#তুই_আমার_কাব্য 🍂
#Writer: Anha Ahmed
#Part: 42
.
🍁
.
আহা কি আনন্দ আকাশে বাতাসে!
বারে বারে ফোনে দেয় সে
কি যে মজা এ জ্বালাতনে..
আহা কি আনন্দ কাব্যকে পেরেশান করেএএএএ
তেমন কিছু না। মেঘলার মনের মাঝে খুশির তাতা থৈ থৈ করছে তারই বর্হিপ্রকাশ কেবল মাত্র। রেস্টুরেন্টের সিটে বসে আছে। টেবিলে হাত রেখে তার উপর মাথা ভর করে রেখে এক পরম আনন্দে বাঁকা হয়ে বসে আছে। পা টা ওঠিয়ে ছিটে ভাজ করে আছে। দেখে যে কারো মনে হবে পৈতৃক সূত্রে পাওয়া মেঘলার ব্যক্তিগত রেস্টুরেন্ট। সামনে ফোনটা সযত্নে রাখা আছে যেটাতে কাব্য ক্রমাগত ফোন করে যাচ্ছে। আর মেঘলা দেখে গান গাচ্ছে। আশে পাশে একদমই মানুষ নেই যার জন্য মেঘলার এই পৈশাচিক আরাম একটু বেশি আর তার কারণ দুই বান্ধবী একটি প্রাইভেট কাপল কেবিন বুক করে বসে আছে। এক্ষেত্রে মেঘলা এক দুর্দান্ত বক্তব্য প্রেরণ করেছে। তা হলো,
– আচ্ছা তনু! আমরা সব সময় কেনো প্রাইভেট কাপল কেবিন বি এফ এর সাথেই বুক করি? কাপল মানেে কি শুধু হাসবেন্ড ওয়াইফ? বয়ফ্রেন্ড গার্লফ্রেন্ড? একদমই না। মেয়ে মেয়ে, ছেলে ছেলেও কাপল হয় তাই না? আমার মতে ওই জাতীয় কাপলদের থেকে ফ্রেন্ডজাতীয় বিশেষ করে বেষ্টফ্রেন্ড জাতীয় কাপলদের জন্য এ প্রকারের প্রাইভেট কেবিন বেশ দরকার। কেননা আমাদের মাঝে অনেক বড় বড় ও সাংঘাতিক আলোচনা, প্ল্যান ও রহস্য লুকানো থাকে। যা প্রকাশ্যে এলে আমাদের আশ্রমে প্রেরন করা হবে। আর এসব দরকারী আলোচনার জন্য বাসা তো একদমই সেইফ না। এরকম জায়গাই বেশি প্রয়োজন। তাই না?
মেঘলার এ বক্তব্যে কিছুটা যুক্তি খুঁজে পেয়ে তনুও এক মত প্রকাশ করলো।
সফট একটা গান বাজছে। তনু পরিবেশটা বেশ উপভোগ করছে। তার অবস্থান মেঘলার মতই। ভিন্নতা শুধুমাত্র তনু কোল্ড কফি খাওয়াতে। এদের না দেখলে বোঝাই অসম্ভব কি পরিমাণ চিল মুডে আছে। কিন্তু একটু বিরক্ত কাজ করলো তনুর মাঝে মেঘলার মুখে উদ্ভট গানটা শুনে। চোখটা ধীর গতিতে মেঘলার দিকে তুলে কফির পাইপটা মুখে রেখেই তনু বললো,
– এতো সুন্দর গানটাকে তেরোটা বাজানোর কি খুবই দরকার ছিলো? গাইতে ইচ্ছে করছে সঠিক লিরিক্সে ভালো করে গা।
– আরে পাগলি তুই কি বুঝবি আমার আনন্দ? হা হা প্রতিশোধ নিতে সক্ষম হচ্ছি আমি। এতো সুখ আমি কোথায় রাখবো?
– আমার ব্যগে অনেক জায়গা আছে। রাখবি?
– ব্যাপারটা কি বল তো? হিংসে হচ্ছে আমার সুখ দেখে? সুখি হতে চাও আমার মতো?
– বহুত সুখি আছি। তোর মতো সুখি হওয়ার ইচ্ছে নেই। টেনশনে আমি বাঁচি না আর তুই আসছিস সুখ নিয়ে৷।
– তোর মাথার চুল থেকে শুরু করে পায়ের নখের কোথাও তো টেনশন দেখছি না কোথাও।
– আছে আছে। মনের ভেতর।
– টেনশন না প্রেম?
– কিসের সাথে কি বলিস?
– আরে চিল মারছিস মার না! খামোখা মাঝখান থেকে প্যারা নিস কেনো? কিছু বলছে তোকে? নিয়ে আসছি তো কোনো ঝামেলা ছাড়া। আর আবির ভাইয়া ওইরকম ছেলে না যে মেয়েদের সাথে মিস বিহেভ করবে।
– তুই জানিস না কিছু। প্রথমে ওনার চোখগুলো দেখছিস? বাবাহ্! সে কি ক্ষুব্ধ! আর হাতের রগ গুলো ফুলে ওঠেছিলো। খেয়েই ফেলতো পারলে।।
– এতো ভেতরে লক্ষ করেছিস?
– হুম! আরো একটা জিনিস করেছি
– কি?
– ওনার কি সুন্দর চাপ দাড়ি হয়েছে দেখেছিস? ওফ্! পাকিস্তানি নায়কদের মতো। বিরহে সুন্দর হয়ে গেছেন ওনি..
– আরো কোনো দেশের নায়ক বাদ আছে যার উপর নজর নাই তোর?
– আছে! জাপানিজ। সুন্দর না একদমই। বাই দা ওয়ে আবির ভাইয়া এতোদিন কোথায় ছিলো রে?
– জানি না রে। অনেক ট্রাই করেছিলাম ফোনে। পাই নি।
– তোর কাছে নাম্বার আছে?
– অবশ্যই। এইটা আবার জিজ্ঞাসা করার মতো কি?
– হে হে। দিবি? একটু ওনারে জ্বালাই..
মেঘলা প্রথমে আড়চোখে সরু করে তাকিয়ে তারপর হেসে দিয়ে বলে,
– এতো ভালো আইডিয়া তোর মাথায় কি করে আসলো? নে তোল নাম্বার তাড়াতাড়ি… তোর নাম্বার থেকে দে।
ফ্রেন্ডজোনে বসে আড্ডায় মজেছে আবির। বেশ কিছুদিন পর ভার্সিটি আশায় বন্ধুদের সাথে লম্বা আড্ডা জমেছে। তারই মধ্যে হঠাৎ করে ফোন বেজে ওঠেছে। এ সময়ে সচরাচর কোনো ফোন আসে না আবিরের প্রয়োজনীয় ছাড়া। বিলম্ব না করে ফোনটা ধরে একটু সরে আসলো। অত্যন্ত নম্র স্বরে সালাম দিতে দিতে ওপাশ থেকে উত্তর আসলো,
– বেবিইইইই! কাহা হো তুম? কেছে হো তুম?
অপ্রিতীকর কথা শুনে আবির বেশ বিব্রত হয়ে উত্তর দিলো,
– আপনি হয়তো ভুল নাম্বারে কল দিয়েছেন। দয়া করে নাম্বারটা আরেকবার চেক করে নিন।
– না না! একদমই ভুল না। একশ পার্সেন্ট সঠিক নাম্বার জানেমান!
– আপনি কি আমার সাথে ফাইজলামি করার জন্য ফোন দিয়েছেন?
– তা কেনো? আমি খুবই দরকারি কাজে তোমায় কল দিয়েছি জান।
– স্টপ দিস ননসেন্স! আর একবার ফোন আসলে পুলিশে আপনার নামে কেইস করে আসবো আমি।
– আমাকে চিনলে তো করবে কেইস। শুনো না! খুবই খুবই খুবই প্রয়োজনীয় কাজে তোমায় ফোন দিয়েছি । বলতে পারো এর থেকে প্রয়োজনীয় কাজ আর নেই।
– কি কাজ দ্রুত বলুন।
– কিভাবে যে বলবো? লজ্জা লাগছে।
– আপনি লজ্জা পেতে থাকেন। আজাইরা লজ্জার জন্য এতো সময় নিয়ে আমি ঘুরে বেড়াই না। অদ্ভুত! আপনারা উদ্ভব হন কোথায় থেকে বুঝি না। ডিজগাস্টিং পিপল!
রেগেমেগে কল কেটে দিলো আবির। আর এদিকে দুজনে হেসেই অজ্ঞান। হাসতে হাসতে একজন আরেকজনের উপর ঢলে পড়ছে।
ক্লান্ত শরীর নিয়ে দুজনেই বসে বসে জুসের খেয়ে যাচ্ছে। তখনিই একজন ওয়েটার এসে জানালো ওরা বেশ অনেকক্ষণ যাবৎ বসে আছে। একজন কাপল এতো সময় একটা কেবিন দখল করে রাখার নিয়ম নেই। মেঘলা সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে সরু সরু চোখে বলে,
– আপনার কি আমাদের দেখে মনে হচ্ছে আমরা প্রেম করছি? অবৈধ চোরাচালান করছি? ড্রাগস বিক্রি করছি? করছি না তো। তাহলে আমরা থাকতে পারবো না কেনো? লাঞ্চ করে তারপর আবার গল্প করবো তারপর যাবো।
– কিন্তু ম্যম! আপনারা দশটা থেকে বসে আছেন। এখন সময় একটা বেজে পাঁচ মিনিট । তিন ঘন্টা হয়ে গেছে। এতো সময় থাকার নিয়ম নেই।
– আরে লাঞ্চ করবো না? না খেয়েই কি চলে যাবো? এইটা কি ধরনের সার্ভিস হ্যা? ম্যানেজারকে ডাকুন।
– ম্যম ম্যম! উত্তেজিত হবেন না। আচ্ছা আমি মেনু কার্ড আনছি।
লোকটা চলে যাওয়ার পর মেঘলা গম্ভীর মুখে দাঁড়িয়ে থেকে তনুর দিকে তাকিয়েই ফিক করে হেসে দিলো। দুই জনে হাই ফাইভ দিয়ে আবারো হাসিতে ফেটে পড়লো।
কিছুক্ষণের মধ্যেই লোকটা মেনু কার্ড এনে মেঘলার সামনে রেখে দিলো। খাবার অর্ডার করে ড্রিংকস অর্ডার করতে গিয়ে একটা একি ভিন্ন প্রকৃতির ডিংকস দেখে কৌতুহল হলো বেশ। ওয়েটারকে উদ্দেশ্য করে বললো,
– এইটা কি ড্রিংকস?
– ইয়েস ম্যম! আমাদের স্পেশাল হার্ড ড্রিংকস্।
– গিভ মি দিস
– আর ইউ সিউর ম্যম?
– অফ কোর্স! ড্রিংকসে আবার ভাব্বার কি আছে?
– ওকে ম্যম
খাওয়া দাওয়া শেষ করে ড্রিংকস সার্ভ করে ওয়েটার চলে গেলো। কেবলই একবার মুখে দিয়ে বেশ অন্যরকম লাগলো স্বাদটা। তনু আইসক্রিম খাওয়ায় ব্যস্ত তাই ড্রিংকসে ইন্টারেস্ট দেখালো না। আরো একবার মুখে দিতেই পেছন থেকে একটা গলার স্বর কানে আসলো মেঘলার,
– সুইটহার্ট!
তনু হা আইসক্রিমের চামচটা মুখে রেখেই চোখ বড় বড় করে একবার দরজার দিকে আরেকবার মেঘলার দিকে তাকালো। মেঘলা পাশ ফিরে তাকাতেই সাথে সাথে তনুর দিকে করুন দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে,
– দোস্ত! আমার ব্যক গ্রাউন্ডে ‘ জোরকা ঝাটকা ‘ গানটা বাজছে কেনো রে?
তনু কাব্যর দিকে তাকাতেই কাব্য ইশারায় তনুকে চলে যেতে বলে। তনু একটা মেকি হাসি দিয়ে মেঘলার দিকে তাকিয়ে মানে মানে কেটে পড়ে। আর মেঘলা বিরবির করে বলতে থাকতে,
– চলে গেলো নিকাম্মা আমাকে ফাসিয়ে দিয়ে। একা রেখে চলে গেলো। এ যাত্রায় বেঁচে গেলে তোকে কালকে কেউ আমার থেকে বাঁচাতে পারবে না। মেরে খুন করে তক্তা বানিয়ে সেইটা দিয়ে আবার সোফা বানিয়ে বসে তার ওপর লাফাবো।
আড় চোখে তাকিয়ে দেখছে কাব্য এখনো দরজার কাছে সটান দাঁড়িয়ে গম্ভীর মুখে দাঁড়িয়ে আছে। কাব্যর চোখে চোখ পড়তেই একটা মেকি হাসি দিয়ো পরক্ষণেই কাঁদো কাঁদে করে পুরো ড্রিংকসটা এক সাথে খেয়ে ওঠে। একসাথে মুখে দিয়ে মুখ কুচকে ফেলে একদম। ভয়ে গলা শুকিয়ে আসছে। ড্রিংকসেও কাজ হলো না। আলাদা একটা গ্লাসে বরফ পানি ছিলো। ঢকঢক করে সেগুলোও গিলে নিলো।
কাব্য নিরবে শুধু দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখছে। কিছুক্ষণ পর মেঘলার কাছে গিয়ে বসতেই মেঘলা কোণায় সরে বসে। প্রাণপাখি খাঁচায় বন্ধি তার। সুযোগ খুঁজছে শুধু। সুযোগ পেলেই উড়াল দেবে। না হলে শিকারির হাতে পড়লে ইন্না-লিল্লাহ!
মেঘলা কিছুক্ষণ ড্যব ড্যা করে তাকিয়ে থেকে হঠাৎ করেই কান্না করর ওঠে বলে,
– আপনি ওভাবে ঘুরছেন কেনো? আপনি দুইটা পাঁচটা হয়ে যাচ্ছেন কেনো? কোনটা আসল আপনি? এতোগুলো আপনি কেনো? একটা আপনির প্যারায় আমি আমসত্ত্ব এতোগুলো তো আমাকে পিঠে বানায়ে দেবে। আমি একটা কাব্য আপনিকেই চাই।
মেঘলার এমন আজব রিয়েকশনে কাব্য বোকা বনে গেলো। মেঘলার দিকে হাত বাড়াতেই মেগলা আবার চিৎকার করে ওঠে বললো,
– এতো গুলো হাত! আ আ আমি মরে গেলাম। আমাকে বাঁচাও। আমাকে মেরে ফেলবে। ভুতের হাত। জ্বীনের হাত।
– চুপ! শাট আপ! আর একটা কথা মুখ থেকে বের হবে তো এই তিন তালা থেকে নিচে ফালায়ে দেবো। ফাইজলামির একটা লিমিট থাকে। এগুলো কি শুরু করছো? এরকম করলেই যদি ভাবো তুমি রেহাই পাবে তাহলে একদমই ভুল ভাবছো। আর এসব করে তোমার আর আমার দুজনেরই সময় অপচয় করছো।
মেঘলা কাব্যর ধমকে একদম চুপ করে যায়। শুধু তাকিয়ে আছে।
কাব্যর প্রথমে মনে হলো মেঘলা শয়তানি করছে। কিন্তু লক্ষ করছে বিহেভিয়ারটা একটু বেশিই অন্যরকম। এক টান দিয়ে কাছে আনতেই বুঝতে পারলো মেঘলা ড্রিংকস করেছে। পাশে থাকা গ্লাসটা চেক করে আরো সিউর হয়ে হতাশা চোখে মেঘলার দিকে তাকালো।
একজন ওয়েটারকে ঢেকে বিল পেমেন্ট করে। ওয়েটারকে ড্রিংকসের ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করতেই সে বলে সে জানিয়েছে এইটা একটা হার্ড ড্রিংকস। তবুও মেঘলা খেলো! নাকি সে বুঝেই নি ?
কাব্য মেঘলার দিকে তাকিয়ে দেখে মেঘলা তার বাহুতে মাথা রেখে জামার ওড়না ছিঁড়ছে আর ফুপিয়ে কাঁদছে। মেঘলাকে সামনে বসিয়ে ওর মুখের দিকে তাকাতেই খুব মায়া হলো। একদম বাচ্চাদের মতো মুখোভাব। নাকের দগা লাল হয়ে আছে, চোখে ছলছল পানি। ঠোঁটটা ফুলিয়ে রেখেছ। রাগি মুডে দুই হাত শক্ত করে ধরে মেঘলাকে জিজ্ঞাসা করে,
– ড্রিংকস করেছো কেনো? জানো না এগুল খারাপ?
মেঘলা ফুপিয়ে ফুপিয়ে নাক টেনে টেনেই উত্তর দিলো,
– আ আআআ মি ভালোতা বলললছিলাম। ও ও ওরাই তো প পচাঁটা দিলো। সব পাঁচটা পাঁচটা ললাগতেছ এ এখন।
– এরজন্য কান্না করছেতো?
– ন না না
– তাহলে?
– আ আ আমার খ খখাটাশ জামাই মারর মারর মারছে আমাকে।
– মেরেছে? মানে আমি মেরেছ? কখন? মিথ্যা কথা বলবে না একদম।
উত্তর না দিয়েই আবার কান্না শুরু করে দিলো। কাব্যর ইচ্ছে করছে ইচ্ছে মতো বকতে কিন্তু মেঘলার মুখের দিকে তাকিয়ে বকতে পারলো না আর। ছোট্ট একটা হাসি দিয়ে কপালে চুমু দিলো। সাথে সাথে মেঘলা কান্না থামিয়ে দু হাত দিয়ে মুখ ঢেকে নিলো। মেঘলার লজ্জা দেখে কাব্য নিরবে হেসে ওঠে।
চলবে…. ❤