তুই আমার কাব্য পর্ব-৪৪+৪৫

0
1509

#তুই_আমার_কাব্য 🍂

#Writer: Anha Ahmed
#Part: 44 + 45
.
🍁
.

ঘন কালো আকাশের বিশালতা জুড়ে গোলগাল একটা চাঁদ রাজত্ব করছে। আজকের চাঁদটায় কিছু একটা বিশেষ বিশেষত্ব রয়েছে। মনে হচ্ছে যেনো একটা তামার থালা। একটু হলুদে হলুদে ভাব। তবে মেঘলার কাছে অনেকটা পুডিং এর মতো লাগছে। মনে হচ্ছে একটা চামচ এনে টুক করে খেয়ে নেই। তারপরই মনে হলো খেয়ে নিলে অমাবস্যায় এসে এতো সুন্দর রাতটাকে ঘিরে নেবে। কথাটা ভেবেই আনমনে হেসে ওঠলো।
চাঁদটার দিকে আবার তাকাতেই গতকালের রাতের কথা মনে পড়ছে। গতকালও বেশ অনেকক্ষণ কাব্য আর মেঘলা এভাবে চাঁদ দেখেছে। এ কথা মনে হতেই ঘুরে দেয়াল ঘড়ির দিকে তাকালো। নয়টা বেজে তিন মিনিট। সামনের দিকে ঘুরে মুচকি একটা হাসি দিয়ে ভাবছে গতকাল রাতে এই সময়টায় কাব্য সাথেই ছিলো। খুব বেশি মনে টানছে কাব্যর দিকে। কেমন হতো যদি এখন কাব্য হাওয়ার বেগে সামনে উপস্থিত হতো? চাওয়াটা কি খুব বেশি করে ফেলছে? হয়তো বা। মুহুর্তেই মন খারাপের আভায় মুখ ছেয়ে গেলো। জানালার পর্দাটা লাগিয়েও আবার খোলে দিলো। সোজা বিছানায় গিয়ে লাইট বন্ধ করে শুয়ে পড়লো। কিন্তু ঘুম আসছে না। আসবেও না সেটাও জানা। কাব্য নাই আসতে পারে কিন্তু তার ফোন অথবা মেসেজ তো আসতে পারে? সেটাও জেনো বিলাসিতার অন্তর্ভুক্ত। হুহ!

ঘুমে কাতর এখন। জানালা দিয়ে আসা চাঁদের আলোই যথেষ্ট। আলাদা করে কোনো আলো জালানোর প্রয়োজন পড়ছে না। চোখের একদম কোণে একফোটা পানি শুকিয়ে রয়েছে। স্বাধীনমতো ঝরতেও পারে নি। ফোনটা আকড়েই ঘুমিয়ে আছে। আসতে করে ফোনটা হাত থেকে সড়াতেই মেঘলা নড়ে চড়ে ওঠলো। পাশ ফিরে ঘুমিয়ে পড়ছে তখনই আবারো আগের দিকে ঘুরে বসে। চোক্ষু তার চড়কগাছ। নিঃশ্বাস থেমে গেছে। হার্ট অতিরিক্ত মাত্রায় বিট করছে। সত্যিই যেনো এক জ্যন্ত পাপেট। এক জোড়া মেঘলা দিকে এগিয়ে এসে দুই হাতের বাহুতে ধরে সামন্য ঝাকি দিয়ে বলছে,

– হুস! চিল্লাবা না। আমি কাব্য।

মেঘলার নিঃশ্বাস আটকে পড়া বুঝতে পেরে কাব্য চেয়ারটা আরেকটা কাছে এগিয়ে দুই হাত গালে রেখে নরমভাবে বলে,

– মেঘলা! ভয়ের মতো কিছু নেই। নিঃশ্বাস নাও। টেক আ ডিপ ব্রেথ। রিলাক্স। লুক এট মি এন্ড চিল।

তারপরও মেঘলার কোনো পরিবর্তন না দেখে এবার সত্যিই ঘাবড়ে ওঠে। একটু বেশি চমকে ওঠেছে। হয়তো ভয়ও পেয়েছে। দ্রুত কাব্য মেঘলার পাশে ওঠে গিয়ে বসে মেঘলার মাথাটা এক হাত দিয়ে নিজের বুকের সাথে চেপে ধরে। আরেক হাত মেঘলার আরেকটা হাত চেপে ধরে আবারো বলে,

– মেঘলা! আর ইউ লিসেনিং? প্লিজ বি নরমাল। প্লিজ! টেক ব্রেথ।

মেঘলার হাতের আঙুলের ভেতর নিজের আঙুল গুলো লক করে পেছন দিকে আঙুলগুলো পুস করতেই ফুটে ওঠে আর মেঘলাও চমকিয়ে ওঠে বসে। বড় বড় নিঃশ্বাস নিয়ে ভয়ার্থ কন্ঠে বলে,

– আপনি এখন এখানে এতো রাতে কেনো? কিভাবে এলেন? কেনো এলেন? কেউ দেখে নিলে? বাসার সবাই জেনে লেগে? ইস্! লজ্জায় চোখ তুলতে পারবো না। কি আপনি হ্যা? এতো রাতে এভাবে কেউ আসে? একে তো ভয়ে পাইয়ে দিয়েছেন আর এখনো ভয়েই আছি।

– আমি কি তোর?

– না

– আমি ডাকাত?

– না

– তোমার বয়ফ্রেন্ড?

– নাহ্!

– তাহলে ভয়ের কি আছে? সবার সামনে বিয়ে করেছি। বউয়ের কাছে আসতেই পারি। ভয় লজ্জার কি আছে?

– ইস্! ভয় লজ্জার কি আছে? জানেন না ভয় লজ্জার কি আছে? আচ্ছা আগে বলুন তো আপনি এলেন কি করে? জানালা দিয়ে?

– অবশ্যই নয়। একদম সোজা রাস্তায়। দরজা দিয়ে এসেছি।

– মানে? কিভাবে? আল্লাহ! দরজা ভেঙে দিয়েছেন?

– সিনেমা নয় যে এতো বড় বড় আর মজবুত দরজা ভেঙে দেবো আমি।

– তাহলে?

– দরজা খুলে দিয়েছে আর আমি চলে এসেছি।

– কে খুলে দিয়েছে? …… মোহনা? রাইট!

– মিথ্যা হলেও বলবো না আর সত্যি হলেও না।

– গেইটে দারোয়ান আটকালো না?

– নামো বিছানা থেকে।

– আজব! কেনো?

– নামো তো তারপর বলবো।

মেঘলা কাব্যর হাত ধরে নেমে এলো। কাব্য বারান্দায় গিয়ে দাঁড়িয়ে দারোয়ানের দিকে দেখালো। সে ঘুমে প্রায় পড়েই যাচ্ছে। শুধু বালিসটার জন্য আটকে আছে। আশ্চর্য! বালিশ পেলো কোথা থেকে? আগে তো কখনো দেখে নি বলে মেঘলা প্রশ্ন করলে কাব্য জানায় এটা ওরই কাজ। আরাম দেওয়ার স্বার্থে। মেঘলা একটু করে হেসে ওঠলো। কাব্য তখনই আবারো বলে,

– চলো। বের হবো।

মেঘলা অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করে,

– এখন! কোথায়?

– বেঁচে দেবো তোমায়।

– ওটা করবেন না জানি। কোথায় যাবেন বলেন?

– যাওয়ার ইচ্ছে থাকলে জানা জেনেই যেতে হবে। যাবে কি যাবে না। না গেলে আমি চলে যাচ্ছি ইটস ওকে।

মেঘলা তখনই হাত টেনে ধরে বললো,

– আরে না না না না না। যাব তো।

আস্তে আস্তে দুজনে বের হয়ে দরজার বাহিরে যেতেই দরজাটা হালকা করে কাব্য লাগিয়ে দিয়ে মেঘলার হাত ধরে অতি সাবধানে গেইট পার হয়ে বেড়িয়ে এলো। দেয়াল ঘেসে রাস্তার একধারে গাড়ি পার্ক করা। মেঘলাকে নিয়ে গাড়িতে বসতেই মেঘলা জিজ্ঞাসা করে,

– এতো রাতে গাড়ি নিয়ে এসেছেন? বাড়ির কেউ জানে না?

– এখনো অতটাও রাত হয় নি। সাড়ে বারোটা কেবল। মাঝে মাঝে আমি আর ভাইয়া বের হয়েছি আগে। তাই সমস্যা হয় না।

– মিস করছিলেন?

কাব্য মেঘলার দিকে তাকিয়ে আবার সামনে তাকিয়ে গাড়ি স্টার্ট দিয়ে বলে,

– একদমই না। যার খবর টুয়েন্টি ফোর আওয়ার্স থাকে তাকে মিস করে কেউ?

– তার মানে?

– মাথা ব্যাথার খবরও ফোনের মেসেজ বক্সে এসে পৌঁছে যায়।

মেঘলা এবার কাব্যর দিকে ঘুরে বসে বলে,

– এই কে দেয় বলুন তো এতো খবর? মোহনাই দেয় বুজেছি। না হলে বাসায় এমন কেউ নেই যে এতো পাবেন। মানুষের কাছে থেকে খবর না নিয়ে নিজে ডিরেক্টলি তো নিতে পারেন।

সোজা হয়ে বসে ওড়নার কোণা পেচিয়ে পেচিয়ে মাথা নিচু করে শেষোক্ত উক্তি দিলো। কাব্য এক ব্রিজিরে এসে গাড়িটা থামালো। হঠাৎ গাড়ি থামতেই মেঘলা সামনের দিকে তাকিয়ে কাব্যর দিকে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকালো। কাব্য কিছু না বলেই দরজা থেকে নেমে এলো। কাব্যকে নামতে দেখে মেঘলাও তাড়াহুড়ো করতে নামতে গিয়ে দরজা খুলতে পারছে না। কাব্য দরজাটা খুলতেই আসছে। খুলেও দিলো। মেঘলা ছোট্ট একটা মুচকি হাসি দিয়ে নামতে যাবে তখনই কাব্য মেঘলার এক হাত ধরে। মেঘলা একবার হাতে দিকে আরেকবার কাব্যর মুখের তাকাচ্ছে। কাব্য মেঘলার তাকিয়ে থাকার কারণ বুঝতে পারছে। তাই সেও কোনো কথা না বলে হাত ধরে গাড়ি থেকে নামিয়ে দরজা বন্ধ করে দিলো। মেঘলা আশে পাশে তাকিয়ে দেখছে। বেশ চেনাচেনা লাগছে। এক দুপা এগিয়ে যাওয়ার পর খুব কষ্টে চিনতে পারলো এটা সুরমা ব্রিজ। রাতে অন্ধকার বেশ অন্যরকম লাগছে। নিচে পানির স্রোত যাচ্ছে, দু একটা জাহাজ চলছে তার নিরব ঢেউয়ের শব্দ কানে আসছে। ঠান্ডা এক আবহাওয়া। নিচে পানি বয়ে যাচ্ছে এর জন্য মূলত একটু ঠান্ডা ঠান্ডা লাগছে। মেঘলা দৌড়ে ব্রিজটার বর্ডারের কাছে চলে যায়। কিনারা বেয়ে বেশ কয়েকটা জাহাজ রাখা। লাইট জ্বলছে। প্রায় অর্ধেক শহরটাই দেখা যাচ্ছে যেনো। কিছু জায়গায় লাইট জ্বলছে। আর বেশ অনেকটাই অন্ধকার। পানির দিকে তাকাতেই চাঁদের স্পষ্ট প্রতিবিম্ব পানিতে দেখা যাচ্ছে। পানির অতি ছোট ছোট ঢেউয়ে চাঁদটা নড়ে চড়ে ওঠছে। আকাশের চাঁদ বুঝি এভাবেই পাতালেই এসে পড়ে। পানিটাও আলোকিত হয়ে গিয়েছে। মেঘলা এক হাত উঁচু করেছে। এর ছায়াটাও অতি তুচ্ছ হলেও দেখা যাচ্ছে। বেশ আনন্দ লাগছে মেঘলার। ভুলেই যাচ্ছে যে সে লুকিয়ে এসেছে এখানে। দুই হাত উঁচু করে পানিতে নিজের ছায়া খোঁজার চেষ্টা করছে তখনই পাশে একজন এসে দাঁড়ায়। কাব্য! মেঘলা পাশ ফিরে প্রাণ খোলে এক মুচকি হাসি দেয়। দুই হাত ভাজ করে তার উপর মাথা রেখে কাব্যর দিকে মুখ ঘুরে বলে,

– আচ্ছা আপনি কি ভিতু?

#তুই আমার কাব্য 🍂
#part : 45

কাব্য বর্ডারে পিঠ ঠেটিয়ে পা ক্রস করে দাঁড়িয়ে সামনের দিকে তাকিয়েই উল্টো প্রশ্ন করে,

– সাহসিকতার পরিচয় কি কম হয়ে গেছে? আরো দেখাতে হবে?

– সাহসিকতার তো কিছু দেখলাম না।

– আচ্ছা তাই নাকি?

– হ্যা তো! ভালোবাসা স্বীকার করতে পারেন না, প্রকাশ করতে পারেন না। ভিতু নয় তো কি?

কাব্য মেঘলার দিকে তাকিয়ে এক মুচকি হেসে মেঘলার এক হাত ধরে এক টান দিয়ে নিজের কাছে এনে পেছন ঘুরিয়ে জড়িয়ে রেখে বলে,

– কবি গুরুর এক বিখ্যাত বাণী আছে। সেখানে তিনি অনেকটা এরকম বলেছিলেন যে ভালোবাসার প্রকাশ যত কম সে ভালোবাসার গভীরতা তত বেশি।
বুঝেছো? আরো কিছু বলতে হবে?

কাব্যর আচমকা টান দেয়ায় মেঘলা হুমড়ি খেয়ে কাব্যর ওপড়ে পড়ে যায়। ঘুড়িয়ে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরাতে প্রথমে অন্য রকম লাগলেও পড়ে এক উষ্ণ উষ্ণ অনুভব হয়। অন্যরকমের ভালো লাগা এ। আর তার মাঝে কাব্যর নিরবে, ঘুড়িয়ে স্বীকার করা যে মেঘলাকে ভালোবাসে। এইটা বোঝার পর মেঘলার খুবই খুশি হওয়ার কথা। আনন্দে মাখো মাখো হওয়ার কথা। কিন্তু কিছুই হচ্ছে না। হচ্ছে না ঠিক তা না, হচ্ছে কিন্তু নিরবে। অসম্ভব রকমের আবেশ যেনো ঘিরে আছে। যুগের পর যুগও যেনো কোনো কিছুতে এই ঘোর, এ আবেশ কাটাতে সে চায় না। এভাবে সময় ফুরিয়ে যাক না। না না ফুরিয়ে না, সময় এখানেই আটকে থাক অনন্ত যুগ ধরে। অপূর্ব এ জ্যোৎস্না বিলাসের যে লোভ আজ মিটছে তা কি অন্য কিছুর বিনিময়ে সামলানো সম্ভব? হয়তো সম্ভব। তবে সেটাও এ ভালোবাসারই অংশ হতে হবে। নতুবা প্রকৃতপক্ষেই সকল কিছু তুলনাহীনতায় হেরে বসবে।

মেঘলার হাতটা ঠান্ডা হয়ে এসেছে। পুরুষদের তুলনায় নারীদের শরীর ঠান্ডা থাকে। ঠান্ডায় যা আরো ঠান্ডা হয়ে যায়। কাব্যর হাত হঠাৎ মেঘলার হাত স্পর্শ করতেই সেইটা বুঝে গেলো। সাথে সাথে ছেড়ে দিলো। মেঘলার আবেশ ছুটে এলো। হঠাৎ এভাবে ছেড়ে দেওয়ায় মেঘলা চুপচাপ দাড়িয়ে আছে। কাব্য মেঘলার দ্রুত মেঘলার সামনে রাখা ওড়নাটা সড়িয়ে দিলো। মেঘলা অবাক হয়ে কিছু বরতে যাবে তার আগেই কাব্য ওড়নাটা মেলিয়ে পেছন থেকে পুরোটা শরীরে জড়িয়ে দিলো। মেঘলা শুধু তাকিয়েই আছে। কাব্য এক হাত দিয়ে জড়িয়ে গাড়িতে নিয়ে বসিয়ে গাড়ি স্টার্ট দিয়ে গম্ভীর স্বরে বলে,

-তুমি কি কিছুই বোঝো না। নিজের ভালো খারাপও না? ঠান্ডা লাগছে সেটাও কি অনুভব করতে পারছো না? দেখো তো হাতগুলো কি পরিমাণ ঠান্ডা হয়ে এসেছে। ঠান্ডায় যে এলার্জি ওঠে যায়, লাল হয়ে যায় সেইটা কি খেয়াল থাকে না? শরীরটা কি আমার নাকি তোমার? নিজে থেকে বলতে পারলে না ঠান্ডা লাগছে। তার মাঝে মৌসুমও খারাপ চলছে। অসুখ বাঁধানোর ধান্দা সব। আমাদেরও তো হয় না। তোমার এতো দুইদির পর পর কেনো অসুখ হবে? নিজের সামান্য খেয়াল রাখলে কি এতো অসুখে পড়তে হয়? দেখি তো হাতটা লাল হয়ে গিয়েছে? এলার্জি ওঠেছে?

মেঘলা মাথা নেড়ে না সূচক উত্তর জানানোর পরও কাব্য হাতটা দেখে তবে বিশ্বাস করলো। হাত এখনো ঠান্ডা। শীররে রক্তের পরিমাণ কমও শরীর ঠান্ডা রাখার উল্লেখিত কারণ। একটা রাস্তার কাছে এসে গাড়িটা পার্ক করে গাড়ি থেকে হুট করে নেমে যায়। মেঘলা নেমে যাওয়া দেখে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। সেও নামতে যায় কিন্তু দরজা বন্ধ। কাব্য নেমে পেছনের সিটে গিয়ে কিছু খুঁজছে। মেঘলা কৌতুহল জিজ্ঞাসা করে,

– কি খুঁজছেন?

– এখানে একটা মোটা চাদর রাখা থাকে সবসময়। আচ্ছা এই লাইটটা ধরো একটু।

সিটের পেছনের একটা পারমানেন্ট বক্স খুলে একটা বেশ বড়ো সড়ো চাদর বের করে দরজা বন্ধ করে আবার সিটে এসে বসলো। চাদরটা খুলে মেঘলার গায়ে জড়িয়ে দিতে দিতে বললো,

– কিছুক্ষণ রাখো। হাতটাও ভেতরে রাখো। গরম হতে দাও। ঠান্ডা লাগানো যাবে না কিছুতেই। নদীর পানির জন্য মে বি এতোটা ঠান্ডা হয়ে গিয়েছে আর আবহাওয়াটাও বৃষ্টি হওয়ার জন্য ঠান্ডা ঠান্ডা হালকা।

– আমার এতোটাও ঠান্ডা লাগছে না। ঠিক আছি আমি। এতোটুকু ঠান্ডা আবহাওয়া পড়লেই হাত পা ঠান্ডা সময়ই হয়।

– তা তো হবেই। বাবার টাকা বাঁচাচ্ছ কিনা। কম খেয়ে রক্ত খাওয়াচ্ছো শরীরকে। তাই তো রক্তও কম আর শরীরের তাপমাত্রাও।

কাব্য ইউ টার্ন নিয়ে বাড়ি ফিরতেই হঠাৎ অন্যরাস্তায় মোড় নেয়। মেঘলা জানালা দিয়ে দেখছে শুধু। কি অপরূপ এ রাতের শহর! দেখতে দেখতে হঠাৎ চোখে পড়লো সেদিনের সেই রেস্টুরেন্ট। তখনই মেঘলা সাথে সাথে বলে ওঠে,

– এইটা সেই রেস্টুরেন্টটা না?

– হুম

– কিন্তু আজকে বন্ধ কেনো? সেদিন না অনেকক্ষণ ছিলো?

– থাকতে বলা হয়েছে তাই।

– আপনি থাকতে বলেছিলেন?

– এইটা কখন বললাম?

– তো বললেন যে

– কি বলেছি?

– কিছু না। ছাড়ুন। ওনি কিন্তু দারুণ কেক বানান। আমাদের কারো জন্মদিনে ওনার এখান থেকে কেক নেবো ভাবছি। আচ্ছা আপনার জন্মদিন কবে?

– যেদিন জন্মেছি।

– অদ্ভুত! তারিখ কত? কোথাও খুঁজে পাই নি।

– খুঁজেছো বুঝি?

– হ্যা তো! স্বামীর জন্মদিন কবে তা খোঁজ নেবো না?

কাব্য একটা হাত গাড়ি আর আরেক হাত দিয়ে ওয়ালেট বের করে মেঘলার হাতে দিয়ে বলে,

– খোলো। জাতীয় পরিচয় পত্রে আছে।

– বাব্বাহ্! বললাম আর জানিয়ে দিচ্ছেন?

হেসে হেসে মেঘলা ওয়ালেট খুলে কয়েকটা কার্ড বের করলো। আবসা আলোয় ঠিক বোঝা যাচ্ছে না। একটা ছবিও আছে কিন্তু চেহারাটাও বেশি বোঝা যাচ্ছে না। মেঘলা কাছে নিয়ে দেখতে যাবে তখনই কাব্য ওয়ালেটটা নিয়ে বাকি কার্ডগুলো থেকে পরিচয় পত্র বের করে উপরের গাড়ির লাইটটা অন করতেই মেঘলা খুশি হয়ে যায়। এটার কথা তো মনে ছিলো না। খামোখা কষ্ট করছিলো। কার্ডটা ভালো করে দেখছে। বিশেষ করে ছবিটা। জন্মদিনের তারিখটা জোড়ে জোড়ে বলে,

– চোদ্দই এপ্রিল উননিশো ছিয়ানব্বই।
ও আপনার জন্মদিন চোদ্দই এপ্রিল।…………. চোদ্দই এপ্রিল? চোদ্দদ্দদ্দদ্দ এপ্রিল? সেদিন তার মানে সত্যি সত্যি আপনার জন্মদিন ছিলো? তার মানে আমাদের বিয়ের ডেট ও আপনার জন্মদিনের দিন একই? আপনার সেদিন জন্মদিন ছিলো বলেই কেক কেটেছিলেন? বললেন না কেনো?

উত্তেজিত হয়ে মেঘলা এক টানে কথা গুলো চিল্লায়ে বলে। কাব্য লাইটা বন্ধ করে টুক করে কার্ডটা নিয়ে ওয়ালেটে ঢুকিয়ে বলে,

– আমি কি ছোট্ট বাচ্চা?

– না

– অল্প বয়স্ক, অপ্রাপ্ত বয়স্ক?

– না

– তাহলে জন্মদিন জন্মদিন বলে কেনো লাফাবো। সাথে ছিলে, কেকে কেটেছি, খেয়েছি ব্যাস! ওতেই যথেষ্টর থেকে বেশি সন্তুষ্ট। কাছে থাকলেই হলো।

মেঘলার যেনো মাঝে মাঝে তাকিয়ে থাকা ছাড়া কোনো কাজই থাকে না। কাব্যর দিকে তাকিয়েই সিটে হেলান দিয়ে মাথা হেলিয়ে দেয়। মানুষ একটাই কিন্তু কি বিচিত্র তার আচরণ। মাঝে মাঝে মনেই হয় না এই মানুষটা একটা। এতো চিন্তা, এতো ভালোবাসা, এতো যত্ন করার ক্ষমতা এই মানুষটার মাঝে আছে তা কেউ কি বুঝতে পারবে?

এগুলো ভাবতে ভাবতেই কখন যেনো ঘুমিয়ে পড়ে। কাব্য প্রায় মেঘলাদের বাড়ির কাছে এসে গাড়িটা সাইডে রেখে দেয়। মেঘলার ঘুমন্ত মুখের দিকে তাকিয়ে কপালে একটা চুমু দিয়ে গাড়ি থেকে নেমে মেঘলাকেও কোলে তুলে পিছনের ছিটে গিয়ে বসে। মেঘলার মাথাটা নিজের কাঁধে রেখে চাদরটা পাতলা করে গায়ে দিয়ে দেয়। কারণ পরে আবার বেশি গরম লাগবে। মেঘলার মাথায় নিজের মাথা ঠেকিয়ে মেঘলার এক হাতের আঙুলের ভেতর ওর আঙুল দিয়ে মেঘলার হাতের পিঠে আলতো করে চুমু দিয়ে বলে,

– কত সময়ের অপেক্ষার ফল এইটা জানো? এতো অপেক্ষা করেছি বলেই হয়তো এতো মিষ্টি মুহূর্তে জীবন গড়ছে। তুমি আমার জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়, আমার অলিখিত কাব্য তুমি।

সকাল সাড়ে ছয়টা। ফোনে এলার্ম বেজে ওঠতেই কাব্য জেগে ওঠে। ঘড়ির সময় দেখে মেঘলাকে ধীরে ধীরে ঢেকে ওঠায়। মেঘলা প্রথমে আড়মোড়া করে ওঠলেও পড়ে খেয়াল করলো সে এখনো গাড়িতে। ধুম করে বসে চিল্লিয়ে ওঠে বলে,

– আমি এখনো গাড়িতে? সকাল হয়ে গেছে? কয়টা বাজে? আল্লাহ! আম্মু আব্বু বোঝে গেছ আমি বাড়ি নেই। এখন কি হবে? সবাই জেনে যাবে? কি ভাববে সবাই? আপনি আমাকে তখনই ঢেকে দিলেন না কেনো? কিভাবে ঘুমিয়ে গেলাম?

– মেঘ! রিলাক্স! একটু শান্ত হও। কিচ্ছু হয় নি আর হবেও না।

– কি হবে না? আপনি জানেন কিছু? কিচ্ছু জানেন না। আব্বু সবসময়েই ঘুম থেকে ওঠে আমার রুমে আসে। আমি ওঠে পড়লে হলেই না হলে ডেকে দিয়ে গার্ডেনে যায়। আজকে না দেখে না জানি কি হচ্ছে বাড়িতে।

– চিল! দেখো তোমার বাড়ির কাছেই আছি। এখান দেখে নরমাল হয়ে যাবে। কিছু জিজ্ঞাসা করলে বলবে মরনিং ওয়াকে গিয়েছিলে একটু।

– হ্যা!!

– তুমি তো সকালেই ওঠো। সো সন্দেহ করবে না। একা একা ভালো লাগছিলো না। ফ্রেস হাওয়া খেতে বের হয়েছিলে সিম্পল।

– হে হে! ভালো বুদ্ধি! কত বালো ভালো বুদ্ধি আপনার মাথায়।

বলেই মেঘলা খুশি হয়ে কাব্যর গালে এক চুমু দিয়ে বের হতে যাবে তখন খেয়াল করে ও কি করলো এইটা। থেমে থেকে লজ্জায় আবারো দৌড় লাগায়। কাব্য হেসে গাড়ি নিয়ে বেড়িয়ে গেলো।

কলেজে একাই চলে এসেছে মেঘলা। এসেই তনুকে খুঁজতে খুঁজতে ওপরের ক্লাসে যাচ্ছে। একটা ক্লাস অতিক্রম করে যাচ্ছে। প্রায় চলেই গিয়েছে। কিছু একটা আছে বলে আবারো পেছন দিকে হেটে দরজাটা ধীরে ধীরে এক হাত দিয়ে খুলে দিয়ে উঁকি দিতেই দুই হাত দিয়ে চোখ চেপে ধরে বিকট চিৎকারে ফেটে পড়ে।

চলবে……. ❤