ছেই না সারথির কাছ থেকে।তার নাকে লেগে আছে।আতরের গন্ধটা নাকে লাগিয়ে সারথি ঘুমানোর জন্য প্রহর গুনছিল।
আনাফ নড়ছেনা।হয়ত ঘুমিয়ে পড়েছে।
সারথি সেই রাতের কথা ভাবছে।সজীব আর তার বাসর ঘরের কথা ।সেই রাতে সারথি একবারও হাসেনি,সজীব তাকে একটিবার ছোঁয়নি।
এই বাসর রাতে আনাফ ও তাকে ছোঁয়নি অথচ তার মুখে হাসি লেপটে আছে।
দুটো মানুষ,দুই রকম ব্যবহার আর দুই রকমের অনুভূতি।
দুটো মানুষের কত তফাৎ হতে পারে!
আনাফ হঠাৎ হাত বাড়িয়ে সারথির একটা হাত টেনে ধরে অন্যদিকে ফিরে শুয়ে পড়েছে।সারথি চমকে উঠলো তার এই কাজে।সে ভেবেছে আনাফ ঘুমে,কিন্তু এমন করে হাত টান দিয়ে ধরার মানে সে কি ঘুমায় নাই?

‘আপনি ঘুমান নাই?’

‘ভেবেছিলাম ঘুমে থাকলে নতুন বউ বলে ফ্রি তে সোহাগ পাব।সেটা তো পেলামই না।তাই নিজ থেকে হাত ধরে সত্যি সত্যি ঘুমিয়ে পড়ার বৃথা চেষ্টা চালাচ্ছি’

‘কিসের সোহাগ করবো?’

‘না করিয়েন না,আপনি বসেই থাকেন।আপনার বিয়ে হয়েছে বসে থাকার জন্যই’

সারথি বিরক্ত হলো।কেউ কিছু চাইলে সেটা সোজা সুজি বলে দিলে সেটা সারথির ভাল লাগে, এভাবে ঘুরিয়ে পেঁচিয়ে বললে কি করে বুঝবে কোনটা দরকার?’

‘আপনি কি চাইছেন বলুন। করতেছি’

‘চাই বুকে এসে দাও এক ঘুম’

‘তখন না ধরে রাখলেন
বারো মিনিটের মতন’

‘মিনিট ও হিসেব করসো??তুমি জানো কিভাবে যে বারো মিনিট হইছে?’

‘আপনার ফোন তো কথা বলে, সময় বলে দিয়েছিল বাকি দু মিনিট আমি হিসেব করসি’

‘মানে বাসর ঘরে মানুষ এইসব আজাইরা আকাম করে?’

‘আমি করি’
——
‘এই যে শুনছেন,ফারাজ শুনছেন?’

‘জি শুনি।বলতে থাকুন।আপনার কথা শেষ নাহলে তো আবার আমার দিন শুরু হবেনা’

‘সারথি আপুদের রুম থেকে কথা শোনা যায়’

‘তো?’

‘তো মানে!এত রাতেও কথা শুনা যায় ভাবতে পারছেন?’

‘পারছি।ওরা যা খুশি করুক।আপনার কি?’

‘আমরাও তো নতুন বউ জামাই।চলুন কথা বলি’

‘রুমে আসার পর থেকে হাজারটা কথা বলেছেন।আরও বলার ইচ্ছা আছে?’

‘এগুলা কোনো কথা হলো!চলুন রোমান্টিক কথাবার্তা বলি’

‘আপনি?তাও রোমান্টিক? ‘

‘অবশ্যই।কেন আমাকে দেখে কি আপনার আনরোমান্টিক মনে হয়?’

‘শতভাগ’

‘মোটেও না।আমি আপনার ধারণা ভুল প্রমাণ করে দিব।দেখবেন?’

‘দেখান।’

‘ওকে আমি বলছি রোমান্টিক কথাবার্তা। আমাদের বিয়ে হয়েছে’

‘হুম’

‘আজ আমাদের বিয়ের ২য় রাত’

‘হুম’

‘আমি আর আপনি অন্য ঘরে’

‘তারপর’

‘তারপর আমরা কথা বলতেছি’

‘তারপর?’

‘তারপর কাল আমাদের বিয়ের ৩য় রাত হবে।মানে তখনও আমরা নতুন বউ জামাই।কি জোস তাই না?

‘এটা আপনার রোমান্টিক কথাবার্তা ?😒’

‘এতগুলা রোমান্টিক কথা বললাম একটাও চোখে দেখলেন না?’

‘এগুলা রোমান্টিক কথা?ছাদটা দুই ভাগ করে দেন প্লিজ, আমি চলে যাই,এই দুনিয়ায় থাকা আর সম্ভব না’

চলবে♥

#ডাকপাড়ি
#পর্ব_৬০
#আফনান_লারা
________
‘শুনতে পান?’

‘হ্যাঁ।আমার শালাবাবু আর তার বউ ঝগড়া করছে ‘

‘আচ্ছা ওরা এত রাতে কেন ঝগড়া করছে?মানে এই সময় কেন?আপনি কিছু জানেন?তখন তো শুনলাম ওদের সাথে কথা বলছিলেন’

‘ঝগড়া না,বলা চলে খুনসুটি। আমার কাছে ফারাজ ভাই আর পূর্ণতার কেমিস্ট্রি অসাধারণ লাগে।বিয়ে করে কি দারুণ ভাবে ইঞ্জয় করছে তারা মোমেন্ট টা।’

‘তাহলে কি আমাদেরও ঝগড়া করা উচিত এখন?’

আনাফ সারথির হাতটাকে দোলাতে দোলাতে বললো,’নাহ।একেকজনের ভালবাসা প্রকাশ করার ভঙ্গি একেকরকম। আমাদের টা ভিন্ন।আমরা মিষ্টি কথার মাধ্যমে ভালবাসাটাকে প্রকাশ করছি,এবং করবো।

সারথি চুপ হয়ে যায়।জানালা দিয়ে আসা বাতাস এখন কমে গেছে,বলতে গেলে আর আসছেইনা।আনাফ ও আর কথা বলেনি।সারথির হাতটাকে আয়ত্তে পেয়েছে তার আর কি চাই।ঘুম পাড়াতে এই একটা শীতল হাতের পরশই যথেষ্ট।
দুজনেই নিরব থেকে ঘুমিয়ে যায় একসময়।

ভোর হলো অর্কর ডাকাডাকিতে।চোখের চশমাটা ইদানিং বেশ ঢিলা হয়ে গেছে।শুধু নাকের উপর চলে আসে।ঠেলে দিয়ে চশমাটাকে চোখ বরাবর করে দরজার কড়াটা কয়েকবার করে নাড়লো সে।তার ঘাড়ে দায়িত্ব চেপেছে ফুফু আর ফুফাকে ডেকে তোলার।
কড়া নাড়া তিনবারের সময় গিয়ে দরজা খুলেছে আনাফ।চোখ ডলতে ডলতে অর্ককে দেখে সে জানতে চাইলো কি হয়েছে।

অর্ক মাথা তুলে আনাফের মুখোর দিকে চেয়ে থেকে হাত উল্টে ঘড়ি দেখিয়ে বলে,’৯টা পনেরো বাজে।সকলে নাস্তা করতে বসেছে।বলেছে পনেরো মিনিটের ভেতরে ওখানে পৌঁছাতে’

‘আচ্ছা কিন্তু তোমার ফুপি তো…..’

‘ফুপিকে আসতে কেউ বলেনি।আপনাকেই ডেকেছে,আপনি আসুন ‘

এই বলে অর্ক চলে গেছে।আনাফ পেছনে তাকিয়ে দেখলো সারথি কাঁথা মুড়ি দিয়ে এখনও ঘুমায়।ওকে আর ডেকে তুললোনা সে।নিজেই ফ্রেশ হয়ে নিচের তলায় গেলো।
সকলে ওরই অপেক্ষায় ছিল।দাদাজান পাউরুটি রঙ চাতে চুবিয়ে খাচ্ছিলেন।আনাফকে দেখে বললেন,’নাতিন জামাই,বলো দেখি রঙ চা দিয়া পাউরুটি আমাদের চিকিংসা শাস্ত্র কতটা যুক্তি দেয় ভালর প্রতি?’

‘রঙ চা শরীরের জন্য ভাল,পাউরুটি ও ভাল।কিন্তু অধিক মাত্রায় পাউরুটি আপনার শরীরের জন্য ক্ষতিকারক। তাই খাওয়া চললেও সেটা সীমার মধ্যে হতে হবে’

‘বুঝলাম,আমার নাতিন কই?’

‘সে তো পায়ের ব্যাথার জন্য হাঁটতে পারবেনা আগামী ৭দিনেও।ধরে নিয়ে আসবো নাকি?’

‘না থাক,ওখানেই নাস্তা চলে যাবে।তুমি খাও।হাসপাতাল যাবেনা?’

‘ছুটি নিয়েছি কদিনের জন্য।’
———–
ফারাজ বাগানে বই পড়ছে।পূর্ণতার হাতে নাস্তার ট্রে ধরিয়ে দিয়েছেন সায়না কাকি।ফারাজ টেবিলে এসে নাস্তা করতে পারতো কিন্তু তিনি দিলেন না।তিনি চান ওরা দুজনে বাগানেই নাস্তা করবে,এই বুদ্ধি অবশ্য দাদাজানের।তিনি উসকানি দিয়েছে ওদের যত একান্তে রাখা যায় ততই ওদের জমবে ভাল একান্নবর্তী ওরিবারে নতুন বউ জামাইকে নিজেরা মিলেই আলাদা করে দিতে হয় কিছু সময়ের জন্য।নাহলে মেলামেশাটা ঠিক জমেনা।

পূর্ণতা মনে মনে ফারাজকে বকতে বকতে বাগানের দিকে যাচ্ছে,এর পেছনে কারণ হলো কাল রাতে পূর্ণতার অনেক কথা বলার ইচ্ছা ছিল,কিন্তু মাঝ পথে ফারাজের নাক দিয়ে বের হওয়া স্বল্প স্বরের ডাক তার সব আশায় পানি ঢেলে দিয়েছিল।ফারাজ সহজেই ঘুমিয়ে গেছে যেখানে ওর কাড়ি কাড়ি কথা জমে ছিল বলার জন্য।এমন বর কার পছন্দ?
কারোরই না।পূর্ণতার মেজাজ সে কারণেই গরম হয়ে আছে।তাও নিজেকে দমিয়ে বাগান অবধি পৌঁছালো সে।এসে দেখে ফারাজ চেয়ারে পায়ের উপর পা তুলে ডান হাতে বই রেখে পড়ছে।পূর্ণতা টেবিলে নাস্তা ঠাস করে রাখতেই নজরটা সে বই থেকে সরিয়ে পূর্ণতার দিকে তুললো।পূর্ণতা কিছু না বলেই গাল ফুলিয়ে রেখে খেতে বসে গেছে।

‘কি হলো?সকাল সকাল আগুনের লাভা ঝরছে কেন?’

‘কাল রাতে আমার কথা না শুনে ঘুমিয়ে গেছিলেন কেন?’

‘ওহ সেটা!ঘুম আসলে তো ঘুমাবোই।রাত আসেই তো ঘুমানোর জন্য’

‘নাহ,আমার কথা শুনার জন্য।সারাদিন কি হয় না হয় এইসব একজন স্ত্রী তার স্বামীকেই তো বলবে তাই না?আর কাকে বলবে?সেখানে আমার কথা না শুনে আপনি কি করলেন!নাক ডাকা শুরু করলেন!’
———-
লোকমান মিয়া মুড়ির বস্তা নিয়ে হাবিজাবি মেনশনের সামনে দিয়ে যাচ্ছিল,বাগানে ফারাজ আর পূর্ণাকে নাস্তা করতে দেখে দাঁড়িয়ে পড়ে অনেকক্ষণ দেখে বললেন,’পালিয়ে বিয়ে করলে এমনই হয়,বাগানেই নাস্তা করবার সুযোগ মেলে।ঘরে আর জায়গা পাইতোনা!হুহ!ঠিক হইছে”

মতিন সেসময় ফুলগাছে পানি দিচ্ছিল।লোকমান মিয়ার এরুপ মন্তব্য সে শুনে ফেলে বলে’আরে গাধা!সবাই মিলেই এদেরকে বাগানে নাস্তা করতে পাঠিয়েছে।এরা নিজ থেকে আসেনি”

‘ওহ তাই?আর তোমাদের সারথি আপা আর তার জামাইর কি খবর?শুনলাম রাতে নাকি রয়ে গেছে।ঘরজামাই রাখবে নাকি?’

‘সবসময় উল্টাপাল্টা ভাবেন কেন আপনি?আপনি তো মজা ভেজালের লোক!সারথি আপা সিঁড়ি থেকে পড়ে পায়ের হাল খারাপ করে ফেলছে বলে রাতে যেতে পারেনি।এখন যাবে’

‘এখন বুঝি দৌড়াইতে পারে?’

‘উফঃ!!আপনি এমন কেন??দৌড়াতে যাবে কি জন্য?হয়ত আনাফ ভাইয়ে কোলে করে নিয়ে যাবে। সব কিছুর একটা সমাধান থাকে’

‘তো কাল রাতে কোলে করে নিয়ে যেতে পারে নাই?কাল এই বাড়িতে থাকলো কেন?’

‘এই বাড়িতে বাসর ভাল হবে বলে।হইছে?আর কিছু জানতে চান?
কি আজব লোক রে বাবা!সব কিছু নিয়ে তার সমস্যা, সব কিছুতে তার দোষ খুঁজতে হবে।আপনার দোকান চলে কিভাবে বলুন তো?সারাদিন টইটই করে যে ঘুরে বেড়ান,দেশ বিদেশের খবর রাখেন।দোকানটা চলে কিভাবে?’

লোকমান মিয়া বস্তা নিচে রেখে বাউন্ডারিতে হাত রেখে বলে,’তবে শুনো,সকলে আমার দোকানে এসে চায়ের অর্ডার দিলে আমি শুরু করি সকল বাড়ির খবরাখবর। তখন চায়ের পর চা শেষ হয়,বিসকুট শেষ হয়।তাদের জানার শেষ হয়না আমারও বলার শেষ হয়না।এবার বলো লাভ টা কিসে হয়?’

মতিন নিজের কপালে নিজে একটা বাড়ি দিয়ে দিলো লোকমানের কথা শুনে।

“হুশের পাগল হলে এমন হয় আর কি।”

‘এটার ঠিক মানে বুঝলাম না।হুশের পাগল মানে কি?’

‘মানে আপনি যে পাগল এটা আপনি জানেন এবং বোঝেন কিন্তু তাও আপনি একটা পাগল’
——-
সারথির ঘুম ভেঙ্গেছে দশটার দিকে।সে জানেই না এখন কয়টা বাজে।উঠে বালিশের পাশে হাতিয়ে বুঝে নিলো রুমে কেউ নেই।তবে গেলো কই?কয়টা বাজে এখন?এসবই ভাবছিল সেসময় পূর্ণতার গলার আওয়াজ শুনে নড়চড়ে বসলো সে।

‘কি গো নতুন বউ।সকাল হয়েছে?’

‘কয়টা বাজে পূর্না?’

‘সেকি জানোনা?বেলা বারোটা বাজে গো’

সারথি নাথায় হাত দিয়ে বলে,’কি বলছো!এত ঘুমালাম?’

‘হুম।তোমার বর তো তোমায় ফেলে চলে গেছে।বলেছে বউ আমার এত ঘুমালে তো চলবেনা,ওর ওঠা অবধি অপেক্ষা করলে হাসপাতালও যাবে সাথে মানইজ্জত ও’

সারথি মন খারাপ করে বললো,’চলে গেলেন?রাগ করেছে কেমন?’

‘হুম।অনেক রাগ করেছে’

তখনই পেছন থেকে ফারাজ এসে পূর্ণতার কান টেনে ধরে বললো,,’সারথি ওর কথা বিশ্বাস করবানা।হুদাই তোমায় ভয় দেখাতে এসেছে।এসব কিছুই হয়নি।আনাফ ভাই বাগানে বছে।ভেবোনা’

সারথি দম ফেললো স্বস্তির।পূর্ণতা রেগে কটমট করে বললো’একটু মজাও করতে দেবেন না?আপনার কি দরকার ছিল এখন আসার?আজিব লোক!আমি যেখাণেই যাই না কেন উনাকেও সেখানে আসতে হবে।’

‘ভেজাল করে যে বেড়াচ্ছেন তাতে কার কি লাভ হচ্ছে?’

‘কারোর লাভ নাহলেও আমার পৈশাচিক আনন্দ হচ্ছে’

‘এমন করে ভেজাল হতে দিব না আমি।চলেন এখন আমার সাথে’

‘রুমে আনাফ ভাই থাকলেও আসতে দেন না।না থাকলেও আসতে দেন না।আপনার কি ভয় হয় আমি সারথি আপুর থেকে আমার কোনো গোপন তথ্য জেনে যাব কিনা সেটা নিয়ে?’

‘মোটেও না’
———
আনাফ বাগান থেকে সোজা সারথির কাছেই আসছিল,তখন তার ফোনে একটা কল আসে, ইমারজেন্সিতে তাকে
হাসপাতাল যেতে হবে একজন গুরুতর রোগী এসেছে তাই।আনাফ দ্রুত সারথির কাছে এসে নিজের মানিব্যাগটা বালিশের তলা থেকে বের করে পকেটে পুরে বললো,’সারথি আমায় হাসপাতাল যেতে হবে রোগী এসেছে।অবস্থা খারাপ রোগীর।নাহলে আরেকজনকে হ্যান্ড ওভার করে দেয়া যেতো।আমাকেই প্রয়োজন। তুমি রাগ করোনা,আমি রাত এগারোটায় এসে তোমায় নিয়ে যাব বাসায়,তৈরি থেকো’

কথাগুলো দ্রুত বলে আনাফ চলে গেছে।সারথি আগেরমতন বিছানাতে বসা ছিল।বিয়ের পরের দিনটা এমন যবে তা ভাবেনি সারথি।তাও মেনে নিয়েছে হাসিখুশি।কারণ সে তো আগে থেকেই জানে আনাফ এমন হুটহাট হাসপাতালের দিকে দৌড় দেবে।
আনাফ যেতে যেতে এটাই ভেবে নিয়েছে সারথি আর যাই হোক অন্তত পরিস্থিতি বুঝবে।তাকে আর আলাদা সময় নিয়ে বোঝানোর দরকার নাই।
সারথি নিজে নিজে বিছানা থেকে উঠতে পারলেও ওয়াশরুম অবধি যাওয়ার সাহস তুলতে পারেনি।আনাফ ও নেই যে ধপ করে পড়লে এসে তুলবে।আশেপাশেও কেউ নেই।সবাই মনে হয় নিচ তলায়।
দেয়াল ধরে এক পা অনেক কষ্টে ফেলেছে সে।মনে হলো পরেরটাও পারবে।
ঠিক তাই হলো।সাহস করে পরের কদন ফেলতে পেরেছে সে।তার খুশি আর ধরে কই। তার মানে পা সেরে আসছে।
——–
আনাফের আজ এগারোটার জায়গায় ১টা বেজে গেলো।রোগীর অপারেশন করার পর তার অবস্থার অবনতি ঘটায় তাকে নিয়ে আনাফের আরও তোড়ঘোর করতে হয়েছিল,যার কারণে হয়ে গেছে অনেক রাত।সারথি অনেক অপেক্ষায় ছিল আনাফের।ভয়ে ফোন করেনি ডিস্টার্ব হবে বলে।সজীবের অফিস টাইমে কল করলে ও রাগ দেখাতো।আনাফকেও সেরকম ভেবে সারথি একটিবার ও কল করেনি।শুধু প্রহর গুনছিল ওর আসার।
আনাফ যে এত দেরি করবে তা ভাবেনি সারথি,ভাবনার বাহিরে হলো সব ।কিছুক্ষণ আগেও জেগে ছিল সে।কিন্ত ঘুমের নেশার সাথে শেষ অবধি আর পারোনি।ঘুমিয়েই পড়েছে।আনাফকে মতিন দরজায় খুলে দিয়েছিল,দিয়েই বলেছে খো
খেতে বসতে।আনাফ খাওয়া দাওয়া বাদ দিয়ে আগে ছুটেছে সারথির রুমের দিকে।
ধীরে দরজা খুলে সে সারথিকে ঘুমন্ত দেখে তার বুকটা যেন জ্বলে উঠলো।সারথি কি এটাই আশা করেছিল তার থেকে!নিশ্চয় অপেক্ষাতে ছিল কখন সে আসবে এই ভেবে,আনাফের ভীষণ খারাপ লাগলো।
সারথিকে জাগানো উচিত না,এদিকে ওর অভিমান টাকে দূর না করলে আনাফের নিজেরই ঘুম হবেনা।
অনেক ভেবেচিন্তে সে গিয়ে আগে ফেশ হয়ে আসলো।সারথি অন্যপাশ হয়ে ঘুমায় এখন।
আনাফ ওর পাশে বসে কয়েক মিনিট ধরে ভেবেছে ওকে জাগাবে নাকি জাগাবেনা।পরে ঠিক করলো জাগাবেনা।সকালেই রাগ ভাঙ্গানো যাবে।

জানালার কাছে এসে পর্দাটাকে সরিয়ে পকেটে হাত ঢুকিয়ে আনাফ দীর্ঘশ্বাস নেয়।সারথিকে খুব বেশি সময় দেয়ার ইচ্ছা ছিল তার, অন্তত বিয়ের পরের সময়টা থেকে।
আজকেই এরকম ব্যস্ততা শোভা পায়নি।
‘আমিও ইচ্ছে করে করিনি আর রোগী তো আর ইচ্ছা করে আসেনি।তাও খারাপ লাগছে আজকের দিনটায় কেন সব হতে গেলো”

জানালায় এক হাত রেখে রাতের কালো আকাশ দেখছিল আনাফ,তখনই তার বাম হাত স্পর্শ করে দাঁড়ায় সারথি।আনাফ শুরুতে মনের ভুল মনে করে থাকলেও সারথির স্পর্শ তার মনের ভুলটাকে সত্যিতে পরিণত করে দেয়।আনাফ অবাক হয়ে জানতে চায় সে কি করে এখানে আসলো আর সে জানেই বা কি করে যে ও এখানে দাঁড়িয়ে আছে।
উত্তরে সারথি কিছুই বলেনা।আনাফের হাতটা ধরে রেখে সে জানালার বাতাস খাচ্ছে।আনাফ আলতো করে ওকে গায়ের সাথে লাগিয়ে ধরে বলে,’আমার একটা প্রশ্নের জবাব দেবে?’

‘হুম’

‘আমি তোমায় যতটুকু চিনেছি সেই প্রেক্ষিতেই বলছি। তুমি আমার উপর রাগ করেছো তাই না?’

‘হ্যাঁ।তবে সামান্য’

‘সেটার কারণ আমার আজকের দিনটা তোমার পাশে না থাকা?’

‘নাহ,দেরি করে আসা।কথা ছিল এগারোটায় আসবেন’

‘বুঝতে পারিনি এত দেরি হয়ে যাবে।আমি নিজেই কষ্ট পাচ্ছি।রাগ করোনা সারথি,আমি নিরুপায়”

‘রাগ সামান্য ছিল।কবেই চলে গেছে।আপনি তো ভাল কাজে দেরি করেছেন।রাগ করবো কেন!’

আনাফও সারথির ঘাড়ে হাত রেখে বললো,’আমি চাইবোনা তোমায় সেসব পরিস্থিতির সম্মুখীন করতে যেগুলো সজীব করেছিল।আমি ওর চেয়ে বেস্ট হয়ে দেখাতে চাই”
———
দেয়ালে কান লাগিয়ে পূর্ণা শুনার চেষ্টা চালাচ্ছে আনাফ সারথি কি কথা বলে।ফারাজ নিজের একটা ছবি আঁকায় এতক্ষণ ব্যস্ত ছিল।আঁকা শেষে রঙতুলি সাইডে রেখেমাথা তুলে তাকাতেই সে দেখে পূর্ণতার কান্ড।
একটা মানুষকে বিয়ে না করলে জানা যাবেনা সে মানুষটা দিনে রাতে কেমন!
এটাই কি সেই পূর্ণতা?বেনি দুলিয়ে ভদ্র মেয়ের মতন ঘুরে বেড়াতো।এই সেই পূর্ণতা?যে এখন দেয়ালে কান লাগিয়ে ননদ আর ননদের জামাইর কথা শুনতে প্রাণপণ চেষ্টা চালাচ্ছে?’

পূর্ণতা কোনো কথা না শুনতে পেয়ে বিরক্ত হয়ে পেছনে তাকাতেই দেখে ফারাজ হাতে স্কেল নিয়প ওর দিকে চেয়ে আছে গাল ফুলিয়ে।

‘হেহে!!মশা মশা।দেয়ালে মশা বসে ছিল।আপনি জানেন দেয়ালের মশারা একটু ভিন্ন।বলতে গেলো মদখোর মশা।
মদখোর মশা মানে হলো ওরা মানুষের চামড়া রেখে দেয়ালে বসে থাকে।তারা ভাবে পুরা দেয়ালটাই একটা চামড়া।তাই ওরা হলো মদখোর মশা।🙄🐸’

চলবে♥