তুই তারারে ভিনদেশী পর্ব-০১

0
1691

গল্পের নামঃ- #তুই_তারারে_ভিনদেশী❣️💫
পর্ব-০১
লেখিকাঃ- konika islam (sanju)

একটা লাল গোলাপ নিয়ে মাঠ ভর্তি হাজারো ছাত্র ছাত্রীর মাঝে আদিত্যকে প্রপোজ করে আফরিন। ভার্সিটির,, সবচেয়ে হেন্ডসাম, ডেসিং ছেলে আদিত্য। আদিত্য ভ্রু কুচকে তাকিয়ে আছে আফরিনের দিকে।

অপর দিকে আফরিন ঘেমে একাকার কি হবে?? সত্যি যদি একসেপ্ট করে নেয়? নয়তো যদি চড়টর মেরে দেয় তাহলে???!!!,,, এই তো কিছু সময় আগের কথা। ক্লাস না হওয়াতে সব বান্ধবীরা… মিলে ট্রুথ আর ডেয়ার খেলছিল। আফিরন সবাইকে অনেক কঠিন কঠিন ডেয়ার দেয়। যখন তার সময় আসে তখন কেউ আর ছাড় দিতে নারাজ। সব কিছু ছেড়ে আদিত্য কে প্রপোজ করতে বলে। আদিত্যকে আফরিন প্রচুর ভয় পায় আর দেখতে পারে না। কারণ তার অজানা!!
______
বান্ধবীরা ডেয়ার দিয়েছে,,,, ভার্সিটির বড় ভাই আদিত্যকে প্রপোজ করতে। ব্যাটা দেখতে মাশাআল্লাহ কিন্তু ব্যবহার আসতাগফিরুল্লাহ। কি আর বলবো। যেদিন আমাদের নবীন বরণ অনুষ্ঠান হচ্ছিল, সেদিন সে আমার গায়ে এক বালতি জল ঢেলে দিয়েছিল। যদিও সেটা সবাই বলেছে ভুল করে করছে। কিন্তু সে কখনোই এই ব্যাপার নিয়ে সরি বা কোনো রকম অনুতপ্ত হয়নি। ব্যাটা আসলেই বজ্জাত যাইহোক এখন তো বাঁশ খাইতে হবে। আমিতো উনার সামনেই পরতে চাই না আর ওরা। এখন একটা প্রবাদ খুব মনে পরছে যেখানে বাঘের ভয় সেখানেই সন্ধ্যা হয়।

সব ছাত্র ছাত্রীরা অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। সবার জানার আগ্রহ আদিত্যর কি উত্তর হবে? তখনই আফরিনের বেস্ট ফ্রেন্ড অহনা দৌড়ে আসে। অহনা দৌড়ে এসে আর আদিত্য কে বলে

—- সরি ভাইয়া সরি আসলে এটা একটা ডেয়ার ছিল। আফিরন যেন হাফ ছেড়ে বাচঁলো আর আদিত্য কে বলে

—- ভাইয়া আমি সরি আমি ইচ্ছে করে করেনি। আমার ট্রুথ আর ডেয়ার খেলছিলাম। আমি সরি আই প্রমিজ আর জীবনে আপনার সামনে আসবো না। আদিত্য এবার রেগে গিয়ে কিছু বলতে যাবে তখনই অহানর ভাই + আদিত্যর বেস্ট ফ্রেন্ড কৌশাল বলে

—- আদিত্য বাদদে ছোট বাচ্চা মেয়ে। আদিত্য বলে

—- না,, এর শাস্তিতো ওকে পেতেই হবে। Who the hell is she??!!!! এই মেয়ে কে।। যে ভার্সিটির বড়দের সাথে এমন মজা করবে। আর কোন দিক দিয়ে বাচ্চা!! আফিরনকে উদ্দেশ্য করে আদিত্য বলে

—- তুমি আজকে ভার্সিটি শেষ না হওয়া অব্দি এই কড়া রোদে এক পা উঁচু করে কান ধরে দাঁড়িয়ে থাকবে। আর যদি চিটিং করার চেষ্টা করছে তাহলে আমার থেকে খারাপ কেউ হবে না। আর ভার্সিটি শেষ হওয়ার আগে ওর ধারের কাছে কেউ আসবে না। ক নাম কি (আফরিনকে উদ্দেশ্য করে) আফিরন অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আদিত্যের দিকে। আদিত্য জোড়ে ধমক দিয়ে বলে

—- কিছু জিজ্ঞেস করেছি? আফিরন ভয়ে তুতলিয়ে বলে

—- আফ,,,,, আফ,,আফরিন। আদিত্য বলে

—- তা মিস আফিরন আপনি এখানে ঠিক আধ ঘন্টা সময় দাড়িয়ে থাকবেন কানে ধরে। আর সবাই বলিউড সিনেমা শেষ হলে যাও। কৌশাল তুইও যা। তোমায় এমন শাস্তি দিব দ্বিতীয় বার এমন কিছু করার আগে ১০ বার ভাববে। কেউ আরে দ্বিতীয় বার কথা বলার সাহস করেনি।

_____________

সবাই যার যার মতো ক্লাসে চলে যায়। আর আফরিন কান ধরে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে । আদিত্য রেগে ধমক দিয়ে বলে

—- এক পা উঁচু করবে কে? আফরিন সাথে সাথে নিজের এক পা উঁচু করে ফেলে। আর মনে মনে উদ্ধার করছে আদিত্যের চোদ্দৌ গুষ্টি। সাথে তার বেস্ট ফ্রেন্ডদের বোনাস। প্রায় ১৫ মিনিট যাবৎ ভর রোদ্দুরে দাড়িয়ে আছে আফিরন গায়ের রঙ গোলাপি রঙে পরিনিত হয়েছে। আদিত্য একটা জুনিয়র ছেলেকে বলে একটা চেয়ার নিয়ে আসতে। আদিত্য একটু ছায়ার নিচে গিয়ে বসে পরে। রোদের জন্য মাথা ঘোরাচ্ছে আফরিনের। আদিত্য ফোন স্কিনের দিকে তাকিয়ে কি যেন করছিল। হঠাৎ করে ফোন আসাতে সে ফোন রিসিভ করে কানে দিয়ে আফরিনের কাছে গিয়ে বলে।

—– আমি আসছি ৫ মিনিট এসে যেন এখানেই পাই। আফিরন মনে মনে বলে

—– একবার যা আমার আর হদিস খুঁজেও পাবি না। আদিত্য বলে

— এই যে পালানোর চিন্তা ভাবনা থাকলে,, কালকে তোমার খবর আছে। বলেই আদিত্য চলে যায়। আদিত্য চলে যাওয়ার পরই আফরিন পা নামিয়ে ফেলে। আর আদিত্যর রাখা চেয়ারটায় গিয়ে বসে পরে। তার একটু পর ছুটির ঘন্টা বাজে। কিছু সময় পরই সে চোখ খুলে দেখে তার ফ্রেন্ডসরা তার ব্যাগ নিয়ে ভয়ে তার কাছে আসছে। আফিরন সেটা দেখে চোখ বুঝে বলে

________________

—– হারামির দোল সরি বললে এক একটাকে কাঁচা আম বানিয়ে লবণ দিয়ে খাবো। তোরা জানিস না ঐ আদিত্য কে দেখলে আমার ভয় লাগে ওর থেকে আমি দূরে দূরে থাকি। তাও ঐ এনাকন্ডার তালগাছেকে নিয়েই ডেয়ার দিলি কেন তোরা?

(আদিত্য অনেক লম্বা তাই তার একটা কিউট সা নাম এনাকন্ডার তালগাছ) ।

আমার মতো মাসুম বাচ্চাটাকে কিভাবে ধমকালো । নির্মম ভাবে আমার শরীরের ঘাম গুলোকে গণহত্যা আর আমার প্রতি অত্যাচার করেছে। বউ জুটবে না কপালেরে তোর আদি-সাদী। সবাই চুপ কারো কথার আওয়াজ না পেয়ে আফরিন চোখ মেলে তাকায় দেখে। আদিত্য বুকে দুই হাত গুজে রাগী চোখে তাকিয়ে আছে আফরিনের দিকে। সাথে তার কৌশাল আর কিছু ফ্রেন্ড। আর আফরিন অহনার দিকে তাকিয়ে দেখে সে হাত দিয়ে ইশারা করছে সে শেষ। আফিরন ভয়ে

—- আম্মু…… বলে চেয়ারে টোলে পরলো। আফরিন যখন চোখ বুজে ছিল তখনই আদিত্য আসে এটা বলতে তার পানিশমেন্ট শেষ,, কিন্তু আসার পর যা শুনে তা শুনে সে রেগে যায়। অনেক সময় হয়ে যায়। আফরিন ভাবছে কি ব্যাপার আদিত্য ওরা ওকে মৃত ভেবে ভয়ে পালিয়েছে নাকি?? সে এক চোখ খুলে দেখে আদিত্য নেই। কিন্তু কৌশাল সামনে দাড়িয়ে আছে অহনাও আগের নেয় সেখানে দাড়িয়ে আছে। আফরিনকে চোখ খুলতে দেখে সে নিজের কপালে হাত দিয়ে মনে মনে বলে

—- তুই আজকে শেষ আফরিন। আফরিন একটা সেই ভাব নিয়ে উঠে দাড়িয়ে বলে

—- আলহামদুলিল্লাহ আমি সফল। বেঁচে গিয়েছি ঐ আদিত্য নামক প্যারাটার হাত থেকে। এখন পার্টি দিমু। অহনা। আমাকে ডাকিস নাই কেন? বলেই এগিয়ে গিয়ে ব্যাগটা তার হাত থেকে নেয়। তখনই আফরিনের বান্ধবী অন্যা বলে

—- আফরিন রে পিছে তাকা। আফিরন বলে

—- এমন ভাবে বলছিস যে…… পিছনে তাকিয়ে দেখে আদিত্য আরেকটা চেয়ারে পায়ের উপর পা তুলে বসে আছে। অহনা বলে

—- আফরিন রে এখন কি হবে? আফিরন বলে

—- এখন ভাগা হবে। বিসমিল্লাহ্ বলেই ব্যাগ নিয়ে অহনা আর অন্যার হাত ধরে দেয় দৌড়। আদিত্য দাড়িয়ে যায় তা দেখে কৌশাল বলে

—- যেতে দে বাচ্চা মেয়ে। আদিত্য বলে

—- ওহ আর বাচ্চা? অকে তো কালকে দেখে নিব।

____________

বাসায় ফিরে আফরিন সরাসরি নিজের রুমে চলে যায়। শাওয়ার নিয়ে বেড়িয়ে আসে দেখে তার মা খাবার নিয়ে বসে আছে। আফরিন গিয়ে তার মাকে জড়িয়ে ধরে বলে

—- মা তুমি খাওনি কেন? আর অনু কোথায় ( আফরিনের ছোট বোন) আফরিনের মা আফরিনের মুখে খাবার তুলে দিতে দিতে বললো

—- অনু পড়তে বসেছে। শাওয়ান আর তোর বাবা বাইরে বেড়িয়েছে বিকেলে হাটতে। তোর আসতে এতো লেট হলো কেন? আফিরন একটু ভেবে বলে

—- আরে আম্মু আর বলোনা ক্লাস শেষে নোট করে ছিলাম তাই। আফরিনের মা আফরিনকে খাবার খায়িয়ে দেয় আর নিজেও খেয়ে পেলেট নিয়ে চলে যায়। আফরিন বসলো বই নিয়ে পড়তে। তখনই অহনা কল দেয়। আফরিন ফোন রিসিভ করে বলে

—– কি হইছে বইলা ফালা। অহনা বলে

—- তোকে কিছু একটা দিয়েছি মেসেঞ্জারে সেটা দেখ। আফির তাড়াতাড়ি মেসেঞ্জার যেয়ে দেখে সে যে আদিত্যকে প্রপোজ করছে তার পিক। সেটা কেনো একটা গ্রুপে পোস্ট করেছে। কেপশনে লেখা

—- কোনো একদিন আমার প্রয়সীও আমাকে এভাবে সবার সামনে বলবে ভালোবাসি প্রিয়। আফরিন বলে

—- তোর পোস্টের মাইয়ের বোইন। অহনারে আমার কি হবে? অহনা বলে

—- চিন্তা করিস না ভাইয়া দেখে নিবে। আর শুন কালকে ভার্সিটি আসবি তো? মানে আদিত্য ভাইয়া? আফিরন বলে

—- বগুড়ার দই হালায় আবার জিগায়!!!! আসুম একশ বার আসুম। উনার সামনে না পরলেই তো হইছে । যা ফুট এখন পড়তে বসমু কালকে যে ক্লাস টেস্ট আছে তার কথা মনে আছে। তারপর কিছু সময় কথা বলে আফরিন ফোন রেখে দেয় আর পড়তে বসে।

#চলবে……

ভুলত্রুটি ক্ষমার চোখে। ধন্যবাদ সবাইকে 💖💖💖