তুই আমার কাব্য পর্ব-৪৬+৪৭+৪৮

0
1672

#তুই_আমার_কাব্য 🍂

#Writer: Anha Ahmed
#Part: 46 + 47 + 48
.
🍁
.

বন্ধ হয়ে থাকা এক রুম। চারপাশটা অন্ধকার। লাইটগুলোও জ্বলছে না। মনে হয় না দু এক বছরেরও এ রুম ব্যবহার করা হয়েছে। খুলে দেওয়া জানালা গুলো দিয়ে যেটুকু আলো আসছে সেটুকুই দিয়ে রুম আলোকিত হয়েছে। এক ইঞ্চি পরিমাণ ধুলো পড়ে গেছে বেঞ্চে। এরকমই এক এক ধুলো পড়া বেঞ্চের পাশে ঠাঁই দাঁড়িয়ে আছে মেঘলা। সামনের এক চেয়ারে তনু আর মেঘলার বরাবর গম্ভীর মুখে দাঁড়ানো আবির। তনুর দিকে
বিক্ষুব্ধ দৃষ্টি আর আবিরের দিকে অসহায় নিরীহ প্রাণীর দৃষ্টি। মাঝখানে আবির দুজনের উপরেই সর্বোচ্চ মাত্রায় রেগে আছে। কাকে কতটুকু দোষারোপ করা উচিৎ তারই গণণা চলছে। আপাত দৃষ্টিতে কেউ এদের দেখলে এই মূহুর্তে বোবা বোলেই সম্বোধন করবে। কেননা এরা শুধুমাত্র তাকিয়ে আছে একে অপরের দিকে। একটা বুলিও বের হচ্ছে না। কথা বলতে পারে কি না অথবা ভুলেই গেছে এ বিষয়ে যাচাই করার প্রয়োজনও পড়তে পারে। এই রকম নিরবতার বিচ্ছিন্ন ঘটলো অবশেষে মেঘলার হাঁচিতে। ক্রমাগত হাঁচি দিতে দিতে রীতিমতো চোখ দিয়ে পানিও বের হয়ে গেছে। আবির উদ্বিগ্ন হয়ে ছুটে এলেও সাথে সাথে নিজেকে সমঝোত করে পকেট থেকে রুমাল বের করে ঠান্ডা কন্ঠে বলে,

– বাহিরে যাও। ধুলোবালি প্রচুর। ঠান্ডা লাগবে।

মেঘলা চোখ ঘুরিয়ে তনুর দিকে তাকাচ্ছে। বেচারি তনু চোখ দিয়ে হাজার মিনতি করছে একা ছেড়ে না যাওয়ার জন্য। মেঘলা যেতেও পারছে না আবার থাকলেও সমস্যা হচ্ছে। মাথা নিচু করে ভাবছে কি করা যায়। ধীর গতিতে মাথাটা তুলে অপরাধী চোখে আবিরের দিকে তাকিয়ে জোড়পূর্বক হাসি হাসি মুখ করে বললো,

– ভাইয়া সরি! আর হবে না এমন। না আমার হবে আর না তনুর। আমি গ্যারান্টি দিচ্ছি তনু আপনার থেকে দশ মাইল দুরে থাকবে। আর আমিও জীবনে আর ওভাবে চিল্লাবো না। একজন আরেকজনের উপর পড়ে থাকলেও চিল্লাবো না।

মেঘলার কথা শুনে আবিরে ভ্রু কুচকে বিচলিত চোখে মেঘলার দিকে৷ তাকালো। মেঘলা ব্যাপারটা খেয়াল করে সামান্য কেশে নিয়ে বলে,

– না মানে আমি আসলে ওরকম কিছু বোঝাতে চাই নি। অন্ধকার রুমে পেছন থেকে ওভাবে দেখ ভুলভাল চিন্তা কাজ করছিলো। আর আপনাদের এইভাবে দেখবো তাও কস্মিনকালেও ভাবি নি। হঠাৎ দেখে আপনাআপনি চিৎকার দিয়ে দিয়েছিলা। এতে আমার কি দোষ বলুন?

– হুম বুঝলাম, মানলাম তুমি দোষী নও। তাই তুমি বাহিরে চলে যাও। আচ্ছা চলো একসাথেই বের হই৷

– তনু??

– ও এখানেই থাকবে, একা।

– এইবারের মতো ছেড়ে দিন প্লিজ।

– এতো প্রেম থাকলে তুমিও থেকে যাও।

– আব না না। কারোই থাকার দরকার নেই। সবাই বেরিয়ে যাই।

– বেরোবে না। এখানেই কলেজ শেষ হওয়ার আগ পর্যন্ত থাকবে। প্রথম দিন কিছু বলি নি। ভুল বসত হয়েছে তাই কিছু বলি নি। কিন্তু ইচ্ছাকৃত করলে সেটাকে তো ছেড়ে দেওয়া যায় না।

– আর করবে না। আমি গ্যারান্টি দিয়ে নিয়ে যাচ্ছি তো৷ আর জীবনেও সামনে আসবে না, আর জীবনেও কল দেবে না। প্লিজ প্লিজ প্লিজ। খালামনিইইই।

– স্টপ। এখানে আম্মুকে ডাকছো কেনো? শুনছে তোমার ডাক? বাহিরের স্টুডেন্ট শুনে ক্লাসে ঢুকে আসবে।

– তাহলে ছেড়ে দিন ওকে। না হলে আরো জোড়ে জোড় করে কান্না করবো।

– বাচ্চাদের মতো বিহেভ করছো কেনো?

তখনই তনু পাশ থেকে বলে,

– একসাথে চিল্লাবো। আর বলবো আপনি আটকে রেখেছেন।

আবির তনুর দিকে ঘুরতেই তনু চুপ হয়ে গেলো। রাগি ঝাঁঝালো কন্ঠে আবির ধমকে ওঠে,

– অন্যায় করে গলাবাজি করা তো কেউ তোমার কাছে থেকে শিখে। কতটা লজ্জা জনক পরিস্থিতিতে ফেলেছিলে কাল তার কোনো ধারণা আছে?

– আমি ফেলি নি তো। আমি তো কল দেয় নি।

– সিরিয়াসলি? এখনো অস্বীকার করছো কিভাবে? তোমার বান্ধবী নিজেও কেবল স্বীকার করলো।

মেঘলা চোখ বড় বড় করে চোখ বন্ধ করে নিলো। আর তনু রাগে গটগট করে তাকিয়ে আছে। তনুর ইচ্ছে করছে মেঘলাকে ভর্তা বানায়ে দশ টাকা দরে প্যাকেটে বিক্রি করে দিতে। বাঁধা শুধুমাত্র আবির।

আবির সোজা মেঘলার দিকে মুখ করে দাঁড়িয়ে বলে,

– ধন্যবাদ বান্ধবীর হয়ে স্বীকার করার জন্য। এতোক্ষণ যাবৎ ও তো স্বীকারই করছিলো না। তুমি স্বীকার করে উপকার করলে। ট্রু ফেন্ডশিপ। আর যতদুর মনে হচ্ছে নাম্বাটাও তোমার থেকেও পেয়েছে। এম আই রাইট?

– না তো! আমি তো দেই নি? আমি কেনো দেবো? পেয়েছে হয়তো কোথায় থেকে। তাই না রে?

তনু এখনো একইভাবে রাগি চোখে শুধু তাকিয়ে আছে। মেঘলা একবার তাকিয়ে সাথে সাথে চোখ ফিরিয়ে নিয়ে আবিরের উদ্দেশ্য বলে,

– ভাইয়া! আজকে না তাড়াতাড়ি বাসায় যেতে হবে। আম্মুর প্রেসারটা ফল করেছে। দু একটা ক্লাস করেই চলে যাবো। এখন এভাবে আটকে রাখলে কিভাবে যাবো বলেন? ছেড়ে দিন না এবারের মতো। প্লিজ প্লিজ প্লিজ। প্লিইইইইইইইইজ।

– অন্যকোনো পদ্ধতি অবলম্বন করলেই হতো। আন্টির সাথে সকালর আম্মুর কথা হয়েছে এবং ওনি সম্পূর্ণ সুস্থ।

– আববববব্ মানে

– আউট.. দুজনেই বের হও এক্ষুনি। পাঁচ সেকেন্ডের মধ্যে।

আবিরের কথায় খুশিতে দ্রুত তনুর হাত ধরে টেনে বাহিরে নিয়ে যায়।

ক্যাফের চেয়ারে গিয়ে ক্লান্ত শরীর এলিয়ে বসে পড়ে মেঘলা। সামনে তনু। মেঘলা হট কফি ও তনুর জন্য কোল্ড কফি অর্ডার দিয়ে তনুকে জিজ্ঞেস করে,

– এবার বল কাহিনী কি? পুরা কাহিনি বলবি।

– ধুর! কি বলবো আর? এভাবে কেস খাবো বুঝতেই পারি নি। গত তিনদিন ঘন ঘন ফোন দিয়েছি। কিন্তু বিশ্বাস কর বেশিক্ষণ কথা বলি নি। দুই এক মিনিট বলেই কেটে দিতাম। রুমাল দিয়ে ঢেকে নিতাম। আজকে ভার্সিটিতে এসে দিলাম। ওনি নিচে আর আমি ওপড়ে। ওই যে ওই রুমটায় চেয়ারর বসে বসে প্র্যাংক করছিলাম। দশ পনেরো মিনিট পর কই থেকে যেনো ধুম করে ক্লাসটায় ঢুকে আমাকে ধরে ফেললো। কিভাবে বুঝলো, কিভাবে জানলো কিছুই বুঝতে পারছি না। ধুর! ভাল্লাগে না।

– তোর ফোনের লোকেশন অন?

– হ্যা

– মাথামোটা কাহিকা! লোকেশন অন থাকলে মানুষকে খুঁজে বের করা খুব কঠিন? তোরে যে কি করতে মন চায় আমার।

– আমার সেইটা জানা ছিলো নাকি? আশ্চর্য! জানলে তো অফই করে রাখতাম।

– তা জানবি কেনো? তুই তো শুধু জানিস….

মেঘলার কথার মাঝেই কাব্য এসে মেঘলাকে টেনে নিয়ে বেড়িয়ে গেলো । ক্যাফের সবাই হা করে তাকিয়ে আছে হঠাৎ এমন ঘটনায়। মেঘলা ওর ব্যাগটাও নিতে পারি নি। তনু বোকার মতো শুধু তাকিয়েই রইলো।

মেঘলাকে গাড়িতে বসিয়ে দ্রুত ড্রাইভ করছে। চোখে মুখে রাগের প্রতিবিম্ব। মেঘলা চুপচাপ বসে আছে। কিছু বলার বা জিজ্ঞাসা করার সাহস তার হয়ে ওঠছে না। কিন্তু এভাবে বসেও থাকতে পারছে না। বলা নেই, জানা নেই হুট করে এরকম রাগের কারণটা অনুমান করা কঠিন হয়ে গেছে। মেঘলাদের বাড়ির কাছে এসে কসে ব্রেক করায় মেঘলা অনেকটুকু সামনে ঝুকে পড়ে। সিট বেল্টের কারণে ব্যাথা থেকে বেঁচে যায়।

কাব্য সোজা হয়ে বসে আছে। মেঘলার দিকে একটা বারের জন্য ঘুরে তাকাচ্ছে না। এক্সেলেটরটি শক্ত করে ধরে পেছনে হেলান দিয়ে চোখ বন্ধ করে নিলো। মেঘলা বেশ বুঝতে পারছে কাব্য ওর রাগটা কন্ট্রোল করার চেষ্টা করছে। কিন্তু কেনো? কি এমন হয়েছে যে এতো রাগ ওঠেছে কাব্যর? মেঘলা দাঁত দিয়ে উপরের ঠোঁট কামড়ে ধরে একটু সাহস নিয়ে ধীরে ধীরে বললো,

– কিছু কি হয়েছে? আমি কি ভুল কিছু করেছি অজান্তে?

-………..

– প্লিজ বলুন না। বকুন, মারুন, শাস্তি দিন তবুও দয়া করে এমন নিরব থাকবেন না। ভুলত্রুটি হতেই পারে। শুধরে দিন। এরকম রাগ করে থাকলে তো সমাধান হবে না। প্লিজ বলুন না কি হয়েছে?

কাব্য চোখটা খুলে মাথাটা মেঘলার দিকে ঘুরিয়ে বলে,

– আবিরের সাথে একটা বদ্ধ রুমে কি করছিলে তুমি? কেনো গিয়েছিলে?

– ও আচ্ছা! এই ব্যপার? আগে বলবেন তো? এইটা রাগের কোনো ব্যাপার হলো? হুহ! আমি তো ভাবলাম না জানি কি?

– তার মানে তুমি সত্যি আবিরের সাথে ছিলে?

– হ্যা কিন্তু পুরো ঘটনা তো শুনবেন। এইটা তেমন কোনো আহামরি বিষয় নয়। খুবই সাধারণ..

– সিরিয়াসলি! এইটা তুচ্ছ বিষয় তোমার কাছে? তুমি একটা ছেলের সাথে বদ্ধ রুমে ছিলে তাও সে যে তোমাকে পছন্দ করে এবং তার সাথে তোমার বিয়ে হওয়ার কথা ছিলো। এইটা এতো স্বাভাবিক ব্যাপার?

– আপনি ভুল বুঝছেন। আপনি কিন্তু বিষয়টা অন্যভাবে দেখছেন। একটা ছেলের সাথে বদ্ধ রুমে ছিলাম, এইটা দ্বারা আপনি কি বোঝাতে চাচ্ছেন?

– আমি কি বোঝাতে চাচ্ছি সেইটা তুমি বোঝতে পারছো না? কেনো গিয়েছিলে আবিরের সাথে? কেনো ছিলে? আমি পুরো ভার্সিটি তোমাকে খুঁজে যাচ্ছিলাম আর তুমি একটা রুমের মধ্যে আবিরের সাথে কি করছিলে? কি এমন কথা তোমাদের যে রুমের ভেতরে গিয়ে বলতে হয়?

#তুই_আমার_কাব্য 🍂
#part: 47

মেঘলার দুই হাতের বাহু চেপে ধরে রাগে ফেটে পড়ছে। চোখ রাগে লাল হয়ে আছে। মাথার রগগুলোও ফুলে ওঠেছে। এরকম রাগ পূর্বে দেখা গেলেও গত কয়েকমাসে মেঘলার দেখা মিলে নি। ভয়ে ও ব্যাথায় চোখের কোণে পানি জমে গেছে মেঘলার। অপলক দৃষ্টিতে কাব্যর দিকে তাকিয়েই আছে। কাব্য অগ্নিদগ্ধ চোখ মেঘলার চোখের কোণে জমে থাকা পানি খেয়াল করতেই অনুশোচনায় পরিবর্তন হয়ে যায়। মেঘলার দুই হাত ছেড়ে নিজের ছিটে ফিরে এসে চোখ বন্ধ করে কপালে হাত স্লাইড করছে। নিজের উপর অসম্ভব পর্যায়ে রাগ হচ্ছে কাব্যর। এতো সময় যাবৎ নিজের রাগ কন্ট্রোল করার এতো চেষ্টা করে গেলো তা সব বিফলে গেলো। পাশের থেকে বোতল নিয়ে প্রায় অর্ধেক পানি খেয়ে স্বাভাবিক হয়ে মেঘলার দিকে ঘুরে বসে। মেঘলা মাথা নিচু করে বসে আছে এখনো। কাব্য আলতো করে মেঘলার দুই হাত হাতের মুঠোয় নিয়ে অনুতপ্ত সুরে বলে,

– আ’ম সরি মেঘ। তোমাকে হার্ট করার উদ্দেশ্য আমার কখনোই ছিলো না। আমি জানি তোমার সেরকম কোনো উদ্দেশ্য ছিলো না। হয়তো এমনই কথা বলতে গিয়েছিলে কিন্তু বদ্ধ ক্লাসে কেনো? খোলা জায়গায় কি বলা যেতে না? আমি ঘটনাটা শুনে নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারি নি একদমই। সরি! প্লিজ ডোন্ট ক্রাই মেঘ।

মেঘলা আধভেজা চোখ তোলে কাব্যর দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে বলে,

– শুনে মানে? কে বলেছ? কি বলেছে?

কাব্য তখনই পকেট থেকে ফোন বের করে মেঘলার সামনে ধরতেই মেঘলার চোখ ছানাবড়া। মেঘলা উদ্বিগ্ন হয়ে বলে,

– এইরকম ছবি কে দিলো আপনাকে? বিশ্বাস করুণ এইটা যেভাবর দেখানো হচ্ছে একদমই তেমন না। এর পিছনর গল্প আছে। আপনি একটু ঠান্ডা মাথায় শুনুন। ভুল বুঝবেন না দয়া করে।

– রিলাক্স! হুম আমি শুনবো। তুমি আগে শান্ত হও। উদ্বিগ্ন হও না। আমি শুনবো বলেই তো নিয়ে এলাম। কিন্তু এসব দেখে মাথা একদমই ঠিক ছিলো না আমার। রাখতে পারি নি।

– আমি বুঝতে পারছি আপনার রাগের কারণ। আসলে এখানে আমি আর আবির ভাইয়াই শুধু ছিলাম না। তনুও ছিলো। কিন্তু ওকে দেখা যাচ্ছে না। মনে হচ্ছে ইচ্ছাকৃত কেউ সরিয়ে দিয়েছে। আসলে তনু আবির ভাইয়া পছন্দ করে। ভালোবাসে না, শুধুই পছন্দ।

– হোয়াট! তনু আবিরকে পছন্দ করে?

– হুম! এই সূত্র ধরেই ও আমার কাছ থেকে আবির ভাইয়ার ফোন নাম্বারটা আমার কাছে নিয়ে প্র্যাংক কল করে গত তিনদিন ক্রমাগত। আজকে কলেজ এসেও করে। মাথামোটার লোকেশন অন করা ছিলো আর সেই ভিত্তিতে আবির ভাইয়াও ওকে ট্রেস করে ফেলে। তনু ওই রুমটায় গিয়ে কথা বলছিলো। আবির ভাইয়া ধরে ফেলে ওকে চেয়ারে আটকে রাখে। আমি তখন ওখান দিয়েই যাচ্ছিলাম। পেছন থেকে তো বুঝি নি তাই দরজার কাছে গিয়েই চিৎকার দেই। আর তখনই আবির ভাইয়া টেনে রুমে নিয়ে মুখ বন্ধ করে দেয় যেইটা প্রথম ও দ্বিতীয় ছবিতে দেখতে পাচ্ছেন। আমাদের মাঝে তনুকে চেয়ারে বসা ছিলো কিন্তু এখানে ওকে দেখা যাচ্ছে না। আর তৃতীয় ছবিটাতে যে রুমাল দিচ্ছেন তা ধুলাবালিতে থেকে হাঁচি আসছিলো তাই ওনি দিয়েছিলেন। এই সময়ও তনু ছিলো। ওর জন্যই মূলত ওখানে যাওয়া। তনুকে আটকে রাখতে চাচ্ছিলেন কেননা ও নাকি কালকে এক গুরুত্বপূর্ণ মিটিং-এর সময় খুবই জ্বালিয়েছে। শাস্তি দিতে চাচ্ছিলেন। ওকে ওখান থেকে বের করতেই এতো সময় আটকে ছিলাম। বিশ্বাস করুণ এখানে যেভাবে দেখানো হয়েছে একদমই তেমন না।

মনের ভেতর ভুল বোঝার এক আশংকা থেকে ভয় কাজ করছে মেঘলার। চোখে যেটুকু পানি আটকে ছিলো তার দ্বিগুণ অশ্রুপাত হচ্ছে। কাব্য দ্রুত মেঘলার কাছে গিয়ে ওর মাথা বুকে চেপে ধরে বলে,

– হুস! আই বিলিভ ইউ মোর এন্ড মোর। ডোন্ট ক্রাই প্লিজ। আমি তোমাকে ভুল বুঝি নি, শুধুমাত্র রাগ হয়েছিলো। দ্যাটস ইট।

– সত্যি ভুল বুঝছেন না তো?

মেঘলার মুখটা উঠিয়ে দুই হাত গালে রেখে গালের পানিগুলো মুছে দিয়ে নরম কন্ঠে বলে,

– একদমই না। আই শুড টেল ইউ সরি। আমি রাগ সমঝোত করতর ব্যর্থ হয়েছি। এগুলো দেখার সাথে এতো পরিমাণ রাগ হয়ে গিয়েছিলো যা বোঝাতে পারবো না। আমি তোমাকে অন্য কারো সাথে দেখতে পারি না পারবোও না। ইউ নো না? ইউ আর অনলি মাইন এন্ড আই ডোন্ট শেয়ার মাই এনি থিংকস উইথ আদারস, স্পেশালি ইউ।

মেঘলার কপালে ছোট্ট করর ঠোঁট ছুঁয়ে দিয়ে হাত দুটো শক্ত করে ধরে আবারো বলে,

– সরি ওয়ান্স এগেইন মেঘ।

– হয়েছে বাবা হয়েছে। আর কত বলবেন? সরির ঝুলি খুলে বসেছেন দেখছি।

– বাবা! কে বাবা?

– ধুর! এইটা বাবা সেই বাবা না রে বাবা! এইটা এমনি এমনি মানে কথার কথা।

– আচ্ছা যাও বাসায়। ফ্রেস হয়ে খেয়ে এলার্জির ঔষধটা খেয়ে নেবে। ইজ দিজ ক্লিয়ার?

– ইয়েস স্যার।

– নাও গো এন্ড স….

– নো মোর সরি প্লিজ। এতো সরির চাপে পড়ে যাবো। আপনার জায়গায় থাকলে আমি হয়তো আরো বেশি কিছু করে নিতাম। সো ইট’স ওকে। ভুলে যান।

মেঘলা গাড়ি থেকে নামতে যাবে তখন খেয়াল হলো ব্যাগ নেই। ব্যাগ খুঁজতে গিয়ে মনে পড়লো তাড়াহুড়োয় ব্যাগ রেখে এসেছে। কাব্য বুঝতে পেরে বলে,

– তুমি যাও আমি নিয়ে আসছি তোমার ব্যাগ।

– আপনি আবার যাবেন? থাক না। তনু রেখে দেবে।

– আমার ভার্সিটিতে যেতেই হবে। কাজ আছে একটা গুরুত্বপূর্ণ। তুমি যাও।

মেঘলা বাড়ির ভেতরে চলে যাওয়ার পর কাব্য চিন্তিত হয়ে ভাবতে থাকে এমন ছবি কে তুললো, কেনো তনুকে রিমোভ করে দিলো আর ওকেই কেনো দিলো? নিশ্চয়ই কাছের কেউ। কাব্য গম্ভীর মুখে গাড়ি স্টার্ট দিয়ে ভার্সিটির উদ্দেশ্যে রওনা দেয়।

🍂

ক্লাবের একটা রুমের ভেতর একটা চেয়ারে বসে আছে ওদের দলের একজন ছেলে। সামনে টেবিলে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে কাব্য আর তার পাশেই রনি। কাব্য খুবই স্বাভাবিক কন্ঠে বলে,

– আমার দলের ছেলে হয়ে আমাকে নিয়েই ষড়যন্ত্র করছিস? উহু! এতো সাহস তোর হয় নি। নিশ্চয়ই অন্য কেউ তোর পাশে আছে না হয়ে তোর পেছনে। এই যে তোর আশেপাশে থাকা ময়লাটা, একে কি বের করতে ডিটারজেন্ট লাগবে নাকি শুধু পানিতেই কাজ হবে?

– ভাই বিশ্বাস করেন আমি কিছু জানি না। আমাকে ফোন দিয়ে একজন ওই ছবিগুলো পাঠালো আর বললো ইডিট করে যেনো আপনাকে পাঠাই। বিশ্বাস করেন ভাই আমি না করছি অনেক কিন্তু সে আমাকে হুমকি দেয় যে আমাকে নাকি এই দল থেকে বের করবে এবং ফাসিয়ে নাকি বের করবে। ভাই আমি ভয় পেয়ে চাপে পড়ে করেছি।

– কে বলেছে? ছেলে নাকি মেয়ে?

– তা জানি না ভাই। কার্টুন ভয়েজে ট্রান্সফার করা ছিলো।

– কি দিয়ে পাঠিয়েছে?

– এমএমএসে।

– নাম্বারটা দে। কুইক।

– ভা ভা ভাই আসলে ডিলিট করে দিছি। ওনি বলেছিলেন ওনার ফোন নাম্বারটা ডিলিট করে দিতে।

– ইউ ব্লাডি..

কাব্য ওর দিকে তেড়ে যাচ্ছে কিন্তু রনি আটকিয়ে দিয়ে বলে,

– কাব্য চিল! ঝামেলা করিস না। কেউ খুব স্মার্টলি কাজটা করেছে। আই থিংক কাছেরই কেউ খুব যে তোকে খুব ভালো করে চেনে ও জানে। আর এর জন্যই এতো নিখুঁতভাবে খেলেছে।

– হুম!

চোখের ইশারায় ছেলেটাকে ছেড়ে দেওয়ার জন্য বলে। রনি ছেলেটিকে ছেড়ে দিতেই ছেলেটি দৌড়ে পালিয়ে যায়। রনি কাব্যর কাছে গিয়ে দাঁড়িয়ে বলে,

– ক্যান ইউ গেছ এনি ওয়ান?

– আই থিংক সো বাট নট শিউর।

– আর উই থিংক এবাউট সেইম পারসোন? আই মিন গার্ল?

– ইয়াহ্! ইউ আর রাইট।

– সো নাও?

– স্পেয়ার হার ফর দা ফার্স্ট টাইম।

– ইয়াহ্! আই অলসো এগরি উইথ দিস।

কাব্য আর রনি দুজনেই মলিন মুখে বেড়িয়ে এলো।

অপর দিকে ছেলেটি বের হয়ে হাঁপিয়ে হাঁপিয়ে ছুটে ক্যফেতে এসে বসে। গটগট করে এক গ্লাস পানি খেয়ে ফোনটা বের করে কাউকে ফোন দেয়। ফোন দিতেই ওপাশ থেকে বলে ওঠে,

– হোয়াট হেপেন্ড? ইজ অল রাইট?

– নো! কাব্য ধরে ফেলেছে আমাকে।

– ড্যাম ইট! বলেছিলাম না অতি সাবধানে থাকতে। খুব চালাক কাব্য। ওর চোখে ধুলো দেওয়া কতটা কঠিন সেইটা ওর সাথে যারা থাকে তারা খুবই ভালো করে জানে।

– টেনশন করবেন না। আপনার নাম বলি নি আর না বলবো কখনো।

– ইট’স বেটার ফর ইউ। এক্সুয়েলি ইউ হ্যাভ নো চয়েজ। নাও বাই।

# তুুই_আমার_কাব্য 🍂
#part: 48

– আম্মু আমি খাবো না আজকে। ভার্সিটিতে গিয়েই খাবো। টাটা

মেঘলা দ্রুত বেড়িয়ে যেতে যেতে জুতা পড়তে গিয়েই ছিঁড়ে গেলো। জুতাটা হাতে নিয়ে মুখটা গুমড়া করে ফেলে। পেছন থেকে মেঘলার মা একটা টিফিন বাটি নিয়ে ছুটে আসতেই ছেঁড়া জুতা দেখে বলে,

– জুতা ছিড়লো কিভাবে?

– এই দেখনা পড়তে গিয়ে।

– এখন?

– হ্যা।

– এখন তাহলে বের হোস না মা। কিছুক্ষণ বসে থেকে যা। খেয়ে নে। তারপর যা। একটু দেরি কর।

– কেনো? আমার সময় নেই দেরি হয়ে গেছে।

– বাঁধা পড়লে যেতে নেই মা।

– উফ্! মা। তুমি ষাট দশকের কুসংস্কার এই সময়েও ধরে রেখেছো। অস্কার দেওয়া উচিৎ।

– সবসময় এরকম অবজ্ঞা করবি না কথা। যাত্রা পথে বাঁধা পড়লে যেতে হয় না মা।

– আম্মু আজকে ভার্সিটিতে ওনাদের মানে ফোর্থ ইয়ারদের বিদায় অনুষ্ঠান। অনুষ্ঠান শুরুও হয়ে গেছে। আমি মিস করবো অনেক কিছু দেরি করলে।

– তো! ভার্সিটি থেকে যাক তোর থেকে তো আর বিদায় নিচ্ছে না। সারাজীবনই তো থাকবে।

– সে তো চাইলেও পারবে না।

– বেসরম মেয়ে।

– হি হি আগে ছিলাম না। তোমার জামাইয়ের পাল্লায় পড়ে হয়েছি।

– আচ্ছা এই নে অন্তত খাবারটা নিয়ে যা। গাড়িতে বসে যেটুকু পারিস খেয়ে নিস।

– ওকে পেয়ারি মাম্মা।

মেঘলা হাত থেকে খাবারটা নিয়ে জগিয়ে ধরে আসতে নেবে তখন আবারো ওড়নায় হাতের ঘড়ি আটকে পড়ে। মেঘলার মায়ের মনটা আবারো ছোট হয়ে আসে। মেঘলা জুতাটা পরিবর্তন করে ছুটে বেড়িয়ে যায়।

ভার্সিটির গেইটে গিয়ে থেমে তনুকে ফোন করছে ক্রমাগত। ঢিলা কম্পানির কোনো খবরই নেই তার মধ্যে ফোনটাও ধরছে না। মেঘলার ইচ্ছে করছে যাদু জোড়ে তনুকে ধরে এনে তেতুল গাছের ভুতের সাথে বিয়ে করিয়ে দিতে। অসহ্য রকমের ঢিলা মেয়েটা। বিয়ের দিন আসরে যে কি করবে কে জানে? ফোনটা ব্যাগে ঢুকিয়ে গাল মুখ ফুলিয়ে ভেতরে ডুকে গেলো। আশেপাশে তাকিয়ে কাব্যকে খুঁজছে। কিন্তু সেও তো ঘায়েব। গেছে কোথায় সব? চেনা মুখগুলো একটাও খুঁজে পাচ্ছে না। যেনো ইচ্ছাকৃত ওর চেনামুখগুলোই ওর সামনে নেই। তখনই ওর একটা ছেলে ক্লাসমেট দৌড়ে এসে বলে,

– তুমি মেঘলা তাই না?

– হ্যা।

– এক্ষুনি তিন নম্বর ভবনের নিচের একদম কোনার রুমটায় চলে যাও। একজন অপেক্ষা করছে তোমার জন্য।

মেঘলা বেশ খুশি হয়ে গেলো। খুশি হয়ে দ্রুত চলে গেলো উক্ত ঠিকানায়। রুমটার সামনে এসে দাড়িয়ে কেমন একটা অস্বস্তি কাজ করছে। এতো জায়গা থাকতে এরকম এতো কোণায় কেনো ডাকলো কাব্য? রুমের দরজাটা খুলতেই দরজায় লেগে থাকা ধুলো নাকে মুখে উড়ে আসলো। মেঘলা হাত দিয়ে সরিয়ে ভেতরে ডুকতেই মনে হলো কেউ একজন পেছনে দাঁড়িয়ে আছে। একদম ঘুটঘুটে অন্ধকার রুমটা। পরিত্যক্ত রুম একদম। মাকরোসার বাসাও পড়ে আছে। বেশ সন্দেহ হচ্ছে। কাব্য কখনোই এরকম একটা রুমে ওকে আসতে বলবে না। তবে কি মেঘলার ভুল হয়েছে? কাব্য না, অন্য কেউ ডেকেছে? কিন্তু কেনো? পেছন ঘুরতেই মুখের ভেতর কেউ কিছু একটা দিয়ে চলে গেলো। আবছা আবছা হয়ে যাচ্ছে সব। পা ভেঙে আসছে। সামনের দরজাটা কেউ বন্ধ করে দিচ্ছে। মুখটা দেখার আপ্রাণ চেষ্টা করছে কিন্তু চোখ আর খুলা রাখতে পারলো না। মাটিতে লুটিয়ে পড়তেই চোখের সামনে সব অন্ধকার হয়ে আসলো।

🍁

কাব্য বেশ ব্যস্ত বিভিন্ন কাজে। একইভকবে আবিরও। তনু কেবলই ভার্সিটিতে প্রবেশ করেছে। মেঘলাকে ক্রমাগত ফোন দিয়ে যাচ্ছে কিন্তু রিসিভ হচ্ছে না। বেশ চিন্তায় পড়ে যাচ্ছে। মেঘলাকে একটা কলেই তনু সবসময় পেয়ে যায় সেখানে এতো কল দেয়ার পরও পাচ্ছে না। মেসেজও করেছে যে ভার্সিটি। ফোন তো তাহলে কাছ ছাড়ার কথা না। অনুষ্ঠানের কাছে এসে কাব্যকে খুঁজে যাচ্ছে। তখনই চোখে পড়ে আবিরকে। দ্রুত আবিরের কাছে ব্যস্ত হয়ে জিজ্ঞাসা করে,

– ভাইয়া মেঘলাকে দেখেছেন?

– তোমার কি মনে হয় আমি এখানে মেঘলার খোঁজ বিতরণ করছি?

– উফ্! না জানলে না করেন না। সোজা কথা সোজা ভাবে বলতেই জানেন না।

বলেই চলে গেলো। আবির বিরক্ত হয়ে তনুর দিকে তাকিয়ে আবার নিজের কাজে যাওয়ার দিকে মনোনিবেশ করছে। তনু মেঘলাকে ও কাব্যকে একসাথে খুঁজছে। খুঁজতে খুঁজতে হঠাৎ চোখে পড়লো কাব্যকে। স্যারদের সাথে দাঁড়িয়ে কথা বলছে। নিশ্চয় গুরুত্বপূর্ণ কিছু। কিন্তু এটাও তো গুরুত্বপূর্ণ। কিভাবে জিজ্ঞাসা করবে? এখন তো আরো টেনশন হচ্ছে। কাব্য এখানে তাহলে মেঘলা কোথায় উধাও হলো? তনু সাহস করে কাব্যর সামনে বরাবর দাঁড়িয়ে ইশারায় ডাক দিতেই কাব্য চলে এসে জিজ্ঞাসা করে,

– কি হয়েছে?

– ভাইয়া মেঘলা কোথায়? খুঁজে পাচ্ছি না সেই কখন থেকে খুঁজছি। আর ফো….

– মেঘলা এসেছে?

– হ্যা

– আচ্ছা! দাঁড়াও।

ফোনটা পকেট থেকে বের করে লোকেশন চেক করে বলে,

– ভার্সিটিতেই আছে দেখো। কোথায় বসে আছে দেখো গিয়ে। আর আমাকে টেক্সট করতে বলো দেখা হলো। এদিকে একটু ব্যস্ত আছি তাই খোঁজ নিতে পারছি না।

– থেংক ইউ ভাইয়া।

তনু মেঘলাকে বকতে বকতে ভার্সিটিতে খুজতে থাকে।

🍂

প্রায় দুপুর দুটো। কাব্যরা ফ্রেন্ডস সার্কেল একসাথে বসে পার্টি নিয়ে কথা বলছে। তখনই পেছন থেকে কাধেঁ কারো স্পর্শ পেয়ে পেছন ফিরে তাকিয়েই হতবাক। চোখ মুখে খুশির ঝলক। দুজন দুজনকে জড়িয়েই ধরলো। কাব্য খুশিতে উত্তেজিত হয়ে বলে,

– হোয়াট আ প্রেজেন্ট সারপ্রাইজ! ইট’স রিয়েলি ইউ রৌশান!

– ইয়াহ্! ইট’স রিয়েলি মি।

– দোস্ত কতদিন পর, মানে কত বছর পর? কিভাবে পারলি রে? নট আ সিঙ্গেল মেসেজ!

– চেষ্টা করেছি কিন্তু হয়ে ওঠে নি রে। এক্সচুয়েলি সাহসটাই হয়ে উঠে নি। তাই ভাবলাম একদমই সামনে গিয়েই দাঁড়াবো।

– ইউ অল মিস ইউ বেডলি ইয়ার

– মি অলসো। আচ্ছন আবির কই? ওকে তো দেখছি না।

কাব্য একটু অপ্রস্তুত হয়ে জোরপূর্বক হেসে বলে,

– আচ্ছা চল সবার সাথে দেখা করি। আবিরের সাথে পরে করিস।

তখনই পেছন থেকে রুহি এসে বলে,

– লুকাচ্ছিস কেনো কাব্য? সত্যটা জানা ওরও তো প্রয়োজন। আফটার অল অল রেসপনসেবলিটি গোছ টু হিম।

রাহিকে দেখে রৌশান হেসে বলে,

– হে রাহি! হোয়াটস আপ? তুই তো দিন দিন আরো বেশি সুন্দর হয়ে গিয়েছিস।

– থ্যংকস। সো তোর কি খবর?

– তোদের এই আড্ডা ছাড়া কি করে ভালো থাকতে পারি? তবুও আছি আলহামদুলিল্লাহ। আচ্ছা তুই কি যেনো সত্যির কথা বলছিলি?

তখনই কাব্য কথা কাটিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করলে রৌশান বুঝতে পেরে বলে,

– কাব্য আমি কি এতোটাই দুরে চলে গিয়েছি যে আমার কাছ থেকে কিছু গোপন করার প্রয়োজন পড়ছে তোর?

– আমি কিছুই গোপন করছি না। এসেছিন যখন তখন সব জানতেই পারবি। তাড়াহুড়োর কি প্রয়োজন? ছাড় এগুলো আর চল ওদিকে। সবার সাথে দেখা করা যাক।

– নাহ্! আগে বল আবিরের সাথে কি তোর কোনো সমস্যা চলছে? উই আর বেষ্ট ফ্রেন্ড। সো মনোমালিন্য হতেই পারে তাই বলে কি কথা বলা অফ করবি নাকি? তোদের দুজনের ইগো মাত্রাতিরিক্ত বেশি।

– তেমন কিছুই না।

তখনই আবার রাহি বলে ওঠে,

– রৌশান তুই ছোট্ট একটা ভুল করলি। তোরা বেষ্টফ্রেন্ড ছিলি। এখন আর নেই। না কাব্য আবিরের আর না আবির কাব্যর আর না তুই। তুই তো চলে গিয়ে নিরুদ্দেশ। বাট ওদের মাঝের ঝামেলাটা সমাধান করার কেউ ছিলো না বলে আজ ওরা বিরোধী দল একে অপরের।

রৌশান কাব্যর দিকে অবাক চোখে তাকিয়ে বলে,

– অহনার ব্যপারটা আজ পর্যন্ত তার মানে ওরকমই আছে?

কাব্য একটা দীর্ঘ নিশ্বাস ফেলে বলে,

– হুম! আবির শুনতেই চায় নি কিছু। ও ভেবেছে অহনা আমাকে ভালোবেসেছিলো এবং আমি নাকি ওকে অপমান করেছিলাম। জানিস আমি এখনো আজ পর্যন্ত খুঁজে পেলাম না কে ওকে এই কথাটা বলেছে যে আমি অহনাকে অপমান করেছি। আর তার জন্যই নাকি ও আনমনা হয়েছিলো আর ইচ্ছাকৃত গাড়ির সামনে গিয়ে আত্মহত্যা করে। কিন্তু আমার মন বলছিলো এর পেছনে আরো কিছু গল্প আছে। কোনো অন্য ব্যক্তির ষড়যন্ত্র আছে। একটা ঘটনায় আমাদের তিনজনের বন্ডিংটা কিভাবে ভেঙ্গে গেলো। তিনজন বিক্ষিপ্ত ভাবে ছড়িয়ে পড়লাম।

চলবে…. ❤